#মায়া_খেলা
#গিয়াস_উদ্দিন_আহাম্মাদ
#পর্ব_২
রিয়ার দুই কানে সে হাত দিয়ে বসে আছে। এমনভাবে হাত চেপে ধরেছে যেন হঠাৎ করেই তার কানে তীব্র ব্যথা অনুভব করছে। আমি রিয়ার এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে রিয়া?
রিয়া বলল, না, কিছু না। কেমন যেন ব্যথা পাচ্ছিলাম, আর মনে হচ্ছিল কিছু শুনতে পাচ্ছি না। আচ্ছা বল, তুই যেন কি বলতে চাইলি? কিসের রাতের ঘটনা?
রিয়ার মুখে এমন কথা শুনে আমি হতবাক। আমি তো পুরো ঘটনাই তাকে বলেছি প্রায়। এমনকি সে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল যে মনে হচ্ছিল সে মনোযোগ দিয়ে শুনছে আমার কথা। তাহলে এখন আবার এমন কথা বলছে রিয়া? তার মানে রিয়া এতক্ষণ কিছু শোনেনি!
এখন আমি নিশ্চিত আমার এই কথাগুলো সত্যিই কাউকে বলতে বারণ। আর কাউকে বলতে চাইলেও তারা হয়তো শুনতেই পাবে না। আমি এই মিথ্যা চেষ্টাও আর করব না, কাউকে আর এই ঘটনা সম্পর্কে বলতে যাব না।
আমাকে খুঁজে বের করতে হবে কেন এই বাচ্চা? আর আমার গর্ভেই কেন তারা দিতে গেল? আমি কি ক্ষতি করেছি তাদের?
আমি রিয়াকে আর কিছু না বলে প্রসঙ্গ বদলে দিলাম। কিছুক্ষন থাকার পর রিয়াকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। আমিও বাসার দিকে রওনা দিলাম।
পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ভাবলাম জিনদের সম্পর্কে আমার নিজেকেই জানতে হবে আগে। এই ভেবে কয়েকটা বই কিনলাম লাইব্রেরি থেকে। এই বাচ্চাটা সম্পর্কে নিজেকেই জানতে হবে, আর কাউকে কিছু বলা যাবে না।
বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ডাক্তার আফনানের দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খেলাম। যদিও ভয় লাগছিল যে আজকেও হয়তো সেই বড় মাথাওয়ালা জিনটা আসবে গভীর রাতে। আর কি কি যে বলবে, আমি জানি না এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঠিক ফজরের আযানের সুন্দর ধ্বনিতে, যে কলরব বইছে আকাশে বাতাসে, ঠিক সেই সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। এবং একজন সাধকের মতো দেখতে সাদা কাপড় পরা, বড় বড় দাড়িওয়ালা একদম গল্পে যে দরবেশ বাবার কথা শুনেছি এতদিন, ঠিক তেমন দেখতে একজন মানুষ আমার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে!
আমি দেখে ভয় পেয়ে চমকে উঠলাম। আমার চমকে ওঠা দেখে তিনি বললেন, মা, ভয় পেয়ো না। আমি কোনো ক্ষতি করব না। আর তোমার ভিতরে জিন বাচ্চা রয়েছে, তাকে এই দুনিয়ার আলো দেখিয়ো না। কারণ সে যদি ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে এই পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলবে। পৃথিবীটা রাজত্ব করবে সে। যে করেই হোক তাকে ধ্বংস করো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে করব? আমি তো কাউকে বলতেও পারি না।কিভাবে সেটা তুমি ভাবলেই পেয়ে যাবে। আর এই কাজটা শুধু তুমি আযানের সময় করতে পারবে। কারণ আযানের সময় তোমার সাথে কোনো জিন থাকে না। আর আযানের সময় কাউকে বললে সে শুনবে। কিন্তু কিভাবে ধ্বংস করবো?
এই কথা বলার সাথেই দেখি লোকটি আর আমার মাথার কাছে নেই।
তারাতারি করে বিছানা থেকে উঠলাম। উঠেই সব দিকে খোঁজাখুঁজি করলাম, কিন্তু পাইনি কাউকেই। বিছানায় এসে আবার বসি। আর খেয়াল হয় লোকটি আমাকে বলেছিল আযানের সময় আমার কাছে জিন থাকে না, ওই সময় এই বাচ্চার কথা কাউকে বললে কোনো সমস্যা হবে না।
হঠাৎ আবার খেয়াল করি আযান তো শেষ! তার মানে ওই লোকটি আযান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই চলে গেছে। আচ্ছা যাক, কিন্তু উনি আমাকে বললেন বাচ্চাটা ভয়ংকর, তাকে জন্ম দিতে বারণ করলেন। আর বাচ্চাটা নাকি এই পৃথিবী ধ্বংস করবে। কিন্তু আমি বাচ্চাটাকে কিভাবে ধ্বংস করব? কোন কিছু তো বলে দিলেন না লোকটি। কি করব আমি? আর আমি তো কিছুই জানি না এই জিনদের সম্পর্কে।
সত্যি বলতে, বাচ্চাটি পৃথিবীর জন্য না হলেও আমার জন্য ভয়ংকর। সমাজের চোখেও আমি ভিন্ন মানুষ হয়ে যাব এখন। যাই হোক, আযান শেষ, এখন সকাল হবে তাই আর ঘুমাইনি। জিনদের নিয়ে জানতে হবে আর এই বাচ্চার রহস্য বের করতেই হবে।
তাই জিনদের নিয়ে যে বইগুলো নিয়েছিলাম, তার মধ্যে একটি খুলে পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে জানলাম জিনেরাও মানুষের সাথে সহবাস করতে পারে ঘুমের মাঝেই। আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম, কিন্তু আমি যে কারণটা খোঁজার জন্য বইটা পড়ছি, সে রকম কোনো কিছুই পেলাম না।
বইটা রেখে পরিষ্কার হয়ে সকালের খাবার খেলাম। ভাবলাম আজকের সকালের দরবেশের মত লোকটির কথা বাবা মার সাথে শেয়ার করি, কিন্তু আবার ভাবলাম না, ওনারা আবার চিন্তা করবে বেশি। তবে কেমন যেন ডাক্তার আশার সাথে দেখা করতে মন চাইছিল। আমার সব ঘটনা ডাক্তার আশাকে বললে আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা উপায় বের করবে। আর না হয় অপারেশন করে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবে তাতেও তো বাচ্চাটা ধ্বংস হবে। এই পৃথিবী যে ধ্বংস করবে, তাকে যে করেই হোক ধ্বংস করাটা জরুরি।
আমি ডাক্তার আশার চেম্বারে যাওয়ার জন্য রেডি হই। বাড়িতে কাউকে না বলেই বের হই ডাক্তারের সাথে দেখা করার জন্য। সকাল ১১টার মধ্যেই চলে যাই ডাক্তার আশার চেম্বারে। গিয়ে দেখি ডাক্তার আশা নেই উনি নাকি আজ চেম্বারে বসবেন না। আমি তার চেম্বারে বসে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করি, ডাক্তার আশা এখন কোথায় আছে?
লোকটি বলল, ডাক্তার আপা তো ঢাকায় গেছে, তবে আজকে হাসপাতালে তার ডিউটি করার কথা। আপনি গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আমি ভাবলাম, হয়তো নেই আমার ভাগ্য সবসময় খারাপই হয়। তবুও চলে গেলাম হাসপাতালে তার সাথে দেখা করার জন্য। গিয়ে দেখি ভাগ্যক্রমে ডাক্তার আপু একটু আগেই আসলো। আমার ভাগ্য তাহলে আজকে ভালোই!
দেখা করি ডাক্তার আশার সাথে। ডাক্তার আমাকে দেখেই চিনে ফেলে আর রাগান্বিত হয়ে বলে, এতদিন কোথায় ছিলে? আর পরের দিনে ভর্তি হতে বলেছিলাম, হওনি কেন? আর তোমার অবস্থা খুব জরুরি। তোমাকে তারপর খুঁজেছি, কিন্তু নম্বর ছিল না, আর আমিও একটু ব্যস্ত ছিলাম, তাই যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমার বিশ্বাস ছিল তুমি দেখা করবা। এখন বলো, আসনি কেন?
আসলে ডাক্তার আপু, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল, তাই আসলে আপনার কাছে এসেছি।
বলো।এখন না, আযানের সময় বলতে হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে। বসে থাকো, আসছি।
আচ্ছা আপু।
ডাক্তার আমাকে এই কথা বলে বাইরে গেল। আর আমি বসে আছি চেয়ারে। একটু পরে ডাক্তার আসল। আর আমাকে বলল, দিপ্তী, চলো আমার সাথে?
কোথায়?
যেখানে নিয়ে যাব, শুধু আমার সাথে আসো। তোমার কথাগুলো শুনব আযানের সময়ই।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি ডাক্তারের সাথে সাথে যেতে থাকি। আমি আসলে ডাক্তারের এমন আচরণ কিছু বুঝলাম না। আমি আযানের সময় বলতে চাইলাম, কিন্তু ডাক্তার একবারও জিজ্ঞেস করল না যে কেন? এখনি বলো, কোনো সমস্যা নেই ইত্যাদি। হঠাৎ এমন কথা শুনে যেন তিনিও আমার কথাগুলো আযানের সময় শোনার জন্যই আগ্রহী, তার আগে শুনতে চান না সে ও। কিন্তু আমার জন্য উনি বাকি রোগীকে ফেলে আমাকে সাথে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। আর উনি আজকেই আসলো মাত্র, তবুও আমার সাথেই সময় দিচ্ছে।
যেতে যেতে তিনি একটি বাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে ৫ তলায় উঠে ৫০৮ নম্বর রুমটা খুলে আমাকে সাথে করে নিয়ে ভিতরে ঢুকল। রুমটার চারপাশ মাকড়সার জাল দিয়ে এতটাই ভারি হয়ে ছিল যে মনে হচ্ছিল কয়েক বছর কেউ এই রুমে ঢোকে নি। রুমের ভিতর ঢুকে আর একটু সামনে গিয়ে আর একটি দরজার তালা খুলে রুমে আমাকে নিয়ে একটি চেয়ারে বসাল ডাক্তার আশা।
রুমটা প্রচুর অন্ধকার ছিল, তাই কিছু দেখা যাচ্ছিল না রুমে কি কি আছে। আমাকে চেয়ারে বসে তিনি রুমের লাইটটা অন করে দিলেন। লাইট অন করার সাথে আমি চমকে উঠি। আর বলি, এইটা কিভাবে সম্ভব? বাইরের রুমগুলো এত নোংরা, আর ভিতরের এইটা এত পরিষ্কার!
আমি ডাক্তার আশাকে যখন বলতে যাব এই পরিষ্কারের কারণ, তখন উনি আমাকে বলে, পরিষ্কারের কারণ একটু পরেই জানতে পারবে। এখন বলো তোমার রাতের ঘটনা।
এখন না ডাক্তার আপু, আযান দেওয়া শুরু করুক।
আচ্ছা ঠিক আছে, একটু পরেই আযান দেবে, প্রিপারেশন নেও।
ডাক্তারের কথা শেষ না হতেই আযান দেওয়া শুরু। আমিও আর কিছু না ভেবেই আযান শুনেই আমার ঘটনা বলা শুরু করলাম। দুই রাতের ঘটনা ডাক্তারকে বলা শেষের দিকে, কিন্তু তবুও আযান শেষ হয়নি। আমিও অত কিছু না ভেবে সব বলে দিলাম ডাক্তার আশা আপুকে।
বলা শেষে ভাবলাম, উনি কি বিশ্বাস করবেন আমার কথাগুলো? ডাক্তাররা তো আসলে এগুলো খুব একটা বিশ্বাস করে না। এগুলো শোনার পর ডাক্তার আপু আমাকে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, বুঝেছি। এখন চলো, চেম্বারে যাই।
আমিও আর কিছু না বলে ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে ডাক্তার আশাকে বলি, আচ্ছা ডাক্তার আপু, আমি যে কথাগুলো বললাম, তা কি আপনার বিশ্বাস হয়েছে?
ডাক্তার আপু বিশ্বাস হবে না কেন? আসলে কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো বিশ্বাস না হলেও করতে হয়।
আমি আর কোনো কথা না বলে হেঁটেই চলছি ডাক্তারের চেম্বারের দিকে তার সাথে। হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বাজে মাত্র ১২:৪৫, এখনো তো আযানের সময় হয়নি! তখন তাহলে কে আযান দিলো? আমি ডাক্তার আশার দিকে তাকিয়ে বললাম, আপু, এখন তো বাজে মাত্র ১২:৪৫, এখনো তো আযান দেয়নি! তাহলে তখন কিভাবে কি
ডাক্তার আশা আমার কথা শুনে মুচকি হেসে দিয়ে বলে
চলবে...
৩য় পর্ব লিংক
https//wwwthirtpartstoymayarkhela.com


0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন