পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৭
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রেশমীর শরীর কাঁপছিল, কিন্তু মন ছিল অটুট। দিন দিন মিলনের আঁধার যেন আরও গাঢ় হচ্ছিল। সত্যের জন্য লড়াই করতে গেলে, কখনো কখনো অন্ধকারের মুখোমুখি হতে হয়।
রেশমীর ফোনে বার বার এল অচেনা নম্বর থেকে হুমকির মেসেজ।
“একটু সময় পেলেই তোমাকে নষ্ট করব। সাবধান!”
তার অজান্তেই, মিলনের দোসররা তার আশেপাশে নজরদারি শুরু করেছিল।
রফিক আচমকা অদ্ভুত আচরণ করতে লাগল। রেশমী সন্দেহ করল সে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সাইফও কিছু বলতে পারছিল না।
“তুমি কি আমার পাশে আছ?” রেশমী জিজ্ঞেস করল, চোখে চিন্তার ছাপ।
রফিক মৃদু স্বরে বলল, “আমি সবসময় তোমার জন্য কাজ করছি, কিন্তু পরিস্থিতি খুবই জটিল।”
রেশমী বুঝতে পারল, শত্রু শুধু মিলন নয়, তার ঘনিষ্ঠ মানুষদের মধ্যেও কেউ কেউ আছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা তার হৃদয় ভেঙে দিল।
রেশমী সিদ্ধান্ত নিল, নিজেই হাতে কাজ করবে। সে সাইফকে বলল, “আমাদের এখন যেকোনো মূল্যে মিলনের পরিকল্পনা ভাঙতে হবে।”
সাইফ সম্মতি দিলো, “আমি তোমার সঙ্গে আছি, রেশমী।”
রেশমী রাতে গোপনে মিলনের অফিসে ঢুকল। চারপাশে ছিল কড়া নিরাপত্তা, কিন্তু সে একাগ্রচিত্তে এগোচ্ছে।
হঠাৎ কোনো শব্দ শুনে তার হৃদয় হু-হু করে উঠল।
দূরে মিলনের এক শত্রু এসে পড়ল তার পথে।
“তুমি এখানে কেন?” শত্রুর কণ্ঠে ক্রোধ।
রেশমী ঠাণ্ডা স্বরে বলল, “তুমি আমার ভয় নেই। সত্যের পথে আমি অটল।”
এক মুহূর্তের মধ্যে লড়াই শুরু হলো। রেশমীর সাহস ও দক্ষতায় শত্রুকে পরাস্ত করল।
তবে সে জানত, এই লড়াই এখনও শেষ হয়নি।
রেশমীর চোখে নতুন আশার আলো জ্বলছিল—যে অন্ধকার যতই গাঢ় হোক, সত্য একদিন বুকে আলো বয়ে আনবেই।
রেশমীর চোখের সামনে ঝলমল করছিল নতুন আশা, কিন্তু অন্তরের অন্ধকার ছুঁড়ে দিচ্ছিল সংশয়ের ছায়া। সৎ ও বিশ্বাসঘাতকতার লড়াই যেন এক অবিরাম ঝড়।
মিলনের দোসররা রেশমীর গোপন অভিযান খেয়াল করেছিল। তারা একটি ফাঁদ সাজালো।
রেশমী আর সাইফ গভীর রাতের মিশনে বের হলো, কিন্তু হঠাৎ ঘিরে ফেলা হলো তাদের।
"তুমি আর পালাতে পারবে না," কড়া কণ্ঠে বলল এক সন্ত্রাসী।
রেশমীর হৃদয় দুলল, কিন্তু সাইফের সাহস দেখে সে দাঁড়িয়ে রইল।
সাইফ আকস্মিক একটি শক্তিশালী লাথি মেরে হামলাকারীকে নামিয়ে দিল।
"চলো, এখন পালানোর সময়," সে ফিসফিস করল।
রেশমী দ্রুত সাইফের হাত ধরল। তারা গা ঢাকা দিয়ে ঘোরাঘুরি করল শহরের গলিতে।
পালানোর সময় রেশমীর মনে উঠল—রফিক কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য? কিংবা সে মিলনের হাতে কাজ করছে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখন জরুরি।
এক রাত তারা এক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা করল, যিনি মিলে না জানিয়েও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করল।
"মিলনের আসল মুখ অনেকটা অন্যরকম," সে বলল।
রেশমী বুঝতে পারল, তাকে আরও সাবধান হতে হবে। সে সিদ্ধান্ত নিল, নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ পাল্টে নতুন কৌশল অবলম্বন করবে।
নতুন নামে, নতুন পরিচয়ে রেশমী তৈরি হলো মিলনের বিরুদ্ধে একটি আঘাত করার জন্য। তার চোখে জ্বলছে প্রতিশোধের অগ্নি।
রেশমীর ভেতরে এক অদ্ভুত শক্তি জাগছিল। ক্ষত বুকে গভীর আগুন লেগেছিল—তাকে বাধ্য করেছিল অতীতের ছায়া ফেলে সামনে এগোতে।
রেশমী নিজের পরিচয় পাল্টে ফেলল, নাম বদলাল। আরম্ভ করল একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে শুধু বাঁচার নয়, প্রতিশোধের সুর বাজবে।
সে মিলনের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের গতিবিধি নজর করতে শুরু করল। ধাপে ধাপে তাদের পায়কে পায়কে পর্যবেক্ষণ করল।
একদিন সন্ধ্যায়, সাইফের মাধ্যমে রেশমী জানতে পারল মিলনের গোপন একটি ডকুমেন্টের অস্তিত্ব। যেটা খুঁজে পেলে পুরো ষড়যন্ত্রের চাবিকাঠি মিলবে।
রেশমী আর সাইফ এক রাতে মিলনের অফিসে প্রবেশের পরিকল্পনা করল। যদি ধরা পড়ে, প্রাণে মারারও ভয়।
অফিসে ঢুকে হঠাৎ এলার্ম বেজে উঠল। নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসল। রেশমী ও সাইফ দৌড়ে পালানোর সময় এক সিকিউরিটি অফিসারের সঙ্গে মুখোমুখি হলো।
রেশমী ও সাইফ কঠোর লড়াই শুরু করল। বুকে কেটে গিয়েও, তারা হার মানল না। শেষ পর্যন্ত অফিসারের হাত থেকে পালাতে সমর্থ হলো।
অফিস থেকে তারা যে ডকুমেন্ট চুরি করতে পেরেছিল তা ছিল গোপন শাস্ত্রীয় দলিল। যেটা মিলনের সঠিক পরিকল্পনা ফাঁস করতে পারবে।
রেশমীর বুকের ব্যথা দিন দিন বেড়েই চলছিল। শুধু শারীরিক নয়, অন্তরেও যেন এক অজানা দহন। তার চোখে নতুন করে জ্বলছিল প্রতিশোধের আগুন, আর মনে হচ্ছিল যেন সময় তার পক্ষে নেই। প্রতিটি মুহূর্ত যেন কাটছিল এক ভয়ঙ্কর অপেক্ষায়, যেখানে শুধুই সত্যের খোঁজ।
রেশমী আর সাইফ এক নিঃশব্দ রাতে মিলনের গোপন অফিসের কাছাকাছি আসার সিদ্ধান্ত নিল। সেই ডকুমেন্ট পেতে হবে, যা মিলনের অসাধু চক্রান্তের প্রমাণ।
সাইফ বলল, "রেশমী, আজকের রাতটা কঠিন হবে, অনেক ঝুঁকি। কিন্তু আমরা না পারলে কেউ পারবে না।"
রেশমী দৃঢ়ভরে উত্তর দিলো, "আমি আর পিছনে ফিরে তাকাবো না। শুধু সামনে এগোতেই হবে।"
সন্ধ্যার আঁধারে তারা নিঃশব্দে অফিসের পিছনে পৌঁছালো। চারপাশে চোখ রাখছিল নিরাপত্তারক্ষীরা। শ্বাস নিয়েও হাঁটছিল তারা যেন ছায়ার মতো। প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক কাঁটাচামচ, যেকোনো মুহূর্তে বিপদ অপেক্ষা করছে।
রেশমী স্মার্ট ফোন থেকে হ্যাকিং অ্যাপের সাহায্যে সিকিউরিটি ক্যামেরার চোখ বন্ধ করল। কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় সময় ছিল সীমিত। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।
সাইফ মৃদু কণ্ঠে বলল, "তুমি ডকুমেন্টগুলো খুঁজো, আমি সিকিউরিটিকে আটকে রাখব।"
হঠাৎ করেই অফিসের দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা এসে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। রেশমীর হৃদয় যেন থমকে গেল। দ্রুত মোবাইল থেকে লাইট বন্ধ করে অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ল।
নিরাপত্তারক্ষীরা চারপাশ ঘিরে ধরে, তৎক্ষণাত সাইফ তাদের সামনে এসে লাঠিপেটা শুরু করল। রেশমী দ্রুত ড্রয়ার খুলে গোপন ফোল্ডারটি হাতে পেলো। সেই ফোল্ডারে ছিল মিলনের সব অপরাধের সুনির্দিষ্ট দলিল।
সাইফ ও রেশমী ডকুমেন্ট নিয়ে দ্রুত অফিস থেকে বের হতে চাইল, কিন্তু সিকিউরিটিরা তাদের রাস্তা বন্ধ করে দিল। থরথর করে কাঁপছিল রেশমীর মন, কিন্তু সে জানত তার জীবন এখন লড়াইয়ের ময়দানে।
দৌড়ঝাঁপ শুরু হলো, পেছনে শোরগোল, চিৎকার, আর আতঙ্ক। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হচ্ছিল মৃত্যু যেন হাতছানি দিচ্ছে।
রশমী হার মানেনি। ধীরে ধীরে তারা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করল। অন্তর থেকে সে বলল, “আমরা পারব, সাইফ। এই ডকুমেন্ট সবার সামনে আনা জরুরি।”
সাইফ সম্মতি জানিয়ে বলল, “আমরা একসঙ্গে আছি। একসঙ্গে শেষ করব।”
নিরাপদ এক কোণায় তারা ডকুমেন্টগুলো পরীক্ষা করতে বসল। সেখানে মিলনের কতসব বেআইনি কাজ, ষড়যন্ত্র ও গোপন চুক্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট।
রেশমী চিন্তিত হয়ে বলল, “এই তথ্যগুলো প্রকাশ করলেই মিলন ও তার দলের পতন নিশ্চিত।”
সাইফ বলল, “তাই আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। তারা প্রতিহিংসা জানাতে পারে।”
রেশমীর মনে হল, তার লড়াই একদম শুরু হয়েছে। সত্যের যুদ্ধে সে একাকী নয়, পাশে আছে সাহস, বন্ধুত্ব আর একটি নতুন আশার আলো।
রেশমীর চোখে অশ্রু, হৃদয়ে অম্লান এক দৃঢ়তা। আজকের এই সন্ধ্যায়, সে জানত তার জীবনের এক অধ্যায় বন্ধ হচ্ছে, আর এক নতুন সূচনা হবে।
ডকুমেন্টের তথ্যগুলো নিয়ে রেশমী ও সাইফ মিলনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিল। দীর্ঘদিনের অবিচারের জবাব দিতে হবে এখন।
রেশমী বলল, "এতদিন আমরা গোপনে ছিলাম। আজ সবার সামনে আসার সময়।"
সাইফ বলল, "তুমি যা সাহস দেখিয়েছো, তাতে আমরা সবাই গর্ববোধ করি।"
মিলন ও তার দল বিচারব্যবস্থার সামনে দাঁড়িয়ে। তাদের রণনীতি ছিল ভয়, ক্ষমতার অপব্যবহার আর ষড়যন্ত্র। কিন্তু রেশমী আর তার দল একদম ছেড়ে দেয়নি।
বিচারক জানালেন, "এই মামলা দেশের জন্য একটি মাইলফলক। একসময় যারা বিচার থেকে দূরে থাকতো, আজ তাদের সামনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে।"
রেশমী আজ শুধু নিজের জন্য নয়, অসংখ্য নির্যাতিতার জন্য লড়াই করেছে। তার কন্ঠ হয়ে উঠেছে নিঃস্বদের সুর।
সব শেষে, রেশমী জীবনে শান্তি ফিরে পায়। সে জানে, তার যুদ্ধে অনেক কিছু হারিয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতা পেয়েছে। নিজের পরিচয় ফিরে পেয়েছে।
“আমার গল্প শেষ না, শুরু মাত্র। আমি বিশ্বাস করি, সত্য কখনো হারায় না, আর নারীর আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী।”
সমাপ্ত
উপসংহার ও বিশেষ বার্তা
প্রিয় পাঠক,
রেশমীর এই যাত্রা ছিল শুধুমাত্র এক নারীর সংগ্রাম নয়, বরং আমাদের সমাজের এক বাস্তব প্রতিবিম্ব। নির্যাতন, অবিচার আর ভয়কে জয় করতে হলে প্রয়োজন সাহস, একাত্মতা ও অটল বিশ্বাস। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তবে সমাজ আরও নিরাপদ ও সুন্দর হবে।
সত্য ও ন্যায়ের পথে হাঁটা কঠিন হতে পারে, কিন্তু সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। রেশমীর মতো নায়করা যখন উঠে দাঁড়ায়, তখন হয় পরিবর্তনের সূচনা। তাই ভয় পেও না, লড়াই করো, কথা বলো এবং সহায়তা চাও। কারণ তুমি একা নও।
তোমার শক্তি হতে পারে অন্য কারও মুক্তির পথের আলো। চল, একসাথে অন্ধকার কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাই।
ধন্যবাদ তোমার অবিরত ভালোবাসা আর বিশ্বাসের জন্য।
#সত্য_এবং_ন্যায়ের_পক্ষে
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন