সে_কি_জানে
পর্ব_৩
সাহিত্য ডাইরি
অন্ধকারে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি কেও আমার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে।।তার পায়ের শব্দ পাচ্ছি আমি।।এতে যেন আরও ভয় পেয়ে যাই।।হাত-পা ছোটাছুটির চেষ্টা করছি আর বলছি....
---" রেয়ান!! এটা কি আপনি??প্লিজ সামনে আসুন।।আমার অনেক ভয় লাগছে "
কথাটা বলে আমি থেমে যাই।। কেউ কিছু বলে নাকি তা শুনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।।কিন্তু না!!কারো কোনো কথাই শুনা যাচ্ছে না,,,আর না শুনা যাচ্ছে সেই কাছে আসার শব্দ।। আবারও বলে উঠি.....
---" রেয়ান আপনি কোথায় প্লিজ সামনে আসুন।।আমি জানি আপনি এখানে।।"
বলতে না বলতেই কেউ হাওয়ার গতিতে এসে আমার হাত ২টো চেপে ধরে।।চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করেছে রুমটায়।। তাই হয়তো চিনার উপায় নেই এটা কে!! কিন্তু আমার বুঝতে বেগ পেতে হয়নি।।এটা যে রেয়ান,,তা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি আমি।।তাছাড়া রেয়ান ছাঁড়া কে হতে পারে যে আমাকে এভাবে হাত-পা বেঁধে রাখবে......
হঠাৎ রেয়ান আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে....
---" শাস্তি পাওয়ার জন্য তুমি তৈরি তো মরুভূমি?? "
কথাটা শুনে বেশভাবে বুঝিতে পারছি আমার সাথে কিছু হতে চলেছে।। কিন্তু এখন ভয় পেলে হবে না।। এখান থেকে বের হতে হবে আমার।।আমার ছোট্ট ছেলেটা যে আমার অপেক্ষা করছে।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলি.....
---" প্লিজ রেয়ান আমাকে যেতে দিন।।আমি....."
---" কি খালি,, যেতে দিন,,যেতে দিন করছো।।আমি বলেছি না যেতে দেব না,,,, মানে যেতে দেব না।। [ আমার কানে আলতো করে কামড় দিয়ে আবারও বললেন ] আচ্ছা আমার কাছ থেকে তুমি এত পালাতে চাও কেন??তোমার পাখা গজিয়েছে তাই না?? যদি পাখাটা কেটে দি তাহলে কেমন হয়??"
রেয়ানের কথায় স্পষ্ট রাগ অনুভব করতে পারছি আমি।।সাথে আমার ভয় তো আছেই।।কিন্তু কথাটা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে রেয়ান??কোনো কি খারাপ কিছু করবে সে.....
---" কেন এমন করছেন আপনি রেয়ান??"
---" কারনটা তোমার অজানা নয় "
---" রেয়ান বুঝার চেষ্টা করুন।।আমি একজন ডিভোর্সি আর আমার একটা ছেলেও আছে।। "
---" সো ওয়াট!! এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ব্যস!!"
---" এটা সম্ভব না রেয়ান।। আমার একটা অতীত আছে,,, একবার বিয়ে হয়েছে আমার,, কারও বউও হয়েছি আমি।।এখন আর কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই আমার,,,আর না আছে কারও বউ হওয়ার।।"
---" তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকবে তুমি আমার সাথে "
---" মানে??"
---" তুমিই তো বললে কারও বউ হওয়ার ইচ্ছে নেই তোমার।।তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকো আমার সাথে।।"
---" আপনি আসলেই একটা অমানুষ রেয়ান।।কথাগুলো বলতে আপনার বিবেকে বাঁধে না??কিভাবে বলছেন এগুলো??কোনো পুলিশ কি এমন হয়?? হয়তো,,, নাহলে আপনার মতো একটা জানোয়ার পুলিশ হলো কিভাবে।।"
কথাটা শুনে রেয়াম মনে হয় রেগে গেল।।আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে রাগি কণ্ঠে বলল.......
---" তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারব জান।।তোমাকে চাই আমার।।এট এনি কস্ট।।আর কি যেন বললে?? আমি অমানুষ,,জানোয়ার তাই না?? এখন জানোয়ার কি কি করতে পারে তা তো তোমাকে দেখাতেই হয়।।"
---" ক,,,কি করবেন আপনি?? "
রেয়ান আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন......
---" জান,,, তুমি অনেক বোকা জানো।।এটা জানা সত্ত্বেও যে তোমার ছেলে আর মা আমার কাছে বন্দী।।তাও আমাকে এত বড় বড় কথা শুনাচ্ছো।।এটা জন্য এখন তোমাকে শাস্তি তো দিতে হয়,,, কি বলো??"
বলতে বলতেই রেয়ান অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।।আগে রেয়ানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারলেও এখন সেটার ছিটেফোটাও নেই।।খুব ভয় লাগছে আমার।।রেয়ান কি করবে আমার মা আর ছেলের সাথে??ভয়টা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।।জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি.....
---" প্লিজ রেয়ান আমার মা আর ছেলেকে কিছু করবেন না।। আপনি যা বলবেন আমি তাই-ই করব।। প্লিজ ওদের কিছু করবেন না।। "
এভাবে অনেক কাকুতিমিনতি করার পরও কোনো লাভ হলো না।। কেউ আসলো না এ-ই অন্ধকার রুমে!!
.
.
.
.
সকালে.......🍁🍁
অনেক কষ্টের পর একটু আগেই চোখ লেগে আসে আমার।।।তখনই কেউ একজন এক জগ পানি আমার মুখে মেলা মারে।।সাথে সাথে আঁতকে উঠলাম আমি।।সামনে তাকাতেই দেখি রেয়ান প্যান্টের পকেটে ১হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।আর বাঁকা হাসছে।।রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।।কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান আমার কানে ফোন ধরে।।যেখানে আমার ছোট্ট ছেলে কান্না করছে আর আমাকে বলছে........
---" মা কোথায় তুমি?? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো আমার কাছে।। আমার না তোমাকে ছাঁড়া ভালো লাগছে না।।খুব কষ্ট হচ্ছে।। প্লিজ চলে আসো মা।। "
কথাটা শুনে আমার বুক ধক করে উঠে,,,চোখ দিয়ে আপিনা- আপনি পানি পড়ছে।।আমার ছেলের সাথে কথা বলতে যাবো।।তার আগেই রেয়ান এক ঝটকায় ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ফেলে।।একটু কথাও বলতে পারলাম না আমি আমার ছেলেটার সাথে।।
একরাশ ঘৃণা নিয়ে রেয়ানের দিকে তাকাই আমি।।ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো বাঁকা হাসছে।। কিন্তু না,,,,, তার মুখে বিরাজ করেছে বিরাট বড় গম্ভীরতা।।হুট করে রেয়ান আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।।তারপর এক এক করে আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে শুরু করে।। গম্ভীর কন্ঠে বলে......
---" আমাকে যতটা খারাপ ভাবো ততটা খারাপ আমি নই।।কিন্তু অত ভালোও নই।।এখন যেমন ভালো,,, তেমন খারাপ হতেও আমার বেশি সময় লাগবে না।। আর রইল বিয়ের কথা,,,,সেটা আমি তোমাকেই করব।।তোমার ইচ্ছায় কিংবা তোমার অনিচ্ছায় ।।বউ তো তুমি আমারই হবে।।আর যদি বউ হতে না চাও,,রক্ষিতা হিসেবে রাখব তোমায়।।ভালোই ভালোই আমি যখন বলব তখন বিয়ে করবে আমাকে,,,নাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।। "
বলেই উঠে দাঁড়ায় রেয়ান,,,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।।আর ভাবছি,,,,,একদিক দিয়ে সে কি চায় তা বুঝতে পারছি,,,কিন্তু অন্যদিক দিয়ে সব ধোয়াশা।। আসলে সে কি চায়?? আমাকে নাকি অন্য কিছু??
হঠাৎ রেয়ান আমার হাত টান দিয়ে দাঁড় করায়।।তারপর বলে.....
---" চলো "
---" কোথায়?? "
---" তোমার ছেলের কাছে "
বলেই আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।।এদিকে আমি হাঁটতে পারছি।।এতগুলো ঘন্টা এক ভাবে বসে থাকায় পা অবশ হয়ে গেছে আমার।।কোনোভাবে লেছড়িয়ে লেছড়িয়ে হাঁটছি আমি।।আমাকে এভাবে হাঁটতে দেখে রেয়ান হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার অবস্থা।।সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় সে আমাকে।। এতে কিছুটা চমকে যাই আমি।।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলি......
---" রেয়ান কি করছেন?? ছাঁড়ুন আমাকে?? "
আমার কথা শুনে সে আমাকে একটা ধমক দেয় ।। তারপর বলে.....
---" হাঁটতে পারছে না আবার দেমাগ কত!! যেভাবে হাঁটছ।। গাড়ির কাছে যেতেই ১০ঘন্টা লাগবে।। তখম আর যাওয়া লাগবে না নিজের ছেলের কাছে।।"
কথাটা শুনে আমি চুবসে গেলাম।।সে তো ঠিকই বলছে,,,কিন্তু তার জন্যই তো আমার এ-ই অবস্থা।।মনে মনে রেয়ানকে বকতে লাগলাম আর অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আমি রিহানের সাথে দেখা করব।।পুরো একটা দিন আমাকে ছাড়া থেকেছে সে।।হয়তো অনেক কান্না করেছে আমার জন্য।।
.
.
.
.
বাসায় ডুকতেই আমার ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।।আমিও কাদঁছি।।ওর সারা মুখে চুমু দেওয়া শুরু করি।।তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি......
---" কিচ্ছু হবে না রিহান।।মা এসে গেছি না।। আর কাঁদিস না।। "
---" তুমি অন্নেক পঁচা মা।।তুমি বলেছিলে আমাকে রেখে এভাবে আর যাবে না।। কিন্তু তুমি ঠিকই গিয়েছো।।জানো কত কান্না করেছি তোমার জন্য!!"
---" মাফ করে দে মাকে।।মারও তো কষ্ট হয়েছে তাই না।। মা ইচ্ছা করে যাই নি বাবুন।।"
এরই মাঝে রেয়ান বলে উঠল.....
---" তোমাদের মা ছেলের ভালোবাসা - বাসি শেষ হয়েছে?? "
কথাটা শুনে মা রেগে গেলেন।।এতক্ষন মা রেয়ানকে খেয়াল করেন নি।। তিনি তো আমাদের মা-ছেলেকে দেখছিলেন।।এখন রেয়ানকে দেখে তার রাগ উঠে গেল।।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন.....
---" মিরা এ ছেলে এখানে কেন?? একে বের কর আমাদের বাসা থেকে।। এমন বেহায়া আর বেয়াদব ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি।। "
কথাটা শুনে রেয়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে মাকে একবার দেখল।।তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল.....
---" আপনার কিছু দেখতে হবে না শাশুমা।।আপনার মেয়ে দেখলেই হবে।। আর ভালোভাবে কথা বলবেন আমার সাথে,,, জানেন তো কি করতে পারি আমি।।"
রেয়ানের কথা মা ঠিক হজম করতে পারলেন না।। আবার কিছু বলবেন তার আগেই রিহান বলে উঠে.....
---" নানু!!উনাকে বকছো কেন?? উনি তো অনেক ভালো বাবা।। উনাকে আমার অন্নেক ভালো লাগে "
রিহান কি বলল এইমাত্র??অনেক ভালো বাবা।।রেয়ানকে সে বাবা বলছে।। কেন??কিছুটা আগ্রহি কন্ঠে রিহানকে জিজ্ঞেস করলাম.....
---" বাবা মানে?? "
---" হুম বাবা।।উনি অনেক ভালো জানো মা।। আমাকে কালকে অনেক গল্প শুনিয়েছে,,,সাথে বলেছিলো তোমাকে আমার কাছে আজকে নিয়ে আসবে।। দেখো উনি উনার কথা রেখছে।। "
---" বুঝলাম।।কিন্তু তুমি উনাকে বাবা কেন ডাকছো??"
কথাটা আমি রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম।।সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আর বাঁকা হাসছে।। তার চোখ দিয়ে সে কিছু বলছে,,,, যার অর্থ "তুমি আমাকে পছন্দ না করলে কি হয়েছে মরুভূমি।।তোমার ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে!!ধীরে ধীরে তুমিও করবে।। " তার চোখের ভাষা বুঝতে পারলেও না বুঝার ভান করে রিহানের দিকে তাকালাম উত্তরের আশায়।।সাথে সাথে সেও বলল......
---" মা বাবা আমাকে বলেছিলো যদি উনি তোমাকে আমার কাছে সকালের মধ্যে এনে দেয় তাহলে আমাকে উনাকে বাবা ডাকতে হবে।। উনি তো উনার কথা রেখেছেন তাই না??।।তাছাড়া আমি বাবাকে প্রমিসও দিয়েছিলাম।।আর তুমিও তো বলো প্রমিস ভাংতে হয় না।। তাই আমিও উনাকে বাবা ডাকছি।।আর ভালোই হলো না মা??আমার একটা বাবাও হয়েছে।। "
কথাটা শুনে কি বলব বুঝতে পারছি না।। আমার ৪বছরের বাচ্চাটা কিই বা বুঝে।। তার যেটা ভালো মনে হয়েছে সে সেটাই করেছে।। তাকে কিছু কি বলা উচিত আমার।।হয়তো না।। তার তো কোনো দোষ নেই।।
হঠাৎ রেয়ানের কণ্ঠ শুনতে পাই।।সে নিজের হাতের ঘড়ি দেখতে দেখতে বলে.....
---" তোমাদের হয়েছে?? আমার কাজ আছে অনেক।। "
জানি না কেন রেয়ানের কথাটা শুনে রেগে যাই।।রাগি কন্ঠে তাকে বলি.....
---" তো আপনার দেড়ি হলে আমরা কি করব "
কথাটা বলতে না বলতেই সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়।।পরক্ষনে বলে উঠে.....
---" আমার ক্ষুধা লাগছে "
---" তো আমি করব?? "
---" যাও আমার জন্য বিরিয়ানি বানাও আমি খাবো "[ দাঁতে দাঁত চেপে ]
উনার কথা আর কথাবলার ভঙ্গি দেখে আমি অবাক,, সাথে বিরক্তও।।ক্ষুধা লাগছে তো বাইরে গিয়ে খাবে-এ না।। আমাকে বলার কি আছে?? তার উপর কত শখ,,আমি তার জন্য বিরিয়ানি বানাবো।। খেয়ে দেয়ে কি কাজ নেই আর আমার।।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।।কোনোমতে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললাম......
---" কঁচুর ডাল খাবেন "
---" মরুভূমি তুমি তো দেখি বয়রাও!!"
---"মানে??"
---" মানে,, আমি তোমাকে বিরিয়ানি বানাতে বলেছি,,,কঁচুর ডাল না।। বাই দা ওয়ে,,, এ কঁচুর ডাল কি?? "
---" এটা আমাদের স্পেসাল ডিস।। খাস কুত্তাদের জন্য তৈরি "
কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।।রাগি কন্ঠে বলে উঠে.....
---" অনেক বাড়া বেড়েছো তুমি তাই না?? কালকে কি করেছি মনে আছে তো,,,ভালো ব্যবহার করছি দেখে ভেবো না মাথার উপর উঠিয়ে রাখব।। খারাপ হতে কিন্তু আমার বেশি সময় লাগবে না।।। আর যা বলছি তা যেন ১ঘন্টার মধ্যে হয়ে যায়।।আমি বাইরে যাচ্ছি,,এসেই যেন দেখি বানিয়ে ফেলেছো।।আর যদি না দেখি তাহলে কি হবে তার কল্পনাও তুমি করতে পারবে না।। "
বলেই রেয়ান চলে যায়।।আর আমি,,, আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।। আচ্ছা মানষটা এমন কেন?? এ-ই ভালো তো এ-ই খারাপ,,,অনেক রহস্য ভরা এ-ই মানুষটার ভেতর!!
---" "আ" খাইয়ে দাও আমাকে "
---" মানে?? "
---" মানে বুঝো না?? বিরিয়ানি খাইয়ে দাও আমাকে "
---" কেন?? আপনার নিজের হাত নেই?? ওইটা দিয়ে খান না।। আমাকে বলছেন কেন?? "
---" আমি বলছি তোমাকে খাইয়ে দিতে " [ দাঁতে দাঁত চেপে ]
---" পারব না!! "
---" কি বললা আবার বলো তো "
উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম।।সাথে সাথে কয়েকটা ঢোক গিলে ফেললাম,,,কি ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছেন তিনি আমার দিকে।। ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম......
---" ইয়ে মানে বলছিলা কি রিহান আছে এখানে।। আমি কিভাবে কি করব আপনিই বলুন।।"
বলেই কিছুটা হাসার চেষ্টা করলাম।।ভেবেছিলাম কাজ হবে,,,, কিন্তু হলো না।। বলে না " যা হবার,,, তা শত চেষ্টা করার পরও আটকানো যায় না " আমার সাথে ঠিক তেমনই হলো।। আমার কথা শুনে রেয়ান রিহানের দিকে তাকালো।। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো......
---" রিহান,,, তোমার মা যদি আমাকে আর তোমাকে খাইয়ে দেয় তাহলে কেমন হয়?? "
রেয়ানের কথা শুনে রিহান কি বুঝলো জানি না।। কিন্তু সেও রেয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে বলল......
---" মা ভালোই হবে।। বাবা আর আমি এক সাথে তোমার হাতে খাবো।।খাইয়ে দাও না প্লিজ।।"
আমি কি করব বুঝতে পারছি না।। একবার রেয়ানের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার রিহানের দিকে।। এবার রেয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলল......
---" কি হলো খাইয়ে দিচ্ছো না কেন?? নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা করব?? "
রেয়ানের কথা শুনে আমি কিছুক্ষন চুপ থাকলাম।।অতপর খাইয়ে দেওয়া শুরু করলাম রেয়ান আর রিহানকে।। প্রথমে রিহানকে খাইয়ে দিলাম।।তারপর রেয়ানকে।।রেয়ানকে খাইয়ে দিতে খুব অসস্তি হচ্ছে আমার।।তাছাড়া রেয়ান বারবার আমার হাতে কামড় দিচ্ছে।। এবার তো খুব জোড়েই কামড়টা দেয়।।সাথে সাথে আমি "আহহ" বলে উঠি।।রেয়ানএকটা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের নখ দেখতে দেখতে বলে......
---" কি হয়েছে মরুভূমি?? কোথাও কি ব্যথা পেয়েছ?? "
তার কথা শুনে ইচ্ছে করছে হাতের পাশে থাকা প্লেট-টা দিয়ে তার মাথায় জোড়ে একটা বারি দি।।কিন্তু আমি নিরুপায়।।এটা যদি করি তাহলে পড়ে কি-না কি করবে আমার সাথে।। বলা তো আর যায় না,,, সে যদি পুলিশ হতো তাহলে মানা যেত,,,কিন্তু সে তো আস্ত একটা গুন্ডা পুলিশ!!
প্রায় ১ ঘন্টা পর রেয়ান আর রিহানকে খাওয়ানো শেষ হয় আমার।।আমি বুঝতে পারছি না রিহানও কি রেয়ানের সাথে মিলে গেছে নাকি??আজকে ২জনেই একাধারে খাবার খাচ্ছে যে খাচ্ছেই।।পেট যেন তাদের ভরছেই না।। অবশেষে ১ঘন্টা পর তাদের পেট মনে হয় একটু হলেও ভরেছে।। আর আমি মুক্তি পেয়েছি।।
খাওয়ানো শেষ হতেই রেয়ান রিহানকে নিয়ে ড্রইং রুমে চলে যায়,,,টিভি দেখার উদ্দেশ্যে!!
আর আমি মার জন্য খাবার বাড়ছি।। রেয়ান আসার পর থেকে মা একবারের জন্যও রুম থেকে বের হননি।।তার নাকি রেয়ানকে ভালো লাগে না।। খাবার খাওয়ার জন্য যখন মাকে ডাকতে গিয়েছিলাম,,,তখন মা সাফ সাফ মানা করে দেন যে তিনি রেয়ানের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খাবেন না।। যদি খান,, তাহলে নিজের রুমে খাবেন।।তাই আমিও খাবার নিয়ে যাচ্ছি তার রুমে।। সাথে আমার খাবারটাও।।মা আর আমি একসাথেই খাবো।।
মার রুমে ঢুকতেই দেখি মা বসে আছেন বিছানায়।।আমিও মার পাশে গিয়ে বসি।।তারপর মাকে বলি......
---" মা নাও খাবার এনেছি এখন তো খাও প্লিজ।।দেখো খাবারের সাথে রাগ করে থাকা ভালো না।। "
---" আমি খাবো না "
---" প্লিজ মা জেদ করো না।। দেখো আমিও খাই নি খাবার।।তোমার সাথে খাবো ভেবেছিলাম।।এখন যদি তুমি না খাও তাহলে আমিও খাবো না।।"
আমার কথাটা শুনে মা খাবারের প্লেট-টা নিতে নিতে বলে......
---" তুই যা করছিস তা কি ঠিক মিরা "
---" কি করেছি আমি?? "
---" এ-ই যে ও-ই ছেলেটার সব কথা শুনছিস।। আবার বাসায়ও আসতে দিচ্ছিস।। কেন প্রতিবাদ করছিস না ও-ই ছেলেটার?? আবার আমাকেও করতে দিচ্ছিস না।। "
---" আমি নিরুপায় মা।। তুমি জানো না রেয়ান ঠিক কেমন।।এমন কি আমিও জানিনা।। ও যা চায় তা আদায় করেই নেয়।।এতদিনে ঠিক বুঝে গেছি ওকে।।আমরা কিছু করতে পারবো না ওর।। "
---" কেন পারবো না।। ও পুলিশ বলেই যা ইচ্ছে করবে নাকি??"
---" এটাই তো ব্যপার মা।। ও শুধু পুলিশ না।। ও বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যানদের একজনের ছেলেও।।আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না।। পরে যদি কিছু বলি তাহলে হয়তো আমাদেরই ক্ষতি হবে!!তাছাড়া তুমি দেখেছো রেয়ানের রিহানের সাথে কত ভালো ভাব হয়েছে,,, ও যদি রিহানের কিছু করে।।আমি চাই না আমার কোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রিহানের কিছু হোক।। "
---" ও যদি তোকে বিয়ে করতে বলে।। তাহলে করবি?? "
---"........ "
---" কি হলো বল?? "
---" না "
---" তাহলে?? "
---" মা প্লিজ এ ব্যপারে আমাকে কিছু বলো না।। এত প্রেসার নিতে পারছি না আমি।।"
কথাটা শুনে মা চুপ হয়ে গেলেন।।হয়তো ভাবছেন,,"আসলেই আমি এত প্রেসার নিতে পারবো না!!"চুপচাপ খেয়ে নিলাম ২জনেই।।খাওয়া শেষে সব ঠিকঠাক করে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।ড্রইং রুমে যেতেই আমি অবাক!! রেয়ান আর রিহান সেই লেভেলের দুষ্টামি করছে।।আজ প্রথম মানুষটাকে হাসতে দেখলাম।।খুব প্রাণবন্ধ ভাবে হাসছে সে।।সাথে আমার ছেলেটাও।।খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছে সে রেয়ানকে।।
আমি তাদের মাঝে উপস্থিত হতেই রেয়ান হাসি বন্ধ করে দেয়।।আমাকে বসতে বলে,,, রিহানকে বলে.....
---" রিহান,,, তুমি তোমার নানুর কাছে যাও তো।। আমি আর তোমার মা একটা জরুরি কথা বলল "
---" আচ্ছা বাবা "
বলেই রিহান দোঁড় দিয়ে মার রুমে চলে যায়।। রিহান যেতেই রেয়ান ঠিক হয়ে বসে।।শান্ত কণ্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে.....
---" রিহান বলছিল,,ওর নাকি ৪ বছর।। "
---" হুম "
---" তাহলে তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিলো?? "
কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে তাকালাম,,, সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। হয়তো উত্তরের আসায়।।আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলি।।আমাকে কিছু বলতে না দেখে সে আবারও বলল.....
---" আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস কিরেছি।।উত্তরটা কি দেওয়া যায় না?? "
---" হুম "
---" তাহলে বলো,,তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিল??"
---" হুম "
---"কেন??"
সে এবার কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে ফিরে বসল।।সাথে আছে তার সেই তীক্ষ্ম দৃষ্টি।।আমি মাথা নিচু করেই বলতে লাগলাম.....
---" আমি অনেক গরিব ঘরের মেয়ে।। বাবা টাকার জন্য আমাকে একটা বড় লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন "
আমার কথা শেষ হতেই রেয়ান সোফার সাথে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে।। তারপর বলে.....
---" এবার বুঝলাম,, তোমার মতো একটা মেয়ে ডিভোর্সি কেন??হয়তো তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে বুড়ো ছিল।। তোমাকে অনেক মারতোও।।আর তার নারীর নেশা ছিল।।কয়েকদিন যাওয়ার পরও তোমাকে ভালো লাগছিল না তার।। তাই তোমাকে ছেঁড়ে চলে গেছে,,,তাই না??"
কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম....
---" জীবনেও না।। আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার ঠিক বয়সই ছিল,,আর সে অনেক ভালো ছিল "
---" তাহলে?? "
---"......... "
---" তুমি কিছু বলছ না মানে আমি যা ভাবছি ওইটাই সত্যি।। তাছাড়া অন্য কোনো কারন তো দেখছি না আমি।।তোমার এক্স হাসবেন্ড নিশ্চয় খারাপই ছিল।। "
উনার কথাগুলো শুনে রাগ হচ্ছে আমার।। প্রচুর রাগ।।রাগ সামলাতে না পেরে জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম.......
---" আমার শুভ অনেক ভালো,,,বুঝেছেন অনেক ভালো।। ও আমাকে অনেক ভালোবাসতো "
কথাটা বলতে গিয়ে ২ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আমার চোখ থেকে।। রেয়ান কিছু বলতে যাবে তখনি তার একটা ফোন আসে,,,স্ক্রিনে থাকা নামটা দেখেই সে কিছু না বলে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,, আমি সেখানেই বসে আছি।।আসলেই কেন শুভ আমাকে রেখে গিয়েছিল।। কারনটা যে এখনও আমার অজানা!!
.
.
.
সকালে......🍁🍁
কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যাচ্ছি আমি।।রাস্তায় অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছি রিকশার অপেক্ষায়।।কিন্তু কোনো রিকশা পাচ্ছি না।। বাধ্য হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি।।হঠাৎ মনে হয় আমার পাশে একটা গাড়ি আছে,,আর সেটা আমার সাথে সাথেই এগোচ্ছে।। পাশে তাকাতেই দেখি রেয়ান।।সে গাড়ি চালাচ্ছে।। ঠিক চালাচ্ছে না!! আমি যেভাবে হাঁটছি সে ঠিক সেই ভাবেই গাড়িটা আগাচ্ছে।।আমাকে তার দিকে ফিরতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে......
---" হাই মরুভূমি "
কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে হাঁটতে থাকি।।তার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার।।কি ভাবে কি সে আমাকে ??আমার কি কিষ্ট হয় না,, রাগ নেই আমার মাঝে,,, কাল যা হলো তার জন্য খুব রেগে আছি আমি তার উপর।।।আজ যাই করুক না কেন,,, কথা বলব না আমি তার সাথে।।
এদিকে রেয়ান বকবক করেই যাচ্ছে।।কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিচ্ছি না আমি।।এবার বেশ বিরক্তি নিয়েই সে বলল.....
---" মরুভূমি গাড়িতে উঠো "
---"....... "
---" তোমাকে আমি কি বলেছি।।উঠক গাড়িতে "
এবার কিছুটা রেগেই বলল কথাটা রেয়ান।।কিন্তু তাও আমি পাত্তা দিলাম না তাকে,,, নিজের মতো হাঁটছি।।হঠাৎ রেয়ান গাড়ি থেকে নেমে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।সাথে সাথে আমি আশেপাশে তাকাতে শুরু করি।।রাস্তার সব মানুষ আমাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।। কিছু মানুষ তো মুখ টিপে টিপে হাসছে।। এসব দেখে আমি নিজেকে যথা সম্ভব রেয়ান থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম,,,কিন্তু পারলাম না।। রেয়ান আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি লক করে দিলো।।এতে কিছুটা জোড়েই রেয়ানকে বললাম.....
---" আপনি যা করছেন তা একদমই ঠিক না।। সবসময় আপনি যা চাবেন তা কিন্তু হবে না।।
আমার কথা শুনে রেয়ান আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল......
---" সবসময় আমি যা চাইব তাই-ই হবে।। আজ তোমার অতীতটা জেনেই ছাঁড়বো!! "
বাগান জাতীয় কোনো জায়গায় আছি আমি আর রেয়ান।।চারপাশে ফুলের ঘ্রাণ ছঁড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।। বিরাট বড় গাছের নিচে বসে আছি আমি,,,আর আমার পাশেই বসে আছে রেয়ান।।সে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।। হয়তো উত্তরের আশায়।।কিন্তু তা বুঝতে পেরেও কোনো কথা বলছি না আমি।। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।।এবার কিছুটা অস্থির হয়েই রেয়ান জিজ্ঞেস করে......
---" মিরা,,,তুমি কি আমাকে তোমার অতীতটা বলবে না?? "
---" কি ব্যাপার মিস্টার রেয়ান।। আজ প্রথম আমার নাম ডেকেছেন আপনি "
---" না প্রথমবার না,,, ২বার।। "
---" ও "
---" কথা পেঁচিও না।।যা জানতে চাই তা তাড়াতাড়ি বলো।। নাহলে.... "
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি বলতে শুরু করলাম.......
---" আপনাকে তো বলেছিলাম আমরা অনেক গরিব।।বাবা লালনপালন করতে পারতেন না আমার।।তাই ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে করিয়ে দেন আমাকে।। যার সাথে আমার বিয়ে হয় বিয়ের আগ পর্যন্ত তার কোনো কিছু সম্পর্কেই জানতাম না আমি।। শুধু শুনেছিলাম সে অনেক বড়লোক।। আমাকে অনেক সুখে রাখবে।। আমিও মেনে নিলাম।।এছাড়া যে কোনো উপায় ছিল না আমার।।না খেয়ে থাকা থেকে তো বিয়েটা করে ফেলাই উত্তম মনে করেছিলাম।।যা কিছুই হোক না কেন?? ২মুঠো ভাত তো খেতে পারবো!! আপনি কালকে একটা কথা বলেছিলেন,,,হয়তো আমার স্বামী বুড়ো হবে অথবা তার নারীর নেশা আছে।। বিয়ের আগে আমার সেটাই মনে হয়েছিল।।নাহলে আমার মতো একটা গরিব মেয়েকে একজন বড়লোক ছেলে বিয়ে করবে কেন?? কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,,,বিয়ের রাতে যখন তাকে দেখলাম,,তখন আমি পুরো অবাক!! একজন সুপুরুষ আমার সামনে বসে ছিল।।সত্যি বলতে এত সুন্দর পুরুষ আমি কখনও দেখি নি।।তখনই তার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম আমি।।সে রাতে অনেক কথা বলি আমি তার সাথে।। কথায় কথায় জানতে পারি তার নাম শুভ।। সে নাকি আমাকে একটা পার্কে দেখেছিলো।।তখনই আমাকে পছন্দ হয় তার।।আর আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন।।
উনি অনেক ভালো ছিলেন ।।আমার অনেক খেয়াল রাখতেন।।শুভর পরিবার বলতে আমি আর তার ছোট বোন রিহাই ।।এছাড়া আর কেউই ছিল না।। ছোট বেলাই তার বাবা-মা মারা যান।।আত্বীয়-সজনরাও সব দেশের বাইরে থাকেন,,,,
শুভ চেয়েছিলেন আমি যেন কলেজে ভর্তি হই।।ভর্তি হয়ই-ও।।কিন্তু কিছুদিন পরেই জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।।জানেন যেদিন উনাকে এ কথা বলি তখন তিনি অনেক কেঁদে ছিলেন,,,এজন্য না যে আমাদের বেবি হবে।। কেঁদে ছিলেন কারন আমার কম বয়স।। এত কম বয়সে আমার বেবি হবে কিভাবে?? আমি কিভাবে পড়ালেখা করব।।অনেকবার চেয়েছিলেন বেবি টা নষ্ট করে ফেলতে।।আমি একটু বড় হই।।তখন বেবি নিবেন।।কিন্তু আমি মানা করি।।কেন যেন মনে হচ্ছিল বেবিটা আমার প্রয়োজন।। দেখুন না আসলেই ও আমার প্রয়োজন।।এখন তো ওকে আমার লাগে তাই না?? ওকে ছাঁড়া যে আমি বাঁচতে পারতাম না।।
যখন রিহান হয়।।তখন শুভর চেহারা দেখার মতো ছিল।।অনেক খুশি ছিলেন তিনি।।ভেবেছিলাম রিহান হওয়ার পর আমি আর পড়ালেখা করতে পারব না।। কিন্তু জানেন শুভ আমাকে পড়ালেখা করতে দিয়েছিল।।সারাটাদিন আমার সেবা করত।।বলতে গেলে আমার থেকে রিহানকে সেই বেশি দেখাশুনা করত।।তার সাথে আমার পরিবারকেও আগলে রেখেছিল।।বাবাকে একটা চাকরি দেন।।আমরা এখন যে বাসায় আছি।।ওইটাও শুভ বানিয়ে দিয়েছিল বাবাকে।।বেশ ভালোই চলছিল আমাদের।।কিন্ত......"
কথাটা বলেই একটু থেমে যাই।।কয়েকটা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করি......
---" তখন আমি ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে মাত্র অনার্সে উঠেছিলাম।।বেশ ভালোই কাটছিলো আমাদের সংসার।।আনন্দের শেষ ছিল না।। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুভর একটা জরুরি কাজ পড়ে যায়।। তাকে ইমার্জেন্সি আমেরিকা যেতে হবে।।সবার কাছে বিদায় নিয়ে সে ওইদিন রাতে চলে যায় আমেরিকা।।আমার স্পষ্ট মনে আছে,,, যাওয়ার আগে সে বলেছিলো আমেরিকা থেকে খুব জলদিই চলে আসবে আমাদের কাছে।। কিন্তু আসে নি জানেন।।তখন যে গেল এখন পর্যন্ত সে আর আমাদের কাছে ফিরে নি।।আমার দোষ কি ছিল আমি জানি না।। তবে ও আমেরিকা যাওয়ার ২০ দিন পর আমাদের কাছে একটা চিঠি আসে,,,সেখানে লিখা ছিল আমি যেন আমার বাবার বাড়ি চলে যাই।।ও নাকি চায় না আমি ওর বাড়িতে থাকি।।শুভ ওর বোন কেও নাকি বলেছে যেন আমি এ বাসায় না থাকতে পারি।। আমাকে যেন ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ওদের বাড়ি থেকে।। তেমনটাই হয়।।তবে এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।। আমার বাবা যে ওদের কোম্পানিতে চাকরি করত।।সেখান থেকে তাকে ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।।বাবা অনেক বুড়ো ছিলেন।।এত কিছু একসাথে নিতে পারেন নি।। তাই হয়তো অসুস্থ হয়ে যান ।।"
কথাগুলো বলতে গিয়ে কথা বারবার আটকে যাচ্ছিল আমার।।তবুও নিজেকে সামলে নিলাম।। তারপর আবার বলতে লাগলাম.....
----" এ-র ১ মাস পর আমাদের বাসায় ডিভোর্স লেটার আসে।।সাথে ৬লাখ টাকাও।। এসব দেখে বাবা আর মা ২জনেই আরও অসুস্থ হয়ে যান।।ভাগ্য ক্রমে মার তেমন কোনো বড় অসুখ হয় নি।।কিন্তু বাবার অবস্থা ভালো ছিল না।। এ ৬ লাখ টাকার ৫লাখ টাকাই বাবার চিকিৎসা করতে চলে যায়।।কিন্তু তবুও বাবা সুস্থ হন না।। চলে যান আমাদের ছেঁড়ে।। এ দুনিয়া ছেঁড়ে।।এরপর থেকে শুরু হয় লোকেদের কথা।।তারা কি বলত জানেন।।আমি নাকি এটারই যোগ্য ছিলাম।।সুখ জিনিসটা আমার কপালে নেই।। আমি নাকি আমার স্বামকে আগলে রাখতে পারি নি।।আমি একটা.....।। এসব কথা শুনে ইচ্ছা করত মরে যেতে।। কিন্তু আমার যদি কিছু হয় তাহলে আমার মা আর ছেলে কিভাবে থাকবে।। তাই নিজেকে শক্ত করে নিলাম।।এরপর থেকে লোকেদের কথায় কান দিতাম না।।নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।।প্রতিদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করাতাম।।এ-র থেকে বেশি তো করতে পারব না।।আমি মাত্র ইন্টার পাশ।।কেই-বা আমাকে ভালো কোনো চাকরিতে নিবে।।কিন্তু তাতেও আমি দমে যাই নি।। যতটুকু পারতাম।।ততটুকু কাজ করতাম।।এভাবে কেটে যায় পুরো ১বছর ৫ মাস।।এখন সব কিছু মানিয়ে নিয়েছি আমি।।কিন্তু কেন যেন শুভর কথা মনে পড়লে নিজেকে আটকে রাখতে পারি না।।"
কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যাই।। রেয়ানও চুপ করে আছে।।হঠাৎ সে আমার দিকে ফিরে বলে উঠে.....
----" আচ্ছা আমার যতটুকু মনে হয় শুভ খারাপ ছিল।।তাহলে তুমি ওকে ভালো বলছিলে কেন?? "
----" কেমনে খারাপ বলুন তো।।এতকিছু করেছে সে আমার জন্য তাকে খারাপ কিভাবে বলি আমি।।হ্যাঁ ও যা করেছে তা ওর করা উচিত ছিল না।। আবার হয়তো আমারই কোনো দোষ ছিল।। "
---" এইতো বাংলাদেশের ডিপিকা মাইয়া,,, যত কিছু হোক না কেন সব দোষ তাদেরই।।স্বামীরা যেন ধোঁয়া তুলসি পাতা "
----" মানে?? "
----" মানে...দোষ ওর ছিল তোমার না।। ও-ই খারাপ।। "
---" হয়তো!! "
---" আবার বলে হয়তো "
আমি চুপ করে থাকলাম।।আসলেই রেয়ান ঠিক বলছে।। শুভ হয়তো খারাপই ছিল।। কিন্তু এতগুলো বছর থেকেছি তার সাথে।।কই কোনো বাজে দিক তো দেখি নি তার ।।তাহলে হুট করে এত পরিবর্তন কেন??এগুলো ভাবছি হঠাৎ রেয়ান আবার বলে উঠল....
--" আচ্ছা এত কম বয়সে বেবি হয়েছিল তোমার।।কোনো কি খারাপ ইফেক্ট পড়ে নি তোমার উপর??"
---" না,,,হয়তো আমার ভাগ্যে এমন কিছু ছিল না।। "
---" হুম "
---" আচ্ছা রেয়ান আপনি আমাকে কোথায় প্রথম দেখেছিলেন??"
কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে একবার তাকালো।।পরক্ষনে উঠে দাঁড়ায় সে,,প্যান্টের পকেটে হাত রেখে বলে.....
----" চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।।পরে নাহলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে "
উনার কথায় বেশ বুঝতে পারছি তিনি আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন।। কিন্তু কেন?? তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম.....
---" উত্তরটা কি দিবেন না আমাকে?? "
---" সময় আসুক,,একদিন না একদিন পেয়ে যাবে "
বলেই তিনি গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন......
.
.
.
.
রাতে......🍁🍁
ড্রইংরুমে রিহানকে খাওয়াচ্ছি আমি।।সামনেই টিভি চলছে।। রিহান টিভির রিমোট দিয়ে বারবার চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।। হঠাৎ সে আমাকে বলে উঠে.....
----" মা,, মা দেখো।। তোমাকে আর বাবাকে টিভিতে দেখাচ্ছে "
কথাটা শুনে আমি টিভির দিকে তাকালাম।।সেখানে তাকাতেই আমার চোখ বাইরে আসার উপক্রম।।টিভিতে আসলেই আমাকে আর রেয়ানকে দেখাচ্ছে।।আজকে সকালের ঘটনা।। যেখানে আমাকে রেয়ান কোলে করে গাড়িতে বসাচ্ছে।। ভিডিওটা ২বার দেখিয়ে টিভিতে একজন মহিলার অভির্ভাব ঘটে।।সে তার কাজ অনুযায়ী বলা শুরু করে....
##
" ব্রেকিং নিউজ,,, বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যান আজিজ আহমেদের ছেলে রেয়ান আহমেদ একটা মেয়েকে কোলে করে গাড়িতে বসাচ্ছেন।।গোপন সুত্রে জানা গেছে যে মেয়েটি একজন ডিভোর্সি আর তার একটি ছেলেও আছে।। এখন কথা হচ্ছে রেয়ান আহমেদ এমন মেয়ের সাথে কেন?? কোনো কি সম্পর্ক আছে তাদের মাঝে।। তাছাড়া রেয়ান আহমেদ মেয়েটির এলাকারই একজন পুলিশও।।আসলেই কি আছে তাদের মাঝে?? আর কতদিন ধরে চলছে এসব।।আসুন জেনে নি...... "
বলেই আরও কয়েকটি ভিডিও দেখায় তারা।।যেখানে আমার এলাকার কিছু লোকজন আছে,,, এ-ই লোকগুলো সেই লোক যারা আমাকে আগে কথা শুনাতো।। এখনও আমার নামে মদনাম করতে বাদ রাখে নি তারা,,, একজন তো আমাকে বেশ্যা বলছে।।আরও কত বাজে কথা!! এগুলো শুনে টপটপ করে চোখ থেকে পানি পড়ছে আমার।।এরমাঝে হঠাৎ দরজার কলিংবেল বেজে উঠে।।মা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রেয়ান।।রেয়ানকে দেখতেই আমার রাগ উঠে যায়,,,সে কাছে আসতেই আমি তার কলার চেপে ধরি।।রাগি কন্ঠে বলি.....
----" এখন তো খুশি আপনি?? দেখুন টিভিতে কি বলছে সবাই আমার নামে।। আমি নাকি বে,,,বেশ্যা।।সব আপনার জন্য হয়েছে সব।। "
কথাটা বলতে বলতেই রেয়ানকে মারা শুরু করলাম।।তা দেখে রিহান মায়া ভরা কন্ঠে বলল....
----" মা বাবাকে মারছো কেন??"
----" কোনো বাবা না এ লোক তোর।। আর একবার যদি কোনো অচেনা লোককে বাবা ডাকিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।।"
কথাটা ধমক দিয়েই বললাম আমি।।এ প্রথম রিহানকে ধমক দিয়েছি। ।পানিতে চোখ ভরে গেছে আমার ছেলেটার।।মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।। ওর চোখের পানি দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।। কিন্তু তাও নিজেকে শক্ত রাখলাম।। মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম....
---" মা রিহানকে নিয়ে যাও এখান থেকে "
আমার কথা শুনে মা ততক্ষনাত রিহানকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।।এদিকে রিহানকে বকা দিতে দেখে রেয়ান আমাকে কিছুটা রাগি কন্ঠে বলল....
----" আমার উপরের রাগ তুমি রিহানের উপর কেন ঝাঁড়ছো??"
---" কেন কষ্ট হচ্ছে বুঝি?? আচ্ছা আপনার কেন কষ্ট হচ্ছে?? কষ্ট তো আমার হওয়ার কথা তাই না?? তাহলে আপনার এত দরদ কেন ওর প্রতি?? আপনি আমাদের কেউ না,,,দূরে থাকবেন আমাদের কাছ থেকে।। "
---" দেখো মিরা,,শান্ত হও "
----" কেন?? শান্ত হবো কেন আমি?? আমি কোনো শান্ত হচ্ছি না।। আমার কি মনে হয় জানেন,,,, টিভিতে যা দেখাচ্ছে সব আপনি ইচ্ছা করে করেছেন।।যাতে আমি আপনাকে বিয়ে করি তাই না।। আরে আপনি এত নিচ যে আমাকে বেশ্যা বানিয়ে দিলেন??"
কথাটা শুনতেই রেয়ান রেগে গেলো।।আমার হাত শক্ত করে ধরে জোড়ে চিল্লিয়ে "মিরা" বলে উঠল।।এতে আমি তার হাত এক ঝটকায় সড়িয়ে দিলাম।।তারপর বললাম....
---" ছুঁবেন না আপনি আমাকে,, আপনার মতো পশু,, জানোয়ার,,অমানুষের হাতের ছোঁয়ায় আমার ঘৃণা হয় বুঝেছেন।।ঘৃণা হয় আমার।।"
কথাটা শেষ হতেই রেয়ান আমার গাল চেপে ধরল।।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে.....
----" আমার ছোঁয়ায় ঘৃণা হয় না তোর।। এ ছোঁয়াই তোর সহ্য করতে হবে।। "
বলেই রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দিলো।।আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,আমি সেখানেই বসে পড়ি।।কেন যানি আজ চোখের পানি বাঁধা মানছে না!!
.
.
.
.
রাত প্রায় ৩টা।। হঠাৎ-ই আমার ঘুম ভেংগে যায়।।পানির পিপাসা লাগছে খুব।।তাই উঠে রান্না ঘরে গেলাম পানি খেতে।।হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পাই,,,,দরজার কাছে যেতেই শুনতে পাই কেউ একজন মরুভূমি মরুভূমি বলে ডাকছে।। বুঝতে পারছি সেটা রেয়ান।।তাই সেখান থেকে চলে আসতে নিবো তখনই রেয়ান জোড়ে জোড়ে বলে উঠে....
----" ওই মরুভূমি দরজা খুল।।নাহলে কিন্তু দরজা ভেংগে ফেলবো "
বলেই জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো।। এমন ভাবে ধাক্কাচ্ছে যেন এখনই দরজা ভেংগে ফলবে।। যদি সত্যি সত্যি ভেংগে ফেলে দরজা?? ভেবেই দরজাটা খুললাম আমি।।দরজা খুলতেই দেখি রেয়ান কিছু একটার বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢুলছে।। আমাকে দরজা খুলতে দেখে সে একটা হাসি দিয়ে বলে......
----" আই লাভ ইউ মরুভূমি "
রেয়ান মুখ খুলতেই একটা বাঝে গন্ধ আসে আমার নাকে।। সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বলি.....
----" রেয়ান আপনি ড্রাংক?? "
----"ইয়াপ"
----" ড্রাংক হয়ে এখানে কি জন্য এসেছেন।।তামাশা পেয়েছেন নাকি।।বের হোন আমার বাসা থেকে "
----" নোপ "
----" কি ইয়াপ,,,নোপ লাগিয়ে রেখেছেন।। যান এখান থেকে "
কথাটা শুনে রেয়ান তেড়ে আসে আমার কাছে।। তারপর কি মনে করে বাসার দরজা লাগিয়ে দেয়।।তা দেখে আমি কিছুটা ভিত কন্ঠে বললাম....
----" দরজা লাগাচ্ছেন কে#ন??"
সে আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে।। তার হাতের বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে....
---" মদ খাবা মরুভূমি।।চলো ২ জন একসাথে নেশা করি।। "
কথাটা বলেই রেয়ান ঢুলতে ঢুলতে আমার দিকে এগুতে থাকে।। এতে আমি পিছাতে পিছাতে কিছুটা ধমকের সুরেই রেয়ানকে বলি......
---" দেখুন!! "
---" তো দেখাও না।। মানা করেছে কে?? ওয়েট,,, আমি দেখছি কেউ মানা করেছে নাকি।।কার এত বড় সাহস আমার বেক্কল মরুভূমিকে মানা করে??আজকে ও-ই ব্যটার একদিন কি আমার একদিন।। "
বলেই নিজের চারপাশে তাকাতে শুরু করে।। কেউ আছে কি-না তা দেখার জন্য।।এদিকে আমি বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে।। নেশা করে কি এ-র মাথা গেছে নাকি?? কি সব আবল তাবল কথা বলছে।। ইচ্ছে তো করছে এক বারি দিয়ে তার মাথা ফেটে দিতে।।কিন্তু এখন রাগলে চলবে না!!তাই ইচ্ছেটা সাইডে রেখে শান্ত কণ্ঠে রেয়ানকে বলি......
---" রেয়ান এখানে কেউ নেই।। আপনি আর আমি আছি শুধু।। "
---" তাহলে তো ভালোই হলো।।যত ইচ্ছে তত মদ খাইতে পারবো।।কি বলো??"
তার কথাশুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না।। তারে আমি কই কি আর সে আমারে কয় কি।।উফফ,,, বিরক্তিকর একটা অবস্থা!! বুঝতে পারছি না রেয়ানকে বাসা থেকে বের করব কিভাবে।। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে মিষ্টি সরে রেয়ানকে বললাম.....
---" দেখুন রেয়ান,,,এখন অনেক রাত হয়েছে,,এভাবে কারও বাসায় এত রাতে আসতে হয় না।। লোকে দেখলে কি বলবে।।আপনি প্লিজ যান এখান থেকে।।"
---" না আমি যাবো না।। আমি আমার মরুভূমির সাথে নেশা করব।।"
---" এখন কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি রেয়ান।। ভালোভাবে বলছি যান এখান থেকে নাহলে...."
---" নাহলে কি করবা?? কিছুই করতে পারবে না তুমি আমার।।আমি তোমাকে বলছি,,, তুমি আমার সাথে নেশা করো নাহলে আমি তোমাকে চুমু দিবো।। তাও আবার লিপ-এ "
---" মানুষ যে এত বাজে হতে পারে তা আপনাকে না দেখলে তো আমি জানতেই পারতাম না।।দেখুন আমি আবারও বলছি যান আমার বাসা থেকে,,, নাহলে আমি কিন্তু চেঁচামেচি করব।।আপনি কি চান আমি চেঁচামেচি করে লোকজন ডাকাই?? "
---" ডাকো!! দেখি তোমার কত বড় গলা।।কিন্তু আমি সিউর!!ফাটা গলা যেমন,,, তেমনই হবে তোমার গলার সর।।তাছাড়া এতে তোমারই লস।।তোমার চেঁচামেচিতে লোকজন তোমার বাসায় আসবে,,আমাদের এভাবে এত রাতে দেখবে।।তারপর অনেক বাজে বাজে কথা বলবে।।এন্ড লাস্টে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।। " [ একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে ]
---" রেয়ান,,আপনি এত বাজে কেন বলুন তো?? এত কিছুর পরও আমার সামনে আসতে আপনার লজ্জা করে না?? কিভাবে বলছেন এগুলো?? মাতাল অবস্থায় থেকেও এত বাজে কথা বলছেন ??"
---" হ্যাঁ বলছি।।কারন এ-ই মদের নেশা আমাকে গ্রাস করতে পারে না,, কে পারে জানো?? তুমি।।তোমার নেশা যে আমাকে খুব বাজে ভাবে গ্রাস করেছে।।চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারবো না।। মাতাল অবস্থায় থেকেও বারবার তোমার কথাই মনে পরে আমার।।কি করব বলো?? আমি যে নিরুপায়।।তোমার বাঁধনে আমি খুব বাজে ভাবে আটকে পড়েছি।।"
---" আপনি জীবনেও সুধরাবেন না মিস্টার রেয়ান।।এখনো আপনি এগুলো বলছেন??আমার আর এসব সহ্য হচ্ছে না রেয়ান।।প্লিজ জান আমার বাসা থেকে।।হাত জোড় করছি আপনাকে।। প্লিজ চলে যান।।আপনার এসব কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না!! "
আমার কথা রেয়ানের কানে গেছে নাকি জানি না,,, তবে সে কিছু না বলে দরজার দিকে যেতে লাগলো।।এটা দেখে আমি ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো চলে যাবে।। কিন্তু না,,, সে দরজার দিকে দু'পা এগিয়েই আবার আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।তারপর আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল.....
---" এখানে মদ খেয়ে মজা নেই বুঝলে মরুভূমি।।একটা কাজ করি,,,চলো ছাদে যাই।।সেখানে খাবো।।ছাদটা কোন দিকে বলতো??"
---" জীবনেও বলব না ছাদ কোন দিকে।।নামান আমাকে,, কোলে নিয়ে আছেন কেন আমায়??"
---" আমার ইচ্ছে।।আর শুনো,,, তোমাকে ছাদ কোথায় সেটা বলতে হবে না।। আমি যানি ছাদ কোন দিকে।।জাস্ট ফরমেলিটির জন্য বললাম।।এখন সেটার উত্তর না দিয়ে নিজের বেয়াদবির প্রমাণ দিলে তো আমার কিছু করার নেই।।"
---" কি বললেন আপনি?? আমি বেয়াদপ??আর ফরমেলিটি,,এখানে ফিরমেলিটির কি আছে?? "
---" হ্যাঁ তুমি বেয়াদব।।চরম রকমের বেয়াদব,,, এন্ড আমার যা ইচ্ছে আমি তোমাকে তাই-ই ডাকবো,,ইচ্ছে করলে ফাজিল,,বস্তি সব ডাকবো,, তোমার তাতে কি হ্যাঁ??"
---" আরে আমার ব্যাপারে বলছে আর আমাকেই জিজ্ঞেস করে আমার তাতে কি?? মাথা-টাথা কি গেছে নাকি আপনার?? নামান আমাকে।। আর এক্ষুনি বের হোন আমার বাসা থেকে।।"
আমার কথা তার কানে ডুকেছে বলে মনে হয় না।। সে তার মতো করে ছাদে নিয়ে যেতে লাগলো আমাকে।।আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা রাগি কণ্ঠে বললো......
---" বেক্কল মরুভূমি একটা "
.
.
.
মাথার উপরে বিশাল চাঁদ বিরাজ করেছে।।চাঁদের আলোয় চারপাশটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।সাথে দেখা যাচ্ছে রেয়ানের উদ্ভট কান্ডগুলোও।।ছাদের এক পাশে বসে আছি আমি।।আর আমার পাশে বসে আছে রেয়ান।।আমাদের ঠিক সামনে রাখা হয়েছে মদের বোতলটা।।রেয়ান এক দৃষ্টতে তাকিয়ে আছে সেটার দিকে।।এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন মদের বোতলটা নিয়ে তার কত শত চিন্তা।।হঠাৎ সে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল......
---" আচ্ছা মরুভূমি,,,আমি মদের বোতলটা থেকে মাত্র এক ঢোক খেয়েছি।।তাহলে বোতলের মদ অর্ধেক হলো কিভাবে??আমার অগোচড়ে এখান থেকে তুমি কি মদ খেয়েছো নাকি??"
এমতাবস্থায় আমার কি রিয়েকসন দেয়া উচিত বুঝতে পারছি।।মানে,, আমি মদ খেয়েছি এটা রেয়ানের ধারণা।। লাইক সিরিয়াসলি??ইচ্ছে তো করছে এখনি ছাদ থেকে ফেলে দি একে।।আমি বুঝিনা এটা কি ধরণের পুলিশ।। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান হুট করে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।।আর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমায়।।এতে আমি কিছুটা কেঁপে উঠি।।রেয়ানকে হালকা ধাক্কা দিতে দিতে বলি......
---" মিস্টার রেয়ান,,,,প্লিজ উঠুন আমার কোল থেকে।।"
---" উহু "
---" কি উহু?? আমি আপনাকে উঠতে বলেছি রেয়ান।।উঠে তাড়াতাড়ি আমার বাসা থেকে বের হন।। নাহলে কিন্তু....... "
রেয়ানের দিকে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই।।আমি এত কিছু বললাম,,, কিন্তু এ ব্যক্তির কানে মনে হয় কিচ্ছু যায় নি।।সে তো আরামসে আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে।।ঘুমন্ত অবস্থায় কেমন যেন লাগছে রেয়ানকে।।একদম বাচ্চা বাচ্চা!! ঠোঁট দু'টোও কেমন করে উল্টিয়ে রেখেছে।।কেন যানি না এখন রেয়ানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার ।।ভাবছি ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলি।।তাই রেয়ানের দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম......
রেয়ানের চুলগুলো কালো না।। কিছুটা লালচে রঙ্গের।।সাথে সিল্কিও অনেক।।সবসময় তার সামনের চুলগুলো,,, তার চোখের সামনে পরে থাকে।।রেয়ানের ভ্রুগুলোও লালচে রঙ্গের।।একদম পার্ফেক্ট।।আর তার চোখের পাপড়িগুলো।।সেগুলো অনেক ঘন ঘন।।ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।। চোখের বাম পাশে একটা ছোট তিল আছে।। একদম আমার মতো।। তার আর আমার ঠিক একই রকমের তিল আছে চোখের বাম পাশটায়।।যাক,,,এতদিনে তার সাথে আমি আমার কোনো মিল পেলাম।।ভেবেই অনমনেই একটা হাসি দিয়ে দিলাম।। পরক্ষনে আবার তাকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করি।।রেয়ানের নাকটা অনেক সরু,, আর তার ঠোঁট,,, সেটা তো অনেক গোলাপি।।আচ্ছা কোনো ছেলের কি ঠোঁট এত গোলাপি হয়?? তারউপর তিনি ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছেন!! আসলে উনি সুন্দর।।শুধু সুন্দর না অনেক সুন্দর।।হঠাৎ খেয়াল করলাম তার গায়ের রঙ্গের দিকে।।এখানেও সে ১০০ তে ১০০।। আমার থেকেও তিনি তিন ডাবল সাদা।।কেন যেন আমার আর তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না। ।খুব হিংসে হচ্ছে আমার।।এত সুন্দর কেন তিনি?? তাও আবার আমার থেকেও!!
.
.
.
ভোরের প্রথম আলো আমার চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেংগে যায়।।রেয়ান এখনও আমার কোলে ঘুমুচ্ছে।।তার দিকে একবার তাকিয়ে তাকে নিচে শুইয়ে দিলাম।।তারপর চলে আসলাম নিচে।।নিজের রুমে!!
.
.
সকাল প্রায় অনেক.....আমি,, রিহান আর মা সবাই নিচে।। শুধু রেয়ান ছাঁড়া।। সে এখনো মনে হয় ঘুমুচ্ছে ছাদে।।নিচে আসার পর থেকে একবারও তার কাছে যাই নি আমি।।হঠাৎ কলিংবেলের বেলের আওয়াজ পাই।।দরজা খুলতেই দেখি একদল রিপোটার্স দাঁড়িয়ে আছে।।আমাকে দেখতেই তারা নানা বাজে বাজে প্রশ্ন করতে শুরু করেন আমাকে।।সাথে সাথে আমি দরজা বন্ধ করে দি।।বিরক্তি লাগছে এগুলো আমার।।এসব মিডিয়ার লোক এখন আমার বাসার সামনেও চলে এসেছে।।তাদের জন্য হয়তো বাসা থেকেও বের হতে পারবো না আমি।।আসতে আসতে রাগতে শুরু করি আমি।।কেন যেন রাগ লাগছে প্রচুর।।আর তা আরও বেড়ে যায় রেয়ানকে দেখে।। সে ধীর পায়ে আমার দিকে এগুচ্ছে।। তাকে দেখে আমি রাগি কণ্ঠে বললাম......
---" দেখুন আপনার জন্য কি অবস্থা হয়েছে আমাদের।।এখন তো বাসা থেকে বেরও হতে পারবো না আমরা।।সাথে লোকেদের কথা তো আছেই।।কেন এমন হচ্ছে রেয়ান।।আপনার জন্যই তো তাই না??তাহলে কেন চলে যাচ্ছেন না আপনি আমাদের জীবন থেকে?? "
কথাটা শুনে রেয়ান কোনো জবাব দিলো না আমায়।।শুধু তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে এগুতে লাগলো।।তা দেখে মা এবার তার ঝাঁঝালো কন্ঠে রেয়ানকে বলল.....
---" এ-ই ছেলে,, তুমি আমার বাসায় কিভাবে?? আর আমার মেয়ের দিকে এভাবে এগোচ্ছ কেন?? বের হও আমার বাসা থেকে।।"
মার কথা শুনে রেয়ান তার দিকে তাকালো।।কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে মাকে বলে.....
---" দেখুন শাশুমা,,আমি এখানে কিভাবে তা আপনার না জানলেও চলবে।।আর শুনুন,, আমার নাম রেয়ান,,আমাকে রেয়ান বলে ডাকলেই আমি বেশি খুশি হবো।।আর আরেকটা কথা।।আপনার মেয়ে আমার আমানত,,তাই ওর সাথে আমি কি করি না করি তা আপনার না দেখলেও চলবে।।ইস দেট ক্লিয়ার??"
কথাটা বলে রেয়ান আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না।। আমাকে কোলে নিয়ে সোজা পা দাঁড়ালো আমার রুমের দিকে।।এদিকে সোফায় আরাম করে ঘুমিয়ে আছে রিহান।।এতক্ষন যে এতকিছু হলো তা যেন সে টেরই পায় নি!!
রুমে ঢুকতেই রেয়ান থেকে আমি নিজেকে ছাঁড়িয়ে নিলাম।।তার কলার ধরে রাগি কণ্ঠে বলালম.....
---" আপনার সমস্যা কি বলুন তো রেয়ান?? লজ্জা বা অনুতপ্ত বোধ কিছুই কি কাজ করছে না আপনার মাঝে।।এতকিছুর পরও আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন??আর আপনার সাহস কিভাবে হলো আমাকে কোলে তুলার।।কালকে রাতে কিছু বলিনি দেখে আপনি বারবার আমাকে কোলে নিবেন নাকি??"
---" কোলে নিবো।।১০০বার নিবো।।কারন তুমি আমার আমানত "
---" কিসের আমানত আমি আপনার?? আমি কারও কোনো আমানত না বুঝেছেন??আর আপনার তো জীবনেও না।। আপনার মতো অমানুষের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা করে।।"
---" তাই?? তাহলে তো এটার অভ্যেস করে নাও।।কারন আমাদের যখন বিয়ে হবে তখন এগুলোই সহ্য করতে হবে তোমার।।"
---" কখনও না।। যার জন্য আমার চরিত্রে দাগ লেগেছে তাকে আমি জীবনেও বিয়ে করব না।।আমি মরে যাবো কিন্তু আপনাকে বিয়ে করব না বু......."
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রেয়ান আমার ২হাতের বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে।। নিজের মুখ আমার মুখের একদম কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে.......
---" কি বললি তুই??তুই মরে যাবি কিন্তু আমাকে বিয়ে করবি না তাই না?? আরে আমি চাইলে তোকে এখন এ-ই মুহুর্তে বিয়ে করতে পারবো।।কিন্তু কেন করছি না জানিস।।কারন আমি চাই তুই নিজে থেকে আমাকে বিয়ে করিস।।জোড় করে না।।"
---" সে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিন রেয়ান।।কারন আপনার এ স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না।। "
---" একটা কথা জানো কি মরুভূমি।।আমি স্বপ্ন পূরণ করার জন্য দেখি।। তা মাঝ পথে রেখে দেওয়ার জন্য না।।এন্ড আম সিউর।।এ স্বপ্নটাও পুরণ হবে।।তাও অনেক তাড়াতাড়ি।।"
কথাটা বলেই রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দেয়।।তারপর চলে যেতে নিলে আমি তাকে কিছুটা বিরক্ত কণ্ঠে বলি.....
---" কোথায় যাচ্ছেন আপনি??"
---" এখানে তো তুমি থাকতে দিবে না।। তাই বাইরে যাচ্ছি।।কাজ আছে।।"
---" কিভাবে বাইরে যাবেন শুনি?? মিডিয়ার লোক চারপাশ দিয়ে ঘেরে রেখেছে আমার বাসা।।যাওয়ার কোনো উপায় নেই।। "
---" তাহলে কি তুমি আমাকে এখানে থাকতে বলছ??"
তার কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে যাই।।কি বলব বুঝয়ে পারছি না।। সে আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে মুচকি হেসে বলে.....
---" তুমি আমাকে এত কাঁচা খেলোয়াড় ভাবো মরুভূমি।।ভুলে যেও না আমি একজন পুলিশ।। কোথায়,,, কিভাবে বের হতে হবে।।সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।।"
বলেই আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে সে রুম থেকে বের হয়ে যায়।।
.
.
.
.
দুপুর প্রায় ২টা।।মাত্র রিহানকে খাইয়ে দিলাম আমি।।এবার আমার আর মার খাবার পালা।।টেবিলে খাবার বাড়ছি,,এমন সময় দরজার কলিংবেল বেজে উঠে।।ভেবেছিলাম হয়তো মিডিয়ার লোক হবে,,তাই পাত্তা দিলাম না।। কিন্তু ৫-৬ বার কলিংবেল বাজার পর বাধ্য হয়ে দরজা খুললাম আমি।।দরজা খুলতেই দেখি রেয়ান দাঁড়িয়ে আছে।।চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে সে।। চোখ দু'টো লাল হয়ে আছে। আর তার দৃষ্টি স্থির আমার চোখের দিকে।।কেন যানি না রেয়ানকে #খুব অস্বাভাবিক লাগছে আমার।।ভালোভাবে রেয়ানের দিকে তাকাতেই আমার চোখ যায় তার হাতের দিকে।।হাত থেকে টপটপ করে রক্ত ঝড়ছে তার।।
#চলবে🍁🍁
৪থ পর্ব লিংক
https//wwwfourpartstory.com