মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫

পরিচয়ের আড়ালে পর্ব ৪ ✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ

পরিচয়ের আড়ালে

পর্ব – ৪



✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ

রেশমী সকালে কলেজে গিয়ে দেখল, আজ সবাই তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে। কেউ সরাসরি কথা বলছে না, কেউ হাসছে না। মনে হলো যেন কেউ তার পিছনে কথা বলছে।

সে নিজের বন্ধুদের কাছে গেলে, সবাই কিঞ্চিৎ রহস্যময় আচরণ করছে। বিশেষ করে সাফওয়ান। তার কথা বললেই যেন বাক্য গলছে না।

রেশমী কলেজ ক্যাফেটেরিয়ায় বসে মোবাইলে আগেরদিনের ডায়েরির পাতা আবার পড়ে। হঠাৎ দেখল একটি নাম বার বার এসেছে – “মিলন।”

সে বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মিলন কলেজের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যাকে সবাই ভয় পায়। কেউ তাকে প্রশ্ন করার সাহস পায় না।

রেশমী ঠিক করল, মিলনের কাছ থেকে কিছু তথ্য পেতে হবে।

রেশমী সাহস নিয়ে মিলনের অফিসে যায়। দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে বলে,
“আপনার সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

মিলন মুচকি হাসে, “রেশমী, তুমি কি বুঝো কি ঝুঁকি নিচ্ছো? অনেক কিছু তোমার অজানা।”

“আমি জানি আমি ভয় পাচ্ছি, কিন্তু সত্য জানতে চাই।”

মিলন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“এই কলেজে এমন অনেক গোপন বিষয় আছে, যা প্রকাশ পেলে অনেকের পতন ঘটবে। আমি তোমাকে সতর্ক করছি, থামো। তুমি অনেক বড় বিপদের মুখে পড়ছো।” 

রেশমী ফিরে আসার পথে ভাবতে থাকে —
“কি হতে পারে এই গোপন রহস্য? আদিব কেন এইসব বলেছিল? আর মিলন কেন ভয় দেখাচ্ছে?”

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠে,
“রেশমী!”

তাকে ঘুরে তাকাতে না দেখে সে দ্রুত সাঁড়াশি গলি দিয়ে চলে যায়।

রেশমী মোবাইলে আবার অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ পায়—
“তুমি একা নও। সাহস রাখো, সত্যের পথে এগোতে থাকো।”
— ছায়া

রেশমীর মন একদিকে ভয় পায়, অন্যদিকে জাগে নতুন আশা

রেশমী বুঝতে পারছে, এই রহস্য যেন তার জীবনের এক অদ্ভুত জালে তাকে আটকে ফেলেছে। কলেজের গোপন সত্য অনুসন্ধানে সে একা নয়, কিন্তু সে জানে না কারা তার সহায়ক, কারা শত্রু।


সকালবেলা

রেশমী কলেজের লাইব্রেরিতে যায়। সে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে আদিবের সম্পর্কে আরো তথ্য। পুরনো খবরের কাগজ, কলেজের রিপোর্ট, গোপন ডকুমেন্ট সব খুঁটিয়ে দেখে।

হঠাৎ সে একটি পুরনো নিবন্ধ পায়, যেখানে আদিবের মৃত্যুর কারণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছিল এটি সড়ক দূর্ঘটনা, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি।

রেশমীর মনে একবারে এক জ্বালা ধরল— ‘কত বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল সে?’


বিকেল

রেশমী নিজের ফোনে বারবার অজানা নাম্বারে কল দেয়, কিন্তু কেউ ধরে না। তখন এক মেসেজ আসে:

“দেখো, কখনো কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো না। সতর্ক থাকো।”

রেশমী অনুভব করে, সে যে বিপদের মুখোমুখি, সেটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও।


সন্ধ্যায়

কলেজ থেকে ফিরে রেশমী লক্ষ্য করে, কেউ তাকে নিরীক্ষণ করছে। গলি দিয়ে একজন ছেলেটি ধীরে ধীরে অনুসরণ করছে। সে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, কিন্তু ছেলেটি কাঁধ নাড়া দিয়ে চলে যায়।

রেশমীর মনে সন্দেহ জাগে, ‘সে কি সাহায্য করতে আসছে নাকি বিপদ ডেকে আনছে?’


রাতের বেলা

রেশমী নিজের ঘরে ফিরে দরজা তালা দেয়। হঠাৎ তার মোবাইলে আসে একটি গোপন ভিডিও, যেখানে দেখা যায় মিলন এক ব্যক্তির সাথে গোপন আলাপ করছে, যাকে সে ‘ছায়া’ বলে ডাকছে।

ভিডিওতে মিলন বলে,
“আমরা রেশমীকে থামাতে পারব, সে যদি আমাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করে তাহলে…।”

রেশমীর হৃদয় হিম হয়ে যায়।





রেশমী হৃদয় ভেঙে পড়ে যখন ভিডিও দেখে। সে বুঝতে পারে, মিলন শুধু তাকে ভয় দেখাচ্ছে না, আসলে তার জীবনের ওপর বড়ো সংকট এসে পড়েছে।


পরদিন সকাল

কলেজে পৌঁছে রেশমী সতর্ক হয়ে চলাফেরা করে। আর বন্ধুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দূরত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। কারণ কেউ আর তার পাশে নেই বলে মনে হয়।

সে নিজের নিরাপত্তার জন্য কলেজে কাউকে বিশ্বাস করার সাহস পায় না।

অজানা ফোন থেকে আবার মেসেজ আসে, “বিশ্বাস করতে শিখো, তবে সাবধান থেকো।”

রেশমীর মনে প্রশ্ন জাগে—
“কার থেকে আসছে এই সাহায্য? আর কারা আমাকে মেরে ফেলতে চায়?”


সন্ধ্যায়

কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে রেশমী দেখে, কেউ তাকে দীর্ঘক্ষণ অনুসরণ করছে। সে দ্রুত গলিতে ঢুকে অন্য রাস্তা ধরে পালানোর চেষ্টা করে। তার হৃদয় অস্থির হয়ে ওঠে।


রাতের বেলা

রেশমী বাড়িতে একা বসে সিদ্ধান্ত নেয়, যে সত্য উদঘাটনে থেমে যাবে না, যতই বিপদ আসুক।

সে ফোন খুলে ‘ছায়া’র নাম্বারে বার্তা দেয়,
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই, আমাকে সাহায্য করো।”

কিছুক্ষণ পরে ফোনে এসে আওয়াজ,
“সব ঠিক হবে। তোমার পাশে আছি।”

রেশমীর চোখে অশ্রু ঝরে, সে বুঝে—
এখন থেকে তার জীবন আর আগের মতো হবে না।


চলবে...
#পরিচয়ের_আড়ালে
#পর্ব৭
#গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ



0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন