বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫

পরিচয়ের আড়ালে ৫

পরিচয়ের আড়ালে

পর্ব – ৫
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ



রেশমীর জীবনে দিন গুলো যেন একের পর এক ধোঁয়াশা ও আতঙ্কের পারাবার। সে ‘ছায়া’র সাহায্যে বড়ো অন্ধকারের মুখোমুখি হতে চলেছে।


রেশমী কলেজে গিয়ে দেখে, মিলন তার দিকে একদমই অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। যেন কিছু রটেছে, যা সে জানে না।

সে মিলনের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে চায়, কিন্তু সাহস করে না।


রেশমী ‘ছায়া’র সাথে মেসেজে কথা বলে। জানতে পারে ‘ছায়া’ একজন সাবেক পুলিশ অফিসার, যিনি কলেজের ভেতরের একটা বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচনে কাজ করছেন।

‘ছায়া’ বলে,
“মিলন ও তার দলের বিরুদ্ধে তোমার হাত শক্ত করতে হবে। আমি তোমাকে আইনি সাহায্য ও নিরাপত্তা দেব।”



রেশমী কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ অজানা লোকজন তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে চায়, কিন্তু সে বেগ পেয়ে দ্রুত চলে যায়।

সে বুঝতে পারে, তাকে শুধু ভয় দেখানোই নয়, বরং তার পথ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।



রেশমীর মোবাইলে আসে আরেক মেসেজ,
“সাবধান, তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষেও বিশ্বাস হারাবার সময় আসছে।”

রেশমীর মন কেঁপে ওঠে। তার মধ্যে একটা ভয় আছে, কিন্তু সে ঠিক করে, আর পিছিয়ে থাকবেনা।


রেশমীর মনে অসীম ক্লান্তি জমে উঠছে। প্রতিটি দিন যেন যেন এক নতুন যুদ্ধ। সে ‘ছায়া’র সাহায্যে মিলনের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করে।


সকাল

রেশমী কলেজের বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদের থেকে মিলনের নানা অজানা তথ্য সংগ্রহ করে। কিছু গোপন আলাপচারিতার রেকর্ডও পায়।


দুপুর

‘ছায়া’ রেশমীর কাছে আসে। বলে,
“মিলন শুধু তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে না, ওর সঙ্গে একটা বৃহৎ পাচার সিন্ডিকেট জড়িত। তাদের কৌশল খুবই পেশাদার।”

রেশমী অবাক হয়, এই ঘটনা এত বড় ছিল তা সে বুঝতেই পারেনি।


বিকেল

রেশমী দেখে তার ঘরের বাইরের গলিতে অচেনা লোকজন ঘোরাফেরা করছে। সে সতর্ক হয়ে ওঠে। ‘ছায়া’কে ফোন করে দ্রুত সাহায্য চায়।


রাত

রেশমী ‘ছায়া’র কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়, আজ রাতে সে স্কুলের পুরনো অফিসিয়াল কম্পিউটারে গোপনে ঢুকে যাবে, যেখানে মিলনের কিছু গোপন তথ্য থাকতে পারে।

তাকে যখন ঘর থেকে বেরোতে দেখে, এক পরিচিত মুখ—রফিক—তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

রফিক বলে,
“রেশমী, তোমার জন্য কিছু কথা আছে, যা তোমার জীবন বদলে দেবে।”

রেশমীর চোখে কৌতূহল আর ভয়, দুটোই মিশে যায়।


রেশমী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রফিকের কথা শুনতে শুরু করল। সে জানে, আজকের কথাগুলো তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।


সন্ধ্যা

রফিক ধীরে ধীরে বলল,
“রেশমী, আমি তোমাকে ভয় দেখানো বা পেছনে ফেলে আসা কাউকে সাহায্য করতে চাই না। আমি আসলে সেই ‘ছায়া’।”

রেশমীর চোখ বড় হয়ে যায়, বিস্ময়ে জিহ্বা আটকে যায়।

রফিক আবার বলল,
“আমি অনেকদিন ধরে মিলনের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। আমার কাছে তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ব।”


রাত

রেশমী বিশ্বাস করতে পারছে না। কিভাবে রফিক তার জীবনের এত বড় অংশ হয়ে উঠলো? সে বুঝতে পারছে, ছায়া আসলে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

রফিক বলল,
“আজ রাতে স্কুলের অফিসে গোপন তথ্য নেওয়ার সময় আমি তোমাকে রক্ষা করবো। আমরা একসাথে এই ষড়যন্ত্রের সুরাহা করব।”



রেশমী ধীরে ধীরে সাহস নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। সে জানে, সামনে অনেক বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু সে একা নয়।



রেশমীর জীবনে আজকের রাতটি ছিল অন্যরকম—একটা মোড়, যেটা তার ভবিষ্যত বদলে দেবে। রফিকের পরিচয় শুনে সে অভিভূত হলেও, একদিকে অজানা আশ্বাস পেয়েছে।


স্কুলের পুরনো অফিসে গোপন তথ্য খোঁজার জন্য রেশমী ও রফিক পরিকল্পনা করতে শুরু করল। রফিক বলল,
“আমাদের খুব দ্রুত কাজ করতে হবে। মিলন ও তার সঙ্গীরা এখনো সন্দেহ পায়নি যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে।”

রেশমী নিজের ভীতির মধ্যেও জোর করে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। সে জানে, ঝুঁকি থাকবেই, কিন্তু সত্যের জন্য লড়াই না করলে শান্তি মিলবে না।


সন্ধ্যার পর তারা চুপচাপ স্কুলের অফিসে ঢুকে পড়ল। পুরনো ফাইল, কম্পিউটার, ডেটা—সবকিছু জায়গায় ছিল, কিন্তু মিলনের গোপন তথ্য পাওয়া সহজ ছিল না।

রফিক কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড খুলে দিলেন, “এই পাসওয়ার্ড আমার কাছে আগে থেকেই ছিল।”

রেশমী মনোযোগ দিয়ে ফাইল স্ক্যান করতে লাগল। হঠাৎ সে দেখতে পেল কিছু ফাইলের নাম ছিল ‘অবৈধ লেনদেন’, ‘মাদক পাচার’, ‘ছাত্রদের ভয় দেখানো’।


হঠাৎ তারা বাইরে থেকে গাড়ির শব্দ শুনল। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রেশমী আতঙ্কিত হল। রফিক তাকে শান্ত করে বলল,
“শান্ত হও, আমরা নিরাপদ।”

কিন্তু গাড়ির শব্দ ধীরে ধীরে কাছে আসছিল, যেন কেউ তাদের অনুসরণ করছে।


একদল লোক দরজায় কড়া কড়া শব্দ করে থাপ্পড় মারতে শুরু করল। রেশমী হাড়ভাঙা ভয় পেয়ে গেল। রফিক ফোন করে বলল,
“এরা মিলনের লোক, আমাদের বের হতে হবে।”

তারা দ্রুত গোপন দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল। কিন্তু রেশমীর পা হঠাৎ পিছলে গেল। সে পড়ে গেল, আর তার হাতে থাকা ফ্ল্যাশড্রাইভ মাটিতে পড়ে গেল


রফিক তাকে দ্রুত তুলে নিল। দু’জনেই দ্রুত অন্ধকারের মধ্যে গা ঢাকা দিল। তাদের পেছনে লোকজন চিৎকার করছে, “ধরো! ধরা দরকার!”

রেশমীর হৃদয় দ্রুত ধড়ধড় করছে। সে বুঝতে পারল, এই যুদ্ধে হার মানা মানেই তার জীবনের শেষ।


রফিক বলে,
“আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। এটা শুধু তোমার বা আমার যুদ্ধ নয়, সবাইকে জড়াতে হবে।”

রেশমী সিদ্ধান্ত নিল, আগামীকাল সে তার নিকটতম বন্ধুবান্ধবদের খবর দেবে। তবে এখন সে জানত, এটা একাকীত্বের যুদ্ধ নয়, সত্যের পক্ষে সংগ্রাম।


চলবে...

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন