গর্ভধারিণী
পর্ব---০৩
সাহিত্য ডাইরি
---একি,আম্মা তুমি?তুমি কোথা থেকে এলে?
আম্মা শুধু আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে,কোনো কথা বলছে না।ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম আমি।
---একি আম্মা,তুমি কোনো কথা বলতেছো না কেনো?কি হইছে তোমার।
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়লো আমার।আম্মা তো মারা গেছে,তাহলে আবার ফিরে এলো কিকরে।যতোদূর জানি কোনো মৃত মানুষ ফিরে আসতে পারে না।কিন্তু আম্মা ফিরে আসলো কিকরে।এ কি সত্যিই আমার আম্মা,নাকি অন্য কেউ।এটা ভেবে আমার ভয়ের মাত্রা আরোও বাড়তে লাগলো।মনের ভেতরে সাহস সঞ্চয় করে আয়াতুল কুরসী পড়া শুরু করলাম।
---আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি..
আয়াতুল কুরসী শুনে আম্মা উঠে দাঁড়ায় ।তারপর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আমি সূরা পাঠ থামিয়ে আম্মাকে পেছন থেকে ডাক দেই।
---আম্মা,তুমি এভাবে কিছু না বলে কোথায় চলে যাচ্ছো,আমাকে কিছু বলতেছো না কেনো তুমি?
আমার কোনপ্রকার আকুতি মিনতি আম্মার কানে পৌঁছালো না,ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।আমি আম্মার পেছনে দৌড় দেবার জন্য উদ্যত হলাম অমনি ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।বিছানা থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসলাম।বুকটা বড্ড শুকিয়ে গেছে।তার মানে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি।তাই তো, আম্মা তো আর বেঁচে নেই সে ফিরেই বা আসবে কিকরে?যদিও এই স্বপ্নের মতো বাস্তবে কিছু ঘটলে আমার থেকে বেশী খুশি কেউ হতো না।আমি ভালো করেই জানি সেটা হয়তো কখনো সম্ভব না।আম্মা আগে ঘুমানোর সময় খাটের পাশের টেবিলটায় পানিভর্তি জগ রেখে দিতো।এখন পানির জন্য রান্নাঘরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।বিছানা থেকে উঠে ঘরের দরজাটা খুললাম।হাতে ছোটো টর্চটা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে পড়ি,তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াই।আব্বার শোবার ঘর পেরিয়ে রান্নাঘরে যেতে হয়।তার ঘরের দরজার সামনে আসতেই ভেতর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।ঠিক সেই মুহূর্তে আমার চলার গতি থেমে যায়।ব্যপারটা কি হলো বুঝতে পারছি না,ভেতর থেকে কিসের শব্দ আসছে?আমি চুপি চুপি আব্বার দরজার সামনে এগোতে থাকি তারপর কান পেতে ভেতরে কি ঘটছে বোঝার চেষ্টা করলাম।
---এতো কোনো মহিলার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে!সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।কিন্তু এতো রাতে আব্বার ঘরে কোন মহিলা এসে কান্না করবে,
একবার ভাবলাম আব্বাকে ডাক দেবো,কিন্তু পরক্ষণেই থেমে গেলাম।ঘরের জানালার পাশে একটা ছোটো ছিদ্রের দিকে চোখ গেলো আমার। আমি সেই ছিদ্র দিয়ে ভেতরটা দেখার চেষ্টা করি।
ঘরের ভেতরে আব্বার মোবাইলের জ্বলছে। আলোতে দেখতে পাচ্ছি আব্বা কোনো একটা মহিলার ওপরে উঠে আছে।তাদের দু'জনের গায়ের ওপরে একটা চাদর বেছানো।তবে এইটুক বুঝলাম আব্বার গায়ে কোনো জামা নেই।সে মহিলাটার ওপরে উঠে কিছু একটা করছে,হয়তো খুব ব্যথা দিচ্ছে।যার জন্য সে সমানে কান্না করে চলছে।
---দূরুত ভাই,ছাড়ো এবার।যাইতে হবে আমায়।
---আরেকটু সময় থেকে যা।এই সময়ে ছাড়া যায় তুই বল।
---তাড়াতাড়ি শেষ করো,ভাইজান দেখে ফেললে মাইরা ফালাইবো আমারে,
---কেনো রে,এসব প্রথম বার নাকি,এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?
---আমার খুব ভয় করেছে,তাড়াতাড়ি যাইতে দাও আমায়,
---এইতো হয়ে এসেছে...
একটু পরে দেখলাম আব্বা মহিলাটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে,অমনি ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে যায়।তাদের গলার আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুনতে পাচ্ছি না আমি।
---উফফফ,ওড়নাটা কোথায় আমার,
---এইতো আমার বালিশের পাশে,নে ধর
---হুম দাও,
--হইলো তোর জামা কাপড় পড়া?
---হইছে,এবার গেলাম আমি।
---শোন,আবার কবে আসবি?তুই আগের মতো একদম ভালোবাসিস না আমায়,
---কি যে বলো না তুমি,আসবো আসবো।আবার আসবো।
এই বলে মহিলাটা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মোবাইলের টর্চের আলোতে এগোতে থাকে।আমিও তার পিছু নিলাম।দরজার কাছে গিয়েই চারপাশটা ঘুরে তাকাতে লাগলো কেউ আছে কিনা এটা দেখার জন্য।তার মুখমন্ডল আমার সামনে আসতেই চমকে উঠলাম।
---এটা তো মর্জিনা ফুপু!তার মানে আব্বা এতোক্ষণ মর্জিনা ফুপুকে কষ্ট দিচ্ছিলো।কই মর্জিনা ফুপু তো কিছুই বলো না আব্বাকে।উল্টো আবারো আসার কথা বললো,এ আবার কেমন কষ্ট,যা কেউ নিজে থেকেই পেতে চায়?আমার মাথায় ঢুকছে না কিছুই।
মর্জিনা ফুপু চলে যেতেই আমি আমিও পেছনে ঘুরে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।তারপর আবারো আব্বার ঘরের সামনে যাই।দরজাটা খোলাই আছে,কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।আব্বা বিছানায় বসে একটা সিগারেট ধরালো।তার পুরো শরীর ঘেমে একাকার।এখনো দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।মনে হয় এই মাত্র কোনো পরিশ্রমের কাজ করে এলো।আব্বা আমাকে নিজের ঘরে দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
---একি তুই এখানে?
---হ,আমি
---কখন এসেছিস?
---অনেক আগেই,
---অনেক আগেই এসেছিস, কতক্ষণ আগে? কিছু দেখিসনি তো?
---দেখেছি।
---কি দেখেছিস!(আব্বার চোখেমুখে ভয় আর আতংকের ছাপ স্পষ্ট)
---তুমি মর্জিনা ফুপুকে মা র ছো,তাই দেখলাম।মর্জিনা ফুপু খুব কান্না করতেছিলো, আব্বা মর্জিনা ফুপু তো কতো ভালো, তুমি তারে এইভাবে কষ্ট দিলা কেনো?
--বলিস কি,আচ্ছা কোথা থেকে এসব দেখলি তুই?
---ঐ যে টিনের ফাঁক দিয়ে,
---যা দেখেছিস ভালো করেছিস,বাইরের কাউকে বলিস না ভুলেও।মনে করবি স্বপ্ন দেখছোস,
---ক্যান আব্বা সবাইরে কইলে কি হইবো?
--কি হইবো,এদিকে আয়,বুঝাইতেছি তোরে কি হইবো(দাঁত কটমট করে আব্বা বললো)
আমি তার দিকে এগিয়ে যাই।আব্বা আমায় তার পাশে বসালো।তারপর জলন্ত সিগারেটটা আমার হাতের কাছাকাছি এনে বলতে লাগলো।
---এই আগুনটা তোর হাতের ওপর চেপে ধরলে কি হবে বল তো?
আমি ভয় পেয়ে কোনো কথা বললাম না।
--কি ভয় পেয়েছিস তাই না?এটা তোর হাতে ছোয়ালে হাত তো পুড়ে যাবে।যদি কাউকে কিছু বলেছিস তোর হাতে এটা আমি সত্যি সত্যি চেপে ধররো।তখন বুঝবি বাপের ঘরে আড়ি পাতার কি মজা!
আব্বার এই রুপ কখনো দেখিনি আমি,প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম।একটা ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।নিজের ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেই।আমার শুকনো গলা এখন পর্যন্ত পানির ছোঁয়া পায়নি,যদিও এখন আর তেষ্টা নেই।কখন যে মিটে গিয়েছে নিজেও জানি না।কেনো জানি না একা একা শুয়ে থাকতে ভীষণ ভয় করছে,আব্বার কাছে যাবো সেই সাহস টুকুও নেই।বিছানা থেকে নেমে আলনা থেকে আম্মার একটা শাড়ি নিলাম।তারপর সেই শাড়িটা বুকের ভেতরে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ি।আম্মার গায়ের গন্ধ তার উপস্থিতির জানান দিচ্ছে,অনুভব করতে পারছি সে আমার সাথেই আছে।ভয়ের মাত্রা ধীরে ধীরে কাটতে লাগলো।এরপর মনের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
-
-
-
-
-
পরের দিন সকাল বেলা।ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বা তার ঘরে নেই।চারদিকে খোঁজাখুজি করেও কোথাও পেলাম না।এদিকে প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে।রান্নাঘরে গিয়ে হাড়ি থেকে পান্তা ভাত আর গতকালকের ভেজে রাখা কচুরি ফুলের বড়া নিয়ে বসে পড়লাম।ঠিক তখন বাড়ির বাইরে লোকজনের গলার আওয়াজ শুনতে পাই।কেউ একজন আমায় ডেকে বললো
---কইরে আকাইদ,কোথায় গেলি?দেইখা যা তোর আব্বা নতুন বৌ নিয়া আইছে!
কথাগুলো শুনে আমার হাত পা রীতিমতো থরথর করে কাঁপতে লাগলো!
আমি দৌড়ে ঘরের বাইরে গেলাম।গিয়ে দেখি আব্বা বাড়িতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা রহমান ভাইজান আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
---কই,রহমান ভাইজান।আব্বা আবার কারে বিয়া কইরা নিয়া আইলো?
---কেনো রে খুব ভয় পাইয়া গেছিলি বুঝি?
--কি যে বলো না তুমি,
---আহা,রহমান এসব কেমন মশকরা।ছেলেডার মা মারা গেছে কয়দিন আগে,তাই আসছোস ওর সাথে মজা করতে,
(আব্বা রহমান ভাইজানরে উদ্দেশ্য করে বলে।)
---আচ্ছা,আমার ঘাট হইছে।আর করুম না এমন মজা।তা আকাইদ তোর দিনকাল কেমন চলে রে?
---ভালো ভাইজান!
---বাড়িতে একলা একলা থাকো।ভয় করে না তো?
---একা কই থাকি, আব্বাও থাকে তো?
---তোর আব্বা আর কতক্ষণ বাড়িতে থাকে,
আমি রহমান ভাইজানকে কিছু বলতে যাবো এর মধ্যে মর্জিনা ফুপু হাতে একটা থালা নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো।
---আকাইদ,রসুইঘরে আয় তো?
---কি আনছো মর্জিনা ফুপু?
---আয় আগে তারপর দেখাইতেছি।
আমি মর্জিনা ফুপুর সাথে চলে যাওয়াতে রহমান ভাইয়াও বেরিয়ে গেলো।এদিকে আব্বা গেছে পুকুরে গোসল করতে।
মর্জিনা ফুপু রান্নাঘরে ঢুকে তারপর থালাটা মাটিতে রেখে ঢাকনাটা সরালো।দেখতে পেলাম আমার জন্য কতগুলো পিঠা ভেজে নিয়ে আনছে।
---সকাল সকাল ভাজছি,নে এগুলা খেয়ে নে!তোর আব্বারেও দিস।
---আচ্ছা ঠিক আছে,
---আমি উঠি তাইলে,
---মর্জিনা ফুপু শোনো না,
--হ বল,
---কাল রাতে আমি কিন্তু সব দেখছি।
আমার কথা শুনে মর্জিনা ফুপু যেনো ভরকে গেলো।
---দেখছো মানে, কি দেখছো তুই?
---আব্বা তোমারে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো, আমি সব দেখছি!
মর্জিনা ফুপুর চোখ মুখ বড়ো হয়ে গিয়েছে।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না সে এতো ভয় পেয়ে গেলো কেনো।মর্জিনা ফুপু আমার মুখটা চেপে ধরলো।তারপর ফিসফিস করে বলতে লাগলো।
---বাপ আমার,ভুলেও এই কথা আর মুখে নিস না।
---কেনো গো মুখে নিলে কি হইবে?আব্বা তোমারে এতো মারলো তুমি কাউরে কিছু কও না ক্যান।
---চুপ, একদম চুপ।শোন তুই এই কথা ভুলেও মুখে আনবি না আর।যদিও আনছোস আমার বিষ খেয়ে ম রা ছাড়া উপায় থাকবে না।
হঠাৎ করে বিষের কথা শুনে আমার টনক নড়ে উঠলো।তার মানে কি বিষ খেলে মানুষ মারা যায়।কই আমি তো জানতাম না আগে।
---কি কইলা তুমি মর্জিনা ফুপু।বিষ খাইলে মানুষ ম রে ?
---হ রে হ, খুব ভয়ঙ্কর জিনিস এই বিষ।ক্যান জানিস না তোর মা ও তো এই বিষ খাইয়াই মরলো!
মর্জিনা ফুপুর কথা শুনে যেনো বাজ পড়লো আমার মাথায়।এটা কি বলতেছে মর্জিনা ফুপু।কেনো জানি না আমি না চাইতেই দুটো চোখ পানিতে ভিজে গেলো আমার।
---আম্মা বিষ খায় নাই মর্জিনা ফুপু। আমার আম্মা বিষ খায় নাই!
---কি কও,আমরা তো সবাই তাই জানি।
---মর্জিনা ফুপু আম্মারে আমি বিষ খাওয়াইছি..!
কথাটা বলে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না আমি,মর্জিনা ফুপুর সামনে কান্না করে দিলাম।এদিকে মর্জিনা ফুপু আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো।যেনো নির্বাক হয়ে গিয়েছে সে।
---এই পোলা, তোর কি মাথাটা গেছে একেবারে, কি বলতেছিস জানো তুই,
---হ আমি ঠিক কইতেছি।
---তুই বিষের শিশি পাইলি কই?
---আব্বা দিছিলো!
আব্বার কথা শুনে মর্জিনা ফুপু আঁতকে উঠলো।চারপাশটা তাকাতে লাগলো সে।তারপর আমায় বলে।
---চল ঘরে যাই,এখানে বসে এসব কথা বলা ঠিক হবে না।যে কেউ চলে আসতে পারে!
---ঠিক আছে।
--হ,
ইতিমধ্যে আব্বা গোসল সেরে চলে আসলো।
---কি রে মর্জিনা তুই কখন আইলি?
---এইতো একটু আগে।
--আইছো যখন একটা কাজ কর,আমার খাবারটা বেড়ে দে,
---হ,দিতেছি।
মর্জিনা ফুপু আব্বাকে ভাত বেড়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে আমার ঘরে চলে গেলো।তারপর দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমাকে খাটের ওপর বসায়,তারপর নিজেও বসলো।
---এবার বল, কি হইছিলো?
---আব্বা আমার হাতে একটা বিষের শিশি দিয়ে বললো,এইডা যেনো আমি আম্মার খাওনের সাথে মিশাইয়া দেই।
---তারপর তুই কি করলি?
---আমি লুকাইয়া লুকাইয়া আম্মার ভাতের সাথে বিষ মিশাইয়া দিলাম,
---তুই এইডা কি করলি আকাইদ?কেনো শুনতে গেলি আব্বার কথা?
---আমি কি জানতাম আম্মা অইডা খাইয়া মইরা যাইবো!
---তোর আব্বা আর কিছু বলছে তোরে?
---না,আর সবাইরে এই কথা কইতে নিষেধ করছে।তাই আমি কাউরে কিছু কই নাই।
একটু পরে আব্বা চলে আসে।মর্জিনা ফুপু দরজাটা খুললো।আব্বা মর্জিনা ফুপুকে বলে।
---কি রে,দরজা বন্ধ কইরা আমার পোলার লগে কি করোস?
মর্জিনা ফুপু কিছুক্ষণ আব্বার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আব্বা আমার দিকে এগিয়ে আসে।
---কিরে,ও কিছু কইছে নাকি তোরে, নাকি তুই কইছো?
---না,আমি কিছু কই নাই।
---তাইলে দরজা বন্ধ করছিলি ক্যান?
---আমি করি নাই,মর্জিনা ফুপু করছে।
---দেখ উল্টাপাল্টা কাউরে কিছু বলিস না।যদি বলছো তোর একদিন কি আমার একদিন।কি কথা ঢুকছে কানে?
---হ... (আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম)
এই বলে আব্বা চলে গেলো।আমি শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।তার মানে আব্বা ইচ্ছে করে আম্মাকে খু ন করেছে।কিন্তু কেনো,আম্মার সাথে কি এমন শত্রুতা তার,আর আম্মাই বা নিজে থেকে জেনেও বি ষ খেলো কেনো?এই দুজনের ভেতরে কোনো রহস্য তো অবশ্যই আছে।এই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলছে আমায়।সারাদিন এগুলো ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো।
-
-
-
-
এরপর সন্ধ্যা বেলা।আব্বা বাড়িতে নেই।আমি একা বৈঠকখানায় বসে আছি।ঠিক তখন ইসমাইল চাচা বাড়ির ভেতরে এসে ঢুকলো।ইসমাইল চাচাই সেদিন আমার আম্মারে তার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো।আমি তাকে জিজ্ঞেস করি।
---ইসমাইল চাচা, তুমি?
---তোর আব্বা কই?
--আব্বা তো বাড়ি নাই!
---শোন একটা কথা আছে।
---কি কথা বলো,
---একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘইটা গেছে রে।তোর আম্মারে যে হাসপাতাল থেকে নিয়া আইছিলাম ঐ হাসপাতালের নাকি একটা এক্সিডেন্ট হওয়া লাশ খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না।
---মানে,
---মানে,যেদিন তোর আম্মারে আমরা এই বাড়িতে নিয়ে আসি সেইদিন থেকেই নাকি লাশটা খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না।আমি এইমাত্র খবর পাইলাম।জানি না,কি কইতেছে ওরা।
ইসমাইল চাচার কথা শুনে আমার আম্মার লাশের কথা মনে পড়লো।তার মানে কি আমি সেইদিন ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।ঐ লাশটা আম্মার ছিলো না।আল্লাহ,আমার মনের সন্দেহ তুমি সত্যি কইরা দাও!
চলবে......
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন