পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ৩
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
রাত তিনটা পেরিয়েছে। আয়নার সেই “S” অক্ষর যেন এখনও ঝিলমিল করছে রেশমীর চোখে। বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও তার মনে শান্তি নেই।
“S মানে সাফওয়ান?”
“নাকি অন্য কেউ?”
পরদিন সকাল।
রেশমী কলেজে গিয়েও স্বাভাবিক থাকতে পারছিল না। ক্লাসে স্যারের প্রশ্নে সে মনোযোগ দিতে পারছে না। মনটা বারবার চলে যাচ্ছে সাফওয়ানের দিকে। তার হাবভাব, চোখের ভাষা, কথার ভঙ্গি — সব কিছুতেই কিছু একটা গোপন সংকেত যেন সে খুঁজে পাচ্ছে।
রেসেসে হঠাৎ সাফওয়ান তার পাশে এসে বসে।
— "তুমি ঠিক আছো তো?"
— "হ্যাঁ... মানে... কেন?"
— "তুমি কেমন যেন বদলে গেছো। কিছুর জন্য ভয় পাচ্ছ?"
রেশমী হঠাৎ বলেই ফেলে, "তুমি কি… ছায়া?"
সাফওয়ান থমকে যায়। কিছু বলার আগে হেসে ফেলে, "ছায়া? এটা আবার কে?"
তারপর মাথা নেড়ে উঠে যায়।
রেশমী ঠিক বুঝে উঠতে পারে না – সে সত্যি কিছু জানে না, নাকি জানেও, কিন্তু লুকোচ্ছে?
একইদিন বিকেলে...
রেশমীর মোবাইলে আবার অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসে:
“সঠিক পথে চলছো, কিন্তু পথটা কাঁটার। আজ সন্ধ্যা ৬টায় কলেজ লাইব্রেরির পুরনো আর্কাইভ রুমে এসো। কিছু বলার আছে।”
– ছায়া
রেশমী প্রথমে দ্বিধায় পড়ে। এই ছায়া তার সাহায্য করেছে ঠিকই, কিন্তু এবার নিজেই দেখা করতে বলছে।
এটা কি ফাঁদ?
নাকি, সত্যিই সময় এসেছে মুখোমুখি হবার?
সন্ধ্যা ৬টা — আর্কাইভ রুম
রেশমী ধীরে ধীরে পা ফেলে নির্জন পুরনো লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ করে। বাতাসে ধুলোর গন্ধ, পুরনো বইয়ের সোঁদা গন্ধের সাথে মিশে এক ধরনের অদ্ভুত শীতলতা।
হঠাৎ একটা ছায়ামূর্তি চোখে পড়ে।
— "তুমি এসেছো… আমি জানতাম।"
একজন ছেলেকে দেখা যায়। মুখ ঢেকে রেখেছে কালো হুডির নিচে।
তার গলার স্বর যেন পরিচিত, কিন্তু রেশমী কিছুতেই চিনতে পারছে না।
— "তুমি কে? কেন আমাকে সাহায্য করছো?"
— "কারণ তুমিই সেই… যার জীবন বাঁচিয়ে আমার জীবন পেয়েছি।"
— "মানে?"
ছেলেটা মুখ খোলে না। শুধু একটা ডায়েরি রেশমীর হাতে দিয়ে বলে:
“এই ডায়েরিটা পড়ে নাও। আমি সব লিখে রেখেছি। তুমি একা নও। তুমি শুধু একটা গল্পের চরিত্র না — তুমি গল্পটা নিজে। আমি আবার আসবো। কিন্তু সময় হলে।”
তারপর ছেলেটি মিলিয়ে যায় অন্ধকারের ভেতরে।
রাত ১১টা — রেশমীর ঘর
রেশমী ডায়েরিটা খুলে পড়ে। প্রথম পাতায় লেখা:
“আমার নাম আদিব। তুমি আমাকে চিনবে না। কিন্তু আমি তোমাকে জানি সেই ছোটবেলা থেকে, যখন তুমি নদীর ধারে পড়ে গিয়েছিলে আর আমি তোমাকে টেনে তুলেছিলাম। তারপর তোমার পরিবার চলে গিয়েছিল শহরে, আর আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায়।”
রেশমীর চোখে জল চলে আসে।
"আদিব?"
সে মনে করার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে মনে পড়ে যায় —
একজন ছোট্ট ছেলেকে,
নদীর ঘাটে একবার ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে একটা হাত টেনে তুলেছিল তাকে।
সে ছিল আদিব।
পরদিন...
রেশমী পুলিশ স্টেশনে গিয়ে চুপিচুপি খোঁজ নেয় — আদিব নামের কেউ কি সেই রাতে ফোন করেছিল?
এসআই কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলে,
"আদিব নাম বলেছিল ঠিকই, কিন্তু নাম্বার ট্রেসে কোনো ডাটা নেই। খুব পুরনো ধাঁচের এনক্রিপ্টেড সিগন্যাল ছিল।"
রেশমী যেন বোঝে — আদিব চায় না কেউ তাকে খুঁজে পাক। কিন্তু কেন?
রেশমী ডায়েরির শেষ পাতায় এক লাইন লেখে দেখতে পায়:
"যদি সত্য জানতে চাও, কলেজের পুরনো মাল্টিমিডিয়া রুমে গিয়ে প্রজেক্টর চালাও — ফাইলের নাম: ‘ছায়া_রহস্য.mp4’"
রেশমীর হাত কাঁপতে থাকে। সে বুঝে যায় —
এই গল্প এখনই শেষ হওয়ার নয়।
বরং এখন থেকে শুরু হতে যাচ্ছে “ছায়া”-র আসল পরিচয় উন্মোচনের লড়াই।
রেশমীর হৃদয় দ্রুত দ্রুত ধড়কাচ্ছে। ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা সেই নামের ফাইলের কথা মনে পড়ে। পুরনো মাল্টিমিডিয়া রুম, যেখানে কলেজের শতাব্দী প্রাচীন projector এখনো খাড়া আছে।
সন্ধ্যার পর রেশমী চুপচাপ সেই রুমে পৌঁছায়। ভেতর ঢুকে একটি পুরনো ল্যাপটপ চালু করে, dusty projector-এর সামনে বসে পড়ে।
ফাইলের নাম “ছায়া_রহস্য.mp4”। দুঃসাহসিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সে প্লে বোতাম টিপে দেয়।
স্ক্রিনে ঝলমলে আলো ফুটে ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায় এক যুবক, যাকে রেশমী চেনেন— সে আদিব! তবে বেশ দুশ্চিন্তায় ও গভীর ভেবে আছে। তার চোখে যেন অজানা আতঙ্ক।
ভিডিওতে আদিব বলে:
“যারা আমার কথা শুনবে, তারা জানুক... কলেজের কিছু লুকানো সত্য আছে, যা প্রকাশ পেলে অনেকের অশুভ কাজ ফাঁস হবে। আমার পরিবার শুধু একটি বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়নি, এই কলেজেও আছে অন্ধকারের ছায়া।”
তারপর ভিডিও কেটে যায়। পরের ক্লিপে দেখা যায় কিছু গোপন দস্তাবেজ, যেখানে গোপন চুক্তি, অবৈধ কাজের নাম লেখা। College authority-এর পরিচিত নামও আছে।
রেশমীর মাথা গরম হয়ে আসে। সে বুঝতে পারে, তার জীবনে যে বিপদের আগামি ছায়া পড়েছে, তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়— অনেক বড় একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
হঠাৎ ভিডিও থেমে যায়। রেশমী মোবাইলে ফোন পায়। নাম্বার আবার সেই অচেনা, “ছায়া” এর।
"তুমি সঠিক পথে এগুচ্ছো, কিন্তু সাবধান। তোমার চারপাশে চোখ রাখো।"
রেশমীর ঘাম ছুটে আসে। সে বুঝে যায়—
এবার বিপদ আর দূরে নেই।
পরের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে একটা গোপন হুমকির বাতাস পায় রেশমী। তার পাশ থেকে এক অচেনা ছেলে আস্তে আস্তে চলে যায়, চুপিচুপি তাকে অনুসরণ করে।
তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি বলে,
“ছায়া আমি নই, তবে তুমি নিজের পা আরো গভীরে ফেলছো। দূরে যাওয়া ভালো।”
রেশমীর মনে প্রশ্ন জাগে—
এই ছেলেটি কে?
সে কেন এড়িয়ে যেতে বলল?
আর এই ছায়ার আসল পরিচয় কী?
পরিশেষে রেশমী ডায়েরির পাতা উল্টায় আরেক লাইন দেখে:
চলবে....
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন