পরিচয়ের আড়ালে
পর্ব – ২
✍️ গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
আয়নার দিকে তাকিয়ে রেশমী কয়েক সেকেন্ড চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘুম জড়ানো চোখে বিশ্বাস হচ্ছিল না সে যা দেখছে, সেটা সত্যি কিনা।
আয়নায় স্পষ্ট লেখা – “আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো। আমাকে খোঁজো না, শুধু বিশ্বাস রেখো।”
লেখাটা যেন ধোঁয়ার মতো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল আয়নায়। রেশমী চিৎকার করে পেছনে ঘুরে দেখে – কেউ নেই। ঘরে একা। বুক ধকধক করছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার সেই অজানা নাম্বারে কল দেয় — বন্ধ।
কে এই লোক?
কীভাবে জানে সে কখন কী করছে?
জানালার খবর, আয়নার লেখা, পুলিশের আগমন... সবই কীভাবে সম্ভব?
কিছু না ভেবে হঠাৎই একপ্রকার আতঙ্কিত হয়ে, নিজেকে শক্ত করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে সে — লক্ষ্য থানায় যাওয়া। কিন্তু কিছুদূর যেতেই হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ তাকে দেখে বলল,
"মেয়ে, তুমি রেশমী না? তুমি ঠিক আছো তো? তোমার চোখে তো ভয়..."
রেশমী অবাক, "আপনি আমাকে চেনেন কীভাবে?"
"চিনি না। কিন্তু কেউ একজন আমার হাতে এই চিরকুট দিয়েছিল। বলেছিল, তুমি আসবে এখান দিয়ে। আমাকে দিতে বলেছে।"
চিরকুটটা কাঁপা হাতে নেয় রেশমী। তাতে লেখা:
“তোমাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। থানা যেও না এখন। তারা জানে তুমি কী করতে চাও। পুলিশে কেউ কেউ তাদের পক্ষেও কাজ করছে। বাড়ি ফিরে যাও। নিরাপদ থাকো।”
রেশমীর শরীর কেঁপে ওঠে। বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকাতেই সে আর দাঁড়িয়ে নেই — যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
রেশমী ঘাবড়ে গিয়ে ফিরে আসে বাসায়। মাথার ভেতর ঘুরপাক খায় একটাই প্রশ্ন:
কে এই লোক? সে কী চায়? সে কী সত্যিই তাকে রক্ষা করছে, না নতুন কোনো ফাঁদে ফেলছে?
সেই রাতে...
রেশমী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।
ঠক ঠক ঠক!
সে ধীরে ধীরে গিয়ে দরজায় কান রাখে। কেউ যেন নিঃশ্বাস ফেলছে ওপাশে। ভয় আর কৌতূহল একসাথে। দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। শুধু নিচে পড়ে আছে একটা পুরনো খামে মোড়া চিঠি।
চিঠিতে লেখা:
“আমি তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখি। সবসময়।
তুমি যা করো, আমি জানি।
তুমি যাদের বিশ্বাস করো, তাদের বিশ্বাস করো না।
বিশ্বাস করো শুধু ‘ছায়া’কে।
কারণ ছায়া কখনও মিথ্যে বলে না।”
চিঠির নিচে লেখা: – তোমার ছায়া
রেশমীর গা শিউরে ওঠে। সে জানে না কী বিশ্বাস করবে, কার ওপর নির্ভর করবে।
তবে একটা কথা সে ঠিক বুঝে গেছে – এই রহস্যময় ব্যক্তি তাকে বাঁচিয়েছে, এবং এখনো অনুসরণ করছে।
পরদিন সকালে...
রেশমী কলেজে যায়। সবার চোখে সে আজ হিরো। কারণ আগের দিনের খবর ছড়িয়ে গেছে — একটি গণধর্ষণ চক্র ধরা পড়েছে, একজন মেয়েকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পুলিশ, আর সেই মেয়ে হচ্ছিল রেশমী।
কিন্তু কেউ জানে না সেই অজানা নাম্বারের কথা। জানে না সেই “ছায়া”-র কথা।
কলেজের করিডোরে হঠাৎ এক নতুন ছেলে, নাম সাফওয়ান, রেশমীর সামনে এসে দাঁড়ায়।
"তুমি ঠিক আছো?" — জিজ্ঞেস করে ছেলেটি।
রেশমী ভদ্রভাবে মাথা নাড়ে। সাফওয়ান একটু হেসে বলে, "তুমি জানো, সব নায়কের মুখ দেখা যায় না। কেউ কেউ ছায়ার মতো কাজ করে যায়।"
রেশমী থমকে যায়। সে কিছু বলতে চায়, কিন্তু তখনই ক্লাস বেল পড়ে।
সে বুঝতে পারে — সাফওয়ান হয়তো কিছু জানে। কিংবা... সাফওয়ানই সেই “ছায়া”?
রাত ৩টা। রেশমী আবার একবার ঘুম ভেঙে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
এইবার লেখা: “তোমার ছায়া আজ তোমার সামনে এসেছে। কিন্তু তুমি চিনতে পারোনি। সময় এলে সব জানবে।”
আয়নার কোণায় হালকা করে আঁকা একটি অক্ষর – “S”
রেশমীর কাঁপা ঠোঁট ফিসফিস করে, “S মানে সাফওয়ান? নাকি অন্য কেউ?”
আশেপাশে শীতল বাতাস বইতে থাকে। বাইরের অন্ধকার যেন আরেকটা অধ্যায়ের শুরু হতে চলেছে…
চলবে…
#পরিচয়ের_আড়ালে
#পর্ব২
#গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
৩য় পর্ব লিংক
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন