বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
আপু থেকে বউ পর্ব ৪ লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
আপু থেকে বউ
পর্ব ৪
লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রাত ৩:১১
ছাদে একপাশে চুপচাপ বসে আছে গিয়াস।
হাতে একটা লোহার ছোট বাক্স। ভিতরে কি?
কেউ জানে না, এমনকি জারা-ও না।
সে বাক্সটি খুলে ভেতর থেকে বের করে ছোটখাটো কিছু যন্ত্রপাতি—কিছু অস্ত্রর অংশ, আর কিছু ইলেকট্রনিক সেন্সর।
তার চোখে চাপা গম্ভীরতা, ঠোঁটে মৃদু বিড়বিড়ানি—
"এবার যদি আসে... কাউকে ছেড়ে দেবো না।"
দূরে, ছাদের এক কোণে সে নিজের হাতে বানিয়ে রেখেছে একটি ছোট রুম—কনক্রিট, ইস্পাত আর লুকোনো ক্যামেরায় ভর্তি।
কেউ ভাববেই না এটি জারার জন্য প্রস্তুত এক নিরাপদ আশ্রয়।
কিন্তু সে এটা জানে না...
সকাল জারা ঘুম ভেঙে দেখে গিয়াস নেই।
টেবিলে পড়ে আছে গিয়াসের মোবাইল।
অজান্তেই স্ক্রিন ট্যাপ করে ফেলে—
ওপেন হয় একটি পুরনো গ্যালারির ফোল্ডার।
ছবিগুলো দেখে জারা হকচকিয়ে যায়।
একটি ছবি—তার ৩ বছর আগের, যখন সে সিলেটে এক্সিডেন্টে পড়েছিল।
তখন তার আশেপাশে কেউ ছিল না—তবু ছবিটা কেউ তুলেছে।
— “এই ছবি এখানে কীভাবে?”
সে আবার খেয়াল করে—পেছনে, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছায়ামূর্তি। ফেস ব্লারড, কিন্তু গড়ন... গিয়াস?
জারার মনজুড়ে এক নতুন ভয়।
ডিপার্টমেন্ট এসআই সুমিত ফাইল হাতে হাসিমুখে হাজির।
— “ম্যাডাম, সোহেল চৌধুরী সম্পর্কে নতুন তথ্য। লোকটা বাম হাতি। সে সব সময় বাঁ হাতে অস্ত্র ধরত।”
— “তুমি নিশ্চিত?”
— “ডিবির ফাইল বলছে তাই।”
জারা মাথা নাড়লো।
কিন্তু ভিডিও ফ্রেমে সে যেটা দেখেছিল... সেখানে সোহেল স্পষ্টভাবে ডান হাতে বন্দুক ধরেছিল।
কিছু একটা মিলছে না।
সুমিত কফি টেবিলের নিচে চুপিচুপি গিয়াসের একটি চাবির রিং ফেলে রেখে দেয়।
সে জানে, একদিন কেউ এই চাবি খুঁজে পাবে… সোহেলের পুরনো অফিসে।
রওশন করিম
সন্ধ্যায় ফোন আসে—
রওশন করিম মারা গেছেন।
জারা স্তব্ধ হয়ে যায়।
হাসপাতাল বলে হৃদরোগে মৃত্যু।
কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জারা নিজে চোখে দেখে গলায় হালকা ইনজেকশনের চিহ্ন।
সে যেন কেঁপে ওঠে।
— “রওশন ভাই তো একদম ঠিক ছিলেন কাল! ইনজেকশন কেন?”
তদন্তে নেমে জারা বুঝতে পারে—হাসপাতালের CCTV ফুটেজ ডিলিট করা।
যেই রাতের ঘটনা, সেই ফাইল গায়েব!
অতীত: ডায়েরির পাতা রাতে বিছানায় ফিরে এসে জারা তার পুরনো ডায়েরির পাতা উল্টাতে থাকে।
একটি পাতায় চোখ আটকে যায়—
“২০০৯, স্কুলে সোহেলের ভাই হাসানকে মারধর করেছিলাম।
সে নাকি আমাদের বাসায় চুরি করতে এসেছিল।
পরে বাবা চেপে যেতে বলেছিল।
কিন্তু সোহেল আমাকে হুমকি দিয়েছিল—‘তোর জীবনটা আমি চুরি করব একদিন’।
হাসান মারা গেছে। আমি জানি না সেটা কাকতালীয় না পরিকল্পিত।”
আরেকটি পাতায়—
“সোহেলের নামে একবার আমি হেডমাস্টারকে গোপনে চিঠি দিয়েছিলাম।
সে নাকি গাঁজা খায়, বলেছিলাম। সে তখন স্কুল থেকে সাসপেন্ড হয়।”
জারা থমকে যায়।
সে জানতো না, এতকিছুর শেকড় এত পেছনে।
রাত গিয়াস এসে দেখে, টেবিলে খোলা জারার ডায়েরি।
সে এগিয়ে গিয়ে পড়ে—
“গিয়াস কি সত্যি বলছে?
আমি তাকে বিশ্বাস করি… নাকি করি না?”
তার মুখে মৃদু হাসি, আবার চাপা কষ্ট।
ঠিক তখনই, জারার ফোনে আসে এক ইনকামিং কল।
অপর প্রান্ত থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে—
"তুমি তোমার বরের গোপন পেনড্রাইভ দেখেছো...
এবার দেখো আমারটাও।"
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে জারা-গিয়াসের বিয়ের ভিডিও ফুটেজ।
ক্যামেরা ধীরে ধীরে প্যান করে এক কোণে দাঁড়ানো এক মানুষকে ফোকাস করে।
সোহেল চৌধুরী!
সে সেই সময়ও ওদের আশেপাশে ছিল!
ক্লিফহ্যাঙ্গার গিয়াস জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল।
জারা ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরে বলে—
— “তুমি আমার ছায়ার নিচে ছিলে সব সময়… নাকি আমি তোমার নিশানায়?”
গিয়াস চোখ বন্ধ করে ধীরে উত্তর দেয়—
— “জারা, তুমি কি আমাকে সত্যি চিনতে চাও?”
পরবর্তী সেকেন্ডেই আলো নিভে যায়।
বাইরে গুলির শব্দ।
ছাদের দিক থেকে ভেসে আসে চিৎকার:
— “তাকে ধরো! সে পালাচ্ছে!”
চলবে…
৫ম পর্ব লিংক
রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
আপু থেকে বউ
পর্ব ৩
লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রাত ১টা।
জারা ঘুমিয়ে পড়েছে। গিয়াস চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
সে ধীরে ধীরে আলমারির গোপন চেম্বার খুলে একটা ছোট বাক্স বের করে।
বাক্সের ভিতরে থাকা পুরনো চিঠিগুলোতে ধুলোর স্তর।
তবে একটির খাম ভাঙা—যেটার উপরে লেখা, "S.C. will act soon. Burn after reading."
গিয়াস সেটা আবার আগের জায়গায় লুকিয়ে রাখে।
তার চোখে একধরনের তীক্ষ্ণতা… যেন সে কিছু জানে, কিছু লুকাচ্ছে।
সকাল জারা ডিপার্টমেন্টে যায়।
ওসি আকবর তাকে ডেকে নেয় কনফারেন্স রুমে।
— “তোমার দেওয়া ভিডিও, অডিও আমরা এনালাইসিস করেছি। গলার সেই ব্যক্তির নাম সোহেল চৌধুরী, পুরনো ক্রিমিনাল রেকর্ডে আছে। তবে মুখ দেখা যায়নি।”
— “আমরা কি তার ছবি পেতে পারি?”
— “চেষ্টা করছি… তবে সাবধান, এরা খেলো না।”
জারার সহকর্মী এসআই সুমিত দরজা খুলে ভেতরে আসে।
হালকা হাসি দিয়ে বলে,
— “ম্যাডাম, আপনি চাইলে আমি লোকেশন ট্র্যাকিংয়ে হেল্প করতে পারি।”
জারা মাথা নাড়ে।
— “থ্যাঙ্কস, সুমিত। তুমি খুব রিলায়েবল।”
পাঠক জানে না, সুমিত হাসির আড়ালে কী ভয়ঙ্কর ছায়া লুকিয়ে রেখেছে...
অন্যদিকে গিয়াস বাসায় ফিরে এসে তার ল্যাপটপে বসে।
অন্য আরেকটি পেনড্রাইভ খুলে সে একটি ভিডিও চালায়।
ভিডিওতে দেখা যায়—
সোহেল চৌধুরী স্পষ্টভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলছে:
“তোমার বাপ এতদিন ধরে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। এখন সময় বদলাবার।
একটা দুর্ঘটনা হবে—তুমি জানবা না, কারা করল।
কিন্তু গিয়াস, তুমি যদি জিভ বেশি চালাও, তোমার বউও থাকবে না।”
গিয়াস ভিডিও বন্ধ করে।
তার মুখে ভয় নেই… বরং জ্বলন্ত ক্রোধ।
সে জানে, জারাকে এ ভিডিও এখনই দেখানো ঠিক হবে না।
সন্ধ্যা জারা আর গিয়াস ছাদে বসে।
আকাশে অন্ধকার নামছে। বাতাস ভারী।
— “তুমি সারাদিন কি করেছো?”
— “একটা পুরনো বই পড়ছিলাম,” গিয়াস হেসে উত্তর দেয়।
জারা মনেই করে না কিছু সন্দেহ করার মতো কিছু আছে।
তবে তার ফোনে একটা বার্তা আসে—
"Beware of the closest. They may burn you first."
(সাবধান থাকো, যারা সবচেয়ে কাছে... তারাই আগে পোড়ায়।)
জারা চমকে যায়। নম্বর আননোন।
— “কিছু হয়েছে?”
— “না, কিছু না,” বলে ফোন অফ করে দেয়।
গভীর রাত জারার ঘুম ভেঙে যায় এক অদ্ভুত শব্দে।
বের হয়ে দেখে, গিয়াস রুমে নেই।
সে নিচে নামে—দেখে গিয়াস কাউকে ভিডিও কলে কথা বলছে।
দূর থেকে দেখা যায় ভিডিও স্ক্রিনে সোহেল চৌধুরীর সম্পূর্ণ মুখ!
গালে পুরনো কাটার দাগ, চোখে চাপা ভয় আর অভিজ্ঞতার ছাপ।
“তুমি এখনো সিদ্ধান্ত নিওনি?”
“আমার সময় দরকার,” গিয়াস ফিসফিস করে বলে।
“তুমি জানো, সময় শেষ হয়ে আসছে। জারাকে সরিয়ে ফেল… না হয় আমরা সরিয়ে ফেলবো।”
জারা দূর থেকে দেখে—কিন্তু চেহারা ভালোভাবে দেখতে পায় না।
গিয়াস হঠাৎই ফোন বন্ধ করে দেয়, ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।
কিন্তু জারা তখন ছায়ায় মিশে গিয়েছে।
পরদিন ওসি আকবর ডেকে নেয় জারাকে।
— “নতুন একটা ফুটেজ পেয়েছি। সোহেলের স্পষ্ট মুখ।”
— “আমাকে দেখান।”
ফুটেজে দেখা যায়—একটা গ্যারেজে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন। একজন সোহেল।
জারা তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারে না সে এই চেহারা কোথায় দেখেছে।
পাঠক কিন্তু জানে—এই চেহারা সে আগেই দেখেছে... তবে স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই, গিয়াসের ল্যাপটপে।
গল্পের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত
ওসি আকবর নতুন ডিউটির দায়িত্ব দিচ্ছেন।
— “সোহেলকে ধরার জন্য তুমি আর এসআই সুমিত যৌথভাবে কাজ করবে।”
জারা অবাক হয়।
— “আমি একা কাজ করতে চাই...”
— “না, এখন সুমিতকেই দায়িত্ব দেওয়া হলো।”
দরজা বন্ধ হওয়ার পর সুমিত ধীরে ধীরে ফোনে মেসেজ করে:
“সে এখনো কিছু বুঝে ওঠেনি। পরের ধাপ কখন?”
মেসেজের ওপরে যে নামটা ঝলকে উঠে আসে…
S.C.
চলবে...
🔥 টুইস্ট রিভিল
-
গিয়াস নিজেই সোহেলের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত ছিল বা ব্ল্যাকমেইল হচ্ছিল।
-
সোহেল চৌধুরীর মুখ আমরা এখন দেখেছি, কিন্তু জারা এখনো চিনতে পারছে না।
-
এসআই সুমিত সোহেল চৌধুরীর পেইড ইনফরম্যান্ট, কিন্তু এখনো কেউ জানে না।
-
পরবর্তী পর্বে জারা ধীরে ধীরে গিয়াসকে সন্দেহ করতে শুরু করবে… এবং সুমিতকে বিশ্বাস করবে—যা আরও ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
গল্প: আপু থেকে বউ পর্ব :২ লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
গল্প: আপু থেকে বউ
পর্ব :২
লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
ওসি আকবরের কথাটা যেন বজ্রাঘাতের মতো নেমে এলো জারার কানে।
— “খুনি... গিয়াস নিজেই?”
জারা চুপচাপ বসে। তার চোখে সন্দেহ, অথচ ভেতরে কোথাও বিশ্বাসও।
গিয়াস তার পাশেই বসে, মাথা নিচু করে রেখেছে। চোখে জল নেই, তবে অদ্ভুত এক শূন্যতা।
জারা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
— “আপনারা কি কোনো প্রমাণ পেয়েছেন? শুধুই ‘সোর্স’ এর ভিত্তিতে তো কাউকে খুনি বলা যায় না।”
ওসি চশমা খুলে চোখ মুছে বললেন,
— “দেখুন, এটা অফিসিয়াল চার্জ না। আমরা শুধু জানতে চাচ্ছি... গিয়াসের বাবা-মা মারা যাওয়ার রাতে সে কোথায় ছিল?”
জারা গিয়াসের দিকে তাকাল।
— “বলো, সেদিন রাতে তুমি কোথায় ছিলে?”
গিয়াস কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে বলল,
— “দাদুর বাসায় ছিলাম... রাত সাড়ে দশটার দিকে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালেই খবর পাই।”
ওসি প্রশ্ন করলেন,
— “তোমার দাদু কি বেঁচে আছেন?”
— “না... মাস খানেক আগে উনিও মারা গেছেন স্ট্রোক করে।”
জারার চোখে সন্দেহের ছায়া ঘন হলো।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সে নিজেকে সামলালো। ওসি'র সামনে কিছু বুঝতে দিল না।
— “তাহলে এই মুহূর্তে আপনি গিয়াসের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেন না, ঠিক?” জারা সোজা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।
ওসি হাসলেন,
— “তাই তো! আপনি নিজেই তো অফিসার... কাগজ ছাড়া কিছু হয় না জানেন।”
জারা উঠে দাঁড়ায়,
— “আসুন, গিয়াস।”
ওসি হালকা হেসে বলে,
— “আপনার সন্দেহ থাকুক। আমরা আপনাকে আপডেট দেবো।
ফেরার পর রুমটা স্তব্ধ।
দুজনেই চুপচাপ।
জারা আয়নার সামনে বসে চুল খুলছে। হঠাৎ চোখ আটকে যায় আয়নায় দেখা গিয়াসের প্রতিচ্ছবিতে।
সে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু চোখে ভয় নেই—বরং ক্লান্তি।
— “তুমি কি সত্যিই ওদের হত্যা করোনি?”
প্রশ্নটা ধীরস্বরে, অথচ ঠান্ডা নয়।
গিয়াস তাকিয়ে বলল,
— “তুমি কি সত্যিই মনে করো আমি পারি মা-বাবাকে খুন করতে?”
জারার মুখে কিছু বলার নেই।
সে জানে, এই মুখটা অনেক কিছু লুকাতে পারে... কিন্তু একদম সব নয়।
— “তাহলে কে খুন করেছে ওদের?”
— “জানি না... কিন্তু বুঝি কেউ চাচ্ছিল ওদের সরাতে।”
— “কারা? তোমার কোনো সন্দেহ আছে?”
— “বাবা কোম্পানিতে কারো সাথে ঝামেলায় ছিল। বারবার বলতেন, কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।”
জারা খেয়াল করল—গিয়াসের চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে। ছেলেটা কাঁদছে না, বরং নিজেকে আটকে রাখছে।
একটু থেমে বলল,
— “জারা, আমি তোমার কাছে একটা সত্য লুকিয়েছি।”
জারার কণ্ঠ শক্ত,
— “কি সত্য?”
গিয়াস গলার স্বর নিচু করে বলল,
— “আমার কাছে একটা পেনড্রাইভ আছে। ওখানে বাবার রেকর্ড করা কিছু ভিডিও আর ভয়েস ক্লিপ... উনি বলেছিলেন, যদি ওর সাথে কিছু হয়, এটা যেন পুলিশে না দেই, বরং কাউকে খুঁজে বের করি।”
জারা স্থির হয়ে গেল।
— “তুমি কোথায় রেখেছো পেনড্রাইভটা?”
— “তোমার কাছে দিতে চাইনি... কারণ তুমি পুলিশ। তুমি আইনের পথে যাবে। কিন্তু আমি চাই সত্যটা বের হোক, যেভাবেই হোক।”
— “দাও সেটা আমাকে। আমি কথা দিচ্ছি, আইনের বাইরে গিয়ে হলেও খুনিদের খুঁজে বের করবো।”
গিয়াস একটু হেসে বলল,
— “তোমার চোখে বিশ্বাস ছিল না এখনো... কিন্তু তোমার কথায় আমি আশা পেলাম।”
জারা ল্যাপটপ খুলে পেনড্রাইভ লাগায়।
ভিতরে ৩টি ভিডিও এবং ২টি অডিও ক্লিপ।
একটা ভিডিও চালু করে।
ভিডিওতে গিয়াসের বাবা একজন লোকের সঙ্গে কথা বলছে।
লোকটির মুখ আংশিক দেখা যাচ্ছে। কালো হুডি, গলা মোটা, উচ্চারণে একটু পশ্চিমাঞ্চলের টান।
— “তোমাকে অনেকবার বলেছি, এই ডিলটা করো না, তুমি পস্তাবে।”
— “তুই হুমকি দিচ্ছিস?”
— “না, আমি ভবিষ্যত দেখছি।”
ভিডিওটি হঠাৎ শেষ হয়ে যায়।
জারা থমকে যায়।
— “এই চেহারাটা... এই গলাটা কোথায় যেন শুনেছি।”
পরদিন
জারা গিয়াসকে নিয়ে এক গোপন জায়গায় যায়।
একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, নাম তার রওশন করিম।
তিনি ডিবি থেকে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু গোপনে অনেক কিছু জানেন।
জারা তাকে ভিডিও দেখায়।
রওশন করিম দেখে অবাক হয়ে ওঠেন।
— “এই গলাটা... এই গলাটা সোহেল চৌধুরীর। এখনকার এক নম্বর মাফিয়া লিডার। আগেও অনেকবার ট্র্যাক করেছি, কিন্তু কিছু পাইনি।”
জারা আঁতকে ওঠে,
— “মানে গিয়াসের বাবা-মার খুনের সঙ্গে ও জড়িত?”
— “খুব সম্ভব। তবে সাবধান, মেয়েটা। এই খেলা ছোট না।”
জারা মাথা নিচু করে বলে,
— “আমি শুধু খেলা খেলবো না... খেলাটা শেষ করবো।”
গিয়াস রাতে ছাদে বসে। পাশে জারা।
— “তুমি কি এখনো ভয় পাও?”
— “তুমি পাশে থাকলে ভয় কমে যায়।”
জারা তার হাত ধরে।
দূরে আকাশে মেঘ।
তবে তাদের চোখে আগুন।
একটা প্রতিশ্রুতি জন্ম নিচ্ছে—প্রেম আর প্রতিশোধের এক যৌথ শক্তি।
চলবে...
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
পরিচয়ের আড়ালে পর্ব – ৭ শেষ পর্ব✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৭
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রেশমীর শরীর কাঁপছিল, কিন্তু মন ছিল অটুট। দিন দিন মিলনের আঁধার যেন আরও গাঢ় হচ্ছিল। সত্যের জন্য লড়াই করতে গেলে, কখনো কখনো অন্ধকারের মুখোমুখি হতে হয়।
রেশমীর ফোনে বার বার এল অচেনা নম্বর থেকে হুমকির মেসেজ।
“একটু সময় পেলেই তোমাকে নষ্ট করব। সাবধান!”
তার অজান্তেই, মিলনের দোসররা তার আশেপাশে নজরদারি শুরু করেছিল।
রফিক আচমকা অদ্ভুত আচরণ করতে লাগল। রেশমী সন্দেহ করল সে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সাইফও কিছু বলতে পারছিল না।
“তুমি কি আমার পাশে আছ?” রেশমী জিজ্ঞেস করল, চোখে চিন্তার ছাপ।
রফিক মৃদু স্বরে বলল, “আমি সবসময় তোমার জন্য কাজ করছি, কিন্তু পরিস্থিতি খুবই জটিল।”
রেশমী বুঝতে পারল, শত্রু শুধু মিলন নয়, তার ঘনিষ্ঠ মানুষদের মধ্যেও কেউ কেউ আছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা তার হৃদয় ভেঙে দিল।
রেশমী সিদ্ধান্ত নিল, নিজেই হাতে কাজ করবে। সে সাইফকে বলল, “আমাদের এখন যেকোনো মূল্যে মিলনের পরিকল্পনা ভাঙতে হবে।”
সাইফ সম্মতি দিলো, “আমি তোমার সঙ্গে আছি, রেশমী।”
রেশমী রাতে গোপনে মিলনের অফিসে ঢুকল। চারপাশে ছিল কড়া নিরাপত্তা, কিন্তু সে একাগ্রচিত্তে এগোচ্ছে।
হঠাৎ কোনো শব্দ শুনে তার হৃদয় হু-হু করে উঠল।
দূরে মিলনের এক শত্রু এসে পড়ল তার পথে।
“তুমি এখানে কেন?” শত্রুর কণ্ঠে ক্রোধ।
রেশমী ঠাণ্ডা স্বরে বলল, “তুমি আমার ভয় নেই। সত্যের পথে আমি অটল।”
এক মুহূর্তের মধ্যে লড়াই শুরু হলো। রেশমীর সাহস ও দক্ষতায় শত্রুকে পরাস্ত করল।
তবে সে জানত, এই লড়াই এখনও শেষ হয়নি।
রেশমীর চোখে নতুন আশার আলো জ্বলছিল—যে অন্ধকার যতই গাঢ় হোক, সত্য একদিন বুকে আলো বয়ে আনবেই।
রেশমীর চোখের সামনে ঝলমল করছিল নতুন আশা, কিন্তু অন্তরের অন্ধকার ছুঁড়ে দিচ্ছিল সংশয়ের ছায়া। সৎ ও বিশ্বাসঘাতকতার লড়াই যেন এক অবিরাম ঝড়।
মিলনের দোসররা রেশমীর গোপন অভিযান খেয়াল করেছিল। তারা একটি ফাঁদ সাজালো।
রেশমী আর সাইফ গভীর রাতের মিশনে বের হলো, কিন্তু হঠাৎ ঘিরে ফেলা হলো তাদের।
"তুমি আর পালাতে পারবে না," কড়া কণ্ঠে বলল এক সন্ত্রাসী।
রেশমীর হৃদয় দুলল, কিন্তু সাইফের সাহস দেখে সে দাঁড়িয়ে রইল।
সাইফ আকস্মিক একটি শক্তিশালী লাথি মেরে হামলাকারীকে নামিয়ে দিল।
"চলো, এখন পালানোর সময়," সে ফিসফিস করল।
রেশমী দ্রুত সাইফের হাত ধরল। তারা গা ঢাকা দিয়ে ঘোরাঘুরি করল শহরের গলিতে।
পালানোর সময় রেশমীর মনে উঠল—রফিক কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য? কিংবা সে মিলনের হাতে কাজ করছে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখন জরুরি।
এক রাত তারা এক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা করল, যিনি মিলে না জানিয়েও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করল।
"মিলনের আসল মুখ অনেকটা অন্যরকম," সে বলল।
রেশমী বুঝতে পারল, তাকে আরও সাবধান হতে হবে। সে সিদ্ধান্ত নিল, নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ পাল্টে নতুন কৌশল অবলম্বন করবে।
নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে রেশমী তৈরি হলো মিলনের বিরুদ্ধে একটি আঘাত করার জন্য। তার চোখে জ্বলছে প্রতিশোধের অগ্নি।
রেশমীর ভেতরে এক অদ্ভুত শক্তি জাগছিল। ক্ষত বুকে গভীর আগুন লেগেছিল—তাকে বাধ্য করেছিল অতীতের ছায়া ফেলে সামনে এগোতে।
রেশমী নিজের পরিচয় পাল্টে ফেলল, নাম বদলাল। আরম্ভ করল একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে শুধু বাঁচার নয়, প্রতিশোধের সুর বাজবে।
সে মিলনের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের গতিবিধি নজর করতে শুরু করল। ধাপে ধাপে তাদের পায়কে পায়কে পর্যবেক্ষণ করল।
একদিন সন্ধ্যায়, সাইফের মাধ্যমে রেশমী জানতে পারল মিলনের গোপন একটি ডকুমেন্টের অস্তিত্ব। যেটা খুঁজে পেলে পুরো ষড়যন্ত্রের চাবিকাঠি মিলবে।
রেশমী আর সাইফ এক রাতে মিলনের অফিসে প্রবেশের পরিকল্পনা করল। যদি ধরা পড়ে, প্রাণে মারারও ভয়।
অফিসে ঢুকে হঠাৎ এলার্ম বেজে উঠল। নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসল। রেশমী ও সাইফ দৌড়ে পালানোর সময় এক সিকিউরিটি অফিসারের সঙ্গে মুখোমুখি হলো।
রেশমী ও সাইফ কঠোর লড়াই শুরু করল। বুকে কেটে গিয়েও, তারা হার মানল না। শেষ পর্যন্ত অফিসারের হাত থেকে পালাতে সমর্থ হলো।
অফিস থেকে তারা যে ডকুমেন্ট চুরি করতে পেরেছিল তা ছিল গোপন শাস্ত্রীয় দলিল। যেটা মিলনের সঠিক পরিকল্পনা ফাঁস করতে পারবে।
রেশমীর বুকের ব্যথা দিন দিন বেড়েই চলছিল। শুধু শারীরিক নয়, অন্তরেও যেন এক অজানা দহন। তার চোখে নতুন করে জ্বলছিল প্রতিশোধের আগুন, আর মনে হচ্ছিল যেন সময় তার পক্ষে নেই। প্রতিটি মুহূর্ত যেন কাটছিল এক ভয়ঙ্কর অপেক্ষায়, যেখানে শুধুই সত্যের খোঁজ।
রেশমী আর সাইফ এক নিঃশব্দ রাতে মিলনের গোপন অফিসের কাছাকাছি আসার সিদ্ধান্ত নিল। সেই ডকুমেন্ট পেতে হবে, যা মিলনের অসাধু চক্রান্তের প্রমাণ।
সাইফ বলল, "রেশমী, আজকের রাতটা কঠিন হবে, অনেক ঝুঁকি। কিন্তু আমরা না পারলে কেউ পারবে না।"
রেশমী দৃঢ়ভরে উত্তর দিলো, "আমি আর পিছনে ফিরে তাকাবো না। শুধু সামনে এগোতেই হবে।"
সন্ধ্যার আঁধারে তারা নিঃশব্দে অফিসের পিছনে পৌঁছালো। চারপাশে চোখ রাখছিল নিরাপত্তারক্ষীরা। শ্বাস নিয়েও হাঁটছিল তারা যেন ছায়ার মতো। প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক কাঁটাচামচ, যেকোনো মুহূর্তে বিপদ অপেক্ষা করছে।
রেশমী স্মার্ট ফোন থেকে হ্যাকিং অ্যাপের সাহায্যে সিকিউরিটি ক্যামেরার চোখ বন্ধ করল। কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় সময় ছিল সীমিত। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।
সাইফ মৃদু কণ্ঠে বলল, "তুমি ডকুমেন্টগুলো খুঁজো, আমি সিকিউরিটিকে আটকে রাখব।"
হঠাৎ করেই অফিসের দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। রেশমীর হৃদয় যেন থমকে গেল। দ্রুত মোবাইল থেকে লাইট বন্ধ করে অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ল।
নিরাপত্তারক্ষীরা চারপাশ ঘিরে ধরে, তৎক্ষণাত সাইফ তাদের সামনে এসে লাঠিপেটা শুরু করল। রেশমী দ্রুত ড্রয়ার খুলে গোপন ফোল্ডারটি হাতে পেলো। সেই ফোল্ডারে ছিল মিলনের সব অপরাধের সুনির্দিষ্ট দলিল।
সাইফ ও রেশমী ডকুমেন্ট নিয়ে দ্রুত অফিস থেকে বের হতে চাইল, কিন্তু সিকিউরিটিরা তাদের রাস্তা বন্ধ করে দিল। থরথর করে কাঁপছিল রেশমীর মন, কিন্তু সে জানত তার জীবন এখন লড়াইয়ের ময়দানে।
দৌড়ঝাঁপ শুরু হলো, পেছনে শোরগোল, চিৎকার, আর আতঙ্ক। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হচ্ছিল মৃত্যু যেন হাতছানি দিচ্ছে।
রশমী হার মানেনি। ধীরে ধীরে তারা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করল। অন্তর থেকে সে বলল, “আমরা পারব, সাইফ। এই ডকুমেন্ট সবার সামনে আনা জরুরি।”
সাইফ সম্মতি জানিয়ে বলল, “আমরা একসঙ্গে আছি। একসঙ্গে শেষ করব।”
নিরাপদ এক কোণায় তারা ডকুমেন্টগুলো পরীক্ষা করতে বসল। সেখানে মিলনের কতসব বেআইনি কাজ, ষড়যন্ত্র ও গোপন চুক্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট।
রেশমী চিন্তিত হয়ে বলল, “এই তথ্যগুলো প্রকাশ করলেই মিলন ও তার দলের পতন নিশ্চিত।”
সাইফ বলল, “তাই আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। তারা প্রতিহিংসা জানাতে পারে।”
রেশমীর মনে হল, তার লড়াই একদম শুরু হয়েছে। সত্যের যুদ্ধে সে একাকী নয়, পাশে আছে সাহস, বন্ধুত্ব আর একটি নতুন আশার আলো।
রেশমীর চোখে অশ্রু, হৃদয়ে অম্লান এক দৃঢ়তা। আজকের এই সন্ধ্যায়, সে জানত তার জীবনের এক অধ্যায় বন্ধ হচ্ছে, আর এক নতুন সূচনা হবে।
ডকুমেন্টের তথ্যগুলো নিয়ে রেশমী ও সাইফ মিলনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিল। দীর্ঘদিনের অবিচারের জবাব দিতে হবে এখন।
রেশমী বলল, "এতদিন আমরা গোপনে ছিলাম। আজ সবার সামনে আসার সময়।"
সাইফ বলল, "তুমি যা সাহস দেখিয়েছো, তাতে আমরা সবাই গর্ববোধ করি।"
মিলন ও তার দল বিচারব্যবস্থার সামনে দাঁড়িয়ে। তাদের রণনীতি ছিল ভয়, ক্ষমতার অপব্যবহার আর ষড়যন্ত্র। কিন্তু রেশমী আর তার দল একদম ছেড়ে দেয়নি।
বিচারক জানালেন, "এই মামলা দেশের জন্য একটি মাইলফলক। একসময় যারা বিচার থেকে দূরে থাকতো, আজ তাদের সামনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে।"
রেশমী আজ শুধু নিজের জন্য নয়, অসংখ্য নির্যাতিতার জন্য লড়াই করেছে। তার কন্ঠ হয়ে উঠেছে নিঃস্বদের সুর।
সব শেষে, রেশমী জীবনে শান্তি ফিরে পায়। সে জানে, তার যুদ্ধে অনেক কিছু হারিয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতা পেয়েছে। নিজের পরিচয় ফিরে পেয়েছে।
“আমার গল্প শেষ না, শুরু মাত্র। আমি বিশ্বাস করি, সত্য কখনো হারায় না, আর নারীর আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী।”
সমাপ্ত
উপসংহার ও বিশেষ বার্তা
প্রিয় পাঠক,
রেশমীর এই যাত্রা ছিল শুধুমাত্র এক নারীর সংগ্রাম নয়, বরং আমাদের সমাজের এক বাস্তব প্রতিবিম্ব। নির্যাতন, অবিচার আর ভয়কে জয় করতে হলে প্রয়োজন সাহস, একাত্মতা ও অটল বিশ্বাস। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তবে সমাজ আরও নিরাপদ ও সুন্দর হবে।
সত্য ও ন্যায়ের পথে হাঁটা কঠিন হতে পারে, কিন্তু সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। রেশমীর মতো নায়করা যখন উঠে দাঁড়ায়, তখন হয় পরিবর্তনের সূচনা। তাই ভয় পেও না, লড়াই করো, কথা বলো এবং সহায়তা চাও। কারণ তুমি একা নও।
তোমার শক্তি হতে পারে অন্য কারও মুক্তির পথের আলো। চল, একসাথে অন্ধকার কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।
ধন্যবাদ তোমার অবিরত ভালোবাসা আর বিশ্বাসের জন্য।
#সত্য_এবং_ন্যায়ের_পক্ষে
শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
পরিচয়ের আড়ালে পর্ব – ৬ ✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৬
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রেশমী আর রফিকের আজকের রাতটি ছিল একেবারে বিপরীত অনুভূতির মিশ্রণ। একদিকে তারা গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে, অন্যদিকে জানে তাদের ওপর বড়ো বিপদের ছায়া রয়েছে।
রেশমী ঘরের দরজায় তালা দিয়ে তার ছোট্ট রুমে বসে আছে। চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নেয়। গত কয়েক দিনের ঘটনা এখনও তার মনে দাগ কাটছে। সে একা নয়—রফিক পাশে আছে, তবে সবকিছু সহজ নয়।
রফিক বলল,
“তোমার সাথে সত্য বলতে চাই। এই গেমটা বড়। মিলন শুধু একজন নয়, ওর পিছনে বড় কোনো শক্তি আছে। আর আমরা আজকে তাদের একটা ছোট্ট অংশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি।
রেশমী জানতে পারল, রফিক আগেই কিছু লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে—যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করছে। পুলিশের কিছু সৎ অফিসার, সাংবাদিক, এমনকি কিছু কলেজ শিক্ষার্থী যারা মিলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
“আমাদের এই জোটটা তৈরি করতে হবে,” রফিক বলল।
“একসাথে না লড়লে আমরা একা পড়ে যাব।”
রেশমী মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। তার চোখে আগুন জ্বলে উঠল।
পরের দিন রেশমী তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুকে ডেকে তাদের সতর্ক করল। প্রথমে তারা ভয় পেলেও রেশমীর দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত সম্মতি জানায়।
তার সঙ্গে এক সাংবাদিক বন্ধু, দুজন পুলিশ অফিসারের পরিচয় হলো। তারা সবাই মিলনের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ শুরু করল।
রেশমীর হাতে আসা ফ্ল্যাশড্রাইভের ডেটা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে মিলনের কাছে থাকা অনেক দলিল এবং ছবি ছিল। অনেকে যাদের নামও ভয় পেয়ে মুখ খুলতে পারছিল না, তাদের তথ্য সেখানে লুকানো ছিল।
এক বন্ধুর মাধ্যমে তারা এই তথ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করার পরিকল্পনা করল।
অचानक মিলনের গোপন দল তাদের অবস্থান বের করে ফেলে। রেশমী ও তার দল সরাসরি আক্রমণের শিকার হয়।
রেশমী বাঁচতে বাঁচতে গাড়িতে উঠে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু গাড়ির চাকা কেটে ফেলা হয়। পথরোধ করে মিলনের লোকেরা।
রেশমী ভয় পেলেও হার মানল না। রফিকের পাশে দাঁড়িয়ে সে বলল,
“তারা যত বড়ো ভয় দেখাবে, ততই আমার লড়াই আরো জোরালো হবে। আমরা শুধু আমার জন্য নয়, অন্য সবার জন্য লড়ছি।”
তারা অবশেষে পুলিশের কাছে নিরাপদ আশ্রয় পায়। রেশমী জানতে পারে, সত্যের পথে লড়াই যত কঠিনই হোক, আশা হারানো যাবে না।
রেশমীর মন এখনো সিক্ত ছিলো গত রাতে পাওয়া সেই ভয়াবহ সত্য ও গোপন তথ্য নিয়ে। মিলন শুধু একক নয়, তার পেছনে বিশাল একটি জাল গড়া হয়েছে, যাকে ভাঙতে হলে আরও সাহস, ধৈর্য আর জ্ঞান দরকার।
রফিক ও রেশমী সিদ্ধান্ত নিল, এই বৃহৎ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের সবার সঙ্গে সমন্বয় করতেই হবে। সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করল। রেশমীর বন্ধুরা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালাল।
“আমাদের এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে,” রেশমী বলল।
“তাদের পাশে না থাকলে, পরিবর্তন আসবে না।”
মিলনের পক্ষ থেকে আক্রমণ তীব্র হলো। রেশমীর বাড়িতে হঠাৎ অচেনা লোকজন এসে ঘোরাঘুরি করতে লাগল। তার বাবা-মা আতঙ্কিত, কিন্তু রেশমী ধৈর্য হারাতে পারল না।
একদিন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে রেশমী দেখতে পেলো কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি তার গতিবিধি নজরদারি করছে। এই আতঙ্ক তাকে আরও দৃঢ় করল।
এক রাতে রেশমীর মোবাইল বাজলো। অজানা নম্বর থেকে একটি ভয়ঙ্কর ভয়ভীতি মেসেজ,
"তুমি থামালে চলবে না। তুমি যতই লড়, আমরা তোমাকে থামাবেই।"
কিন্তু রেশমীর প্রতিজ্ঞা ছিল অটুট—“আমি থামবো না, যতই বিপদ আসুক।”
একদিন হঠাৎই রেশমী একটি গোপন খবর পেল—কেউ তাকে গোপনে সাহায্য করছে। সে দেখতে পেল পুলিশ তদন্তে তার পাশে অনেক সহযোগিতা করছে।
সে ভাবল, “হয়তো সেই অজানা নাম্বারের লোকটাই এ বার সামনে আসবে।”
মিলনের লোকেরা এবার রেশমীর বন্ধুবান্ধবদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করল। সবাই আতঙ্কিত, কিন্তু রেশমী তাদের সাহস জুগালো।
“আমাদের একসাথে থাকতে হবে। এখন বিভাজন নয়, ঐক্য দরকার।”
রেশমীর ভাষণ সবাইকে নতুন শক্তি দিলো। তারা প্রত্যেকে নিজেদের দায়িত্ব নিয়েছে—কেউ তথ্য সংগ্রহ করবে, কেউ সমাজে সচেতনতা ছড়াবে, কেউ আবার সরাসরি লড়াই করবে।
রেশমীর চোখে জ্বলছে এক অদম্য আলো, যে আলো নিঃশেষ হবে না যতদিন সত্য জিতে না যায়।
রেশমীর হৃদয় অস্থিরতার ঢেউ খেলছিল। প্রতিদিন একটু করে বেড়ে চলা ভয়, অনিশ্চয়তা আর একগুচ্ছ প্রশ্নের জালে সে নিজেকে আটকা পড়া মনে করছিল। কিন্তু সে জানত, এখন আর পিছনে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই।
এক রাতে, একা ঘরে বসে রেশমী মোবাইলে অজানা নাম্বার থেকে আসা মেসেজগুলো বারবার পড়ছিল—“তোমার পাশে আছি,” “ভয় পেও না,” “সব কিছু প্রকাশ পাবে।”
এই অদৃশ্য সাহায্যকারী রেশমীর জীবনে এক নতুন আশা জাগিয়ে দিলো।
রফিক ও রেশমীর এক গভীর পরিকল্পনা ছিল—মিলনের গোপন আস্তানায় ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করতে হবে।
এই মিশন ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, একবার ধরা পড়লে জীবন বিপন্ন। কিন্তু তারা জানত, অন্য উপায় নেই।
রেশমী ও রফিক রাতে সাবধানে মিলনের পেছনের কার্যালয়ের দিকে এগোতে লাগল। চারদিকে ছিল সিকিউরিটি ক্যামেরা আর তীক্ষ্ণ নজরদারি।
হৃদয় ধড়ধড় করছিল, প্রতিটি শব্দ যেন অস্ত্র হয়ে দাগ কেটেছিল তাদের কানে।
হঠাৎ পেছন থেকে একটি ছায়া এগিয়ে এলো। রফিক চিৎকার না করে রেশমীর হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিলো এক গোপন সুড়ঙ্গের ভিতর।
“চুপ করো, যদি শব্দ করো, আমরা ধরা পড়ব,” রফিক ফিসফিস করে বলল।
সুড়ঙ্গের শেষে তারা পৌঁছালো মিলনের প্রধান ডাটাবেজের সামনে। রেশমীর হাত কাঁপছিল, কিন্তু একনিষ্ঠতায় সে ইউএসবি ড্রাইভ প্লাগ ইন করল।
ততক্ষণে বাইরে দুই-তিনজন মিলনের লোক তাদের খোঁজে বেড়াচ্ছিল।
ডেটা ডাউনলোড শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে তারা পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড ধাওয়া শুরু করল।
রেশমী ও রফিক দ্রুত দৌড়ে নিরাপদ পথে, ঘন ঘন গুমোট শব্দ, হৃদয়ের স্পন্দন।
হঠাৎ গার্ডের একজন রেশমীর দিকে ছুটে এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করল। রেশমী হাত জোরে ধাক্কা মারল আর পালানোর সুযোগ পেল।
“তুমি একা নয়, আমি আছি,” রফিক কণ্ঠে দৃঢ়তা নিয়ে বলল।
রেশমী বাড়ি ফিরে এসে নিজের রুমে বসে পড়ল। মনে হচ্ছিল সে এক অদম্য যোদ্ধা। চোখের পলকে অশ্রু এসে গিয়ে বুকে আটকে গেলো।
“আমি পারব, আমার জন্য নয়, আমার দেশের জন্য,” সে নিজের সঙ্গে বলল।
রেশমীর শরীরে এখনও দৌড়াচ্ছিল সেদিন রাতের শিহরন। তবে তার মনে দৃঢ় সংকল্প ফুটে উঠেছিল—যে কোনো মূল্যে মিলনের গোপন মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
পরদিন সকালে, রেশমীর মোবাইলে একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন এলো।
"তোমার কথা থামাতে পারিনি... এবার শেষ সতর্কবার্তা," এক কণ্ঠস্বর ফিসফিস করল।
রেশমী জানল, শত্রুরা একেবারে নীচে নামে। কিন্তু সে ভয় পায়নি, বরং জ্বলে উঠল প্রতিহিংসার আগুন।
রফিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলো। রফিক বলল, "তুমি খুব বেশি ঝুঁকি নিচ্ছো, আর কিছুদিন অপেক্ষা কর, আমরা সবকিছু ভালোভাবে সাজাবো।"
রেশমী উত্তর দিল, "অপেক্ষা? আর কত ক্ষতি হবে? লোকেরা জানার অধিকার পায়নি এখনও।"
তাদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হলো, কিন্তু উভয়েই চেয়েছিল প্রকৃত সত্য সামনে আসুক।
রেশমী সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরছিল, পথেই তার দেখা হল এক অজানা মুখের সঙ্গে—একজন যুবক, যার চোখে মায়ার ছাপ।
"আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই," সে বলল।
রেশমী প্রথমে সন্দেহ করল, কিন্তু যুবকের চোখের সৎ ভালোবাসা তাকে ভরিয়ে দিলো।
জীবনে এই প্রথম কেউ তাকে এমন সান্ত্বনা দিল, যিনি শুধু কথা বলেনি, কাজ করতেও আগ্রহী। যুবকের নাম ছিল সাইফ। সে প্রমাণ করল তার সহায়তার হাত ছেড়ে দেবে না।
রেশমী, রফিক আর সাইফ মিলে নতুন পরিকল্পনা করল—একটি বড় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার, যেখানে তারা মিলনের ষড়যন্ত্র উন্মোচন করবে।
তারা জানত, এটি জীবনের ঝুঁকি নিতে হবে, কিন্তু সত্যের জয় ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
রেশমী একা বসে তার ভবিষ্যতের চিন্তা করছিল। হঠাৎ মেসেজ এল—
"সতর্ক থাকো, শত্রুরা এখন তোমার চারপাশে।"
তার বুক দ্রুত ধড়কছে, তবে মাথা নিচু করলো না।
পরের দিন প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলো। লাখো মানুষ রেশমীর পাশে দাঁড়ালো।
কিন্তু মিলন ও তার দোসররা এলো আরও বড় ছত্রভঙ্গ করতে।
রেশমীর জীবন আর তার আশেপাশের সবাই ঝুঁকিতে পড়লো।
সাইফের সাহসিকতায় রেশমী দ্রুত পরিকল্পনা করল একটি নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে।
তারা জানতো, সত্যকে আটকানো সম্ভব নয়, কিন্তু নিরাপদে থাকতে পারাটাই এখন সবচেয়ে বড় জয়।
চলবে.....
বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫
পরিচয়ের আড়ালে ৫
পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৫
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রেশমীর জীবনে দিন গুলো যেন একের পর এক ধোঁয়াশা ও আতঙ্কের পারাবার। সে ‘ছায়া’র সাহায্যে বড়ো অন্ধকারের মুখোমুখি হতে চলেছে।
রেশমী কলেজে গিয়ে দেখে, মিলন তার দিকে একদমই অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। যেন কিছু রটেছে, যা সে জানে না।
সে মিলনের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে চায়, কিন্তু সাহস করে না।
রেশমী ‘ছায়া’র সাথে মেসেজে কথা বলে। জানতে পারে ‘ছায়া’ একজন সাবেক পুলিশ অফিসার, যিনি কলেজের ভেতরের একটা বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচনে কাজ করছেন।
‘ছায়া’ বলে,
“মিলন ও তার দলের বিরুদ্ধে তোমার হাত শক্ত করতে হবে। আমি তোমাকে আইনি সাহায্য ও নিরাপত্তা দেব।”
রেশমী কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ অজানা লোকজন তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে চায়, কিন্তু সে বেগ পেয়ে দ্রুত চলে যায়।
সে বুঝতে পারে, তাকে শুধু ভয় দেখানোই নয়, বরং তার পথ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।
রেশমীর মোবাইলে আসে আরেক মেসেজ,
“সাবধান, তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষেও বিশ্বাস হারাবার সময় আসছে।”
রেশমীর মন কেঁপে ওঠে। তার মধ্যে একটা ভয় আছে, কিন্তু সে ঠিক করে, আর পিছিয়ে থাকবেনা।
রেশমীর মনে অসীম ক্লান্তি জমে উঠছে। প্রতিটি দিন যেন যেন এক নতুন যুদ্ধ। সে ‘ছায়া’র সাহায্যে মিলনের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করে।
সকাল
রেশমী কলেজের বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদের থেকে মিলনের নানা অজানা তথ্য সংগ্রহ করে। কিছু গোপন আলাপচারিতার রেকর্ডও পায়।
দুপুর
‘ছায়া’ রেশমীর কাছে আসে। বলে,
“মিলন শুধু তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে না, ওর সঙ্গে একটা বৃহৎ পাচার সিন্ডিকেট জড়িত। তাদের কৌশল খুবই পেশাদার।”
রেশমী অবাক হয়, এই ঘটনা এত বড় ছিল তা সে বুঝতেই পারেনি।
বিকেল
রেশমী দেখে তার ঘরের বাইরের গলিতে অচেনা লোকজন ঘোরাফেরা করছে। সে সতর্ক হয়ে ওঠে। ‘ছায়া’কে ফোন করে দ্রুত সাহায্য চায়।
রাত
রেশমী ‘ছায়া’র কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়, আজ রাতে সে স্কুলের পুরনো অফিসিয়াল কম্পিউটারে গোপনে ঢুকে যাবে, যেখানে মিলনের কিছু গোপন তথ্য থাকতে পারে।
তাকে যখন ঘর থেকে বেরোতে দেখে, এক পরিচিত মুখ—রফিক—তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
রফিক বলে,
“রেশমী, তোমার জন্য কিছু কথা আছে, যা তোমার জীবন বদলে দেবে।”
রেশমীর চোখে কৌতূহল আর ভয়, দুটোই মিশে যায়।
রেশমী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রফিকের কথা শুনতে শুরু করল। সে জানে, আজকের কথাগুলো তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
সন্ধ্যা
রফিক ধীরে ধীরে বলল,
“রেশমী, আমি তোমাকে ভয় দেখানো বা পেছনে ফেলে আসা কাউকে সাহায্য করতে চাই না। আমি আসলে সেই ‘ছায়া’।”
রেশমীর চোখ বড় হয়ে যায়, বিস্ময়ে জিহ্বা আটকে যায়।
রফিক আবার বলল,
“আমি অনেকদিন ধরে মিলনের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। আমার কাছে তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ব।”
রাত
রেশমী বিশ্বাস করতে পারছে না। কিভাবে রফিক তার জীবনের এত বড় অংশ হয়ে উঠলো? সে বুঝতে পারছে, ছায়া আসলে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রফিক বলল,
“আজ রাতে স্কুলের অফিসে গোপন তথ্য নেওয়ার সময় আমি তোমাকে রক্ষা করবো। আমরা একসাথে এই ষড়যন্ত্রের সুরাহা করব।”
রেশমী ধীরে ধীরে সাহস নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। সে জানে, সামনে অনেক বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু সে একা নয়।
রেশমীর জীবনে আজকের রাতটি ছিল অন্যরকম—একটা মোড়, যেটা তার ভবিষ্যত বদলে দেবে। রফিকের পরিচয় শুনে সে অভিভূত হলেও, একদিকে অজানা আশ্বাস পেয়েছে।
স্কুলের পুরনো অফিসে গোপন তথ্য খোঁজার জন্য রেশমী ও রফিক পরিকল্পনা করতে শুরু করল। রফিক বলল,
“আমাদের খুব দ্রুত কাজ করতে হবে। মিলন ও তার সঙ্গীরা এখনো সন্দেহ পায়নি যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে।”
রেশমী নিজের ভীতির মধ্যেও জোর করে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। সে জানে, ঝুঁকি থাকবেই, কিন্তু সত্যের জন্য লড়াই না করলে শান্তি মিলবে না।
সন্ধ্যার পর তারা চুপচাপ স্কুলের অফিসে ঢুকে পড়ল। পুরনো ফাইল, কম্পিউটার, ডেটা—সবকিছু জায়গায় ছিল, কিন্তু মিলনের গোপন তথ্য পাওয়া সহজ ছিল না।
রফিক কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড খুলে দিলেন, “এই পাসওয়ার্ড আমার কাছে আগে থেকেই ছিল।”
রেশমী মনোযোগ দিয়ে ফাইল স্ক্যান করতে লাগল। হঠাৎ সে দেখতে পেল কিছু ফাইলের নাম ছিল ‘অবৈধ লেনদেন’, ‘মাদক পাচার’, ‘ছাত্রদের ভয় দেখানো’।
হঠাৎ তারা বাইরে থেকে গাড়ির শব্দ শুনল। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রেশমী আতঙ্কিত হল। রফিক তাকে শান্ত করে বলল,
“শান্ত হও, আমরা নিরাপদ।”
কিন্তু গাড়ির শব্দ ধীরে ধীরে কাছে আসছিল, যেন কেউ তাদের অনুসরণ করছে।
একদল লোক দরজায় কড়া কড়া শব্দ করে থাপ্পড় মারতে শুরু করল। রেশমী হাড়ভাঙা ভয় পেয়ে গেল। রফিক ফোন করে বলল,
“এরা মিলনের লোক, আমাদের বের হতে হবে।”
তারা দ্রুত গোপন দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল। কিন্তু রেশমীর পা হঠাৎ পিছলে গেল। সে পড়ে গেল, আর তার হাতে থাকা ফ্ল্যাশড্রাইভ মাটিতে পড়ে গেল
রফিক তাকে দ্রুত তুলে নিল। দু’জনেই দ্রুত অন্ধকারের মধ্যে গা ঢাকা দিল। তাদের পেছনে লোকজন চিৎকার করছে, “ধরো! ধরা দরকার!”
রেশমীর হৃদয় দ্রুত ধড়ধড় করছে। সে বুঝতে পারল, এই যুদ্ধে হার মানা মানেই তার জীবনের শেষ।
রফিক বলে,
“আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। এটা শুধু তোমার বা আমার যুদ্ধ নয়, সবাইকে জড়াতে হবে।”
রেশমী সিদ্ধান্ত নিল, আগামীকাল সে তার নিকটতম বন্ধুবান্ধবদের খবর দেবে। তবে এখন সে জানত, এটা একাকীত্বের যুদ্ধ নয়, সত্যের পক্ষে সংগ্রাম।
চলবে...
মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
পরিচয়ের আড়ালে পর্ব ৪ ✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৪
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রেশমী সকালে কলেজে গিয়ে দেখল, আজ সবাই তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে। কেউ সরাসরি কথা বলছে না, কেউ হাসছে না। মনে হলো যেন কেউ তার পিছনে কথা বলছে।
সে নিজের বন্ধুদের কাছে গেলে, সবাই কিঞ্চিৎ রহস্যময় আচরণ করছে। বিশেষ করে সাফওয়ান। তার কথা বললেই যেন বাক্য গলছে না।
রেশমী কলেজ ক্যাফেটেরিয়ায় বসে মোবাইলে আগেরদিনের ডায়েরির পাতা আবার পড়ে। হঠাৎ দেখল একটি নাম বার বার এসেছে – “মিলন।”
সে বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মিলন কলেজের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যাকে সবাই ভয় পায়। কেউ তাকে প্রশ্ন করার সাহস পায় না।
রেশমী ঠিক করল, মিলনের কাছ থেকে কিছু তথ্য পেতে হবে।
রেশমী সাহস নিয়ে মিলনের অফিসে যায়। দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে বলে,
“আপনার সঙ্গে কথা বলতে হবে।”
মিলন মুচকি হাসে, “রেশমী, তুমি কি বুঝো কি ঝুঁকি নিচ্ছো? অনেক কিছু তোমার অজানা।”
“আমি জানি আমি ভয় পাচ্ছি, কিন্তু সত্য জানতে চাই।”
মিলন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“এই কলেজে এমন অনেক গোপন বিষয় আছে, যা প্রকাশ পেলে অনেকের পতন ঘটবে। আমি তোমাকে সতর্ক করছি, থামো। তুমি অনেক বড় বিপদের মুখে পড়ছো।”
রেশমী ফিরে আসার পথে ভাবতে থাকে —
“কি হতে পারে এই গোপন রহস্য? আদিব কেন এইসব বলেছিল? আর মিলন কেন ভয় দেখাচ্ছে?”
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠে,
“রেশমী!”
তাকে ঘুরে তাকাতে না দেখে সে দ্রুত সাঁড়াশি গলি দিয়ে চলে যায়।
রেশমী মোবাইলে আবার অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ পায়—
“তুমি একা নও। সাহস রাখো, সত্যের পথে এগোতে থাকো।”
— ছায়া
রেশমীর মন একদিকে ভয় পায়, অন্যদিকে জাগে নতুন আশা
রেশমী বুঝতে পারছে, এই রহস্য যেন তার জীবনের এক অদ্ভুত জালে তাকে আটকে ফেলেছে। কলেজের গোপন সত্য অনুসন্ধানে সে একা নয়, কিন্তু সে জানে না কারা তার সহায়ক, কারা শত্রু।
সকালবেলা
রেশমী কলেজের লাইব্রেরিতে যায়। সে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে আদিবের সম্পর্কে আরো তথ্য। পুরনো খবরের কাগজ, কলেজের রিপোর্ট, গোপন ডকুমেন্ট সব খুঁটিয়ে দেখে।
হঠাৎ সে একটি পুরনো নিবন্ধ পায়, যেখানে আদিবের মৃত্যুর কারণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছিল এটি সড়ক দূর্ঘটনা, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি।
রেশমীর মনে একবারে এক জ্বালা ধরল— ‘কত বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল সে?’
বিকেল
রেশমী নিজের ফোনে বারবার অজানা নাম্বারে কল দেয়, কিন্তু কেউ ধরে না। তখন এক মেসেজ আসে:
“দেখো, কখনো কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো না। সতর্ক থাকো।”
রেশমী অনুভব করে, সে যে বিপদের মুখোমুখি, সেটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও।
সন্ধ্যায়
কলেজ থেকে ফিরে রেশমী লক্ষ্য করে, কেউ তাকে নিরীক্ষণ করছে। গলি দিয়ে একজন ছেলেটি ধীরে ধীরে অনুসরণ করছে। সে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, কিন্তু ছেলেটি কাঁধ নাড়া দিয়ে চলে যায়।
রেশমীর মনে সন্দেহ জাগে, ‘সে কি সাহায্য করতে আসছে নাকি বিপদ ডেকে আনছে?’
রাতের বেলা
রেশমী নিজের ঘরে ফিরে দরজা তালা দেয়। হঠাৎ তার মোবাইলে আসে একটি গোপন ভিডিও, যেখানে দেখা যায় মিলন এক ব্যক্তির সাথে গোপন আলাপ করছে, যাকে সে ‘ছায়া’ বলে ডাকছে।
ভিডিওতে মিলন বলে,
“আমরা রেশমীকে থামাতে পারব, সে যদি আমাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করে তাহলে…।”
রেশমীর হৃদয় হিম হয়ে যায়।
রেশমী হৃদয় ভেঙে পড়ে যখন ভিডিও দেখে। সে বুঝতে পারে, মিলন শুধু তাকে ভয় দেখাচ্ছে না, আসলে তার জীবনের ওপর বড়ো সংকট এসে পড়েছে।
পরদিন সকাল
কলেজে পৌঁছে রেশমী সতর্ক হয়ে চলাফেরা করে। আর বন্ধুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দূরত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ কেউ আর তার পাশে নেই বলে মনে হয়।
সে নিজের নিরাপত্তার জন্য কলেজে কাউকে বিশ্বাস করার সাহস পায় না।
অজানা ফোন থেকে আবার মেসেজ আসে, “বিশ্বাস করতে শিখো, তবে সাবধান থেকো।”
রেশমীর মনে প্রশ্ন জাগে—
“কার থেকে আসছে এই সাহায্য? আর কারা আমাকে মেরে ফেলতে চায়?”
সন্ধ্যায়
কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে রেশমী দেখে, কেউ তাকে দীর্ঘক্ষণ অনুসরণ করছে। সে দ্রুত গলিতে ঢুকে অন্য রাস্তা ধরে পালানোর চেষ্টা করে। তার হৃদয় অস্থির হয়ে ওঠে।
রাতের বেলা
রেশমী বাড়িতে একা বসে সিদ্ধান্ত নেয়, যে সত্য উদঘাটনে থেমে যাবে না, যতই বিপদ আসুক।
সে ফোন খুলে ‘ছায়া’র নাম্বারে বার্তা দেয়,
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই, আমাকে সাহায্য করো।”
কিছুক্ষণ পরে ফোনে এসে আওয়াজ,
“সব ঠিক হবে। তোমার পাশে আছি।”
রেশমীর চোখে অশ্রু ঝরে, সে বুঝে—
এখন থেকে তার জীবন আর আগের মতো হবে না।
চলবে...
#পরিচয়ের_আড়ালে
#পর্ব৭
#গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
পরিচয়ের আড়ালে পর্ব – ৩ ✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৩
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রাত তিনটা পেরিয়েছে। আয়নার সেই “S” অক্ষর যেন এখনও ঝিলমিল করছে রেশমীর চোখে। বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও তার মনে শান্তি নেই।
“S মানে সাফওয়ান?”
“নাকি অন্য কেউ?”
পরদিন সকাল।
রেশমী কলেজে গিয়েও স্বাভাবিক থাকতে পারছিল না। ক্লাসে স্যারের প্রশ্নে সে মনোযোগ দিতে পারছে না। মনটা বারবার চলে যাচ্ছে সাফওয়ানের দিকে। তার হাবভাব, চোখের ভাষা, কথার ভঙ্গি — সব কিছুতেই কিছু একটা গোপন সংকেত যেন সে খুঁজে পাচ্ছে।
রেসেসে হঠাৎ সাফওয়ান তার পাশে এসে বসে।
— "তুমি ঠিক আছো তো?"
— "হ্যাঁ... মানে... কেন?"
— "তুমি কেমন যেন বদলে গেছো। কিছুর জন্য ভয় পাচ্ছ?"
রেশমী হঠাৎ বলেই ফেলে, "তুমি কি… ছায়া?"
সাফওয়ান থমকে যায়। কিছু বলার আগে হেসে ফেলে, "ছায়া? এটা আবার কে?"
তারপর মাথা নেড়ে উঠে যায়।
রেশমী ঠিক বুঝে উঠতে পারে না – সে সত্যি কিছু জানে না, নাকি জানেও, কিন্তু লুকোচ্ছে?
একইদিন বিকেলে...
রেশমীর মোবাইলে আবার অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে:
“সঠিক পথে চলছো, কিন্তু পথটা কাঁটার। আজ সন্ধ্যা ৬টায় কলেজ লাইব্রেরির পুরনো আর্কাইভ রুমে এসো। কিছু বলার আছে।”
– ছায়া
রেশমী প্রথমে দ্বিধায় পড়ে। এই ছায়া তার সাহায্য করেছে ঠিকই, কিন্তু এবার নিজেই দেখা করতে বলছে।
এটা কি ফাঁদ?
নাকি, সত্যিই সময় এসেছে মুখোমুখি হবার?
সন্ধ্যা ৬টা — আর্কাইভ রুম
রেশমী ধীরে ধীরে পা ফেলে নির্জন পুরনো লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ করে। বাতাসে ধুলোর গন্ধ, পুরনো বইয়ের সোঁদা গন্ধের সাথে মিশে এক ধরনের অদ্ভুত শীতলতা।
হঠাৎ একটা ছায়ামূর্তি চোখে পড়ে।
— "তুমি এসেছো… আমি জানতাম।"
একজন ছেলেকে দেখা যায়। মুখ ঢেকে রেখেছে কালো হুডির নিচে।
তার গলার স্বর যেন পরিচিত, কিন্তু রেশমী কিছুতেই চিনতে পারছে না।
— "তুমি কে? কেন আমাকে সাহায্য করছো?"
— "কারণ তুমিই সেই… যার জীবন বাঁচিয়ে আমার জীবন পেয়েছি।"
— "মানে?"
ছেলেটা মুখ খোলে না। শুধু একটা ডায়েরি রেশমীর হাতে দিয়ে বলে:
“এই ডায়েরিটা পড়ে নাও। আমি সব লিখে রেখেছি। তুমি একা নও। তুমি শুধু একটা গল্পের চরিত্র না — তুমি গল্পটা নিজে। আমি আবার আসবো। কিন্তু সময় হলে।”
তারপর ছেলেটি মিলিয়ে যায় অন্ধকারের ভেতরে।
রাত ১১টা — রেশমীর ঘর
রেশমী ডায়েরিটা খুলে পড়ে। প্রথম পাতায় লেখা:
“আমার নাম আদিব। তুমি আমাকে চিনবে না। কিন্তু আমি তোমাকে জানি সেই ছোটবেলা থেকে, যখন তুমি নদীর ধারে পড়ে গিয়েছিলে আর আমি তোমাকে টেনে তুলেছিলাম। তারপর তোমার পরিবার চলে গিয়েছিল শহরে, আর আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায়।”
রেশমীর চোখে জল চলে আসে।
"আদিব?"
সে মনে করার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে মনে পড়ে যায় —
একজন ছোট্ট ছেলেকে,
নদীর ঘাটে একবার ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে একটা হাত টেনে তুলেছিল তাকে।
সে ছিল আদিব।
পরদিন...
রেশমী পুলিশ স্টেশনে গিয়ে চুপিচুপি খোঁজ নেয় — আদিব নামের কেউ কি সেই রাতে ফোন করেছিল?
এসআই কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলে,
"আদিব নাম বলেছিল ঠিকই, কিন্তু নাম্বার ট্রেসে কোনো ডাটা নেই। খুব পুরনো ধাঁচের এনক্রিপ্টেড সিগন্যাল ছিল।"
রেশমী যেন বোঝে — আদিব চায় না কেউ তাকে খুঁজে পাক। কিন্তু কেন?
রেশমী ডায়েরির শেষ পাতায় এক লাইন লেখে দেখতে পায়:
"যদি সত্য জানতে চাও, কলেজের পুরনো মাল্টিমিডিয়া রুমে গিয়ে প্রজেক্টর চালাও — ফাইলের নাম: ‘ছায়া_রহস্য.mp4’"
রেশমীর হাত কাঁপতে থাকে। সে বুঝে যায় —
এই গল্প এখনই শেষ হওয়ার নয়।
বরং এখন থেকে শুরু হতে যাচ্ছে “ছায়া”-র আসল পরিচয় উন্মোচনের লড়াই।
রেশমীর হৃদয় দ্রুত দ্রুত ধড়কাচ্ছে। ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা সেই নামের ফাইলের কথা মনে পড়ে। পুরনো মাল্টিমিডিয়া রুম, যেখানে কলেজের শতাব্দী প্রাচীন projector এখনো খাড়া আছে।
সন্ধ্যার পর রেশমী চুপচাপ সেই রুমে পৌঁছায়। ভেতর ঢুকে একটি পুরনো ল্যাপটপ চালু করে, dusty projector-এর সামনে বসে পড়ে।
ফাইলের নাম “ছায়া_রহস্য.mp4”। দুঃসাহসিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সে প্লে বোতাম টিপে দেয়।
স্ক্রিনে ঝলমলে আলো ফুটে ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায় এক যুবক, যাকে রেশমী চেনেন— সে আদিব! তবে বেশ দুশ্চিন্তায় ও গভীর ভেবে আছে। তার চোখে যেন অজানা আতঙ্ক।
ভিডিওতে আদিব বলে:
“যারা আমার কথা শুনবে, তারা জানুক... কলেজের কিছু লুকানো সত্য আছে, যা প্রকাশ পেলে অনেকের অশুভ কাজ ফাঁস হবে। আমার পরিবার শুধু একটি বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়নি, এই কলেজেও আছে অন্ধকারের ছায়া।”
তারপর ভিডিও কেটে যায়। পরের ক্লিপে দেখা যায় কিছু গোপন দস্তাবেজ, যেখানে গোপন চুক্তি, অবৈধ কাজের নাম লেখা। College authority-এর পরিচিত নামও আছে।
রেশমীর মাথা গরম হয়ে আসে। সে বুঝতে পারে, তার জীবনে যে বিপদের আগামি ছায়া পড়েছে, তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়— অনেক বড় একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
হঠাৎ ভিডিও থেমে যায়। রেশমী মোবাইলে ফোন পায়। নাম্বার আবার সেই অচেনা, “ছায়া” এর।
"তুমি সঠিক পথে এগুচ্ছো, কিন্তু সাবধান। তোমার চারপাশে চোখ রাখো।"
রেশমীর ঘাম ছুটে আসে। সে বুঝে যায়—
এবার বিপদ আর দূরে নেই।
পরের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে একটা গোপন হুমকির বাতাস পায় রেশমী। তার পাশ থেকে এক অচেনা ছেলে আস্তে আস্তে চলে যায়, চুপিচুপি তাকে অনুসরণ করে।
তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি বলে,
“ছায়া আমি নই, তবে তুমি নিজের পা আরো গভীরে ফেলছো। দূরে যাওয়া ভালো।”
রেশমীর মনে প্রশ্ন জাগে—
এই ছেলেটি কে?
সে কেন এড়িয়ে যেতে বলল?
আর এই ছায়ার আসল পরিচয় কী?
পরিশেষে রেশমী ডায়েরির পাতা উল্টায় আরেক লাইন দেখে:
চলবে....
বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫
পরিচয়ের আড়ালে পর্ব – ২ ✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ২
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
আয়নার দিকে তাকিয়ে রেশমী কয়েক সেকেন্ড চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘুম জড়ানো চোখে বিশ্বাস হচ্ছিল না সে যা দেখছে, সেটা সত্যি কিনা।
আয়নায় স্পষ্ট লেখা – “আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো। আমাকে খোঁজো না, শুধু বিশ্বাস রেখো।”
লেখাটা যেন ধোঁয়ার মতো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল আয়নায়। রেশমী চিৎকার করে পেছনে ঘুরে দেখে – কেউ নেই। ঘরে একা। বুক ধকধক করছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার সেই অজানা নাম্বারে কল দেয় — বন্ধ।
কে এই লোক?
কীভাবে জানে সে কখন কী করছে?
জানালার খবর, আয়নার লেখা, পুলিশের আগমন... সবই কীভাবে সম্ভব?
কিছু না ভেবে হঠাৎই একপ্রকার আতঙ্কিত হয়ে, নিজেকে শক্ত করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে সে — লক্ষ্য থানায় যাওয়া। কিন্তু কিছুদূর যেতেই হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ তাকে দেখে বলল,
"মেয়ে, তুমি রেশমী না? তুমি ঠিক আছো তো? তোমার চোখে তো ভয়..."
রেশমী অবাক, "আপনি আমাকে চেনেন কীভাবে?"
"চিনি না। কিন্তু কেউ একজন আমার হাতে এই চিরকুট দিয়েছিল। বলেছিল, তুমি আসবে এখান দিয়ে। আমাকে দিতে বলেছে।"
চিরকুটটা কাঁপা হাতে নেয় রেশমী। তাতে লেখা:
“তোমাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। থানা যেও না এখন। তারা জানে তুমি কী করতে চাও। পুলিশে কেউ কেউ তাদের পক্ষেও কাজ করছে। বাড়ি ফিরে যাও। নিরাপদ থাকো।”
রেশমীর শরীর কেঁপে ওঠে। বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকাতেই সে আর দাঁড়িয়ে নেই — যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
রেশমী ঘাবড়ে গিয়ে ফিরে আসে বাসায়। মাথার ভেতর ঘুরপাক খায় একটাই প্রশ্ন:
কে এই লোক? সে কী চায়? সে কী সত্যিই তাকে রক্ষা করছে, না নতুন কোনো ফাঁদে ফেলছে?
সেই রাতে...
রেশমী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।
ঠক ঠক ঠক!
সে ধীরে ধীরে গিয়ে দরজায় কান রাখে। কেউ যেন নিঃশ্বাস ফেলছে ওপাশে। ভয় আর কৌতূহল একসাথে। দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। শুধু নিচে পড়ে আছে একটা পুরনো খামে মোড়া চিঠি।
চিঠিতে লেখা:
“আমি তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখি। সবসময়।
তুমি যা করো, আমি জানি।
তুমি যাদের বিশ্বাস করো, তাদের বিশ্বাস করো না।
বিশ্বাস করো শুধু ‘ছায়া’কে।
কারণ ছায়া কখনও মিথ্যে বলে না।”
চিঠির নিচে লেখা: – তোমার ছায়া
রেশমীর গা শিউরে ওঠে। সে জানে না কী বিশ্বাস করবে, কার ওপর নির্ভর করবে।
তবে একটা কথা সে ঠিক বুঝে গেছে – এই রহস্যময় ব্যক্তি তাকে বাঁচিয়েছে, এবং এখনো অনুসরণ করছে।
পরদিন সকালে...
রেশমী কলেজে যায়। সবার চোখে সে আজ হিরো। কারণ আগের দিনের খবর ছড়িয়ে গেছে — একটি গণধর্ষণ চক্র ধরা পড়েছে, একজন মেয়েকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পুলিশ, আর সেই মেয়ে হচ্ছিল রেশমী।
কিন্তু কেউ জানে না সেই অজানা নাম্বারের কথা। জানে না সেই “ছায়া”-র কথা।
কলেজের করিডোরে হঠাৎ এক নতুন ছেলে, নাম সাফওয়ান, রেশমীর সামনে এসে দাঁড়ায়।
"তুমি ঠিক আছো?" — জিজ্ঞেস করে ছেলেটি।
রেশমী ভদ্রভাবে মাথা নাড়ে। সাফওয়ান একটু হেসে বলে, "তুমি জানো, সব নায়কের মুখ দেখা যায় না। কেউ কেউ ছায়ার মতো কাজ করে যায়।"
রেশমী থমকে যায়। সে কিছু বলতে চায়, কিন্তু তখনই ক্লাস বেল পড়ে।
সে বুঝতে পারে — সাফওয়ান হয়তো কিছু জানে। কিংবা... সাফওয়ানই সেই “ছায়া”?
রাত ৩টা। রেশমী আবার একবার ঘুম ভেঙে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
এইবার লেখা: “তোমার ছায়া আজ তোমার সামনে এসেছে। কিন্তু তুমি চিনতে পারোনি। সময় এলে সব জানবে।”
আয়নার কোণায় হালকা করে আঁকা একটি অক্ষর – “S”
রেশমীর কাঁপা ঠোঁট ফিসফিস করে, “S মানে সাফওয়ান? নাকি অন্য কেউ?”
আশেপাশে শীতল বাতাস বইতে থাকে। বাইরের অন্ধকার যেন আরেকটা অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে…
চলবে…
#পরিচয়ের_আড়ালে
#পর্ব২
#গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
৩য় পর্ব লিংক