আপু থেকে বউ পর্ব ৭ গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

আপু থেকে বউ

পর্ব ৭

গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ


৮,৯


 অজ্ঞান থেকে জেগে ওঠা


ঘোলাটে আলো, ঘন ঘন ফ্ল্যাশ...

জারা চোখ খুলে দেখে সে একটি পুরানো ঘরে শুয়ে, একদম একা।


কাঁধে হাত রাখতেই চমকে ওঠে—

সামনে দাঁড়িয়ে এক যুবক।


কোমরে লেদার জ্যাকেট, চোখে দুঃখের ছায়া।


> “তুমি চিনতে পারছো না, তাই তো?”


জারা তাকিয়ে থাকে। যুবক ধীরে মাস্ক খুলে ফেলে।

একই চোখ, মুখের বাঁ পাশে সেই পুরোনো দাগ…

আর গলায়... সেই লকেট, যা তার নিজেরটার মতোই!


> “রাহাত…?”


> “তুমি আমাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে চলে গিয়েছিলে জারা... আমি তোমার ভাই।”


হ্যলুসিনেটিং রিইউনিয়ন


হঠাৎ ঘর অন্ধকার হয়ে যায়।

এক ঝলক আলোয় জারা দেখে… সামনে তার শৈশবের সেই খেলার দিন।

রাহাত আর সে মাঠে দৌড়াচ্ছে…

মা দাঁড়িয়ে হাসছে।


> “রাহাত... তুমি মরোনি? বাবা তো বলেছিল তুমি…!”


রাহাত চোখ বন্ধ করে ফিসফিসায়:


> “তোমার সেই বাবাই আমার মৃত্যু সাজিয়ে দিয়েছিল।

> কারণ, আমি জানতাম তার হাত রক্তে রাঙা!”


লাইভ ভিডিও – সোহেলের শয়তানি


ঘরের এক কোণ থেকে বেজে ওঠে স্ক্রিন।

সামনে আসে সোহেল চৌধুরীর মুখ। চোখে হালকা রক্তচোখা হাসি।


> “গিয়াস, তুমি তো ভাবছো আমি শেষ?

> শুনো, তোমার মা… বেঁচে আছেন।

> আর তিনি এখন আমার হাতেই বন্দি।”


ক্যামেরা প্যান করে এক নারীর দিকে—

চুল সাদা, চোখে জল, ঠোঁটে ফিসফিস:


> “গিয়াস… আমার ছেলে… আমায় বাঁচা…”


গিয়াসের চোখ কাঁপে।

সে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে, সারা শরীর ঝাঁকিয়ে উঠছে।


আত্মপরিচয়ের রক্তঝরা যুদ্ধ


গিয়াস পড়ে যায় হাঁটু গেড়ে।


> “আমি সোহেলের রক্ত...

> অথচ ওর প্রতিটা রক্তবিন্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি!”


> “আমার মা তার বন্দি, আমার ভালোবাসা তার শত্রু,

> আর আমি… নিজের অস্তিত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত!”


জারা পেছন থেকে গিয়াসকে জড়িয়ে ধরে।


> “তুমি আমার গিয়াস।

> রক্তের নয়… হৃদয়ের সম্পর্ক বড়।”


 গোপন পরিকল্পনা ও প্রতিশোধের প্রস্তুতি


রিজভী এসে পড়ে, গোপনে ট্র্যাক করে সোহেলের অবস্থান—

এক পরিত্যক্ত কারখানা, শহরের বাইরে।


তিনজন একসাথে প্রস্তুতি নেয়:


* রিজভী: হ্যাক করে রিমোট সিস্টেম ব্লক করে

* গিয়াস: তার বাবার পুরোনো ডায়েরি থেকে স্ট্র্যাটেজি খুঁজে

* জারা: পুলিশের পরিচয়ে লোকেশন ‘সিল’ করার ফরমালিটি তৈরি করে


কিন্তু...


 বিশ্বাসের পরীক্ষা – রাহাতের দ্বিধা


গোপন ক্যামেরা দেখে রিজভী চমকে ওঠে—

রাহাত সোহেলের সাথে ফোনে!


> “সব কিছু তো ঠিক চলছে...

> ওরা ভাবছে আমি তাদের ভাই।

> আসলে, আমি শুধু প্রতিশোধ চাই…”


কিন্তু সেই মুহূর্তে রাহাত কাঁপতে থাকে। গলায় হাত বুলিয়ে, চোখে জল:


> “কিন্তু… ও তো আমার বোন।

> আমি কি সোহেলের মতো হতে পারি?”

 ফাইনাল কনফ্রন্টেশন


সন্ধ্যা ৭টা, সোহেলের আস্তানা।


জারা-গিয়াস-রিজভী ঢোকে।


মাঝখানে বন্দি মা, তার চোখে জল।

সোহেল একদম সামনে দাঁড়িয়ে, হাতে রিভলভার।


> “তোমরা আমার রক্তকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করালে।

> এবার শেষ দৃশ্য দেখো…”


এক গুলির শব্দ!


জারা চিৎকার—

কেউ পড়ে যায়।

 রাহাতের চিৎকার


রাহাত দৌড়ে আসে। চোখ ফেটে জল—


> “আমি তাকে গুলি করিনি!

> গিয়াস… গিয়াস নিজেকে শাস্তি দিয়েছে!”


জারা হাঁটু গেড়ে বসে—

রক্তে ভেজা গিয়াস, বুকের বাম পাশে গুলির চিহ্ন।


> “আমি নিজের ভেতরের দানবটাকে… নিজের হাতেই শেষ করলাম…

> কারণ আমি... তোমাদের কষ্ট আর দেখতে পারছিলাম না…”


মা ধীরে এসে মাথায় হাত রাখে।


> “তুমি আমার সন্তান…

> যে সত্যের জন্য নিজের রক্ত দিল।”


 শেষ প্রশ্ন – কে রইলো?


* রাহাত কাঁদছে, জারার হাত ধরেছে—“তুমি আমায় ক্ষমা করো…”

* জারা মাথা নিচু করে—“ভাই, তুমি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলে…

  কিন্তু এখন আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি… বিচার করার মতো!”


গিয়াস অচেতন।

ডাক্তার আসছে।



"জারা নিজের চোখে শেষবার গিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলে—

> 'যদি ফিরে না আসো… তবে প্রতিশোধ আমার হবে, প্রেম নয়।'"



হাসপাতালের করিডোরটা নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে স্ট্রেচারের চাকার শব্দ যেন গুলির প্রতিধ্বনি হয়ে কানে বাজে। জারা হঠাৎ নিজের নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পায়। একেবারে গলার গভীর থেকে উঠে আসা একটা ক্রন্দন, যেটা তার নিজেরও অচেনা।

ডাক্তার বের হয়ে এসে বলে, "হার্টবিট নেই... আমরা চেষ্টা করেছি। গিয়াস হোসেন আর নেই।"

তারপরে পৃথিবী যেন থেমে যায়। জারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ে। সবাই ছুটে আসে তাকে সামলাতে, কিন্তু ওর চোখ আটকে থাকে একটা জিনিসে—গিয়াসের ডান হাতের তর্জনী। সামান্য এক কম্পন। এত ক্ষীণ যে কেউ খেয়ালই করেনি। কিন্তু জারা বুঝে যায়—ও বেঁচে আছে। ইচ্ছে করেই মিথ্যে মৃত্যু দেখাচ্ছে! সিক্রেট রুমে

রাহাত ও জারা মুখোমুখি। রাহাতের চোখে অনুশোচনা আর আগুন—এক অদ্ভুত মিশ্রণ।

"তোমার বাবাকে সোহেল খুন করেছিল... কারণ উনি আমার মাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন।"

জারার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে ওঠে। "তোমার মা?"

ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায়—জারার বাবা, পুলিশ অফিসার আজিজুল হক, সোহেলের ড্রাগ কার্টেলের হোতাদের আটকাতে গিয়ে একটি গোপন ঘরে ঢুকেন। সেখানেই বন্দি ছিলেন রাহাতের মা। কিন্তু পালানোর আগে, গুলিতে আজিজুল হক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।


হাসপাতালে গিয়াসের রুমে:

গিয়াস এখনও অচেতন। পাশে বসে রিজভী গিয়াসের ফোনটা হাতে নেয়। আচমকা সে একটি ট্র্যাকিং অ্যাপ পায়। রিজভীর মুখের রেখা টান হয়ে যায়।

"সোহেলের লোকজন এখনো সক্রিয়!"

সে জানালা দিয়ে তাকায়। তার চোখে অদ্ভুত এক দ্বিধা। দর্শক বুঝবে কিছু একটা লুকানো আছে ওর মধ্যে। সে ধীরে ফোনের স্ক্রীন অফ করে ফেলে।


রিজভীর রুম, রাতে:

রিজভী একা বসে। সামনে তার ল্যাপটপে একটি এনক্রিপ্টেড ফোল্ডার ওপেন। একে একে ফাইলগুলো খুলতে থাকে। হঠাৎ একটি ফোল্ডারে লেখা—“বাবা ও ভাই”

ভেতরে: সোহেলের সঙ্গে রিজভীর ছোটবেলার ছবি। ক্যাপশন: “আমার একমাত্র কন্যা, রিজভী। সে ভবিষ্যতে আমার উত্তরাধিকারী হবে।”

রিজভীর চোখে পানি আসে, কিন্তু সে গলার স্বর শক্ত করে ফিসফিস করে:

"আমি তোমার উত্তরাধিকারী হব না, সোহেল। আমি গিয়াসের পাশে আছি... ভাই হিসেবে না, ভালোবাসা হিসেবে।"


রাত ৩টা | জারার বাসা

জারা গিয়াসের জড়িয়ে ধরা একটা নোট খুঁজে পায়। ভাঁজ খুলতেই পড়ে—

“জারা... সোহেলের শেষ টার্গেট তুমি নও... আমাদের সন্তান!”

জারার মুখ ফ্যাকাশে। সে টেবিলের ড্রয়ারে হাত ঢুকিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বের করে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘Positive’

তার চোখ ছলছল করে ওঠে।

ঠিক তখনই ফোন বেজে ওঠে। অপর প্রান্ত থেকে দুর্বল, কর্কশ এক কণ্ঠ:

“ওর নাম রাখবে... রাহাত?”

স্ক্রিন ব্ল্যাকআউট।


চলবে...

0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন