আপু থেকে বউ
পর্ব ৮
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
১০,১১হাসপাতালের করিডোরে ছায়া আর নৈঃশব্দ্যের রাজত্ব। ডাক্তারেরা ঘর থেকে বেরিয়ে একে একে মাথা নেড়ে চলে যায়। সবাইকে জানান হয় — "গিয়াস মারা গেছে।"
জারা স্তব্ধ। তার চোখে জল নেই, কেবল এক ধরনের আতঙ্ক জমে আছে।
হঠাৎ সে গিয়াসের ঠাণ্ডা আঙুলে মৃদু কাঁপুনি টের পায়। খুব ধীরে নড়ছে আঙুলটা। তার চোখ আটকে যায় ECG মনিটরে — সোজাসাপ্টা ফ্ল্যাট লাইন! কিন্তু... সেই যন্ত্রটাও একটু অস্বাভাবিকভাবে ঝাঁপছে মাঝে মাঝে!
হাসপাতালের সিসিটিভি কন্ট্রোলে হ্যাকার রিজভী বসে আছে। মনিটরে কোডিং চলছে, আরেকটি স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে — গিয়াসের বুকে ইলেক্ট্রোডে যুক্ত একটা ছোট সার্কিট!
রিজভী ফিসফিস করে, "তুই মরিস না ভাই... এখনো যুদ্ধ বাকি।"
সোহেল তার ডার্ক ওয়েব ল্যাবে দাঁড়িয়ে। সামনে খোলা একটি ল্যাপটপে টাইমার চলছে। ২৪ ঘণ্টা পার হলেই — অটো-মেইল ছড়িয়ে যাবে সর্বত্র: "গিয়াসের মা জীবিত নয়। সে ছিল একজন পেইড অ্যাক্ট্রেস।"
কিন্তু...
সোহেল জানে এটা মিথ্যে। সত্যিটা ভয়াবহ — গিয়াসের মা এখনো জীবিত, তারই ডেনের নিচতলায় বন্দি।
সোহেল কাঁদে না, কিন্তু তার চোখে ক্রুর আত্মবিশ্বাস।
"জারা... তোমার সন্তান আমার শেষ অস্ত্র। তুমি হারবে।"
রিজভী দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকার এক গ্যারেজে। তার ফোনে সোহেলের নাম দেখা যাচ্ছে। একটানে কল করে — কিন্তু শেষ মুহূর্তে ডিসকানেক্ট করে দেয়।
সে বলে ওঠে, "আমি পারবো না। তুমি আমার বাবা হলেও, আমি এখন আর অন্ধ নই।"
সে ব্যাগ থেকে তুলে আনে এক পেনড্রাইভ। তাতে থাকা কোড দিয়ে সে সোহেলের সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়।
"শুরু হলো বাবার পতন... মেয়ে হাতেই।"
হাসপাতালের রুমে গিয়াসের নিথর দেহের পাশে বসে জারা। চোখ বুজে সে একটা চিঠি বের করে। গিয়াসের হাত মুঠোয় ছিল।
"জারা... যদি কখনো আমি না ফিরি, আমাদের সন্তানকে রক্ষা করো। তার নাম রাখো 'রাহাত' — যেন সে জানে, প্রতিশোধ নয়, ভালোবাসাই সবশেষে জেতে।"
জারার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে উঠে দাঁড়ায় — গন্তব্য: কোথাও নিরাপদ। কিন্তু...
হাসপাতালের করিডোরে হঠাৎ সে থমকে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুমিত।
তার চোখে কোনও সহানুভূতি নেই। সে এগিয়ে আসে, হাতে ধরা একট সুই।
জারা পেছন দিকে সরতে থাকে, ফিসফিস করে: "তুমি এখনো সোহেলের হয়ে খেলছো, তাই তো?"
সুমিত বলে: "আমি কারও হয়েই খেলি না। আমি শুধু ফিরিয়ে দিচ্ছি... রক্তের ঋণ।"
ছয় বছর আগের রাত। আজিজুল হক বন্দুক নিয়ে ছুটে এসেছে গুদামে। সেখানে আছে সোহেলের ড্রাগ কার্টেল। সে হাসানকে বাঁচাতে এসেছিল। গুলির শব্দ, চিৎকার... তারপর নীরবতা।
দেয়ালে রক্ত লেখা: "অভিযানে মৃত্যু"।
কিন্তু একটা ছায়া দেখছিল সবকিছু। গিয়াসের মা। চোখে ভয়ের ছাপ। আর তখনই সোহেল পেছন থেকে এসে বলে: "তুই বললে মরবি... না বললে বন্দী হবি।"
রাত গভীর। হাসপাতালের বিদ্যুৎ চলে যায়। সিকিউরিটি লাইট ঝাঁপায়।
সোহেল মুখোশ পরে, বন্দুক হাতে ঢুকে পড়ে রুমে। গিয়াসের শরীর এখনো নিথর।
সোহেল গিয়াসের দিকে বন্দুক তোলে — "তোর খেলা শেষ।"
ঠিক তখনই — গিয়াসের চোখ খুলে যায়। সে ঠান্ডা কণ্ঠে বলে:
"তুমি আমাকে মারতে পারো... কিন্তু আমার সন্তানকে নয়।"
এক গুলির শব্দ।
শেষ দৃশ্য:
জারা পেছনে ঘোরে — সুমিত দাঁড়িয়ে আছে, হাতে সিরিঞ্জ। কিন্তু সে স্থির হয়ে গেছে।
তার চোখে কান্না।
পেছন থেকে একটা কণ্ঠ:
"সুমিত, শেষ করতে চাও? না মুক্তি দেবে নিজেকেই?"
গিয়াস দাঁড়িয়ে আছে, রক্তাক্ত, কিন্তু চোখে আগুন।
"জারা নিজের গর্ভে হাত রেখে বললো — আমি কিছুতেই হারবো না। তুমি আমার রক্ত... কিন্তু সে আমার ভালোবাসা।"
হাসপাতালের এক কোণায় রাখা একটি লাশ। মুখ ঢাকা, চোখ বন্ধ। ডাক্তার রিপোর্ট দেয় – "গিয়াস মৃত।"
কিন্তু...
একটি ফ্ল্যাশব্যাক:
রিজভী গিয়াসকে এক অদ্ভুত ইনজেকশন দেয়। "এই ড্রাগ তোর হার্টবিট বন্ধ করে দেবে দুই ঘণ্টার জন্য, ঠিক যেন তুই মারা গেছিস।"
সেই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল হ্যাক করা ECG মেশিন, আর হাসপাতালের লাশটা ছিল মোমের মতো দেখতে একটি ডামি।
আসল গিয়াস তখনই চলে গেছে — সোজা সোহেলের ডেনের ভিতরে!
সোহেলের ডেন – নিচতলায় এক বন্দি
গিয়াস নিঃশব্দে নামছে ডেনের নিচতলায়। দেয়ালের ভেতর থেকে শুনতে পায় — কারো কাশির শব্দ।
তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেই সে থমকে যায়।
একটি বুড়ি নারী, চুল সাদা, চোখ গভীর ক্লান্ত। কিন্তু মুখটা পরিচিত।
"মা...?"
নারী তাকিয়ে বলে, "তুই... গিয়াস? ওরা বলেছিল তুই পাগল হয়ে গেছিস।"
গিয়াস ভেঙে পড়ে। কিন্তু তখনই মা বলে ওঠেন, "সোহেল কখনো শিশু মারেনি। সে নিজের সন্তানের জন্য সব করতে পারে... কিন্তু তোদের জন্য? জানি না।"
জারাকে ধরে রেখেছে সুমিত। তার হাতে সিরিঞ্জ, চোখে ভয়।
"তুমি গর্ভবতী কি না জানতে চাই... এখনই," বলে সুমিত। জারা বাধা দেয় না। ফল আসে – পজিটিভ।
সুমিত কাঁপছে। হঠাৎ তার চোখে জল।
"আমি জানতাম না... শিশু আসছে!"
একটি ফ্ল্যাশব্যাক শুরু হয়:
সুমিতের মা – গিয়াসের মায়ের বোন। সোহেল তাকে মেরে ফেলেছিল, কারণ সে আজিজুল হকের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিল!
রিজভী ল্যাপটপে বসে সোহেলের ডার্ক ওয়েব অটো-মেইল সার্ভার হ্যাক করছে। তার চেহারা ঘামে ভিজে গেছে।
ঠিক হ্যাক শেষ হওয়ার মুহূর্তে পেছন থেকে গুলি — সোহেল!
রক্তাক্ত রিজভী মাটিতে পড়ে বলে:
"আমার বাবা আজ খুন হলো... তোমার হাতে। কিন্তু আমার ভাই তোমাকে থামাবে!"
সোহেল থেমে যায় — সে রিজভীর মুখে নিজেরই চোখ দেখে। পেছনে পড়ে থাকে রিজভীর পেনড্রাইভ।
একটি গোপন ঘর। সোহেল, গিয়াস, জারা এবং গিয়াসের মা মুখোমুখি। মা বন্দি, গিয়াস পিস্তল হাতে, জারা গর্ভবতী।
সোহেল গিয়াসকে বলে, "তুই নিজেকে গুলি কর... নয়তো আমি এই গর্ভবতী মেয়েকে শেষ করে দেব।"
গিয়াস থেমে যায়। তার চোখে ধূসরতা, কাঁপা হাত পিস্তল তোলে...
ঠিক তখন জারা হঠাৎই নিচু হয়ে সোহেলের পায়ে কামড় বসায়!
সোহেল চিৎকার করে পেছনে হটতেই গিয়াস পিস্তল ছুড়ে ফেলে তার গলায় ঘুষি দেয়। মা উঠে দাঁড়িয়ে যায়...
বাইরে হেলিকপ্টারের শব্দ। লাইট ঝাঁপিয়ে পড়ছে জানালায়।
সোহেল পিস্তল তোলে, গিয়াসকে লক্ষ্য করে।
ঠিক সেই মুহূর্তে গিয়াসের মা সামনে এসে দাঁড়ায়।
এক গুলির শব্দ। সোহেলের হাতে পিস্তল নড়ে না... কিন্তু গিয়াসের মা কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায়।
"মা!!"
মায়ের শেষ কথা:
"তুই স্বাধীন, গিয়াস... রক্তের ঋণ মেটালো ভালোবাসা।"
জারা হাসপাতালের বেডে। তার পাশে গিয়াস। নবজাতকের কান্না ঘরভরিয়ে বাজে।
পেছনে পুলিশ দাঁড়িয়ে, সুমিত হাতকড়া পরা। চোখে জল, ঠোঁটে কিছুটা হাসি।
গিয়াস ফিসফিস করে,
"ওর নাম রাখবো... রিজভী। সে-ই আমাদের বাঁচিয়েছে।"
নবজাতক চোখ মেলে তাকায়... যেন সে জানে, তার জন্ম এক যুদ্ধজয়ের মধ্য দিয়ে এসেছে!
চলবে....
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন