সে রাতের গল্প পর্ব--২

 সে রাতের গল্প

 পর্ব--২



-উনি আমাকে ধর্ষন করেছে? এই বাচ্ছাটি ওনার।


-মেঘার কথাটি শুনেই সবাই আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম।


-দেখেছেন বাচ্ছাটি আমার কোলে আসা মাত্রই কান্না থামিয়ে দিলো' এখন সেই বাচ্ছার বাবা নাকি আমি। মানুষ ভালো করতেই নেই। 


'মেঘা আমার কথা শুনা মাত্রই বলে উঠে'


-কেনো সেই রাতের কথা ভূলে গেলেন নাকি? যেই রাতে আমাকে নষ্ট করেছেন। 


-ছিইই...কি বলেন এই সব আপনি।


-কেনো আমি কোন মিথ্যা বললাম বুঝি। কতোই না আকুতি মিনতি করেছি। 


-আশ্চর্য আপনার মুখে যা আসতেছে তাই বলতেছেন দেখি। আমার কিন্তু মান সন্মান আছে। এইভাবে মিথ্যা অপোবাদ দিতে পারোনা আমাকে।


-প্লিজজ সাহেব আমাকে বিয়ে করে আপনার ঘড়ে তুলুন। এই সন্তান নিয়ে বাহিরে কিভাবে থাকবো। 


'মেঘার কথা শুনে সবাই বেশ আশ্চর্য হয়। কারন যেই পাগলিটা ভালো ভাবে কথাই বলতে পারতোনা সে আজ এতো সুন্দর করে কিভাবে কথা বলতেছে। তার কথা শুনে সবাই বলতেছে মেঘা কখনোই পাগল হতে পারেনা। যদি পাগল হতো তাহলে এতো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারতোনা। নিশ্চিত সে পাগল সাজার অভিনয় করতেছে।


'একজন লোক মেঘাকে বলে'


-কিরে মেঘা তুই এতো সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারিস! আগে তো জানতাম না। 


-হ‍্যা আমি কথা বলতে পারি। 


-তাহলে পাগলি সেজে থাকিস কেনো। 


-জানি না।


-আচ্ছা তুই যে বলতেছিস এই সাহেব তোকে ধর্ষন করেছে তার কোন প্রমান আছে কি।


-না প্রমান নেই। 


-তাহলে এমন মিথ্যা অপোবাদ দিচ্ছিস কেনো লোকটাকে হ‍্যা।


-বিশ্বাস করেন উনি আমার সন্তানের বাবা। উনি আমাকে রাতের আধারে একা পেয়ে ধর্ষন করেছে।


'ঠিক সেই মুহূর্তে আমি বলে উঠলাম'


-আচ্ছা আমি যদি তোমাকে এই সব করে থাকি তাহলে এতোদিন বললেনা কেনো। আজ হঠাৎ করেই বলতেছো।


-আমি ভাবছিলাম আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন। আমাকে বিয়ে করে বউয়ের সম্মান দিবেন। যখন দেখলাম বাচ্ছা হবার পরেও আপনি আসতেছেনা তখন সব প্রকাশ করলাম। 


'এইবার রাগান্বিত হয়ে মেঘাকে সবার সামনে কশে একটি থাপ্পড় দিলাম। 


-ঠাসসস!ঠাসসস! লজ্জা করেনা একটি ভালো মানুষের নামে এমন মিথ্যা অপোবাদ দিতে। তুই রাস্তার পাগলি তোর মান সম্মান নেই বলে কি আমার ও মান সম্মান নেই। ভূল করেছি তোর সন্তানটিকে কোলে নিয়ে। 

'বলেই সন্তানটি অন‍্য একজনের কোলে দিলাম।


এবং পিছন ফিরে হাটতে ধরলাম। এমন সময় মেঘা আমার দুটি পা জরিয়ে ধরে বলতে থাকে আমাকে বউ হিসেবে মানতে হবেনা। 

'কিন্তু সন্তানটিকে যেনো আমি পিতার পরিচয় দেই। ( বলেই কান্না শুরু করে দেয় )


'মেঘার এমন আচারনে ওর চুলের মুঠি ধরে একটি ধাক্কা মেরে সেখানে থেকে হন হন করে বাসায় চলে আসি। এবং ভাবতে থাকি এর হাত থেকে বাছার উপায়।


'সারা দিন ভেবে চিন্তে একটি উপায় বের করলাম। উপায়টি হলো সন্তানটিকে মেরে ফেলতে হবে' মেরে ফেল্লেই কাহিনী শেষ'' যেই ভাবা সেই কাজ"


"রাত যখন ২ টা বাজে এমন সময় ঘুম থেকে উঠলাম এবং হাতে একটি ছুরি নিয়ে রহনা দিলাম মেঘার উদ্দেশ্যে।


'প্রায় ১০মিনিট পরে গন্তব্য স্থানে এসে দেখতে পাই মেঘা তার সন্তানকে বুকে জরিয়ে ধরে বিভোর  ঘুমে আসক্ত হয়ে আছে। যা দেখে আমার মনে একটু মায়া হলো। পরক্ষনে ভাবলাম এখন তো মায়া দেখালে কাজ হবেনা। যা কারার এখনি করতে হবে। 


'এইটা ভেবে ছুরিটা বের করে যেইনা মারতে যাবো এমন সমম পিছন থেকে'''


"ধর্ষন করার পরে আবার তাকে খুন করতে এসেছিস! তোর এতো বড় সাহস।


'কথাটি শুনেই পিছনে তাকিয়ে দেখি একজন মহিলা এই সব কিছু বলতেছে। 


'জিঙ্গেস করলা।


'তুই কেমন করে জানিস আমি এই পাগলিকে ধর্ষন করেছি। 


-সেই রাতে আমিও এখানে ছিলাম।


-মানে।


-বুঝতে পারলিনা। শোন তাহলে অফিস থেকে ফেরার পথে যখন তুই মেঘাকে নষ্ট করেছিস তখন আমি ওভার ব্রিজের উপর থেকে সব দেখেছি। কতোই না আকুতি মিনতি করছে মেয়েটা। তোর হাত থেকে বাছার জন‍্যে কিন্তু তোর নিষ্টুর মনে একটুও মায়া আসেনি।


-তারমানে আপনি সব জানেন।


/>

-হ‍্যাঁ সব জানি।


-প্লিজজজ এই কথাটি কাউকে বলবেন না। আপনি যা চাইবেন তাই দিবো। 


-সত‍্যি দিবি। 


-হ‍্যাঁ দিবো! কিন্তু তার আগে এই বাচ্ছাকে মে'রে ফেলে হবে আমাদের।


-বাচ্ছাটি মেরে ফেলতে হবে কেনো।


-কারন এই বাচ্ছা থাকলে অনেক সমস্যা আছে। সেইটা আপনি বুজবেন না।


-নাহ বাচ্ছার কোন সমস্যা করা যাবেনা।


-অব‍্যশই করতে হবে। নাহলে আমি ফেসে যাবো তখন আমার কি হবে শুনি।


-বলছিনা বাচ্ছার কিছু করা যাবেনা। এর চেয়ে তুই এই এলাকা থেকে অনেক দুরে চলে যা? এইসব কেউ জানতে পারবেনা।


-আমি ঙ্গান নেয়া পছন্দ করিনা। 


-চলে যা বলতেছি। 


-অনেক ফাউ কথা বলেছি আপনার সঙ্গে। আপনি এখন এখানে থেকে চলে যাবেন। নাহলে আপনাকেও এদের সঙ্গে মে'রে ফেলবো।


-কিইইই তোর এতবড় সাহস আমাকে হুমকি দিস। 


-হ‍্যাঁ! চলে যান এখানে থেকে আমার কাজ আমাকে করতে দিন।


-আমি কিন্তু এখন চিৎকার করবো। 


-খুন করে ফেলবো কিন্তু চিৎকার করলে। 


'আমার কথাটি শেষ হতে না হতেই মহিলাটি বাছাও বাছাও বলে চিৎকার শুরু করে দেয়' ক্ষনিকের ভিতরেই পরিস্থিতি খারাপ হলে লাগলে সেখানে থেকে পালিয়ে চলে আসি।


'এই দিকে মহিলাটির এমন চিল্লাচিল্লিতে মেঘার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এবং ভয়ে-ভয়ে মহিলাটির কাছে এসে জিঙ্গেস করে। 


-কি ব‍্যপার আপনি চিৎকারের করতেছেন কেনো।


-কেনো চিৎকার করতেছি জানতে চাও।


-হ‍্যাঁ বলুন।


-তোমাকে যেই সয়তানটি ধর্ষ*ন করেছিলো। সে আজ তোমার সন্তান কে মারতে এসেছিলো। যদি আর একটু পরে আমি আসতাম তাহলে তোমাদের শেষ করে দিতো।


-কি বলেন এই সব।


-আমার চিৎকারের আওয়াজ শুনে পালিয়ে গিয়েছে। আচ্ছা তোমাকে একটি প্রশ্ন জিঙ্গেস করিহ


-করুন। 


-তুমি কি সত্যি পাগলি? নাকি মিথ্যা নাটক করো। কারনে একটি পাগলি কখনোই এমন হতে পারেনা।


-আমি হলাম একজন************* **** **?

(মেঘার পরিচয় সবাই জানবেন পরবর্তীতে)


'মেঘার কথাটি শুনেই  মহিলাটি একটু ভয় পেয়ে যায়। এবং আবার জিঙ্গেস করে।


-তুমি এই সন্তান পেটে ধরলে কেনো। নষ্ট করতে পারতে তাহলে এমটি হতোনা।


-আমি যে উনাকে ভালোবেসে ফেলছিলাম। তাই বাধা দিতে পারিনাই। 


-ওহ। কিন্তু এখন তোমার ভালোবাসার মানুষ যে তোমাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।


-সমস‍্যা নেই আল্লাহ্ বাছাবে।


-ঠিক আছে আমি গেলাম। আমার খুব ভয় লাগতেছে পরে আবার কথা হবে তোমার সঙ্গে।

 

-আরে ভয় পেওনা আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। 


-তবুও আমার বুক থর"থর করে কাপতেছে।


-ভয়ের কিছু নেই এখানে।


-হুমমম ঠিক আছে। 


-শোন সকাল বেলায় এখানে উপস্থিত থাকবে আমি ওর ঘরের বউ হয়ে যেতে চাই।


-কিন্তু!


-কোন কিন্তু নেই যদি না আসো তাহলে তো বুজতেই পাচ্ছো কি অবস্থা হবে তোমার।


-আচ্ছা আসবো। কিন্তু এসে কি বলবো।


-বলবে যে আমি নিজের চোখে দেখেছি এই ছেলেটি মেঘাকে ধ'র্ষ'ন করেছে। 


-ঠিক আছে। 


-এখন আসতে পরো।


'মেঘার কথাটি শুনেই মহিলাটি দৌরে সেখানে থেকে পালিয়ে যায়। 

(সবাই ভেবে দেখুন মেঘা কে হতে পারে)


'এই দিকে আমি বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম এখন যদি এই মহিলা সবাইকে বলে দেয় আমি তাদের হত্যা কার চেষ্টা করেছি তাহলে কি হবে। 


'এই সব হাজারোনা চিন্তা মাথায় যেনো একটা ঘুর্নিঝড় সৃষ্টি করলো। সেই রাতে আর কোন ভাবেই ঘুমাতে পারলাম না! সকাল বেলায় হালকা নাস্তা করে অফিসে যাচ্ছিলাম এমন সময় মা বলে উঠে।


-বাবা হাসিব আমি ও ডাক্তারের কাছে যাবো' আমাকে সঙ্গে নিয়ে যা। তোর অফিসের ওখানেই ডাক্তারের চেম্বার।


'ঠিক আছে মা চলো।


-এর পরে মাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে। যেখানে মেঘা রয়েছে।


'বেশ কিছুদুর আসার পরে দেখলাম মেঘার চার পাশে আজো অনেক মানুষ ভির জমিয়ে আছে।


'সেই দিকে লক্ষ না করে' মাকে নিয়ে যেইনা একটু তারা হুরা করে আসতে যাবো, এমন সময় মা বলে উঠলো?


-বাবা ওখানে কি হয়েছে.। এতো মানুষ কেনো?


-জানিনা?


-চলনা একটু দেখি ওখানে গিয়ে কাহিনী কি।


-আরে ওই সব দেখার তোমার দরকার নেই। তুমি ডাক্তারের কাছে চলো।


-আরে দরকার কি ওখানে।


-এমন রাগ হচ্ছিস কেনো। চলনা একটু।


'কি আর করার মায়ের কথা মতো তাকে ওখানে নিয়ে গেলাম। গিয়েই দেখি কালকের রাতের সেই মহিলাটি মেঘার পাশ জুরে বসে আছে। 

'মা জিঙ্গেস করলো।


-কি হয়েছে এখানে। 


'মহিলাটি সুন্দর ভাবে উত্তর দিলো'


-আপনার সন্তান এই মেয়েকে ধর্ষ*** করেছে। 


-এই মেয়ে কি বল এইসব। আমার সন্তান সম্পর্কে না যেনে কোন খারাপ মন্তব্য করবেনা। 


-বাহ? সত‍্যি কথা বললাম এখন খারাপ মন্তব্য হলো নাকি।


-মা তোমাকে এই জন‍্যেই বলছিলাম ওখানে আসর দরকার নেই। এইসব রাস্তার মানুষ খুবেই নোংরা।


-লজ্জা করেনা এমন কথা বলতে আপনার। 


-লজ্জা করবে কেনো। আমি কোন মিথ্যা কথা বলতেছি নাকি বুঝলাম না। আচ্ছা তোমাদের এই রাস্তার মানুষের খেয়ে দেয়ে কোন কজ কর্ম নেই। ভদ্র মানুষের পিছে শুধুমাত্র লেগেই থাকেন।


'আমার কথা শুনে মেঘা বলে'


-দেখো হাসিব তোমাকে আমি অনেক সুযোগ দিয়েছি। ১০ মাস দেখেছি কিন্তু তুমি আমার কাছে একটিবার ও এসে বলোনাই মেঘা আমার ভূল হয়েছে। 


'মেঘার কথায় আমার মা ভিষণ রেগে যায়'


-এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলবে। আর একটি বাজে কথা বললেই থাপ্পড় দিবো।


-মা চলতো এখানে থেকে। 


'কথাটি বলে যখনি মাকে নিয়ে একটু সামনে আসলাম  ঠিক তখনি***


-পরবর্তী পর্ব লিংক

https//wwwnesgctgaret.com


গল্পটা সম্পন্ন নাটক আকারে দেখুন 

https://youtu.be/Oz7ZoH7YoL4?si=XlGqCb8WNWbulZVv

মুখোশের আড়ালে পর্বঃ২

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্প )

#মুখোশের আড়ালে

পর্বঃ২



চোখের সামনে ভেসে আসতে লাগলো প্রায় পাঁচ বছর আগে সবার অগোচরে ঘটা সেই ভয়ংকর ঘটনাটা।যেটার সাক্ষী ছিলাম আমি আমার মা আর একজন।যে ঘটনার ছোবলে আজকের আমার এই অবস্থা...


ক্লাস সেভেনের ফাইনাল পরীক্ষার পরে,আমি তখন মায়ের সাথে নানুবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম..

আমি সবার খুব আদরের ছিলাম।আমার কারণে আমার তিন মামা নানুবাড়ির ছাদে পিকনিকের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো..আমরা সবাই মিলে ছাদে পিকনিক করছিলাম।কিন্তু আমার মা আসছিলো না উপরে...শরীর খারাপের কথা বলে মা নিচেই ছিলো।উপরে আসছিলো না।মায়ের শরীর খারাপ বলে,

আমরাও বেশি জোর করিনি।


পিকনিকের মাঝে আমার বাবা হঠাৎ করেই ফোন দিলো।ভিডিও কল দিয়ে দেখতে চাইলো তার আদরের মেয়েটা কি কি করছে মামাদের সাথে।

আমি খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাবাকে দেখাচ্ছিলাম।বাবা আমাকে বললো,

মায়ের কাছে ফোন নিয়ে যেতে।।আমিও বাবার সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে গেলাম,মাকে ফোন দিয়ে আসার জন্য।।নিচে নেমে মায়ের ঘরে মাকে পেলাম না।ঘুরঘুর করে এঘর ওঘর খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু কোথাও মা নেই।বাবাকে বললাম,মাকে খুঁজে তারপর তোমাকে কল দিবো।


এটা বলার পরে মাকে খুঁজতে খুঁজতে নানুবাসার একেবারে কোণার ঘরে উঁকি দিলাম।দেখি সেই ঘরের দরজা দেওয়া।তখন আমার মনে হলো,মা ওঘরে আছে কিনা।আমি দরজায় কড়া নাড়তে লাগলাম মা মা বলে।আমার ডাকের মধ্যে শুনতে পেলাম,ভেতরের ফিসফিস করে কথা হচ্ছে।নিচে তো শুধু আমার মা ই ছিলো।ভেতরে আসলে কে কে??কার সাথেই বা কথা হচ্ছে।

আমার কেমন জানি মনে হলো।আমি আরো জোরে মাকে ডাকতে লাগলাম আর দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলাম।


কয়েক মুহুর্ত যাওয়ার পরে আমাকে চমকে দিয়ে আমার মা দরজা খুলে মুখ বের করলো।

আমাকে বিরক্তির সাথে জিজ্ঞাসা করলো-

"কি হয়েছে??এতো চেঁচাচ্ছি কেন...?"


আমি হা করে মাকে দেখলাম,মায়ের চোখে-মুখে পানি।চোখ দুটো টুকটুকে লাল।বোধ হয় খুব কেঁদেছে।মায়ের এই অবস্থা দেখে আমার মনের ভেতর উথাল পাতাল হতে থাকলো।আমি ভয় পাওয়া গলায় মাকে জিজ্ঞাসা করে উঠলাম--

"ও মা।মা..তুমি কাঁদছো কেন??

কি হয়েছে তোমার??"


মা আমার কথার কোন উত্তর দিলো না।কেমন জানি ক্ষিপ্ত চেহারা করে আমাকে বলে উঠলো--

"আমার কিছু হয়নি।যাহ,এখান থেকে।আর উপরে গিয়ে কাউকে বলবি না।আমি এই ঘরে আছি।"


এই প্রথম আমার মা এমন ব্যবহার করলো।আমার খুব কান্না আসছিলো।আমি হুট করেই মাকে কিছু না বলে শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলতে গেলাম।আমার মা হয়তো ভাবেনি আমি এমনটা করবো।অনেকটা অপ্রস্তুতভাবে দরজা একটু খুলে যেতেই দেখি ভেতরে একটা লোক বিছানার উপর শুয়ে আছে।লোকটার দিকে চোখ পড়তেই,

সে কেমন জানি ভয় পেয়ে উঠলো।হুড়মুড় করে উঠে বসলো।আমি লোকটাকে এর আগেও কয়েকবার দেখেছি।কিন্তু এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না।আমি অবিশ্বাসের চোখ নিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।


মাও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম,"লোকটা কে,লোকটা কে...?"মা সাথে সাথে আমার মুখে হাত চেপে ধরলো আর লোকটাকে কাঁপা গলায় বললো--

"তুমি এক্ষুণি বের হয়ে যাও শাহীন..."

এই কথা বলতেই ঘরের ভেতরে থাকা পেছন সাইডের দরজা দিয়ে লোকটা চোরের মতন পালিয়ে গেলো।


আমি পানিভর্তি চোখ নিয়ে সব দেখছি।আমার মা আমার মুখ চেপে রেখেছে,কিন্তু আমি এতোটুকু নড়াচড়া করতে চাইলাম না।

আমার মায়ের সাথে লোকটার কি সম্পর্ক? 

কেন আমার মা এমন করছে??নানান প্রশ্নে আমি জর্জরিত।


লোকটা চলে যেতেই আমার মা আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।আমি ভয়ে কান্না করে উঠলাম।মা সাথে সাথে ঘরের দরজা দিয়ে আমার কাছে আসলো।আমি ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লাম।আমার পুরো দুনিয়া ঘুরছে আমার সামনে।মা আমার পায়ের কাছে এসে বসতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম,"লোকটা কে??এই ঘরে কেন তোমার সাথে ছিলো সে....?"


 মা শংকিত মুখে আমার দিকে তাকালো।মায়ের চোখ দিয়ে অববরত পানি পড়ছে,মাথাটা একেবারে নিচু করা।ঠিক একটা অপরাধীর মতন।মা অঝোরে কেঁদে উঠলো।আমাকে বললো--

"আমি সব বলবো।তুই আমাকে ভুল বুঝিস না.।।"


এই কথাটা শুনে আমি কেমন জানি খুব রেগে গেলাম।আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম,"লোকটা কে...?আমাকে শুধু এটুকু বলো..."মা আমাকে দেখে উত্তর দিতে পারছিলো না।আমি অসহায়ের মতন কাঁদছি।মা আমাকে কি উত্তর দিবে।আমার যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি।ঠিক সেই সময়ে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো।বাইরে থেকে শোনা গেল,আমার ছোট মামা অনবরত আমাকে আর মাকে ডাকছে।।আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো।আমি হুট করে উঠে এক দৌড় দিয়ে দরজা খুলে মামাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে গিয়েছিলাম।আমি কাঁদতে কাঁদতে খালি পায়ে বাসার বাইরে বের হয়ে গিয়েছিলাম।রাস্তার উপর বসে হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম।


আমাকে খুঁজে বের করেছিলো আমার ছোট মামা।

ততক্ষণে আমার কান্না শুকিয়ে,মনের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ আর অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছিলো।আমি বাসায় ফিরে কারো সাথেই কিছু বলিনি।শুধু বলেছিলাম,আমি আমার বাবার কাছে যাবো।

অবস্থা এমন করে ফেলেছিলাম যে,আমাকে এক বেলার ভেতরেই আমার বাবার কাছে নিয়ে যাওয় হয়েছিলো।


ঐ ঘটনার পর থেকে আমার মা অনেকবার চেষ্টা করেছিলো আমার সাথে ওটা নিয়ে কথা বলতে।কিন্তু আমি তাকে কোনদিন সেই সুযোগ টা দেইনি।সেদিনের পর থেকে হাস্য-প্রাঞ্জল আমি একেবারের নিথর আর শান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।।আমার মুখের হাসি দেখতে পেতো শুধু আমার বাবা।এক বাড়িতে থেকেও আমি আমার মায়ের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে ছিলাম।প্রতিটা রাত আমি বিছানায় কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি মায়ের উপর অভিমানে।সকাল হলেই শক্ত পাথরের মতন ব্যবহার করেছি।।


আমি গোপনে অনেকভাবে জানার চেষ্টা করেছি,আমার মা সম্পর্কে।কিন্তু সবার কাছেই তার একটা খারাপ কথারও অভিযোগ পাইনি।কিন্তু সেই ঘটনা আসলে কি ছিলো,তা হয়তো আমাদের দুজনের ভেতরে অমীমাংসিত রহস্য হয়েই ছিলো।।


দরজায় কড়া নড়লো।বুকটা কেঁপে উঠলো...

বাবা ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো,

"নিশি,তোমার মাকে নিয়ে যাচ্ছি..দেখবে না..?"

আমি উত্তর দিলাম না...বাবা দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেলো।আমার বুকটা ভীষণ ভারী হচ্ছে।

মায়ের চেহারাটা ভাসছে চোখে।পানি জমছে।

চোখ দুটো দু'হাত ধরে চেপে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমার ঘরে।কেউ কেউ জানলো না।কেউ শুনতে পেলো না।পাগলের মতন নিজেকে নিজে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি...শুধুই কাঁদছি....


আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

অনেক সাহস করে আস্তে আস্তে ঘরের বারান্দায় এগিয়ে গেলাম কি জানি দেখার জন্য।।হঠাৎ চোখ পড়লো,আমাদের গেটের এক কোণায় দাঁড়িয়ে সেই লোকটা কাঁদছে...আমার বুকের ভেতর কি জানি খুব জোরে বাড়ি দিয়ে উঠলো...মুহুর্তেই আমি কেমন জানি কঠিন হয়ে গেলাম।আমার সেদিনের প্রশ্নের উত্তর টা জানার খুব প্রয়োজন মনে হলো।আমি চোখ মুছেই কিছু না ভেবে এক দৌড় দিয়ে ছুটতে লাগলাম,লোকটার কাছে যাবো বলে...


গল্পঃমুখোশের আড়ালে

পর্ব (২)


জমজ বোনের সংসার পর্ব ২

 

জমজ বোনের সংসার 

পর্ব ২

কপি করা নিষেধ!




জারার ফোনে হঠাৎ করে কল আসলো!

দেখেই বুঝতে পারলাম হসপিটালের কোন নাম্বার এর থেকে কল এসেছে!

জারা কল ধরে হ্যালো বলতেই! ডাক্তার এর কথা বলার শব্দ পেতে থাকলাম! কি একটা কথা হলো জারা আর ডাক্তার এর মধ্যে! ঠিক মতো বুঝতে পারলাম না! খুব আস্তে আস্তে কথা বলতে থাকে জারা আর ডাক্তার!

আমি একটা ধমক দিয়ে জারার থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে হ্যালো বলতেই দেখি কল কেটে গেছে!

আমি জারা কে জিগ্যেস করলাম কি হয়েছে এখন সব কিছু আমাকে খুলে বলো!

জারাঃ গিয়াস ভাইয়া আমি এটিই অনেক সময় ধরে আপনাকে বলতে চাচ্ছি একটু শুনেন দয়া করে!

গিয়াসঃ বলো এখন! আমাকে আর টেনশন দিও না প্লিজ! আমি এইসব আর সয্য করতে পারছি না রাত ৩ টা বেজে গেল! এইসব নিয়ে কথা বলতে বলতে!

জারাঃ গিয়াস ভাইয়া মায়া আপুর অনেক বড় একটা রোগ হয়েছে যার জন্য আপু কখনোই কোন ছেলের জীবন নষ্ট করতে চাইতো না! তাই এতো বিয়ে আসার পরেও মায়া আপু রাজি হতো না! এইবার বাবার পেরার জন্য আপু রাজি হয়েছিল কিন্তুু আপু কখনোই আপনার জীবন নষ্ট হোক এমন কিছু চায় নি! তাই আমাকে অনেক জোড় করে অনেক বুঝিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসিয়েছে!

গিয়াসঃ কি হয়েছে মায়ার! আমি তো মায়া কে অনেক বার দেখেছি অনেক কিছু বলেছি কিন্তুু আজ পযন্ত মায়া আমাকে কিছুই বলেনি!

জারাঃ গিয়াস ভাইয়া মায়া আপু ভয় পেয়েছিলো! তাই হয়তো বলতে চায় নি!

এইসব কথা শুনে অনেক খারাপ লাগতে ছিলো! কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না!

রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেল এখনো আমরা ২ জন জেগে আছি!

জারার কাছে জানতে পারলাম! মায়া হসপিটালে এডমিট! ওর মাথায় বিরাট বড় একটা টিউমার হয়েছে যা অল্প কিছু দিনের মধ্যে কিছু একটা হয়ে যাবে! বয়স কম ওর! এই বয়সে ও অনেক কিছু সয্য করেছে জারা আর মায়া কিছু সময়ের ছোট্ট বড়! তবে মায়া কে একটু বেশিই বড় দেখা যেত! ওদের মা ওদের জন্ম দিয়ে মারা যায়! মায়া আর জারা কে ওর বাবাই বড়ো করে! মায়া একটু সাংসারিক টাইপের ছিলো! ওর বয়স কম হলেও ওকে দেখে বড় লাগতো সব কিছু বুঝতে পারতো! আর জারা এখনো ছোট্ট বাচ্চাদের মতো!

সকাল বেলা আমার বাবা মা সবাই মায়া কে খুঁজে না পেয়ে আমাকে জোড় করতে থাকলো কি করবো আমি বুঝে উঠতে পারছি না! বাবা মা কে সব টা বলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম!

বাবা মা আমাকে তার রুমে ডেকে নিলো!

আমিও জারা কে নিয়ে গেলাম! বাবা দেখে অবাক হয়ে বললো!

কিরে জারা মা তোমার বোন কোথায় তুমি এত সকালে কিভাবে আসলে!

গিয়াসঃ বাবা আমি বলছি সব!

বাবাঃ কি হয়েছে বল তো! কোন সমস্যা হয়েছে!

বাবাকে কালকে রাতের সমস্ত ঘটনা শুনাতে থাকলাম!

বাবা সব কিছু বুঝতে পারলো!।।

ঔ দিন ১২ টার সময় আমি জারা আর আমার বাবা মা একসাথে ঔ হাসপাতে গেলাম মায়া কে দেখতে!

হাসপাতালে যেতেই মায়া আর জারার বাবার সাথে দেখা! আমি বলতে থাকলাম বাবা মায়া কোথায় কি হয়েছে!

জারার বাবাঃ আমি একটা কল পেয়ে সোজা আসলাম! আমি কিছু জানি না কিন্তুু তোমরা এখানে কি করছো বলো! আমার মেয়ে কোথায়! জারা তুই কোথায় ছিলি কালকে! বাড়ির দারোয়ান বললো তোর বন্ধুর বাড়িতে!।।

এইসব কথা শুনে আরো চমকে উঠলাম আমি!

হঠাৎ দেখলাম ডাক্তার একটা স্টিল বেড এ একটা রোগী নিয়ে আমাদের দিকে আসছে!

পরবর্তী অংশের জন্য অপেক্ষা করুন

গঠন মূলক কমেন্ট করবেন!

( জারা আর মায়া একই বছরের কিন্তুু মায়া একটু বড় কিছু সময়ের আর ওর মধ্যে এডালট একটা ভাব আছে! )

জমজ বোনের সংসার 

পর্ব ২

 


মায়া_খেলা #গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ #পর্ব_২

#মায়া_খেলা

#গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ

#পর্ব_২



রিয়ার দুই কানে সে হাত দিয়ে বসে আছে। এমনভাবে হাত চেপে ধরেছে যেন হঠাৎ করেই তার কানে তীব্র ব্যথা অনুভব করছে। আমি রিয়ার এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে রিয়া?

রিয়া বলল, না, কিছু না। কেমন যেন ব্যথা পাচ্ছিলাম, আর মনে হচ্ছিল কিছু শুনতে পাচ্ছি না। আচ্ছা বল, তুই যেন কি বলতে চাইলি? কিসের রাতের ঘটনা?

রিয়ার মুখে এমন কথা শুনে আমি হতবাক। আমি তো পুরো ঘটনাই তাকে বলেছি প্রায়। এমনকি সে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল যে মনে হচ্ছিল সে মনোযোগ দিয়ে শুনছে আমার কথা। তাহলে এখন আবার এমন কথা বলছে রিয়া? তার মানে রিয়া এতক্ষণ কিছু শোনেনি!

এখন আমি নিশ্চিত আমার এই কথাগুলো সত্যিই কাউকে বলতে বারণ। আর কাউকে বলতে চাইলেও তারা হয়তো শুনতেই পাবে না। আমি এই মিথ্যা চেষ্টাও আর করব না, কাউকে আর এই ঘটনা সম্পর্কে বলতে যাব না।

আমাকে খুঁজে বের করতে হবে কেন এই বাচ্চা? আর আমার গর্ভেই কেন তারা দিতে গেল? আমি কি ক্ষতি করেছি তাদের?

আমি রিয়াকে আর কিছু না বলে প্রসঙ্গ বদলে দিলাম। কিছুক্ষন থাকার পর রিয়াকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। আমিও বাসার দিকে রওনা দিলাম।

পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ভাবলাম জিনদের সম্পর্কে আমার নিজেকেই জানতে হবে আগে। এই ভেবে কয়েকটা বই কিনলাম লাইব্রেরি থেকে। এই বাচ্চাটা সম্পর্কে নিজেকেই জানতে হবে, আর কাউকে কিছু বলা যাবে না।

বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ডাক্তার আফনানের দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেলাম। যদিও ভয় লাগছিল যে আজকেও হয়তো সেই বড় মাথাওয়ালা জিনটা আসবে গভীর রাতে। আর কি কি যে বলবে, আমি জানি না এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঠিক ফজরের আযানের সুন্দর ধ্বনিতে, যে কলরব বইছে আকাশে বাতাসে, ঠিক সেই সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। এবং একজন সাধকের মতো দেখতে সাদা কাপড় পরা, বড় বড় দাড়িওয়ালা একদম গল্পে যে দরবেশ বাবার কথা শুনেছি এতদিন, ঠিক তেমন দেখতে একজন মানুষ আমার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে!

আমি দেখে ভয় পেয়ে চমকে উঠলাম। আমার চমকে ওঠা দেখে তিনি বললেন, মা, ভয় পেয়ো না। আমি কোনো ক্ষতি করব না। আর তোমার ভিতরে জিন বাচ্চা রয়েছে, তাকে এই দুনিয়ার আলো দেখিয়ো না। কারণ সে যদি ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে এই পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলবে। পৃথিবীটা রাজত্ব করবে সে। যে করেই হোক তাকে ধ্বংস করো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে করব? আমি তো কাউকে বলতেও পারি না।কিভাবে সেটা তুমি ভাবলেই পেয়ে যাবে। আর এই কাজটা শুধু তুমি আযানের সময় করতে পারবে। কারণ আযানের সময় তোমার সাথে কোনো জিন থাকে না। আর আযানের সময় কাউকে বললে সে শুনবে। কিন্তু কিভাবে ধ্বংস করবো? 

এই কথা বলার সাথেই দেখি লোকটি আর আমার মাথার কাছে নেই।

তারাতারি করে বিছানা থেকে উঠলাম। উঠেই সব দিকে খোঁজাখুঁজি করলাম, কিন্তু পাইনি কাউকেই। বিছানায় এসে আবার বসি। আর খেয়াল হয় লোকটি আমাকে বলেছিল আযানের সময় আমার কাছে জিন থাকে না, ওই সময় এই বাচ্চার কথা কাউকে বললে কোনো সমস্যা হবে না।

হঠাৎ আবার খেয়াল করি আযান তো শেষ! তার মানে ওই লোকটি আযান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই চলে গেছে। আচ্ছা যাক, কিন্তু উনি আমাকে বললেন বাচ্চাটা ভয়ংকর, তাকে জন্ম দিতে বারণ করলেন। আর বাচ্চাটা নাকি এই পৃথিবী ধ্বংস করবে। কিন্তু আমি বাচ্চাটাকে কিভাবে ধ্বংস করব? কোন কিছু তো বলে দিলেন না লোকটি। কি করব আমি? আর আমি তো কিছুই জানি না এই জিনদের সম্পর্কে।

সত্যি বলতে, বাচ্চাটি পৃথিবীর জন্য না হলেও আমার জন্য ভয়ংকর। সমাজের চোখেও আমি ভিন্ন মানুষ হয়ে যাব এখন। যাই হোক, আযান শেষ, এখন সকাল হবে তাই আর ঘুমাইনি। জিনদের নিয়ে জানতে হবে আর এই বাচ্চার রহস্য বের করতেই হবে।

তাই জিনদের নিয়ে যে বইগুলো নিয়েছিলাম, তার মধ্যে একটি খুলে পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে জানলাম জিনেরাও মানুষের সাথে সহবাস করতে পারে ঘুমের মাঝেই। আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম, কিন্তু আমি যে কারণটা খোঁজার জন্য বইটা পড়ছি, সে রকম কোনো কিছুই পেলাম না।

বইটা রেখে পরিষ্কার হয়ে সকালের খাবার খেলাম। ভাবলাম আজকের সকালের দরবেশের মত লোকটির কথা বাবা মার সাথে শেয়ার করি, কিন্তু আবার ভাবলাম না, ওনারা আবার চিন্তা করবে বেশি। তবে কেমন যেন ডাক্তার আশার সাথে দেখা করতে মন চাইছিল। আমার সব ঘটনা ডাক্তার আশাকে বললে আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা উপায় বের করবে। আর না হয় অপারেশন করে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবে তাতেও তো বাচ্চাটা ধ্বংস হবে। এই পৃথিবী যে ধ্বংস করবে, তাকে যে করেই হোক ধ্বংস করাটা জরুরি।

আমি ডাক্তার আশার চেম্বারে যাওয়ার জন্য রেডি হই। বাড়িতে কাউকে না বলেই বের হই ডাক্তারের সাথে দেখা করার জন্য। সকাল ১১টার মধ্যেই চলে যাই ডাক্তার আশার চেম্বারে। গিয়ে দেখি ডাক্তার আশা নেই উনি নাকি আজ চেম্বারে বসবেন না। আমি তার চেম্বারে বসে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করি, ডাক্তার আশা এখন কোথায় আছে?

লোকটি বলল, ডাক্তার আপা তো ঢাকায় গেছে, তবে আজকে হাসপাতালে তার ডিউটি করার কথা। আপনি গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আমি ভাবলাম, হয়তো নেই আমার ভাগ্য সবসময় খারাপই হয়। তবুও চলে গেলাম হাসপাতালে তার সাথে দেখা করার জন্য। গিয়ে দেখি ভাগ্যক্রমে ডাক্তার আপু একটু আগেই আসলো। আমার ভাগ্য তাহলে আজকে ভালোই!

দেখা করি ডাক্তার আশার সাথে। ডাক্তার আমাকে দেখেই চিনে ফেলে আর রাগান্বিত হয়ে বলে, এতদিন কোথায় ছিলে? আর পরের দিনে ভর্তি হতে বলেছিলাম, হওনি কেন? আর তোমার অবস্থা খুব জরুরি। তোমাকে তারপর খুঁজেছি, কিন্তু নম্বর ছিল না, আর আমিও একটু ব্যস্ত ছিলাম, তাই যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমার বিশ্বাস ছিল তুমি দেখা করবা। এখন বলো, আসনি কেন?

আসলে ডাক্তার আপু, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল, তাই আসলে আপনার কাছে এসেছি।

বলো।এখন না, আযানের সময় বলতে হবে।

আচ্ছা ঠিক আছে। বসে থাকো, আসছি।

আচ্ছা আপু।

ডাক্তার আমাকে এই কথা বলে বাইরে গেল। আর আমি বসে আছি চেয়ারে। একটু পরে ডাক্তার আসল। আর আমাকে বলল, দিপ্তী, চলো আমার সাথে?

কোথায়?

যেখানে নিয়ে যাব, শুধু আমার সাথে আসো। তোমার কথাগুলো শুনব আযানের সময়ই।

আচ্ছা ঠিক আছে।

আমি ডাক্তারের সাথে সাথে যেতে থাকি। আমি আসলে ডাক্তারের এমন আচরণ কিছু বুঝলাম না। আমি আযানের সময় বলতে চাইলাম, কিন্তু ডাক্তার একবারও জিজ্ঞেস করল না যে কেন? এখনি বলো, কোনো সমস্যা নেই ইত্যাদি। হঠাৎ এমন কথা শুনে যেন তিনিও আমার কথাগুলো আযানের সময় শোনার জন্যই আগ্রহী, তার আগে শুনতে চান না সে ও। কিন্তু আমার জন্য উনি বাকি রোগীকে ফেলে আমাকে সাথে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। আর উনি আজকেই আসলো মাত্র, তবুও আমার সাথেই সময় দিচ্ছে।

যেতে যেতে তিনি একটি বাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ৫ তলায় উঠে ৫০৮ নম্বর রুমটা খুলে আমাকে সাথে করে নিয়ে ভিতরে ঢুকল। রুমটার চারপাশ মাকড়সার জাল দিয়ে এতটাই ভারি হয়ে ছিল যে মনে হচ্ছিল কয়েক বছর কেউ এই রুমে ঢোকে নি। রুমের ভিতর ঢুকে আর একটু সামনে গিয়ে আর একটি দরজার তালা খুলে রুমে আমাকে নিয়ে একটি চেয়ারে বসাল ডাক্তার আশা।

রুমটা প্রচুর অন্ধকার ছিল, তাই কিছু দেখা যাচ্ছিল না রুমে কি কি আছে। আমাকে চেয়ারে বসে তিনি রুমের লাইটটা অন করে দিলেন। লাইট অন করার সাথে আমি চমকে উঠি। আর বলি, এইটা কিভাবে সম্ভব? বাইরের রুমগুলো এত নোংরা, আর ভিতরের এইটা এত পরিষ্কার!

আমি ডাক্তার আশাকে যখন বলতে যাব এই পরিষ্কারের কারণ, তখন উনি আমাকে বলে, পরিষ্কারের কারণ একটু পরেই জানতে পারবে। এখন বলো তোমার রাতের ঘটনা।

এখন না ডাক্তার আপু, আযান দেওয়া শুরু করুক।

আচ্ছা ঠিক আছে, একটু পরেই আযান দেবে, প্রিপারেশন নেও।

ডাক্তারের কথা শেষ না হতেই আযান দেওয়া শুরু। আমিও আর কিছু না ভেবেই আযান শুনেই আমার ঘটনা বলা শুরু করলাম। দুই রাতের ঘটনা ডাক্তারকে বলা শেষের দিকে, কিন্তু তবুও আযান শেষ হয়নি। আমিও অত কিছু না ভেবে সব বলে দিলাম ডাক্তার আশা আপুকে।

বলা শেষে ভাবলাম, উনি কি বিশ্বাস করবেন আমার কথাগুলো? ডাক্তাররা তো আসলে এগুলো খুব একটা বিশ্বাস করে না। এগুলো শোনার পর ডাক্তার আপু আমাকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, বুঝেছি। এখন চলো, চেম্বারে যাই।

আমিও আর কিছু না বলে ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে ডাক্তার আশাকে বলি, আচ্ছা ডাক্তার আপু, আমি যে কথাগুলো বললাম, তা কি আপনার বিশ্বাস হয়েছে?

ডাক্তার আপু বিশ্বাস হবে না কেন? আসলে কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো বিশ্বাস না হলেও করতে হয়।

আমি আর কোনো কথা না বলে হেঁটেই চলছি ডাক্তারের চেম্বারের দিকে তার সাথে। হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বাজে মাত্র ১২:৪৫, এখনো তো আযানের সময় হয়নি! তখন তাহলে কে আযান দিলো? আমি ডাক্তার আশার দিকে তাকিয়ে বললাম, আপু, এখন তো বাজে মাত্র ১২:৪৫, এখনো তো আযান দেয়নি! তাহলে তখন কিভাবে কি

ডাক্তার আশা আমার কথা শুনে মুচকি হেসে দিয়ে বলে

চলবে...

৩য় পর্ব লিংক 

https//wwwthirtpartstoymayarkhela.com

নরপিচাশ ফুফি পর্ব ৩(শেষ)

 নরপিচাশ ফুফি 

পর্ব ৩(শেষ)



ডাক্তার রিয়াকে অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই ব্যস্ত, কিন্তু একজনকে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না মায়া। এত বড় ঘটনায়ও সে হাসপাতালে আসেনি।

নীলা বারবার আরিফকে বলছে, তুমি যদি বিচার না করো, আমি আইনের সাহায্য নেব।

তোমার বোন কিভাবে আমার মেয়ের সাথে এত জঘন্য কাজ করতে পারে? তুমি তো ওকে এত ভালবাস!

কিভাবে, কিভাবে, কিভাবে?

নীলা আর সহ্য করতে পারল না, অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল। নার্স এসে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিল।

জ্ঞান ফিরেই বলল, দেখছো তোমার বোন কত নিষ্ঠুর? আমার মেয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছে, আর সে দেখতেও আসল না!

আমি মায়াকে ছাড়ব না। তুমি বাধা দিলে তোমাকেও ছাড়ব না। ভুলো না তুমি আমার স্বামী!

আরিফ বলল, তোমার কিছু করতে হবে না। ওর জন্য আমি কি করিনি? আমারই মেয়ের সাথে এ কাজ!

নীলা কাঁদতে কাঁদতে অপারেশন রুমের সামনে আল্লাহকে ডাকতে লাগল, আল্লাহ, তুমি আমাকে নিয়ে যাও, আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখো।

শাশুড়িও কাঁদছেন। দশ বছর পর যখন রিয়া জন্মেছিল, মনে হয়েছিল আকাশ থেকে পরী নেমেছে। তিনি নীলাকে সান্ত্বনা দিলেন, বৌমা, টেনশন করো না। আমাদের রিয়া ফিরে আসবে।

যে এ কাজ করেছে, তাকে খুঁজে বের করব। এমন শাস্তি দেব যে আর কখনো এমন করবে না।

নীলা ভাবল, আম্মা, এ কাজ তোমারই মেয়েই করেছে। কিন্তু বলতে পারল না।

শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন, মায়াকে দেখছি না? কল করো তো?

মায়ার কল রিসিভ করল। শাশুড়ি বললেন, "তুই কোথায় রে? এখনো হাসপাতালে আসিসনি?

তোর আদরের ভাইঝি মৃত্যুর সাথে লড়ছে!

মায়া বলল, মা, আমার কাজ আছে। দ্রুত আসছি।

তোর কাজ আমার নাতনির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? সবাই কাঁদছে, আর তুই কাজ নিয়ে আছিস?

তোর ভাই তোর জন্য কত কিছু করেছে! তার খরচে তুই পড়ছিস।

তোর ভাবি দুইবার অজ্ঞান হয়েছে। তোর ভাইয়ার মুখ দেখতে পারছি না।

আমার বাসায় না যেতে হয়! যদি যেতেই হয়, তাহলে তোর খবর আছে!

শাশুড়ি কল কেটে দিলেন।

ডাক্তার অপারেশন শেষ করে বেরোলেন। সবাই ছুটে গেল।

নীলা জিজ্ঞেস করল, আমার মেয়ের কি অবস্থা?

ডাক্তার বললেন, আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সফল। কিন্তু একটা দুঃখের সংবাদ আছে।

সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে শুনল।

ক্ষত এত বেশি যে এই মেয়ে কখনো মা হতে পারবে না।

কিন্তু এই কথা কাউকে বলবেন না। বিশেষ করে মেয়েটা যেন না জানে।

খবর শুনে সবাই আল্লাহকে ডাকতে লাগল, "আল্লাহ, আমরা কি অন্যায় করেছিলাম?

নীলা জিজ্ঞেস করল, কখন মেয়ের সাথে দেখা করতে পারব?

ডাক্তার বললেন, জ্ঞান ফিরতে সকাল হয়ে যাবে। আপনারা বাইরে বিশ্রাম নিন।

আমার জীবনে এত ছোট মেয়ের এমন অপারেশন আর করিনি। অপারেশন করতে গিয়ে আমারও কান্না পেয়েছে।

যে এ কাজ করেছে, আল্লাহ তার শাস্তি দেবেন। আপনারা যা করতে চান, করুন।

ডাক্তার কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন।

নীলা আর থামতে পারল না, মাথা দেয়ালে ঠুকতে লাগল। আরিফ এসে থামাল।

তুমি ভেঙে পড়ো না। আমরা বিচার করব!

মাথা ঠোকার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে মায়ার নাম বেরিয়ে গেল। শাশুড়ি শুনে ফেললেন।

শাশুড়ি কিছু বলতে যাবেন

আরিফ বলল, আম্মা, কিছু হয়নি।

আরিফ, তুই কখনো মিথ্যা বলিস না। বৌমা কি বলছিল? মায়া কি করেছে, সত্যি বল?

আরিফ আর লুকাতে পারল না। বলল, কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না। এত বড় সমস্যা, তোমাকে বলা উচিত

এই ঘটনার সাথে জড়িত আমারই বোন মায়া।

শাশুড়ি চমকে গেলেন। "কি বলছিস আরিফ? তোর মাথা ঠিক আছে?

হ্যাঁ আম্মা, ঠিক আছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি। যখন রিয়া বলল, আর নীলা বলল, আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি।

যে বোন পর্দায় চলে, মাদ্রাসায় পড়ে, সে কিভাবে এমন করতে পারে?

আম্মা, তোমার মত আমিও চমকে গিয়েছিলাম।

আমাদের তিনটি রুম। আমরা একটিতে, তোমরা একটিতে, মায়া একটিতে।

রিয়ার বয়স ছয় বছর, তাই সে মায়ার সাথে ঘুমাতে যায়।

রিয়া খুব নম্র মেয়ে, কখনো মিথ্যা বলে না। যখন মায়া এমন করতে লাগল, রিয়া প্রথমে চুপ করে রইল।

যখন বেশি হতে লাগল, তখন সে নীলার কাছে এসে বলল। নীলা আমাকে বলল। আমি প্রথমে ভাবলাম ভুল হতে পারে, কাউকে বলো না।

এর মধ্যেই এত বড় ঘটনা ঘটে গেল।

আরিফ নিশ্চুপ হয়ে গেল। শাশুড়ি বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেলেন।

আমারই পেটে কিভাবে এমন নরপিচাশ মেয়ে জন্মাল?

কত আদর যত্ন করে বড় করেছি। যখন যেটা চেয়েছে, সেটা দিয়েছি।

আমার মেয়ে মায়া এমন করতে পারে, বিশ্বাস হচ্ছেনা।

আম্মা, আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু তুমি তো জানো, আমাদের রিয়া মিথ্যা বলে না।

সেটা জানি। আমার নাতনি আমার মতই সত্যি কথা বলে।

এর বিচার হবে। আগে রিয়া জ্ঞান ফিরুক, তারপর যা করতে হবে, করব।

আরিফ ও নীলা শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেল।

শাশুড়ির চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। "এমন মেয়ে যেন আর কারো পেটে না হয়।

আরিফ ও নীলা বোঝাতে লাগল, আম্মা, টেনশন করো না। হয়তো ভুল করেছে। ডিজিটাল যুগ, বন্ধুদের সাথে মিশে নষ্ট হয়েছে।

আমি আমার বোনকে চিনি। নিশ্চয়ই কারো প্রভাব পড়েছে। আমরা খুঁজে বের করব।

মায়া আগে ফোন চালাতো না। বলত, ভাইয়া, ফোন দিয়ে কি করব?' আমি জোর করে কিনে দিয়েছিলাম।

হ্যাঁ আরিফ, আমার মনে আছে।

কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে গেল। কেউ ঘুমায়নি।

নার্স ডাকল, রিয়ার পরিবার, আপনারা আসতে পারেন।

নীলা ছুটে গেল। রিয়া জিজ্ঞেস করল, আমি এখানে কেন?

নীলা বলল, তোমার ব্যথা হচ্ছিল, তাই হাসপাতালে আনা। তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

রিয়া সবাইকে দেখে খুশি হল। দাদীকে জিজ্ঞেস করল, দাদী, আমি কি ঠিক আছি?

দাদী কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তোর কিছু হয়নি। আমরা তোর পাশে আছি।

রিয়া বলল, দাদী, কাঁদো না। আল্লাহ আমাকে দ্রুত সুস্থ করে দেবেন।

দাদী বললেন, আমার পাগলী মেয়ে।

রিয়া জিজ্ঞেস করল, দাদী, ফুফিকে দেখছি না? সে কি হাসপাতালে আসেনি?

দাদী বললেন, ওরকম কুলাঙ্গার না আতাই ভালো।

রিয়া বলল, দাদী, তুমি কিছু বলছ না কেন?

না দিদি, তোমার ফুফি এখনো আসেনি। তবে আসবে।

নীলা রেগে বলল, তোমার ফুফি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ভুলে গেছ কি হয়েছে? আজ তুমি মৃত্যুর সাথে লড়েছ কার জন্য?

তোমার ফুফি মায়ার জন্য। আমি তার নাম শুনতেও চাই না।

শাশুড়িও রেগে বললেন, "সত্যিই বলেছে তোমার আম্মু।

আজ থেকে মনে করবে, তোমার কোন ফুফি নেই।

এমন সময় ডাক্তার এসে বললেন, আপনারা কি শুরু করেছেন? মেয়ের অপারেশন হয়েছে, ভুলে গেলেন?

পেশেন্টের সাথে বেশি কথা বলবেন না। টেনশন দেবেন না।

আমি এত ছোট বাচ্চার এমন অপারেশন আর করিনি। অপারেশন করতে গিয়ে আমারও কান্না পেয়েছে।

আপনাদের অনুরোধ, জোরে কথা বলবেন না। যদি আবার অজ্ঞান হয়, জ্ঞান ফেরাতে কষ্ট হবে।

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল।

নীলা জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম, কখন বাড়ি নিয়ে যেতে পারব?

ডাক্তার বললেন, আপনারা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। বিশ্রাম দরকার।

আমার জীবনে এমন অপারেশন এই প্রথম। দোয়া করি, রিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়।

আরিফ ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।

শাশুড়ি বললেন, বৌমা, মায়াকে কল দাও।

নীলা বলল, আমরা এখনই বাসায় যাচ্ছি, ওনার জন্য কল কেন দেব?

একটা কল দাও। ওর সাথে আমার অনেক হিসাব বাকি।

আম্মা, আপনি চুপ থাকুন। বাসায় গিয়ে ব্যবস্থা নেব।

শাশুড়ি রেগে বললেন, তোমার কিছু করতে হবে না। যেহেতু আমার মেয়ে, আমি করব।

এত বেয়াদব কোথা থেকে হল, জানতে হবে।

নীলা বলল, আপনার যেটা ভালো লাগে, করুন। কিন্তু বিচার অবশ্যই হবে।

আরিফ বলল, আম্মা, কঠোর বিচার করতে হবে। আজ আমাদের পরিবারে ঘটেছে, কাল অন্য কারো সাথে হলে মানসম্মান যেত।

হ্যাঁ আরিফ, টেনশন করো না। আমি বিচার করব।

বাড়িতে এসে দেখল, মায়া ফোন নিয়ে ব্যস্ত।

শাশুড়ি সরাসরি তার রুমে ঢুকে গালে থাপ্পর মারতে লাগলেন। তোর মত কুলাঙ্গার আমি কিভাবে পেটে ধরেছিলাম!

তুই কার সাথে কি করেছিস জানিস?

মায়া কিছু বলল না। সব বুঝতে পেরেছে।

নীলাও বলল, আমি তোমাকে ছোট বোনের মত দেখতাম। তুমি কেন আমার সাথে এ সর্বনাশ করেছিলে?

তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম?

তোমার কারণে আমার মেয়ে মৃত্যুশয্যা থেকে বেঁচে এসেছে, কিন্তু কখনো মা হতে পারবে না!

নীলা থাপ্পড় মারল।

শাশুড়ি বললেন, মারো বৌমা, মারো!

মায়া বলল, আমি বুঝতে পারিনি এতদূর যাবে। আমি সত্যি ভুল করেছি। আমাকে মেরে ফেলো!

আমার ভাইঝির সাথে এ কাজ করা ঠিক হয়নি। আমি অনুতপ্ত।

আরিফ বলল, তোর জন্য কি করিনি? তোকে দুধ-কলা দিয়ে বড় করেছিলাম!

রিয়া বলল, তোমরা আর মারো না মায়াকে। প্লিজ!

দাদী বললেন, তুই চুপ কর রিয়া। মায়া এখনই এই বাড়ি থেকে বের হবে।

কোথায় যাবে, কি করবে, জানি না। এখন থেকে ভুলে যাব আমার কোন মেয়ে নেই। এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত।

আরিফ, মায়াকে এখনই বের করতে বল।

আরিফ চুপ হয়ে রইল। সে ছোটবেলা থেকে বাবা হারিয়েছেন, সংসারের দায়িত্ব তারই।

রিয়া বলল, তোমরা যদি মায়াকে বের করে দাও, আমিও চলে যাব। তোমরা বুঝতে পারবে না।

মায়া ভুল স্বীকার করেছে। তোমরা তাকে মারছো, কষ্ট দিচ্ছো।

নীলা বলল, তুমি ছোট মানুষ, এসব কথা বলো না। সে তোমার কত বড় ক্ষতি করেছে, জানো না।

দাদী বললেন, দেখ মায়া, এই মেয়েটার ক্ষতি করেছিস, আর সে তোর সাপোর্ট করছে।

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল। শাশুড়ি বললেন, "মায়াকে আর পড়ানো যাবে না। ওর জন্য ছেলে দেখ।

আরিফ তার বন্ধুর ছোট ভাইকে প্রস্তাব করল। ছেলে পক্ষেরা এসে মায়াকে দেখল। পছন্দ হল, বিয়ের দিন ঠিক হল।

বিয়ের কিছুদিন পর মায়া বাড়ি এল। সবার পা ধরে মাফ চাইল। রিয়াকে জড়িয়ে কাঁদল।

আমার লক্ষ্মী আম্মু, তোমার সাথে আমি অনেক খারাপ করেছি। আমাকে মাফ করে দিও।

রিয়া বলল, তুমি আমার ছোট আম্মু মনে করো, কখনো ফুফি মনে করিনি।

মায়া বলল, আমার পাগলী মেয়েটা।

এই গল্প থেকে শিক্ষা আপনার বাড়িতে যদি মেয়ে বা বোন থাকে, সময়মতো তাদের যত্ন নিন। খেয়াল রাখুন তারা কোথায় যায়, কি করে, মোবাইলে কি দেখে। পর্নোগ্রাফি থেকে সাবধান! এটি একজন সাধারণ মানুষকেও খুব দ্রুত খারাপ পথে নিয়ে যেতে পারে।

আজ যেমন রিয়ার সাথে ঘটল, কাল আপনার বাড়ির কারো সঙ্গে এমন ঘটতে সময় লাগবে না!

সমাপ্তি




নরপিচাশ ফুফি পর্ব ২

 নরপিচাশ ফুফি

 পর্ব ২






আমি বললাম, মায়া, তুমি কি এখনই ঘুমাবে?

সে উত্তর দিল, না ভাবি, একটু দেরি করব।

একটা জিনিস বুঝি না, তুমি সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে কি কর?

তোমার তো পড়াশোনা আছে? তোমার বান্ধবীরা তো সবসময় পড়ায় ব্যস্ত।

তোমার ভাইয়া বলেছে, রেজাল্ট খারাপ হলে বিয়ে দিয়ে দেবে।

মোবাইল ছেড়ে পড়ায় মন দাও।আমার কথায় মায়া ঘাবড়ে গেল। সে মনে মনে ভাবল, রিয়া কিছু বলেছে কিনা।মায়া নিশ্চুপ হয়ে রইল। বলল, টেনশন করো না, আমি ভালো রেজাল্ট করব।

আমি ভাবলাম, তুমি আমার মেয়ের সাথে এ আচরণ কিভাবে কর? আমি এর শেষ দেখব!

কিছুক্ষণ পর মায়া জিজ্ঞেস করল, আর কিছু বলবেন?

না, শাশুড়ির জন্য পানের বাটা খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি।

তুমি অপেক্ষা কর, রিয়া এখনই আসবে ঘুমাতে।

আর মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে শেখিও না মায়া।

না ভাবি, আমি তো ওকে ভালো কথা বলি। পড়াশোনা করতে বলি।

আমাদের রিয়া খুব লক্ষ্মী মেয়ে, আমার কথা শোনে।

শাশুড়িকে পানের বাটা দিতে গেলে তিনি বললেন, বৌমা, আজ তুমি খুব খারাপ লাগছ কেন?

কিছু হয়নি আম্মা।

তুমি তো সবসময় হাসিখুশি থাক। আজ কেমন যেন। মায়া ঘুমিয়েছে?

মেয়েটা বই নিয়ে বসে না। আপনিই বলুন।

আপনার মেয়ে আপনি ভালো জানেন। সারাক্ষণ মোবাইলে কি করে?

শাশুড়ি বললেন, হ্যাঁ বৌমা, ঠিক বলেছ। মেয়েটা সবসময় মোবাইলে থাকে।

আমি এখন বুড়ো হয়ে গেছি। তোমার শ্বশুর কিছু বলে না। এখন শাসন না করলে মেয়েটা খারাপ হয়ে যাবে।

বৌমা, তুমি শাসন করবে, এটা আমার আদেশ।

মেয়েটা সারাক্ষণ কি করে, কিছু বুঝি না।

যদি কোন অঘটন ঘটে, আমাদের মানসম্মান সব যাবে। তুমি দেখবে।

খারাপ কাজে লিপ্ত হলে শাসন করবে।

শাশুড়ির কথা শুনে আমি খুশি হলাম। অপেক্ষায় ছিলাম।

বললাম, আম্মা, আমি রুমে যাই?

যাও বৌমা, কিন্তু আরিফের সাথে ঝগড়া করো না। সমস্যা হলে আমাকে ডাকো।

আপনি টেনশন করবেন না। পান খেয়ে ঘুমান।

আচ্ছা আমার লক্ষ্মী বৌমা।

তিনি এমন ভালো মানুষ, তাঁর পেটে এত নরপিচাশ মেয়ে কিভাবে জন্মাল!

রুমে যেতেই দেখি রিয়া ব্যথায় ছটফট করছে।

রিয়া, কি হয়েছে?

আম্মু, আমার গোপন জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথা। আর সহ্য করতে পারছি না। মরে যাচ্ছি।

বলে সে ফ্লোরে পড়ে গেল।

টেনশন করো না। আমি দেখছি। চলো ওয়াশরুমে।

রিয়া হাঁটতে পারছিল না। আমি নিয়ে গেলাম।

ওয়াশরুমে যা দেখলাম, আল্লাহ! আমার মেয়েকে বাঁচাও!

আগে শুধু শুনতাম, আজ দেখে মন ভেঙে গেল।

জায়গাটা একদম ইনফেকশন হয়ে গেছে। রক্ত পড়ছে। কি করব বুঝতে পারছি না।

রিয়া কান্না করতে করতে বলল, "আম্মু, আমাকে বাঁচাও। ব্যাথা সই না।

ফুফি একটা পচা। সে রোজ রাতে ব্যথা দিত।

বলতাম, ফুফি আর ব্যথা দিও না। সে বলল, ভালো লাগবে, চুপ কর।

আর গালি দিত। ভয় দেখাত, কাউকে বলতে দেবে না।

আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। আরিফকে ডাকলাম। কিন্তু সে সাড়া দিল না। রাত হয়েছে, সকালে তার ডিউটি। অনেক ডাকার পর সাড়া দিল।

কি হয়েছে রিয়ার আম্মু?

আরিফের কথা শুনে নীলা জবাব দিল না। তার মেয়ে রিয়া নিয়ে চিন্তায় সে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

সাড়া না পেয়ে আরিফ দ্রুত ওয়াশরুমে গেল। দেখল রিয়া এবং নীলা দুজনই বেহুশ।

আরিফ চিৎকার করল। তার বাবা মা ছুটে আসলেন। দেখলেন বৌমা এবং নাতনি বেহুশ।

অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। রিয়া এবং নীলা হাসপাতালে নেওয়া হলো।

ডাক্তার বললেন, রিয়াকে ইমারজেন্সি অপারেশন করতে হবে।

নীরার জ্ঞান ফিরল। সে জিজ্ঞেস করল, আমার মেয়ে রিয়া কোথায়? সে ঠিক আছে?

হ্যাঁ, ঠিক আছে। টেনশন করো না।

নীলা আবার জিজ্ঞেস করল, আমি রিয়াকে দেখতে চাই।

সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, তোমরা সবাই মিথ্যা বলছ। আমার মেয়ে ভালো নেই।

আমার মেয়ে বাঁচবে তো? কারো ক্ষমা করব না।

আরিফ বলল, টেনশন করো না। আমাদের মেয়ে ঠিক আছে। কোথায় আছে? নিয়ে যাও।

নীলাকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে নিয়ে গেল। বলল, "ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করতে হবে। ইনফেকশন হয়েছে। না করলে বড় সমস্যা হবে।

রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। প্লিজ নীলা, আল্লাহকে ডাকো।

আল্লাহ যেন আমাদের মেয়েকে নেক হায়াত দান করেন।

বিচার বাড়িতে করব। আমার বোন বলে পার পাবে না। কঠিন শাস্তি দেব।

আমার বোন হয়ে ভাইয়ের মেয়ের সাথে এ কাজ কিভাবে করে? এবার শেষ দেখব।

সে আমার বোন, ভুলব না। এত ছোট বাচ্চার সাথে যৌন হয়রানি কিভাবে করে? বিবেকে বাধে নি?

ওকে সবচেয়ে আদর করতাম। যখন যা চেয়েছে, দিয়েছি। কোন অভাব রাখি নি।

সে আমার ছোট বোন। বাবা মায়ের আদরের মেয়ে। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি দেখেছি।

বোন নয়, মেয়ের মত বড় করেছি। মায়াকে সবসময় আগলে রেখেছি। জেনারেল স্কুলে ভর্তি করি নি।

মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। পর্দা করতে বলেছি।

সেই বোন পর্দার আড়ালে এত খারাপ হতে পারে, কল্পনাও করতে পারি না।

প্লিজ নীলা শান্ত হও। আমি এর শেষ দেখব।

ইতিমধ্যে বাবা মা জেনে গেছেন রিয়ার অবস্থা। মা খুব রেগে আছেন।

মা বলছেন, আমার নাতনির সর্বনাশ কে করেছে? তার নাম শুনতে চাই।

আমি এখনো কিছু বলি নি। বললে মা কষ্ট পাবেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করো, মেয়ে যেন সুস্থ হয়।

ডাক্তার নীলাকে ডাকলেন। রিয়ার অপারেশন একজন মহিলা ডাক্তার করবেন।

নীলা ডাক্তারের সাথে দেখা করল।

ডাক্তার কিছু প্রশ্ন করলেন।

ম্যাডাম, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব?

জি, অবশ্যই। কিন্তু আগে বলুন, আমার মেয়ের এখন কি অবস্থা?

ডাক্তার রাজিয়া বেগম বললেন, এত বড় জঘন্য কাজ কে করেছে? আপনারা জানেন?

যে করেছে, সে নরপিচাশ ছাড়া কিছু নয়। একজন মানুষের এত নিষ্ঠুর হতে পারে না।

মেয়েটার কান্না দেখে আমার চোখে পানি আসে। এত ছোট মেয়ের সাথে কিভাবে করল?

আপনারা থানায় জিডি করেছেন?

নীলা বলল, ডাক্তার সাহেব, এটা আমাদের নিজেদের মানুষ। আগে মেয়ে সুস্থ হোক। তারপর বিচার হবে।

আগে বলুন, আমার মেয়ের কি অবস্থা?

ডাক্তার বললেন, ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই অপারেশন করতে হবে।

ইনশাআল্লাহ আপনার মেয়ে ভালো হয়ে ফিরে আসবে।

ডাক্তার রাজিয়া বেগমের কথা শুনে নীলার চোখে পানি আসল। সে অনেক টেনশনে ছিল। ভাবছিল, মেয়ের কিছু হলে

ডাক্তার বললেন, আপনার মেয়েকে এখনই অপারেশনে নিয়ে যাব। আল্লাহকে ডাকুন।

আমরা শুধু ডাক্তার, বাঁচানোর মালিক আল্লাহ।

নীলা বললেন, আমার এই মাসুম বাচ্চাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে দেবেন।

ডাক্তার রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলেন!

সম্পূর্ণ গল্পটি নাটক আকারে দেখুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে

https://www.youtube.com.php?id=61573122160874

৩য় পর্ব লিংক 

লিংকে ক্লিক করে ৩০ সেকেন্ড ওয়েট করলে তৃতীয় পর্ব ওপেন হয়ে যাবে

https://www.thritpart.nopicshapupi.com





গল্প তুমি_আমি সাহিত্য ডাইরি পর্ব_২,৩,৪(শেষ)

 

গল্প তুমি_আমি  

সাহিত্য ডাইরি  

পর্ব_২


" তোর এত্তো বড় কলিজা,আমার বোনের শরী"রে বাজে ভাবে স্পর্শ করিস?তোর কি অবস্থা করি দেখ শুধু "


বড়দার এমন কথায় আমার মাথায় র'ক্ত উঠে গেলো।দিয়ার দিকে তাকালাম,দিয়া সমানে কেঁদে যাচ্ছে।লক্ষ্য করলাম ওর বু'কে ওড়না নেই।ছিহ!সামান্য চ"ড় মা"রায় দিয়া এরকম বাজে ভাবে অনুপকে সবার সামনে হেনস্তা করবে? 


বড়দা অনুপের গা"লে আরেকটা চ"র বসিয়ে দিলো।আমি গিয়ে প্রচন্ড ধাক্কায় বড়দার থেকে অনুপকে সরিয়ে নিলাম।ইতোমধ্যে বাবা মা দু'জনেই ঘরে ঢুকলো।বাবা ধমক দিয়ে বললো 


" কি হইছে এখানে?দিয়া কাঁদছে কেন? "


দিয়া বাবাকে জরিয়ে ধরে মিথ্যা কান্নার অভিনয় করতে লাগলো।আমি শুধু দেখছি,নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।বড়দা বাবাকে বললো 


" ওই শয়তানরে আজ আমি মে"রেই ফেলবো "


বাবা বললো " কি করছে ও "


দিয়া ফুপিয়ে কেঁদে বললো " জামাইবাবু আমার বু"কে বাজেভাবে হাত দিয়েছে।আমি বাঁধা দেওয়ায় চ"ড় মে"রেছে "


দিয়ার অভিনয়ে আমার পায়ের র"ক্ত মাথায় উঠে গেলো।দিয়ার দিকে তেড়ে যেতেই বড়দা আমার বাঁধা দিয়ে বললো 


" কেমন ছেলেকে ভালোবেসেছিস? মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।শ্যালিকাকেও ছাড়লো না।ওর কলিজা কুত্তাকে খাওয়াবো আমি "


আমি কিছু বলবো তার আগেই অনুপ আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো " রুপা এখান থেকে চলো " 


আমি বিস্মিত হয়ে বললাম " চলো মানে?ওরা ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকবে নাকি? আর দিয়াকে আমি ছেড়ে দিবো ভেবেছো?দেবতা তুল্য একটা মানুষকে নিয়ে নোংরা কথা বলতে ওর একটুও মুখে বাঁধছে না? "


অনুপ আমায় সরিয়ে নিয়ে বড়দার সামনে হাত জোর করে বললো " দাদা,আপনাকে আমার আর বলার কিছু নেই।শুধু দিয়ার কথার উপর ভিত্তি করে আপনি আমার গা"য়ে হাত তুলে আমায় চরম অপমান করলেন "


বড়দা বললো " অপমানের দেখছোস কি?তোরে তো....! "


একথা বলে বড়দা আবারো তেড়ে এলো অনুপের দিকে।বাবা থামিয়ে দিয়ে বললো " হৈচৈ করো না।ঘরের কথা ঘরেই থাক।আর রুপা মা,তোকে হাজারবার বলেছিলাম এই ছেলের চরিত্র খারাপ আছে।অবাধ্য হয়ে বিয়ে করলি। আজ দিয়া...."


বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম " আসল চরিত্রহীন তো তোমরা বাবা "


বাবা গম্ভীর হয়ে বললো " আমরা চরিত্রহীন?"


" হ্যা।দিয়া কি না কি বললো আর বড়দা এসে মা"রতে শুরু করলো? একটা বার জানার ও চেষ্টা করলো না দিয়া সত্যি বলছে না মিথ্যা! "


বড়দা বললো " কি করতে হবে সেটা তোর থেকে শুনে আমায় করতে হবে নাকি? "


অনুপ শুধু দিয়াকে বললো " এমনটা না করলেও পারতে "।বাবা বড়দাকে বললো " অনেক রাত হইছে।আশপাশের লোকজন যেন না জানে।হৈচৈ করো না।যাও ঘরে যাও "


সবাই চলে যাওয়ার পর অনুপ আমার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললো " রুপা আমি বাড়িতে যাবো।তুমি আমার সাথে আসবে না কাল আসবে? "


" এখানে আর এক মুহুর্ত না।আমার স্বামীকে যেখানে এভাবে অপমান করা হলো সে বাড়িতে আমি আর পা রাখবো না "


সে রাতেই বাড়ি চলে আসলাম।সারা রাস্তা অনুপ একটা কথাও বলেনি।লোকটা একসব নুইয়ে পড়েছে।ওর শুকনো মুখ দেখে আমার বু'ক হাহাকার করে উঠলো।ইচ্ছে করছিলো যদি সম্ভব হতো তাহলে দিয়াকে খু"ন করে আসতাম।


বিছানায় শুয়ে অনুপ বারবার এপাশ ওপাশ করছে।যে ছেলেকে সামান্য একটু জোরে কথা বললেই অপমানবোধে ছটফট করে সেই ছেলেকে আজ কতই না অপমানিত হতে হলো! তাও এরকম নোংরা একটা ইস্যু নিয়ে।


অনুপের চুলে হাত বুলাতে ওর মাথায় হাত রাখার চেষ্টা করলাম।অন্ধকারে হাতটা ওর গা"ল স্পর্শ করলো।গা"ল ভেজা। বুঝতে পারলাম অনুপ কান্না করছে।আধশোয়া হয়ে বসে অনুপকে বললাম 


" একটু উঠে বসো তো "


অনুপ শোয়া থেকে উঠে বসলো। আমার কোলে ওর মাথা রেখে চোখের জল মুছে দিলাম। চুলে বিলি কে'টে দিতে দিতে বললাম " দিয়া এরকম জঘন্য একটা কাজ করবে আমি ভাবতেই পারছি না "


অনুপ বললো " দাদা আমাকে একটা বার বলতেও তো পারতো!ওনারা কি আমায় এতটুকুও বিশ্বাস করে না? "


রুপা ধরা গলায় বললো " ও বাড়ির কারোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই "


অনুপ আমার কোলে মাথা রেখে বাচ্চা ছেলের মতো অনেক্ক্ষণ কাঁদলো।এক সময় এসে ঘুমিয়ে পড়লো।কিন্তু আমি ঠিকই জেগে রইলাম।অনুপ ভিষণ ইমোশনাল।এই অপমানিত হওয়ার দা"গ এতো সহজে ওর মন থেকে যাবে না।দেখা যাবে মাঝরাতে উঠে ভুলভাল কিছু একটা করে বসবে।সারারাত অনুপকে জরিয়ে ধরেই বসে রইলাম।ঘুমের ঘোরে অনুপ বিরবির করে বললো " রুপা আমি এটা করিনি,আমি এটা করিনি, করিনি "


রুপা মনে মনে বললো,সেটা আমি জানি অনুপ।ওখানে আমি উপস্থিত না থাকলেও কখনই বিশ্বাস করতাম না এমন নোংরা একটা কাজ তুমি করতে পারো।আমিতোমায় বিশ্বাস করি।তুমি কেমন সেটা তুমি না বললেও আমি ভালোভাবেই বুঝি।


দিয়া যে এতোটাও নিচে নামতে পারে আমার জানা ছিলো না।ভেবেছিলাম যা হয়েছে সেখান পর্যন্তই বিষয়টা থেমে যাবে,কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।


পরেরদিন কিছুটা বেলা গড়াতেই বাড়িতে একজন পুলিশ এলো।অনুপের থেকেও আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম।দিয়া কি অনুপের নামে কে"স করে দিয়েছে? অনুপের ক্যারিয়ার,তার থেকেও বড় কথা,ওর দিদির সংসার ভাঙ্গতে ওর একটুও খারাপ লাগছে না? তাও আবার সম্পুর্ন ভুল একটা ইস্যুকে ভিত্তি করে! 


তবে কি আমাদের সুখের সংসারটা এখানেই তচনচ হয়ে যাবে?


চলবে?


গল্প তুমি_আমি  

সাহিত্য ডাইরি  

পর্ব_৩


দিয়া অনুপের নামে নারী নি"র্যাতনের মামলা করেছে শুনে বড্ড আ"হত হলাম।


সামান্য একটা চ"রকে ভিত্তি করে মাম"লা করে দেওয়ার মতো একটা কাজ দিয়া করতে পারে ভেবে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।


সোফায় বসে যে পুলিশ চা খাচ্ছে সে আমার দেবর।অনুপের কাকাতো ভাই অপু।অপু চায়ে চু'মুক দিয়ে বললো


" বউদি,চা টা অনেক সুন্দর হইছে "


অনুপ বললো " দিয়া আমার নামে মামলা করছে? "


অপু ভাবলেশহীন ভাবে বললো " হু "


" স্টেটমেন্ট কি দিছে? "


" কি আবার দিবে, তুমি ওনার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিলো সেটাই "


অনুপ মাথার চুল টানতে টানতে বললো " আমি এসব করিনি অপু "


অপু রুপার দিকে তাকিয়ে বললো " বউদি আরেক কাপ চা খাওয়াবে? "


রুপা গেলো চা আনতে।অপু বললো " আমার তো মনে হয় এই ঘটনা পেপারে ছাপানো হবে।সাংবাদিকরা অপেক্ষা করে থাকে ধর্ষ"নের খবর পাওয়ার জন্য।সামান্য লিগ পেলেই এটা নিউজ ছাপিয়ে দেয় "


অনুপ গম্ভীর মুখে বললো " তাহলে তো আমার মুখ দেখানোর যায়গা থাকবে না "


" আর মামলা খেলে তো চাকরিটাও থাকবে না "


" তোর কি মনে হয় আমি এসব করেছি? আমায় তো তুই চিনিস "


" দাদা কি যে বলো তুমি।আমি তো তোমায় জানি,কিন্তু লোকতো না জেনেই নাচবে। যাইহোক আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা "


কথাবার্তার এই পর্যায়ে রুপা এলো চায়ের কাপ নিয়ে।অপুর হাতে চা দিতে দিতে বললো 


" অপু তুমি কিছু একটা করো,অনুপ এসবের কিছুই করেনি।আমি উপস্থিত ছিলাম ওইসময়ে "


" বউদি আমার কথাটা শুনো।এমন মেয়েলী কে"সে এভিডেন্সের চেয়েও দিয়া বেয়াইনের কথার উপর ভিত্তিটা বেশি দেয়া হবে।আচ্ছা দেখা যাক কতদূর যায় বিষয়টা "


অপু চলে গেলো।অপুকে আসতে দেখে অনুপের বাবা,মা বেশ অবাক হলো।কারণ অপু ডিউটি সময়ে কখনো বাড়িতে আসেনা।তটস্থ হয়ে বাবা অনুপকে বললো


" অপু এসছিলো কেন?কার কি হইছে? "


অনুপ বিষয়টা আড়াল রাখার জন্য বললো " কিছু হয়নি বাবা।এমনিই এসছিলো "


" মেয়েলি কে"সের কথা বলছিলো শুনলাম "


" ওসব কিছু না বাবা "


বাবা আর কিছু বললো না,ঘরে চলে গেলেন।তার মধ্যে জানার আগ্রহ অনেকটা কম।রুপা গিয়ে অনুপের পাশে বসলো।মৃদু স্বরে বললো


" আমার মনে হয় কি জানো? দিয়া এতোটা সাহস একা একা পায়নি,এখানে বড়দার হাত আছে "


" যেমন? "


" দাদা তোমায় এখনো মেনে নিতে পারেনি।ওর অমতে বিয়ে করেছি, বিষয়টা ও এখনো মনে রেখেছে "


" আমি এসব ভাবতে পারছি না।আর ওরা চাইলো মা"মলা করলো আর হয়ে গেলো নাকি? সবকিছু এতোই সহজ? "


" তুমি কলেজে যাবে না?আজ কয়টা ক্লাস আছে? "


" একটা আছে।রান্না করছো? "


" এসব ঝামেলায় রান্না করতেই ইচ্ছে করছে না "


" কিসের চিন্তা! চলো দু'জনে মিলে রান্নাটা করে ফেলি "


রুপা আহ্লাদী স্বরে বললো " বাবার বাড়ি যাওয়ার আগের রাতে ময়দা আমি মেখে দিছি।রুলস অনুযায়ী আজ তোমার পালা "


অনুপ গাল ফুলিয়ে বললো " হু হু জানি।চলো "


দুজনে গেলো রান্নাঘরে।অনুপ ময়দা মাখলো,সেগুলো গুটিগুটি করে রুটি বেলে দিচ্ছে আর রুপা রুটি ভাজছে।দু'জনার মুখ,গা ভর্তি ময়দার আস্তরণ।ময়দা যুদ্ধটা অনুপ'ই আগে শুরু করেছিলো।


সন্ধায় অনুপ, রুপা দু'জনে বসে টিভি দেখছে।কলিংবেল বেজে উঠলো।রুপা গিয়ে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দিয়া রুপার পা চেপে ধরলো।হু হু করে কান্না করতে করতে বললো 


" দিদি আমায় মাফ করে দে প্লিজ,আমি অনেক জঘন্য একটা কাজ করছি।জানি তুই আমায় কখনো মাফ করতে পারবি না,কিন্তু আমি সত্যিই এজন্য লজ্জিত রে দিদি "


রুপা দেখলো শুধু দিয়া না,তার দাদা,বাবা দুজ'নই এসছেন।রুপা দিয়ার থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো 


" তোর বলা শেষ হলে চলে যা "


রুপার দাদা গম্ভীর মুখে বললো " রুপা,বোন আমার আমার ভুল হইছে,আমি তো....."


রুপা কথা থামিয়ে দিয়ে বললো " আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছি না "


অনুপ ও দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। অনুপকে দেখে দিয়া রুপার পা ছেড়ে অনুপের পা জরিয়ে ধরে বললো 


" জামাইবাবু আমায় প্লিজ মাফ করে দাও।আমি বুঝতে পারিনি এতোকিছু হয়ে যাবে।রাগের মাথায় এসব করে ফেলছি।প্লিজ জামাইবাবু আমায় মাফ করে দাও "


অনুপ দিয়ার থেকে পা ছাড়িয়ে নিয়ে রুপার দিকে তাকালো।রুপা,অনুপ দুজনেই বেশ বুঝতে পারলো অপু ওদের মোটামুটি একটা চাপ দিয়েছে।


অনুপ রুপাকে সাইডে ডেকে এনে বললো " আমার কিছু বলার নাই।তোমার যদি মনে হয় ওদের ক্ষমা করে দেয়া উচিত তাহলে ক্ষমা করে দিবো "


রুপা বেশখানিকটা সময় ভাবলো।তারপর দরজার কাছে গিয়ে যা বললো সেটা শুনে অনুপ বিস্মিত হয়ে রইলো।আজ যেন সে রুপাকে নতুন রুপে দেখতে পাচ্ছে, যার সাথে আগের রুপার কোনো মিল নেই....... 


চলবে?



অন্তিম_পর্ব


রুপা গিয়ে ওর দাদাকে কঠিন স্বরে বললো " তুমি যে কাজটা করছো সেটার জন্য অনুপ তোমায় ক্ষমা করে দিলেও আমি দিবো না।ভেবে নাও আজ থেকে তোমার কোনো বোন নেই "


রুপার দাদা বিস্মিত হয়ে বললো " তার মানে? আমি বড় দাদা হয়ে একটু শাসন করতে পারবো না? এরজন্য এতো বড় বড় কথা শুনিয়ে দিলি? "


" হ্যা দিলাম।এটাকে শাসন বলে না।শাসন করতে হলে আগে ঠিক ভুল বিচার করতে হয় "


" আমি কিকরে বুঝবো দিয়া একটা সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে এভাবে বাড়িয়ে বলবে "


" দেখো দাদা আমি আর কথা বাড়াতে চাই না।আর হ্যা,তুমি যে অনুপকে আগে থেকেই সহ্য করতে পারো না সেটা আমি বুঝতে পারি।তুমি এতেদিন শুধু অপেক্ষা খুজছিলে ওকে ফাঁদে ফেলার,প্রতিশোধ নেওয়ার।দিয়ার পেছনে তুমিই কলকাঠি নাড়িয়েছো সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানেনা।আরো কিছু বলার আগে তোমরা আমার চোখের সামন থেকে দুর হও " 


দাদা চরম অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে বললো " আচ্ছা যাচ্ছি।বাবা এতোটা পথ জার্নি করে এসছে,অন্তত বাবাকে একটু বসা! "


রুপা আগের থেকেও কঠিন স্বরে বললো " ও বাড়ির কারোর সাথে আমার সম্পর্ক নেই।বাবাও সে সেরাতে ছিলো,কই কিছুই তো বললো না।উল্টো অনুপকে বিয়ে করা আমার ভুল হয়েছে সেটা নিয়ে খোটা দিয়েছিলো।আমি ভুলে গেছি আমার কোনো পরিবার ছিলো!তোমরাও ভুলে যাও "


একথা বলে রুপা খট করে দরজা বন্ধ করে দিলো।অনুপ রুপার কাঁধে হাত রেখে বললো


" ওনারা যখন ভুল বুঝতে পেরেছে তখন সবটা মিটিয়ে নিতে পারতে! "


" তোমাকে যেভাবে অপমান করলো তারপর মিটিয়ে নেওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। উল্টে আমি ওদের সবার নামে মান হানির মা"মলা ঠুকে দিবো "


অনুপ বুঝতে পারছে রুপা যথেষ্ট রেগে আছে।রেগে গেলে মেয়েটার মাথা একদম ঠিক থাকে না।তখন যা না তাই বলতে থাকে।


রাতে শুতে গিয়ে অনুপ লক্ষ্য করলো রুপা বিছানার এক কোনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।তখন দাদার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য হয়তো মন খারাপ হচ্ছে।মেয়েদের মধ্যে এই মায়া বিষয়টা প্রবল ভাবে থাকে।রুপার হাত স্পর্শ করতে রুপা একটু কেঁপে উঠলো।বিছানা ছেড়ে ধরপর করে উঠে বসলো।অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে বললাম 


" মন খারাপ লাগছে? "


রুপা চোখের জল মুছে বললো " হু "


" দাদাকে তখন ওভাবে বলা উচিত হয়নি।যতোই হোক,ছোট বোন এভাবে বড় ভাইকে বললে মন খারাপ তো হবেই "  


রুপা অনুপকে জরিয়ে ধরে বললো " আমার মাথা ঠিক ছিলো না।আর তাছাড়া আমি ভুল কিছু তো বলিনি,দাদা তোমার সহ্য করতে পারে না এটা তো সত্যি তাই না? "


" না সত্যি না "


রুপা থতমত খেয়ে বললো " সত্যি না মানে?তুমি কি ভুলে গেলে আমাদের বিয়ে নিয়ে দাদা কি অশান্তিটাই না শুরু করেছিলো "


" বিয়ে ঠিক হওয়া একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেলে সব দাদারাই অশান্তি করে।এতে দোষের কিছু নেই।তাছাড়া তোমার পড়াশোনা,যাবতীয় সব বিষয় তো দাদাই দেখেছেন।বিয়ের মতো একটা বিষয়ে তুমি তার অমতেই করে ফেলবে এটা তার সহ্য হওয়ার কথাও না "


" তুমি কি বলতে চাচ্ছো? "


" আমি বলতে চাচ্ছি যা হয়েছে সেটা মিটিয়ে নেওয়া ভালো।তবে এটা ঠিক যে উনি ওইরাতে না জেনেই আমার গায়ে হাত তোলাটা অন্যায় করছেন।শেষে ভুল তো বুঝতে পেরেছে তাই না "


" তুমি এরকম কেন?এতো সহজে সবটা ভুলে যাও কি করে? "


উত্তরে অনুপ হাসলো।অনুপের হাসি দেখে পুরো বিষয়টা রুপার কাছে হালকা মনে হতে শুরু করলো।অনুপ বললো 


" রান্নাঘরে চলো।খুব খিদে পাইছে " 


রুপা রান্নাঘরে কাছে যেতেই ভেতর থেকে টুংটাং আওয়াজ শুনতে পেলো।দরজার কাছে যেতেই রুপার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।দেখলো রান্নাঘরে ওর দাদা রান্না করছে।রুপাকে দেখে ওর দাদা বললো 


" রুপা,এক কাপ চা করে দে তো। মাথাটা খুব ধরেছে বুঝলি "


কথাটা এমন ভাবে বললো যেন এর আগে কিছুই হয়নি।রুপা একপলক অনুপের দিকে তাকালো।অনিপ অভয় দিতেই রুপা চায়ের পাতিলটা চুলায় দিতেই রুপার দাদা রুপার হাত ধরে বললো 


" আমায় ক্ষমা করে দে বোন।ব্যবসাটা খারাপ যাচ্ছে,মাথা ঠিক নেই।তারমধ্যে দিয়া এসে এমন সব কথা বললো যে রাগ সামলাতে পারিনি।নিজেই নিজের কাছে বড্ড ছোট হয়ে গেছি রে।বাবা খুব মন খারাপ করেছে,বলেছে তোদের বাড়ি নিয়ে যেতে।বড়দার ভুলটা মাফ করে দিবি না বোন? "


রুপার চোখ ভর্তি জল চলে এলো।অনুপ দরজার কাছে দাড়িয়ে।রুপা অনুপের দিকে তাকালো।অনুপ হ্যাসূচক মাথা নাড়াতেই রুপা দাদাকে জরি"য়ে ধরলো।


-----------সমাপ্ত-----------------


হলুদ_শহরের পর্ব_২ সাহিত্য ডাইরি

হলুদ_শহরের 

পর্ব_২

সাহিত্য ডাইরি 




নিপুণ এক ব্যাগ বাজার নিয়ে বের হতেই দেখতে পেল কিছুটা দূরে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্ত। চোখ-মুখ ফুলে কিছুটা লাল হয়ে আছে, যেন ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানেই এসেছে। নিপুণ সুপ্ত'র দিক থেকে নজর সরিয়ে নিজ পথে হাঁটা ধরল।

সুপ্ত শাহবাগ থেকে ফিরেছে আটটা নাগাদ। মিনহাজ সাহেব ফজরের সময়ই তার ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হতেই দেখে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির দিকে আনমনে চেয়ে থাকার সময়ই হঠাৎ তার মাথায় শাহবাগ যাওয়ার ভূত চেপেছিল। বাবাকে ছাতার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দীপককে কল করে মসজিদের সামনে আনায়। ঘুম চোখে দীপকও ছুটতে ছুটতে এসে ব্যস্ত কণ্ঠে বলেছিল, 

--"কীরে? ইমার্জেন্সি ডাকলি কেন?"

সুপ্ত তখন বলেছিল,

--"শাহবাগ যাব, ফুল আনতে। চল।"

দীপকের তখন পুরো জন্মের রাগ একসাথে জড়ো হয়েছিল সুপ্তকে ঝাড়ার জন্য। শালা ফুল কিনতে যাওয়ার জন্য দীপকের এত সাধের ঘুমে জল ঢেলে দিলো? ফুল আনা কোনো ইমার্জেন্সি কাজের মধ্যে পড়ে? দীপকের ইচ্ছে হচ্ছিল বড়োসড়ো পাথর দিয়ে সুপ্তের মাথা ফাটিয়ে দিতে৷ দীপক অবশ্য থামেনি, পুরোটা পথ সুপ্তকে সে বকেই গেছে। আর সুপ্ত? সে তো যেন কোনো কথা কানেই নেয়নি। ময়লা ঝাড়ার মতো করে দীপককে এড়িয়ে গেছে। 

ফেরার পর সুপ্ত বাসায় গিয়ে ঘুম দিয়েছিল। আর দীপক মুখ ভার করে রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেরিয়েছে। তার চোখে এই বেলায় আর ঘুম ধরা দিলো না। হাঁটা-চলার মাঝেই দীপক নিপুণকে দেখতে পেয়েছিল বাজারে যেতে। তখনই দীপক নিজের মনের ঝাল পুরো দমে মেটানোর পরিকল্পনা পেল। সুপ্তকে কল দিয়ে বাজে ভাবে তার কাচা ঘুম ভেঙে দেয়। সুপ্ত যখন ঘুম ভাঙার অপরাধে দীপককে গা*লি দিলো তখন দীপক যেন সমস্ত জগতের শান্তি নিজের ভেতর খুঁজে পেল। গালির চাইতে কারো ঘুম ভাঙানোর মতো পৈশাচিক আনন্দ আর কী-ই বা হতে পারে?

সুপ্তও চটে ছিল বেশ। পরপর দুবার তার ঘুমে ব্যঘাত ঘটেছে। দীপক অবশ্য বেশি সময় নেয়নি সুপ্তকে নিপুণের ব্যাপারে জানাতে। সুপ্ত নিপুণের কথা শুনে দমে যায়। ছুটতে ছুটতে চলে আসে বাজারের সামনে। সুপ্তর উষ্কখুষ্ক অবস্থা দেখে দীপক পেটে হাত চেপে হাসছিল। প্রেমে পড়লে বীরের মতো পুরুষরাও বেড়াল বনে যায়। প্রেমের কতটা শক্তি যে একজন কঠিন মানুষকে সরল করে ফেলে। 

নিপুণ সুপ্তর পাশ কেটে যেতে নিতেই সুপ্ত তাকে শুনিয়ে বলল,

--"একজনকে জানাচ্ছি শুভ সকাল। তাকে রোদহীন ম্লান দিনে সুন্দর লাগছে।"

নিপুণের পা থমকে যায় সুপ্ত'র কথা শুনে। কথাটা যে তাকে বলা হয়েছে তা নিপুণ হাড়ে হাড়ে বুঝে নিয়েছে। সে পিছ ফিরে সুপ্তের দিকে তাকালো। সুপ্তের ফোলা চোখ তখনো নিপুণের দিকে। নিপুণ চাইতেই সুপ্ত খোলা এক হাসি দিলো। নিপুণ বলে ওঠে,

--"সমস্যা কী আপনার?"

সুপ্ত অবাক হওয়ার ভান ধরলো। বলল,

--"আমার সমস্যা? কিসের, কোথায়?"

--"তাহলে প্রথমে ফুল আবার এখন আমাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলা, এসব কী?"

--"ফুল আমি দিয়েছি, এটা ঠিক। তবে আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলেছি.. এর প্রমাণ কী? দীপক, আমি রিপোর্টার ম্যামকে কিছু বলেছি?"

দীপক হ্যাবলার মতো চেয়ে ছিল সুপ্ত'র দিকে। হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। তা দেখে সুপ্ত বলল,

--"যাহ, বাদ দে। তুই তো থাকিস অন্য খেয়ালে। নিপুণ, তুমি চাইলে ফ্রিতে তোমার বাড়ি অবধি বাজারের ব্যাগ পৌঁছে দিতে পারি।"

নিপুণ এতে কিড়মিড় চোখে তাকালো সুপ্তের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"আপনার মতো মানুষের থেকে উপকার পাওয়ার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই আমার নেই।"

নিপুণ চলে যেতে নিলে সুপ্ত পিছু ডাক দিয়ে বলল,

--"আমি কিন্তু থ্যাঙ্কিউ পাওনা আছি।"

নিপুণ থেমে পিছে ফিরে ভ্রু কুচকে তাকায়। সুপ্ত কিছু বলতে নিলে নিপুণ এবার আর না দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে যায়। নিপুণের সুপ্তকে এড়িয়ে চলা দেখে দীপক বলল,

--"তোকে তো পাত্তাই দেয় না।"

সুপ্ত একমনে নিপুণের যাওয়ার পানে চেয়ে আনমনে বলল,

--"এজন্যই তো তাকে ভালোবাসি।"

--"ডিভোর্সি মেয়ে তো তুই ডিজার্ভ করিস না সুপ্ত!"

সুপ্ত এবার চোখ লাল করে তাকালো দীপকের দিকে। সুপ্তের রাগ দেখে দীপক দমে গেল। সুপ্তের সামনে কিছুতেই "ডিভোর্সি" শব্দটা উচ্চারণ করা যায় না। সুপ্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"আর কখনো যাতে তোর মুখে এই শব্দ না শুনি।" 

সুপ্ত থেমে আবার বলল,

--"আজকে পার্টি অফিসে কোনো ঝামেলা নেই। এজন্য সাড়ে বারোটার আগে ভুলেও কল দিবি না। এবার কল করলে তোর হাতের ফোন ভাঙাচোরা অবস্থায় পাবি, গুড নাইট।"

সুপ্তের পুরো নাম মাহদী আরাভ সুপ্ত। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান সে। বাবা মিনহাজ সাহেব ব্যবসায়ী এবং তাদের থানার এক স্কুলের কমিটিতে আছে। সুপ্তের বড়ো ভাই মাহমুদ বিবাহিত, এখন অন্যত্র থাকছে চাকরির সুবাদে। মাহমুদ শুরু থেকেই কিছুটা ভীত এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ৷ আর সুপ্ত একদমই মাহমুদের বিপরীত। সে চরম ঝামেলা করার অদম্য সাহস নিয়ে জন্মিয়েছে। ঝামেলা, মাত্রাতিরিক্ত সাহস আর মুখ চালানোতে ভীষণ পটু সে। সুপ্ত চাকরি, ব্যবসার প্রতি ভীষণ উদাসীন। তবে উদাসীন ছেলেটার একটি স্বপ্ন ছিল; রাজনীতি করার। এজন্য ছাত্র বয়স থেকেই সে রাজনীতির সাথে একপ্রকার আঠার মতো লেগে আছে।

 মিনহাজ সাহেব একজন সৎ, শান্ত, নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। কিন্তু এই শান্ত মানুষের ঘরেই অসংখ্য বিচার এসেছে ছোটো ছেলের নামে। সুপ্ত বরাবরই অবাধ্য, চঞ্চল স্বভাবের ছেলে। তার মধ্যে আলাদা এক তেজ ছিল, যেই তেজের তীক্ষ্ণ ছায়াও কেউ মাড়াতে পারত না। মিনহাজ সাহেব যা অপছন্দ করেন সেটাই সুপ্ত আজীবন করে গেছে। আবার রাজনীতি বিষয়টাও তিনি ভীষণ অপছন্দ করেন। যতদিনে ছেলের ব্যাপারটা কানে আসল ততদিনে ঘটনা বহুদূর গড়িয়ে গেছে। সুপ্তকে মে*রে, ঘরে আটকেও দমিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। শেষমেষ মিনহাজ সাহেবের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। ছেলে যেই চতুর, বেপথে চলে যাবে সেই ভয়ও তাকে নাড়া দিচ্ছিল৷ এজন্য একপ্রকার বাধ্য হয়েই মেনে নিলেন, সঙ্গে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দিলেন যা সুপ্তের জন্য পালন করা খুবই কঠিন। তবুও সুপ্ত সেসব শর্ত দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নিলো। কিন্তু একটা শর্ত সে কিছুতেই মানতে চায় না। ওই যে, মা*রপিটের ব্যাপারটা। তার ভাষ্যমতে মা*র-পিট না করলে তাকে কেউ ভয় পাবে না। ভয় না পেলে রাজনীতি করে কী লাভ? রাজনীতির মজাটা তো ওই ভয়েই আটকে আছে। তখন মিনহাজ সাহেব রেগে বলেছিলেন, 

--"মজা না লাগলে করবে না রাজনীতি। তাও মা*-রপিট বন্ধ।"

সুপ্ত তখন মুখ ভার করে বলেছিল,

--"আচ্ছা, ঠিক আছে। কাউকে মা*রলে তার ব্যথায় মলম দিয়ে দিব। তাতে চলবে?"

সুপ্তের এহেম কথায় মিনহাজ সাহেব হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে মিনহাজ সাহেব সুপ্তের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলেন না। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন। 

সুপ্ত দীপককে বলেছিল যেন কল না করে। সেখানে সুপ্ত নিজেই দীপককে কল করলো। দীপক কিছুটা চমকে গিয়ে কল রিসিভ করল,

--"হ্যাঁ, বল।"

--"জা*য়ার গুলারে খুঁজে পাইছিস?"

--"বিকালের মধ্যে খবর পেয়ে যাব।"

--"বিকাল কেন? ঘুম থেকে উঠেই ওদের আপডেট চাই। যেখানেই দেখবি মে* হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে আসবি। তবে হ্যাঁ, হাত-পা যাতে ভালো ভাবে ভাঙে। আমি তিন-চার মাস ওদের হাসপাতালে পড়ে থাকতে দেখতে চাই, গট ইট?"

সুপ্তের কথা শুনে দীপক শুধু অবাক হয়। আজ অবধি সুপ্ত যতবার মা*রার আদেশ দিয়েছে ততবারই সুপ্ত ওদের ব্যথায় মলমেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এত অদ্ভুত কেন এই সুপ্ত? এই সুপ্তকে পড়া ভীষণ কঠিন।

------------------

নিশাতকে কোচিং-এ পাঠিয়ে নিপুণ তড়িঘড়ি করে নিজের অফিসের দিকে ছুটেছে৷ আইডি কার্ডটা কোনো রকমে নিজের গলায় ঝুলিয়ে অফিসের লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এই বিল্ডিংটার পাঁচ এবং ছয় তলা মিলিয়ে নিপুণের অফিস। অফিসে প্রবেশ করতেই নিপুণ ম্যানেজারের থেকে বেশ কিছু কড়া কথা শুনলো। ম্যানেজার দেরী করে অফিস আসা পছন্দ করেন না। নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে ম্যানেজারের শুনে তাকে সরি বলল এবং জানালো সে আর দেরী করে আসবে না। সেদিনের মতো নিপুণ কড়া কথা শোনার পালা শেষ হলো। নিজের ডেস্কে গিয়ে বসতেই নিপুণের পাশের ডেস্কে বসা কলিগ রিয়া নিপুণকে ফিসফিস করে বলল,

--"বুড়োটারে মনে হয় বউ খেতে দেয় না। এজন্য বাড়ির রাগ এখানে আমাদের উপর এসে ঝাড়ে; বদ-জাত লোক।"

রিয়ার কথা শুনে নিপুণের স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেল। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে যখন পরীক্ষা থাকত, তখন কোনো স্যার গার্ড বেশি দিলেই সহপাঠীরা নিজেদের মধ্যে বলত,

"স্যার মনে হয় বাসা থেকে ঝামেলা করে আসছে, এজন্যই আমাদের উপর এমন রাগ ঝেড়েছে।"

নিপুণ তখনো নীরব স্রোতা ছিল, এখনো আছে। সে রিয়ার কথা এড়িয়ে বলল,

--"বাদ দাও এসব, রিয়া। নিজের কাজ দেখো।"

রিয়া মুখ বাঁকিয়ে নিজের মনিটরের স্ক্রিনে নজর স্থির করলো। 

নিপুণের আজ নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় তেমন হলো না। নিত্যদিনের চাইতেও আজ বেশি কাজ পড়েছে তার। এর কারণ হয়তো অফিস দেরী করে আসা। এই পাঁচ তলায় মোট চার ডিপার্টমেন্ট কাজ করে। উপরে বাকি ডিপার্টমেন্টসহ খবর প্রচারের শুটিং স্পট রয়েছে।

 লাঞ্চের সময়ও আজ নিপুণ কাজ করছিল। এমন সময়ই তার স্থির ফোন ভাইব্রেশন করে ওঠে। নিপুণ ব্যস্ত হাতে টাইপিং-এর ফাঁকে একপলক তাকালো ফোনের স্ক্রিনে। নিশাত কল করেছে। নিশাতের কল দেখে নিপুণ ভ্রু কুচকালো, এই সময়ে নিশাত তো কখনো কল করে না। নিপুণ টাইপিং থামিয়ে নিশাতের কল রিসিভ করল।

--"হ্যাঁ, নিশাত। বল।"

--"বাবা কল করেছিল আপা।"

বাবার কথা শুনে নিপুণের মুখে যেমন আতঙ্ক ফুটে ওঠে, তেমনই গাম্ভীর্য। ভারী গলায় নিপুণ বলল,

--"হুঁ, তো?"

--"বাড়ির ঠিকানা চাইছিল।"


চলবে..................


বাবার কথা শোনার পর থেকেই নিপুণ কেমন অন্যমনস্ক, চুপসে গিয়েছে। কাজ ছাড়া কলিগদের সাথে এমনিতেও তেমন কথা বলে না। কিন্তু আজ কাজের কথা হুঁ, হা, না-তে সেরেছে। নিশাত কল করেনি এরপর। নিপুণ বিকালে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে। কাজ আজ তুলনামূলক বেশি থাকা সত্ত্বেও কাজ সময়ের আগে শেষ করে ফেলেছে। সঙ্গে যতটুকু কাজ বাকি ছিল সেগুলো বাসায় করে নিবে।

বাসে উঠেই দুই সিট একসাথে খালি পেল নিপুণ। তাই সে দ্রুত জানালার সিটটা দখল করে নিলো। ক্লান্ত মুখে একটু দমকা হাওয়া ছুঁয়ে দিলেই নিপুণ বড্ড স্বস্তি অনুভব করে। জানালার কাঁচটা টেনে খুলতেই হুড়মুড়িয়ে বাতাস ছুঁয়ে যায় তাকে। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি কয়েক ঢোঁক গিলতেই নিপুণ অনুভব করলো তার পাশে কেউ বসেছে। নিপুণ মুখে পানি নিয়ে পাশে ঘুরে তাকাতেই দেখল পাশে সুপ্ত বসে আছে। সুপ্তকে দেখে অসাবধানবশত নিপুণের গলায় পানি কিছুটা আটকে যায়। যার ফলস্বরূপ মুখে থাকা সব পানি সুপ্তের মুখে গিয়ে ছিটকালো। সুপ্ত সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে ফেলেছে অধরজোড়া চেপে। পরপরই কানে ভেসে আসল অট্টহাসির শব্দ।

এরকম এক বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে নিপুণ কল্পনাও করতে পারেনি। সে তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে রুমালটা বের করে সুপ্তের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

--"আমি অত্যন্ত দুঃখিত, এরকমটা হবে সত্যিই বুঝতে পারিনি।"

নিপুণের তখনো থেমে থেমে কাশি হচ্ছে। সুপ্ত দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয়। কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নিপুণের হাতের স্পর্শ পেয়ে সুপ্ত গলে যায়। সে সুন্দর করে রুমালটা দিয়ে নিজের মুখ মুছে নেয়। 

দীপকও বাসে উঠেছিল। সুপ্তের এ অবস্থা দেখে সে-ই ফিক করে হেসে দিয়েছিল। হাসতে হাসতে নিজ মনেই বলল,

--"আহারে বেচারা, প্রেম করতে গিয়ে যে কতকিছু সহ্য করতে হয়! সত্যি বস, তোর দারুণ ধৈর্য!"

সুপ্ত মুখ মুছে রুমালটা নিজের কাছে নিয়ে বলল,

--"এত বড়ো অকাজের জন্য রুমালটা আজ থেকে আমার হলো।"

সুপ্তের এ কথা শুনে নিপুণের মুখ থেকে দুঃখী ভাব উড়ে গেল। সে বোধহয় ভুলে গেছিল তার পাশে বসা লোকটি মোটেও সাধারণ ধাঁচের কেউ নয়। নিপুণ ভ্রু কুচকে বলল,

--"রুমাল দিয়ে কী করবেন?"

--"ভালোবাসার জিনিস যত্ন করে আগলে রাখব। রুমালটা এই মুহূর্তে আমার ভালোবাসা চাচ্ছে। ভালোবাসা দিতে আমি আবার কৃপণতা করি না।"

নিপুণের কুঁচকানো ভ্রু আরও কুচকে যায়। বিরক্তির শব্দ করে জানালার দিকে মুখ ফেরাল। মিনমিন করব বলল,

--"অসভ্য!"

--"কিন্তু আমি তো সভ্য। অসভ্যতামি কবে করলাম তোমার সাথে?"

নিপুণ চরম বিরক্ত হলো। আফসোস করলো কেন একে সরি বলল? পানি ফেলেছে ভালোই তো হয়েছিল। এখন যেন একদম মাথায় চড়ে আছে। নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"চুপ থাকবেন প্লিজ? আপনার আজেবাজে কথা শুনে মাথা ধরেছে।"

সুপ্ত অল্প করে হাসলো। নিপুণকে বিরক্ত করতে তার ভীষণ ভালো লাগে। পাশাপাশি বসেও কম আনন্দ হচ্ছে না তার। সুপ্ত নিপুণের কানের কিছুটা কাছাকাছি মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,

--"টিপে দিব?"

নিপুণ গরম চোখে তাকাল। বাস এতক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। সুপ্ত আর জ্বালালো না নিপুণকে। সুপ্ত বাসের বাইরে থেকেই দেখেছিল নুপুণের মলিন মুখ। এজন্য জেনে-শুনেই বাসে উঠেছে সে। এখন নিপুণ রাগের চোটে যেন ভুলে বসেছে মন খারাপের কথা। যাক, এতেই সুপ্তের স্বস্তি।

কিছুদূর যেতেই সুপ্ত আবার মুখ খুলল,

--"নিপুণ, একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।"

নিপুণ ভ্রু কুচকে তাকায় সুপ্তের দিকে। সুপ্ত হেসে বলল,

--"সদর হাসপাতালে চারজন নতুন ছাগল ভর্তি হয়েছে। প্রত্যেকের হাত-পা ভাঙা। ছাগলদের সুন্দর রূপে দেখে আসতে চাইলে যেতে পারো।"

নিপুণের চোখ কপালে উঠে গেল সুপ্তের কথা শুনে। চারজন ছাগল আর গতকাল রাতের সুপ্তের দেওয়া হুমকি; সব যেন নিপুণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। পরমুহূর্তেই নিপুণের চোখ-মুখে আতঙ্ক ফুটে ওঠে। অস্ফুট স্বরে বলল,

--"আপনি কী পাগল?"

--"ভালো কাজ করতে পাগল হওয়ার প্রয়োজন হয়?"

--"মা*-মা/রি ভালো কাজ?"

--"অন্তত খারাপ না। মেরে যদি খারাপ গুলোকে সোজা করা যায় তাহলে ক্ষতি কী? এছাড়া আমি ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ বলে কথা, আমারও তো সমাজ সেবার কথা চিন্তা করা উচিত তাই না?"

--"এটাকে সমাজ সেবা বলে নাকি সমাজকে উস্কে দেওয়া বলে?"

সুপ্ত অকপটে বলল, "সমাজ সেবা।"

--"খারাপকে ভালো করার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে।"

সুপ্ত চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,

--"আমারও আইন আছে। নিজস্ব আইন।"

নিপুণ আর কথা বাড়ায় না। এই লোকের সাথে কথা বললে কথা খামাখা বাড়বে। নিপুণ আবারও বাইরে নজর ফেরালো। কেন যেন তার ভেতর সেরকম খারাপ লাগা কাজ করছে না। গতকাল যারা বাজে ব্যবহার করছিল তাদের একটা শাস্তি অন্তত দরকার ছিল। নিপুণ এতটাও উদার মনের কেউ নয় যে অন্যায়কারীকে নিয়ে চিন্তা করবে বা তাদের মাফ করে দিবে।

 সে শুধু শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে ঝামেলাহীন থাকতে চায়। কোনোরকম ঝামেলায় জড়াতে চায় না। এটাই শুধু তার ভয়। এছাড়া আর কিছু না। তবে সুপ্তকে যতটুকু চিনেছে সে সহজে নিপুণের কথা সবার সামনে আনবে না। নিপুণের হঠাৎ মনে পড়ে যায় সেদিনের ঘটনা। যেদিন সুপ্তকে সে চড় মেরে বসেছিল। সেই বোকামির কথা ভাবতেই নিপুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 

নিপুণ বাড়ি ফিরতেই দেখল নিশাত দরজার খুলে সিঁড়ির আশেপাশে পায়চারী করছে। যেন সে নিপুণেরই অপেক্ষা করছিল। নিশাত তাকে দেখে খুশি হয়ে যায়। নিপুণ একপলক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জুতো খুলে নেয়। ভেতরে প্রবেশ করতে করতে নিশাতের উদ্দেশে বলল,

--"কী ব্যাপার নিশাত? আজ এত খুশি খুশি লাগছে যে?"

--"বলব, তার আগে ফ্রেশ হয়ে আসো!"

নিপুণ ফ্রেশ হতে চলে যায়। সন্ধ্যার জন্য হালকা-পাতলা নাস্তা বানাতে হবে। ফ্রেশ হয়ে, চেঞ্জ করে আসতেই নিপুণ দেখল দুই বাটি নুডুলস তার টেবিলের ওপর রাখা। নিশাত তার পাশেই অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে। নিপুণ অবাক হয়ে বলল,

--"কে দিলো নুডুলস?"

নিশাত মুচকি হাসে।

--"আমি বানিয়েছি আপা। তুমি যেভাবে কল কেটে দিলে তাতে মনে হচ্ছিল তুমি মন খারাপ করেছ। তাই ভাবলাম তোমাকে একটু খুশি করা যাক। ইভানের বড়ো ভাই দারুণ নুডুলস বানাতে পারে, আমাদের একদিন খাইয়েছিল। তার কাছেই শিখে নিয়েছি। আর ইউটিউবেও কিছু রেসিপি দেখেছি। এখন খেয়ে দেখো তো কেমন লেগেছে? উত্তেজনায় নিজেই টেস্ট করতে ভুলে গেছি।"

নিপুণ নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো ভাইটার দিকে। তার এই নিশাত যে বড়ো হয়ে গেছে তা তো সে খেয়ালই করেনি। ভাই এখন বড়ো বোনের হাসি-খুশির দিকটা খেয়াল রাখছে। সে কিসে খুশি, কিসে রাগ হতে পারে সেটাও ভাবে। নিপুণের চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো। ইচ্ছে করছে ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে বলতে, "তুই জগতের সবচেয়ে আদুরে ভাই নিশাত।"

ভাই-বোনের সম্পর্কটা খুব স্নিগ্ধ, সুন্দর হয়। এখানে যেমন ঝগড়া-ঝাটি, মার-পিট আছে তেমনই রয়েছে অন্তহীন ভালোবাসা, যা কেউ কেউ প্রকাশ করে আবার কেউ কেউ গোপন করে রাখে। নিপুণের চোখ-মুখে তৃপ্তি ফুটে ওঠে। ভাইকে নিয়ে বিছানায় বসে বলল,

--"একসাথে খাব চল।"

দুজন একসাথে খেতে বসেছে ঠিকই। তবে নিশাতের অনুরোধে নুডুলস প্রথমে মুখে পুরলো নিপুণ। নিশাত তখনো আগ্রহের সাথে নিপুণের মুখের দিকে চেয়ে। নিশাত বলল,

--"অনেস্ট রিভিউ দিবা আপা। আমি জানি কেউ-ই প্রথম ধাক্কায় ভালো রান্না করতে পারে না। সেখানে তো আমি নিতান্তই ছেলে মানুষ।"

নিপুণ ফিক করে হেসে দিলো। হাসি বজায় রেখে বলল,

--"ঝালটা বেশি হয়েছে আর লবণও পরিমাণমতো হয়নি।"

নিশাতের মুখ ভার হয়ে গেল। মিনমিন করে বলল,

--"ঝালের ব্যাপারটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ইউটিউব, ইভানের ভাই সবাই বলেছে স্বাদমতো লবণ দিতে। এখন তুমি-ই বলো আপা, প্রথম রান্নায় আমি কেমনে বুঝব লবণ কতটুকু লাগে? এদের কী কমনসেন্স নাই?"

নিপুণ আরেক দফা হাসলো। নিশাতের গাল টেনে বলল,

--"তবে সবকিছুর মধ্যেও একটা বিশেষ আইটেম আছে নুডুলসে।"

নিশাত চোখ জোড়া চকচক করে বলল,

--"সেটা কী আপা?"

নিপুণ মুচকি হেসে বলল,

--"আমার প্রতি তোর উপচানো ভালোবাসা।"

হাসা-হাসি, আড্ডার মাঝেই দুই ভাই-বোনের সময় কেটে যায়। নিপুণ চলে যায় রান্না করতে। রান্নার পাশাপাশি সে নিজের কাজগুলোও ল্যাপটপে টপাটপ করার চেষ্টা করলো। নিশাত পড়তে বসেছে। নিপুণ কী ভেবে নিশাতকে হাঁক ছেড়ে ডাকল।

--"নিশাত?"

নিশাত এক ছুটে রান্নাঘরে চলে আসল। নিপুণ নিশাতের উপস্থিতি টের পেয়ে রান্নায় মনোযোগ দিয়ে বলল,

--"বাবাকে কী ঠিকানা দিয়েছিস?"

--"না, দেইনি। জোর করেছিল, তোমার নাম্বারও চাইছিল। আমি কিছুই দেইনি।"

নিপুণ এবার গলা খাদে নামিয়ে বলল,

--"বকা দিয়েছে নিশ্চয়ই?"

নিশাত শুকনো হেসে বলল,

--"এ আর নতুন কী আপা? যাইহোক, ওনার গা*লি এখন আর গায়ে মাখি না। তুমিও চিন্তা করো না। সব ঠিক আছে।"

নিপুণ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। পুরানো তিক্ত, ভয়ংকর অতীত না চাইতেও তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। শারিরীক এবং মানসিক ব্যথায় কাঁতড়ে থাকা দিনগুলো মাথায় আসলেই নিপুণের ভয়ে গা হিম হয়ে আসে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। অনেক শক্ত মনোবল নিয়ে এখন নিজের জন্য, নিশাতের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে সে। এত সহজে নিপুণ সব এলোমেলো হতে দিতে পারে না। নিপুণের আর শক্তি নেই নতুন করে ভেঙে যাওয়ার। একজন মানুষ আর কত ভাঙবে, আঘাতপ্রাপ্ত হবে তাও কি না আপন মানুষদের দ্বারা?

নিশাত আবার বলল,

--"বাবা বলছিল আমাকেও ফিরে যেতে। কিন্তু সৎ মায়ের সংসারে আমি আর যেতে চাই না আপা। আমি তোমার সাথেই থাকব।"

নিপুণ আহত নজরে তাকায় ভাইয়ের দিকে। ভাইকে আশ্বস্ত করে বলল,

--"তুই আমার কাছেই থাকবি নিশাত, তোকে আমার থেকে আলাদা হতে দিব না কখনো। অন্তত ওই লোকের কাছে কখনোই তোকে ফিরতে দিব না, সেই ভরসা রাখ তোর আপার ওপর।"

--------------

রাতে নিপুণ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে যেতেই তার ফোন টুং করে শব্দ করে উঠল। নিশ্চয়ই কোনো মেসেজ। নিপুণ ফোন চেক করতেই দেখলো একটা ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে পাশাপাশি দুইটা বেডে চারজন ছেলে আহত অবস্থায় পড়ে আছে। ছোটো বেডে দুজনের জায়গা হচ্ছে না বোঝাই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ না কেউ ঠিক পড়ে যাবে। এরকম এক দৃশ্য দেখে নিপুণ কীরকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে বুঝে উঠতে পারল না। ক্ষণিকের জন্যে যেন তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পরপরই একটা মেসেজ আবারও শব্দের সাথে এলো। নিপুণ চোখ বুলালো মেসেজটার দিকে। সুপ্ত মেসেজে লিখেছে,

--"পকেটে তেমন টাকা নেই বুঝছ, তাই এদের জন্য আরেক জোড়া বেড ভাড়া নিতে পারিনি। এজন্য ভাবলাম একটা বেডই দুজন করে ভাগাভাগি করুক; এতে বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়বে।

জানো, এই দৃশ্যটা বুকের বা পাশটায় খুব শান্তি দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে ফেসবুকে ছবিটা আপলোড করে বলি, 'আজকের দিনের সেরা ছবি', ড্যা~ম।"


হলুদ শহরের প্রেম

পর্ব ৪-৫

লাবিবা ওয়াহিদ


--"এ কী, নিপুণ? তুমি সত্যি সত্যি ছাগলগুলোকে দেখতে হসপিটাল চলে এলে?"

হাসপাতালের বিরাট বড়ো কেবিনে সারিবদ্ধ ভাবে দশটি করে মোট কুড়িটি বেড সাজানো। প্রত্যেক বেডেই রোগীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত৷ 

আজ সকালেই একটি দুর্ঘটনায় বেশ কিছু আহত মানুষ হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। 

নিপুণ মূলত আরেকজন রিপোর্টারের সাথে হাসপাতালে এসেছিল সেসব পর্যবেক্ষণ করতে। কাজের ফাঁকে গতকাল রাতের ঘটনা মাথায় এসেছিল তার। সুপ্ত দুইজনকে একই বেডে রাখবে ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছিল না, কারণ যতদূর জানে হাসপাতালে এই ধরণের তেমন নিয়ম নেই।

 এজন্যই ব্যাপারটা সত্য নাকি মিথ্যে সেটা দেখতেই কলিগ রিপোর্টারের থেকে বিয়োগ হয়েছে সে। তবে এখানে এসে যা দেখলো তাতে তার চোখ ছানাবড়া! আসলেই এক জোড়া বেডে চারজন চাপাচাপি করে পাশাপাশি শুয়ে। একজন নার্সকে সে জিজ্ঞেস করেছিল, এরকম কেন করতে দেওয়া হয়েছে? নার্স জবাব দেয়নি বরং এড়িয়ে গেছে। 

এমতাবস্থায় পাশ থেকে সুপ্তের গলা শুনে নিপুণ ভীষণ চমকে যায়। পাশ ফিরে চাইতেই দেখল সুপ্তকে। তবে পোশাকের দিক থেকে আজ তাকে ভিন্ন লাগছে। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরেছে সে। পাঞ্জাবির হাতা কনুই অবধি গুটানো। প্রতিদিনের এলোমেলো দেখা চুলগুলো আজ সুন্দর ভাবে গোছানো। সবশেষে মুখে কালো মাস্ক। মাস্কের আবরণে সুপ্ত থাকলেও সুপ্তকে চিনতে নিপুণের খুব একটা অসুবিধা হলো না। সুপ্তের নজর প্রতিবারের মতোই ইডিয়েট মার্কা। নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আমি আমার ডিউটিতে আছি। একদম ডিস্টার্ব করবেন না।"

সুপ্তের চোখ জোড়া হাসলো যেন৷ সুপ্ত হঠাৎ বুক টানটান করলো। মুখ-ভঙ্গিতে গুরুতর ভাব এনে বেশ ভারী গলায় বলল,

--"আমিও ডিউটিতে আছি মিস রিপোর্টার। আপনার লজ্জা করছে না আমার সাথে লাইন মারতে? মেয়েরা যে এমন কেন, সুপুরুষ দেখলেই গায়ের সাথে লাগতে চলে আসে!"

সুপ্তের এহেম কথা শুনে নিপুণের চোখ কপালে উঠে গেল। বাক্যহারা হয়ে সে চেয়ে রইলো সুপ্তের দিকে। এগুলা কোন ধরণের কথা, নিপুণ কখন সুপ্তের গা ঘেঁষল? নিপুণ অস্ফুট স্বরে বলল,

--"মানে?"

সুপ্তের আর জবাব দেওয়া হলো না। দীপক এসে সুপ্তকে বলল,

--"কীরে, কই ছিলি? তোর কথা মতো সবই এনেছি। আয়, আহতদের পরিবার তোর জন্য অপেক্ষা করছে।"

নিপুণ শুনলো দীপকের কথা। সুপ্ত একপলক নিপুণের দিকে তাকিয়ে দীপকের সাথে চলে গেল। নিপুণ সেই ওয়ার্ড থেকে বের হতেই দেখল সুপ্তকে বেশ কিছু সাংবাদিকরা ঘিরে রেখেছে। সুপ্ত মাস্ক খুলে যথাসম্ভব তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। নিপুণ সাংবাদিকদের মাঝে নিজের দুজন কলিগকেও দেখতে পেল। হঠাৎ নিপুণকে এসে ধরলো রিয়া। রিয়া নিপুণকে দেখে বলল,

--"কোথায় চলে গিয়েছিলে নিপুণ? শামিম ভাইয়া বলল তুমি তাকেও বলোনি।"

নিপুণ আমতা আমতা করে বলল,

--"আশেপাশেই ছিলাম।"

রিয়া সেভাবে ঘাটল না নিপুণকে। সামনে মাহদী আরাভ সুপ্ত রয়েছে। এজন্য তার বলা কথাগুলো শোনা বেশ জরুরি। তার কথার উপরই রিপোর্ট লিখতে হবে। এজন্য রিয়া নিপুণকে টেনে সেদিকেই নিয়ে গেল।

সুপ্তের মুখ-ভঙ্গি অস্বাভাবিক গম্ভীর। তার এই গম্ভীর ব্যক্তিত্ব নিপুণের কাছে সম্পূর্ণ নতুন-ই বলা চলে। এই লোক যে সামনের নির্বাচনের জন্য একজন প্রার্থী তা তার চলাফেরা কিংবা ত্যাড়া - বাঁকা কথাবার্তায় বোঝা দায়। এইযে এখন, কতটা প্রফেশনাল মুডে আছে সে। নিপুণ প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে এতে। 

হঠাৎ এক প্রশ্ন কানে এলো নিপুণের। একজন সাংবাদিক শুধালো,

--"আপনার নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন?"

নিপুণের কপালে বিরক্তির ভাঁজ পড়ে। এরকম একটা মুহূর্তে এই ধরণের প্রশ্ন? সুপ্ত অবশ্য এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেল। সাংবাদিকদের বেশি সময় দিতে পারেনি সে। চলে যাওয়ার আগে ভীড়ের মাঝে নিপুণের ঘামে ভিজে থাকা মুখখানার দিকে একপলক চেয়ে সে চলে গেল। নিপুণ বিষম খায়, এই ভীড়ের মাঝে সুপ্ত তাকে দেখল কী করে? 

নিপুণ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের এদিক ওদিক ছুটল। একসময় কিছুটা সময় পেয়ে হসপিটালের করিডরে থাকা এক ফাঁকা আসনে গিয়ে বসল। ভীষণ ক্লান্ত সে। সকাল থেকে পেটেও কিছু পড়েনি। নাস্তা তৈরি করে নিশাতকে ডেকে ওঠাতে গিয়েই জরুরি কল এলো। দুর্ঘটনার কথা শুনে তাকে কোনোরকমে তৈরি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ব্যস্ততার কারণে খাওয়ার মতো সময় হয়নি। এখন পেট জ্বলছে খুদোয়। অতীতে কত খালি পেটে থেকেছে সে। হয়তো সেই থেকেই দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার অভ্যাসটা থেকে গিয়েছে। অতীত মাথায় নড়েচড়ে উঠতেই নিপুণ লম্বা কয়েক নিঃশ্বাস ফেলল।

নিপুণের সামনে দিয়ে মানুষজন ব্যস্ত পায়ে চলাচল করছে। এমতাবস্থায় কেউ একজন তার পাশে এসে বসল। নিপুণ পাশ ফিরে চাইতেই মাস্ক পরিহিত সুপ্তকে দেখতে পেল। সুপ্ত নিপুণের দিকে একমনে চেয়ে আছে। নিপুণ অপ্রস্তুত হয়ে আশেপাশে ভীত নজরে তাকাল। সুপ্ত কোন আক্কেলে তার পাশে এসে বসেছে? নিপুণ নিচু গলায় বলল,

--"আপনি এখানে কী করছেন?"

সুপ্ত নিপুণের প্রশ্নকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল,

--"তোমার মুখ এমন শুকিয়ে আছে কেন? কিছু খাওনি?"

নিপুণ কিছুটা থতমত খেল।

--"সেটা জেনে আপনার কাজ কী? আপনি আপনার কাজে যান।"

সুপ্ত ভ্রু কুচকে বলল,

--"কাজই তো করতে বসেছি। খাবে চলো।"

--"একদম না। জোরাজুরি করলে কিন্তু আমি উঠে চলে যাব। বিরক্ত করবেন না প্লিজ।"

--"উঠে যেতে গিয়ে যদি হাতে টান খাও তখন কী হবে ভেবে দেখেছ? চারপাশে এত মানুষ! দেখলে কী ভাববে বলো তো?"

সুপ্তের নরম গলার হুমকি শুনে নিপুণ চোখ বড়ো করে তাকাল। 

--"হুমকি দিচ্ছেন?"

--"কোথায়? আঙুল বাঁকাতে চাচ্ছিলাম। সোজা আঙুলে ঘি সচরাচর উঠতে চায় না তো!"

নিপুণ এবার চোখ রাঙালো। সুপ্ত তা তোয়াক্কা না করে কাউকে দিয়ে বিরিয়ানির প্যাকেট আনালো। সেটা নির্দ্বিধায় নিপুণের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

--"হ্যাপি ফুডিং হার্ট।"

------------------------

নিপুণ ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলো। এক প্যাকেট বিরিয়ানি নিশাতের হাতে ধরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। আজ তার রান্না করার শক্তি নেই, এজন্যই খাবার কিনে আনা। 

নিপুণ ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই জানালায় বৃষ্টির অনবরত ফোঁটা পড়ার শব্দ কানে এলো। বিকাল থেকেই আকাশ কেমন মেঘলা ছিল। নিপুণ সেসব তোয়াক্কা না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ঘুমে জড়িয়ে যাওয়ার আগে নিশাতকে ডেকে বলে দিলো তাকে যেন না জাগানো হয়, সে খেয়ে এসেছে। 

ঘন্টা দুয়েক পর নিপুণ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই ফোনের বিরক্তকর শব্দএ বেজে ওঠে। এতে নিপুণের ভ্রু কুচকে গেল। ঘুমটা ভাঙতেও বেশি সময় লাগল না। নিপুণ চোখ বুজেই ফোনটা হাতড়ে খুঁজল বালিশের পাশে। কোনোরকমে ফোনটা হাতে নিয়ে পিটপিট করে নামটা দেখে নিলো। অফিস থেকে কল। নিপুণ চোখ বুজেই কল রিসিভ করলো, সালাম দিলো। ওপাশ থেকে বেশ কিছু কাজ এলো। কাজের কথা শুনে নিপুণের না চাইতেও ঘুম কেটে গেল। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসল সে। মাথা ধরে উঠে বসে মিনমিন করে বলল,

--"এগারোটার আগেই রিপোর্ট রেডি হয়ে যাবে স্যার। আমাকে ঘন্টাখানেক সময় দিন।"

কল কাটতেই নিপুণ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। ড্রিম লাইটের আলোয় দেখলো ঘড়ির কাঁটা নয়টার কোঠায়। নিপুণ একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাথরুম থেকে মুখ ধুঁয়ে এলো। ঘুমের রেশ কাটাতে রুম থেকে বের হতেই দেখল নিশাত সোফায় এক পা তুলে কার্পেটে শুয়ে মোবাইল দেখছে। নিশাত নিপুণকে দেখতেই সেভাবে শুয়েই বলল, 

--"আপা, এত জলদি উঠে গেলা যে?"

--"কাজ আছে।"

এটুকু বলেই নিপুণ রান্নাঘরে চলে গেল চা বানাতে। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই সে রুমে চলে গেল। রিয়ার সাথে কলে কথা চালিয়ে যেতে যেতে সে একমনে ল্যাপটপে রিপোর্ট লিখল। আজ এগারোটায় তাদের ফেসবুক চ্যানেল থেকে লাইভ নিউজ টেলিকাস্ট হবে। অনলাইন মিডিয়া হওয়ায় এখানে এত আয়োজন নেই।

 নিপুণ রিপোর্ট লিখতে গিয়ে কিছুটা বিরক্ত হলো৷ রিপোর্টের একটা অংশ সুপ্তকে নিয়ে। সুপ্ত তাকে যখন বিরিয়ানি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়, নিপুণ তখন চেয়েও বিরিয়ানিটা ফেলে দিতে পারেনি। এক সময়ে খাবারের জন্য সে যেই কষ্ট করেছে তাতে সে খাবারের মূল্য কত সেটা হাড়ে হাড়ে জানে। তাই তো সুপ্তের উপর রাগ থাকা সত্ত্বেও খাবারটা ঠিকই খেয়ে নেয়। এই অতিরিক্ত নিপুণের সান্নিধ্যে থাকা সুপ্তকে নিয়ে তার রিপোর্ট লিখতে হবে সেটা সে ভাবেনি কখনো। তাই কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফেলেই সুপ্তকে ঘিরে লেখা রিপোর্টটি সে সাবমিট করলো। 

ঘন্টাখানেকের মধ্যে সব ই-মেইল করে দিতেই আবারও ম্যানেজারের কল এলো। গম্ভীর গলায় বলল আগামীকাল একটু লেটেই সে যেতে পারবে। আর কাল হসপিটালও অন্যরা রিপোর্টের জন্য যাবে। নিপুণ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সব গুছিয়ে পুণরায় লাইট নিভিয়ে শুতেই আবারও ফোনটা শব্দ করে উঠল। মোবাইল চেক দিতেই দেখল সুপ্তের মেসেজ। লিখেছে,

--"ক্লান্ত রিপোর্টার কী এখনো কাজ করছে? এত কাজ কিসের হুঁ, লাইট নিভিয়ে ঘুমাও। ক্লান্তির ছাপ সুন্দরীদের মুখে মানায় না। গুড নাইট হার্ট।"

নিপুণ এবার রাগের চটে রিপ্লাই না করে পারল না। টাইপ করল, 

--"রাত-বিরেতে অন্যের ঘরের লাইটের দিকে উঁকি দেওয়া ভালো না নেতা সাহেব। নিজের চরকায় তেল দিলে বেশি ভালো হয়।"

কিছুটা সময় নিয়েই সুপ্তের থেকে রিপ্লাই এলো,

--"নেতা সাহেব? তোমার মুখে এই সম্বোধন শুনতে আমি হাজারবার তোমার ঘরে উঁকি দিতে রাজি। শুধু উঁকি না, তুমি চাইলে তোমার বাসাতেও পৌঁছে যাব। 'নেতা সাহেব' শুধু তোমার, নিপুণ।"

নিপুণ নিজের দোষে নিজেই কপাল চাপড়ালো। মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে বিরক্তির সাথে "ধ্যাত" বলে উঠলো।


চলবে...............


বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। নিপুণের দিনগুলো ব্যস্ততায় কাটছে তো আবার কখনো আবার ঝিম ধরে। তবে আলস্য সময় কাটানোর উপায় নেই। সে প্রতিনিয়ত যেভাবে পারছে সেভাবেই ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছে। এইযে আজ, ছুটির দিন। বাসায় বসে না থেকে নিশাতকে নিয়ে বের হলো কোথাও ঘোরার উদ্দেশে। তাদের আশেপাশেই ঘোরার জায়গা আছে, সেসব জায়গাতেই ঘোরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। বিকালের দিকে ফিরে আবার রিপোর্ট লিখতে বসতে হবে।

রিকশায় বসে যখন নিপুণ অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে তখন নিশাত তাকে ঝাকায়। নিপুণ চমকে ভাইয়ের দিকে তাকাতেই নিশাত বলল, 

--"এসএসসির পর কোথায় পড়ব আপা?"

--"তোর সিদ্ধান্ত, তুই ভালো জানবি।"

নিশাত কিছুটা নীরব থেকে বলল,

--"আপা?"

নিপুণ তাকালো নিশাতের দিকে। নিশাত আমতা আমতা করে বলল,

--"আমার ক্রিকেট পছন্দ অনেক।"

--"তো খেলবি। বারণ তো করিনি।"

নিশাত দমে গেল। সে ঠিক কী বলতে চাইছে সেটা নিপুণ বুঝেও না বোঝার ভান ধরলো। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে এসে যখন নিশাত নিপুণের সাথে ছবি তুলছিল তখন হুট করে নিপুণের পাশে এসে সুপ্ত দাঁড়ায়। নিশাত তাকে ফোনের স্ক্রিনে দেখে নড়তে চাইলে সুপ্ত তাকে থামিয়ে বলল,

--"একদম নড়বে না। ছবি ভালো আসছে, ক্লিক করো!"

নিপুণ সুপ্তের দিকে অবাক নজরে তাকাতেই নিশাত সুপ্তের কথামতো ফোনে ক্লিক করলো। ক্লিকটা জোরালো হওয়ায় পরপর ডাবল ক্লিক পড়ে যায়। নিপুণ চোখ রাঙিয়ে বলল,

--"এক্সকিউজ মি?"

সুপ্ত সোজা নিপুণের চোখের দিকে চেয়ে বলল,

--"জি ম্যাডাম?"

নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, "আরেকজনের ছবির মাঝে ঢুকে যাওয়া কোন ধরণের ভদ্রতা?"

--"এটাকে অভদ্রতা বলে না। অধিকার আদায় করে নেওয়া বলে।"

নিপুণ কপাল কুচকে বলল, "আপনি এবং আপনার আজেবাজে কথা। নিশাত ছবি ডিলিট কর।"

নিশাত এতক্ষণ দুজনকে অবাক হয়ে দেখছিল। নিপুণের কথা ছবি ডিলিট করে নিলে সুপ্ত বলে ওঠে, "নো, নিশাত। আগে ছবিটা আমাকে হোয়াট'স আপ করো তারপর যা খুশি করিয়ো।"

নিপুণ এবার নিশাতকে চোখ রাঙিয়ে বলল, "খবরদার এরকম কিছু করবি না। দে দেখি আমাকে ফোন।"

নিপুণ নিশাতের হাত থেকে মোবাইল নেওয়ার আগেই সুপ্ত ছোঁ মেরে মোবাইলটা কেড়ে নেয়। এক গাল হেসে বলল,

--"সুন্দরীদের এত হাইপার হতে নেই ম্যাডাম, শ্বাসকষ্টের মতো রোগ হয়ে যায়। আমি তো আর ডাক্তার নই যে সারিয়ে দিতে পারব।"

বলতে বলতেই সুপ্তের ফোন হঠাৎ টুং শব্দ বেজে ওঠে। এর মানে তার ছবি আসা সফল হয়েছে। সুপ্ত নিশাতের ফোন ফেরত দিয়ে হাসি-মুখে বলল,

--"অন্য একদিন দেখা হবে নিশাত।"

সুপ্ত চলে গেল। শুধু খেপিয়ে দিয়ে গেল নিপুণকেই। সুপ্তের কাজকর্ম দিনদিন সহ্য সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে। ইচ্ছে তো করছে এখনই গিয়ে এর এসব কাণ্ড কারখানা রিপোর্টে গিয়ে লিখতে। এটলিষ্ট সবাই সুপ্ত'র ভালো মানুষির চেহারার ভেতরটা তো দেখতে পারবে। 

---------------------

মিনহাজ সাহেব মিনমিন করে কিছু একটা পড়তে পড়তে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। মিনহাজ সাহেবের স্ত্রী সাবিনা সুপ্তের রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। সুপ্তের শুকনো জামা-কাপড়গুলো ভাজ করে আলমারিতে রেখেছেন তিনি। সুপ্ত তার কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করাতে পছন্দ করে না। হয় নিজেই নিজের কাজ করে নয়তো তার মা তাকে গুছিয়ে দেয়। মিনহাজ সাহেব আড়চোখে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে সরু গলায় বললেন, 

--"নবাব আজ কোথায় গিয়েছে তার খোঁজ-খবর জানো?"

সাবিনা মলিন চোখে তাকালেন স্বামীর দিকে। স্বামী যে তাকে স্পষ্ট খোঁচা দিয়েছেন সেটা তিনি হাড়ে হাড়ে বুঝে নিলেন। সাবিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, 

--"হবে হয়তো, আশেপাশে।"

--"ওই আশেপাশেই থাকবে, আর মার-পিট করে বেড়াবে।"

--"কোথায় মারপিট করলো ও?"

--"করেনি কবে শুনি? তোমার লাই পেয়েই ছেলে এত মাথায় উঠেছে।"

সাবিনা এবার ভ্রু কুচকে বললেন, "লাই আমি একা দিলে এতদূর যেত না। আপনার এবং মাহমুদের লাইও পেয়েছে।"

মিনহাজ সাহেবও ভারী গলায় বললেন, 

--"আমি কবে লাই দিলাম? ওর কোন কথাটা আমি শুনেছি?"

--"না শুনলেও চুপ তো থেকেছেন! এইযে এখন, রাজনীতি তো আপনার অনুমতি নিয়েই করছে তাই না?"

মিনহাজ সাহেবের মুখ-ভঙ্গি শক্ত হয়ে এলো। স্ত্রীর সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বাড়ায় না। গম্ভীর গলায় বললেন,

--"নবাবজাদাকে কল দিয়ে বলো যেখানেই থাকুক মাগরিবের মধ্যে যাতে মসজিদে থাকে। আমি মসজিদ যাচ্ছি।"

বলেই মিনহাজ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। সদর দরজার দিকে আগাতে নিলে সাবিনা তাকে থামিয়ে বলল, 

--"কলটা তো আপনিও দিতে পারেন। আর কত ছেলের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবেন?"

মিনহাজ জবাব দিলো না। দ্রুত বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। তখনই রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো মাসুদা। হন্তদন্ত গলায় এসে বলল, 

--"তরকারিতে লবণ বেশি অইয়া গেছে খালাম্মা।"

সাবিনা বিরক্তির চোখে তাকালো মাসুদার দিকে। অল্প বয়সী মেয়ে মাসুদা। বয়স খুব সম্ভবত তেইশ চব্বিশ। বিয়ে করেছিল কিন্তু তার বর ভালো ছিল না বলে তালাক দিয়েছে। কোনো ছেলে-মেয়েও নেই। এভাবেই মানুষের বাড়িতে কাজ করে করে পেট চালায় সে। সাবিনা বিরক্ত গলায় বলল, 

--"রান্নাঘরে চলো।"

মাসুদা সহসা নিষেধ করলো। বলল,

--"লবণ আপনেই সামলান খালাম্মা। সন্ধ্যা অইয়া গেছে, বাড়িত যামু।"

সাবিনা ভ্রু কুচকে বলল,

--"কোথায় সন্ধ্যা হলো? সবে সাড়ে পাঁচটা বাজে। ছয়টা পনেরোতে মাগরিবের আযান দিবে।"

মাসুদা তাও মানলো না। বলল,

--"আজকা আপনের বাড়িত আগে আইছি, তাই আগে আগেই আমার সন্ধ্যা অইয়া গেছে। খালুরেও দেকলেন না মাগরিবের নামাজে যাবে বলে চলে গেল? আমি তো পত্যেকদিন তার লগেই বাইরোই।"

মাসুদা থামলো। থেমে আবার বলল,

--"আমি যাই গা খালাম্মা। কালকা আবার আমু।"

মাসুদা কোমড় দুলিয়ে সাবিনার গায়ে একরাশ আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সাবিনা মিনমিন করে বলল,

--"ফাঁকিবাজ মেয়ে! আগামীকাল থেকে মাহমুদের বাবাকে মাগরিবের নামাজের দশ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হতে বলব।"

আজকের যুগে কাজের লোক পাওয়া খুবই মুশকিল। মাসুদা কয়েক বাড়িতে কাজ করে তাদের বাড়িতে আসে। তবুও কাজে ফাঁকিবাজি করে। সাবিনা একদিনও মাসুদার হাতে কাজ দিয়ে নিশ্চিন্তে বসতে পারেনি। সবসময় মাসুদার সাথে থেকে তাকে ধরে ধরে কাজ করাতে হয়। এসব ব্যাপারে সাবিনা যেমন বিরক্ত তেমনই ক্লান্ত। আর কত একা হাতে সংসার সামলাবে? সুপ্তটাও কথা শুনে না। সাবিনা কবে থেকে তাকে বলছে বিয়ের কথা, কানই দেয় না ছেলেটা। কিন্তু এবার তিনি এর হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন। আগামীকালই জোবেদাকে খবর পাঠাবেন। তিনি ভালোই ঘটকালি করতে পারেন। এখন তার ঘটকালি কতটা ভালো সেটাই সাবিনা দেখে ছাড়বেন।

-----------------------------

নিশাতের ফর্ম ফিলাপের টাকা জমা দিতে নিপুণ স্কুলে এসেছিল। স্কুলে চলাফেরা করতে গিয়ে হঠাৎ নিশাতের এক স্যারের সাথে দেখা হয়। মধ্যবয়সী স্যার নিশাতকে নিয়ে কথা বলতে আলাদা ডাকেন নিপুণকে। নিপুণ চিন্তিত হয়ে পড়ে এ কথা শুনে। নিশাতের পড়াশোনায় কী কোনো খামতি চলছে? স্যার কোনো অভিযোগ করবেন না তো নিশাতকে নিয়ে। স্কুল ভবনের বাইরে কিছুটা দূরে দাঁড়াল নিপুণ স্যারের সম্মুখে। স্যার নিপুণকে আচমকা বিব্রতকর প্রশ্ন করে বসলেন,

--"শুনলাম তোমার নাকি ডিভোর্স হয়েছে?"

আচমকা এরূপ প্রশ্নে নিপুণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিপুণের চেহারায় সেই ভাব দেখে স্যার দ্রুত বললেন,

--"আরে, ভয়ের কিছু নেই। এভাবেই জিজ্ঞেস করলাম। একা ডিভোর্সী হয়ে নিশাতকে নিয়ে থাকছ এটা খুবই অবাকের ব্যাপার।"

নিপুণ সবসময় খেয়াল করেছে, 'ডিভোর্সী' শব্দটা তাকে কেমন দুর্বল করে ফেলে। এই দুর্বলচিত্তকে নিয়ে নিপুণ ভীষণ বিরক্ত। এই ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি তো সে কম হয়নি। তাহলে কেন এই একটি শব্দে নিজেকে বারবার আটকে ফেলছে? নিপূণ যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলল,

--"অবাকের কী আছে স্যার?"

স্যার কথা ঘুরালো। বলল,

--"কী করো তুমি?"

--"দেশী-বিদেশী অনলাইন মিডিয়ায় রিপোর্টিং-এর জব করছি।"

নিপুণ এবার ভালো ভাবে তাকালো স্যারের দিকে। স্যারের দৃষ্টিভঙ্গি হঠাৎ-ই কেমন বদলে গেল। নিপুণ স্যারের চোখে কাম দেখে নির্বাক হয়ে যায়। স্যার রসিয়ে রসিয়ে আরও কিছু বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু নিপুণ সেসব না শুনে সেখান থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। কোনো রকমে স্যারকে এড়িয়ে বলল, 

--"আমার দেরী হচ্ছে, যেতে হবে স্যার।"

নিপুণ যেতে নিলে স্যার হঠাৎ নিপুণের হাত ধরে বসলো। কামুক নজরে নিপুণকে আপাদমস্তক পরখ করে বলল,

--"চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। কেউ জানবে না আমরা বিয়ে করেছি, আলাদা থাকব। মাসে মাসে ভালো খরচও দিব। দিব্যি ভালো দিন কেটে যাবে নিশাতকে নিয়ে।"

নিপুণ আঁতকে ওঠে এই ধরণের কথা শুনে। যতদূর জেনেছে এই স্যার বিবাহিত, ছেলে-মেয়েও আছে। তার চাইতেও বড়ো ব্যাপার এই লোক নিপুণের বাবার বয়সী। নিপুণ চোখ রাঙিয়ে লোকটাকে বলল,

--"হাত ছাড়ুন স্যার। আমাকে সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য করবেন না। এটা স্কুল।"

লোকটা নিজের ধ্যান, হুঁশ একদম খুইয়ে বসেছে যেন। নিপুণের হাত না ছেড়ে বলল,

--"আমিও সিনক্রিয়েট চাচ্ছি না। চলো বিয়েটা সেরে ফেলি। তোমারও তো পুরুষ সঙ্গ প্রয়োজন তাই না? আমি দিতে রাজি।"

নিপুণের গা গুলিয়ে এলো এই ধরণের বাজে কথা শুনে। নিপুণ কিছু বলার আগেই তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো মিনহাজ সাহেব। মিনহাজ সাহেবকে দেখে স্যার চট করে নিপুণের হাত ছেড়ে দিলো। নিপুণ ঝাপসা চোখে তাকালো মিনহাজ সাহেবের দিকে। মিনহাজ সাহেব শক্ত চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার আমতা আমতা করছে, কিছু একটা বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে মিনহাজ সাহেবকে। মিনহাজ সাহেব নিপুণের দিকে একপলক তাকিয়ে বললেন,

--"তোমার নাম কী?"

নিপুণ আমতা আমতা করে বলল,

--"নিপুণ।"

--"নিপুণ মা, তুমি কাজে যাও। আমি ওর ব্যবস্থা করছি।"

নিপুণ একপলক চেয়ে দেখল স্যারকে। স্যার অসহায় মুখে মিনহাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে। নিপুণ সেখান থেকে চলে গেলো। স্কুল থেকে বেরিয়ে একটি সিএনজিতে উঠে মুখে শাড়ির আঁচল চেপে কেঁদে ওঠে। এই ছোটো জীবনে তার আর কত কিছু দেখার বাকি আছে? সে যে এসব আর নিতে পারছে না। ধৈর্য ক্ষমতাও যে মলিন হয়ে আসছে।

মিনহাজ সাহেব এবার স্যারের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললেন,

--"পুরুষ সঙ্গ প্রয়োজন তাই না?"

স্যার অত্যন্ত ভয় পেয়ে যায় মিনহাজ সাহেবের কথা শুনে। এর মানে কী তিনি সব শুনে ফেলেছেন। এ দিকটায় স্কুলের কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। লোকটা সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু মিনহাজ সাহেব যে এভাবে চলে আসবে কে জানত? স্যার হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইলো মিনহাজ সাহেবের কাছে। বারংবার মিনুতি করলো। কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না। মিনহাজ সাহেব ক্ষমা করলেন না। উলটো দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

--"পাওয়াচ্ছি তোর নারী সঙ্গ।"

বেশ অনেকদিন পর সুপ্তের ফোনে মিনহাজ সাহেবের নাম্বার থেকে কল এলো। বাইকে গা এলিয়ে রেখেছিল সুপ্ত। কিন্তু বাবার নাম্বার মোবাইলে ভেসে উঠতেই সুপ্ত চট করে উঠে বসে। দীপক কিছুটা দূরেই বিড়ি টানছিল। সুপ্ত ডাকে দীপককে। দীপক বিড়িটা ফেলে সুপ্তের দিকে এগিয়ে আসে। সুপ্ত ফোনের দিকে ভ্রু কুচকে চেয়ে বলল,

--"আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে রে দীপক?"

--"কেন? কী হয়েছে?"

--"বাবা কল দিচ্ছে।"

অবাক হলো দীপক। 

--"তো ধর কল। ইমার্জেন্সি হতে পারে।"

সুপ্ত গলা পরিষ্কার করে কল রিসিভ করলো। সালাম দিলো বাবাকে। ওপাশ থেকে মিনহাজ সাহেব গম্ভীর গলায় সালামের উত্তর নিয়ে বলল,

--"একটা কাজ আছে তোমার জন্য। সেই কাজ দিয়েই আমি দেখতে চাই এতদিন কোন রাজনীতির বিদ্যা শিখেছ তুমি!"

কল লাউড স্পিকারে ছিল। মিনহাজ সাহেবের কথা শুনে দুই বন্ধুই চরম অবাক হলো। সুপ্ত অবাক গলায় বলল,

--"ব্যাপার কী আব্বু?"

--"এক জানোয়ারকে ধরেছি। স্কুলের একজন অসুস্থ মানসিকতার স্যার। চাকরি গেলেও এর মানসিকতা সুস্থ হবে না। তাই একে তোমার কাছে হস্তান্তর করছি। কঠিন মামলা দিতে পারবে তো?"

মিনহাজ সাহেব থেমে আবার বললেন,

--"খবরদার যদি এ বেলায় নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছ তো!"

সুপ্ত বলল,

--"কী করেছে সেটা তো আগে জানতে হবে!"

মিনহাজ সাহেব খুলে বললেন সবকিছু। এক ফাঁকে সে নামটাও বলে ফেলেছেন নিপুণের। নিপুণের নাম শুনে সুপ্তের কান দুটো যেন গরম হয়ে গেলো। দীপক দাঁত দিয়ে নখ কাটলো। বিড়বিড় করে বলল,

--"শালা, আর মেয়ে পেলি না হাত বাড়ানোর জন্য। কুমিরভরা খালে পা বাড়ালি, তুই তো শেষ।"


চলবে............

৩য় পর্ব

htttp//wwwthritpatstory.com


সে_কি_জানে পর্ব_৩ সাহিত্য ডাইরি

সে_কি_জানে

পর্ব_৩

সাহিত্য ডাইরি 



অন্ধকারে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি কেও আমার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে।।তার পায়ের শব্দ পাচ্ছি আমি।।এতে যেন আরও ভয় পেয়ে যাই।।হাত-পা ছোটাছুটির চেষ্টা করছি আর বলছি....


---" রেয়ান!! এটা কি আপনি??প্লিজ সামনে আসুন।।আমার অনেক ভয় লাগছে "


কথাটা বলে আমি থেমে যাই।। কেউ কিছু বলে নাকি তা শুনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।।কিন্তু না!!কারো কোনো কথাই শুনা যাচ্ছে না,,,আর না শুনা যাচ্ছে সেই কাছে আসার শব্দ।। আবারও বলে উঠি.....


---" রেয়ান আপনি কোথায় প্লিজ সামনে আসুন।।আমি জানি আপনি এখানে।।"


বলতে না বলতেই কেউ হাওয়ার গতিতে এসে আমার হাত ২টো চেপে ধরে।।চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করেছে রুমটায়।। তাই হয়তো চিনার উপায় নেই এটা কে!! কিন্তু আমার বুঝতে বেগ পেতে হয়নি।।এটা যে রেয়ান,,তা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি আমি।।তাছাড়া রেয়ান ছাঁড়া কে হতে পারে যে আমাকে এভাবে হাত-পা বেঁধে রাখবে......


হঠাৎ রেয়ান আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে....


---" শাস্তি পাওয়ার জন্য তুমি তৈরি তো মরুভূমি?? "


কথাটা শুনে বেশভাবে বুঝিতে পারছি আমার সাথে কিছু হতে চলেছে।। কিন্তু এখন ভয় পেলে হবে না।। এখান থেকে বের হতে হবে আমার।।আমার ছোট্ট ছেলেটা যে আমার অপেক্ষা করছে।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলি.....


---" প্লিজ রেয়ান আমাকে যেতে দিন।।আমি....."


---" কি খালি,, যেতে দিন,,যেতে দিন করছো।।আমি বলেছি না যেতে দেব না,,,, মানে যেতে দেব না।। [ আমার কানে আলতো করে কামড় দিয়ে আবারও বললেন ] আচ্ছা আমার কাছ থেকে তুমি এত পালাতে চাও কেন??তোমার পাখা গজিয়েছে তাই না?? যদি পাখাটা কেটে দি তাহলে কেমন হয়??"


রেয়ানের কথায় স্পষ্ট রাগ অনুভব করতে পারছি আমি।।সাথে আমার ভয় তো আছেই।।কিন্তু কথাটা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে রেয়ান??কোনো কি খারাপ কিছু করবে সে.....


---" কেন এমন করছেন আপনি রেয়ান??"


---" কারনটা তোমার অজানা নয় "


---" রেয়ান বুঝার চেষ্টা করুন।।আমি একজন ডিভোর্সি আর আমার একটা ছেলেও আছে।। "


---" সো ওয়াট!! এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ব্যস!!"


---" এটা সম্ভব না রেয়ান।। আমার একটা অতীত আছে,,, একবার বিয়ে হয়েছে আমার,, কারও বউও হয়েছি আমি।।এখন আর কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই আমার,,,আর না আছে কারও বউ হওয়ার।।"


---" তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকবে তুমি আমার সাথে "


---" মানে??"


---" তুমিই তো বললে কারও বউ হওয়ার ইচ্ছে নেই তোমার।।তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকো আমার সাথে।।"


---" আপনি আসলেই একটা অমানুষ রেয়ান।।কথাগুলো বলতে আপনার বিবেকে বাঁধে না??কিভাবে বলছেন এগুলো??কোনো পুলিশ কি এমন হয়?? হয়তো,,, নাহলে আপনার মতো একটা জানোয়ার পুলিশ হলো কিভাবে।।"


কথাটা শুনে রেয়াম মনে হয় রেগে গেল।।আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে রাগি কণ্ঠে বলল.......


---" তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারব জান।।তোমাকে চাই আমার।।এট এনি কস্ট।।আর কি যেন বললে?? আমি অমানুষ,,জানোয়ার তাই না?? এখন জানোয়ার কি কি করতে পারে তা তো তোমাকে দেখাতেই হয়।।"


---" ক,,,কি করবেন আপনি?? "


রেয়ান আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন......


---" জান,,, তুমি অনেক বোকা জানো।।এটা জানা সত্ত্বেও যে তোমার ছেলে আর মা আমার কাছে বন্দী।।তাও আমাকে এত বড় বড় কথা শুনাচ্ছো।।এটা জন্য এখন তোমাকে শাস্তি তো দিতে হয়,,, কি বলো??"


বলতে বলতেই রেয়ান অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।।আগে রেয়ানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারলেও এখন সেটার ছিটেফোটাও নেই।।খুব ভয় লাগছে আমার।।রেয়ান কি করবে আমার মা আর ছেলের সাথে??ভয়টা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।।জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি.....


---" প্লিজ রেয়ান আমার মা আর ছেলেকে কিছু করবেন না।। আপনি যা বলবেন আমি তাই-ই করব।। প্লিজ ওদের কিছু করবেন না।। "


এভাবে অনেক কাকুতিমিনতি করার পরও কোনো লাভ হলো না।। কেউ আসলো না এ-ই অন্ধকার রুমে!!


.

.

.

.


সকালে.......🍁🍁


অনেক কষ্টের পর একটু আগেই চোখ লেগে আসে আমার।।।তখনই কেউ একজন এক জগ পানি আমার মুখে মেলা মারে।।সাথে সাথে আঁতকে উঠলাম আমি।।সামনে তাকাতেই দেখি রেয়ান প্যান্টের পকেটে ১হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।আর বাঁকা হাসছে।।রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।।কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান আমার কানে ফোন ধরে।।যেখানে আমার ছোট্ট ছেলে কান্না করছে আর আমাকে বলছে........


---" মা কোথায় তুমি?? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো আমার কাছে।। আমার না তোমাকে ছাঁড়া ভালো লাগছে না।।খুব কষ্ট হচ্ছে।। প্লিজ চলে আসো মা।। "


কথাটা শুনে আমার বুক ধক করে উঠে,,,চোখ দিয়ে আপিনা- আপনি পানি পড়ছে।।আমার ছেলের সাথে কথা বলতে যাবো।।তার আগেই রেয়ান এক ঝটকায় ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ফেলে।।একটু কথাও বলতে পারলাম না আমি আমার ছেলেটার সাথে।।


একরাশ ঘৃণা নিয়ে রেয়ানের দিকে তাকাই আমি।।ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো বাঁকা হাসছে।। কিন্তু না,,,,, তার মুখে বিরাজ করেছে বিরাট বড় গম্ভীরতা।।হুট করে রেয়ান আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।।তারপর এক এক করে আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে শুরু করে।। গম্ভীর কন্ঠে বলে......


---" আমাকে যতটা খারাপ ভাবো ততটা খারাপ আমি নই।।কিন্তু অত ভালোও নই।।এখন যেমন ভালো,,, তেমন খারাপ হতেও আমার বেশি সময় লাগবে না।। আর রইল বিয়ের কথা,,,,সেটা আমি তোমাকেই করব।।তোমার ইচ্ছায় কিংবা তোমার অনিচ্ছায় ।।বউ তো তুমি আমারই হবে।।আর যদি বউ হতে না চাও,,রক্ষিতা হিসেবে রাখব তোমায়।।ভালোই ভালোই আমি যখন বলব তখন বিয়ে করবে আমাকে,,,নাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।। "


বলেই উঠে দাঁড়ায় রেয়ান,,,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।।আর ভাবছি,,,,,একদিক দিয়ে সে কি চায় তা বুঝতে পারছি,,,কিন্তু অন্যদিক দিয়ে সব ধোয়াশা।। আসলে সে কি চায়?? আমাকে নাকি অন্য কিছু??


হঠাৎ রেয়ান আমার হাত টান দিয়ে দাঁড় করায়।।তারপর বলে.....


---" চলো "


---" কোথায়?? "


---" তোমার ছেলের কাছে "


বলেই আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।।এদিকে আমি হাঁটতে পারছি।।এতগুলো ঘন্টা এক ভাবে বসে থাকায় পা অবশ হয়ে গেছে আমার।।কোনোভাবে লেছড়িয়ে লেছড়িয়ে হাঁটছি আমি।।আমাকে এভাবে হাঁটতে দেখে রেয়ান হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার অবস্থা।।সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় সে আমাকে।। এতে কিছুটা চমকে যাই আমি।।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলি......


---" রেয়ান কি করছেন?? ছাঁড়ুন আমাকে?? "


আমার কথা শুনে সে আমাকে একটা ধমক দেয় ।। তারপর বলে.....


---" হাঁটতে পারছে না আবার দেমাগ কত!! যেভাবে হাঁটছ।। গাড়ির কাছে যেতেই ১০ঘন্টা লাগবে।। তখম আর যাওয়া লাগবে না নিজের ছেলের কাছে।।"


কথাটা শুনে আমি চুবসে গেলাম।।সে তো ঠিকই বলছে,,,কিন্তু তার জন্যই তো আমার এ-ই অবস্থা।।মনে মনে রেয়ানকে বকতে লাগলাম আর অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আমি রিহানের সাথে দেখা করব।।পুরো একটা দিন আমাকে ছাড়া থেকেছে সে।।হয়তো অনেক কান্না করেছে আমার জন্য।।


.

.

.

.


বাসায় ডুকতেই আমার ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।।আমিও কাদঁছি।।ওর সারা মুখে চুমু দেওয়া শুরু করি।।তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি......


---" কিচ্ছু হবে না রিহান।।মা এসে গেছি না।। আর কাঁদিস না।। "


---" তুমি অন্নেক পঁচা মা।।তুমি বলেছিলে আমাকে রেখে এভাবে আর যাবে না।। কিন্তু তুমি ঠিকই গিয়েছো।।জানো কত কান্না করেছি তোমার জন্য!!"


---" মাফ করে দে মাকে।।মারও তো কষ্ট হয়েছে তাই না।। মা ইচ্ছা করে যাই নি বাবুন।।"


এরই মাঝে রেয়ান বলে উঠল.....


---" তোমাদের মা ছেলের ভালোবাসা - বাসি শেষ হয়েছে?? "


কথাটা শুনে মা রেগে গেলেন।।এতক্ষন মা রেয়ানকে খেয়াল করেন নি।। তিনি তো আমাদের মা-ছেলেকে দেখছিলেন।।এখন রেয়ানকে দেখে তার রাগ উঠে গেল।।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন.....


---" মিরা এ ছেলে এখানে কেন?? একে বের কর আমাদের বাসা থেকে।। এমন বেহায়া আর বেয়াদব ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি।। "


কথাটা শুনে রেয়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে মাকে একবার দেখল।।তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল.....


---" আপনার কিছু দেখতে হবে না শাশুমা।।আপনার মেয়ে দেখলেই হবে।। আর ভালোভাবে কথা বলবেন আমার সাথে,,, জানেন তো কি করতে পারি আমি।।"


রেয়ানের কথা মা ঠিক হজম করতে পারলেন না।। আবার কিছু বলবেন তার আগেই রিহান বলে উঠে.....


---" নানু!!উনাকে বকছো কেন?? উনি তো অনেক ভালো বাবা।। উনাকে আমার অন্নেক ভালো লাগে "


রিহান কি বলল এইমাত্র??অনেক ভালো বাবা।।রেয়ানকে সে বাবা বলছে।। কেন??কিছুটা আগ্রহি কন্ঠে রিহানকে জিজ্ঞেস করলাম.....


---" বাবা মানে?? "


---" হুম বাবা।।উনি অনেক ভালো জানো মা।। আমাকে কালকে অনেক গল্প শুনিয়েছে,,,সাথে বলেছিলো তোমাকে আমার কাছে আজকে নিয়ে আসবে।। দেখো উনি উনার কথা রেখছে।। "


---" বুঝলাম।।কিন্তু তুমি উনাকে বাবা কেন ডাকছো??"


কথাটা আমি রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম।।সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আর বাঁকা হাসছে।। তার চোখ দিয়ে সে কিছু বলছে,,,, যার অর্থ "তুমি আমাকে পছন্দ না করলে কি হয়েছে মরুভূমি।।তোমার ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে!!ধীরে ধীরে তুমিও করবে।। " তার চোখের ভাষা বুঝতে পারলেও না বুঝার ভান করে রিহানের দিকে তাকালাম উত্তরের আশায়।।সাথে সাথে সেও বলল......


---" মা বাবা আমাকে বলেছিলো যদি উনি তোমাকে আমার কাছে সকালের মধ্যে এনে দেয় তাহলে আমাকে উনাকে বাবা ডাকতে হবে।। উনি তো উনার কথা রেখেছেন তাই না??।।তাছাড়া আমি বাবাকে প্রমিসও দিয়েছিলাম।।আর তুমিও তো বলো প্রমিস ভাংতে হয় না।। তাই আমিও উনাকে বাবা ডাকছি।।আর ভালোই হলো না মা??আমার একটা বাবাও হয়েছে।। "


কথাটা শুনে কি বলব বুঝতে পারছি না।। আমার ৪বছরের বাচ্চাটা কিই বা বুঝে।। তার যেটা ভালো মনে হয়েছে সে সেটাই করেছে।। তাকে কিছু কি বলা উচিত আমার।।হয়তো না।। তার তো কোনো দোষ নেই।।


হঠাৎ রেয়ানের কণ্ঠ শুনতে পাই।।সে নিজের হাতের ঘড়ি দেখতে দেখতে বলে.....


---" তোমাদের হয়েছে?? আমার কাজ আছে অনেক।। "


জানি না কেন রেয়ানের কথাটা শুনে রেগে যাই।।রাগি কন্ঠে তাকে বলি.....


---" তো আপনার দেড়ি হলে আমরা কি করব "


কথাটা বলতে না বলতেই সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়।।পরক্ষনে বলে উঠে.....


---" আমার ক্ষুধা লাগছে "


---" তো আমি করব?? "


---" যাও আমার জন্য বিরিয়ানি বানাও আমি খাবো "[ দাঁতে দাঁত চেপে ]


উনার কথা আর কথাবলার ভঙ্গি দেখে আমি অবাক,, সাথে বিরক্তও।।ক্ষুধা লাগছে তো বাইরে গিয়ে খাবে-এ না।। আমাকে বলার কি আছে?? তার উপর কত শখ,,আমি তার জন্য বিরিয়ানি বানাবো।। খেয়ে দেয়ে কি কাজ নেই আর আমার।।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।।কোনোমতে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললাম......


---" কঁচুর ডাল খাবেন "


---" মরুভূমি তুমি তো দেখি বয়রাও!!"


---"মানে??"


---" মানে,, আমি তোমাকে বিরিয়ানি বানাতে বলেছি,,,কঁচুর ডাল না।। বাই দা ওয়ে,,, এ কঁচুর ডাল কি?? "


---" এটা আমাদের স্পেসাল ডিস।। খাস কুত্তাদের জন্য তৈরি "


কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।।রাগি কন্ঠে বলে উঠে.....


---" অনেক বাড়া বেড়েছো তুমি তাই না?? কালকে কি করেছি মনে আছে তো,,,ভালো ব্যবহার করছি দেখে ভেবো না মাথার উপর উঠিয়ে রাখব।। খারাপ হতে কিন্তু আমার বেশি সময় লাগবে না।।। আর যা বলছি তা যেন ১ঘন্টার মধ্যে হয়ে যায়।।আমি বাইরে যাচ্ছি,,এসেই যেন দেখি বানিয়ে ফেলেছো।।আর যদি না দেখি তাহলে কি হবে তার কল্পনাও তুমি করতে পারবে না।। "


বলেই রেয়ান চলে যায়।।আর আমি,,, আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।। আচ্ছা মানষটা এমন কেন?? এ-ই ভালো তো এ-ই খারাপ,,,অনেক রহস্য ভরা এ-ই মানুষটার ভেতর!!




---" "আ" খাইয়ে দাও আমাকে "


---" মানে?? "


---" মানে বুঝো না?? বিরিয়ানি খাইয়ে দাও আমাকে "


---" কেন?? আপনার নিজের হাত নেই?? ওইটা দিয়ে খান না।। আমাকে বলছেন কেন?? "


---" আমি বলছি তোমাকে খাইয়ে দিতে " [ দাঁতে দাঁত চেপে ]


---" পারব না!! "


---" কি বললা আবার বলো তো "


উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম।।সাথে সাথে কয়েকটা ঢোক গিলে ফেললাম,,,কি ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছেন তিনি আমার দিকে।। ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম......


---" ইয়ে মানে বলছিলা কি রিহান আছে এখানে।। আমি কিভাবে কি করব আপনিই বলুন।।"


বলেই কিছুটা হাসার চেষ্টা করলাম।।ভেবেছিলাম কাজ হবে,,,, কিন্তু হলো না।। বলে না " যা হবার,,, তা শত চেষ্টা করার পরও আটকানো যায় না " আমার সাথে ঠিক তেমনই হলো।। আমার কথা শুনে রেয়ান রিহানের দিকে তাকালো।। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো......


---" রিহান,,, তোমার মা যদি আমাকে আর তোমাকে খাইয়ে দেয় তাহলে কেমন হয়?? "


রেয়ানের কথা শুনে রিহান কি বুঝলো জানি না।। কিন্তু সেও রেয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে বলল......


---" মা ভালোই হবে।। বাবা আর আমি এক সাথে তোমার হাতে খাবো।।খাইয়ে দাও না প্লিজ।।"


আমি কি করব বুঝতে পারছি না।। একবার রেয়ানের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার রিহানের দিকে।। এবার রেয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলল......


---" কি হলো খাইয়ে দিচ্ছো না কেন?? নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা করব?? "


রেয়ানের কথা শুনে আমি কিছুক্ষন চুপ থাকলাম।।অতপর খাইয়ে দেওয়া শুরু করলাম রেয়ান আর রিহানকে।। প্রথমে রিহানকে খাইয়ে দিলাম।।তারপর রেয়ানকে।।রেয়ানকে খাইয়ে দিতে খুব অসস্তি হচ্ছে আমার।।তাছাড়া রেয়ান বারবার আমার হাতে কামড় দিচ্ছে।। এবার তো খুব জোড়েই কামড়টা দেয়।।সাথে সাথে আমি "আহহ" বলে উঠি।।রেয়ানএকটা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের নখ দেখতে দেখতে বলে......


---" কি হয়েছে মরুভূমি?? কোথাও কি ব্যথা পেয়েছ?? "


তার কথা শুনে ইচ্ছে করছে হাতের পাশে থাকা প্লেট-টা দিয়ে তার মাথায় জোড়ে একটা বারি দি।।কিন্তু আমি নিরুপায়।।এটা যদি করি তাহলে পড়ে কি-না কি করবে আমার সাথে।। বলা তো আর যায় না,,, সে যদি পুলিশ হতো তাহলে মানা যেত,,,কিন্তু সে তো আস্ত একটা গুন্ডা পুলিশ!!


প্রায় ১ ঘন্টা পর রেয়ান আর রিহানকে খাওয়ানো শেষ হয় আমার।।আমি বুঝতে পারছি না রিহানও কি রেয়ানের সাথে মিলে গেছে নাকি??আজকে ২জনেই একাধারে খাবার খাচ্ছে যে খাচ্ছেই।।পেট যেন তাদের ভরছেই না।। অবশেষে ১ঘন্টা পর তাদের পেট মনে হয় একটু হলেও ভরেছে।। আর আমি মুক্তি পেয়েছি।।


খাওয়ানো শেষ হতেই রেয়ান রিহানকে নিয়ে ড্রইং রুমে চলে যায়,,,টিভি দেখার উদ্দেশ্যে!!


আর আমি মার জন্য খাবার বাড়ছি।। রেয়ান আসার পর থেকে মা একবারের জন্যও রুম থেকে বের হননি।।তার নাকি রেয়ানকে ভালো লাগে না।। খাবার খাওয়ার জন্য যখন মাকে ডাকতে গিয়েছিলাম,,,তখন মা সাফ সাফ মানা করে দেন যে তিনি রেয়ানের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খাবেন না।। যদি খান,, তাহলে নিজের রুমে খাবেন।।তাই আমিও খাবার নিয়ে যাচ্ছি তার রুমে।। সাথে আমার খাবারটাও।।মা আর আমি একসাথেই খাবো।।


মার রুমে ঢুকতেই দেখি মা বসে আছেন বিছানায়।।আমিও মার পাশে গিয়ে বসি।।তারপর মাকে বলি......


---" মা নাও খাবার এনেছি এখন তো খাও প্লিজ।।দেখো খাবারের সাথে রাগ করে থাকা ভালো না।। "


---" আমি খাবো না "


---" প্লিজ মা জেদ করো না।। দেখো আমিও খাই নি খাবার।।তোমার সাথে খাবো ভেবেছিলাম।।এখন যদি তুমি না খাও তাহলে আমিও খাবো না।।"


আমার কথাটা শুনে মা খাবারের প্লেট-টা নিতে নিতে বলে......


---" তুই যা করছিস তা কি ঠিক মিরা "


---" কি করেছি আমি?? "


---" এ-ই যে ও-ই ছেলেটার সব কথা শুনছিস।। আবার বাসায়ও আসতে দিচ্ছিস।। কেন প্রতিবাদ করছিস না ও-ই ছেলেটার?? আবার আমাকেও করতে দিচ্ছিস না।। "


---" আমি নিরুপায় মা।। তুমি জানো না রেয়ান ঠিক কেমন।।এমন কি আমিও জানিনা।। ও যা চায় তা আদায় করেই নেয়।।এতদিনে ঠিক বুঝে গেছি ওকে।।আমরা কিছু করতে পারবো না ওর।। "


---" কেন পারবো না।। ও পুলিশ বলেই যা ইচ্ছে করবে নাকি??"


---" এটাই তো ব্যপার মা।। ও শুধু পুলিশ না।। ও বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যানদের একজনের ছেলেও।।আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না।। পরে যদি কিছু বলি তাহলে হয়তো আমাদেরই ক্ষতি হবে!!তাছাড়া তুমি দেখেছো রেয়ানের রিহানের সাথে কত ভালো ভাব হয়েছে,,, ও যদি রিহানের কিছু করে।।আমি চাই না আমার কোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রিহানের কিছু হোক।। "


---" ও যদি তোকে বিয়ে করতে বলে।। তাহলে করবি?? "


---"........ "


---" কি হলো বল?? "


---" না "


---" তাহলে?? "


---" মা প্লিজ এ ব্যপারে আমাকে কিছু বলো না।। এত প্রেসার নিতে পারছি না আমি।।"


কথাটা শুনে মা চুপ হয়ে গেলেন।।হয়তো ভাবছেন,,"আসলেই আমি এত প্রেসার নিতে পারবো না!!"চুপচাপ খেয়ে নিলাম ২জনেই।।খাওয়া শেষে সব ঠিকঠাক করে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।ড্রইং রুমে যেতেই আমি অবাক!! রেয়ান আর রিহান সেই লেভেলের দুষ্টামি করছে।।আজ প্রথম মানুষটাকে হাসতে দেখলাম।।খুব প্রাণবন্ধ ভাবে হাসছে সে।।সাথে আমার ছেলেটাও।।খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছে সে রেয়ানকে।।


আমি তাদের মাঝে উপস্থিত হতেই রেয়ান হাসি বন্ধ করে দেয়।।আমাকে বসতে বলে,,, রিহানকে বলে.....


---" রিহান,,, তুমি তোমার নানুর কাছে যাও তো।। আমি আর তোমার মা একটা জরুরি কথা বলল "


---" আচ্ছা বাবা "


বলেই রিহান দোঁড় দিয়ে মার রুমে চলে যায়।। রিহান যেতেই রেয়ান ঠিক হয়ে বসে।।শান্ত কণ্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে.....


---" রিহান বলছিল,,ওর নাকি ৪ বছর।। "


---" হুম "


---" তাহলে তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিলো?? "


কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে তাকালাম,,, সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। হয়তো উত্তরের আসায়।।আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলি।।আমাকে কিছু বলতে না দেখে সে আবারও বলল.....


---" আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস কিরেছি।।উত্তরটা কি দেওয়া যায় না?? "


---" হুম "


---" তাহলে বলো,,তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিল??"


---" হুম "


---"কেন??"


সে এবার কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে ফিরে বসল।।সাথে আছে তার সেই তীক্ষ্ম দৃষ্টি।।আমি মাথা নিচু করেই বলতে লাগলাম.....


---" আমি অনেক গরিব ঘরের মেয়ে।। বাবা টাকার জন্য আমাকে একটা বড় লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন "


আমার কথা শেষ হতেই রেয়ান সোফার সাথে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে।। তারপর বলে.....


---" এবার বুঝলাম,, তোমার মতো একটা মেয়ে ডিভোর্সি কেন??হয়তো তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে বুড়ো ছিল।। তোমাকে অনেক মারতোও।।আর তার নারীর নেশা ছিল।।কয়েকদিন যাওয়ার পরও তোমাকে ভালো লাগছিল না তার।। তাই তোমাকে ছেঁড়ে চলে গেছে,,,তাই না??"


কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম....


---" জীবনেও না।। আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার ঠিক বয়সই ছিল,,আর সে অনেক ভালো ছিল "


---" তাহলে?? "


---"......... "


---" তুমি কিছু বলছ না মানে আমি যা ভাবছি ওইটাই সত্যি।। তাছাড়া অন্য কোনো কারন তো দেখছি না আমি।।তোমার এক্স হাসবেন্ড নিশ্চয় খারাপই ছিল।। "


উনার কথাগুলো শুনে রাগ হচ্ছে আমার।। প্রচুর রাগ।।রাগ সামলাতে না পেরে জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম.......


---" আমার শুভ অনেক ভালো,,,বুঝেছেন অনেক ভালো।। ও আমাকে অনেক ভালোবাসতো "


কথাটা বলতে গিয়ে ২ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আমার চোখ থেকে।। রেয়ান কিছু বলতে যাবে তখনি তার একটা ফোন আসে,,,স্ক্রিনে থাকা নামটা দেখেই সে কিছু না বলে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,, আমি সেখানেই বসে আছি।।আসলেই কেন শুভ আমাকে রেখে গিয়েছিল।। কারনটা যে এখনও আমার অজানা!!


.

.

.


সকালে......🍁🍁


কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যাচ্ছি আমি।।রাস্তায় অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছি রিকশার অপেক্ষায়।।কিন্তু কোনো রিকশা পাচ্ছি না।। বাধ্য হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি।।হঠাৎ মনে হয় আমার পাশে একটা গাড়ি আছে,,আর সেটা আমার সাথে সাথেই এগোচ্ছে।। পাশে তাকাতেই দেখি রেয়ান।।সে গাড়ি চালাচ্ছে।। ঠিক চালাচ্ছে না!! আমি যেভাবে হাঁটছি সে ঠিক সেই ভাবেই গাড়িটা আগাচ্ছে।।আমাকে তার দিকে ফিরতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে......


---" হাই মরুভূমি "


কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে হাঁটতে থাকি।।তার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার।।কি ভাবে কি সে আমাকে ??আমার কি কিষ্ট হয় না,, রাগ নেই আমার মাঝে,,, কাল যা হলো তার জন্য খুব রেগে আছি আমি তার উপর।।।আজ যাই করুক না কেন,,, কথা বলব না আমি তার সাথে।।


এদিকে রেয়ান বকবক করেই যাচ্ছে।।কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিচ্ছি না আমি।।এবার বেশ বিরক্তি নিয়েই সে বলল.....


---" মরুভূমি গাড়িতে উঠো "


---"....... "


---" তোমাকে আমি কি বলেছি।।উঠক গাড়িতে "


এবার কিছুটা রেগেই বলল কথাটা রেয়ান।।কিন্তু তাও আমি পাত্তা দিলাম না তাকে,,, নিজের মতো হাঁটছি।।হঠাৎ রেয়ান গাড়ি থেকে নেমে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।সাথে সাথে আমি আশেপাশে তাকাতে শুরু করি।।রাস্তার সব মানুষ আমাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।। কিছু মানুষ তো মুখ টিপে টিপে হাসছে।। এসব দেখে আমি নিজেকে যথা সম্ভব রেয়ান থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম,,,কিন্তু পারলাম না।। রেয়ান আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি লক করে দিলো।।এতে কিছুটা জোড়েই রেয়ানকে বললাম.....


---" আপনি যা করছেন তা একদমই ঠিক না।। সবসময় আপনি যা চাবেন তা কিন্তু হবে না।।


আমার কথা শুনে রেয়ান আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল......


---" সবসময় আমি যা চাইব তাই-ই হবে।। আজ তোমার অতীতটা জেনেই ছাঁড়বো!! "


বাগান জাতীয় কোনো জায়গায় আছি আমি আর রেয়ান।।চারপাশে ফুলের ঘ্রাণ ছঁড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।। বিরাট বড় গাছের নিচে বসে আছি আমি,,,আর আমার পাশেই বসে আছে রেয়ান।।সে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।। হয়তো উত্তরের আশায়।।কিন্তু তা বুঝতে পেরেও কোনো কথা বলছি না আমি।। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।।এবার কিছুটা অস্থির হয়েই রেয়ান জিজ্ঞেস করে......


---" মিরা,,,তুমি কি আমাকে তোমার অতীতটা বলবে না?? "


---" কি ব্যাপার মিস্টার রেয়ান।। আজ প্রথম আমার নাম ডেকেছেন আপনি "


---" না প্রথমবার না,,, ২বার।। "


---" ও "


---" কথা পেঁচিও না।।যা জানতে চাই তা তাড়াতাড়ি বলো।। নাহলে.... "


তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি বলতে শুরু করলাম.......


---" আপনাকে তো বলেছিলাম আমরা অনেক গরিব।।বাবা লালনপালন করতে পারতেন না আমার।।তাই ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে করিয়ে দেন আমাকে।। যার সাথে আমার বিয়ে হয় বিয়ের আগ পর্যন্ত তার কোনো কিছু সম্পর্কেই জানতাম না আমি।। শুধু শুনেছিলাম সে অনেক বড়লোক।। আমাকে অনেক সুখে রাখবে।। আমিও মেনে নিলাম।।এছাড়া যে কোনো উপায় ছিল না আমার।।না খেয়ে থাকা থেকে তো বিয়েটা করে ফেলাই উত্তম মনে করেছিলাম।।যা কিছুই হোক না কেন?? ২মুঠো ভাত তো খেতে পারবো!! আপনি কালকে একটা কথা বলেছিলেন,,,হয়তো আমার স্বামী বুড়ো হবে অথবা তার নারীর নেশা আছে।। বিয়ের আগে আমার সেটাই মনে হয়েছিল।।নাহলে আমার মতো একটা গরিব মেয়েকে একজন বড়লোক ছেলে বিয়ে করবে কেন?? কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,,,বিয়ের রাতে যখন তাকে দেখলাম,,তখন আমি পুরো অবাক!! একজন সুপুরুষ আমার সামনে বসে ছিল।।সত্যি বলতে এত সুন্দর পুরুষ আমি কখনও দেখি নি।।তখনই তার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম আমি।।সে রাতে অনেক কথা বলি আমি তার সাথে।। কথায় কথায় জানতে পারি তার নাম শুভ।। সে নাকি আমাকে একটা পার্কে দেখেছিলো।।তখনই আমাকে পছন্দ হয় তার।।আর আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন।।


উনি অনেক ভালো ছিলেন ।।আমার অনেক খেয়াল রাখতেন।।শুভর পরিবার বলতে আমি আর তার ছোট বোন রিহাই ।।এছাড়া আর কেউই ছিল না।। ছোট বেলাই তার বাবা-মা মারা যান।।আত্বীয়-সজনরাও সব দেশের বাইরে থাকেন,,,,


শুভ চেয়েছিলেন আমি যেন কলেজে ভর্তি হই।।ভর্তি হয়ই-ও।।কিন্তু কিছুদিন পরেই জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।।জানেন যেদিন উনাকে এ কথা বলি তখন তিনি অনেক কেঁদে ছিলেন,,,এজন্য না যে আমাদের বেবি হবে।। কেঁদে ছিলেন কারন আমার কম বয়স।। এত কম বয়সে আমার বেবি হবে কিভাবে?? আমি কিভাবে পড়ালেখা করব।।অনেকবার চেয়েছিলেন বেবি টা নষ্ট করে ফেলতে।।আমি একটু বড় হই।।তখন বেবি নিবেন।।কিন্তু আমি মানা করি।।কেন যেন মনে হচ্ছিল বেবিটা আমার প্রয়োজন।। দেখুন না আসলেই ও আমার প্রয়োজন।।এখন তো ওকে আমার লাগে তাই না?? ওকে ছাঁড়া যে আমি বাঁচতে পারতাম না।।


যখন রিহান হয়।।তখন শুভর চেহারা দেখার মতো ছিল।।অনেক খুশি ছিলেন তিনি।।ভেবেছিলাম রিহান হওয়ার পর আমি আর পড়ালেখা করতে পারব না।। কিন্তু জানেন শুভ আমাকে পড়ালেখা করতে দিয়েছিল।।সারাটাদিন আমার সেবা করত।।বলতে গেলে আমার থেকে রিহানকে সেই বেশি দেখাশুনা করত।।তার সাথে আমার পরিবারকেও আগলে রেখেছিল।।বাবাকে একটা চাকরি দেন।।আমরা এখন যে বাসায় আছি।।ওইটাও শুভ বানিয়ে দিয়েছিল বাবাকে।।বেশ ভালোই চলছিল আমাদের।।কিন্ত......"


কথাটা বলেই একটু থেমে যাই।।কয়েকটা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করি......


---" তখন আমি ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে মাত্র অনার্সে উঠেছিলাম।।বেশ ভালোই কাটছিলো আমাদের সংসার।।আনন্দের শেষ ছিল না।। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুভর একটা জরুরি কাজ পড়ে যায়।। তাকে ইমার্জেন্সি আমেরিকা যেতে হবে।।সবার কাছে বিদায় নিয়ে সে ওইদিন রাতে চলে যায় আমেরিকা।।আমার স্পষ্ট মনে আছে,,, যাওয়ার আগে সে বলেছিলো আমেরিকা থেকে খুব জলদিই চলে আসবে আমাদের কাছে।। কিন্তু আসে নি জানেন।।তখন যে গেল এখন পর্যন্ত সে আর আমাদের কাছে ফিরে নি।।আমার দোষ কি ছিল আমি জানি না।। তবে ও আমেরিকা যাওয়ার ২০ দিন পর আমাদের কাছে একটা চিঠি আসে,,,সেখানে লিখা ছিল আমি যেন আমার বাবার বাড়ি চলে যাই।।ও নাকি চায় না আমি ওর বাড়িতে থাকি।।শুভ ওর বোন কেও নাকি বলেছে যেন আমি এ বাসায় না থাকতে পারি।। আমাকে যেন ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ওদের বাড়ি থেকে।। তেমনটাই হয়।।তবে এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।। আমার বাবা যে ওদের কোম্পানিতে চাকরি করত।।সেখান থেকে তাকে ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।।বাবা অনেক বুড়ো ছিলেন।।এত কিছু একসাথে নিতে পারেন নি।। তাই হয়তো অসুস্থ হয়ে যান ।।"


কথাগুলো বলতে গিয়ে কথা বারবার আটকে যাচ্ছিল আমার।।তবুও নিজেকে সামলে নিলাম।। তারপর আবার বলতে লাগলাম.....


----" এ-র ১ মাস পর আমাদের বাসায় ডিভোর্স লেটার আসে।।সাথে ৬লাখ টাকাও।। এসব দেখে বাবা আর মা ২জনেই আরও অসুস্থ হয়ে যান।।ভাগ্য ক্রমে মার তেমন কোনো বড় অসুখ হয় নি।।কিন্তু বাবার অবস্থা ভালো ছিল না।। এ ৬ লাখ টাকার ৫লাখ টাকাই বাবার চিকিৎসা করতে চলে যায়।।কিন্তু তবুও বাবা সুস্থ হন না।। চলে যান আমাদের ছেঁড়ে।। এ দুনিয়া ছেঁড়ে।।এরপর থেকে শুরু হয় লোকেদের কথা।।তারা কি বলত জানেন।।আমি নাকি এটারই যোগ্য ছিলাম।।সুখ জিনিসটা আমার কপালে নেই।। আমি নাকি আমার স্বামকে আগলে রাখতে পারি নি।।আমি একটা.....।। এসব কথা শুনে ইচ্ছা করত মরে যেতে।। কিন্তু আমার যদি কিছু হয় তাহলে আমার মা আর ছেলে কিভাবে থাকবে।। তাই নিজেকে শক্ত করে নিলাম।।এরপর থেকে লোকেদের কথায় কান দিতাম না।।নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।।প্রতিদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করাতাম।।এ-র থেকে বেশি তো করতে পারব না।।আমি মাত্র ইন্টার পাশ।।কেই-বা আমাকে ভালো কোনো চাকরিতে নিবে।।কিন্তু তাতেও আমি দমে যাই নি।। যতটুকু পারতাম।।ততটুকু কাজ করতাম।।এভাবে কেটে যায় পুরো ১বছর ৫ মাস।।এখন সব কিছু মানিয়ে নিয়েছি আমি।।কিন্তু কেন যেন শুভর কথা মনে পড়লে নিজেকে আটকে রাখতে পারি না।।"


কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যাই।। রেয়ানও চুপ করে আছে।।হঠাৎ সে আমার দিকে ফিরে বলে উঠে.....


----" আচ্ছা আমার যতটুকু মনে হয় শুভ খারাপ ছিল।।তাহলে তুমি ওকে ভালো বলছিলে কেন?? "


----" কেমনে খারাপ বলুন তো।।এতকিছু করেছে সে আমার জন্য তাকে খারাপ কিভাবে বলি আমি।।হ্যাঁ ও যা করেছে তা ওর করা উচিত ছিল না।। আবার হয়তো আমারই কোনো দোষ ছিল।। "


---" এইতো বাংলাদেশের ডিপিকা মাইয়া,,, যত কিছু হোক না কেন সব দোষ তাদেরই।।স্বামীরা যেন ধোঁয়া তুলসি পাতা "


----" মানে?? "


----" মানে...দোষ ওর ছিল তোমার না।। ও-ই খারাপ।। "


---" হয়তো!! "


---" আবার বলে হয়তো "


আমি চুপ করে থাকলাম।।আসলেই রেয়ান ঠিক বলছে।। শুভ হয়তো খারাপই ছিল।। কিন্তু এতগুলো বছর থেকেছি তার সাথে।।কই কোনো বাজে দিক তো দেখি নি তার ।।তাহলে হুট করে এত পরিবর্তন কেন??এগুলো ভাবছি হঠাৎ রেয়ান আবার বলে উঠল....


--" আচ্ছা এত কম বয়সে বেবি হয়েছিল তোমার।।কোনো কি খারাপ ইফেক্ট পড়ে নি তোমার উপর??"


---" না,,,হয়তো আমার ভাগ্যে এমন কিছু ছিল না।। "


---" হুম "


---" আচ্ছা রেয়ান আপনি আমাকে কোথায় প্রথম দেখেছিলেন??"


কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে একবার তাকালো।।পরক্ষনে উঠে দাঁড়ায় সে,,প্যান্টের পকেটে হাত রেখে বলে.....


----" চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।।পরে নাহলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে "


উনার কথায় বেশ বুঝতে পারছি তিনি আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন।। কিন্তু কেন?? তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম.....


---" উত্তরটা কি দিবেন না আমাকে?? "


---" সময় আসুক,,একদিন না একদিন পেয়ে যাবে "


বলেই তিনি গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন......


.

.

.

.


রাতে......🍁🍁


ড্রইংরুমে রিহানকে খাওয়াচ্ছি আমি।।সামনেই টিভি চলছে।। রিহান টিভির রিমোট দিয়ে বারবার চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।। হঠাৎ সে আমাকে বলে উঠে.....


----" মা,, মা দেখো।। তোমাকে আর বাবাকে টিভিতে দেখাচ্ছে "


কথাটা শুনে আমি টিভির দিকে তাকালাম।।সেখানে তাকাতেই আমার চোখ বাইরে আসার উপক্রম।।টিভিতে আসলেই আমাকে আর রেয়ানকে দেখাচ্ছে।।আজকে সকালের ঘটনা।। যেখানে আমাকে রেয়ান কোলে করে গাড়িতে বসাচ্ছে।। ভিডিওটা ২বার দেখিয়ে টিভিতে একজন মহিলার অভির্ভাব ঘটে।।সে তার কাজ অনুযায়ী বলা শুরু করে....

##

" ব্রেকিং নিউজ,,, বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যান আজিজ আহমেদের ছেলে রেয়ান আহমেদ একটা মেয়েকে কোলে করে গাড়িতে বসাচ্ছেন।।গোপন সুত্রে জানা গেছে যে মেয়েটি একজন ডিভোর্সি আর তার একটি ছেলেও আছে।। এখন কথা হচ্ছে রেয়ান আহমেদ এমন মেয়ের সাথে কেন?? কোনো কি সম্পর্ক আছে তাদের মাঝে।। তাছাড়া রেয়ান আহমেদ মেয়েটির এলাকারই একজন পুলিশও।।আসলেই কি আছে তাদের মাঝে?? আর কতদিন ধরে চলছে এসব।।আসুন জেনে নি...... "


বলেই আরও কয়েকটি ভিডিও দেখায় তারা।।যেখানে আমার এলাকার কিছু লোকজন আছে,,, এ-ই লোকগুলো সেই লোক যারা আমাকে আগে কথা শুনাতো।। এখনও আমার নামে মদনাম করতে বাদ রাখে নি তারা,,, একজন তো আমাকে বেশ্যা বলছে।।আরও কত বাজে কথা!! এগুলো শুনে টপটপ করে চোখ থেকে পানি পড়ছে আমার।।এরমাঝে হঠাৎ দরজার কলিংবেল বেজে উঠে।।মা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রেয়ান।।রেয়ানকে দেখতেই আমার রাগ উঠে যায়,,,সে কাছে আসতেই আমি তার কলার চেপে ধরি।।রাগি কন্ঠে বলি.....


----" এখন তো খুশি আপনি?? দেখুন টিভিতে কি বলছে সবাই আমার নামে।। আমি নাকি বে,,,বেশ্যা।।সব আপনার জন্য হয়েছে সব।। "


কথাটা বলতে বলতেই রেয়ানকে মারা শুরু করলাম।।তা দেখে রিহান মায়া ভরা কন্ঠে বলল....


----" মা বাবাকে মারছো কেন??"


----" কোনো বাবা না এ লোক তোর।। আর একবার যদি কোনো অচেনা লোককে বাবা ডাকিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।।"


কথাটা ধমক দিয়েই বললাম আমি।।এ প্রথম রিহানকে ধমক দিয়েছি। ।পানিতে চোখ ভরে গেছে আমার ছেলেটার।।মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।। ওর চোখের পানি দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।। কিন্তু তাও নিজেকে শক্ত রাখলাম।। মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম....


---" মা রিহানকে নিয়ে যাও এখান থেকে "


আমার কথা শুনে মা ততক্ষনাত রিহানকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।।এদিকে রিহানকে বকা দিতে দেখে রেয়ান আমাকে কিছুটা রাগি কন্ঠে বলল....


----" আমার উপরের রাগ তুমি রিহানের উপর কেন ঝাঁড়ছো??"


---" কেন কষ্ট হচ্ছে বুঝি?? আচ্ছা আপনার কেন কষ্ট হচ্ছে?? কষ্ট তো আমার হওয়ার কথা তাই না?? তাহলে আপনার এত দরদ কেন ওর প্রতি?? আপনি আমাদের কেউ না,,,দূরে থাকবেন আমাদের কাছ থেকে।। "


---" দেখো মিরা,,শান্ত হও "


----" কেন?? শান্ত হবো কেন আমি?? আমি কোনো শান্ত হচ্ছি না।। আমার কি মনে হয় জানেন,,,, টিভিতে যা দেখাচ্ছে সব আপনি ইচ্ছা করে করেছেন।।যাতে আমি আপনাকে বিয়ে করি তাই না।। আরে আপনি এত নিচ যে আমাকে বেশ্যা বানিয়ে দিলেন??"


কথাটা শুনতেই রেয়ান রেগে গেলো।।আমার হাত শক্ত করে ধরে জোড়ে চিল্লিয়ে "মিরা" বলে উঠল।।এতে আমি তার হাত এক ঝটকায় সড়িয়ে দিলাম।।তারপর বললাম....


---" ছুঁবেন না আপনি আমাকে,, আপনার মতো পশু,, জানোয়ার,,অমানুষের হাতের ছোঁয়ায় আমার ঘৃণা হয় বুঝেছেন।।ঘৃণা হয় আমার।।"


কথাটা শেষ হতেই রেয়ান আমার গাল চেপে ধরল।।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে.....


----" আমার ছোঁয়ায় ঘৃণা হয় না তোর।। এ ছোঁয়াই তোর সহ্য করতে হবে।। "


বলেই রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দিলো।।আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,আমি সেখানেই বসে পড়ি।।কেন যানি আজ চোখের পানি বাঁধা মানছে না!!


.

.

.

.


রাত প্রায় ৩টা।। হঠাৎ-ই আমার ঘুম ভেংগে যায়।।পানির পিপাসা লাগছে খুব।।তাই উঠে রান্না ঘরে গেলাম পানি খেতে।।হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পাই,,,,দরজার কাছে যেতেই শুনতে পাই কেউ একজন মরুভূমি মরুভূমি বলে ডাকছে।। বুঝতে পারছি সেটা রেয়ান।।তাই সেখান থেকে চলে আসতে নিবো তখনই রেয়ান জোড়ে জোড়ে বলে উঠে....


----" ওই মরুভূমি দরজা খুল।।নাহলে কিন্তু দরজা ভেংগে ফেলবো "


বলেই জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো।। এমন ভাবে ধাক্কাচ্ছে যেন এখনই দরজা ভেংগে ফলবে।। যদি সত্যি সত্যি ভেংগে ফেলে দরজা?? ভেবেই দরজাটা খুললাম আমি।।দরজা খুলতেই দেখি রেয়ান কিছু একটার বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢুলছে।। আমাকে দরজা খুলতে দেখে সে একটা হাসি দিয়ে বলে......


----" আই লাভ ইউ মরুভূমি "


রেয়ান মুখ খুলতেই একটা বাঝে গন্ধ আসে আমার নাকে।। সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বলি.....


----" রেয়ান আপনি ড্রাংক?? "


----"ইয়াপ"


----" ড্রাংক হয়ে এখানে কি জন্য এসেছেন।।তামাশা পেয়েছেন নাকি।।বের হোন আমার বাসা থেকে "


----" নোপ "


----" কি ইয়াপ,,,নোপ লাগিয়ে রেখেছেন।। যান এখান থেকে "


কথাটা শুনে রেয়ান তেড়ে আসে আমার কাছে।। তারপর কি মনে করে বাসার দরজা লাগিয়ে দেয়।।তা দেখে আমি কিছুটা ভিত কন্ঠে বললাম....


----" দরজা লাগাচ্ছেন কে#ন??"


সে আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে।। তার হাতের বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে....



---" মদ খাবা মরুভূমি।।চলো ২ জন একসাথে নেশা করি।। "

কথাটা বলেই রেয়ান ঢুলতে ঢুলতে আমার দিকে এগুতে থাকে।। এতে আমি পিছাতে পিছাতে কিছুটা ধমকের সুরেই রেয়ানকে বলি......


---" দেখুন!! "


---" তো দেখাও না।। মানা করেছে কে?? ওয়েট,,, আমি দেখছি কেউ মানা করেছে নাকি।।কার এত বড় সাহস আমার বেক্কল মরুভূমিকে মানা করে??আজকে ও-ই ব্যটার একদিন কি আমার একদিন।। "


বলেই নিজের চারপাশে তাকাতে শুরু করে।। কেউ আছে কি-না তা দেখার জন্য।।এদিকে আমি বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে।। নেশা করে কি এ-র মাথা গেছে নাকি?? কি সব আবল তাবল কথা বলছে।। ইচ্ছে তো করছে এক বারি দিয়ে তার মাথা ফেটে দিতে।।কিন্তু এখন রাগলে চলবে না!!তাই ইচ্ছেটা সাইডে রেখে শান্ত কণ্ঠে রেয়ানকে বলি......


---" রেয়ান এখানে কেউ নেই।। আপনি আর আমি আছি শুধু।। "


---" তাহলে তো ভালোই হলো।।যত ইচ্ছে তত মদ খাইতে পারবো।।কি বলো??"


তার কথাশুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না।। তারে আমি কই কি আর সে আমারে কয় কি।।উফফ,,, বিরক্তিকর একটা অবস্থা!! বুঝতে পারছি না রেয়ানকে বাসা থেকে বের করব কিভাবে।। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে মিষ্টি সরে রেয়ানকে বললাম.....


---" দেখুন রেয়ান,,,এখন অনেক রাত হয়েছে,,এভাবে কারও বাসায় এত রাতে আসতে হয় না।। লোকে দেখলে কি বলবে।।আপনি প্লিজ যান এখান থেকে।।"


---" না আমি যাবো না।। আমি আমার মরুভূমির সাথে নেশা করব।।"


---" এখন কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি রেয়ান।। ভালোভাবে বলছি যান এখান থেকে নাহলে...."


---" নাহলে কি করবা?? কিছুই করতে পারবে না তুমি আমার।।আমি তোমাকে বলছি,,, তুমি আমার সাথে নেশা করো নাহলে আমি তোমাকে চুমু দিবো।। তাও আবার লিপ-এ "


---" মানুষ যে এত বাজে হতে পারে তা আপনাকে না দেখলে তো আমি জানতেই পারতাম না।।দেখুন আমি আবারও বলছি যান আমার বাসা থেকে,,, নাহলে আমি কিন্তু চেঁচামেচি করব।।আপনি কি চান আমি চেঁচামেচি করে লোকজন ডাকাই?? "


---" ডাকো!! দেখি তোমার কত বড় গলা।।কিন্তু আমি সিউর!!ফাটা গলা যেমন,,, তেমনই হবে তোমার গলার সর।।তাছাড়া এতে তোমারই লস।।তোমার চেঁচামেচিতে লোকজন তোমার বাসায় আসবে,,আমাদের এভাবে এত রাতে দেখবে।।তারপর অনেক বাজে বাজে কথা বলবে।।এন্ড লাস্টে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।। " [ একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে ]


---" রেয়ান,,আপনি এত বাজে কেন বলুন তো?? এত কিছুর পরও আমার সামনে আসতে আপনার লজ্জা করে না?? কিভাবে বলছেন এগুলো?? মাতাল অবস্থায় থেকেও এত বাজে কথা বলছেন ??"


---" হ্যাঁ বলছি।।কারন এ-ই মদের নেশা আমাকে গ্রাস করতে পারে না,, কে পারে জানো?? তুমি।।তোমার নেশা যে আমাকে খুব বাজে ভাবে গ্রাস করেছে।।চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারবো না।। মাতাল অবস্থায় থেকেও বারবার তোমার কথাই মনে পরে আমার।।কি করব বলো?? আমি যে নিরুপায়।।তোমার বাঁধনে আমি খুব বাজে ভাবে আটকে পড়েছি।।"


---" আপনি জীবনেও সুধরাবেন না মিস্টার রেয়ান।।এখনো আপনি এগুলো বলছেন??আমার আর এসব সহ্য হচ্ছে না রেয়ান।।প্লিজ জান আমার বাসা থেকে।।হাত জোড় করছি আপনাকে।। প্লিজ চলে যান।।আপনার এসব কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না!! "


আমার কথা রেয়ানের কানে গেছে নাকি জানি না,,, তবে সে কিছু না বলে দরজার দিকে যেতে লাগলো।।এটা দেখে আমি ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো চলে যাবে।। কিন্তু না,,, সে দরজার দিকে দু'পা এগিয়েই আবার আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।তারপর আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল.....


---" এখানে মদ খেয়ে মজা নেই বুঝলে মরুভূমি।।একটা কাজ করি,,,চলো ছাদে যাই।।সেখানে খাবো।।ছাদটা কোন দিকে বলতো??"


---" জীবনেও বলব না ছাদ কোন দিকে।।নামান আমাকে,, কোলে নিয়ে আছেন কেন আমায়??"


---" আমার ইচ্ছে।।আর শুনো,,, তোমাকে ছাদ কোথায় সেটা বলতে হবে না।। আমি যানি ছাদ কোন দিকে।।জাস্ট ফরমেলিটির জন্য বললাম।।এখন সেটার উত্তর না দিয়ে নিজের বেয়াদবির প্রমাণ দিলে তো আমার কিছু করার নেই।।"


---" কি বললেন আপনি?? আমি বেয়াদপ??আর ফরমেলিটি,,এখানে ফিরমেলিটির কি আছে?? "


---" হ্যাঁ তুমি বেয়াদব।।চরম রকমের বেয়াদব,,, এন্ড আমার যা ইচ্ছে আমি তোমাকে তাই-ই ডাকবো,,ইচ্ছে করলে ফাজিল,,বস্তি সব ডাকবো,, তোমার তাতে কি হ্যাঁ??"


---" আরে আমার ব্যাপারে বলছে আর আমাকেই জিজ্ঞেস করে আমার তাতে কি?? মাথা-টাথা কি গেছে নাকি আপনার?? নামান আমাকে।। আর এক্ষুনি বের হোন আমার বাসা থেকে।।"


আমার কথা তার কানে ডুকেছে বলে মনে হয় না।। সে তার মতো করে ছাদে নিয়ে যেতে লাগলো আমাকে।।আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা রাগি কণ্ঠে বললো......


---" বেক্কল মরুভূমি একটা "


.

.

.


মাথার উপরে বিশাল চাঁদ বিরাজ করেছে।।চাঁদের আলোয় চারপাশটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।সাথে দেখা যাচ্ছে রেয়ানের উদ্ভট কান্ডগুলোও।।ছাদের এক পাশে বসে আছি আমি।।আর আমার পাশে বসে আছে রেয়ান।।আমাদের ঠিক সামনে রাখা হয়েছে মদের বোতলটা।।রেয়ান এক দৃষ্টতে তাকিয়ে আছে সেটার দিকে।।এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন মদের বোতলটা নিয়ে তার কত শত চিন্তা।।হঠাৎ সে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল......


---" আচ্ছা মরুভূমি,,,আমি মদের বোতলটা থেকে মাত্র এক ঢোক খেয়েছি।।তাহলে বোতলের মদ অর্ধেক হলো কিভাবে??আমার অগোচড়ে এখান থেকে তুমি কি মদ খেয়েছো নাকি??"


এমতাবস্থায় আমার কি রিয়েকসন দেয়া উচিত বুঝতে পারছি।।মানে,, আমি মদ খেয়েছি এটা রেয়ানের ধারণা।। লাইক সিরিয়াসলি??ইচ্ছে তো করছে এখনি ছাদ থেকে ফেলে দি একে।।আমি বুঝিনা এটা কি ধরণের পুলিশ।। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান হুট করে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।।আর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমায়।।এতে আমি কিছুটা কেঁপে উঠি।।রেয়ানকে হালকা ধাক্কা দিতে দিতে বলি......


---" মিস্টার রেয়ান,,,,প্লিজ উঠুন আমার কোল থেকে।।"


---" উহু "


---" কি উহু?? আমি আপনাকে উঠতে বলেছি রেয়ান।।উঠে তাড়াতাড়ি আমার বাসা থেকে বের হন।। নাহলে কিন্তু....... "


রেয়ানের দিকে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই।।আমি এত কিছু বললাম,,, কিন্তু এ ব্যক্তির কানে মনে হয় কিচ্ছু যায় নি।।সে তো আরামসে আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে।।ঘুমন্ত অবস্থায় কেমন যেন লাগছে রেয়ানকে।।একদম বাচ্চা বাচ্চা!! ঠোঁট দু'টোও কেমন করে উল্টিয়ে রেখেছে।।কেন যানি না এখন রেয়ানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার ।।ভাবছি ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলি।।তাই রেয়ানের দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম......


রেয়ানের চুলগুলো কালো না।। কিছুটা লালচে রঙ্গের।।সাথে সিল্কিও অনেক।।সবসময় তার সামনের চুলগুলো,,, তার চোখের সামনে পরে থাকে।।রেয়ানের ভ্রুগুলোও লালচে রঙ্গের।।একদম পার্ফেক্ট।।আর তার চোখের পাপড়িগুলো।।সেগুলো অনেক ঘন ঘন।।ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।। চোখের বাম পাশে একটা ছোট তিল আছে।। একদম আমার মতো।। তার আর আমার ঠিক একই রকমের তিল আছে চোখের বাম পাশটায়।।যাক,,,এতদিনে তার সাথে আমি আমার কোনো মিল পেলাম।।ভেবেই অনমনেই একটা হাসি দিয়ে দিলাম।। পরক্ষনে আবার তাকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করি।।রেয়ানের নাকটা অনেক সরু,, আর তার ঠোঁট,,, সেটা তো অনেক গোলাপি।।আচ্ছা কোনো ছেলের কি ঠোঁট এত গোলাপি হয়?? তারউপর তিনি ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছেন!! আসলে উনি সুন্দর।।শুধু সুন্দর না অনেক সুন্দর।।হঠাৎ খেয়াল করলাম তার গায়ের রঙ্গের দিকে।।এখানেও সে ১০০ তে ১০০।। আমার থেকেও তিনি তিন ডাবল সাদা।।কেন যেন আমার আর তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না। ।খুব হিংসে হচ্ছে আমার।।এত সুন্দর কেন তিনি?? তাও আবার আমার থেকেও!!


.

.

.


ভোরের প্রথম আলো আমার চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেংগে যায়।।রেয়ান এখনও আমার কোলে ঘুমুচ্ছে।।তার দিকে একবার তাকিয়ে তাকে নিচে শুইয়ে দিলাম।।তারপর চলে আসলাম নিচে।।নিজের রুমে!!

.

.

সকাল প্রায় অনেক.....আমি,, রিহান আর মা সবাই নিচে।। শুধু রেয়ান ছাঁড়া।। সে এখনো মনে হয় ঘুমুচ্ছে ছাদে।।নিচে আসার পর থেকে একবারও তার কাছে যাই নি আমি।।হঠাৎ কলিংবেলের বেলের আওয়াজ পাই।।দরজা খুলতেই দেখি একদল রিপোটার্স দাঁড়িয়ে আছে।।আমাকে দেখতেই তারা নানা বাজে বাজে প্রশ্ন করতে শুরু করেন আমাকে।।সাথে সাথে আমি দরজা বন্ধ করে দি।।বিরক্তি লাগছে এগুলো আমার।।এসব মিডিয়ার লোক এখন আমার বাসার সামনেও চলে এসেছে।।তাদের জন্য হয়তো বাসা থেকেও বের হতে পারবো না আমি।।আসতে আসতে রাগতে শুরু করি আমি।।কেন যেন রাগ লাগছে প্রচুর।।আর তা আরও বেড়ে যায় রেয়ানকে দেখে।। সে ধীর পায়ে আমার দিকে এগুচ্ছে।। তাকে দেখে আমি রাগি কণ্ঠে বললাম......


---" দেখুন আপনার জন্য কি অবস্থা হয়েছে আমাদের।।এখন তো বাসা থেকে বেরও হতে পারবো না আমরা।।সাথে লোকেদের কথা তো আছেই।।কেন এমন হচ্ছে রেয়ান।।আপনার জন্যই তো তাই না??তাহলে কেন চলে যাচ্ছেন না আপনি আমাদের জীবন থেকে?? "


কথাটা শুনে রেয়ান কোনো জবাব দিলো না আমায়।।শুধু তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে এগুতে লাগলো।।তা দেখে মা এবার তার ঝাঁঝালো কন্ঠে রেয়ানকে বলল.....


---" এ-ই ছেলে,, তুমি আমার বাসায় কিভাবে?? আর আমার মেয়ের দিকে এভাবে এগোচ্ছ কেন?? বের হও আমার বাসা থেকে।।"


মার কথা শুনে রেয়ান তার দিকে তাকালো।।কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে মাকে বলে.....


---" দেখুন শাশুমা,,আমি এখানে কিভাবে তা আপনার না জানলেও চলবে।।আর শুনুন,, আমার নাম রেয়ান,,আমাকে রেয়ান বলে ডাকলেই আমি বেশি খুশি হবো।।আর আরেকটা কথা।।আপনার মেয়ে আমার আমানত,,তাই ওর সাথে আমি কি করি না করি তা আপনার না দেখলেও চলবে।।ইস দেট ক্লিয়ার??"


কথাটা বলে রেয়ান আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না।। আমাকে কোলে নিয়ে সোজা পা দাঁড়ালো আমার রুমের দিকে।।এদিকে সোফায় আরাম করে ঘুমিয়ে আছে রিহান।।এতক্ষন যে এতকিছু হলো তা যেন সে টেরই পায় নি!!


রুমে ঢুকতেই রেয়ান থেকে আমি নিজেকে ছাঁড়িয়ে নিলাম।।তার কলার ধরে রাগি কণ্ঠে বলালম.....


---" আপনার সমস্যা কি বলুন তো রেয়ান?? লজ্জা বা অনুতপ্ত বোধ কিছুই কি কাজ করছে না আপনার মাঝে।।এতকিছুর পরও আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন??আর আপনার সাহস কিভাবে হলো আমাকে কোলে তুলার।।কালকে রাতে কিছু বলিনি দেখে আপনি বারবার আমাকে কোলে নিবেন নাকি??"


---" কোলে নিবো।।১০০বার নিবো।।কারন তুমি আমার আমানত "


---" কিসের আমানত আমি আপনার?? আমি কারও কোনো আমানত না বুঝেছেন??আর আপনার তো জীবনেও না।। আপনার মতো অমানুষের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা করে।।"


---" তাই?? তাহলে তো এটার অভ্যেস করে নাও।।কারন আমাদের যখন বিয়ে হবে তখন এগুলোই সহ্য করতে হবে তোমার।।"


---" কখনও না।। যার জন্য আমার চরিত্রে দাগ লেগেছে তাকে আমি জীবনেও বিয়ে করব না।।আমি মরে যাবো কিন্তু আপনাকে বিয়ে করব না বু......."


আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রেয়ান আমার ২হাতের বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে।। নিজের মুখ আমার মুখের একদম কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে.......


---" কি বললি তুই??তুই মরে যাবি কিন্তু আমাকে বিয়ে করবি না তাই না?? আরে আমি চাইলে তোকে এখন এ-ই মুহুর্তে বিয়ে করতে পারবো।।কিন্তু কেন করছি না জানিস।।কারন আমি চাই তুই নিজে থেকে আমাকে বিয়ে করিস।।জোড় করে না।।"


---" সে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিন রেয়ান।।কারন আপনার এ স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না।। "


---" একটা কথা জানো কি মরুভূমি।।আমি স্বপ্ন পূরণ করার জন্য দেখি।। তা মাঝ পথে রেখে দেওয়ার জন্য না।।এন্ড আম সিউর।।এ স্বপ্নটাও পুরণ হবে।।তাও অনেক তাড়াতাড়ি।।"


কথাটা বলেই রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দেয়।।তারপর চলে যেতে নিলে আমি তাকে কিছুটা বিরক্ত কণ্ঠে বলি.....


---" কোথায় যাচ্ছেন আপনি??"


---" এখানে তো তুমি থাকতে দিবে না।। তাই বাইরে যাচ্ছি।।কাজ আছে।।"


---" কিভাবে বাইরে যাবেন শুনি?? মিডিয়ার লোক চারপাশ দিয়ে ঘেরে রেখেছে আমার বাসা।।যাওয়ার কোনো উপায় নেই।। "


---" তাহলে কি তুমি আমাকে এখানে থাকতে বলছ??"


তার কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে যাই।।কি বলব বুঝয়ে পারছি না।। সে আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে মুচকি হেসে বলে.....


---" তুমি আমাকে এত কাঁচা খেলোয়াড় ভাবো মরুভূমি।।ভুলে যেও না আমি একজন পুলিশ।। কোথায়,,, কিভাবে বের হতে হবে।।সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।।"


বলেই আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে সে রুম থেকে বের হয়ে যায়।।


.

.

.

.


দুপুর প্রায় ২টা।।মাত্র রিহানকে খাইয়ে দিলাম আমি।।এবার আমার আর মার খাবার পালা।।টেবিলে খাবার বাড়ছি,,এমন সময় দরজার কলিংবেল বেজে উঠে।।ভেবেছিলাম হয়তো মিডিয়ার লোক হবে,,তাই পাত্তা দিলাম না।। কিন্তু ৫-৬ বার কলিংবেল বাজার পর বাধ্য হয়ে দরজা খুললাম আমি।।দরজা খুলতেই দেখি রেয়ান দাঁড়িয়ে আছে।।চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে সে।। চোখ দু'টো লাল হয়ে আছে। আর তার দৃষ্টি স্থির আমার চোখের দিকে।।কেন যানি না রেয়ানকে #খুব অস্বাভাবিক লাগছে আমার।।ভালোভাবে রেয়ানের দিকে তাকাতেই আমার চোখ যায় তার হাতের দিকে।।হাত থেকে টপটপ করে রক্ত ঝড়ছে তার।।




#চলবে🍁🍁


৪থ পর্ব লিংক 

https//wwwfourpartstory.com