মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

আপু থেকে বউ পর্ব ৪ লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

আপু থেকে বউ

পর্ব ৪

লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ




রাত ৩:১১

ছাদে একপাশে চুপচাপ বসে আছে গিয়াস।
হাতে একটা লোহার ছোট বাক্স। ভিতরে কি?

কেউ জানে না, এমনকি জারা-ও না।

সে বাক্সটি খুলে ভেতর থেকে বের করে ছোটখাটো কিছু যন্ত্রপাতি—কিছু অস্ত্রর অংশ, আর কিছু ইলেকট্রনিক সেন্সর।
তার চোখে চাপা গম্ভীরতা, ঠোঁটে মৃদু বিড়বিড়ানি—
"এবার যদি আসে... কাউকে ছেড়ে দেবো না।"

দূরে, ছাদের এক কোণে সে নিজের হাতে বানিয়ে রেখেছে একটি ছোট রুম—কনক্রিট, ইস্পাত আর লুকোনো ক্যামেরায় ভর্তি।
কেউ ভাববেই না এটি জারার জন্য প্রস্তুত এক নিরাপদ আশ্রয়
কিন্তু সে এটা জানে না...


সকাল জারা ঘুম ভেঙে দেখে গিয়াস নেই।

টেবিলে পড়ে আছে গিয়াসের মোবাইল।
অজান্তেই স্ক্রিন ট্যাপ করে ফেলে—
ওপেন হয় একটি পুরনো গ্যালারির ফোল্ডার

ছবিগুলো দেখে জারা হকচকিয়ে যায়।

একটি ছবি—তার ৩ বছর আগের, যখন সে সিলেটে এক্সিডেন্টে পড়েছিল।
তখন তার আশেপাশে কেউ ছিল না—তবু ছবিটা কেউ তুলেছে।

— “এই ছবি এখানে কীভাবে?”

সে আবার খেয়াল করে—পেছনে, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছায়ামূর্তি। ফেস ব্লারড, কিন্তু গড়ন... গিয়াস?

জারার মনজুড়ে এক নতুন ভয়।


ডিপার্টমেন্ট এসআই সুমিত ফাইল হাতে হাসিমুখে হাজির।

— “ম্যাডাম, সোহেল চৌধুরী সম্পর্কে নতুন তথ্য। লোকটা বাম হাতি। সে সব সময় বাঁ হাতে অস্ত্র ধরত।”

— “তুমি নিশ্চিত?”
— “ডিবির ফাইল বলছে তাই।”

জারা মাথা নাড়লো।

কিন্তু ভিডিও ফ্রেমে সে যেটা দেখেছিল... সেখানে সোহেল স্পষ্টভাবে ডান হাতে বন্দুক ধরেছিল
কিছু একটা মিলছে না।

সুমিত কফি টেবিলের নিচে চুপিচুপি গিয়াসের একটি চাবির রিং ফেলে রেখে দেয়

সে জানে, একদিন কেউ এই চাবি খুঁজে পাবে… সোহেলের পুরনো অফিসে।


রওশন করিম

সন্ধ্যায় ফোন আসে—
রওশন করিম মারা গেছেন।

জারা স্তব্ধ হয়ে যায়।
হাসপাতাল বলে হৃদরোগে মৃত্যু

কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জারা নিজে চোখে দেখে গলায় হালকা ইনজেকশনের চিহ্ন

সে যেন কেঁপে ওঠে।

— “রওশন ভাই তো একদম ঠিক ছিলেন কাল! ইনজেকশন কেন?”

তদন্তে নেমে জারা বুঝতে পারে—হাসপাতালের CCTV ফুটেজ ডিলিট করা
যেই রাতের ঘটনা, সেই ফাইল গায়েব!


অতীত: ডায়েরির পাতা রাতে বিছানায় ফিরে এসে জারা তার পুরনো ডায়েরির পাতা উল্টাতে থাকে।

একটি পাতায় চোখ আটকে যায়—

“২০০৯, স্কুলে সোহেলের ভাই হাসানকে মারধর করেছিলাম।
সে নাকি আমাদের বাসায় চুরি করতে এসেছিল।
পরে বাবা চেপে যেতে বলেছিল।
কিন্তু সোহেল আমাকে হুমকি দিয়েছিল—‘তোর জীবনটা আমি চুরি করব একদিন’।
হাসান মারা গেছে। আমি জানি না সেটা কাকতালীয় না পরিকল্পিত।”

আরেকটি পাতায়—

“সোহেলের নামে একবার আমি হেডমাস্টারকে গোপনে চিঠি দিয়েছিলাম।
সে নাকি গাঁজা খায়, বলেছিলাম। সে তখন স্কুল থেকে সাসপেন্ড হয়।”

জারা থমকে যায়।

সে জানতো না, এতকিছুর শেকড় এত পেছনে।


রাত গিয়াস এসে দেখে, টেবিলে খোলা জারার ডায়েরি।

সে এগিয়ে গিয়ে পড়ে—

“গিয়াস কি সত্যি বলছে?
আমি তাকে বিশ্বাস করি… নাকি করি না?”

তার মুখে মৃদু হাসি, আবার চাপা কষ্ট।

ঠিক তখনই, জারার ফোনে আসে এক ইনকামিং কল।
অপর প্রান্ত থেকে কণ্ঠ ভেসে আসে—

"তুমি তোমার বরের গোপন পেনড্রাইভ দেখেছো...
এবার দেখো আমারটাও।"

স্ক্রিনে ভেসে ওঠে জারা-গিয়াসের বিয়ের ভিডিও ফুটেজ

ক্যামেরা ধীরে ধীরে প্যান করে এক কোণে দাঁড়ানো এক মানুষকে ফোকাস করে।

সোহেল চৌধুরী!

সে সেই সময়ও ওদের আশেপাশে ছিল!


ক্লিফহ্যাঙ্গার গিয়াস জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল।

জারা ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরে বলে—
— “তুমি আমার ছায়ার নিচে ছিলে সব সময়… নাকি আমি তোমার নিশানায়?”

গিয়াস চোখ বন্ধ করে ধীরে উত্তর দেয়—
— “জারা, তুমি কি আমাকে সত্যি চিনতে চাও?”

পরবর্তী সেকেন্ডেই আলো নিভে যায়।
বাইরে গুলির শব্দ।
ছাদের দিক থেকে ভেসে আসে চিৎকার:

— “তাকে ধরো! সে পালাচ্ছে!”


চলবে…

৫ম পর্ব লিংক 

https//wwwnexstpartfiverepisot.com

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন