গল্প তুমি_আমি সাহিত্য ডাইরি পর্ব_২,৩,৪(শেষ)

 

গল্প তুমি_আমি  

সাহিত্য ডাইরি  

পর্ব_২


" তোর এত্তো বড় কলিজা,আমার বোনের শরী"রে বাজে ভাবে স্পর্শ করিস?তোর কি অবস্থা করি দেখ শুধু "


বড়দার এমন কথায় আমার মাথায় র'ক্ত উঠে গেলো।দিয়ার দিকে তাকালাম,দিয়া সমানে কেঁদে যাচ্ছে।লক্ষ্য করলাম ওর বু'কে ওড়না নেই।ছিহ!সামান্য চ"ড় মা"রায় দিয়া এরকম বাজে ভাবে অনুপকে সবার সামনে হেনস্তা করবে? 


বড়দা অনুপের গা"লে আরেকটা চ"র বসিয়ে দিলো।আমি গিয়ে প্রচন্ড ধাক্কায় বড়দার থেকে অনুপকে সরিয়ে নিলাম।ইতোমধ্যে বাবা মা দু'জনেই ঘরে ঢুকলো।বাবা ধমক দিয়ে বললো 


" কি হইছে এখানে?দিয়া কাঁদছে কেন? "


দিয়া বাবাকে জরিয়ে ধরে মিথ্যা কান্নার অভিনয় করতে লাগলো।আমি শুধু দেখছি,নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।বড়দা বাবাকে বললো 


" ওই শয়তানরে আজ আমি মে"রেই ফেলবো "


বাবা বললো " কি করছে ও "


দিয়া ফুপিয়ে কেঁদে বললো " জামাইবাবু আমার বু"কে বাজেভাবে হাত দিয়েছে।আমি বাঁধা দেওয়ায় চ"ড় মে"রেছে "


দিয়ার অভিনয়ে আমার পায়ের র"ক্ত মাথায় উঠে গেলো।দিয়ার দিকে তেড়ে যেতেই বড়দা আমার বাঁধা দিয়ে বললো 


" কেমন ছেলেকে ভালোবেসেছিস? মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।শ্যালিকাকেও ছাড়লো না।ওর কলিজা কুত্তাকে খাওয়াবো আমি "


আমি কিছু বলবো তার আগেই অনুপ আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো " রুপা এখান থেকে চলো " 


আমি বিস্মিত হয়ে বললাম " চলো মানে?ওরা ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকবে নাকি? আর দিয়াকে আমি ছেড়ে দিবো ভেবেছো?দেবতা তুল্য একটা মানুষকে নিয়ে নোংরা কথা বলতে ওর একটুও মুখে বাঁধছে না? "


অনুপ আমায় সরিয়ে নিয়ে বড়দার সামনে হাত জোর করে বললো " দাদা,আপনাকে আমার আর বলার কিছু নেই।শুধু দিয়ার কথার উপর ভিত্তি করে আপনি আমার গা"য়ে হাত তুলে আমায় চরম অপমান করলেন "


বড়দা বললো " অপমানের দেখছোস কি?তোরে তো....! "


একথা বলে বড়দা আবারো তেড়ে এলো অনুপের দিকে।বাবা থামিয়ে দিয়ে বললো " হৈচৈ করো না।ঘরের কথা ঘরেই থাক।আর রুপা মা,তোকে হাজারবার বলেছিলাম এই ছেলের চরিত্র খারাপ আছে।অবাধ্য হয়ে বিয়ে করলি। আজ দিয়া...."


বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম " আসল চরিত্রহীন তো তোমরা বাবা "


বাবা গম্ভীর হয়ে বললো " আমরা চরিত্রহীন?"


" হ্যা।দিয়া কি না কি বললো আর বড়দা এসে মা"রতে শুরু করলো? একটা বার জানার ও চেষ্টা করলো না দিয়া সত্যি বলছে না মিথ্যা! "


বড়দা বললো " কি করতে হবে সেটা তোর থেকে শুনে আমায় করতে হবে নাকি? "


অনুপ শুধু দিয়াকে বললো " এমনটা না করলেও পারতে "।বাবা বড়দাকে বললো " অনেক রাত হইছে।আশপাশের লোকজন যেন না জানে।হৈচৈ করো না।যাও ঘরে যাও "


সবাই চলে যাওয়ার পর অনুপ আমার কাছে এসে মৃদু স্বরে বললো " রুপা আমি বাড়িতে যাবো।তুমি আমার সাথে আসবে না কাল আসবে? "


" এখানে আর এক মুহুর্ত না।আমার স্বামীকে যেখানে এভাবে অপমান করা হলো সে বাড়িতে আমি আর পা রাখবো না "


সে রাতেই বাড়ি চলে আসলাম।সারা রাস্তা অনুপ একটা কথাও বলেনি।লোকটা একসব নুইয়ে পড়েছে।ওর শুকনো মুখ দেখে আমার বু'ক হাহাকার করে উঠলো।ইচ্ছে করছিলো যদি সম্ভব হতো তাহলে দিয়াকে খু"ন করে আসতাম।


বিছানায় শুয়ে অনুপ বারবার এপাশ ওপাশ করছে।যে ছেলেকে সামান্য একটু জোরে কথা বললেই অপমানবোধে ছটফট করে সেই ছেলেকে আজ কতই না অপমানিত হতে হলো! তাও এরকম নোংরা একটা ইস্যু নিয়ে।


অনুপের চুলে হাত বুলাতে ওর মাথায় হাত রাখার চেষ্টা করলাম।অন্ধকারে হাতটা ওর গা"ল স্পর্শ করলো।গা"ল ভেজা। বুঝতে পারলাম অনুপ কান্না করছে।আধশোয়া হয়ে বসে অনুপকে বললাম 


" একটু উঠে বসো তো "


অনুপ শোয়া থেকে উঠে বসলো। আমার কোলে ওর মাথা রেখে চোখের জল মুছে দিলাম। চুলে বিলি কে'টে দিতে দিতে বললাম " দিয়া এরকম জঘন্য একটা কাজ করবে আমি ভাবতেই পারছি না "


অনুপ বললো " দাদা আমাকে একটা বার বলতেও তো পারতো!ওনারা কি আমায় এতটুকুও বিশ্বাস করে না? "


রুপা ধরা গলায় বললো " ও বাড়ির কারোর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই "


অনুপ আমার কোলে মাথা রেখে বাচ্চা ছেলের মতো অনেক্ক্ষণ কাঁদলো।এক সময় এসে ঘুমিয়ে পড়লো।কিন্তু আমি ঠিকই জেগে রইলাম।অনুপ ভিষণ ইমোশনাল।এই অপমানিত হওয়ার দা"গ এতো সহজে ওর মন থেকে যাবে না।দেখা যাবে মাঝরাতে উঠে ভুলভাল কিছু একটা করে বসবে।সারারাত অনুপকে জরিয়ে ধরেই বসে রইলাম।ঘুমের ঘোরে অনুপ বিরবির করে বললো " রুপা আমি এটা করিনি,আমি এটা করিনি, করিনি "


রুপা মনে মনে বললো,সেটা আমি জানি অনুপ।ওখানে আমি উপস্থিত না থাকলেও কখনই বিশ্বাস করতাম না এমন নোংরা একটা কাজ তুমি করতে পারো।আমিতোমায় বিশ্বাস করি।তুমি কেমন সেটা তুমি না বললেও আমি ভালোভাবেই বুঝি।


দিয়া যে এতোটাও নিচে নামতে পারে আমার জানা ছিলো না।ভেবেছিলাম যা হয়েছে সেখান পর্যন্তই বিষয়টা থেমে যাবে,কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।


পরেরদিন কিছুটা বেলা গড়াতেই বাড়িতে একজন পুলিশ এলো।অনুপের থেকেও আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম।দিয়া কি অনুপের নামে কে"স করে দিয়েছে? অনুপের ক্যারিয়ার,তার থেকেও বড় কথা,ওর দিদির সংসার ভাঙ্গতে ওর একটুও খারাপ লাগছে না? তাও আবার সম্পুর্ন ভুল একটা ইস্যুকে ভিত্তি করে! 


তবে কি আমাদের সুখের সংসারটা এখানেই তচনচ হয়ে যাবে?


চলবে?


গল্প তুমি_আমি  

সাহিত্য ডাইরি  

পর্ব_৩


দিয়া অনুপের নামে নারী নি"র্যাতনের মামলা করেছে শুনে বড্ড আ"হত হলাম।


সামান্য একটা চ"রকে ভিত্তি করে মাম"লা করে দেওয়ার মতো একটা কাজ দিয়া করতে পারে ভেবে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।


সোফায় বসে যে পুলিশ চা খাচ্ছে সে আমার দেবর।অনুপের কাকাতো ভাই অপু।অপু চায়ে চু'মুক দিয়ে বললো


" বউদি,চা টা অনেক সুন্দর হইছে "


অনুপ বললো " দিয়া আমার নামে মামলা করছে? "


অপু ভাবলেশহীন ভাবে বললো " হু "


" স্টেটমেন্ট কি দিছে? "


" কি আবার দিবে, তুমি ওনার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিলো সেটাই "


অনুপ মাথার চুল টানতে টানতে বললো " আমি এসব করিনি অপু "


অপু রুপার দিকে তাকিয়ে বললো " বউদি আরেক কাপ চা খাওয়াবে? "


রুপা গেলো চা আনতে।অপু বললো " আমার তো মনে হয় এই ঘটনা পেপারে ছাপানো হবে।সাংবাদিকরা অপেক্ষা করে থাকে ধর্ষ"নের খবর পাওয়ার জন্য।সামান্য লিগ পেলেই এটা নিউজ ছাপিয়ে দেয় "


অনুপ গম্ভীর মুখে বললো " তাহলে তো আমার মুখ দেখানোর যায়গা থাকবে না "


" আর মামলা খেলে তো চাকরিটাও থাকবে না "


" তোর কি মনে হয় আমি এসব করেছি? আমায় তো তুই চিনিস "


" দাদা কি যে বলো তুমি।আমি তো তোমায় জানি,কিন্তু লোকতো না জেনেই নাচবে। যাইহোক আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা "


কথাবার্তার এই পর্যায়ে রুপা এলো চায়ের কাপ নিয়ে।অপুর হাতে চা দিতে দিতে বললো 


" অপু তুমি কিছু একটা করো,অনুপ এসবের কিছুই করেনি।আমি উপস্থিত ছিলাম ওইসময়ে "


" বউদি আমার কথাটা শুনো।এমন মেয়েলী কে"সে এভিডেন্সের চেয়েও দিয়া বেয়াইনের কথার উপর ভিত্তিটা বেশি দেয়া হবে।আচ্ছা দেখা যাক কতদূর যায় বিষয়টা "


অপু চলে গেলো।অপুকে আসতে দেখে অনুপের বাবা,মা বেশ অবাক হলো।কারণ অপু ডিউটি সময়ে কখনো বাড়িতে আসেনা।তটস্থ হয়ে বাবা অনুপকে বললো


" অপু এসছিলো কেন?কার কি হইছে? "


অনুপ বিষয়টা আড়াল রাখার জন্য বললো " কিছু হয়নি বাবা।এমনিই এসছিলো "


" মেয়েলি কে"সের কথা বলছিলো শুনলাম "


" ওসব কিছু না বাবা "


বাবা আর কিছু বললো না,ঘরে চলে গেলেন।তার মধ্যে জানার আগ্রহ অনেকটা কম।রুপা গিয়ে অনুপের পাশে বসলো।মৃদু স্বরে বললো


" আমার মনে হয় কি জানো? দিয়া এতোটা সাহস একা একা পায়নি,এখানে বড়দার হাত আছে "


" যেমন? "


" দাদা তোমায় এখনো মেনে নিতে পারেনি।ওর অমতে বিয়ে করেছি, বিষয়টা ও এখনো মনে রেখেছে "


" আমি এসব ভাবতে পারছি না।আর ওরা চাইলো মা"মলা করলো আর হয়ে গেলো নাকি? সবকিছু এতোই সহজ? "


" তুমি কলেজে যাবে না?আজ কয়টা ক্লাস আছে? "


" একটা আছে।রান্না করছো? "


" এসব ঝামেলায় রান্না করতেই ইচ্ছে করছে না "


" কিসের চিন্তা! চলো দু'জনে মিলে রান্নাটা করে ফেলি "


রুপা আহ্লাদী স্বরে বললো " বাবার বাড়ি যাওয়ার আগের রাতে ময়দা আমি মেখে দিছি।রুলস অনুযায়ী আজ তোমার পালা "


অনুপ গাল ফুলিয়ে বললো " হু হু জানি।চলো "


দুজনে গেলো রান্নাঘরে।অনুপ ময়দা মাখলো,সেগুলো গুটিগুটি করে রুটি বেলে দিচ্ছে আর রুপা রুটি ভাজছে।দু'জনার মুখ,গা ভর্তি ময়দার আস্তরণ।ময়দা যুদ্ধটা অনুপ'ই আগে শুরু করেছিলো।


সন্ধায় অনুপ, রুপা দু'জনে বসে টিভি দেখছে।কলিংবেল বেজে উঠলো।রুপা গিয়ে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দিয়া রুপার পা চেপে ধরলো।হু হু করে কান্না করতে করতে বললো 


" দিদি আমায় মাফ করে দে প্লিজ,আমি অনেক জঘন্য একটা কাজ করছি।জানি তুই আমায় কখনো মাফ করতে পারবি না,কিন্তু আমি সত্যিই এজন্য লজ্জিত রে দিদি "


রুপা দেখলো শুধু দিয়া না,তার দাদা,বাবা দুজ'নই এসছেন।রুপা দিয়ার থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো 


" তোর বলা শেষ হলে চলে যা "


রুপার দাদা গম্ভীর মুখে বললো " রুপা,বোন আমার আমার ভুল হইছে,আমি তো....."


রুপা কথা থামিয়ে দিয়ে বললো " আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছি না "


অনুপ ও দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। অনুপকে দেখে দিয়া রুপার পা ছেড়ে অনুপের পা জরিয়ে ধরে বললো 


" জামাইবাবু আমায় প্লিজ মাফ করে দাও।আমি বুঝতে পারিনি এতোকিছু হয়ে যাবে।রাগের মাথায় এসব করে ফেলছি।প্লিজ জামাইবাবু আমায় মাফ করে দাও "


অনুপ দিয়ার থেকে পা ছাড়িয়ে নিয়ে রুপার দিকে তাকালো।রুপা,অনুপ দুজনেই বেশ বুঝতে পারলো অপু ওদের মোটামুটি একটা চাপ দিয়েছে।


অনুপ রুপাকে সাইডে ডেকে এনে বললো " আমার কিছু বলার নাই।তোমার যদি মনে হয় ওদের ক্ষমা করে দেয়া উচিত তাহলে ক্ষমা করে দিবো "


রুপা বেশখানিকটা সময় ভাবলো।তারপর দরজার কাছে গিয়ে যা বললো সেটা শুনে অনুপ বিস্মিত হয়ে রইলো।আজ যেন সে রুপাকে নতুন রুপে দেখতে পাচ্ছে, যার সাথে আগের রুপার কোনো মিল নেই....... 


চলবে?



অন্তিম_পর্ব


রুপা গিয়ে ওর দাদাকে কঠিন স্বরে বললো " তুমি যে কাজটা করছো সেটার জন্য অনুপ তোমায় ক্ষমা করে দিলেও আমি দিবো না।ভেবে নাও আজ থেকে তোমার কোনো বোন নেই "


রুপার দাদা বিস্মিত হয়ে বললো " তার মানে? আমি বড় দাদা হয়ে একটু শাসন করতে পারবো না? এরজন্য এতো বড় বড় কথা শুনিয়ে দিলি? "


" হ্যা দিলাম।এটাকে শাসন বলে না।শাসন করতে হলে আগে ঠিক ভুল বিচার করতে হয় "


" আমি কিকরে বুঝবো দিয়া একটা সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে এভাবে বাড়িয়ে বলবে "


" দেখো দাদা আমি আর কথা বাড়াতে চাই না।আর হ্যা,তুমি যে অনুপকে আগে থেকেই সহ্য করতে পারো না সেটা আমি বুঝতে পারি।তুমি এতেদিন শুধু অপেক্ষা খুজছিলে ওকে ফাঁদে ফেলার,প্রতিশোধ নেওয়ার।দিয়ার পেছনে তুমিই কলকাঠি নাড়িয়েছো সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানেনা।আরো কিছু বলার আগে তোমরা আমার চোখের সামন থেকে দুর হও " 


দাদা চরম অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে বললো " আচ্ছা যাচ্ছি।বাবা এতোটা পথ জার্নি করে এসছে,অন্তত বাবাকে একটু বসা! "


রুপা আগের থেকেও কঠিন স্বরে বললো " ও বাড়ির কারোর সাথে আমার সম্পর্ক নেই।বাবাও সে সেরাতে ছিলো,কই কিছুই তো বললো না।উল্টো অনুপকে বিয়ে করা আমার ভুল হয়েছে সেটা নিয়ে খোটা দিয়েছিলো।আমি ভুলে গেছি আমার কোনো পরিবার ছিলো!তোমরাও ভুলে যাও "


একথা বলে রুপা খট করে দরজা বন্ধ করে দিলো।অনুপ রুপার কাঁধে হাত রেখে বললো


" ওনারা যখন ভুল বুঝতে পেরেছে তখন সবটা মিটিয়ে নিতে পারতে! "


" তোমাকে যেভাবে অপমান করলো তারপর মিটিয়ে নেওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। উল্টে আমি ওদের সবার নামে মান হানির মা"মলা ঠুকে দিবো "


অনুপ বুঝতে পারছে রুপা যথেষ্ট রেগে আছে।রেগে গেলে মেয়েটার মাথা একদম ঠিক থাকে না।তখন যা না তাই বলতে থাকে।


রাতে শুতে গিয়ে অনুপ লক্ষ্য করলো রুপা বিছানার এক কোনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।তখন দাদার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য হয়তো মন খারাপ হচ্ছে।মেয়েদের মধ্যে এই মায়া বিষয়টা প্রবল ভাবে থাকে।রুপার হাত স্পর্শ করতে রুপা একটু কেঁপে উঠলো।বিছানা ছেড়ে ধরপর করে উঠে বসলো।অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে বললাম 


" মন খারাপ লাগছে? "


রুপা চোখের জল মুছে বললো " হু "


" দাদাকে তখন ওভাবে বলা উচিত হয়নি।যতোই হোক,ছোট বোন এভাবে বড় ভাইকে বললে মন খারাপ তো হবেই "  


রুপা অনুপকে জরিয়ে ধরে বললো " আমার মাথা ঠিক ছিলো না।আর তাছাড়া আমি ভুল কিছু তো বলিনি,দাদা তোমার সহ্য করতে পারে না এটা তো সত্যি তাই না? "


" না সত্যি না "


রুপা থতমত খেয়ে বললো " সত্যি না মানে?তুমি কি ভুলে গেলে আমাদের বিয়ে নিয়ে দাদা কি অশান্তিটাই না শুরু করেছিলো "


" বিয়ে ঠিক হওয়া একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেলে সব দাদারাই অশান্তি করে।এতে দোষের কিছু নেই।তাছাড়া তোমার পড়াশোনা,যাবতীয় সব বিষয় তো দাদাই দেখেছেন।বিয়ের মতো একটা বিষয়ে তুমি তার অমতেই করে ফেলবে এটা তার সহ্য হওয়ার কথাও না "


" তুমি কি বলতে চাচ্ছো? "


" আমি বলতে চাচ্ছি যা হয়েছে সেটা মিটিয়ে নেওয়া ভালো।তবে এটা ঠিক যে উনি ওইরাতে না জেনেই আমার গায়ে হাত তোলাটা অন্যায় করছেন।শেষে ভুল তো বুঝতে পেরেছে তাই না "


" তুমি এরকম কেন?এতো সহজে সবটা ভুলে যাও কি করে? "


উত্তরে অনুপ হাসলো।অনুপের হাসি দেখে পুরো বিষয়টা রুপার কাছে হালকা মনে হতে শুরু করলো।অনুপ বললো 


" রান্নাঘরে চলো।খুব খিদে পাইছে " 


রুপা রান্নাঘরে কাছে যেতেই ভেতর থেকে টুংটাং আওয়াজ শুনতে পেলো।দরজার কাছে যেতেই রুপার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।দেখলো রান্নাঘরে ওর দাদা রান্না করছে।রুপাকে দেখে ওর দাদা বললো 


" রুপা,এক কাপ চা করে দে তো। মাথাটা খুব ধরেছে বুঝলি "


কথাটা এমন ভাবে বললো যেন এর আগে কিছুই হয়নি।রুপা একপলক অনুপের দিকে তাকালো।অনিপ অভয় দিতেই রুপা চায়ের পাতিলটা চুলায় দিতেই রুপার দাদা রুপার হাত ধরে বললো 


" আমায় ক্ষমা করে দে বোন।ব্যবসাটা খারাপ যাচ্ছে,মাথা ঠিক নেই।তারমধ্যে দিয়া এসে এমন সব কথা বললো যে রাগ সামলাতে পারিনি।নিজেই নিজের কাছে বড্ড ছোট হয়ে গেছি রে।বাবা খুব মন খারাপ করেছে,বলেছে তোদের বাড়ি নিয়ে যেতে।বড়দার ভুলটা মাফ করে দিবি না বোন? "


রুপার চোখ ভর্তি জল চলে এলো।অনুপ দরজার কাছে দাড়িয়ে।রুপা অনুপের দিকে তাকালো।অনুপ হ্যাসূচক মাথা নাড়াতেই রুপা দাদাকে জরি"য়ে ধরলো।


-----------সমাপ্ত-----------------


0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন