Motherhood: Episode 2 Sahitya Diary

Motherhood: Episode 2

Sahitya Diary



Mom asked me a question while taking another mouthful of rice, and I stared blankly at her.


"Poison, Mom… what happens if someone eats poison?"


"Nothing happens, dear…"


"Let me have some too. You give it to me every day, so why not today?"


"No, dear. Don’t even come near me."


I could sense how heavy Mom’s voice had become, how difficult it was for her to breathe. I didn’t know what to do.


"Mom, what’s wrong? Why are you acting like this?"


"Can you get me some water, dear?"


Mom began speaking in a strained, halting voice. I handed her my glass. She tried to reach for it, but she didn’t have the strength. I held the glass to her lips, and she gulped it all down at once. Then she collapsed onto the floor. I had never seen Mom like this before, and I was terrified.


"Oh, Mom, are you in that much pain? Why are you doing this to yourself?"


Mom pulled me close and began speaking in a weak voice.


"If you can, forgive me, dear. I have done you a great wrong. Tell Allah to forgive me too."


Seeing Mom in such a pitiful state, I couldn't hold back any longer. I screamed, my voice echoing through the house. A moment later, Marzina Fupu and her brother from the neighboring house rushed in.


"Akaid, what happened? Why are you screaming? Did your mom hurt you?"


"Marzina Fupu, something’s wrong with Mom… I’m really scared. Is she going to be okay?"


Marzina Fupu and her brother rushed toward Mom. They whispered something I couldn’t understand. I just stared blankly. After a while, Marzina Fupu’s brother said to me—


"Akaid, we have to take your mom to the hospital, or she won’t survive."


"Ah, death… You’re saying that in front of the child? Be quiet," Marzina Fupu scolded her brother.


More people gathered at the house. Ismail Chacha from next door arrived with his van. Everyone helped lift Mom into the vehicle. I ran after them.


"Oh, Ismail Chacha, Mom isn’t talking. Will she be okay if we take her to the hospital?"


"Yes, son. She’ll be fine. Now tell me, where is the money in the house? We don’t have much."


"Money? I have some…"


I ran inside and grabbed the few notes Mom had given me yesterday, along with some coins my father had left behind. I ran back to the van.


"Here, Ismail Chacha, take this money. Will this be enough?"


Ismail Chacha stared at me for a moment.


"Oh, my dear boy, what will this little money do? Your mother will need a lot more."


"But where will I get that much? I don’t have it."


Marzina Fupu’s brother suddenly appeared and said to Ismail Chacha, "Don’t waste time. I’ll arrange the money. Let’s go."


Mom’s lifeless body was lying in the van. I was seated near her head, holding her hand tightly so I wouldn’t fall out. After half an hour, we arrived at the hospital. Mom was taken inside. I was brought back home. I pleaded to stay at the hospital, but no one listened.


---


At night, I sat outside, staring at the sky. I had received no news about Mom. Only one phrase kept echoing in my mind: *"Forgive me, dear… I have done you a great wrong."*


What did Mom mean by that? Why was she asking for my forgiveness? Only Allah and Mom knew. I couldn't understand the mystery. Suddenly, someone placed a hand on my shoulder. I turned with a start.


"Dad, is that you?"


"Yes, it’s me."


"You haven’t told anyone, have you?"


"Told them what?"


"That I was the one who gave you the poison… you didn’t tell anyone?"


"No… but what would happen if I did?"


"Exactly. You mustn’t tell anyone. Promise?"


"Okay… now take me to Mom. I want to see her."


"It’s too late now. I’ll bring her back tomorrow morning."


"Really? You’ll bring her then?"


"Yes, now go to sleep."


I went to my room, feeling relieved. Morning came, and I woke up anxious, wondering when Dad would bring Mom home. Soon, I heard the sound of a vehicle and people approaching. I ran outside to see them unloading something wrapped in plastic. I asked Dad:


"Dad, what is this? Where’s Mom? Mom, where is she?"


"Son, your Mom is in this plastic," Dad said, crying.


"Why are you keeping Mom in that thick paper? She can’t breathe!"


Hearing this, some of the people began to cry. I didn’t understand what was happening. Dad held me tightly, sobbing.


"Your Mom is no more, son. She has left us all behind."


Hearing Dad’s words, my head spun. Darkness seemed to close in around me. I fell at Mom’s feet. Suddenly, I noticed something strange—these were not Mom’s feet! Why were her toes so long? I was certain this wasn't Mom’s body. Then why was Dad calling this Mom? Could she really be alive…?


"No, this is not my Mom! Dad, this isn’t her!"


"Oh, son, grief has clouded your mind. You can’t recognize your own mother."


The villagers tried to reason with me, but I knew this wasn’t Mom. I had to correct Dad’s mistake.


"Dad, they’re calling me crazy. Show them Mom’s face! This isn’t her!"


"Son, this is your mother. Accept what has happened."


They insisted on finishing the funeral rites. To this day, I stare at her grave, imagining if I could lie there with Mom and feel no pain.


---


A few days later, Dad started staying home more. During dinner one night, he hesitated before speaking.


"Akaid, I need to tell you something."


"What is it, Dad?"


"Since your Mom is gone, you can’t live alone… so, for your sake…"


"For my sake, Dad?"


"I might bring a new mother for you. Would you be upset?"


Hearing this, I put my food down.


"Why a new mother? She’s not my Mom. Please, Dad, bring my own Mom back."


"That’s not possible, son. But the new mother will love you just as much as your Mom did. Soon, you’ll forget all about this."


"I don’t want a new mother. I will never forget my Mom."


I poured water into my rice bowl and left the room. Dad called after me—


"I only said it for your own good."


I ignored him and went to my room, closing the door. This was the room I had shared with Mom. Her pillow was still where it always was. Her scent lingered on her sari. Only the person was gone. Being in this room made my heart ache. Mom had shared countless stories here—fairy tales, tales of queens and kings. I had demanded so many things from her, and she had fulfilled them all. She had scolded me and wiped away my tears. Thinking of these things, I drifted off to sleep.


Suddenly, a noise woke me. It came from outside the room. I went to the door.


A woman was sitting there, her face covered with a veil. I asked—


"Who… who are you?"


She didn’t respond. I slowly approached and lifted the veil. A strange feeling washed over me… it felt like a dream.


"Mom? Is that you? Where did you come from?"


**To be continued…**

সে_কি_জানে পর্ব ২ সাহিত্য ডাইরি

সে_কি_জানে

পর্ব ২

সাহিত্য ডাইরি 



হুট করে কিছু লোক আমার হাত,পা,চোখ বেঁধে ফেলে।আমি ছোটার অপ্রাণ চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।হঠাৎ কেউ আমার হাতের বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে,,,তার নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে,,,বুঝতে পারছি,, সে আমার খুব কাছে।।হয়তো এটা রেয়ান,,,,


---" রেয়ান?? এটা কি আপনি??"


আমার কথা শুনে উনি নেশা ধরানো কন্ঠে বললেন,,,,


---" বাহ,,,তুমি তো দেখি অনেক স্মার্ট,,, মাত্র একদিনের পরিচয়ে আমাকে এতটা চিনে ফেললে।।"


---" দেখুন বাজে কথা বন্ধ করুন,,,একজন পুলিশ হয়ে এমন খারাপ কাজ করতে আপনার লজ্জা করে না?? "


---" কই?? কিছুই তো এখন করি নি?? যদি বলো এখন করব??"


---" ছিঃ আপনি একটা নির্লজ্জ,,বেহায়া মানুষ,,,সেটা আপনি জানেন,,??"


---" আলবাত জানি।।আচ্ছা একটা কথা বলত,,,তোমার স্বামী তোমাকে কেন ছেঁড়ে চলে গেছে,,,?? এত সুন্দর একটা.....উফফ আর কি বলব,,,তোমাকে দেখলেই আমার ইচ্ছা করে খেয়ে ফেলতে,,,ও কিভাবে ছেঁড়ে যেতে পারলো??তবে ভালোই হয়েছে,,,ওর জন্যই এখন আমি তোমাকে পেতে পারবো,,, কি বলো??"


রেয়ানের এমন বাজে কথা শুনে আমার শরীর ঘৃণায় শিউরে উঠছে।।রাগও হচ্ছে প্রচুর,,,কিন্তু এখন আমি উনাকে যাই-ই বলি না কেন উনি তাতে কোনো রিয়েক্ট করবেন না উল্টা আরও খারাপ কথা শুনাবেন আমাকে,,,,তাই শান্ত কণ্ঠে উনাকে বলি,,,,


---" রেয়ান প্লিজ আমার বাঁধনগুলো খুলে দিন,,,আর আমাকে যেতে দিন,,,আমার ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।।"


এবার রেয়ান কিছু বলল না,,,, আসতে আসতে সরে যেতে লাগলো আমার কাছ থেকে।।এতে আমার ভয় যেন দ্বীগণ বেড়ে গেল,,,চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,


---" প্লিজ রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দিন,,,আমার ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,,ও আমাকে ছাড়া বেশিক্ষন থাকতে পারে না,,,প্লিজ যেতে দিন আমাকে রেয়ান,,প্লিজ!!"


এভাবে অনেক কাকুতিমিনতি করার পরও কোনো লাভ হলো না,,, প্রতিবারের মতোই আমি ব্যর্থ।।


হঠাৎ মনে হলো গাড়িটা থেমে গেছে,,,আর আমি শূণ্যে ভাসছি।।বুঝতে পারছি কেউ আমাকে কোলে নিয়েছে।।আমি একটু নড়তে যাবো,,,তার আগেই আমার মুখে কেউ একজন একটা কাপড় ধরে,,, সাথে সাথে আমার শরীর যেন অবশ হতে শুরু করে,,,হাত পা নাড়ানোর সামান্যটুকু শক্তি নেই আমার,,,আর না আছে কথা বলার।।কয়েক সেকেন্ড যেতেই আমার চোখে রাজ্যের ঘুম বিরাজ করে।।পরক্ষনেই তলিয়ে যাই ঘুমের দেশে।।

.

.

.

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে নিজের রুমেই আবিষ্কার করি।।পাশেই বসে আছে আমার ছোট্ট ছেলেটা।।তার চোখে স্পষ্ট পানি,,,খুব মায়া লাগছে আমার,,কিন্তু মনে এক প্রশান্তি কাজ করছে " আমার ছেলে আমার সাথে আছে "।। পরক্ষনেই মনে হলো,,,, আমি এখানে কিভাবে??,,, আমাকে রেয়ান কোথায় যেন নিয়ে গিয়েছিলো,,,কিন্তু কোথায়??আর আমাকে এখানেই বা আনলো কে??


আমাকে চোখ খুলতে দেখে রিহান খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমায়,,,কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,


---" কোথায় গিয়েছিলে মা তুমি?? জানো কত কান্না করেছি আমি,,,এভাবে আর যাবে না কেমন,,,নাহলে কিন্তু কথা বলব না আমি তোমার সাথে,,,"


ওর কথার বিনিময়ে আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম,, আর বললাম,,,


---" আর কক্ষনও যাবো না মা তোকে রেখে "


.

.

.


প্রায় কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর খেয়াল করলাম আমার ছেলেটা ঘুমিয়ে গেছে।।আশেপাশে তাকাতেই দেখি মা দরজায় দাঁড়িয়ে আমাদের মা-ছেলেকে দেখছে,,, আমি আসতে করে রিহানকে পাশে শুইয়ে দিয়ে মার কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি,,,কেন যেন একটা ভয় কাজ করছে মনে,,,মাকে আর আমার ছোট্ট ছেলেটাকে হারানোর ভয়,,,কেন যানি চোখের পানি গুলো আজ বাঁধা মানছে না।। ডুকরে কেঁদে উঠি মাকে জড়িয়ে ধরেই।।তা দেখে মা চমকে উঠে বললেন,,,


---" কি হয়েছে মিরা,,,কাঁদছিস কেন??"


আমি মার কাছ থেকে সরে আসলাম,,চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম,,,


---" কেন জানিনা আজকে খুব কষ্ট লাগছে মা,,,তাই কান্না আটকাতে পারি নি "


আমার কথা শুনে মা কিছু একটা হয়তো আন্দাজ করেছেন।।গম্ভীর কন্ঠে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন,,,,


---" আচ্ছা মিরা।।সত্যি করে বল তো তোর কি হয়েছে,,,সন্ধ্যার দিকে কতগুলো লোক তোকে এনেছিল বাসায়,,,তুই নাকি রাস্তায় মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গিয়েছিলি!!"


মার কথা শুনে আমি কি বলব বুঝতে পারছি না,,, তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২টা বাজে।।সাথে সাথে মনে এক ভয়ংকর ভয় গ্রাস করে আমাকে,,,,আমি বাসা থেকে বের হয়েছি সকালে,,,আর এসেছি সন্ধ্যায়,,,এর মাঝে কি হয়েছে তা কিচ্ছু আমি জানি না।।তাহলে কি রেয়ান আর আমার মাঝে খারাপ কিছু হয়েছে??না,,না এগুলো আমি কি ভাবছি,,,কিন্তু হতেও তো পারে!!


আমার ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মা বলেন,,,,


---" মিরা,,, সত্যি করে বল,,, কোথায় ছিলি তুই,,,তোর সাথে কি কোনো খারাপ কিছু হয়েছে?? "


মা জিনিসটা আসলেই অদ্ভুদ,,,নিজের সন্তানের মনে কথাটা তারা বেশ ভাবে বুঝতে পারেন,,তাই অবাক হলাম না,,,এটা বেশ কয়েকবার হয়েছে আমার সাথে,,,


---" আসলে মা,,, আজকে অনেক গুলো চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি তো,,তাই বেশি প্রেসার পড়েছে মাথায়,,,,এজন্যই হয়তো মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেছি রাস্তায়,,,"


আমার কথায় মা হয়তো সন্তুষ্ট হন নি,,,সন্দেহ বোধহয় একটা রয়েই গেল তার,,কিন্তু তবুও কিছু বললেন না,,,চুপচাপ চলে গেলেন রুম থেকে,,,,

.

.

.

.

রাত প্রায় ১টা,,, বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আজকের দিনটার কথা ভাবছি,,,কিছুতেই মনে করতে পারছি না "কি হয়েছে আমার সাথে"।। হঠাৎ কেউ এক টানে আমাকে পেছনে ঘুড়ালো,,, সামনে তাকাতেই দেখি রেয়ান আমার দিকে নেশাক্ত চাহনি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে,,, আর বাঁকা হাসছে,,,,আমি কিছু বলতে যাবো,, তার আগেই সে আমাকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে,,,,তারপর কানে ফিসফিস করে বলতে থাকে,,,


---" আজকের দিনটা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিল মরুভূমি!!"


কথাটা শুনে কি রিয়েক্ট দেওয়া উচিত বুঝতে পারছি না,,,রেয়ানের কথার মানে কি?? তাহলে কি আমি যা ভাবছি তা সত্যি??মুহুর্তেই চোখে পানি এসে জমা হয় আমার,,,কিন্তু চোখ থেকে গড়িয়ে নিচে পড়েনি পানিগুলো,,,,

.

.

.


কিছুক্ষন চুপ থেকে রেয়ানকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টায় লেগে যাই,,,কিন্তু প্রতিবারের মতী আমি ব্যর্থ,,,এমনিতে বডিবিল্ডার,,,তার উপর পুলিশ,,,আমার শক্তি তার কাছে খুবই নুন্যতম,,,


অনেক চেষ্টার পরও যখন রেয়ানকে নিজের থেকে সরাতে পারলাম না,,, তখন উপায় না পেয়ে তাকে একটা জোড়ে কামড় দিলাম,,,এতে সে "আহহ" বলে আমাকে ছেঁড়ে দিলো,,এ সুযোগে রুমের ভিতরে ডুকতে যাবো,,,অমনি রেয়ান আমার কাছে এসে আরও শক্ত করে চেপে ধরল আমায়।।আমার বাম গালে ২ বার চুমু দিয়ে বলল,,,


---" থেংস ফর গিভিং মি লাভ বাইট বেব,,,আই জাস্ট লাভ ইট "

.


---" পেটের বাদামী তিলটা কি আমাকে দেখানোর জন্য বের করে রেখেছো ?? " [ বাঁকা হেসে ]


কথাটা শুনা মাত্র আমি নিজের দিকে একবার চোখ বুলালাম।।কী সর্বনাশ!! আমার শাড়ির পেটের দিকটা থেকে কাপড় সরে গেছে।।চাঁদের আলোয় স্পষ্ট পেট দেখা যাচ্ছে আমার।।সাথে সাথে নিজেকে ঢাকতে শুরু করি,,,রেয়ানের দিকে রাগি চোখ নিক্ষেপ করে বলি.....


---" আপনি এত অসভ্য কেন?? মাঝরাতে আমার বাসায় এসে ফাজলামি করছেন,,,আর,,,আর আমার রুমে ঢুকলেন কিভাবে?? "


রিহান ঘুমিয়ে আছে দেখে কিছুটা ফিসফিসিয়ে বললাম কথাগুলো।।আমার দেখাদেখি রেয়ানও ফিসফিসিয়ে বলল.....


---" তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো,,,সেখান থেকেই ঢুকেছি তোমার রুমে।।"


কথাটা শুনে নিজের আশেপাশে তাকালাম,,,আমি তো বারান্দায়,,,তাহলে কি এ পুলিশ গুন্ডা পাইপ দিয়ে বেয়ে বেয়ে বারান্দা দিয়ে আমার রুমে এসেছে,,,কিন্তু আমি দেখলাম না কেন??


---" আপনি যদি বারান্দা দিয়ে আসেন,,, তাহলে আমি আপনাকে উঠতে দেখলাম না কেন??"


---" মহারানী যে ভাবনায় ডুবে ছিলেন,,,সেখান থেকে বের হয়ে কোথায় কি হচ্ছে তা দেখার সময় ছিল কি আপনার,,,আপনি তো আপনার মহাবড় চিন্তায় ব্যস্ত ছিলেন,,,আচ্ছা কি চিন্তা করছিলে তুমি?? নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে!! [বাঁকা হেসে]


---" আম,,আমি আপনাকে নিয়ে চি,,চিন্তা করব কেন??আমাকে একটা কথা বলুন তো,,, পুলিশ হয়ে এসব বাজে কাজ করতে আপনার বিবেকে বাঁধে না?? কিভাবে পারেন এগুলো??সকালে একবার উঠিয়ে নিয়ে গেলেন রাস্তা থেকে,,, কি করেছেন না করেছেন কিচ্ছু জানি না।। এখন আবার মাঝরাতে বারান্দা দিয়ে আমার রুমে ঢুকেছেন।।আপনিই বলুন এগুলো কি ধরণের অসভ্যতামি,,,কেন করছেন এমন আমার সাথে?? "


---" আমাকে বিয়ে করো,,,তাহলে এত কিছু সহ্য করতে হবে না তোমার "


---" জীবনেও না,,, আপনার মতো একজন খারাপ মানুষকে আমি কখনও বিয়ে করব না,,,আরে আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না আপনি আমার মতো একটা বিবাহিতা মেয়ে,,যার একটা বাচ্চা আছে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেন?? নিশ্চয়ই একটা খারাপ মতলব আছে আপনার??"


কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলাম আমি,,,পারছি না এসব নিতে,,,এ-ই রেয়ানটার জন্য বারবার অতীতটা তুলে ধরতে হয় আমার,,,বারবার মনে পড়ে যায় ও-ই ভয়ংকর অতীতটার কথা,,,শুভর কথা,,,,


মেঝেতে বসে কান্না করছি,,এতে বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই রেয়ানের,,,সে একমনে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে,,,হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে সে বলে উঠে,,,,


---" তাহলে তুমি বিয়ে করবে না আমাকে??"


কথাটা শুনে রাগ মাথায় উঠে গেল আমার।।মেঝে থেকে উঠে রেয়ানের সামনা সামনি দাঁড়ালাম।। রেয়ানের কলার ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম.....


---" আপনার আসলেই লজ্জা করে না রেয়ান?? এখনও কিভাবে বলছেন এগুলো??কি ভাবেন কি আপনি নিজেকে,,,পুলিশ বলে যা ইচ্ছে তা করবেন??পারবেন না,, আপনাকে ভয় পাই না আমি,,করব না আমি আপনাকে বিয়ে,,,বুঝেছেন,,করব না বিয়ে আপনাকে ।। "


কথাটা শুনে রেয়ান যেন আরও গম্ভীর হয়ে গেল।।আমার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে,,,শান্ত ভাবে বলল.....


---" বিয়ে তো তোমাকে আমাকেই করতে হবে ,,,তুমি সেটার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নাও,,,আর একটা কথা,,ভয় পাও না আমাকে তাই না??এবার থেকে ভয় পাবা,,, ভীষণ রকমের ভয় পাবা,,,,"


কথাটা বলেই রেয়ান আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না।। এক লাফ দিয়ে বারান্দা থেকে নিচে নেমে গেল,,,আমরা থাকি একটা ২তালা বাসায়,,,নিচ থেকে আমার বারান্দাটা এত উপরে না,,, তাই হয়তো সহজেই এক লাফ দিয়ে নেমে গেছে রেয়ান,,,


এক দৃষ্টিতে রেয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,,,খুব ভয় হচ্ছে আমার,,,রেয়ান কথাটা শান্ত ভাবে বললেও,,,সেটা যে কতটা ভয়ংকর,, তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি আমি।।

.

.

.

.

সকালে......


ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার ছোট্ট ছেলেটা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷। ওর কপালে একটা স্নেহভরা চুমু দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।।ফ্রেস হয়েই আগে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াই,,,


রান্না ঘরে ডুকতেই দেখি মা নাস্তা বানাচ্ছে,,,, আমিও তার সাথে নাস্তা বানাতে লেগে যাই,,,২ জন ২জনের সাথে অনেক গল্প করি,,,নাস্তা বানানো শেষে হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ আসে,,,তা শুনে মা বলে.....


---" মিরা তুই নাস্তাগুলো টেবিলে নিয়ে যা,,, আমি দেখছি কে এসেছে "


---" আচ্ছা "


মার কথা মতো আমি নাস্তাগুলো টেবিলে নিয়ে যাই।।এদিকে মা দরজা খুলতেই কিছু লোক কথা নাই কোয়া নেই বাসার ভেতরে ঢুকে যায়।। লোকগুলো ড্রইংরুমে ঢুকে আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে.....


---" আপনার নাম কি মিরা "


---" জ্বী "


---" আপনাকে আমাদের স্যার ডেকেছে,,,তাই আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে "


---" মানে?? আপনাদের স্যার কে?? আর আপনারাই বা কারা?? এভাবে আমাদের বাসায় ডুকে এসব তামাশা করার মানে কি,,,,,বের হোন আমাদের বাসা থেকে।। "


---" দেখুন আমরা পুলিশের লোক।।যা বলছি তা করুন,,,নাহলে...[বলতে না দিয়ে ] "


---" পুলিশের লোক হয়েছেন দেখে যা ইচ্ছে তা করবেন,,,দেখুন ভালোভাবে বলছি বের হোন আমাদের বাসা থেকে,,,নাহলে আমি চিল্লাচিল্লি করে মানুষজন ডাকব।।।"


আমার কথায় যেন তাদের কোনো কিছুই যায় আসে না।।তারা তাদের জায়গা থেকে এক ফোটাও নড়ে নি।।হুট করে একজন মার মাথায় বন্দুক তাক করে বলল....


---" দেখুন ম্যাম,,,আমাদের সাথে চলুন,,,নাহলে আমরা আপনার মা আর ছেলেকে মারতে বাধ্য হবো "


কথাটা শুনে আমার লোকগুলোর উপর একটু সন্দেহ হলো,,,তারা কিভাবে জানে এটা আমার মা আর আমার একটা ছেলেও আছে।।তাহলে কি এদের রেয়ান পাঠিয়েছে??,,,কেননা রেয়ানও একজন পুলিশ,,,,


---" আপনাদের কে পাঠিয়েছে?? "


---" কে পাঠিয়েছে তা আমাদের সাথে গেলেই বুঝবেন "


---" আচ্ছা ঠিকাছে আমি আপনাদের সাথে যাবো "


কথাটা শুনে মা রেগে গেলেন,,,উনি তার ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন....


---" কি বলছিস মিরা,,,কে না কে এ লোক,,,যদি কিছু হয় তোর,,,তুই এদের সাথে যাবি না।।"


---" মা আমার কিচ্ছু হবে না।।তুমি রিহানের খেয়াল রেখো,,,আমি তাড়াতাড়িই চলে আসবো "


---" কিন্তু...... "


---" আমার কিচ্ছু হবে না মা।।তুমি চিন্তা করো না "


অতপর লোকগুলো আমাকে একটা ব্লেক কারে বসায়,,,আর নিজেরা বসে অন্য একটা গাড়িতে।।প্রায় কিছুক্ষন পর গাড়ি পৌঁছে যায় তার গন্তব্যে,,,গাড়ি থেকে নামতেই দেখি লোকগুলো আমাকে পুলিশ স্টেসনে নিয়ে এসেছে......


.

.

.

.

.


প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে বসে আছি পুলিশ স্টেসনে।।আশেপাশে সবাই যার যার কাজ করছে।।আমাকে যে লোকগুলো নিয়ে এসেছিল তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।। লোকগুলো আমাকে দিয়েই চলে যায়।।যাওয়ার আগে বলে যায় আমি যেন এখান থেকে কোথাও না যাই,,,ওদের স্যারের সময় হলে আমাকে তার কাছে ডাকবে....


২ গালে ২ হাত দিয়ে বসে আছি।।হঠাৎ একজন কন্সটেবল এসে আমাকে বলে....


---" ম্যাম,,, আপনাকে স্যার ডাকছে,,, আমার সাথে আসুন "


--" জ্বী "


কন্সটেবল আমাকে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড় করালো।।তারপর বলল....


---" ম্যাম,, ভিতরে স্যার আছে,, আপনি যান "


আমি কিছু না বলে ঢুকে গেলাম রুমটার ভেতর,,,আমার যা ভয় ছিল তাই-ই হলো।।রুমটায় ডুকতেই দেখি রেয়ান পুলিশ ড্রেস পড়ে বসে আছে চেয়ারে,,,আর গম্ভীরভাবে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।।ফাইলে তাকিয়ে থেকেই শান্তভাবে সে বলে উঠল......


---" মরুভূমি তাহলে তুমি এসেছো,,,বসো "


আমার নামটা এ-ই লোক কোনোদিনও ঠিক করে বলে না,,সবসময়ই মরুভূমি ডাকে,,,এতে আমার রাগ হয় প্রচুর,,,কিন্তু এখন রাগ থেকে ভয় লাগছে আমার।।তার এ-ই শান্ত রুপের বিপরীতে যে এক হিংস্র রুপ আছে,,,।। কি করবে এ লোক আমার সাথে?? কেন ডেকেছে সে আমায়??




--" ঠাসসসস,,আপনার লজ্জা করে না রেয়ান।একজন পুলিশ হয়ে এমন বাজে কাজ করতে।।আর আমাকে এভাবে উঠিয়ে আনার মানে কি?? "


থাপ্পড় আর কথাটা বলে আমি নিজেই বোকা বনে গেলাম।।রেয়ান ভয়ার্তক ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।।তার চোখ ২টো লাল হয়ে আছে,,,আর মুখ শক্ত করে রেখেছে সে।।


এমন ভয়ংকর রুপ আমি কখনও দেখি নি।।ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।। থাপ্পড়টা মারা হয়তো উচিত হয়নি আমার।। কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলেই তো হতো।। থাপ্পড় মারার কি প্রয়োজন ছিল??এখন তো রেয়ান আমার কোনো কথা শুনবে না।।যদি সে আরও খারাপ কিছু করে।।যদি আমার ছেলেকে আর মাকে.....আল্লাহ জানে এ পুলিশ গুন্ডা এখন কি করবে!!!


কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম......


---" দে,,,দেখুন রেয়ান!!এ,,ভাবে তাকিয়ে লা,,,ভ নেই,,,দোষ কিন্তু আপনারই।।আপনি এত বাজে কাজ কেন করে...... "


আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রেয়ান আমার হাত ২টো দেওয়ালের সাথে খুব শক্ত করে চেপে ধরেলেন।। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন.....


---" অনেক সাহস না তোমার।।আমাকে থাপ্পড় মেরেছো তুমি তাই না।। এটার ফল ভুগবা তুমি এখন।।"


কথাটা বলেই আমাকে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো রেয়ান,,,তারপর খুব রুডলি আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,,


---" আমার কাছে আসা তোমার পছন্দ না,,, তাই না?? এখন থেকে আমার কাছেই থাকতে হবে তোমার।। "


বলেই আমাকে টানতে টানতে পুলিশ স্টেসনের বাইরে নিয়ে যেতে থাকে।।পুলিশ স্টেসনের সব মানুষ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।।খুব অসস্তি হচ্ছে আমার।।রেয়ান থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি।।প্রতিবারের মতো এবারও ফলাফল শূণ্য।।এবার না পেরে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি....


---" রেয়ান ছাড়ুন আমার হাত।।আমার লাগছে।।আমি আমার ছেলে কাছে যাবো।।প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।। "


কে শুনে কার কথা!! রেয়ান নিজের মতো টানতে টানতে আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।।এক ধাক্কায় গাড়ির ভেতরে ডুকিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে।।।


গাড়িতে ডুকেই রেয়ান প্রথমে গাড়ি লক করে দেয়। এদিকে আমি গাড়ি খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করেই যাচ্ছি,,,তা দেখে সে বলে উঠে,,,,


---" কোনো লাভ নেই মরুভূমি।।গাড়ি লক।।চুপচাপ বসে থাকো নাহলে......."


---" নাহলে কি করবেন কি আপনি?? এত বাজে একটা মানুষ কেমন হতে পারে??আসলে কি জানেন আপনি মানুষই না,, আপনি একটা অমানুষ।।ভালোভাবে বলছি আমাকে আমার ছেলের কাছে যেতে দিন।।নাহলে কিন্তু আমি... "


---" তুমি কি হ্যাঁ?? কিছু করতে পারবে না তুমি আমার।।তাছাড়া কি যেন বলছিলে,,, নিজের ছেলের কাছে যেতে চাও,,, তাই না??সেটা আমাকে থাপ্পড় মারার আর এগুলো বলার আগে ভাবা উচিত ছিল।।এখন যেতে দিচ্ছি না তোমায় কোথাও।।আমার কাছেই থাকবে তুমি।।"


---" প্লিজ এমন করবেন না রেয়ান।।আমাকে যেতে দিন আমার ছেলের কাছে।।ও মনে হয় এখন কান্না করছে আমার জন্য।।আমি আমার ছেলের কাছে যাবো রেয়ান।।প্লিজ যেতে....."


আর কিছু বলতে পারলাম না আমি।।তার আগেই রেয়ান সেই আগেরবারের মতো আমার মুখে একটা সাদা কাপড় চেপে ধরলেন।।সাথে সাথে আমি অজ্ঞা হয়ে গেলাম।।

.

.

.

.

কিছুক্ষন আগে.......🍁🍁


চেয়ারে বসতেই রেয়ান আমার সামনে একটা ফোন রাখে।। একটা ভিডিও চলছে ফোনটায়।। যেখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আমার ছেলে আর মাকে কয়েকজন লোক বন্ধী করে রেখেছে।।ভিডিও-টা দেখে মুহুর্তেই মাথা গরম হয়ে যায় আমার।।রেয়ানের তাতে কোনো খেয়াল নেই,,,সে আমার কাছে আসতে আসতে বলে.....


---" আমাকে এখন,,,এ-ই মুহুর্তে বিয়ে করতে হবে তোমাকে।।নাহলে তোমার ছেলে আর মাকে...."


এটুকু শুনেই রাগটা যেন আর হিংস্রতায় পরিণত হয়।।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে " ঠাসসসস " করে থাপ্পড় মেরে দি রেয়ানকে।।তারপর কথাগুলো বলি......


.

.

.

.


জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে এক অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করি।। যতটুকু অনুভব করছি,,,আমাকে একটা চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে।।প্রচুর ভয় লাগছে আমার।।সাথে অন্ধকার রুমটার কিছু বিকট আওয়াজ যেন আমাকে আরো ভয় পাওয়াতে সক্ষম!!


ভয়েরচটে কয়েকবার জোড়ে জোড়ে রেয়ানের নাম ধরে ডাকি।।কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই।।ভয়টা যেন আরও বেড়ে গেল আমার।।ছোট বেলা থেকেই অন্ধকার ভয় পাই আমি।।যার জন্য রিতিমতো কপালে ঘাম জমে গেছে আমার।।


হঠাৎ কারো কন্ঠে গানের আওয়াজ পাই........🍁🍁


" সে কি জানে,, তোকে অভিমানে হাসাতে??


সে কি পারে,, বুকে ধরে তোকে ভুলাতে??


তোর প্রিয় গান কে গেয়ে শোনাবে?বল


আমার থেকে কে তোকে ভালো জানে!!


ইশারাতে তোকে খুঁজে বেড়াই স্বপ্নে তোর


নাম ডেকে হেসে ফেলি আনমনে।কে নিয়ে


যাবে তোকে রুপকথা দেশে?? বল আমার


থেকে কে তোকে ভালো জানে!!


.

.

.

.


#চলনে....🍁🍁

গর্ভধারিণী সাহিত্য ডাইরি পর্ব ৬

গর্ভধারিণী 

পর্ব---৬

সাহিত্য ডাইরি 



---এতো আমার ছোটোবেলার ছবি। হুবহু এরকম একটা ছবি আমাদের বাড়িতেও আছে।এই মহিলা যদি সত্যিই আমার আম্মা না হয়ে থাকে তার ঘরে আমার ছবি কি করছে?


ছবিটার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম আমি।এরপর তার ওপরে হাত বুলাতে লাগলাম।হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছবিটা মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেলো।শব্দ পেয়ে তিনি তার ঘর থেকে ছুটে আসে।


---একি,এটা কি করলে তুমি? 


---আমি বুঝতে পারি নি,একদম বুঝতে পারি নি। 


---তুমি কেনো এসেছো এই ঘরে,আমি বলেছি তোমায়? 


---এটা কার ছবি ছিলো,আপনার কি হয়? 


---একই তো আমার ঘরের জিনিস ভেঙে ফেলেছো, আবার আমায় প্রশ্ন করছো। 


বুঝতে পেরেছি ছবি ভাঙ্গাতে উনি আমার ওপরে খুব রেগে গিয়েছেন।তাই আমি আর কোনো কথা বললাম না। 


---দেখো,আমাকে না বলে এরপর কোনো জিনিসে হাত দেবে না,বুঝতে পেরেছো।এবার চলো আমার সাথে।তোমার খাবারের ব্যবস্থা করেছি আমি। 


বেশ স্বাভাবিক গলায় কথাগুলো বলে আমায় হাত ধরে খাবারের টেবিলে নিয়ে গেলেন।আমি একবার পিছনে ফিরে তাকালাম।ছবিটা মেঝের ওপরে পড়ে আর ভাঙা কাচগুলো চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এক পলক দেখে আবারো মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।উনি আমায় নিয়ে খাবার টেবিলে বসালেন।একটা প্লেটে করে অনেকটা সাদা ভাত দিলেন,সাথে ডালের বড়া, কলা আর কাঁঠালের বিচির তরকারি।খাবারগুলো দেখে আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না।এগুলো তো সব আমার প্রিয় খাবার।এই মহিলা আমার প্রিয় খাবারের বিষয়ে জানলো কিকরে?আমি তাকে প্রশ্ন করি! 


----এগুলো সব আমার জন্য? 


---হুমমম,তোমার জন্য রান্না করেছি!


---এতো তাড়াতাড়ি এগুলো জোগাড় করলেন কোথা থেকে? 


---পাশের দোকান থেকে কিনে এনেছি।এখানে সব পাওয়া যায়। 


---কিন্তু এগুলো তো সব আমার প্রিয় খাবার, আপনি জানলেন কিকরে? 


---আমি জানি না তো, কে জানবে.... 


উনি কথাটা বলে নিজেকে সংবরণ করলেন।যেনো আরও কিছু বলার ছিলো তার,আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।


---আপনি জানবেন মানে, আপনি তো চেনেন না আমায়, কিকরে জানলেন এগুলো আমার প্রিয় খাবার বলুন।


---তুমি বড্ড কথা বলো।এখন চুপচাপ খাও তো।তোমার খাওয়া শেষ হলে আমিও খাবো।


---আপনিও বসুন না। 


---নাহ, আগে তুমি খাও... 


আমি হাত দিয়ে খাবারগুলো খেতে যাবো,কিন্তু হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ থাকার কারণে ঠিকমত খেতে পারছিলাম না।তারপরেও খাওয়ার চেষ্টা করছি।এমনিতেই প্রচুর খিদে পেয়েছে।তার ওপরে এতো ভালো ভালো তরকারী।উনি আমার সমস্যটা বুঝতে পেরে হেসে বললেন। 


---আচ্ছা ছাড়ো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি! 


--আপনি আমায় সত্যি খাইয়ে দেবেন? 


--হ্যাঁ, দেবো বৈ কি,


---জানেন আমার আম্মাও আমায় রোজ নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন।


---তাই নাকি,আসলে সব মায়েরাই এমন হয়।শুধু তোমার মা নয়। 


উনি নিজের হাতে ভাত মেখে আমায় খাইয়ে দিতে লাগলেন।যেনো অনেকদিন পরে নিজের মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছি।আমার আম্মার রান্না আর এনার রান্নার ভেতরে হুবহু মিল।পেট পুরে খেয়ে নিলাম।আম্মা মারা যাবার পরে এই প্রথম এতো তৃপ্তি সহকারে ভাত খেলাম।তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই,এরপর উনি খেতে বসেন।আমি কৌতুহলবশত দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলাম।দেখতে পাই উনি খাচ্ছেন আর কান্না করছেন।চোখ বেয়ে পানি ভাতের প্লেটে গড়িয়ে পড়ছে।একবার ভাবলাম ওনার কাছে যাবে,কিন্তু একটু আগের বকাবকির কথা মনে পড়তেই পিছপা হলাম।

-

-

-

-

-

এদিকে আমার গ্রামে।সেই লোকটা যে আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো সে চুপি চুপি একটা বাগানের বাঁশঝাড়ে এসে ঢুকে পড়ে।একটু পরেই মর্জিনা ফুপু সেই জায়গায় এসে হাজির হয়।


---কি হলো, তুমি সোজা গ্রামেই চলে এলে, কেনো ফোন করে কথা বলা যেতো না? 


---আপনি কি আমায় গা ধা মনে করেন।এইসব কথা ফোনে বলা কতোটা রিস্কি জানেন? 


---হ্যাঁ, জানি জানি।এবার কি বলতে আসছেন বলুন। 


---একটা ঝামেলা হয়ে গেছে যে! 


---ঝামেলা হয়েছে মানে, কি হয়েছে?ধরা পড়ে গিয়েছেন নাকি? 


---ধরা পড়লে কি এখানে থাকতাম।অন্য কেস! 


---হয়েছেটা কি? 


---ছেলেটা তো পালিয়েছে!


---কি?পালিয়ে গেছে ছেলেটা, কিকরে পালালো?আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথাটা বলছেন কোন সাহসে? 


---আরে এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো,আমি তো পানিই দিতে গিয়েছিলাম।তারপর এমন এক কান্ড করলো বুঝতে পারছি না আমি কিছুই, 


---কোথায় গেছে বা এখন কোথায় আছে কিছু জানতে পেরেছেন, ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তো আবার? 


---সে আমি কিকরে জানবো।


--আমি এতো কিছু জানি না।ঐ ছেলেকে আপনার জিম্মেদারিতে দিয়েছিলাম আমি, এখন যদি ওর কোনো ক্ষতি হয় আপনাকে ছেড়ে দেবো না।


---এখন কি করবো আমি, কিছু বলুন।


---খুঁজুন।বাচ্চা ছেলে কতদূর আর যাবে।আমি চাই না ও আবার ঘুরেফিরে এসে নিজের দজ্জাল বাপের হাতে পড়ুক।আপনি ওকে খুঁজে বের করে আমার সেই লোকের কাছে রেখে আসবেন।পরে আমি গিয়ে কথা বলবো ওর সাথে।


---আচ্ছা ঠিক আছে।আমি দেখছি কী করা যায়!এবার যাই আমি তাহলে। 


---যান,আর কেউ যেনো কিছু জানতে না পারে।সাবধান।


---আচ্ছা যাবার আগে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? 


---বলুন, 


---আমি বুঝতে পারছি আপনি ছেলেটার ক্ষতি করতে চান না।কিন্তু এরকম একটা কাজ কেনো করলেন,অন্যভাবেও ছেলেটাকে তো আপনার লোকের কাছে পাঠাতে পারতেন? 


---না, আকাইদকে চিনি আমি।আমি ভালো মুখে বললে ও কখনোই বাড়ি থেকে পালাতো না।তাই আমি চেয়েছিলাম ওকে আমার এক পরিচিত মানুষের কাছে রেখে আসতে,আর ও যাতে ফিরে আসতে না পেরে সেই কারণেই ওকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিলো? 


---হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি কিন্ত এখানে কে এমন ওর এতো বড়ো শত্রু যার জন্য আপনি এই কাজ করলেন? 


---বললাম তো, ওর নিজের বাবা। আমি ওকে বিশ্বাস করি না। যখন তখন ছেলেটাকে মে রে ফেলতে পারে ও। যে নিজের বৌকে খুন করতে পারে তার পক্ষে সব সম্ভব।আমি চাইনা আকাইদ ওর বাবার মতো একটা মানুষের কাছে থাকুক।যাই হোক আপনাকে এতো কথা বলে কি লাভ।এখন তাড়াতাড়ি যান এখান থেকে। 


এরপর লোকটা চলে গেলো।মর্জিনা ফুপু চারদিকে তাকাতে তাকাতে বাড়ির দিকে চলে যায়।

-

-

-

-

-

তখন অনেকটা রাত।খেয়ে দেয়ে আমি ঘুমাতে গেলাম।উনি এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে লাগলেন।জানি না আমি মায়ের হাত ভাবে ওনার হাতটা বুকের ভেতরে চেপে ধরলাম।উনি বসে রইলেন আমার পাশে। 

-

-

-

-

-

মর্জিনা ফুপু লোকটাকে বিদায় করে সোজা আমাদের বাড়িতে আসে।এসে দেখতে পায় আব্বা উঠানে বেশ ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার সামনে ঘোমটা দেওয়া একজন মহিলা।মর্জিনা ফুপু আব্বাকে উদ্দেশ্য করে বলে। 


---দূরুত ভাইজান, কে এইটা? 


---আমি জানি না মর্জিনা।তখন থেকে কথা বলতেছি কোনো সাড়াশব্দ দিতেছে না। 


---এই যে কে আপনি, নিজের ঘোমটাটা সরান মাথা থেকে।ক্যান আসছেন এই বাড়িতে? 


সে মর্জিনা ফুপুর কথার কোনো উত্তর দিলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। 


---আচ্ছা মুশকিল তো, বোবা নাকি, কথা কইতে জানে না নাকি? 


---আমি পুরুষ মানুষ বইলা গায়ে হাত দিচ্ছি না, তুই একটু দেখ মর্জিনা। 


মর্জিনা ফুপু মহিলাটার দিকে এগিয়ে আসে।ঘোমটাটা মাথা থেকে টেনে দিতেই দু'জন চমকে উঠলো।


---একি,আকাইদের মা তুমি....তুমি ফিরে আসলা কিকরে?

(মর্জিনা ফুপু অবাক বিস্ময়ে তাকে প্রশ্ন করে,আব্বা চোখ বড়ো করে হতবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে!) 


এদিকে আমি সেই মহিলার হাত বুকের ভেতরে নিয়ে পরম নিশ্চিন্তে শুয়ে আছি!


               


---একি,আকাইদের মা তুমি....তুমি ফিরে আসলা কিকরে?

(মর্জিনা ফুপু অবাক বিস্ময়ে তাকে প্রশ্ন করে,আব্বা চোখ বড়ো করে হতবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে!) 


---কি হইলো,কথা কইতেছো না কেনো তুমি?


---মর্জিনা এইডা কি দেখতেছি আমি,আকাইদের মা ফিরে আসলো কেমনে, 


---ক্যান ভাইজান,ক্যান ফিরে আসতে পারে না,তুমি সত্যি করে বলো তো আদিবা ভাবি কি আদৌ মারা গেছিলো? 


---মানে কি কইতে চাস তুই...? 


---আমরা কেউ কিন্তু ভাবীর মুখ দেখি নাই।তুমি সবাইরে বলছিলা গাড়ি থেকে পড়ে তার মুখটা থেতলে গেছে।আমরা তাই বিশ্বাস করছি।


---চুপ কর,আমি যা কইতেছি বিশ্বাস কর।আদিবা সত্যিই মা রা গেছে। 


---তাই নাকি,তাইলে এইডা কেডা, আদিবা ভাবি র ভুত? 


---আমি জানি না, কিচ্ছু জানি না আমি। 


---দেখো ভাইজান,আমি ভালোই করেই জানি ঐডা আদিবা ভাবীর লাশ ছিলো না।


---মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর,আদিবার লাশ ছিলো না তো,কার লাশ ছিলো তাইলে? 


--সেইটা তুমিই ভালো জানো,তবে তুমিই কোনো একটা ঘাপলা করছো আমি নিশ্চিত। 


---বিশ্বাস কর মর্জিনা আমি কিছু করি নাই।


মর্জিনা ফুপু জানে আব্বা হয়তো এখন কিছু স্বীকার করবে না,নাকি সে সত্যিই কিছু জানে না।কে বলতে পারে?এদিকে আমার আম্মার মতো দেখতে সেই মহিলা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে কোনো কথা নেই।মর্জিনা ফুপু আবারো এগিয়ে গেলো তার দিকে।


---ঐ মাইয়া,কথা কইতেছি কানে ঢুকতেছে না নাকি,হায় আল্লাহ বোবা হইয়া গেলো না তো? 


---দূরত ভাইজান ওরে ঘরে নিয়া চলো,


---তার আগে ওরে মুখ খুলতে বল,কিছুই তো কইতেছে না।


---আমার মনে হয় কোনো একটা সমস্যা হইছে।কথা বলার হইলে এতোক্ষণে ঠিক কইতো।আমরা আর চাপ না দেই ওরে। 


মর্জিনা ফুপু আম্মার মতো দেখতে সেই মহিলাকে ঘরে নিয়ে গেলো।তার গায়ের কাপড়টা বেশ পুরনো আর ছেঁড়া।তাকে গোসল করিয়ে আম্মার একটা পুরনো শাড়ি পড়িয়ে দেওয়া হলো।আকাইদের আম্মা ফিরে এসেছে শুনে গ্রামের সকল মানুষ আমাদের বাড়িতে জড়ো হতে লাগলো।সবাই বিষ্ময়ে হতবাক।যে মানুষটাকে চোখের সামনে কবর দিতে দেখেছে সে আবারো বেঁচে ফিরে এলো,এটা শুনলে যেকোনো মানুষের পিলে চমকে উঠবে।সকাল হতেই বাড়িতে গ্রামের একদল মহিলা পুরুষ এসে হাজির হয়। 


----কই গেলা দূরত।কি শুনতেছি।তোমার বৌ নাকি ফিরে আইছে? 


আব্বা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। 


---কে কইলো এইসব কথা তোমাগো।আমি কইছি?


---সবার মুখে তো শুনতেছি। 


---হ একজন আইছে কাল সন্ধ্যায়।যারে দেখতে আকাইদের আম্মার মতো।তোমরাই বলো আকাইদের আম্মা তো মারা গেছে তাইলে ফিরে আসলো কেমনে? 


---তাই তো কথা, তবে আমরাও কিন্তু আকাইদের আম্মার মুখ দেখি নাই।তুমি যাই কইছো তাই বিশ্বাস করছি।কি জানি কার মনে কি আছে।


---তোমারা যাতে দেখতে আইছো দেখে চইলা যাও।শুধু শুধু প্যাচাল পেরো না তো।


মর্জিনা ফুপু রাতে তাকে আম্মার ঘরেই রেখেছিলো।আম্মা তাই আম্মার ঘর দেখিয়ে দিলো সবাইকে।কিন্তু আম্মার ঘরে গিয়ে তারা কাউকে খুঁজে পেলো না।একজন মহিলা আব্বাকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে। 


---একি,তুমি তো কইলা ঐ বেডি এইঘরে আছে।কোথায়, কেউ তো নাই?তুমি কি মশকরা করতেছো আমাগো লগে।


---তোমরা সকাল সকাল আমার মাথাটা না খেয়ে ছাড়বে না মনে হইতেছে।রাইতের বেলা মর্জিনা ওরে এইখানে রেখে গেলো।এখন কোথায় উধাও হয়ে যাইবো? 


---সে আমরা কি জানি, তুমি এসে দেখো যাও! 


ঘরে সেই মহিলাকে না পেয়ে আব্বাও সবার মতো বেশ অবাক হলো।মর্জিনা ফুপুকে ব্যপারটা জানানোর জন্য আব্বা তার বাড়িতে ছুটে গেলো।

-

-

-

-

-

এদিকে আমি।এখনো মনে হচ্ছে আম্মার মতো দেখতে সেই মহিলার হাত ধরে শুয়ে আছি।ঘুম ভাঙতেই দেখতে পাই আমার বুকের ভেতরে একটা ছোটো কোলবালিশ।তার মানে উনি এটা আমার কাছে রেখে চলে গিয়েছেন।আমি ঘুমের ঘোরে ভাবলাম উনিই হয়তো সারারাত আমার কাছে ছিলেন।কি বোকা আমি!সে আমার কাছে কেনো থাকতে যাবেন,সেতো আর আমার মা নয়।বিছানা থেকে উঠে ওনার ঘরের দিকে চলে গেলাম।কিন্তু উনি তার ঘরে নেই।অন্য ঘরগুলোতে ওনাকে খুঁজতে লাগলাম,কিন্তু কোথাও নেই!ওনাকে সারা ঘরেও না পেয়ে আমার কেনো জানি খুব ভয় হতে লাগ‌লো।সামনের দরজাটা খুলে বাইরে বের হতে যাবো,তখন আরোও বেশী হতাশ হলাম।দরজাটা বাহির থেকেই তালা মেরে উনি চ‌লে গিয়েছেন।এক প্রকার আমায় আটকে রেখেছেন আমায় ঘরের ভেতর।ভয়ের মাত্রা আরোও বাড়তে লাগলো আমার।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।এই দরজাটা ছাড়া বের হবার অন্য কোনো রাস্তাও নেই।তাই বাধ্য হয়ে ঘরের ভেতরে বসে রইলাম।


কিছুক্ষণ পরে বাহির থেকে তালা খেলার শব্দ আমার কানে ভেসে আসে।উৎসাহের সাথে দরজার দিকে ছুটে গেলাম,অমনি সে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।বেশ হন্তদন্ত হয়েই ঢুকলো। 


----একি,আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? 


---একটু কাজ ছিলো বাইরে, তুমি ভয় পাওনি তো আবার? 


---কি কাজ ছিলো,আর আপনি তালা মেরে গেলেন কেনো? 


---এই কারণে যাতে তুমি বের হয়ে বাইরে না চলে যেতে পারো।


উনি বেশী কথা না বলে ঘরের ভেতরে চলে গেলেন।এখনো বুঝতে পারছি না,কি এমন কাজ ছিলো এতো সকাল।রাতে উনি আদৌ বাসায় ছিলেন তো,নাকি অন্য কোথাও।একটা জিনিস প্রথম থেকেই খেয়াল করছি ওনায় অতিরিক্ত কোনো প্রশ্ন করলেই রেগে যান।তাই আমিও আর জোর করে কিছু বলানোর চেষ্টা করি না।একটু পরে খাবারের ঘর থেকে ওনার ডাক আসে। 


---আকাইদ খেতে আসো,তোমার জন্য খাবার তৈরি করেছি। 


আমি খাবারের ঘরের দিকে চলে গেলাম।

-

-

-

-

-

আব্বা ইতিমধ্যে মর্জিনা ফুপুর বাড়িতে পৌঁছে গেলো।ভেতরে ঢুকেই সে তাকে ডাকতে লাগলো। 


---মর্জিনা,কই গেলি ?


---হ,বলো ভাইজান। 

(মর্জিনা ফুপু বেরিয়ে এসে বললো) 


----একটা ঘটনা ঘটে গেছে তো, 


---কি হইছে আবার? 


---ঐ মেয়ের খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না। 


---কি কও, আমি নিজে ভাবীর ঘরে রেখে আসলাম।কোথায় চলে গেলো?


---আমি কেমনে কমু,দেখ আমার কিন্তু কিছুই ভালো ঠেকতেছে না।


---আশেপাশে খুঁজছিলা কোথাও? 


---হ খুঁজছি, কোথাও নাই।একদিকে ভালোই হইছে আমি চাই ও যেনো আর না আসে।


---কি যে বলো না,আদিবা ভাবী এতোদিন পরে ফিরে আসলো,কোথায় চলে যাবে,চলো খুঁজে দেখি। 


মর্জিনা ফুপু সামনের দিকে পা বাড়ালো ঠিক তখন আব্বা তার হাতটা টেনে ধরলো! 


---আদিবা ফিরে আসলে তুই কি খুব খুশি হস?তোর তো এতো খুশি হবার কথা না,


---ছাড়ো আমায়, কেউ এসে দেখে ফেলবে, 


---কি কথা ছিলো আমাগো,তোরে আমি বিয়া কইরা আমার ঘরে তুলমু,তোর তো কোনো গরজই দেখতেছি না এখন আর।


---হ, আদিবা ভাবি মারা যাবার পরে আমিও তাই ভাবছিলাম।তোমায় বিশ্বাস করে আমি আমার নিজের ইজ্জত পর্যন্ত নষ্ট করেছি।তবে তফাৎটা কী জানো, 


---কি তফাৎ? 


---তখন তোমার আসল রুপটা জানতাম না আমি,যা এখন জানি, 


---কী জানোস তুই, কতটুকু জানোস, চল আজই বিয়ে করে নেই আমরা।


---আমার এখন এসব কথা বলতে ভালো লাগতেছে না, আদিবা ভাবিরে খুঁজতে হবে চলো, 


---তার মানে বিয়া করবি না আমায়? 


---না করবো না, কারণ আমি চাই না আমার ছেলেও কোনোদিন আমার পাতে বিষ তুলে দিক,যেরকম আকাইদ দিছিলো, তোমার কথায়, 


এই বলে মর্জিনা ফুপু চলে গেলো,আব্বা হা করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।তার বুঝতে বাকি রইলো না এগুলো আমিই বলেছি মর্জিনা ফুপুকে,নয়তো তার জানার কথা নয়।

-

-

-

-

-

বিকেল বেলা।খাওয়া দাওয়া শেষে উনি আমায় বাসার রেখে কোথায় একটা চলে গেলেন।বললেন ফিরতে নাকি একটু দেরী হবে।আর আমি যেনো কোথাও চলে না যাই।বার বার নিষেধ করে দিলেন।আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করতেও কোথায় যাচ্ছেন বললেন না।জানি না এভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য কোথায় চলে যান উনি!হতে পারে নিজের কোনো কাজের জন্যই গিয়েছেন।আমি টিভিটা চালিয়ে বসার ঘরে বসে রইলাম। আপাতত আর কিছু মাথায় নেই আমার।

-

-

-

-

-

সন্ধ্যাবেলা।সারাদিন আম্মাকে খুঁজেও আব্বা আর মর্জিনা ফুপু কোনো হদিস পেলো না।তারা নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।


----আমার মনে হয় মর্জিনা আর ফিরবে না ও,নিশ্চয়ই বদ কোনো উদ্দেশ্য নিয়া আসছিলো! 

(আব্বা মর্জিনা ফুপুকে উদ্দেশ্য করে বলে) 


---কেনো,না ফিরলেই খুশি হও বুঝি। 


---হ খুশি হই,কারণ আমি জানি ঐটা আদিবা না।


---না হলে আর কি করার আছে, 


---একটা কথা বলি, রাগ করবি না তো? 


---কী কথা বলো!


---রাগ করবি না বল, 


---আরে বলো না! 


---আজ রাতে আয় না আরেকবার,দেখ কেউ নাই বাড়িতে এমনিতেও, 


---তোমার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না, এদিকে আরেক সমস্যা, তার ভেতরে এসব চিন্তা আসে কেমনে, আল্লাহ কি দিয়া বানাইছে তোমারে বলবা আমায়? 


আব্বা মর্জিনা ফুপুকে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখন সামনের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো।আম্মার মতো দেখতে সেই মহিলা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সে এই দুজনের কথা সবটা শুনে নিয়েছে হয়তো।মর্জিনা ফুপু দৌড়ে এসে বললো। 


---এইতো আদিবা ভাবি,কোথায় চলে গেছিলা তুমি?এতোক্ষণ কোথায় ছিলা শুনি?


                     চলবে...

২য় পর্ব 


২য় পর্ব


৩য় পর্ব 


৩য় পর্ব


৪থ পর্ব 


৪থ পর্ব


৫ম পর্ব


৫ম পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব

 

গর্ভধারিণী সাহিত্য ডাইরি পর্ব ৫

গর্ভধারিণী 

পর্ব----০৫

সাহিত্য ডাইরি 




< p>---মর্জিনা আমি যে কথাটা এতোদিন বুকের ভেতরে পাথরচাপা দিয়ে রাখছিলাম।আজ আর পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে...এইটা ক্যান বললাম আমি,কি করলাম আমি এইটা? 


---কি হয়েছে আমায় বলো,একটু আগে তুমি কি বললে ওটা।আকাইদ তোমার ছেলে নয়? 


---না,কিছু না।আমায় আর কিছু জিজ্ঞেস করিস না তুই!


এই বলে আব্বা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।মর্জিনা ফুপু তাকে কয়েকবার পেছন থেকে ডাক দেয়,কিন্তু আব্বা সাড়া দিলো না।


---দূরত ভাই,কোথায় যাও?কিছু না বইলা চইলা যাইতেছো ক্যান তুমি? 


আব্বা মর্জিনা ফুপুর কোনো কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে চলে গেলো।এরপর মর্জিনা ফুপু এসে আমার ঘরের দরজাটা খুললো।আমি দৌড়ে গিয়ে মর্জিনা ফুপুকে জড়িয়ে ধরি।


---মর্জিনা ফুপু,এইটা কি কইলো আব্বা?


---কী কইছে,কিছু কয় নাই তোর আব্বা।


---আমি শুনছি সে বলছে আমি নাকি তার ছেলে না।


---দেখ তুই এখনো অনেক ছোটো।এতো কিছু শুনতে নেই।আর কতটুক বুঝিস তুই।দূরত ভাইয়া তোর আব্বা না তো কি,রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে মানুষ।


মর্জিনা ফুপুর কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।একটু পরে মর্জিনা ফুপু কি জানি একটা ভেবে আমায় বললো। 


---তোরে যেটা বলতে আসছিলাম,


---কি কথা? 


---একটা জরুরী কথা।আমি তোর আম্মার একটা আত্মীয় বাড়ির খোঁজ পেয়েছি।যার বাড়ি কিনা হাসপাতালের ডানদিকের ঐ রাস্তাটা দিয়ে যাইতে হয়, 


---সত্যি কইতেছো তুমি? 


---হ রে,তাইলে আর বলি কি!খোদা চাইলে তোর আম্মারে এইবার পাইয়াও যাইতে পারি আমরা।


---সে তো বুঝলাম, কিন্তু আমার আম্মা ওখানেই আছে তার কি মানে? 


---আমার তো মনে হয় ঐ বাড়িতেই আছে।দেখ কোনো মানুষ যখন বিপদে পড়ে বা তার আশ্রয়ের দরকার হয়,নিজের আপন মানুষের কাছেই যায়।দেখ তা না হইলে তোর মা হাসপাতালের ঐ রাস্তাটার দিকে ক্যান যাইবে?


---তাইলে আমরা কি করবো এখন? 


---কি আর করবো,তোর মায়ের ঐ আত্মীয় বাড়িতে যাবো।আমার মনে হয় তুইও আগে গেছিস,এখন মনে করতে পারতেছিস না। 


---হুমমম,হইতে পারে।কিন্তু কখন যাবো আমরা, দেখলে কাল রাতে কি কান্ড করলো আব্বা!


---এতো ভয় পাইলে চলবে না।আমরা আজকে বিকেলের দিকে যাবো।ঐ সময়ে এমনিতেও তোর আব্বা বাড়িতে থাকে না।যদি সন্ধ্যার পরপর ফিরে আসতে পারি আর কোনো চিন্তাই থাকবে না।


---ঠিক আছে।তাইলে তাই হবে।


মর্জিনা ফুপু এরপর তার বাড়িতে চলে গেলো।এদিকে আমিও আমার কাজে হাত দিলাম।

-

-

-

-

-

দুপুরবেলা আব্বা বাড়িতে ফিরে আসে।হাতে করে কিছু খাবার নিয়ে আসলো।আম্মা বেঁচে থাকতে আব্বা যখন বাড়িতে ফিরতো আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়েই আসতো।আবার আজকে কিছু নিয়ে আসলো।আমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকে প্রশ্ন করি।


---এইগুলা কি আনছো আব্বা? 


---তোর জন্য গঞ্জ থেকে খাওয়ন নিয়া আইছি,তুই যেগুলা খাইতে পছন্দ করো।


খাবারগুলো সত্যিই আমার ভীষণ প্রিয়।কিন্তু আমি তেমন আগ্রহ প্রকাশ করলাম না।আব্বার সকাল আর গতরাতের চেহারা এখনো ভুলতে পারছি না।আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারে আব্বা আমার কাছে এসে আমায় আদর করতে করতে বলতে লাগলো। 


---রাগ করছিস বাবা,দেখ আমি হয়তো তোর লগে একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি! কি করবো বল, মাথা ঠিক থাকেনা।


---আমি এগুলা খাবো না আব্বা! 


---ক্যান খাবি না,তুই না খাইলে যে আমি শান্তি পামু না।আগে তো আমি কিছু আনলেই ঝাপিয়ে পড়তি আমার ওপর। 


---তুমি আর সেই আমার আগের আব্বা নেই।তুমি পাল্টে গেছো,সবাই ঠিকই বলে মা মরলে বাপও পর হইয়া যায়, 


---ওরে বাবা, এতো পাকা পাকা কথা কে শিখাইলো তোরে,ঠিক আছে আমার সামনে খাইতে হবে না,যদি এই অধম বাপটারে ক্ষমা করতে পারিস পরে না হয় খেয়ে নিস।


এই বলে আব্বা খাবারগুলো আমার সামনে রেখে চলে গেলো।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।এমনিতে ক্ষুধাও লেগেছে।নাহ,এতো চিন্তা করলে হয় না,আগে খাই।তারপর যা হবার হবে।আমায় খেতে দেখলে হয়তো আব্বাও খুশি হবে।কথাগুলো ভেবে কয়েকটা গজা তুলে মুখে পুরে দিলাম।আহ!কি স্বাদ।কতোদিন বাদে এতো ভালো খাবার খাচ্ছি নিজেও জানিনা।আরও কয়েকটা গজা নিয়ে মনের সুখে খেতে লাগলাম।

খেতে খেতে হঠাৎ কেমন জানি একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো আমার ভেতরে।মাথাটা ঘুরতে লাগলো,সাথে প্রচন্ড ঘুমও পাচ্ছে।এই সময়ে তো এতো ঘুম পায় না আমার।জেগে থাকার যতোই চেষ্টা করছি না কেন ঘুম আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ধরছে।হাত থেকে খাবারগুলো মাটিতে পড়ে গেলো আমার।তারপর কোনোমতে খাটের ওপরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।মুখ থেকে শুধু একটাই শব্দ উচ্চারিত হলো আমার। 


---আম্মা, তুমি কোথায়? 


এরপর,আর কিছু মনে নেই আমায়।

-

-

-

-

ঘুম ভাঙতেই দেখি চারদিকে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার।ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমায় কোনোকিছুর ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে।হতে পারে কোনো বাক্স।আর এটাও বুঝতে পারলাম আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


---কে আছো,আমায় কোথায় নিয়া যাইতেছো?আমার কথা কি কেউ শুনতে পাইতেছো না! 


আমার চিৎকারের আওয়াজ বাক্স ভেদ করে কারোর কানে পৌঁছলো না।একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না আমি এখানে এলাম কিকরে?আব্বার দেওয়া গজা খাওয়ার পরে আর কিছু মনে করতে পারছি না আমি।বাক্সের দরজাটা খোলার প্রানপন চেষ্টা করি আমি।একটু পরে লক্ষ্য করলাম কেউ যেনো বাহির থেকে দরজাটা খুলছে।একটা লোক দরজা খুলে আমার দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দিলো।


---জলটা খেয়ে নে,আর যতোই ছটফট করিস না কেনো এখান থেকে জীবনেও বের হতে পারবি না তুই।


লোকটার হাত আমার কাছাকাছি আসতেই আমি তার হাতের ওপরে সজোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।তারপর বাক্স থেকে বেরিয়ে আসি।সে আমাকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।ইতিমধ্যে আমি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছি।ভাগ্যিস গাড়িটা কিছু সময়ের জন্য থামানো ছিলো।তারপরেও এতো ওপর লাফ দেবার কারণে আমার কপাল খানিকটা কেটে যায়।আর পায়েও ভীষণ ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম।কিছুতেই উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না।অল্প কিছু সময়ের ভেতরে রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়।সেই ড্রাইভারের হদিস নেই কোথাও।রাস্তার লোকজন আমায় নানান প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকে,অথচো আমি যে চোট পেয়েছি সেইদিকে হুশ নেই কারো।


---এই ছেলে,কোথা থেকে এলে,বাড়ি কোথায়,তোমার সাথে কি কেউ নেই,একা একা বেরিয়েছো কেনো,?


আমি এদের প্রশ্নের কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না।একটু পরে একটা পরিচিত কন্ঠ কানে ভেসে আসলো আমার।


---কি হয়েছে এখানে,একটু দেখতে দিন আমায়। আমায় সামনে যেতে দিন।


সে ভিড় ঠেলে কেউ একজন সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো।তার দিকে চোখ পড়তেই আমি বিস্ময়ে হতবাক!যেনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।মুখ ফুটে বলে উঠলাম।


---আম্মা,তুমি!!!!


                       


সে ভিড় ঠেলে কেউ একজন সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো।তার দিকে চোখ পড়তেই আমি বিস্ময়ে হতবাক!যেনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।মুখ ফুটে বলে উঠলাম।


---আম্মা,তুমি!


---আম্মা!কে তোমার আম্মা বাবু?


আম্মার কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।এটা কি বলছে আমার মা!


---আম্মা আমি আকাইদ,তোমার ছেলে?এই কয়দিনে ভুলে গেলে আমায়?


---বাবু তোমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।আমি তোমার মা নই।


---আম্মায় মিথ্যা কেনো বলছো,আমি জানি তুমি আমার আম্মা,তুমি ছাড়া আর কে আমার মা হবে? 


---আচ্ছা তুমি কোথা থেকে এসেছো,আর কেউ নেই তোমার সাথে? 


আমি আম্মার কথার কোনো উত্তর দিলাম না, শুধু অবাক হয়ে চেয়ে আছি তার দিকে।জানিনা আম্মা আমায় চিনতে কেনো পারছে না।আমায় দেখতে পেয়ে তো এতোক্ষণে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার কথা।


---কি হলো কথা বলছো না কেনো,ঠিক আছে ব্যপার না।তুমি বরং আমার সাথে চলো!


---কোথায় যাবো?


---আমার বাসায় যাবে,দেখো তুমি তো চোট পেয়েছো।তাই তোমার চিকিৎসা দরকার।


একটু পরে রাস্তাটা ভীড়শুন্য হতে থাকে।তারপর সে একটা রিকশা ডেকে আমায় রিকশায় তুলে তার পাশে বসালো।চেহারার মিল ছাড়া মায়ের আর কোনোকিছুই খুঁজে পাচ্ছি না এই মহিলার ভেতরে।কথাবার্তা,পোশাক কোনো কিছুতেই মিল নেই।আম্মা আগে কখনোই এতো শুদ্ধ করে কথা বলতো না,নাএইরকম চাদরের সাথে শাড়ি পড়তো।তবে ওনার মুখ আর কন্ঠের সাথে মায়ের হুবহু মিল।মানুষ চাইলেই নিজের কথাবার্তার ধরণ,পোশাক পাল্টে ফেলতে পারে কিন্তু যে জিনিসগুলো পাল্টানো সম্ভব নয় অদ্ভুতভাবে সেগুলোর সাথেই আমার মায়ের ভীষণ মিল।চলতে চলতে রিকশাটা রাস্তার একটা ছোটো খাদের ভেতরে পড়লো,অমনি সে আমাকে সামলে নেয়।তারপর আমায় প্রশ্ন করে। 


---তোমার নাম কি বাবু? 


---আকাইদ!


---পুরো নাম? 


--আটাইদ হাসান।


---তুমি এই জায়গায় একা একা চলে আসলে কিকরে,পালিয়ে আসোনি তো বাড়ি থেকে? 


---না,আমি পালাইনি।তবে ঐ লোকটা... 


---কোন লোকটা? 


---আমি তো চিনি না তাকে,তবে সে আমার সাথে খুব খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো! 


---তুমি জানতে সে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো,তাহলে তার সাথে এলো কেনো? 


---আমি নিজে নিজে আসিনি,যখন ঘুম ভাঙলো দেখি একটা অন্ধকার বাক্সের ভেতরে আটকে আছি।তারপর ঐ লোকটা আমায় পানি খেতে দিলো,আমি তখন বুদ্ধি করে গাড়ি থেকে নেমে এসেছি! 


---বাহহ,এটা খুব ভালো করেছো।তোমার বাবা মা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে হন্নে হয়ে খুঁজছে তোমায়?


---না,কেউ খুঁজছে না আমায়! 


---খুঁজছে না মানে,কেনো? 


---আমার মা নেই,আব্বা আছে শুধু।আব্বাই আমায় ঐ খারাপ লোকটার হাতে তুলে দিয়েছে।


---ধূর,এটা হয় নাকি আবার?


---হয়,আব্বার দেওয়া ঐ গজাগুলো খেয়ে আমার খুব ঘুম পায়।তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।হয়তো আব্বাই চেয়েছিলো আমি যেনো আর ঐ বাড়িতে না থাকি...তাই আমায় খারাপ লোকটার হাতে তুলে দিয়েছিলো,


--ইসসস,বাবা এমন একটা কাজ কেনো করলো তোমার সাথে? 


---আমিও জানি না,


---একটা কথা...তোমার কথাগুলো শুনে মনেই হচ্ছে না আমি বাচ্চার সাথে কথা বলছি।এরকম বড়োদের মতো কথা শিখলে কোথা থেকে? 


---জানি না,আমি নিজেও জানি না।তবে অনেকেই বলে আম্মা চলে যাবার পরে নাকি আবার ভেতরে অনেক পরিবর্তন আসেছে।


---বুঝতে পেরেছি।আসলে এটা সত্যি পরিস্থিতি মানুষকে সময়ের থেকে অনেক বেশী ম্যাচিউর করে দেয়।তোমার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই ঘটেছে! 


---ম্যাচিউর কি? 

(আমি এই অদ্ভুত শব্দের সাথে পরিচিত নই,তাই তাকে প্রশ্ন করি) 


---হাহাহা,ম্যাচিউরড হলো পরিপক্ক।মানে তুমি সবথেকে বুঝতে শিখে গেছো। 


এরপর ওনার আর কোনো কথা হলো আমার।রিকশা আপন গতিতে এগিয়ে চলতে লাগলো।

-

-

-

-

এদিকে আমার বাড়িতে।

বিকেল বেলা আব্বা বাড়িতে ফিরে আসে।এসেই আমার নাম ধরে ডাকতে শুরু করলো।


---আকাইদ,আকাইদ কই গেলি রে?


আমার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আব্বা চারপাশটা খুঁজতে লাগলো।তারপর আমার ঘরের দিকে আসে।দরজা খুলে দেখতে পায় আমি নেই ভেতরে।সারা বাড়ি আমায় তন্ন তন্ন করে খুজেঁও কোনোরকম সন্ধান মিললো না।বেশ কিছুক্ষণ আমায় খুজে না পেয়ে মর্জিনা ফুপুর বাড়িতে গেলো।


---কি রে মর্জিনা, আকাইদ কোথায়? 


---সে আমি কি জানি,


---তুই জানিস না মানে, ও তো বেশিরভাগ সময় তোর লগেই থাকে। 


---হ,থাকতো।কিন্তু তুমি সকালবেলা আমায় নিষেধ করে দেবার পরে আর একবারেও যাইনি,না ও আসছে। 


---তাহলে কোথায় গেলো ছেলেটা আমার? 


---ক্যান বাড়িতে নেই ও? 


---বাড়িতে থাকলে কি তোর কাছে আসতাম!


---ভালো করে খুঁজে দেখো,কোথায় আর যাবে.. 


---আমার কিছু মাথায় ঢুকতেছে না,কোথায় চলে যাবে ছেলেটা?


---আচ্ছা তুমি শেষবারের মতো কহন দেখছিলা ওরে? 


---মনে আছে দুপুরবেলা তুই আমায় কিছু খাবার দিছিলি ওর জন্য,আমি ওগুলো নিয়াই দিছিলাম ওরে।আর এইটাও বলছিলাম যে খাবারগুলো আমি নিয়া আসছি।তুই দিয়েছিস বলি নাই, 


---ক্যান বললা না? 


---দেখ সকালে এমনিতেই ওর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি, ভাবছি আমি আনছি শুনলে ও খুশি হইবো, মনটা হয়তো ভালো হইবো ছেলেটার।কি উল্টাপাল্টা সব হয়ে গেল বল তো, 


---এ তো খুব চিন্তার বিষয়। আচ্ছা চলো আমিও গিয়ে খুঁজি তোমার সাথে।এইভাবে ও কোথায় চলে যাবে।আমার মনে হয় খুঁজলে ঠিক পাওয়া যাইবো,এতো চিন্তা কইরো না।


মর্জিনা ফুপু আর আব্বার সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো।তারপর আমায় খুঁজতে থাকে।


(পাঠকদের একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেই, অনেকেই হয়তো ভাবছেন আকাইদ কিকরে জানলো ওর বাড়িতে কি ঘটছে?বস্তুত আকাইদ এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক।সে নিজের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো কোনো একজনের সাথে শেয়ার করছে যা ওর সবটা নখদর্পনে।এই নিয়ে কেউ দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না!) 


---এই মর্জিনা তুই আমার ছেলের সাথে কিছু করিস নাই তো আবার? 


---তুমি এসব কি কইতছো দূরুত ভাইজান,আমি আকাইদের ক্ষতি করমু ভাবলা কেমনে তুমি? 


---আমি অনেক কিছু ভাবতে পারি অহন,তুই গজার সাথে কিছু....


---মানে,তুমি বলতে চাও।আমি কি এর আগে খাওয়াই নাই তোমাগো,দেখো একদম ঠিক হইতেছে না কিন্তু,আজেবাজে কথা বন্ধ করো। 


---ঠিক আছে বলমুনা আর।আর শুনে রাখ ওর সাথে কেউ খারাপ কিছু করলে আমি কিন্তু ছাড়মু না তারে।


--আইজ মনে হয় ছেলের জন্য একটু বেশিই দরদ দেখাইতেছো,এতোদিন কোথায় ছিলো এতো ভালোবাসা? 


--বাজে কথা বলিস না।পারলে আমার সাথে খোঁজ ওরে।

-

-

-

-

-

এদিকে আমি সেই মহিলার সাথে তার বাসায় আসলাম।উনি আমায় ওনার ঘরের সোফার ওপরে বসিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেল।একটু পরে কিছু ব্যান্ডেজ আর ডেটল নিয়ে ফিরে আসলো।


---ব্যথা কি কমেছে একটুও, 


---হ্যাঁ,অনেক কমছে আগের থেকে 


---হাতটা এদিকে বাড়াও ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি। 


আমি তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।বহুদিন পরে যেনো নিজের মায়ের পরশ পেলাম।দুটো মানুষের ভেতরে কিকরে এতো মিল থাকতে পারে!আমি শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।


সে আমার ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর আবারো ঘরের ভেতরে চলে যায়।আমি সোফা থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকাতে থাকি।বসার ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলাম।হঠাৎ আমার চোখজোড়া দেয়ালের উপরে ঝুলানো একটা ছবির দিকে আটকে গেলো।


---এতো আমার ছোটোবেলার ছবি।হুবহু এরকম একটা ছবি আমাদের বাড়িতেও আছে।এই মহিলা যদি সত্যিই আমার আম্মা না হয়ে থাকে তার ঘরে আমার ছবি কি করছে?


                      চলবে........

২য় পর্ব 


২য় পর্ব


৩য় পর্ব 


৩য় পর্ব


৪থ পর্ব 


৪থ পর্ব


৫ম পর্ব


৫ম পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব

গর্ভধারিণী সাহিত্য ডাইরি পর্ব ৪

গর্ভধারিণী 

পর্ব---০৪

সাহিত্য ডাইরি 




রহমান চাচার কথা শুনে আমার আম্মার লাশের কথা মনে পড়লো।তার মানে কি আমি সেইদিন ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।ঐ লাশটা আম্মার ছিলো না।আল্লাহ,আমার মনের সন্দেহ তুমি সত্যি কইরা দাও! 


একটু পরে বাড়িতে মর্জিনা ফুপু চলে আসে।সে আগে থেকেই রহমান চাচার সমস্ত কথা শুনে ফেলেছে।


---রহমান ভাইজান,কি কইতেছো তুমি এসব? 

(মর্জিনা ফুপু রহমান চাচাকে বলে) 


---হ রে ঠিকই কইতেছি,আমি একটু আগে শুনে আসলাম।এই কারণেই তো দূরুত ভাইয়ের কাছে আসলাম,ওরে সবটা জানাবো বলে, 


---না,তুমি দূরুত ভাইজানরে কিছু বইলো না এক্ষুণি! 


---কিন্তু ক্যান।কি সমস্যা ওরে কইলে?


---আমি কইছি বলবা না তাই বলবা না,আর আমি যখন বলছি অবশ্যই কোনো কারণ আছে। 


---আচ্ছা ঠিক আছে।আর পরে ও আমারে কিছু কইলে তোর কথা বইলা দিমু কিন্তু,যে তুই আমারে নিষেধ করছো। 


---আচ্ছা যা খুশি কইরো,এখন চুপ থাকো। 


---হুমমম,আমি আসি তবে। 


এই বলে রহমান চাচা চলে গেলো।মর্জিনা ফুপু আমায় বললো।


---চল আকাইদ আমরা হাসপাতালে যাই। 


---হাসপাতালে,হাসপাতালে কেনো? 


---চল আমার সাথে,আমার মনে হয় তুই ঐদিন ঠিকই কইছিলি।ঐইটা তোর আম্মা ছিলো না। 


---দেখছো,তখন কেউ আমার কোনো কথা বিশ্বাস করলো না। 


---হুমম,জানি আমি।এবার চল যাই।


---আব্বা আইসা তো আবার খোঁজাখুঁজি শুরু কইরা দেবে,তখন কি হইবো


---আমি তোর আব্বারে কিছু একটা বুঝাইয়া বলমুনে,চল এবার।


আমি মর্জিনা ফুপুর সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।সদর হাসপাতাল আমাদের গ্রাম থেকে খুব একটা দূরে না।হেঁটে যেতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে।যাতে আব্বার সামনে না পড়ি এই কারণে মর্জিনা ফুপু আমায় জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায়।যদিও এখান থেকে যেতে একটু বেশী সময় লাগে।

-

-

-

-

বেশ কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে পৌঁছলাম আমরা দুজন।এই জায়গার শেষবার আম্মাকে নিয়ে আসছিলাম।আর আজকে আসলাম।মর্জিনা ফুপুর হাত ধরে আমি ভেতরে যাই।তারপর একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করি।মর্জিনা ফুপু তার সাথে কথা বলছে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনতে লাগলাম।


----আচ্ছা ডাক্তার সাহেব,যে লাশটা হাসপাতাল থেকে চুরি হয়েছে আমি তার ব্যপারে কিছু কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে! 


---হ্যাঁ,সে তো বহুদিন আগের ঘটনা।


---বলছিলাম,ঐ লাশটার কিভাবে মৃত্যু হয়েছিলো,আর কোনো ছবি বা কোনো কিছু আছে আপনাদের কাছে আমাদের দেখানোর জন্য?


---দেখুন ওনার তো এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়েছিলো।আর চেহারা এতোটাই বাজেভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ওনার পরিবারের লোকজন পর্যন্ত চিনতে পারছিলো না।আর আপনার কাছে কোনোপ্রকার ডকুমেন্ট কেনো শেয়ার করবো আমি,এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ।


---ওহহহ,আচ্ছা।তা লাশ কিভাবে চুরি হলো,কে করলো এই বিষয়ে কিছু কি জানতে পেরেছেন? 


---না,এখন পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি।আর আপনাদের এর থেকে বেশী কিছু জানানো সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে।ধন্যবাদ।


ডাক্তার সাহেব এরপর চলে গেলেন।মর্জিনা ফুপু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।


---আমার এবার সত্যিই মনে হচ্ছে ঐ লাশটা তোর আম্মার ছিলো না।এই মহিলার ছিলো।দেখিস নি ওনার মুখটা কিভাবে থেতলে ছিলো।কি বোকা আমরা,তখন কিছুই বুঝতে পারি নি। 


---কিন্তু আম্মার লাশের জায়গায় ঐ লাশটা আসলো কেমনে,লাশ তো আর নিজে থেকে হেঁটে আসেনি তাই না? 


---বুদ্ধিমানের মতো কথা বলেছিস,আমিও একই কথা ভাবছি।তোর আম্মার লাশটা তাহলে কোথায় গেলো,আর ঐ মহিলার লাশটাই বা তোর আম্মার জায়গায় আসলো কেমনে?আমার কি মনে হয় জানিস, 


---কি? 


---তোর আব্বাই কিছু করেছে,তোর আম্মার লাশ সেই বাড়িতে নিয়ে আসছে।তার কি একবারেও সন্দেহ হয়নি।দেখ আদিবা ভাবীরে(আমার আম্মার নাম আদিবা)আমাদের চিনতে ভুল হতেই পারে,তোর বা তোর আব্বার ভুল হবার তো কথা না।তুই এইটুক বাচ্চা ছেলে,তোর সন্দেহ হলো আর তোর আব্বার হলো না।এইটা সম্ভব?


---আমরা এখন কি করমু মর্জিনা ফুপু? 


---সেইটা তো আমিও জানি না।তোর আম্মা যদি সত্যিই বেঁচে থাকে কোথায় আছে,কিভাবে আছে আমরা কিচ্ছু জানি না।আমরা কেমনে খুঁজে বার করমু তারে,আর সে যে বেচেঁ আছে তার কি নিশ্চয়তা আছে।


--আমার মনে হয় আম্মা ম রে নাই,সে বেঁচে আছে।


---হ,তো আছেটা কোথায়,একমাত্র আল্লাই জানে কি সব হইছে আমাদের চোখের আড়ালে।

শোন,এখন চল।এখানে আর কাজ নেই আমাদের।আব্বা তোরে বাড়িতে না পেয়ে সন্দেহ করতে পারে।


---কিন্তু এখানে এসে তো তেমন কিছু জানতেই পারলাম না আমরা।


---ওনারা যতোটুকু বলেছে তাই অনেক।আমাদেরকে কেনো হাসপাতালের ভেতরের খবর জানাতে যাবে। 


এই বলে মর্জিনা ফুপু আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে যাবে ঠিক তখন পেছন থেকে কেউ একটা ডাক দিলো আমাদের।আমরা ঘুরে তাকাই।হাসটাতালের কোনো নার্স মনে হচ্ছে।


---আমি আপনাদের সব কথা শুনেছি এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে,

(নার্স আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো)


---হ্যাঁ,আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন আমাদের।


---বলার তো অবশ্যই আছে।তবে এখানে না।বাইরে চলুন।


---বাইরে কেনো যেতে হবে? 


---আরে,আগে আসুনই না।


আমি আর মর্জিনা ফুপু সেই নার্সের সাথে বাইরে গেলাম।তারপর সে আমাদের একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়।


---আমি একটা কথা জানাতে চাই আপনাদের,যা আজ পর্যন্ত কাউকে বলি নি,বলি নি মানে বলার সাহস হয় নি।


--কি কথা বলুন, 


---আমার মনে হয় আমি এই বাচ্চাটার মাকে দেখেছি।আর সে মারা যায়নি।


নার্সের কথা শুনে আমরা দুজনেই চমকে উঠলাম।মর্জিনা ফুপু বেশ আগ্রহ সহকারে নার্সকে বললো। 


---কি, কি বললেন আপনি? 


---হ্যাঁ, আমি এতোদিন কাউকে বলি নি।বললে আমার চাকরিটাই হয়তো থাকতো না।আর কেউ বিশ্বাস করতো না আমার কথা। 


---কি দেখেছেন আপনি ?


---এই হাসটাতালের সেদিন রাতে মোট দুজন মারা গিয়েছিলো।একজন এই বাচ্চাটার মা, আরেকজন এক্সিডেন্টের পেসেন্ট ছিলো।তো যখন আমি নাইট ডিউটি করছিলাম হাসপাতাল থেকে একটা লাশকে হেঁটে যেতে দেখতে পাই।এটা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই আমি।আমি জানি কোনো লাশের পক্ষে হাঁটাচলা করা সম্ভব নয়,ঐ মহিলা আদতে মারাই যান নি।কোনোভাবে সার্ভাইভ করে গিয়েছিলেন।


---আপনি তখন কাউকে কিছু বললেন না কেনো?আর তাকে আটকালেন না কেনো? 


---আমার কথা কে বিশ্বাস করতো তখন,যদি বলতাম মৃত ঘোষণা করা কোনো মানুষকে জীবিত অবস্থায় আবিষ্কার করেছি,উল্টো হাসপাতালের বদনাম হতো।ডাক্তারদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতো তখন।আর যদি এটা দাবি করতাম আমি ভুত দেখেছি।আমার চাকরিটাই চলে যেতো।আমাদের জন্য এসব ভুত প্রেত বা আত্মা বিশ্বাস করা নিষিদ্ধ।তার থেকেও বড়ো কথা আমি নিজে চাইনি কোনো ঝামেলায় জড়াতে।তাই চুপ ছিলাম এতোদিন। 


---আচ্ছা সেই মহিলা কোথায় গিয়েছে আপনি বলতে পারবেন?আমরা তাকেই খুঁজে ম র ছি।ছেলেটার দিকে চেয়ে দেখুন।বেচারা মাকে ছাড়া বাঁচবে কিকরে? 

(মর্জিনা ফুপু আমাকে ইঙ্গিত করে নার্সকে বললো) 


---হ্যাঁ, আমি জানি উনি কোথায় গিয়েছেন।


নার্সের কথা শুনে আমরা আবারো চমকে উঠলাম!


              


---কি বললেন,কি বললেন আপনি?আপনি জানেন উনি কোথায় গিয়েছেন? 


---দেখুন উনি ঠিক কোথায় গিয়েছেন আমি তো বলতে পারবো না,তবে আমি এইটুকু দেখেছি উনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়েছেন।


---আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাহায্য করার জন্য।হয়তো এই সূত্র ধরেই আমরা ওর মাকে খুঁজে বের করতে পারবো।


আমি আর মর্জিনা ফুপু নার্সের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।নার্স যে জায়গায় আম্মাকে শেষবারের মতো দেখেছে সেই জায়গায় এসে দাঁড়ালাম।


---এইবার,কি করবো আমরা মর্জিনা ফুপু? 


---সেইটা আমিও তো বুঝতে পারেতেছি না।আচ্ছা তোদের কেনো আত্মীয় বাড়ি আছে এইদিকে?হতে পারে তোর মা সেইখানেই গেছে। 


---কই আমি তো জানি না।আমাদের এদিকে কোনো আত্মীয় বাড়ি নেই।


---দেখ আকাইদ,এভাবে হবে না।আমরা এইভাবে তোমার আম্মাকে খুঁজে পাবো না।


---তাইলে কেমনে খুঁজবো?


---এখন চল বাড়িতে যাই।অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে।তোর আব্বা যদি একবার জানতে পারে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করছি আস্ত রাখবে না আমাদের।


---তাইলে আম্মারে আর পাওয়া হইবে না? 


---কেনো হইবে না।আমরা ঠিক তোর আম্মাকে খুঁজে পাবো।এখন চল,বাড়িতে চল।এইভাবে আন্দাজে সারারাত খুঁজলেও কিচ্ছু হবে না।


আমরা পেছনের দিকে ঘুরবো ঠিক তখনই কেউ একটা আমাদের অতিক্রম করে চলে গেলো।এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হলো আমি আমার মাকে দেখলাম।সামনে তাকাতেই দেখতে পাই একজন মহিলা ঘোমটা দিয়ে দৌঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছে।মনের অজান্তেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো! 


---আম্মা, আম্মা তুমি কোথায় যাচ্ছো? 


---কি হলো আকাইদ,কোথায় তোর আম্মা? 


---দেখো মর্জিনা ফুপু,আমি এইমাত্র আমার মাকে দেখলাম।ওটা আমার মা। 


আমি আর মর্জিনা ফুপু মহিলাটার দিকে এগিয়ে যাই।সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই খপ করে হাতটা টেনে ধরলাম।


---আম্মা,কিছু না বলে এভাবে কোথায় যাচ্ছো তুমি? 


---কি হলো,কে আপনি?এভাবে ঘোমটা দিয়ে আছেন কেনো,এইদিকে ঘুরে তাকান বলছি।(মর্জিনা ফুপু বললো) 


মহিলা উল্টো তার ঘোমটাটা আরোও লম্বা করে টেনে দিলো।মর্জিনা ফুপু তার কাছাকাছি যেতেই যে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে নেয়।তারপর চোখের পলকে কোথায় পালিয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না আমরা।


---মর্জিনা ফুপু, আম্মা কোথায় চলে গেলো, এইমাত্র তো এখানেই ছিলো.. 


---তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আকাইদ?কে তোর আম্মা?উনি তোর মা হইলে এইভাবে পালিয়ে যাবেন কেনো? 


---না, ওটা আমার আম্মা! 


---নাহ, আমাদের কোথাও একটা ভুল হইতেছে।ওটা আদিবা ভাবি হতেই পারে না।হয়তো অন্য কেউ,তাছাড়া চোর-টোরও হইতে পারে।তোর আম্মা হইলে এইভাবে পালিয়ে যাইতো না।চল আমরা বাড়িতে যাই।আর এটা নিয়ে এতো চিন্তা করিস না।


একরাশ হতাশা নিয়ে আমি আর মর্জিনা ফুপু বাড়িতে ফিরে আসলাম।এখনো বুঝতে পারছি না,কে ছিলো ওটা?এইভাবে পালিয়ে গেলো কেনো আমাদের দেখে,কেনো একটি বার নিজের মুখটা দেখালে কি এমন হতো!নাহ,আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।অনেকটা রাত হয়ে গেছে বলে মর্জিনা ফুপু তার বাড়িতে ঢুকে পড়লো।বাকি পথটুকু আমি নিজেই হেঁটে আসি।বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।ঘরের সামনে যেতেই দেখি আব্বা সামনে বসে আছে।আমি ভয়ে ভয়ে সামনে এগোতে থাকি।


---কি ব্যপার,এতো রাতে কোথা থেইক্কা আসা হইলো? 


---মর্জিনা ফুপুর সাথে একটু বাইরে গেছিলাম। 


--তা,বাইরে টা কোথায় জানতে পারি? 


আমি আব্বাকে কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।যদি সত্যিটা বলে দেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম এতে আব্বা আরোও বেশী রেগে যাবে।তাই কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম।


---কি,আমি কি জিগাইতেছি।কানে যাইতেছে না বুঝি? 


---তার আগে তুমি কও,তুমি আম্মারে বিষ খাওয়াইছো ক্যান।আমি এখন জানি বিষ খাইলে মানুষ মারা যায়,তোমার জন্য আমার আম্মা ম র ছে।


মুখ ফসকে আমার কথাগুলো বেরিয়েই গেলো।আমার কথা শুনে আব্বা হতবাক,যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। 


---এই,এই আকাইদ।তোর এসব কে শিখাইলো?বল আমারে।


---আমি বলমু না,তোমায় ক্যান বলমু। 


---বাহ,বাবা বা!অনেক বড়ো হইছোস দেখছি। 


--বড়ো হইবার কি আছে আব্বা।বলো আমি কি কিছু ভুল বলতেছি।আমি কিন্তু সবাইরে সবটা বলে দিমু যে তুমিই আমার আম্মারে মা র ছো 


---তোর আম্মারে তো আমি মা রি নাই, মা র ছো স তুই!বল খাবারে কে বিষ মিশিয়ে দিছিলো?আমি দিছিলাম?


--হ আমি দিছিলাম,কারণ তুমি আমারে শিখাইয়া দিছিলা।আমি তো জানতামও বিষ খাইলে মানুষ ম রে, 


---হ বিষ খাইলে মানুষ ম রে তুমি জানো না,আব্বার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া কিভাবে করতে হয় ঠিক জানো। 


---আমি সবাইরে সব বলে দিমু,তুমি আমার আম্মারে মা র ছো!


আমার কথা শুনে আব্বা আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলো না।উঠে এসে আমাকে এক ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিলো।তারপর শাসিয়ে শাসিয়ে বলতে থাকে। 


---আজ থেকে বাড়ির বাইরে পা রাখলে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিমু আমি।


আব্বা আমায় ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।তারপর আমাকে আমার ঘরের ভেতরে রেখে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।আব্বা ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়াতে হাঁটুর নিচে সামান্য কেটে গেছে।অথচ সেদিকটা খেয়ালই করলো না।মাঝে মাঝে ভীষণ সন্দেহ হয় আমার,এটা কি সত্যিই আমার আব্বা।বাবা হয়ে নিজের ছেলের সাথে এমন আচরণ করে কিকরে।অবশ্য যে নিজের স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে মারতে পারে তার মতো মানুষের পক্ষে সব সম্ভব।সারা রাত প্রায় না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম।ভোররাতের দিকে চোখজোড়া অসম্ভব রকমের লেগে আসে।তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক নেই।

-

-

-

-

-

সকাল বেলা আব্বা আর মর্জিনা ফুপুর গলার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো আমার।শুনতে পাচ্ছি দুজনেই বাইরে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় কথা বলছে। 


---তুই আর আমার বাড়িতে আসবি না মর্জিনা,


---ক্যান, ক্যান আসমু না আমি? 


---তুই আমার ছেলেডার মাথা চিবাইয়া খাইতেছোস,ওর মাথায় সব বদবুদ্ধি তুই ঢুকাইছো আমি জানি! 


---কি আমি বদবুদ্ধি ঢুকাইছি?আর তুমি যেগুলো করেছো সেগুলা কি,খুব ভালো কাজ? 


---তার মানে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম তাই!ওই পোলা সব কইছে তোরে, আইজ তো ওরে আমি শেষ কইরা ফেলমু।


আমি দাঁড়িয়ে টিনের ফাঁক দিয়ে সবটা দেখছি।আব্বা আমার ঘরের দিকে তেড়ে আসতে চাইলে মর্জিনা ফুপু তার হাতটা চেপে ধরলো। 


---দাঁড়াও,দূরুত ভাইজান।দাঁড়িয়ে যাও। 


---আমায় ছাড় বলছি, ভালো হইতেছে না কিন্তু, 


---এতো মাথা গরম কইরো না।দেখো যাই হইয়া যাউক না কেনো,দিনশেষে ও তো তোমারই ছেলে।এইরকম করো না ওর সাথে,


---কে আমার ছেলে....ও আমার কোনো ছেলে না,না আমি ওর বাপ....! 


আব্বার মুখ থেকে কথা আমার কানে আসতেই দু পা পেছনে সরে গেলাম।যেনো বাজ পড়লো আমার মাথায়।এইটা কি বলতেছে আমার আব্বা!


---এই তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে,কি বলতেছো তুমি এসব?


আব্বার গলার আওয়াজ মুহুর্তেই নিচু হয়ে গেলো।যেনো অসাবধানতাবশত মুখ থেকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে তার।


---দূরুত ভাইজান, কি হইছে তোমার?এমন করতেছো ক্যান? 


এরপর আব্বা আমাকে আর মর্জিনা ফুপুকে অবাক করে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।তারপর কান্না জুড়ে দেয়।মর্জিনা ফুপুও আব্বার পাশে বসলো।


---দূরুত ভাইজান,কি শুরু করলে তুমি এসব, বলো তো?কি হইছে? 


---মর্জিনা আমি যে কথাটা এতোদিন বুকের ভেতরে পাথরচাপা দিয়ে রাখছিলাম।আজ আর পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে...এইটা ক্যান বললাম আমি,কি করলাম আমি এইটা? 


                        চলবে....

২য় পর্ব 


২য় পর্ব


৩য় পর্ব 


৩য় পর্ব


৪থ পর্ব 


৪থ পর্ব


৫ম পর্ব


৫ম পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব

গর্ভধারিণী সাহিত্য ডাইরি পর্ব ৩

গর্ভধারিণী 

পর্ব---০৩

সাহিত্য ডাইরি 



---একি,আম্মা তুমি?তুমি কোথা থেকে এলে?


আম্মা শুধু আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে,কোনো কথা বলছে না।ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম আমি।


---একি আম্মা,তুমি কোনো কথা বলতেছো না কেনো?কি হইছে তোমার।


হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো আমার।আম্মা তো মারা গেছে,তাহলে আবার ফিরে এলো কিকরে।যতোদূর জানি কোনো মৃত মানুষ ফিরে আসতে পারে না।কিন্তু আম্মা ফিরে আসলো কিকরে।এ কি সত্যিই আমার আম্মা,নাকি অন্য কেউ।এটা ভেবে আমার ভয়ের মাত্রা আরোও বাড়তে লাগলো।মনের ভেতরে সাহস সঞ্চয় করে আয়াতুল কুরসী পড়া শুরু করলাম।


---আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি..


আয়াতুল কুরসী শুনে আম্মা উঠে দাঁড়ায় ।তারপর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আমি সূরা পাঠ থামিয়ে আম্মাকে পেছন থেকে ডাক দেই।


---আম্মা,তুমি এভাবে কিছু না বলে কোথায় চলে যাচ্ছো,আমাকে কিছু বলতেছো না কেনো তুমি? 


আমার কোনপ্রকার আকুতি মিনতি আম্মার কানে পৌঁছালো না,ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।আমি আম্মার পেছনে দৌড় দেবার জন্য উদ্যত হলাম অমনি ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।বিছানা থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসলাম।বুকটা বড্ড শুকিয়ে গেছে।তার মানে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি।তাই তো, আম্মা তো আর বেঁচে নেই সে ফিরেই বা আসবে কিকরে?যদিও এই স্বপ্নের মতো বাস্তবে কিছু ঘটলে আমার থেকে বেশী খুশি কেউ হতো না।আমি ভালো করেই জানি সেটা হয়তো কখনো সম্ভব না।আম্মা আগে ঘুমানোর সময় খাটের পাশের টেবিলটায় পানিভর্তি জগ রেখে দিতো।এখন পানির জন্য রান্নাঘরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।বিছানা থেকে উঠে ঘরের দরজাটা খুললাম।হাতে ছোটো টর্চটা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়ি,তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াই।আব্বার শোবার ঘর পেরিয়ে রান্নাঘরে যেতে হয়।তার ঘরের দরজার সামনে আসতেই ভেতর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।ঠিক সেই মুহূর্তে আমার চলার গতি থেমে যায়।ব্যপারটা কি হলো বুঝতে পারছি না,ভেতর থেকে কিসের শব্দ আসছে?আমি চুপি চুপি আব্বার দরজার সামনে এগোতে থাকি তারপর কান পেতে ভেতরে কি ঘটছে বোঝার চেষ্টা করলাম।


---এতো কোনো মহিলার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে!সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।কিন্তু এতো রাতে আব্বার ঘরে কোন মহিলা এসে কান্না করবে,


একবার ভাবলাম আব্বাকে ডাক দেবো,কিন্তু পরক্ষণেই থেমে গেলাম।ঘরের জানালার পাশে একটা ছোটো ছিদ্রের দিকে চোখ গেলো আমার। আমি সেই ছিদ্র দিয়ে ভেতরটা দেখার চেষ্টা করি।


ঘরের ভেতরে আব্বার মোবাইলের জ্বলছে। আলোতে দেখতে পাচ্ছি আব্বা কোনো একটা মহিলার ওপরে উঠে আছে।তাদের দু'জনের গায়ের ওপরে একটা চাদর বেছানো।তবে এইটুক বুঝলাম আব্বার গায়ে কোনো জামা নেই।সে মহিলাটার ওপরে উঠে কিছু একটা করছে,হয়তো খুব ব্যথা দিচ্ছে।যার জন্য সে সমানে কান্না করে চলছে।


---দূরুত ভাই,ছাড়ো এবার।যাইতে হবে আমায়।


---আরেকটু সময় থেকে যা।এই সময়ে ছাড়া যায় তুই বল। 


---তাড়াতাড়ি শেষ করো,ভাইজান দেখে ফেললে মাইরা ফালাইবো আমারে, 


---কেনো রে,এসব প্রথম বার নাকি,এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? 


---আমার খুব ভয় করেছে,তাড়াতাড়ি যাইতে দাও আমায়, 


---এইতো হয়ে এসেছে... 


একটু পরে দেখলাম আব্বা মহিলাটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে,অমনি ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।তাদের গলার আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুনতে পাচ্ছি না আমি।


---উফফফ,ওড়নাটা কোথায় আমার, 


---এইতো আমার বালিশের পাশে,নে ধর 


---হুম দাও, 


--হইলো তোর জামা কাপড় পড়া? 


---হইছে,এবার গেলাম আমি। 


---শোন,আবার কবে আসবি?তুই আগের মতো একদম ভালোবাসিস না আমায়, 


---কি যে বলো না তুমি,আসবো আসবো।আবার আসবো। 


এই বলে মহিলাটা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মোবাইলের টর্চের আলোতে এগোতে থাকে।আমিও তার পিছু নিলাম।দরজার কাছে গিয়েই চারপাশটা ঘুরে তাকাতে লাগলো কেউ আছে কিনা এটা দেখার জন্য।তার মুখমন্ডল আমার সামনে আসতেই চমকে উঠলাম। 


---এটা তো মর্জিনা ফুপু!তার মানে আব্বা এতোক্ষণ মর্জিনা ফুপুকে কষ্ট দিচ্ছিলো।কই মর্জিনা ফুপু তো কিছুই বলো না আব্বাকে।উল্টো আবারো আসার কথা বললো,এ আবার কেমন কষ্ট,যা কেউ নিজে থেকেই পেতে চায়?আমার মাথায় ঢুকছে না কিছুই।


মর্জিনা ফুপু চলে যেতেই আমি আমিও পেছনে ঘুরে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।তারপর আবারো আব্বার ঘরের সামনে যাই।দরজাটা খোলাই আছে,কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।আব্বা বিছানায় বসে একটা সিগারেট ধরালো।তার পুরো শরীর ঘেমে একাকার।এখনো দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।মনে হয় এই মাত্র কোনো পরিশ্রমের কাজ করে এলো।আব্বা আমাকে নিজের ঘরে দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়লো। 


---একি তুই এখানে?


---হ,আমি


---কখন এসেছিস? 


---অনেক আগেই, 


---অনেক আগেই এসেছিস, কতক্ষণ আগে? কিছু দেখিসনি তো? 


---দেখেছি।


---কি দেখেছিস!(আব্বার চোখেমুখে ভয় আর আতংকের ছাপ স্পষ্ট) 


---তুমি মর্জিনা ফুপুকে মা র ছো,তাই দেখলাম।মর্জিনা ফুপু খুব কান্না করতেছিলো, আব্বা মর্জিনা ফুপু তো কতো ভালো, তুমি তারে এইভাবে কষ্ট দিলা কেনো? 


--বলিস কি,আচ্ছা কোথা থেকে এসব দেখলি তুই?


---ঐ যে টিনের ফাঁক দিয়ে, 


---যা দেখেছিস ভালো করেছিস,বাইরের কাউকে বলিস না ভুলেও।মনে করবি স্বপ্ন দেখছোস, 


---ক্যান আব্বা সবাইরে কইলে কি হইবো? 


--কি হইবো,এদিকে আয়,বুঝাইতেছি তোরে কি হইবো(দাঁত কটমট করে আব্বা বললো) 


আমি তার দিকে এগিয়ে যাই।আব্বা আমায় তার পাশে বসালো।তারপর জলন্ত সিগারেটটা আমার হাতের কাছাকাছি এনে বলতে লাগলো।


---এই আগুনটা তোর হাতের ওপর চেপে ধরলে কি হবে বল তো? 


আমি ভয় পেয়ে কোনো কথা বললাম না। 


--কি ভয় পেয়েছিস তাই না?এটা তোর হাতে ছোয়ালে হাত তো পুড়ে যাবে।যদি কাউকে কিছু বলেছিস তোর হাতে এটা আমি সত্যি সত্যি চেপে ধররো।তখন বুঝবি বাপের ঘরে আড়ি পাতার কি মজা!


আব্বার এই রুপ কখনো দেখিনি আমি,প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম।একটা ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।নিজের ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেই।আমার শুকনো গলা এখন পর্যন্ত পানির ছোঁয়া পায়নি,যদিও এখন আর তেষ্টা নেই।কখন যে মিটে গিয়েছে নিজেও জানি না।কেনো জানি না একা একা শুয়ে থাকতে ভীষণ ভয় করছে,আব্বার কাছে যাবো সেই সাহস টুকুও নেই।বিছানা থেকে নেমে আলনা থেকে আম্মার একটা শাড়ি নিলাম।তারপর সেই শাড়িটা বুকের ভেতরে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ি।আম্মার গায়ের গন্ধ তার উপস্থিতির জানান দিচ্ছে,অনুভব করতে পারছি সে আমার সাথেই আছে।ভয়ের মাত্রা ধীরে ধীরে কাটতে লাগলো।এরপর মনের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

-

-

-

-

-

পরের দিন সকাল বেলা।ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বা তার ঘরে নেই।চারদিকে খোঁজাখুজি করেও কোথাও পেলাম না।এদিকে প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে।রান্নাঘরে গিয়ে হাড়ি থেকে পান্তা ভাত আর গতকালকের ভেজে রাখা কচুরি ফুলের বড়া নিয়ে বসে পড়লাম।ঠিক তখন বাড়ির বাইরে লোকজনের গলার আওয়াজ শুনতে পাই।কেউ একজন আমায় ডেকে বললো 


---কইরে আকাইদ,কোথায় গেলি?দেইখা যা তোর আব্বা নতুন বৌ নিয়া আইছে!


কথাগুলো শুনে আমার হাত পা রীতিমতো থরথর করে কাঁপতে লাগলো!


   


আমি দৌড়ে ঘরের বাইরে গেলাম।গিয়ে দেখি আব্বা বাড়িতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা রহমান ভাইজান আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।


---কই,রহমান ভাইজান।আব্বা আবার কারে বিয়া কইরা নিয়া আইলো? 


---কেনো রে খুব ভয় পাইয়া গেছিলি বুঝি? 


--কি যে বলো না তুমি, 


---আহা,রহমান এসব কেমন মশকরা।ছেলেডার মা মারা গেছে কয়দিন আগে,তাই আসছোস ওর সাথে মজা করতে, 

(আব্বা রহমান ভাইজানরে উদ্দেশ্য করে বলে।) 


---আচ্ছা,আমার ঘাট হইছে।আর করুম না এমন মজা।তা আকাইদ তোর দিনকাল কেমন চলে রে? 


---ভালো ভাইজান! 


---বাড়িতে একলা একলা থাকো।ভয় করে না তো? 


---একা কই থাকি, আব্বাও থাকে তো? 


---তোর আব্বা আর কতক্ষণ বাড়িতে থাকে,


আমি রহমান ভাইজানকে কিছু বলতে যাবো এর মধ্যে মর্জিনা ফুপু হাতে একটা থালা নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো।


---আকাইদ,রসুইঘরে আয় তো?


---কি আনছো মর্জিনা ফুপু? 


---আয় আগে তারপর দেখাইতেছি।


আমি মর্জিনা ফুপুর সাথে চলে যাওয়াতে রহমান ভাইয়াও বেরিয়ে গেলো।এদিকে আব্বা গেছে পুকুরে গোসল করতে।


মর্জিনা ফুপু রান্নাঘরে ঢুকে তারপর থালাটা মাটিতে রেখে ঢাকনাটা সরালো।দেখতে পেলাম আমার জন্য কতগুলো পিঠা ভেজে নিয়ে আনছে।


---সকাল সকাল ভাজছি,নে এগুলা খেয়ে নে!তোর আব্বারেও দিস। 


---আচ্ছা ঠিক আছে, 


---আমি উঠি তাইলে, 


---মর্জিনা ফুপু শোনো না, 


--হ বল,


---কাল রাতে আমি কিন্তু সব দেখছি। 


আমার কথা শুনে মর্জিনা ফুপু যেনো ভরকে গেলো। 


---দেখছো মানে, কি দেখছো তুই? 


---আব্বা তোমারে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো, আমি সব দেখছি! 


মর্জিনা ফুপুর চোখ মুখ বড়ো হয়ে গিয়েছে।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না সে এতো ভয় পেয়ে গেলো কেনো।মর্জিনা ফুপু আমার মুখটা চেপে ধরলো।তারপর ফিসফিস করে বলতে লাগলো। 


---বাপ আমার,ভুলেও এই কথা আর মুখে নিস না।


---কেনো গো মুখে নিলে কি হইবে?আব্বা তোমারে এতো মারলো তুমি কাউরে কিছু কও না ক্যান। 


---চুপ, একদম চুপ।শোন তুই এই কথা ভুলেও মুখে আনবি না আর।যদিও আনছোস আমার বিষ খেয়ে ম রা ছাড়া উপায় থাকবে না। 


হঠাৎ করে বিষের কথা শুনে আমার টনক নড়ে উঠলো।তার মানে কি বিষ খেলে মানুষ মারা যায়।কই আমি তো জানতাম না আগে। 


---কি কইলা তুমি মর্জিনা ফুপু।বিষ খাইলে মানুষ ম রে ?


---হ রে হ, খুব ভয়ঙ্কর জিনিস এই বিষ।ক্যান জানিস না তোর মা ও তো এই বিষ খাইয়াই মরলো! 


মর্জিনা ফুপুর কথা শুনে যেনো বাজ পড়লো আমার মাথায়।এটা কি বলতেছে মর্জিনা ফুপু।কেনো জানি না আমি না চাইতেই দুটো চোখ পানিতে ভিজে গেলো আমার।


---আম্মা বিষ খায় নাই মর্জিনা ফুপু। আমার আম্মা বিষ খায় নাই! 


---কি কও,আমরা তো সবাই তাই জানি।


---মর্জিনা ফুপু আম্মারে আমি বিষ খাওয়াইছি..! 

কথাটা বলে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না আমি,মর্জিনা ফুপুর সামনে কান্না করে দিলাম।এদিকে মর্জিনা ফুপু আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো।যেনো নির্বাক হয়ে গিয়েছে সে। 


---এই পোলা, তোর কি মাথাটা গেছে একেবারে, কি বলতেছিস জানো তুই,


---হ আমি ঠিক কইতেছি।


---তুই বিষের শিশি পাইলি কই?


---আব্বা দিছিলো! 


আব্বার কথা শুনে মর্জিনা ফুপু আঁতকে উঠলো।চারপাশটা তাকাতে লাগলো সে।তারপর আমায় বলে।


---চল ঘরে যাই,এখানে বসে এসব কথা বলা ঠিক হবে না।যে কেউ চলে আসতে পারে! 


---ঠিক আছে।


--হ,


ইতিমধ্যে আব্বা গোসল সেরে চলে আসলো।


---কি রে মর্জিনা তুই কখন আইলি? 


---এইতো একটু আগে। 


--আইছো যখন একটা কাজ কর,আমার খাবারটা বেড়ে দে, 


---হ,দিতেছি।


মর্জিনা ফুপু আব্বাকে ভাত বেড়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে আমার ঘরে চলে গেলো।তারপর দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমাকে খাটের ওপর বসায়,তারপর নিজেও বসলো। 


---এবার বল, কি হইছিলো? 


---আব্বা আমার হাতে একটা বিষের শিশি দিয়ে বললো,এইডা যেনো আমি আম্মার খাওনের সাথে মিশাইয়া দেই।


---তারপর তুই কি করলি? 


---আমি লুকাইয়া লুকাইয়া আম্মার ভাতের সাথে বিষ মিশাইয়া দিলাম,


---তুই এইডা কি করলি আকাইদ?কেনো শুনতে গেলি আব্বার কথা?


---আমি কি জানতাম আম্মা অইডা খাইয়া মইরা যাইবো!


---তোর আব্বা আর কিছু বলছে তোরে? 


---না,আর সবাইরে এই কথা কইতে নিষেধ করছে।তাই আমি কাউরে কিছু কই নাই।


একটু পরে আব্বা চলে আসে।মর্জিনা ফুপু দরজাটা খুললো।আব্বা মর্জিনা ফুপুকে বলে। 


---কি রে,দরজা বন্ধ কইরা আমার পোলার লগে কি করোস? 


মর্জিনা ফুপু কিছুক্ষণ আব্বার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আব্বা আমার দিকে এগিয়ে আসে।


---কিরে,ও কিছু কইছে নাকি তোরে, নাকি তুই কইছো?


---না,আমি কিছু কই নাই। 


---তাইলে দরজা বন্ধ করছিলি ক্যান? 


---আমি করি নাই,মর্জিনা ফুপু করছে। 


---দেখ উল্টাপাল্টা কাউরে কিছু বলিস না।যদি বলছো তোর একদিন কি আমার একদিন।কি কথা ঢুকছে কানে?


---হ... (আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম) 


এই বলে আব্বা চলে গেলো।আমি শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।তার মানে আব্বা ইচ্ছে করে আম্মাকে খু ন করেছে।কিন্তু কেনো,আম্মার সাথে কি এমন শত্রুতা তার,আর আম্মাই বা নিজে থেকে জেনেও বি ষ খেলো কেনো?এই দুজনের ভেতরে কোনো রহস্য তো অবশ্যই আছে।এই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলছে আমায়।সারাদিন এগুলো ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। 

-

-

-

-

এরপর সন্ধ্যা বেলা।আব্বা বাড়িতে নেই।আমি একা বৈঠকখানায় বসে আছি।ঠিক তখন ইসমাইল চাচা বাড়ির ভেতরে এসে ঢুকলো।ইসমাইল চাচাই সেদিন আমার আম্মারে তার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো।আমি তাকে জিজ্ঞেস করি। 


---ইসমাইল চাচা, তুমি? 


---তোর আব্বা কই?


--আব্বা তো বাড়ি নাই! 


---শোন একটা কথা আছে।


---কি কথা বলো,


---একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘইটা গেছে রে।তোর আম্মারে যে হাসপাতাল থেকে নিয়া আইছিলাম ঐ হাসপাতালের নাকি একটা এক্সিডেন্ট হওয়া লাশ খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না।


---মানে, 


---মানে,যেদিন তোর আম্মারে আমরা এই বাড়িতে নিয়ে আসি সেইদিন থেকেই নাকি লাশটা খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না।আমি এইমাত্র খবর পাইলাম।জানি না,কি কইতেছে ওরা।


ইসমাইল চাচার কথা শুনে আমার আম্মার লাশের কথা মনে পড়লো।তার মানে কি আমি সেইদিন ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।ঐ লাশটা আম্মার ছিলো না।আল্লাহ,আমার মনের সন্দেহ তুমি সত্যি কইরা দাও! 


                  চলবে...... 


২য় পর্ব 

২য় পর্ব

৩য় পর্ব 

৩য় পর্ব

৪থ পর্ব 

৪থ পর্ব

৫ম পর্ব

৫ম পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব

গর্ভধারিণী সাহিত্য ডাইরি পর্ব ২

গর্ভধারিণী 

পর্ব______২

সাহিত্য ডাইরি 

 



আমায় প্রশ্নটা করে আম্মা আরোও একটা ভাতের গ্রাস মুখে তুলে নিলো,আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সেইদিকে।


---বিষ কি আম্মা,কি হয় বিষ খাইলে? 


---কিছু হয় না বাবা... 


---কই আমিও একটু খাই,তুমি তো রোজ খাইয়ে দাও আমায়।তাইলে আজ দিচ্ছো না কেনো, 


--না, বাবা।ভুলেও না,তুই কাছেও আসিস না আমার। 


বুঝতে পারছি মায়ের গলার স্বর কেমন জানি ভারী হয়ে আসছে,শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।বুঝতে পারছি না কি করবো আমি।


---আম্মা,কি হইছে তোমার,এমন করতেছে ক্যান তুমি, 


---আমায় একটু পানি দিবি বাবা?

আম্মা কেমন হাফিয়ে হাফিয়ে বলতে লাগলো,আমি আমার গ্লাসটা আম্মার দিকে এগিয়ে দিলাম।আম্মা হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিবে সেই শক্তি নেই।আমি তার মুখের সামনে গ্লাসটা ধরি,অমনি ঢকঢক করে পুরোটা গলঃধকরণ করে নিলো।তারপর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।আম্মাকে এখনো এরকম করতে দেখি নি আমি,প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম।


---ও মা,তোমার কি খুব কষ্ট হইতেছে,এমন করতেছো ক্যান? 


আম্মা আমায় তার কাছে টেনে নিলো,তারপর ক্ষীনস্বরে বলতে থাকে। 


---আমায় পারলে ক্ষমা করে দিস বাবা,আমি তোর সাথে অনেক বড়ো অন্যায় করছি,আল্লাহর কাছে বল যেনো উনি তোর আম্মারে ক্ষমা করে দেয়। 


আম্মার করুণ অবস্থা দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না আমি।চিৎকার করে সারা বাড়ি মাথায় তুললাম।একটু পরে পাশের বাড়ি থেকে মর্জিনা ফুপি আর ওর ভাই দৌড়ে আসে।


---আকাইদ,কি হইছে তোর,এমন ভাবে কান্তেছিস ক্যান,মা মারছে নাকি? 


---মর্জিনা ফুপু আমার আম্মা কেমন জানি করতেছে দেখো,আমার খুব ভয় করেছে মর্জিনা ফুপু।আম্মার কিছু হইবো না তো?


মর্জিনা ফুপু আর ওর ভাই আম্মার দিকে ছুটে গেলো।ওরা দুজনে ফিসফিস করে কি বলছে বুঝতে পারছি না আমি।শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।একটু পরে মর্জিনা ফুপুর ভাই আমায় বললো -


---আকাইদ,তোর আম্মারে হাসপাতালে নিতে হইবো,নয়তো বাঁচানো যাবে না।


---আহ,মরণ।বাচ্চাটার সামনে কি বলতেছিস এসব,চুপ কর।


মর্জিনা ফুপি ওর ভাইকে ধমক দিয়ে বললো।এরমধ্যে বাড়িতে আরোও কিছু লোক জড়ো হয়।পাশের বাড়ির ইসমাইল চাচা তার ভ্যান নিয়ে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়।আম্মাকে সবাই ধরাধরি করে গাড়িতে উঠালো।আমি দৌড়ে পেছন পেছন গেলাম। 


---ও ইসমাইল চাচা,আম্মা কথা কইতেছে না কেনো,হাসপাতালে নিলে আম্মা ঠিক হইবো তো? 


---হরে বাপ হবে,তোর আম্মার কিছু হবে না।এখন শোন ঘরে টাকা পয়সা কোথায় আছে জানোস কিছু,আমাগো কারো কাছে তো অতো টাকা নাই! 


---টাকা,আছে আছে আমার কাছে আছে... 


এই বলে আমি ছুটে ঘরের ভেতরে গেলাম।আম্মা গতকাল দুই টাকার কয়েকটা নোট দিছিলো আমায়,আর আজ যখন আব্বা বাড়িতে আসছিলো কিছু কয়েন দিয়ে গেছিলো।আমি টাকাগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে ভ্যানের সামনে দৌড়ে আসলাম।


---ইসমাইল চাচা,এই নাও টাকা।এইতে হইবে তো? 


ইসমাইল চাচা কিছুক্ষণ হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।


---ও মোর খোদা,এই কয়ডা টাকা দিয়ে কি হইবে,এই পোলা কয় কি?তোর মায়ের জন্য অনেক অনেক টাকা লাগবে রে বাপ।


--কিন্তু এতো টাকা আমি কই পামু,আমার কাছে তো নাই।


মর্জিনা ফুপুর ভাই এরমধ্যে কোথা থেকে চলে আসলো।তারপর ইসমাইল চাচাকে উদ্দেশ্য করে বলে। 


---সময় নষ্ট না করে তুমি চলো,টাকা পয়সার ব্যবস্থা আমি করতেছি।চলো তুমি... 


আম্মার নিথরপ্রায় দেহ ভ্যানের ওপরে শুয়ে আছে,আমাকেও ভ্যানে উঠিয়ে দেয়া হলো।আসন গেড়ে আম্মার মাথার কাছে বসলাম আমি।তার একটা হাত শক্ত করে ধরলাম,যাতে গাড়ি থেকে পড়ে না যাই।প্রায় আধাঘন্টা পরে গাড়ি এসে হাসপাতালের গেটের সামনে থামলো।আম্মাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।এরপর কি হয়েছে আমি জানি না।আমায় আবার বাড়িতে নিয়ে আসা হলো।অনেক করে হাসপাতালে থাকতে চাইলাম কেউ শুনলো না আমার কথা।

-

-

-

রাতের বেলা ঘরের সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।এখন পর্যন্ত আম্মার কোনো খবর পাই নি।শুধু মাথায় আম্মার একটা কথা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।আমায় ক্ষমা করে দিস বাবা।আমি অনেক বড়ো অন্যায় করছি তোর সাথে!এই কথার মানে কি?আম্মা আমার কাছে কিসের জন্য মাফ চাইলো, আর সে আমার সাথে কিই বা অন্যায় করেছে আল্লাহ আর আম্মাই ভালো জানেন।জানিনা এর রহস্য কি? হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একটা আমার কাঁধে হাত রাখলো।আমি চমকে উঠে ঘুরে তাকালাম। 


---আব্বা, তুমি? 


---হ রে আমি, 


---শোন,তুই কাউরে কিছু বলিস নাই তো?


---কি বলমু,


---আমি যে তোরে বিষের শিশিটা দিছিলাম, কাউরে বলিস নি তো? 


---না, কিন্তু বললে কি হইব.. 


---এতো,বুঝতে হবে না।তুই খালি কাউরে কিছু বলবি না।ঠিক আছে? 


---ঠিক আছে, তুমি অহন আমারে আম্মার কাছে নিয়া যাও,আমি আম্মার কাছে যাবো। 


---এতো রাতে গিয়ে কি করবি, আমি কাল সকালেই নিয়ে আসবো তোর আম্মারে। 


---তাই নাকি,সত্যি আম্মারে তুমি নিয়া আসবা? 


---হ,এখন যা।ঘুমা।


আমি বেশ আনন্দিত মনে ঘরের ভেতরে চলে গেলাম।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ি।না জানি আম্মা কখন আসবো।আব্বা তো কইলো সকাল সকাল নিয়া আসবে।এতো দেরী কেনো হইতেছে তাইলে কে জানে?মনটা বড্ড আনচান করছে আমার।বার বার ঘরের ভেতরে বাহির হচ্ছি।একটু পরে গাড়ি আর লোকজনের শব্দ ভেসে আসলো আমার কানে।ঘর থেকে দৌড়ে বাহির হতেই দেখি কেউ পলিথিনে প্যাচানো কিছু একটা গাড়ি থেকে নামালো,তারপর উঠানের সামনে রাখে।আমি আব্বারে গিয়ে কইলাম।


---ও আব্বা, এইডা কি নিয়া আইছো,আম্মা কোথায় আমার?আম্মা কই।


---তোর আম্মা এই পলিথিনের ভেতরে বাবা, 

(আব্বা কাঁদতে কাঁদতে বললো) 


---তুমি আম্মারে এই মোটা কাগজের ভেতর রাখছো কেনো,আম্মা যে শ্বাস নিতে পারবো না!


আমার কথা শুনে উপস্থিত লোকজনের ভেতরে কয়েকজন কান্না শুরু করে দিলো।বুঝতে পারছি না কি ঘটছে এখানে।আব্বা আমায় জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলো। 


---তোর আম্মা আর বেঁচে নাই বাবা,তোর আম্মা আগাগো সবাইরে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। 


আব্বার কথা শুনে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো আমার।চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আর,মাথা ঘুরে আম্মার পায়ের কাছে গিয়ে পড়লাম।ঠিক তখন একটা অদ্ভুত ব্যপার লক্ষ্য করি আমি। 


এই পা তো আমার আম্মার পা না!আম্মার পায়ের আঙ্গুলগুলো এরকম লম্বা লম্বা লম্বা কেনো,আমি নিশ্চিত এটা আম্মার লাশ না। তাহলে আব্বা এটাকে আম্মার লাশ বলতেছে কেনো,আমার আম্মা কী সত্যিই বেঁচে আছে..? 


     


---নাহ,এইটা আমার আম্মা না।আব্বা এইটা আমার আম্মা না।কারে নিয়া আইছো তুমি? 


---আহারে,মায়ের শোকে বেচারার মাথাটাই গেছে মনে হয়।দেখো নিজের মায়েরেই চিনতে পারতেছে না।

গ্রামবাসী আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।কিন্তু আমি ভালো করেই জানি এটা আমার আম্মা না।আব্বার হয়তো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।আমাকে যেকরেই হোক আব্বার ভুল ভাঙ্গতেই হবে।


---আব্বা দেখো সবাই আমারে পাগল বলতেছে,তুমি আম্মার মুখখানা দেখাও সবাইরে।এইটা আমার আম্মা না।


---বাপ আমার।এইটা তোর আম্মা না তো কে, আমি নিজে সদর হাসপাতাল থেকে নিয়া আসছি তোর আম্মারে। 


---আমি আম্মার মুখ দেখতে চাই।আম্মার মুখ দেখতে চাই আমি। 


এই অরে কেউ ঘরের ভেতরে নিয়া যা।এইখানে আর বেশিক্ষণ রাখা যাবে না অরে।পুরোপুরি পাগল হইয়া যাইবো।


মর্জিনা ফুপু আমায় ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়।আমি কিছুতেই যেতে চাচ্ছিলাম না।একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো।এরপর লাশটাকে গোসল করানো হলো।বাড়ির সামনে কবর খোড়া হচ্ছে,সেখানেই দাফন করা হবে।একটা বিষয় সত্যি বুঝতে পারছি না,লাশটা তো আমার আম্মা নয়।তাহলে কেউ চিনতে পারছে না কেনো।কই কেউ তো অস্বাভাবিক আচরণ করছে না।তবে কি আমিই ভুল।কিন্তু এতো বড়ো ভুল হয় কিকরে আমার।নিজের মাকেই চিনতে পারবো না আমি।না,আর ঘরের ভেতরে আটকে থাকা চলবে না।যেকরেই হোক আমায় এখান থেকে বের হতে হবে।অনেক চেষ্টা করে কোনমতে জানলার ফাঁক দিকে নিজের ছোট্ট শরীরটা বের করি।তারপর এক দৌড়ে কবরস্থানের কাছে গেলাম।আম্মাকে কবরে নামানো হবে ঠিক সেই মুহূর্ত।আমাকে দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক। 


---একি,এ ঘর থেকে বাইর হইলো কেমনে,তোরা কি ওরে মাইরা ফেলতে চাস ওরে? 


---সরো তোমরা,আমি আমার আম্মারে দেখমু।আম্মারে দেখমু আমি। 


এই বলে লোকজনের বাঁধ ভেঙে সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশের ওপরে হামলে পড়লাম।লাশের চেহারার দিকে চোখ পড়তেই আঁতকে উঠলাম আমি।মুখমন্ডল অস্বাভাবিক ভাবে থেতলে গিয়েছে।কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।এই কারণে হয়তো কেউ লাশটাকে চিনতে পারে নি।কিন্তু আমি ঠিকই চিনতে পেরেছি।


----আমি কইছিলাম এইটা আমার আম্মা না,দেখলে তো তোমরা।


---আকাইদ,বাবা এইটা তোরই আম্মা।তুই কি বলতেছিস আমি তোর আম্মারে চিনতে পারবো না।দেখ যা হইছে মেনে নে বাবা।


---তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখো।তাড়াতাড়ি জানাজার কাজ শেষ করতে হইবো।

গল্পের পর্বগুলো নিয়মিত এবং সবার আগে পেতে আমার পেইজ 'প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ' ভিজিট করুন।ধন্যবাদ।আব্বা সবাইকে তাড়া দিয়ে আম্মার লাশের দাফন কার্য শেষ করলো।আমার ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় রইলো না।বারবার এটাই মনে হচ্ছিলো যদি আম্মার সাথে কবরের ভেতরে শুয়ে থাকতে পারতাম আর কোনো কষ্ট থাকতো না আমার।

দাফন শেষে সবাই আমায় ধরে ঘরে নিয়ে গেলো।সবার সাথে সাথে আমিও এখন বিশ্বাস করি আম্মা আর এই পৃথিবীতে নেই।আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে সে,এমন জায়গায় যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না।কিন্তু আম্মা আমার সাথে কি এমন অন্যায় করেছে,কোন অপরাধবোধে স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণ দিয়ে দিলো সেই প্রশ্নের উত্তর আজোও অজানা।জানি না কোনোদিন এই অজানা রহস্যের সমাধান হবে কিনা।

-

-

-

-

কয়েকদিন পরে।আম্মা মারা যাবার পরে আব্বা এখন বাড়িতেই থাকে।আগে কাজের তাগিদে বেশীরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকতো।রাতেবেলা আমি আর আব্বা ভাত খাচ্ছি।আব্বা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে,বুঝতে পারছি সে হয়তো কিছু বলতে চাইছে আমায়।একটু পরে নিজের সংকোচ কাটিয়ে আব্বা আমায় বললো।


---তোর সাথে একটা কথা ছিলো আকাইদ।


---কি কথা আব্বা? 


---তোর আম্মা তো চলে গেছে অনেকদিন হইলো।তুই একলা একলা থাকতে পারোস না ঘরে,যদি তোর জন্য.... 


---আমার জন্য কি আব্বা? 


---তোর জন্য যদি আরেকটা নতুন মা আনি,তুই রাগ করবি না তো।


আব্বার কথা শুনে ভাতের গ্রাসটা মুখ পর্যন্ত তুলে আবার থালায় রেখে দিলাম।


---নতুন মা ক্যান আনবা,সে তো আমার আম্মা না,তুমি পারলে আমার নিজের আম্মারে আইনা দাও আব্বা।


---সেইটা আর সম্ভব না বাবা।দেখ নতুন আম্মা তোরে তোর আম্মার মতোই ভালোবাসবে, দেইখবি দুইদিনের তুই নিজের আম্মার কথা ভুইলা গেছো। 


---আমি নতুন মা চাই না,আর আমার আম্মারেও ভুলতে চাই না।


এই বলে আমি ভাতের থালায় পানি ঢেলে উঠে গেলাম।যেতে যেতে শুনতে পাই আব্বা পেছন থেকে বলছে। 


---ভালো কথা কইলাম বুঝলি না,আমি কিন্তু তোর ভালোর জন্যই কইছিলাম।


আব্বার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাই।তারপর নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।এই ঘরে আমি আর আম্মা থাকতাম।তার বালিশখানা এখনো সেইভভাবে বিছানায় পড়ে।মায়ের গায়ের গন্ধ এখনো আলনায় ঝুলিয়ে রাখা তার শাড়িতে লেগে আছে।শুধু মানুষটাই নেই।কেনো জানি না এই ঘরে আসলেই বুকটা হুহু করে কেঁদে ওঠে।এই বিছানায় শুয়ে শুয়ে আম্মা কতো গল্প শুনিয়েছে আমায়।রূপকথার রাজা রানির গল্প, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর গল্প,আরোও কতো কিছু।কতো বায়না করেছি তাঁর কাছে,আমার শত আবদার এই ঘরেই আম্মার কাছে পূরণ হয়েছে।আবার মারও খেয়েছি।কেঁদেছি,আম্মা চোখের পানি মুছে দিয়েছে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই।

হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।শব্দটা ঘরের বাহির থেকেই আসছে।দরজাটা খুলে ঘরের বাইরে গেলাম।

দরজার সামনে একটা মহিলা মুখে ঘোমটা দিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।আমি বলে উঠলাম। 


---কে,কে আপনে?


সে আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না।আমি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে যাই।তারপর ঘোমটাটা মাথার ওপর থেকে সরিয়ে দিলাম।মূহুর্তের এক অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরলো আমায়।মনে হচ্ছে চোখের সামনে যেনো স্বপ্ন দেখছি।


---একি,আম্মা তুমি?তুমি কোথা থেকে এলে?


চলবে....

২য় পর্ব 


২য় পর্ব 


৩য় পর্ব


৩য় পর্ব


৪থ পর্ব 


৪থ পর্ব


৫ম পর্ব


৫ম পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব


৬ষ্ঠ পর্ব