বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

গল্প: আপু থেকে বউ পর্ব :২ লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ



গল্প: আপু থেকে বউ

পর্ব :২

লেখা: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ




ওসি আকবরের কথাটা যেন বজ্রাঘাতের মতো নেমে এলো জারার কানে।

— “খুনি... গিয়াস নিজেই?”

জারা চুপচাপ বসে। তার চোখে সন্দেহ, অথচ ভেতরে কোথাও বিশ্বাসও।
গিয়াস তার পাশেই বসে, মাথা নিচু করে রেখেছে। চোখে জল নেই, তবে অদ্ভুত এক শূন্যতা।

জারা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
— “আপনারা কি কোনো প্রমাণ পেয়েছেন? শুধুই ‘সোর্স’ এর ভিত্তিতে তো কাউকে খুনি বলা যায় না।”

ওসি চশমা খুলে চোখ মুছে বললেন,
— “দেখুন, এটা অফিসিয়াল চার্জ না। আমরা শুধু জানতে চাচ্ছি... গিয়াসের বাবা-মা মারা যাওয়ার রাতে সে কোথায় ছিল?”

জারা গিয়াসের দিকে তাকাল।
— “বলো, সেদিন রাতে তুমি কোথায় ছিলে?”

গিয়াস কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে বলল,
— “দাদুর বাসায় ছিলাম... রাত সাড়ে দশটার দিকে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালেই খবর পাই।”

ওসি প্রশ্ন করলেন,
— “তোমার দাদু কি বেঁচে আছেন?”

— “না... মাস খানেক আগে উনিও মারা গেছেন স্ট্রোক করে।”

জারার চোখে সন্দেহের ছায়া ঘন হলো।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সে নিজেকে সামলালো। ওসি'র সামনে কিছু বুঝতে দিল না।

— “তাহলে এই মুহূর্তে আপনি গিয়াসের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেন না, ঠিক?” জারা সোজা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।

ওসি হাসলেন,
— “তাই তো! আপনি নিজেই তো অফিসার... কাগজ ছাড়া কিছু হয় না জানেন।”

জারা উঠে দাঁড়ায়,
— “আসুন, গিয়াস।”

ওসি হালকা হেসে বলে,
— “আপনার সন্দেহ থাকুক। আমরা আপনাকে আপডেট দেবো।

ফেরার পর রুমটা স্তব্ধ।
দুজনেই চুপচাপ।

জারা আয়নার সামনে বসে চুল খুলছে। হঠাৎ চোখ আটকে যায় আয়নায় দেখা গিয়াসের প্রতিচ্ছবিতে।

সে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু চোখে ভয় নেই—বরং ক্লান্তি।

— “তুমি কি সত্যিই ওদের হত্যা করোনি?”
প্রশ্নটা ধীরস্বরে, অথচ ঠান্ডা নয়।

গিয়াস তাকিয়ে বলল,
— “তুমি কি সত্যিই মনে করো আমি পারি মা-বাবাকে খুন করতে?”

জারার মুখে কিছু বলার নেই।
সে জানে, এই মুখটা অনেক কিছু লুকাতে পারে... কিন্তু একদম সব নয়।

— “তাহলে কে খুন করেছে ওদের?”
— “জানি না... কিন্তু বুঝি কেউ চাচ্ছিল ওদের সরাতে।”
— “কারা? তোমার কোনো সন্দেহ আছে?”
— “বাবা কোম্পানিতে কারো সাথে ঝামেলায় ছিল। বারবার বলতেন, কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।”

জারা খেয়াল করল—গিয়াসের চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে। ছেলেটা কাঁদছে না, বরং নিজেকে আটকে রাখছে।

একটু থেমে বলল,
— “জারা, আমি তোমার কাছে একটা সত্য লুকিয়েছি।”

জারার কণ্ঠ শক্ত,
— “কি সত্য?”

গিয়াস গলার স্বর নিচু করে বলল,
— “আমার কাছে একটা পেনড্রাইভ আছে। ওখানে বাবার রেকর্ড করা কিছু ভিডিও আর ভয়েস ক্লিপ... উনি বলেছিলেন, যদি ওর সাথে কিছু হয়, এটা যেন পুলিশে না দেই, বরং কাউকে খুঁজে বের করি।”

জারা স্থির হয়ে গেল।

— “তুমি কোথায় রেখেছো পেনড্রাইভটা?”

— “তোমার কাছে দিতে চাইনি... কারণ তুমি পুলিশ। তুমি আইনের পথে যাবে। কিন্তু আমি চাই সত্যটা বের হোক, যেভাবেই হোক।”

— “দাও সেটা আমাকে। আমি কথা দিচ্ছি, আইনের বাইরে গিয়ে হলেও খুনিদের খুঁজে বের করবো।”

গিয়াস একটু হেসে বলল,
— “তোমার চোখে বিশ্বাস ছিল না এখনো... কিন্তু তোমার কথায় আমি আশা পেলাম।”



জারা ল্যাপটপ খুলে পেনড্রাইভ লাগায়।
ভিতরে ৩টি ভিডিও এবং ২টি অডিও ক্লিপ।

একটা ভিডিও চালু করে।

ভিডিওতে গিয়াসের বাবা একজন লোকের সঙ্গে কথা বলছে।

লোকটির মুখ আংশিক দেখা যাচ্ছে। কালো হুডি, গলা মোটা, উচ্চারণে একটু পশ্চিমাঞ্চলের টান।

— “তোমাকে অনেকবার বলেছি, এই ডিলটা করো না, তুমি পস্তাবে।”
— “তুই হুমকি দিচ্ছিস?”
— “না, আমি ভবিষ্যত দেখছি।”

ভিডিওটি হঠাৎ শেষ হয়ে যায়।

জারা থমকে যায়।

— “এই চেহারাটা... এই গলাটা কোথায় যেন শুনেছি।”


পরদিন

জারা গিয়াসকে নিয়ে এক গোপন জায়গায় যায়।
একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, নাম তার রওশন করিম

তিনি ডিবি থেকে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু গোপনে অনেক কিছু জানেন।

জারা তাকে ভিডিও দেখায়।
রওশন করিম দেখে অবাক হয়ে ওঠেন।

— “এই গলাটা... এই গলাটা সোহেল চৌধুরীর। এখনকার এক নম্বর মাফিয়া লিডার। আগেও অনেকবার ট্র্যাক করেছি, কিন্তু কিছু পাইনি।”

জারা আঁতকে ওঠে,
— “মানে গিয়াসের বাবা-মার খুনের সঙ্গে ও জড়িত?”

— “খুব সম্ভব। তবে সাবধান, মেয়েটা। এই খেলা ছোট না।”

জারা মাথা নিচু করে বলে,
— “আমি শুধু খেলা খেলবো না... খেলাটা শেষ করবো।”



গিয়াস রাতে ছাদে বসে। পাশে জারা।

— “তুমি কি এখনো ভয় পাও?”
— “তুমি পাশে থাকলে ভয় কমে যায়।”

জারা তার হাত ধরে।

দূরে আকাশে মেঘ।
তবে তাদের চোখে আগুন।

একটা প্রতিশ্রুতি জন্ম নিচ্ছে—প্রেম আর প্রতিশোধের এক যৌথ শক্তি।


চলবে...

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন