গর্ভধারিণী
পর্ব----০৫
সাহিত্য ডাইরি
---কি হয়েছে আমায় বলো,একটু আগে তুমি কি বললে ওটা।আকাইদ তোমার ছেলে নয়?
---না,কিছু না।আমায় আর কিছু জিজ্ঞেস করিস না তুই!
এই বলে আব্বা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।মর্জিনা ফুপু তাকে কয়েকবার পেছন থেকে ডাক দেয়,কিন্তু আব্বা সাড়া দিলো না।
---দূরত ভাই,কোথায় যাও?কিছু না বইলা চইলা যাইতেছো ক্যান তুমি?
আব্বা মর্জিনা ফুপুর কোনো কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে চলে গেলো।এরপর মর্জিনা ফুপু এসে আমার ঘরের দরজাটা খুললো।আমি দৌড়ে গিয়ে মর্জিনা ফুপুকে জড়িয়ে ধরি।
---মর্জিনা ফুপু,এইটা কি কইলো আব্বা?
---কী কইছে,কিছু কয় নাই তোর আব্বা।
---আমি শুনছি সে বলছে আমি নাকি তার ছেলে না।
---দেখ তুই এখনো অনেক ছোটো।এতো কিছু শুনতে নেই।আর কতটুক বুঝিস তুই।দূরত ভাইয়া তোর আব্বা না তো কি,রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে মানুষ।
মর্জিনা ফুপুর কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।একটু পরে মর্জিনা ফুপু কি জানি একটা ভেবে আমায় বললো।
---তোরে যেটা বলতে আসছিলাম,
---কি কথা?
---একটা জরুরী কথা।আমি তোর আম্মার একটা আত্মীয় বাড়ির খোঁজ পেয়েছি।যার বাড়ি কিনা হাসপাতালের ডানদিকের ঐ রাস্তাটা দিয়ে যাইতে হয়,
---সত্যি কইতেছো তুমি?
---হ রে,তাইলে আর বলি কি!খোদা চাইলে তোর আম্মারে এইবার পাইয়াও যাইতে পারি আমরা।
---সে তো বুঝলাম, কিন্তু আমার আম্মা ওখানেই আছে তার কি মানে?
---আমার তো মনে হয় ঐ বাড়িতেই আছে।দেখ কোনো মানুষ যখন বিপদে পড়ে বা তার আশ্রয়ের দরকার হয়,নিজের আপন মানুষের কাছেই যায়।দেখ তা না হইলে তোর মা হাসপাতালের ঐ রাস্তাটার দিকে ক্যান যাইবে?
---তাইলে আমরা কি করবো এখন?
---কি আর করবো,তোর মায়ের ঐ আত্মীয় বাড়িতে যাবো।আমার মনে হয় তুইও আগে গেছিস,এখন মনে করতে পারতেছিস না।
---হুমমম,হইতে পারে।কিন্তু কখন যাবো আমরা, দেখলে কাল রাতে কি কান্ড করলো আব্বা!
---এতো ভয় পাইলে চলবে না।আমরা আজকে বিকেলের দিকে যাবো।ঐ সময়ে এমনিতেও তোর আব্বা বাড়িতে থাকে না।যদি সন্ধ্যার পরপর ফিরে আসতে পারি আর কোনো চিন্তাই থাকবে না।
---ঠিক আছে।তাইলে তাই হবে।
মর্জিনা ফুপু এরপর তার বাড়িতে চলে গেলো।এদিকে আমিও আমার কাজে হাত দিলাম।
-
-
-
-
-
দুপুরবেলা আব্বা বাড়িতে ফিরে আসে।হাতে করে কিছু খাবার নিয়ে আসলো।আম্মা বেঁচে থাকতে আব্বা যখন বাড়িতে ফিরতো আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়েই আসতো।আবার আজকে কিছু নিয়ে আসলো।আমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকে প্রশ্ন করি।
---এইগুলা কি আনছো আব্বা?
---তোর জন্য গঞ্জ থেকে খাওয়ন নিয়া আইছি,তুই যেগুলা খাইতে পছন্দ করো।
খাবারগুলো সত্যিই আমার ভীষণ প্রিয়।কিন্তু আমি তেমন আগ্রহ প্রকাশ করলাম না।আব্বার সকাল আর গতরাতের চেহারা এখনো ভুলতে পারছি না।আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারে আব্বা আমার কাছে এসে আমায় আদর করতে করতে বলতে লাগলো।
---রাগ করছিস বাবা,দেখ আমি হয়তো তোর লগে একটু বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি! কি করবো বল, মাথা ঠিক থাকেনা।
---আমি এগুলা খাবো না আব্বা!
---ক্যান খাবি না,তুই না খাইলে যে আমি শান্তি পামু না।আগে তো আমি কিছু আনলেই ঝাপিয়ে পড়তি আমার ওপর।
---তুমি আর সেই আমার আগের আব্বা নেই।তুমি পাল্টে গেছো,সবাই ঠিকই বলে মা মরলে বাপও পর হইয়া যায়,
---ওরে বাবা, এতো পাকা পাকা কথা কে শিখাইলো তোরে,ঠিক আছে আমার সামনে খাইতে হবে না,যদি এই অধম বাপটারে ক্ষমা করতে পারিস পরে না হয় খেয়ে নিস।
এই বলে আব্বা খাবারগুলো আমার সামনে রেখে চলে গেলো।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।এমনিতে ক্ষুধাও লেগেছে।নাহ,এতো চিন্তা করলে হয় না,আগে খাই।তারপর যা হবার হবে।আমায় খেতে দেখলে হয়তো আব্বাও খুশি হবে।কথাগুলো ভেবে কয়েকটা গজা তুলে মুখে পুরে দিলাম।আহ!কি স্বাদ।কতোদিন বাদে এতো ভালো খাবার খাচ্ছি নিজেও জানিনা।আরও কয়েকটা গজা নিয়ে মনের সুখে খেতে লাগলাম।
খেতে খেতে হঠাৎ কেমন জানি একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো আমার ভেতরে।মাথাটা ঘুরতে লাগলো,সাথে প্রচন্ড ঘুমও পাচ্ছে।এই সময়ে তো এতো ঘুম পায় না আমার।জেগে থাকার যতোই চেষ্টা করছি না কেন ঘুম আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ধরছে।হাত থেকে খাবারগুলো মাটিতে পড়ে গেলো আমার।তারপর কোনোমতে খাটের ওপরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।মুখ থেকে শুধু একটাই শব্দ উচ্চারিত হলো আমার।
---আম্মা, তুমি কোথায়?
এরপর,আর কিছু মনে নেই আমায়।
-
-
-
-
ঘুম ভাঙতেই দেখি চারদিকে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার।ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমায় কোনোকিছুর ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে।হতে পারে কোনো বাক্স।আর এটাও বুঝতে পারলাম আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
---কে আছো,আমায় কোথায় নিয়া যাইতেছো?আমার কথা কি কেউ শুনতে পাইতেছো না!
আমার চিৎকারের আওয়াজ বাক্স ভেদ করে কারোর কানে পৌঁছলো না।একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না আমি এখানে এলাম কিকরে?আব্বার দেওয়া গজা খাওয়ার পরে আর কিছু মনে করতে পারছি না আমি।বাক্সের দরজাটা খোলার প্রানপন চেষ্টা করি আমি।একটু পরে লক্ষ্য করলাম কেউ যেনো বাহির থেকে দরজাটা খুলছে।একটা লোক দরজা খুলে আমার দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দিলো।
---জলটা খেয়ে নে,আর যতোই ছটফট করিস না কেনো এখান থেকে জীবনেও বের হতে পারবি না তুই।
লোকটার হাত আমার কাছাকাছি আসতেই আমি তার হাতের ওপরে সজোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।তারপর বাক্স থেকে বেরিয়ে আসি।সে আমাকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।ইতিমধ্যে আমি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছি।ভাগ্যিস গাড়িটা কিছু সময়ের জন্য থামানো ছিলো।তারপরেও এতো ওপর লাফ দেবার কারণে আমার কপাল খানিকটা কেটে যায়।আর পায়েও ভীষণ ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম।কিছুতেই উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না।অল্প কিছু সময়ের ভেতরে রাস্তায় লোকজন জড়ো হয়।সেই ড্রাইভারের হদিস নেই কোথাও।রাস্তার লোকজন আমায় নানান প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকে,অথচো আমি যে চোট পেয়েছি সেইদিকে হুশ নেই কারো।
---এই ছেলে,কোথা থেকে এলে,বাড়ি কোথায়,তোমার সাথে কি কেউ নেই,একা একা বেরিয়েছো কেনো,?
আমি এদের প্রশ্নের কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না।একটু পরে একটা পরিচিত কন্ঠ কানে ভেসে আসলো আমার।
---কি হয়েছে এখানে,একটু দেখতে দিন আমায়। আমায় সামনে যেতে দিন।
সে ভিড় ঠেলে কেউ একজন সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো।তার দিকে চোখ পড়তেই আমি বিস্ময়ে হতবাক!যেনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।মুখ ফুটে বলে উঠলাম।
---আম্মা,তুমি!!!!
সে ভিড় ঠেলে কেউ একজন সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো।তার দিকে চোখ পড়তেই আমি বিস্ময়ে হতবাক!যেনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।মুখ ফুটে বলে উঠলাম।
---আম্মা,তুমি!
---আম্মা!কে তোমার আম্মা বাবু?
আম্মার কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।এটা কি বলছে আমার মা!
---আম্মা আমি আকাইদ,তোমার ছেলে?এই কয়দিনে ভুলে গেলে আমায়?
---বাবু তোমার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।আমি তোমার মা নই।
---আম্মায় মিথ্যা কেনো বলছো,আমি জানি তুমি আমার আম্মা,তুমি ছাড়া আর কে আমার মা হবে?
---আচ্ছা তুমি কোথা থেকে এসেছো,আর কেউ নেই তোমার সাথে?
আমি আম্মার কথার কোনো উত্তর দিলাম না, শুধু অবাক হয়ে চেয়ে আছি তার দিকে।জানিনা আম্মা আমায় চিনতে কেনো পারছে না।আমায় দেখতে পেয়ে তো এতোক্ষণে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার কথা।
---কি হলো কথা বলছো না কেনো,ঠিক আছে ব্যপার না।তুমি বরং আমার সাথে চলো!
---কোথায় যাবো?
---আমার বাসায় যাবে,দেখো তুমি তো চোট পেয়েছো।তাই তোমার চিকিৎসা দরকার।
একটু পরে রাস্তাটা ভীড়শুন্য হতে থাকে।তারপর সে একটা রিকশা ডেকে আমায় রিকশায় তুলে তার পাশে বসালো।চেহারার মিল ছাড়া মায়ের আর কোনোকিছুই খুঁজে পাচ্ছি না এই মহিলার ভেতরে।কথাবার্তা,পোশাক কোনো কিছুতেই মিল নেই।আম্মা আগে কখনোই এতো শুদ্ধ করে কথা বলতো না,নাএইরকম চাদরের সাথে শাড়ি পড়তো।তবে ওনার মুখ আর কন্ঠের সাথে মায়ের হুবহু মিল।মানুষ চাইলেই নিজের কথাবার্তার ধরণ,পোশাক পাল্টে ফেলতে পারে কিন্তু যে জিনিসগুলো পাল্টানো সম্ভব নয় অদ্ভুতভাবে সেগুলোর সাথেই আমার মায়ের ভীষণ মিল।চলতে চলতে রিকশাটা রাস্তার একটা ছোটো খাদের ভেতরে পড়লো,অমনি সে আমাকে সামলে নেয়।তারপর আমায় প্রশ্ন করে।
---তোমার নাম কি বাবু?
---আকাইদ!
---পুরো নাম?
--আটাইদ হাসান।
---তুমি এই জায়গায় একা একা চলে আসলে কিকরে,পালিয়ে আসোনি তো বাড়ি থেকে?
---না,আমি পালাইনি।তবে ঐ লোকটা...
---কোন লোকটা?
---আমি তো চিনি না তাকে,তবে সে আমার সাথে খুব খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো!
---তুমি জানতে সে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো,তাহলে তার সাথে এলো কেনো?
---আমি নিজে নিজে আসিনি,যখন ঘুম ভাঙলো দেখি একটা অন্ধকার বাক্সের ভেতরে আটকে আছি।তারপর ঐ লোকটা আমায় পানি খেতে দিলো,আমি তখন বুদ্ধি করে গাড়ি থেকে নেমে এসেছি!
---বাহহ,এটা খুব ভালো করেছো।তোমার বাবা মা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে হন্নে হয়ে খুঁজছে তোমায়?
---না,কেউ খুঁজছে না আমায়!
---খুঁজছে না মানে,কেনো?
---আমার মা নেই,আব্বা আছে শুধু।আব্বাই আমায় ঐ খারাপ লোকটার হাতে তুলে দিয়েছে।
---ধূর,এটা হয় নাকি আবার?
---হয়,আব্বার দেওয়া ঐ গজাগুলো খেয়ে আমার খুব ঘুম পায়।তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।হয়তো আব্বাই চেয়েছিলো আমি যেনো আর ঐ বাড়িতে না থাকি...তাই আমায় খারাপ লোকটার হাতে তুলে দিয়েছিলো,
--ইসসস,বাবা এমন একটা কাজ কেনো করলো তোমার সাথে?
---আমিও জানি না,
---একটা কথা...তোমার কথাগুলো শুনে মনেই হচ্ছে না আমি বাচ্চার সাথে কথা বলছি।এরকম বড়োদের মতো কথা শিখলে কোথা থেকে?
---জানি না,আমি নিজেও জানি না।তবে অনেকেই বলে আম্মা চলে যাবার পরে নাকি আবার ভেতরে অনেক পরিবর্তন আসেছে।
---বুঝতে পেরেছি।আসলে এটা সত্যি পরিস্থিতি মানুষকে সময়ের থেকে অনেক বেশী ম্যাচিউর করে দেয়।তোমার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই ঘটেছে!
---ম্যাচিউর কি?
(আমি এই অদ্ভুত শব্দের সাথে পরিচিত নই,তাই তাকে প্রশ্ন করি)
---হাহাহা,ম্যাচিউরড হলো পরিপক্ক।মানে তুমি সবথেকে বুঝতে শিখে গেছো।
এরপর ওনার আর কোনো কথা হলো আমার।রিকশা আপন গতিতে এগিয়ে চলতে লাগলো।
-
-
-
-
এদিকে আমার বাড়িতে।
বিকেল বেলা আব্বা বাড়িতে ফিরে আসে।এসেই আমার নাম ধরে ডাকতে শুরু করলো।
---আকাইদ,আকাইদ কই গেলি রে?
আমার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আব্বা চারপাশটা খুঁজতে লাগলো।তারপর আমার ঘরের দিকে আসে।দরজা খুলে দেখতে পায় আমি নেই ভেতরে।সারা বাড়ি আমায় তন্ন তন্ন করে খুজেঁও কোনোরকম সন্ধান মিললো না।বেশ কিছুক্ষণ আমায় খুজে না পেয়ে মর্জিনা ফুপুর বাড়িতে গেলো।
---কি রে মর্জিনা, আকাইদ কোথায়?
---সে আমি কি জানি,
---তুই জানিস না মানে, ও তো বেশিরভাগ সময় তোর লগেই থাকে।
---হ,থাকতো।কিন্তু তুমি সকালবেলা আমায় নিষেধ করে দেবার পরে আর একবারেও যাইনি,না ও আসছে।
---তাহলে কোথায় গেলো ছেলেটা আমার?
---ক্যান বাড়িতে নেই ও?
---বাড়িতে থাকলে কি তোর কাছে আসতাম!
---ভালো করে খুঁজে দেখো,কোথায় আর যাবে..
---আমার কিছু মাথায় ঢুকতেছে না,কোথায় চলে যাবে ছেলেটা?
---আচ্ছা তুমি শেষবারের মতো কহন দেখছিলা ওরে?
---মনে আছে দুপুরবেলা তুই আমায় কিছু খাবার দিছিলি ওর জন্য,আমি ওগুলো নিয়াই দিছিলাম ওরে।আর এইটাও বলছিলাম যে খাবারগুলো আমি নিয়া আসছি।তুই দিয়েছিস বলি নাই,
---ক্যান বললা না?
---দেখ সকালে এমনিতেই ওর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি, ভাবছি আমি আনছি শুনলে ও খুশি হইবো, মনটা হয়তো ভালো হইবো ছেলেটার।কি উল্টাপাল্টা সব হয়ে গেল বল তো,
---এ তো খুব চিন্তার বিষয়। আচ্ছা চলো আমিও গিয়ে খুঁজি তোমার সাথে।এইভাবে ও কোথায় চলে যাবে।আমার মনে হয় খুঁজলে ঠিক পাওয়া যাইবো,এতো চিন্তা কইরো না।
মর্জিনা ফুপু আর আব্বার সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো।তারপর আমায় খুঁজতে থাকে।
(পাঠকদের একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেই, অনেকেই হয়তো ভাবছেন আকাইদ কিকরে জানলো ওর বাড়িতে কি ঘটছে?বস্তুত আকাইদ এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক।সে নিজের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো কোনো একজনের সাথে শেয়ার করছে যা ওর সবটা নখদর্পনে।এই নিয়ে কেউ দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না!)
---এই মর্জিনা তুই আমার ছেলের সাথে কিছু করিস নাই তো আবার?
---তুমি এসব কি কইতছো দূরুত ভাইজান,আমি আকাইদের ক্ষতি করমু ভাবলা কেমনে তুমি?
---আমি অনেক কিছু ভাবতে পারি অহন,তুই গজার সাথে কিছু....
---মানে,তুমি বলতে চাও।আমি কি এর আগে খাওয়াই নাই তোমাগো,দেখো একদম ঠিক হইতেছে না কিন্তু,আজেবাজে কথা বন্ধ করো।
---ঠিক আছে বলমুনা আর।আর শুনে রাখ ওর সাথে কেউ খারাপ কিছু করলে আমি কিন্তু ছাড়মু না তারে।
--আইজ মনে হয় ছেলের জন্য একটু বেশিই দরদ দেখাইতেছো,এতোদিন কোথায় ছিলো এতো ভালোবাসা?
--বাজে কথা বলিস না।পারলে আমার সাথে খোঁজ ওরে।
-
-
-
-
-
এদিকে আমি সেই মহিলার সাথে তার বাসায় আসলাম।উনি আমায় ওনার ঘরের সোফার ওপরে বসিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেল।একটু পরে কিছু ব্যান্ডেজ আর ডেটল নিয়ে ফিরে আসলো।
---ব্যথা কি কমেছে একটুও,
---হ্যাঁ,অনেক কমছে আগের থেকে
---হাতটা এদিকে বাড়াও ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
আমি তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।বহুদিন পরে যেনো নিজের মায়ের পরশ পেলাম।দুটো মানুষের ভেতরে কিকরে এতো মিল থাকতে পারে!আমি শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
সে আমার ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর আবারো ঘরের ভেতরে চলে যায়।আমি সোফা থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকাতে থাকি।বসার ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলাম।হঠাৎ আমার চোখজোড়া দেয়ালের উপরে ঝুলানো একটা ছবির দিকে আটকে গেলো।
---এতো আমার ছোটোবেলার ছবি।হুবহু এরকম একটা ছবি আমাদের বাড়িতেও আছে।এই মহিলা যদি সত্যিই আমার আম্মা না হয়ে থাকে তার ঘরে আমার ছবি কি করছে?
চলবে........
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন