গর্ভধারিণী
পর্ব---০৪
সাহিত্য ডাইরি
রহমান চাচার কথা শুনে আমার আম্মার লাশের কথা মনে পড়লো।তার মানে কি আমি সেইদিন ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।ঐ লাশটা আম্মার ছিলো না।আল্লাহ,আমার মনের সন্দেহ তুমি সত্যি কইরা দাও!
একটু পরে বাড়িতে মর্জিনা ফুপু চলে আসে।সে আগে থেকেই রহমান চাচার সমস্ত কথা শুনে ফেলেছে।
---রহমান ভাইজান,কি কইতেছো তুমি এসব?
(মর্জিনা ফুপু রহমান চাচাকে বলে)
---হ রে ঠিকই কইতেছি,আমি একটু আগে শুনে আসলাম।এই কারণেই তো দূরুত ভাইয়ের কাছে আসলাম,ওরে সবটা জানাবো বলে,
---না,তুমি দূরুত ভাইজানরে কিছু বইলো না এক্ষুণি!
---কিন্তু ক্যান।কি সমস্যা ওরে কইলে?
---আমি কইছি বলবা না তাই বলবা না,আর আমি যখন বলছি অবশ্যই কোনো কারণ আছে।
---আচ্ছা ঠিক আছে।আর পরে ও আমারে কিছু কইলে তোর কথা বইলা দিমু কিন্তু,যে তুই আমারে নিষেধ করছো।
---আচ্ছা যা খুশি কইরো,এখন চুপ থাকো।
---হুমমম,আমি আসি তবে।
এই বলে রহমান চাচা চলে গেলো।মর্জিনা ফুপু আমায় বললো।
---চল আকাইদ আমরা হাসপাতালে যাই।
---হাসপাতালে,হাসপাতালে কেনো?
---চল আমার সাথে,আমার মনে হয় তুই ঐদিন ঠিকই কইছিলি।ঐইটা তোর আম্মা ছিলো না।
---দেখছো,তখন কেউ আমার কোনো কথা বিশ্বাস করলো না।
---হুমম,জানি আমি।এবার চল যাই।
---আব্বা আইসা তো আবার খোঁজাখুঁজি শুরু কইরা দেবে,তখন কি হইবো
---আমি তোর আব্বারে কিছু একটা বুঝাইয়া বলমুনে,চল এবার।
আমি মর্জিনা ফুপুর সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।সদর হাসপাতাল আমাদের গ্রাম থেকে খুব একটা দূরে না।হেঁটে যেতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে।যাতে আব্বার সামনে না পড়ি এই কারণে মর্জিনা ফুপু আমায় জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায়।যদিও এখান থেকে যেতে একটু বেশী সময় লাগে।
-
-
-
-
বেশ কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে পৌঁছলাম আমরা দুজন।এই জায়গার শেষবার আম্মাকে নিয়ে আসছিলাম।আর আজকে আসলাম।মর্জিনা ফুপুর হাত ধরে আমি ভেতরে যাই।তারপর একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করি।মর্জিনা ফুপু তার সাথে কথা বলছে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনতে লাগলাম।
----আচ্ছা ডাক্তার সাহেব,যে লাশটা হাসপাতাল থেকে চুরি হয়েছে আমি তার ব্যপারে কিছু কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে!
---হ্যাঁ,সে তো বহুদিন আগের ঘটনা।
---বলছিলাম,ঐ লাশটার কিভাবে মৃত্যু হয়েছিলো,আর কোনো ছবি বা কোনো কিছু আছে আপনাদের কাছে আমাদের দেখানোর জন্য?
---দেখুন ওনার তো এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়েছিলো।আর চেহারা এতোটাই বাজেভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ওনার পরিবারের লোকজন পর্যন্ত চিনতে পারছিলো না।আর আপনার কাছে কোনোপ্রকার ডকুমেন্ট কেনো শেয়ার করবো আমি,এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ।
---ওহহহ,আচ্ছা।তা লাশ কিভাবে চুরি হলো,কে করলো এই বিষয়ে কিছু কি জানতে পেরেছেন?
---না,এখন পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি।আর আপনাদের এর থেকে বেশী কিছু জানানো সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে।ধন্যবাদ।
ডাক্তার সাহেব এরপর চলে গেলেন।মর্জিনা ফুপু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।
---আমার এবার সত্যিই মনে হচ্ছে ঐ লাশটা তোর আম্মার ছিলো না।এই মহিলার ছিলো।দেখিস নি ওনার মুখটা কিভাবে থেতলে ছিলো।কি বোকা আমরা,তখন কিছুই বুঝতে পারি নি।
---কিন্তু আম্মার লাশের জায়গায় ঐ লাশটা আসলো কেমনে,লাশ তো আর নিজে থেকে হেঁটে আসেনি তাই না?
---বুদ্ধিমানের মতো কথা বলেছিস,আমিও একই কথা ভাবছি।তোর আম্মার লাশটা তাহলে কোথায় গেলো,আর ঐ মহিলার লাশটাই বা তোর আম্মার জায়গায় আসলো কেমনে?আমার কি মনে হয় জানিস,
---কি?
---তোর আব্বাই কিছু করেছে,তোর আম্মার লাশ সেই বাড়িতে নিয়ে আসছে।তার কি একবারেও সন্দেহ হয়নি।দেখ আদিবা ভাবীরে(আমার আম্মার নাম আদিবা)আমাদের চিনতে ভুল হতেই পারে,তোর বা তোর আব্বার ভুল হবার তো কথা না।তুই এইটুক বাচ্চা ছেলে,তোর সন্দেহ হলো আর তোর আব্বার হলো না।এইটা সম্ভব?
---আমরা এখন কি করমু মর্জিনা ফুপু?
---সেইটা তো আমিও জানি না।তোর আম্মা যদি সত্যিই বেঁচে থাকে কোথায় আছে,কিভাবে আছে আমরা কিচ্ছু জানি না।আমরা কেমনে খুঁজে বার করমু তারে,আর সে যে বেচেঁ আছে তার কি নিশ্চয়তা আছে।
--আমার মনে হয় আম্মা ম রে নাই,সে বেঁচে আছে।
---হ,তো আছেটা কোথায়,একমাত্র আল্লাই জানে কি সব হইছে আমাদের চোখের আড়ালে।
শোন,এখন চল।এখানে আর কাজ নেই আমাদের।আব্বা তোরে বাড়িতে না পেয়ে সন্দেহ করতে পারে।
---কিন্তু এখানে এসে তো তেমন কিছু জানতেই পারলাম না আমরা।
---ওনারা যতোটুকু বলেছে তাই অনেক।আমাদেরকে কেনো হাসপাতালের ভেতরের খবর জানাতে যাবে।
এই বলে মর্জিনা ফুপু আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে যাবে ঠিক তখন পেছন থেকে কেউ একটা ডাক দিলো আমাদের।আমরা ঘুরে তাকাই।হাসটাতালের কোনো নার্স মনে হচ্ছে।
---আমি আপনাদের সব কথা শুনেছি এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে,
(নার্স আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো)
---হ্যাঁ,আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন আমাদের।
---বলার তো অবশ্যই আছে।তবে এখানে না।বাইরে চলুন।
---বাইরে কেনো যেতে হবে?
---আরে,আগে আসুনই না।
আমি আর মর্জিনা ফুপু সেই নার্সের সাথে বাইরে গেলাম।তারপর সে আমাদের একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়।
---আমি একটা কথা জানাতে চাই আপনাদের,যা আজ পর্যন্ত কাউকে বলি নি,বলি নি মানে বলার সাহস হয় নি।
--কি কথা বলুন,
---আমার মনে হয় আমি এই বাচ্চাটার মাকে দেখেছি।আর সে মারা যায়নি।
নার্সের কথা শুনে আমরা দুজনেই চমকে উঠলাম।মর্জিনা ফুপু বেশ আগ্রহ সহকারে নার্সকে বললো।
---কি, কি বললেন আপনি?
---হ্যাঁ, আমি এতোদিন কাউকে বলি নি।বললে আমার চাকরিটাই হয়তো থাকতো না।আর কেউ বিশ্বাস করতো না আমার কথা।
---কি দেখেছেন আপনি ?
---এই হাসটাতালের সেদিন রাতে মোট দুজন মারা গিয়েছিলো।একজন এই বাচ্চাটার মা, আরেকজন এক্সিডেন্টের পেসেন্ট ছিলো।তো যখন আমি নাইট ডিউটি করছিলাম হাসপাতাল থেকে একটা লাশকে হেঁটে যেতে দেখতে পাই।এটা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই আমি।আমি জানি কোনো লাশের পক্ষে হাঁটাচলা করা সম্ভব নয়,ঐ মহিলা আদতে মারাই যান নি।কোনোভাবে সার্ভাইভ করে গিয়েছিলেন।
---আপনি তখন কাউকে কিছু বললেন না কেনো?আর তাকে আটকালেন না কেনো?
---আমার কথা কে বিশ্বাস করতো তখন,যদি বলতাম মৃত ঘোষণা করা কোনো মানুষকে জীবিত অবস্থায় আবিষ্কার করেছি,উল্টো হাসপাতালের বদনাম হতো।ডাক্তারদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতো তখন।আর যদি এটা দাবি করতাম আমি ভুত দেখেছি।আমার চাকরিটাই চলে যেতো।আমাদের জন্য এসব ভুত প্রেত বা আত্মা বিশ্বাস করা নিষিদ্ধ।তার থেকেও বড়ো কথা আমি নিজে চাইনি কোনো ঝামেলায় জড়াতে।তাই চুপ ছিলাম এতোদিন।
---আচ্ছা সেই মহিলা কোথায় গিয়েছে আপনি বলতে পারবেন?আমরা তাকেই খুঁজে ম র ছি।ছেলেটার দিকে চেয়ে দেখুন।বেচারা মাকে ছাড়া বাঁচবে কিকরে?
(মর্জিনা ফুপু আমাকে ইঙ্গিত করে নার্সকে বললো)
---হ্যাঁ, আমি জানি উনি কোথায় গিয়েছেন।
নার্সের কথা শুনে আমরা আবারো চমকে উঠলাম!
---কি বললেন,কি বললেন আপনি?আপনি জানেন উনি কোথায় গিয়েছেন?
---দেখুন উনি ঠিক কোথায় গিয়েছেন আমি তো বলতে পারবো না,তবে আমি এইটুকু দেখেছি উনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়েছেন।
---আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাহায্য করার জন্য।হয়তো এই সূত্র ধরেই আমরা ওর মাকে খুঁজে বের করতে পারবো।
আমি আর মর্জিনা ফুপু নার্সের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।নার্স যে জায়গায় আম্মাকে শেষবারের মতো দেখেছে সেই জায়গায় এসে দাঁড়ালাম।
---এইবার,কি করবো আমরা মর্জিনা ফুপু?
---সেইটা আমিও তো বুঝতে পারেতেছি না।আচ্ছা তোদের কেনো আত্মীয় বাড়ি আছে এইদিকে?হতে পারে তোর মা সেইখানেই গেছে।
---কই আমি তো জানি না।আমাদের এদিকে কোনো আত্মীয় বাড়ি নেই।
---দেখ আকাইদ,এভাবে হবে না।আমরা এইভাবে তোমার আম্মাকে খুঁজে পাবো না।
---তাইলে কেমনে খুঁজবো?
---এখন চল বাড়িতে যাই।অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে।তোর আব্বা যদি একবার জানতে পারে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করছি আস্ত রাখবে না আমাদের।
---তাইলে আম্মারে আর পাওয়া হইবে না?
---কেনো হইবে না।আমরা ঠিক তোর আম্মাকে খুঁজে পাবো।এখন চল,বাড়িতে চল।এইভাবে আন্দাজে সারারাত খুঁজলেও কিচ্ছু হবে না।
আমরা পেছনের দিকে ঘুরবো ঠিক তখনই কেউ একটা আমাদের অতিক্রম করে চলে গেলো।এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হলো আমি আমার মাকে দেখলাম।সামনে তাকাতেই দেখতে পাই একজন মহিলা ঘোমটা দিয়ে দৌঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছে।মনের অজান্তেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো!
---আম্মা, আম্মা তুমি কোথায় যাচ্ছো?
---কি হলো আকাইদ,কোথায় তোর আম্মা?
---দেখো মর্জিনা ফুপু,আমি এইমাত্র আমার মাকে দেখলাম।ওটা আমার মা।
আমি আর মর্জিনা ফুপু মহিলাটার দিকে এগিয়ে যাই।সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই খপ করে হাতটা টেনে ধরলাম।
---আম্মা,কিছু না বলে এভাবে কোথায় যাচ্ছো তুমি?
---কি হলো,কে আপনি?এভাবে ঘোমটা দিয়ে আছেন কেনো,এইদিকে ঘুরে তাকান বলছি।(মর্জিনা ফুপু বললো)
মহিলা উল্টো তার ঘোমটাটা আরোও লম্বা করে টেনে দিলো।মর্জিনা ফুপু তার কাছাকাছি যেতেই যে এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে নেয়।তারপর চোখের পলকে কোথায় পালিয়ে গেলো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না আমরা।
---মর্জিনা ফুপু, আম্মা কোথায় চলে গেলো, এইমাত্র তো এখানেই ছিলো..
---তুই কি পাগল হয়ে গেছিস আকাইদ?কে তোর আম্মা?উনি তোর মা হইলে এইভাবে পালিয়ে যাবেন কেনো?
---না, ওটা আমার আম্মা!
---নাহ, আমাদের কোথাও একটা ভুল হইতেছে।ওটা আদিবা ভাবি হতেই পারে না।হয়তো অন্য কেউ,তাছাড়া চোর-টোরও হইতে পারে।তোর আম্মা হইলে এইভাবে পালিয়ে যাইতো না।চল আমরা বাড়িতে যাই।আর এটা নিয়ে এতো চিন্তা করিস না।
একরাশ হতাশা নিয়ে আমি আর মর্জিনা ফুপু বাড়িতে ফিরে আসলাম।এখনো বুঝতে পারছি না,কে ছিলো ওটা?এইভাবে পালিয়ে গেলো কেনো আমাদের দেখে,কেনো একটি বার নিজের মুখটা দেখালে কি এমন হতো!নাহ,আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।অনেকটা রাত হয়ে গেছে বলে মর্জিনা ফুপু তার বাড়িতে ঢুকে পড়লো।বাকি পথটুকু আমি নিজেই হেঁটে আসি।বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।ঘরের সামনে যেতেই দেখি আব্বা সামনে বসে আছে।আমি ভয়ে ভয়ে সামনে এগোতে থাকি।
---কি ব্যপার,এতো রাতে কোথা থেইক্কা আসা হইলো?
---মর্জিনা ফুপুর সাথে একটু বাইরে গেছিলাম।
--তা,বাইরে টা কোথায় জানতে পারি?
আমি আব্বাকে কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।যদি সত্যিটা বলে দেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম এতে আব্বা আরোও বেশী রেগে যাবে।তাই কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম।
---কি,আমি কি জিগাইতেছি।কানে যাইতেছে না বুঝি?
---তার আগে তুমি কও,তুমি আম্মারে বিষ খাওয়াইছো ক্যান।আমি এখন জানি বিষ খাইলে মানুষ মারা যায়,তোমার জন্য আমার আম্মা ম র ছে।
মুখ ফসকে আমার কথাগুলো বেরিয়েই গেলো।আমার কথা শুনে আব্বা হতবাক,যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
---এই,এই আকাইদ।তোর এসব কে শিখাইলো?বল আমারে।
---আমি বলমু না,তোমায় ক্যান বলমু।
---বাহ,বাবা বা!অনেক বড়ো হইছোস দেখছি।
--বড়ো হইবার কি আছে আব্বা।বলো আমি কি কিছু ভুল বলতেছি।আমি কিন্তু সবাইরে সবটা বলে দিমু যে তুমিই আমার আম্মারে মা র ছো
---তোর আম্মারে তো আমি মা রি নাই, মা র ছো স তুই!বল খাবারে কে বিষ মিশিয়ে দিছিলো?আমি দিছিলাম?
--হ আমি দিছিলাম,কারণ তুমি আমারে শিখাইয়া দিছিলা।আমি তো জানতামও বিষ খাইলে মানুষ ম রে,
---হ বিষ খাইলে মানুষ ম রে তুমি জানো না,আব্বার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া কিভাবে করতে হয় ঠিক জানো।
---আমি সবাইরে সব বলে দিমু,তুমি আমার আম্মারে মা র ছো!
আমার কথা শুনে আব্বা আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলো না।উঠে এসে আমাকে এক ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিলো।তারপর শাসিয়ে শাসিয়ে বলতে থাকে।
---আজ থেকে বাড়ির বাইরে পা রাখলে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিমু আমি।
আব্বা আমায় ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।তারপর আমাকে আমার ঘরের ভেতরে রেখে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।আব্বা ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়াতে হাঁটুর নিচে সামান্য কেটে গেছে।অথচ সেদিকটা খেয়ালই করলো না।মাঝে মাঝে ভীষণ সন্দেহ হয় আমার,এটা কি সত্যিই আমার আব্বা।বাবা হয়ে নিজের ছেলের সাথে এমন আচরণ করে কিকরে।অবশ্য যে নিজের স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে মারতে পারে তার মতো মানুষের পক্ষে সব সম্ভব।সারা রাত প্রায় না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম।ভোররাতের দিকে চোখজোড়া অসম্ভব রকমের লেগে আসে।তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক নেই।
-
-
-
-
-
সকাল বেলা আব্বা আর মর্জিনা ফুপুর গলার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো আমার।শুনতে পাচ্ছি দুজনেই বাইরে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় কথা বলছে।
---তুই আর আমার বাড়িতে আসবি না মর্জিনা,
---ক্যান, ক্যান আসমু না আমি?
---তুই আমার ছেলেডার মাথা চিবাইয়া খাইতেছোস,ওর মাথায় সব বদবুদ্ধি তুই ঢুকাইছো আমি জানি!
---কি আমি বদবুদ্ধি ঢুকাইছি?আর তুমি যেগুলো করেছো সেগুলা কি,খুব ভালো কাজ?
---তার মানে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম তাই!ওই পোলা সব কইছে তোরে, আইজ তো ওরে আমি শেষ কইরা ফেলমু।
আমি দাঁড়িয়ে টিনের ফাঁক দিয়ে সবটা দেখছি।আব্বা আমার ঘরের দিকে তেড়ে আসতে চাইলে মর্জিনা ফুপু তার হাতটা চেপে ধরলো।
---দাঁড়াও,দূরুত ভাইজান।দাঁড়িয়ে যাও।
---আমায় ছাড় বলছি, ভালো হইতেছে না কিন্তু,
---এতো মাথা গরম কইরো না।দেখো যাই হইয়া যাউক না কেনো,দিনশেষে ও তো তোমারই ছেলে।এইরকম করো না ওর সাথে,
---কে আমার ছেলে....ও আমার কোনো ছেলে না,না আমি ওর বাপ....!
আব্বার মুখ থেকে কথা আমার কানে আসতেই দু পা পেছনে সরে গেলাম।যেনো বাজ পড়লো আমার মাথায়।এইটা কি বলতেছে আমার আব্বা!
---এই তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে,কি বলতেছো তুমি এসব?
আব্বার গলার আওয়াজ মুহুর্তেই নিচু হয়ে গেলো।যেনো অসাবধানতাবশত মুখ থেকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে তার।
---দূরুত ভাইজান, কি হইছে তোমার?এমন করতেছো ক্যান?
এরপর আব্বা আমাকে আর মর্জিনা ফুপুকে অবাক করে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।তারপর কান্না জুড়ে দেয়।মর্জিনা ফুপুও আব্বার পাশে বসলো।
---দূরুত ভাইজান,কি শুরু করলে তুমি এসব, বলো তো?কি হইছে?
---মর্জিনা আমি যে কথাটা এতোদিন বুকের ভেতরে পাথরচাপা দিয়ে রাখছিলাম।আজ আর পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে...এইটা ক্যান বললাম আমি,কি করলাম আমি এইটা?
চলবে....
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন