আশ্রিত পর্ব০২ (সমাপ্ত) সাহিত্য ডাইরি

 



                         

আশ্রিত

পর্ব০২ (সমাপ্ত)

সাহিত্য ডাইরি 

---------------------

- 'এ্যাঁই, যাবি? রেট কত তোর?'


কথাগুলো শুনে মনে হল গায়ে কেউ এসিড ছুঁড়ে দিয়েছে। তাকিয়ে দেখি পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর বয়সী একলোক আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পরনে সস্তা টেট্রনের শার্টটার বুকের তিনটা বোতাম খোলা। লুঙ্গি টাখনু ছুঁয়ে নেমে গেছে মাটিতে। মুখ দিয়ে সুরভী জর্দার গন্ধ ভুরভুর করে বের হচ্ছে। মামীর সুরভী জর্দা কৌটা থেকে এমন গন্ধ পাওয়া যেত।


- 'কি রে, তোর তো ভারী দেমাগ! রেট কত তোর?'

আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে আস্তে আস্তে চোখ নামিয়ে নিলাম। পার্ক থেকে বের হয়ে গেলাম।


বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে বান্ধবীর হোস্টেলে গেলাম। ওর কাছে ব্যাগটা রেখে সারাদিন বিভিন্ন মহিলা হোস্টেল গুলোতে খোঁজ নিলাম। কোথাও বাসা ভাড়া নেয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই।


সম্বল বলতে বড় আপার ঈদে দেয়া দুই হাজার টাকা যেগুলো আমি জামা না কিনে কলেজে পাওনা পরিশোধের জন্য রেখেছিলাম। আর নিজের জমানো সাতাশ'শ টাকা। মামা কলেজে যেতে প্রায়ই গাড়ি ভাড়া বাবদ বিশ পঞ্চাশ টাকা দিতেন। দুলাভাইরা বেড়াতে এক দুইশ টাকা হাত খরচের জন্য দিতো। আমার কখনো কোন বাড়তি বিলাসিতা ছিল না। এগুলো আমি জমাতাম ফর্ম ফিলাপ বা বই খাতা কেনার জন্য। ভবিষ্যতে কি হবে বা কি খাব আপাতত কিছু মাথায় আসছে না,একটা থাকার জায়গা দরকার।


বান্ধবীর হোস্টেলে সিট খালি নেই বলে একটু বিপদেই পড়লাম। সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। পা যেন আর চলতে চাইছে না। বিকেলের পর একটু জিরোতে পার্কে বসে ছিলাম। বিভিন্ন কথা মনের মধ্যে উথাল-পাতাল করছিল যে, কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমার খেয়াল ছিল না।


লোকটার কথায় খারাপ লাগলেও তাকে আমি দোষ দেই না। কারণ, ভর সন্ধ্যাবেলা ওখানে কোন ভদ্রঘরের মেয়ে একা, বিহবল বসে থাকবে এটা আশাতীত।


আবার এলাম বান্ধবীর কাছে। আমার খুব লজ্জা হতে লাগলো। কারো আশ্রিত হতে চাইনি কিন্তু আমি নিরুপায়। আমার সারাদিনের না খাওয়া চিমশে মুখ দেখে সে অনেক প্রশ্ন করতে লাগল। মোরশেদ ভাইয়ের অংশটুকু ছাড়া তাকে যতটুকু বলা যায় ততটুকু বললাম। সে-ও তার পরিচিত কয়েকজনকে নক দিল। কোথাও খালি নেই।


ওর রুমে বোর্ডার তিনজন। ওরাই প্রস্তাব দিল, যতদিন কোথাও ব্যবস্থা না হয়, আপাতত ওদের ওখানে গেস্ট হিসেবে থাকার। তবে সেটা এক সপ্তাহের বেশি যেন না হয়। ততদিন কিন্তু মিল চালিয়ে যেতে হবে। আমি মনে মনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালাম। সারারাত আমার প্রায় নির্ঘুম কেটে গেল।


সকালবেলা ওঠে প্রথমে কলেজে গেলাম। এক বান্ধবী তার খালাতো ভাই বোনের জন্য গৃহশিক্ষক খুঁজচ্ছিল। কয়েকদিন আগে ওরই মুখে শুনে আমি নিজেও অনেককে বলেছি। ভাগ্যের ফের,আজ আমাকে এখনে দাঁড় করিয়ে দিল। মামার বাসায় থাকতেও বেশ কয়েকটা টিউশনের অফার এসেছিল কিন্তু মামীর কাজে সাহায্য করার জন্য সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি।


বান্ধবীর সাথে দেখা হলে ওকে বললাম, ‘টিউশনটা আমি করতে চাই।’ সে একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বললো না। কথায় বলে, যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন। ঐদিন আমি একসাথে দুটো টিউশন পাই। দুটো টিউশন করলে মাস শেষে পাঁচ হাজার পাবো। আমার কোনমতে চলে যাবে।


এক সপ্তাহ হওয়ার আগেই একটা পরিবারের সাথে পেয়িংগেস্ট হিসেবে উঠে গেলাম। পরিবারটি এক বোর্ডার আপুর পরিচিত। স্বামী স্ত্রী এবং তাদের তিন মেয়ে নিয়ে পরিবার। পরিবারের কর্তা একটা বেসরকারি অফিসের কেরানী। দেখতে রোগা,অপুষ্ট চেহারা। তার স্ত্রী এবং তিন মেয়ে, চারজনেই স্থুলকায়।


কিছুদিনের মধ্যে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, ভদ্রলোকের স্ত্রী এবং তার মেয়েদের ব্যবহার এমন, যেন আমি তাদের বাসায় আশ্রিত। কথায় কথায় খাবার খোঁটা দেয়, কাজ নিয়ে ভাগাভাগি করে, নিম্নমানের খাবার আমার জন্য দিচ্ছে। অথচ টাকা পুরোটায় নিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে বাড়তি টাকাও আবদার করছে।


একদিন বাসি হয়ে যাওয়া নষ্ট ছোট মাছের তরকারি আমাকে খেতে দিল। ওরা আমার খাবার রুমে রেখে যেত। ভাবলাম হয়তো গরমে তরকারি নষ্ট হয়ে গেছে। এরকম একসপ্তাহে তিন বার হয়ে গেলে আমি আন্টিকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করতেই তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেন। তারপর আমাকে বলেন, ‘এতো ফুটানি হলে অন্য কোথাও চলে যাও। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের বদনাম করতে চাও? তোমাদের মতো ছোটলোক পরিবারের মেয়েদের মুরোদ নাই, কিন্তু ফুটানি যায় না। এসব স্বভাবের জন্য নিজের পরিবারেও থাকতে পারো না।’


সে রাতেই আমাকে ঘর ছেড়ে দিতে বলা হল। তখনো মাসের মোটে দশ তারিখ, আন্টি সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘পুরো মাসের টাকা দিয়েই যেন বের হই। নয়তো তিনি জানেন কিভাবে টাকা আদায় করতে হয়।’ অথচ তার কাছে আমার জামানতের তিন হাজার রয়ে গেছে। আমি বললাম, ‘আমার জামানত থেকে মাসের টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিতে।’ তারপরদিন সকালে টাকার সাথে সাথে আমার কপালে মিথ্যা অপবাদ জুটল। ‘আমি নাকি তার স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চেষ্টা করছি তাই আমাকে বের করে দিচ্ছেন।’ তিনি আশেপাশের মানুষ জড়ো করে উচ্চস্বরে এসব কথা বলতে লাগলেন। আমি কথা না বলে বের হয়ে এলাম কারণ আমার পায়ে যখন মাটি নেই প্রতিবাদ সেখানে শব্দ হবে না।


এক পরিচিত আপুকে নক দিয়ে আগেই একটি মেসে সিট নিয়েছি। তল্পিতল্পা নিয়ে সেখানে উঠে গেলাম। 


বানভাসি মানুষের মতো একবার এখানে আরেকবার ওখানে করতে গিয়ে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনার ফলাফল নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। একমাস পার হয়ে আরও বিশদিন চলে গেলেও আমার চলতি মাসের পিরিয়ড হলো না। ব্যাপারটা বুঝতে পারার পর এটা নিয়ে কোন ইমোশন কাজ করেনি। এই দূর্ঘটনাকে আবেগ দিয়ে ভাবলে আমার পথচলা দায় হয়ে যাবে।


প্রথম মাসের টিউশনের টাকাটা পেয়ে সোজা চলে গেলাম কমিউনিটি ক্লিনিকে। ওরা নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। বিয়ে হয়েছে কি-না, স্বামী কই, সাথে এলো না কেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যি বলার ইচ্ছে ছিল না, মিথ্যা বলার দরকার মনে করিনি, তাই চুপ ছিলাম।  


আমাকে চুপ থাকতে দেখে একজন আয়া বলে উঠলেন, ‘কার সাথে লটরপটর করতে গিয়ে ওটা বাঁধিয়ে নিয়ে এসেছে আরকি। এগুলো টাকা পেলেই যার তার সাথে শুয়ে পড়ে। বাপ মায়ের দেয়া টাকায় তো আর বিলাসিতা করতে পারে না!’

আমার দু'চোখ জ্বলতে শুরু করেছে। তবুও কিছু বলিনি। 


এবরশন যখন ডাক্তার করছিলেন প্রচন্ড ব্যথায় 'মাগো' বলে চিৎকার দিয়েছিলাম মনে আছে। মেসে ফেরার সময় রিকশার ঝাঁকুনিতে মনে হল প্রাণ বেরিয়ে যাবে। মেসে ফিরে বাথরুমের ঢুকে হাউমাউ করে কেঁদেছি। দিনে মেসের বোর্ডাররা তেমন কেউ থাকে না বলে নিজেকে ধরে রাখিনি। মনে মনে এটুকুই চাওয়া ছিল নিজের কাছে, এ জীবনে শোনা প্রতিটি কথা, প্রতিটি প্রশ্নের জবাব একদিন নিশ্চিত দেব।


তারপর থেকে শুধু কলেজ, টিউশন আর বিভিন্ন কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরী করা। এর ভেতর বড় দুলাভাই কলেজে খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু আমি দেখা করিনি। একদিন হঠাৎ রাস্তায় বেনুর সামনাসামনি পড়ে গেলাম। আমার খুব ইচ্ছে হলো একবার ভাইটাকে একটু আদর করি। কিন্তু বেনু আমায় দেখে খুব সহজেই মুখ ফিরিয়ে চলে গেল, যেন আমি চলতি পথে কোন পথচারী। 


.

.

.

বছর দুয়েক পরের ঘটনা। অনার্স পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। আমি মেসেই ছিলাম। একজন এসে বললো, ‘কেউ একজন আমায় খুঁজতে এসেছে।’ আমার রুমমেটরা অবাক। আমাকে তো এতোদিনে কেউ কখনো খুঁজতে বা দেখা করতে আসেনি? 


আমি বাইরে এসে দেখি মোরশেদ ভাই আর মামা। খোঁজ কিভাবে পেলেন জানি না। একই শহরে থাকি,খোঁজ পাওয়া অসম্ভব কিছু না। মামা খুব নরম কন্ঠে আমায় কাছে ডাকলেন। এটাও বললেন যে, ‘মোরশেদ ভাই সব স্বীকার করেছেন। তিনি এখনো আমায় বিয়ে করে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান।’


আমি আশ্চর্য হলাম। কারণ খেয়াল করলাম এদের কারো প্রতি কোন রকম সহানুভূতি কাজ করছে না। আমার নির্লিপ্ততা এবং আড়ষ্টতা দেখে ওরা আর কথা বাড়ালো না। মোরশেদ ভাই বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন। প্রচণ্ড ঘৃণায় আমার সারা গা রি রি করতে লাগল। কিসের ক্ষমা?


আমি সরাসরি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনাদের ত্যাগের মূল্য তো শোধ হয়ে গেছে, এখন ক্ষমা চাওয়ার নাটকটা বাদ দিন। দয়া করে বিদেয় হন।’


.


ওই সপ্তাহে আমি মেসটি ছেড়ে দিয়ে নতুন আরেকটা মেসে ওঠলাম। সে বছর আমি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে জয়েন করি। চাকরির পাশাপাশি সমানে পড়াশোনা চলতে থাকে। লক্ষ্য একটাই বিসিএস দেব। রোজ অফিস শেষে একটা কোচিং সেন্টারে পড়তে যাই। ফিরতে রাত হলে গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর চোখ অনেক কথা বলে। তাদের দৃষ্টিতে শরীরে সাপ ছেড়ে দেয়ার মতো মনে হয়। রোজ রাতে আল্লাহকে বলি, ‘আরেকটু ধৈর্য্য দাও,আরেকটু যেন সইতে পারি।’


প্রথম বার বিসিএস পরীক্ষার জন্য খুব পরিশ্রম করে তৈরি হলাম। পরীক্ষার দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ জ্বরে পড়লাম। প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতাম। পরীক্ষায় টাইফয়েড ধরা পড়ল। রুমমেটরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিল। ওরা সকাল বিকেল পালা করে দেখতে যেত, রাত জাগতো।


প্রায় দুই সপ্তাহ পরে জ্বর একটু কমল। রিলিজ নিয়ে বাসায় আসার পর অফিসে ফোন দিলে জানা গেল আমার চাকরিটা প্রায় নেই। আমাকে তারপরের দিন জয়েন করতে বলা হলো। গেলাম, সারাদিন অফিস করে মেসে ফিরে আবারও জ্বর। এবার সেই জ্বর মাস দুয়েক ভুগিয়ে ছাড়ল। আমার ওজন কমে গেল, লম্বা চুল প্রায় ঝরে গেল। আমার চাকরি চলে গেছে, হাতে টিউশনও নেই। এর তার কাছ থেকে ধার করে কিছুদিন চলার পর আবারও টিউশন শুরু করলাম। 


এবার আর চাকরি নিলাম না। টিউশন পড়াই আর নিজের পড়া পড়ি। হঠাৎ একদিন পরিচয় হলো এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে। চমৎকার সুদর্শন মানুষটিকে আমার ভালো লাগতে শুরু করল। সে আমাকে উৎসাহ দিতো বিসিএস পরীক্ষার জন্য পড়তে। আমরা একসাথে স্বপ্নও দেখেছি সুন্দর ভবিষ্যতের। সে বলতো আমার অতীত নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই।


.


আমরা বিয়ে করব ঠিক করলাম। সে আমার বিসিএস না হওয়া পর্যন্ত বাসায় জানাবে না। বিসিএস হলে তবে একসাথে দুটো সারপ্রাইজ দিবে। ওর পরিবার মোটামুটি চিনত আমাকে। এরমধ্যে একদিন ভাবলাম আমাদের সম্পর্ক তো একটা পরিণতির দিকে যাচ্ছে, আর আমার অতীত নিয়েও তার কোন মাথাব্যথা নেই। আমার নিজস্ব স্বচ্ছতার জন্য তাকে সব জানানো উচিত।


আমরা দেখা করলাম। সে আমার হাত ধরেই ছিল। আমি তাকে সব বলে দিলাম। আমি মামার কাছে মানুষ, এতিম এসব সে জানত। তাতে কোন সমস্যা ছিল না। যখনি সে রাতের ঘটনা এবং আমার এবরশনের কথা জানালাম, তখন সে অট্টহাসি দিয়ে উড়িয়ে দিল। বললো, ‘এই একুশ শতকে এসব নিয়েও সমস্যা হয় নাকি?’


আমার বুকের পাথরটা নেমে গেল। খুশি হয়ে মেসে ফিরলাম। এরপর থেকে ওর সাথে কথা বা দেখা হওয়া কমতে লাগলো। খালি ব্যস্ততার অজুহাত। কিছু বললেই রেগে যেত। বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে লাগলো। একদিন খুব কথা কাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে আমাকে বললো, ‘এতো যে গলা উঁচু করে কথা বলো, তোমার আছেটা কি? ভার্জিনিটিও তো নেই।’


এই কথার পর আমার জবাব আমি পেয়ে গেলাম। নিজেকে নিজেই জুতা পেটা করতে ইচ্ছে করছিল। আমি নিজের লক্ষ্য ভুলে স্বপ্ন দেখার দুঃসাহসই বা করলাম কেন?


তারপর স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে আবারও পড়াশোনায় মনযোগ দিলাম। আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। পরের বছরই আমি বিসিএস পাশ করে যাই। নিয়োগ হওয়ার পর যতবার আমার বদলি হতো, চয়েস করার সুযোগ পেলে নিজ জেলায় পোস্টিং না নেয়ার চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ।


.


বিয়েও করেছি। পেশাগত দিক দিয়ে পরিচয়ের পর যখন হৃদ্যতা বাড়ল তখনই তাকে সব জানিয়েছি। তিনি আর দশটা সাধারণ মানুষের মতই। কোন নায়কোচিত কিছু করেননি। শুধু বলেছেন, ‘মানুষ দূর্ঘটনায় হাত,পা হারায়। আমি মনে রাখব আমার স্ত্রী দূর্ঘটনায় তার কুমারিত্ব হারিয়েছেন, নিজেকে নয়।’


এখন আমার জীবন একবারে হ্যাপিলি এভার আফটার জাতীয় কিছু নয় হয়তো, তবে আমি যা হারিয়েছি তার প্রতিদানে অনেক বেশি পেয়েছি। আমার পরিবার আছে, সেখানে আমি আশ্রিত নই। আমার সামাজিক প্রতিষ্ঠা আছে, সেখানে কেউ চাইলেই আমার রেট কত জিজ্ঞেস করতে পারে না। আমার আর্থিক নিরাপত্তা আছে,আমাকে কেউ খাবার খোঁটা দিতে পারে না।


(সমাপ্ত)... 


রাত_গভীর পর্ব_২ সহিত্য ডাইরি

রাত_গভীর 

পর্ব_২

সহিত্য ডাইরি



তখন রাবেয়া দেখলো, উজ্জ্বল একটা লালচে বৃত্তা কার কি যেন রিনির রুমে প্রবেশ করেছে জানালার ছিদ্র দিয়ে । এই লালচে বৃত্তটির উজ্জ্বলতা আসতে আসতে বেশি হতে লাগলো।আর বৃত্তের আকার ও বড়ো হতে লাগলো। আর এটা যেন লালচে রংয়ের কোন বৃত্ত নয়।এই যেন আগুনের তৈরি একটা বৃত্ত । রাবেয়া স্পষ্ট দেখতে পেল না।তবু মেয়ের জন্য তার কষ্ট হলেও দেখার চেষ্টা করছে। আসলে সন্তান এর জন্য মা বাবা সব কিছু করতে পারে। অবশেষে অস্পষ্ট ভাবে দেখলো লালচে বৃত্তাকার জিনিসটা একটা সুদর্শন যুবকে রুপান্তর হয়ে যাই। 

রাবেয়ার চোখ জ্বলে উঠে।আর সম্ভব হচ্ছে না তাকিয়ে থাকা।আর চোখ বন্ধ হয়ে আসে। আর সাথে সাথে ঘুম চলে আসে। রাবেয়া গভীর ঘুমে মগ্ন। বেশ কিছু সময় পর রাবেয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আর দেখে ঘুমন্ত অবস্থায় রিনি বাথরুমে গিয়ে গোসল করে। তবে পানি কখন বালতিতে পুরাই ? 

শব্দ হয়নি কেন পানি পড়ার?

আর ও অবাক হয়ে যাই, যখন দেখে ঘুমন্ত অবস্থায় রিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। আর সেইম কাপড় পড়ে বেরিয়ে আসে। যে কাপড় পড়ে ঘুমিয়ে ছিল এই কাপড় পড়ে আবার বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে তাহলে ভেজা কাপড় গুলো কই?

আর চুল ও শুকণো কেন?

রাবেয়ার মাথা আর কাজ করছে না।

একসময় সেন্স লেস হয়ে পড়ে। সকাল এ সূর্যের প্রথম কিরণে তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আর দেখে রিনি ঘুমাচ্ছে। খুব সাবধানে লুকিয়ে রিনি র রুম থেকে বেরিয়ে আসে। 

রিনি র বাবা কামাল কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। আর বলে অফিসে যাবে না? 

রেডি হয়ে নাও।কিন্তু রাবেয়া কাল রাতে কি হলো কিছু ত বলো?

রাবেয়া বলে বলবো আগে অফিস থেকে আসো।

রাবেয়া রিনি কে ডেকে দেয়। রিনিঃ মা উঠ?

রিনিঃ মা আরেক টু ঘুমায়। কেন জানি সমস্ত শরীর ব্যথা করছে! 

রাবেয়া কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রান্না করে। আর নাস্তা করতে রিনি আর কামাল কে ডাকে। কামাল নাস্তা করে অফিসে চলে গেল। 

আর রিনি নাস্তা করে কলেজ যাবে বলে রেডি হতে লাগলো। রাবেয়া বলে কলেজে আজ যেতে হবে না। 

রিনি বলে ঃ কেন?

তখন হঠাৎ রাবেয়া,, ,,,,, 


হঠাৎ রাবেয়া তার মেয়ে রিনিকে দুইটা ওষুধ খেতে দিল।রিনি বলে মা এগুলো কিসের ওষুধ, রাবেয়া বলে,একটা pain Killer, আর অন্য টা জ্বর না হয় মতো।রিনি বলেঃ আমার তো শুধু শরীর ব্যথা। এগুলো কি অবশ্যই খেতে হবে।

রাবেয়া বলেঃ must be খেতে হবে!!! রাবেয়া মনে মনে বলছে সরি মা।তোকে মিথ্যা বললাম। একটা pain killer কিন্তু অন্য টা প্রেগন্যান্ট না হওয়ার।আর মা তুই জানিসই না,কিন্তু আমি তো জানি তুর সাথে প্রতিদিন কেউ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে।কিন্তু কে সে?আর তাই চাইনা কোন অঘটন ঘটুক।আর অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তুই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাস,বাচ্চার বাবা কে হবে? কি পরিচয়ে বড় হবে বাচ্চা টা।অবশ্য নিজের মেয়ে মা হওয়ার ছেয়ে খুশির খবর আর কোন কিছু হয়তো পৃথিবীতে হয়না।কিন্তু মা তুই নিজে ও জানিস না তুর সাথে কি হয়।আর আমি ও বুঝতে পারছি না এগুলো কেমনে সম্ভব? তাই মিথ্যা বললাম।রাবেয়া এগুলো ভাবতে ভাবতে রিনির রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর রিনি ওষুধ খেয়ে গাঁ টা এলিয়ে দেয়। আর রাজ্যের ঘুম তার চোখে চলে আসে।

বিকালে কামাল সাহেব বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে যাই। আর কফি খেতে বসে বেলকনিতে। আর রাবেয়া সব বলছে কাল রাতে তাদের মেয়ের সাথে কি হয়ে ছিল। কামাল বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে। বলে চলো।তোমাদের নিয়ে একটু দেশের বাড়ি যাবো। রাবেয়া বলে ঃ রিনির কলেজ?

কামাল বলে ঃ মেয়ে থাকলেই তো কলেজ যাবে। মেয়ের ভালো চাও তো ওকে রাজি করিয়ে রেডি হয়ে যাও as soon as.

রাবেয়া অনেক কষ্টে রিনিকে রাজি করিয়ে পেলে।বিনিময়ে রিনি ৩০০০ টাকা বকশিস নেই। রিনি অনেক খুশি টাকা পেল আর ঘুরতে যাবে।

রাত ৮ টায় গ্রামে পৌঁছে যায়। তবে কামাল এক মূহুর্ত দেরি না করে রিনি আর তার মাকে নিয়ে গেল অর্ক এর কাছে। অর্ক কামালের কলেজ ফ্রেন্ড। প্যারানরমাল ব্যাপারে কাজ করে।গ্রামে থাকে বলে তার কাছে গ্রামে আসা।আর তার সহকারী হচ্ছে রাহাত হুজুর। খুব নাম করা একজন হুজুর। কামালের সাথে রাহাত হুজুরের পরিচয় অর্ক এর মাধ্যমে।কামাল রাবেয়ার কাছ থেকে যা শুনলো তা থেকে বুঝে গেছে অর্ক আর রাহাত হুজুর ছাড়া কেউ এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেনা। কামাল, রাবেয়া, রিনি বসে আছে অর্কের সামনে।

অর্ক বলেঃ মা,রিনি কেমন আছো?তুমি বাসার ভিতরে যাও।আমি তোমার আম্মু আব্বুর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে ওগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। আর হা,বাসার ভিতরে তোমার লাবু আন্টি আছে। কি যেনো রান্না করছে!যাও গিয়ে তোমার লাবু আন্টির সাথে গল্প কর।

অর্ক তাদের পাশের ফ্ল্যাট থেকে রাহাত হুজুরকে ডেকে আনে।

অবশ্য কামাল অর্ক কে আগে বলে রেখেছে। তার পুরো পরিবার অর্ক এর বাসায় রাতে আসছে।

অর্ক জানে কোন জরুরি ব্যাপারে কামাল আসছে।কারণ এখন অফিসে কামাল এর কোন ছুটি নেই। বেড়াতে আসলে ছুটি পেলে আসতো। আর গ্রামে এসে তড়িঘড়ি করে তার বাসায় চলে আসে। তাই অর্কের মনে হচ্ছে ব্যাপারটা মারাত্মক কিছু হবে। তাই অর্ক সময় নষ্ট না করে মূল কথার প্রসঙ্গে ছলে আসে।

অবশেষে রাবেয়া, কামাল,অর্ক আর রাহাত হুজুর মিলে বসে আছে। আর রাবেয়া সব বলছে।অর্ক আর হুজুর সব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে সবকিছু । হঠাৎ করে,

বেশ কিছুক্ষণ পর!!

লাবু এসে বলেঃ বাহ রে! রাবেয়া ভাবি আমার সাথে একটু দেখা ও করেননি অভিমানী কন্ঠে। হুহ্ চলেন।চলেন।ডিনার করে নি।

অর্ক বলেঃ লাবু তুমি রেডি কর খাবার আমরা আসছি। আর রিনি মাকে নিয়ে আসো।একসাথে সবাই বসে ডিনার টা করে ফেলি।

সবাই ডিনার শেষে। অর্ক বলে,রাবেয়া ভাবি আপনি আর লাবু ঘুমিয়ে পড়েন।

লাবু বলেঃ একদম না।আমি ও দেখতে চাই।রিনি মা কে কোন বান্দর এইভাবে ডিস্টার্ব করে!!!

অর্ক বলে ঃ যাও। বেশি কথা বলিও না।ভাবিকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

রাবেয়া কিছু বলছে না।কিন্তু তার ও ইচ্ছে মেয়ের কাছাকাছি থাকার। কামাল আগেই বলে দিয়ে ছিল অর্ক যেমন বলবে তেমন ই করবে।তাই রাবেয়া চুপচাপ থেকে লাবুর সাথে ঘুমাতে যাই।

কিন্তু লাবু বা রাবেয়া কারোর চোখে ঘুম ছিল না।রিনির চিন্তায় মন অস্থির হয়ে আছে।

অর্ক,কামাল,রাহাত হুজুর আর রিনি একটা রুমে গেলো।

রিনি বলেঃ বাবা আমি ঘুমাবাে।

কামাল বলেঃ অর্ক রাবেয়া আর লাবু ভাবিকে ও ডাক।তুই বকা দিয়ে ভুল করেছিস। আর ওদের দোয়া পড়ে রাহাত হুজুর ফুঁ দিয়ে দিলে কিছু হবেনা।

অর্ক লাবু কে বলেঃ সরি।রাগ করিও না।তোমাদের কিছু হবে এই ভয়ে আসতে নিষেধ করেছিলাম।

লাবু আর রাবেয়া আসলো। রাহাত হুজুর ফুঁ দিয়ে দিলেন দোয়া পড়ে। অন্য দিকে রিনি ঘুমিয়ে পড়লো।রাত তখন আস্তে আস্তে গভীর হতে থাকে ।সবাই বসে আছে। রিনি কে একটা বৃত্তের ভেতরে আবধ্য করে রাখে ঘুমন্ত অবস্থায়। অবশ্য রিনি ঘুমিয়ে পড়াতে অর্কের কাজ আরও কমে যায়।সব ভাল কিন্তু ভালো নই।কিছু করতে গেলে বাধা আসবেনা এমনকি হয় নাকি!!! ঠিকতখনই..................


ঠিক তখনই লালচে বৃত্তটির প্রবেশ ঘটে রুমে। অর্কের মুখে যেন হাসি ফুটে উঠে।সে মনে করেছি যে সে নিমিষেই লালচে বৃত্তটিকে নিজের অধীনে আনতে পারবে। কিন্ত একটু পর, হাসি মুখটা যেন নিমিষেই কালো হয়ে গেছে। লালচে বৃত্তটির তীব্রতা অনেক বেশি যার ফলে অর্ক,লাবু,রাবেয়া, রাহাত হুজুর, কামাল সবারই তাকিয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। এক পর্যায়ে তাদের সবার চোখ জোড়া জ্বলতে শুরু করে ।আর যার ফলে সবাই চোখের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে যাই।

রাত যখন শেষের পথে সবার প্রথমে অর্কের চোখ খোলে।তখনই দেখে রিনি ঘুমাচ্ছে তবে তারা যে বৃত্তের ভেতরে রিনিকে আবদ্ধ করে রেখেছিল সেই বৃত্তের অস্তিত্ব আর নেই। তাহলে তাদের সবার চোখের আড়ালে আবার সেই এসে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে।অথচ রিনি বেচারি কিছুই জানেনা।কিন্তু রিনিকে দেখে একদম বুঝা সম্ভব হচ্ছে না যে তার সাথে কেউ কাল রাতে অবিশ্বাস্য কিছু করেছে।অথচ মেয়ে টি যেভাবে ঘুমিয়ে ছিল ঠিক একইভাবে এখনো শুয়ে আছে। অর্ক যেন আর কিছু ভাবতেই পারছে না।

এর কিছু সময় পর সবাই জেগে ওঠে। অর্ক লাবুকে নাস্তা রেডি করতে বলে। আর কামাল আর রাবেয়া কে রেস্ট নিতে বলে। আর রিনি কে ঘুম থেকে না জাগাতে বলে।

আর অর্ক বলেঃ রাহাত হুজুর আসেন।আমাদের ওয়ার্কিং রুমে যাই।খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।

অর্ক আর রাহাত হুজুর এখন বসে আছে। একটা অন্ধকার রুমে।যেটা তাদের কাজ করার রুম।

তারা ধ্যান করছে।অর্ক বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারণ করেছে। আর রাহাত হুজুর কুরআন শরীফ পড়ে।তার অনুগত জীনকে ডাক দিচ্ছে।

অর্ক তার শক্তি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে।

আর রাহাত হুজুর জীনকে উপস্থিত করার চেষ্টা করছে। অতঃপর রাহাত হুজুরের জীন হাজির হয়।

আর রাহাত হুজুর জিগ্যেস করলো ঃ রিনির সাথে এমন কেন হচ্ছে? আর কি হচ্ছে?

আর আমরা কিছু করতে পারছিনা কেন?এই এত বছর হলো এই পেশাতে যুক্ত আছি ।এমন কখনো হয়নি বরং সব কেইস আমি আর অর্ক খুব ভালো ভাবে সমাধান করতে পেরেছি ।তাহলে রিনির কেইসের ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে কেন?

জীন বলেঃ হুজুর মাপ চাই।আমি কিছু বলতে পারবোনা। তবে আমি জানি কি হয়! কে করছে এসব।তবুও বলতে পারবোনা।

যদি আমি মুখ খুলে ফেলি।জীন রাজ্যে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে আমার জন্য।

রাহাত হুজুর বলেঃ তুই ও এমন করলে।আমরা রিনি কে কেমনে বাঁচাবো?

জীন বলে ঃ হুজুর গোস্তাকি মাফ করবেন। আমি আজ আসি।

রাহাত হুজুর জীন যাওয়ার পর আরো বেশ কয়েক বার ডাকলো তাকে কিন্তু জীন কোন সারা দিলো না।

রাহাত হুজুর চিন্তায় পড়ে যায়। কি করবে তারা এখন? কামাল অনেক আশা নিয়ে সাহায্য চাইলো! কিন্তু তারা কি না কিছুই করতে পারছে না।

অর্ক বলেঃ রাহাত হুজুর আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি! আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি।

অর্ক চোখ জোড়া বন্ধ অবস্থাই এসব বলছে।

রাহাত হুজুরের মুখে যেন হাসি ফুটে উঠেছে।

অর্ক বলেঃ যে রিনির সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে। সে খুব শক্তি শালী।আর সে হচ্ছে জীন রাজ্যের রাজার একমাত্র ছেলে ইনতিয়াজ।আর তার কাছে জীন রাজা আর রানীর উভয়ের শক্তি আছে। যার ফলে সে সব কিছু করতে পারে। রাহাত হুজুর আমি আর কিছু তথ্য দেখতে পাচ্ছি কিন্তু মুখ খুলে বলতে পাচ্ছি না।এমন কেন হচ্ছে!!!আর আমার শরীর অবস হয়ে যাচ্ছে।

তখনই অর্ক সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাই। রাহাত হুজুর অর্ককে কোলে করে ড্রইং রুমে নিয়ে গেল। আর সবাইকে ডাক দিলো। এভাবে অর্কের নিথর শরীরটা বেশ কিছুক্ষণ পড়ে ছিলো।গ্রামে ডাক্তার ও তেমন নেই। কিন্তু আরও কিছু সময় পর অর্ক একটু সুস্থ হয়ে উঠলো ।

রাহাত হুজুর এখন বুঝতে পারছে। এই কারণে তার জীন তাকে কিছু বলতে নারাজ ছিল। অর্কের এই অবস্থা না জানি জীনের কি হতো!!

আর এই জন্য হয়তো পরে বেশ কয়েক বার ডেকে ও সারা দিলো না জীনটা।

অর্ক বলেঃ রাহাত হুজুর একাজে সাহায্য লাগবে। খুব জটিল একটা কাজ।আমি আর আপনি একা কিছু করতে গেলে প্রাণ যাবে নিশ্চিত।

রাহাত হুজুর বলেঃ কার থেকে সাহায্য নিবে? কে করবে সাহায্য???

অর্ক বলেঃ মনে আছে। আমার ২ টা বান্ধুবীর কথা বলছিলাম। সুমি আর জান্নাত!!!!

আর একটা বন্ধু হাবিব!!!

রাহাত হুজুর বলেঃ আরে মনে আছে। কিন্তু ওদের এমন কি power's আছে যে আমাদের সাহায্য করতে পারবে?

অর্ক বলেঃ ওদের Powers আছে শুধু আমি জানি। তবে কেউ কে না বলতে বলেছিলো।এখন এই পরিস্থিতিতে না বলে পারলাম না।

শুনেন তাহলে ওদের ৩ জনের মধ্যে কি power's আছে।১.সুমির কাছে প্যারানরমাল জিনিসের অবস্থান কোথায় তা চোখ জোড়া বন্ধ করতেই দেখার ক্ষমতা আছে। ২.জান্নাত এর কাছে জীন রাজ্যের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা আছে। আর জীন রাজার বিশেষ অতিথি।

৩.হাবিব এর কাছে একটা স্ফটিক আছে। যার দ্বারা অতীত দেখা যাই।

কামাল রিতিমত আশ্চর্য। একসাথে তাদের সাথে ভার্সিটি শেষ করেও এই বিষয়ে একদম অবগত ছিলোনা। আর লাবু তো একদম নিরব হয়ে আছে। এটা শুনে।।

রাহাত হুজুর বলেঃ আর দেরি না করে ওদের ডেকে আনো।কালকে সেই প্রিন্স অনেক রেগে ছিলো। তাই লালচে বৃত্তটির রশ্মি বেশি ছিল আমি যতোটুকু বুঝতে পারলাম । সে রাগের মাথায় রিনি মার ক্ষতি করতে পারে।

অর্ক বলেঃ আমি ওদের সকাল ৮ টার দিকে কল দিবো।তার আগে চলো সবাই কিছু খেয়ে নি।আর লাবু রিনি কে একটু ডেকে আনো। একসাথে নাস্তা করে একটু গল্প করি সবাই মনটা একটু ভালো হবে।

বিকাল ৪ টার দিকে দরজার মধ্যে কে যেন কড়া নাড়ে?

অর্ক দরজা খুলে দেখে হাবিব, জান্নাত, সুমি হাজির

সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করে। কাজে নেমে যাই।

তবে আজ রিনিকে আবদ্ধ করে রাখা হয়।রাহাত হুজুরের নামাজ আদায় করার ঘরে। আর সামনের জায়গায় ৩ টি বৃত্ত। একটাতে আছে কামাল,রাবেয়া, লাবু।অন্যটিতে আছে অর্ক,রাহাত হুজুর, জান্নাত, হাবিব, সুমি।আর অন্য টি খালি রাখা হয়েছে। ঘরের প্রত্যেক কোনায় কোনায় দোয়ার পানি দিয়ে সুরক্ষিত করা হলো যাতে কাউকে কোনভাবে ক্ষতি করতে না পারে।আর ঘরের কোন কোনায় যাতে লুকিয়ে না থাকে।

কিন্তু খালি বৃত্ত টিতে দোয়ার পানি দেয় নি।কারণ প্যারানরমাল যে কোন কিছু এসে ওইটাতে অবস্থান করতে পারে মতো ।

হাবিব বলেঃ আগে একটু অতীতে গিয়ে দেখে আসি প্রিন্সের(ইনতিয়

াজের) দূর্বলতা কি?না হয়।ইনতিয়াজকে(প্রিন্সকে) এখানে আনা সম্ভব হবে না।

তখই দেখে,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,


ডাইরি সাহিত্য ডাইরি ষষ্ঠ_পর্ব(শেষ)

ডাইরি

সাহিত্য ডাইরি 

ষষ্ঠ_পর্ব(শেষ)




ঈশিতার কন্ঠে নিমিষেই আরিফের দেহ থেকে প্রান চলে যাওয়ার মত অনুভূতি পায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঈশিতার পানে তাকানো যাচ্ছে না। ভিষন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার চাহনি। রাগান্বিত ভঙ্গিতে আরিফের পানে এগিয়ে আসছে ঈশিতা । আরিফ বুঝতে পারছিলো তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে। সে উঠে দাঁড়াতে চেয়েও ব্যর্থ হয়। ঠিক কাছাকাছি এসে ঈশিতা অগ্নি দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকিয়ে থাকে।

"_ঈশিতা আমার কথাটা আগে শেষ করতে দাও। তারপর আমার সাথে যা ইচ্ছে করতে পারবে। 

ঈশিতা আরিফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। "_তুমি অনেক কিছু জেনে ফেলেছো আরিফ। 

আরিফ ঈশিতা কে তার শেষ কথা গুলো শুনতে অনুরোধ করে। ঈশিতা এতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে যে আরিফের গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসছে। চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে । চোখের নিচে রক্তিম চিন্হ ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে ভয়ানক হাসির ফলক। পরিবেশটাও কেমন বেশি ভুতুড়ে হয়ে গেছে। বাতাসের ঝাপটায় আরিফের দেহের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। "_ঈশিতা তোমার আসল পরিচয় কী? ওই লোকটা কে হয় তোমার আর কেনোই বা মানুষ কে হত্যা করে তাদের চোখ উঠিয়ে নিচ্ছো ?

ঈশিতার মুখে বিকট হাসি। নিমিষেই পরিবেশ যেনো দ্বিগুণ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে । বিজলীর ঝলকানি মাঝে ঈশিতার সাদা রঙের ফ্রকে পড়তে যেনো আরো অশশরীর মতো চেহারা ফুটিয়ে উঠাচ্ছে ।


"_শুনবে তাহলে আমার গল্প? 

আরিফ বিনয়ের সাথে মাথা ঝাঁকায়। ঈশিতা তার জিবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিতে শুরু করে। 

"_সালটা ২০০৮ সাল।

আমার বাবা মায়ের সাথে এই বাড়িতে থাকতাম। আমাদের সাথে মায়ের বড় বোনের ছেলে অর্থাৎ আমার খালাতো ভাই থাকতো ‌। ওর নাম ছিলো সাঈদ। ছোট বেলায় খালা মারা যাওয়ার পর খালু অরেকটা বিয়ে করেন। তার পর আমার মা সাঈদ কে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন । বেশ লম্বা চওড়া ছিলো ছেলেটা। আমার থেকে ৫ বছরের বড়। ওর সাথে শৈশব বেশ ভালোই কেটেছে। ঝগড়া ঝাটি, মারা মারি, দৌড়া দৌড়ি , খুনসুটিতে মেতে থাকতাম দুজনে মিলে। সাঈদ ভাইয়া এস সি সি পরীক্ষা দিবে। আর আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীর জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলাম। একসাথে স্কুল হওয়ায় দুজনে এক সাথেই যেতাম আবার ফিরতাম। একদিন রাস্তা দিয়ে দুজনে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ে রাস্তার পাশে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলছে। আমারও ভিষন সখ হলো । সাঈদ ভাইয়া আমার মুখ ধরে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলো । "_ ঈশিতা ওইসব কী দেখছিস হুম? তুই এখনো অনেক ছোট। 

আমি সাঈদ ভাইয়া কে বললাম। "_ ভাইয়া আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি ! সেদিন না বলেছিলে তুমিও আমাকে ভালবাসো ! তাহলে আজ তুমি আমাকে একটা ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে এটা বলবে? 

সেদিন আমার কথা শুনে সাঈদ ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আমিও ওর রাগী চাহনি দেখে আর কথা বাড়ালাম না। বুঝিনি সাঈদ ভাই আমাকে বোন হিসেবে ভালোবাসি বলেছিলো ।

দুজনে মিলে বাসায় ফিরলাম। রাতের ডিনারের সময় বাবা ডেকে নিয়ে যায়। খাবার টেবিলে বসে দেখি সাঈদ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো না। আমার বেশ খারাপ লাগছে । হয়তো কথাটা বলা আমার উচিৎ হয়নি। বাবা আমাদের বিষয়টা খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। "_ ঈশিতা কী হয়েছে মা?

কী বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। ছোট মন এত কিছু বোঝার বয়সও হয়নি। তাই চুপচাপ খেতে থাকি। সাঈদ কথা কাটিয়ে বাবা কে বলে ‌"_ কই খালু কিছুই হয়নি ।

অবশ্য আমার বাবা মা সাঈদ ভাই আর আমার বিয়ের ব্যাপারে আগে থেকে অটুট আছেন। খালা কে কথা দিয়েছিলো মা , আমার আর সাঈদ ভাইয়ার বিয়ের জন্য ‌।

ছোট বেলা থেকেই দেখতাম বেশ কিছু লোক আমাদের এই বাড়িটি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বাবা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকতেন। বিশেষ করে আমার মা কে নিয়ে। আমার মা অনেক সুন্দরী ছিলেন। যখন আমার বয়স ১০ বছর । তখন একদিন আমার মা আমাকে ঘরে শুইয়ে রেখে রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাবা তার ব্যাবসা সামলাতে বেশির ভাগ সময়ই শহরের বাইরে যান । সেদিনও একই ঘটনা ঘটে।সাঈদ ভাইয়া ইক্সট্রা কোচিং করতে গেছে। হঠাৎ আমার মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ছোট ছোট পা ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে থাকি । রান্না ঘরের পাশে ছোট একটা ঘর আছে। সেই ঘর থেকেই আওয়াজটা আসছে। পাশে যেতেই দেখি বেশ কয়েকজন লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি একজন লোক আমার মায়ের উপরে শুয়ে আছে। দুজনেই পোশাক বিহীন। ছোট মন তাই এত কিছু বুঝতাম না। মা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু লোকটা জোর করে মায়ের সতিত্ব হরন করছে। আমাকে সেখানে দেখেই একটা লোক আমার হাত ধরে টানতে টানতে অন্য ঘরে আটকে দেয়। 

হৃদয় ফাটানো চিৎকারে ভরে গেছে পুরো বাড়িটা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না । এই ধু ধু প্রান্তরে আসবেই বা কে। এই বাড়ি থেকে জন মানবের বসতি বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায় আমাদের আর্তনাদ বাড়িটাতেই সীমা বদ্ধ থেকেছে ।

একটু পরে বাবা কাজ সেরে বাড়িতে পৌঁছাতেই লোক গুলো বাবা কে ধরে ফেলে। কেউ একজন রাগী কন্ঠে বলতে থাকে। "_ তোর তো অনেক দয়া মায়া। আমারে একটু মায়া কইরা বাড়িটা লেইখা দিলে কী অইতো? 

কন্ঠটা অনেক চেনা পরিচিত। আগেও শুনেছি এই কন্ঠ। হঠাৎ বন্দুকের গুলির শব্দে আমি ঘাবড়ে যায়। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি আমার মা র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। বাবা মায়ের পাশে বসে নিজের প্রান ভিক্ষা চাচ্ছে। কিন্তু লোকটা কোনো কথা শুনতে নারাজ। দ্বিতীয় বার গুলির শব্দ হতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠি । দেখলাম আমার বাবার বুক ভেদ করে দিয়েছে। বাবার নিথর দেহ মায়ের লাশের পাশে পড়ে আছে। খানিক বাদে দরজা ঠেলে সাঈদ ভাইয়া ভিতরে প্রবেশ করেই ঘটনা চাক্ষুষ করে। সব থেকে অবাক হয় যখন খুনির জায়গায় নিজের বাবা কে দেখে ‌। হ্যা আমার খালু আশরাফ মোল্লাই মেরেছিলো আমার বাবা মা কে ‌। "_ বাবা তুমি এটা কী করলে? তুমি খালা- খালুরে খুন করেছো ? আমি তোমায় ক্ষমা করবো না। 

আশরাফ মোল্লা খানিক হেসে বলে। "_ সাঈদ এই সম্পত্তি তোর হবে। তাই তুই শুধু শুধু ভাবিস না এসব নিয়ে। ভালো থাকতে গেলে টাকা প্রয়োজন বুঝলি। 

কিন্তু সাঈদ ভাই কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। সে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিজ পিতার দিকে।

"_ওই যা ওদের দুজনকে ঘরে আটকে রাখ। কিছু খেতে দিবি না পড়ে এমনিতেই বুঝতে পারবে। আর ভর হওয়ার আগেই মেয়েটাকে মেরে সব লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে আসবি ‌। আমি আবার অবুঝ শিশুদের হত্যা করি না।

 আমাদের দুজনকে ধরে একটা ঘরে আটকে রাখে। নিজের ছেলে বলে সাঈদ কে মারে নি। তার সাথে আমাকেও। 

সারা রাত দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি । সাঈদ আমার হাত শক্ত করে ধরে রইলো। "_ ঈশিতা তুই কাঁদিস না। কথা দিচ্ছি এই যে তোর হাত ধরেছি আর ছাড়বো না। তোকে সারা জীবন আগলে রাখবো আমার বুকের ভিতরে। আমি একনাগাড়ে কাঁদতে থাকি। রাত তখন গভীর। জানালার গ্রিল অনেক কষ্টে সাঈদ ভাইয়া খুলে ফেলে। আমার হাত শক্ত করে ধরে শেষ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে থাকি। আমি আর পারছি না ‌। সাঈদ ভাই আমাকে কাঁধে উঠিয়ে দৌড়াতে থাকে। সেদিন জানি মানুষটার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু তবুও আমাকে বাঁচাতে তার অদম্য ত্যাগ ‌। ছুটতে ছুটতে বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছি আমরা। রাস্তার পাশে একটা দোকানের বারান্দায় দুজনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি। অনেক খুদা লেগেছে আমার। "_এত রাতে খাবার কোথায় পায়?

সাঈদ ভাই দোকানের ঝাপ অনেক কষ্টে খুলে ফেলে। আমরা দুজনে দোকানের ভিতরে ঢুকে পেট ভরে খেয়ে শুয়ে পরি। সকালে দোকানের মালিক দোকান খুলতেই আমাদের পায় ‌। সাঈদ ভাই কে অনেক মার ধর করে। আমি অনেক হাত জোর করার পর তাকে ছেড়ে দেয় । আমাদের দূঃখের কথা দোকানদার কে বললে তার মায়া হয়। একটা এতিম খানায় পাঠিয়ে দেয় আমাদের। সেখানেই শুরু হয় আমাদের বেড়ে উঠা। মাঝে মাঝে আমার মন খারাপ হলে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আমার আর ওর নাম লিখতো সাঈদ ভাইয়া। ফুল নিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলেছে কত বার রাগ ভাঙাতে। সে পড়া শুনায় অনেক মেধাবী । তাই পড়া শুনা শেষ করে অল্প দিনেই চাকরি পেয়ে যায়। তখন আমি সুন্দরী এক মেয়েতে পরিনিত হয়েছি। এতিম খানার সবাই জানতো আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি ‌। বেশ ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো আমাদের। ছোট্ট সংসার আমাদের। ঢাকার মধ্যে একটা ফ্লাট নিয়েছি সংসার শুরু সেখানেই । এভাবেই দিন কাটছিলো আমাদের।

হঠাৎ একদিন সাঈদ হাঁপাতে হাঁপাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে। "_ কী হলো তোমার হাঁপাচ্ছো কেনো এভাবে?

"_ঈশিতা আমার বাবা আমাকে চিনে ফেলেছে।

সে এখন বেশ বড় বিসনেস ম্যান। আমাদের অফিসে কাজের অর্ডার দিতে এসে আমার সাথে দেখা হয়েছিল। জানি না কিভাবে আমাকে চিনে ফেলেছে। 

আতংকিত চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাঈদ বেশ ঘাবড়ে আছে। আমি পানি এনে সাঈদের হাতে দিলাম। গপগপিয়ে পুরো পানি খেয়ে ফেললো। 

"_তুমি চিন্তা করো না, এখন আইন আছে। আমরা আইনের সহায়তা নিতে পারি।

সাঈদ আমার কথাতে সম্মতি দিলো। পরদিন আমরা থানায় গিয়ে কেস করলাম আশরাফ মোল্লার বিরুদ্ধে। এত বড় বিসনেস ম্যানের নামে কেস হওয়াতে মিডিয়া বেশ উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা যেনো কেস করে আরো বিপদে পড়লাম। সেদিন রাতে হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দ। তরিঘরি উঠে দরজার সামনে যায়। হয়তো সাঈদ অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। দরজা খুলতেই জন পনেরো লোক হুর হুর করে ঘরে প্রবেশ করে। ভির ঠেলে সামনে এগিয়ে আসে আশরাফ মোল্লা। "_কী মাইয়া এহনো আমার উপরে তোমার রাগ আছে দেখতাছি! কথায় আছে সুখে থাকতি ভুতে কিলায় । কথাটা দেখতাছি আইজ মিললা গেছে গা ।

আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বার কয়েক ঝাকুনি দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। সোফায় বসে সাঈদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে। 

খানিক বাদে সাঈদ অফিস থেকে ফিরে। ঘরে ঢুকতেই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে যায়। "_ বাবা তুমি এখানে?

"_ ক্যান আব্বা আমি কী তোমাগো বাসায় আইতে পারি না? পোলার বাসায় বাপে আইবো এত অবাক হওনের কী আছে?

 কথা শেষ হতেই সাঈদ কোমর থেকে রিভাল ভার উঁচিয়ে ধরে। "_ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যাও। না হলে ভালো হবে না কিন্তু!

আশরাফ মোল্লা বিকট হাসি দিয়ে বলল। "_ তাইলে যেইডা শুনছি মিলল গেলো ‌। তুমি মাফিয়া দলের লিডার শুনছিলাম। এখন দেখতাছি সত্যিই!

"_ হ্যা বাবা তোমার ছেলে আমি। তাই ভুলে যেওনা তোমার শরীরে যেই র*ক্ত আমার শরীরে একই র*ক্ত।

তাদের কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।

সত্যিই কি সাঈদ মাফিয়া কিং ?

আমি তো জানতাম ও একজন সৎ চাকরিজীবী । সাঈদ আমার দিকে বিনয়ের সাথে তাকিয়ে বললো। "_ ঈশিতা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে আমি কোনো চাকরি করি না। এই দুনিয়ায় টাকা আর বাপ খালু ছাড়া কোনো চাকরি নেই। তাই এই পথ বেছে নিতে হয়েছে আমার।

সাঈদের প্রতি ঘৃনা হচ্ছিল আমার। নিজের পিতা আর নিজের মধ্যে কী পার্থক্য আছে এখন তার মধ্যে ?

হঠাৎ একজন পেছন থেকে এসে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায় । "_ রিভাল ভার নিচে ফেল, নাইলে তোর প্রানের বউরে মাইরা দিমু।

সাঈদ সন্তর্পণে রিভাল ভার নিচে ফেলে দেয়। প্রচুর মারধর করে ফ্লোরে র*ক্তা,ক্ত অবস্থায় ফেলে দেয় সাঈদ কে। অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সাঈদ। আশরাফ মোল্লা পাশের ঘরে চলে যায়। কিছু লোক আমাকে কামুক চাহনি তে দেখতে থাকে। হিংস্র হায়নার ন্যায় আমার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। 

ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার সতিত্ব হরন করতে। শেষ শক্তি দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি । তখন হঠাৎ সাঈদ আমার চিৎকারে জেগে উঠে। রিভাল ভার উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। আশরাফ মোল্লার বুক ঝাঁঝরা করে দেয় ‌ । হঠাৎ আমার দিকে তাক করে কেউ গুলি ছুঁড়ে। সাঈদ আমাকে বাঁচাতে নিজের বুক পেতে দেয়। সারা শরীরে র*ক্তের বন্যা ভেসে যাচ্ছে । তবুও আমাকে শক্ত করে ধরে রেখে রিভাল ভার উঁচিয়ে গুলি ছুড়ছে। আমি ভয়ে কানে হাত দিয়ে রেখেছি ‌। সব শেষ হয়ে যায়। সাঈদ আমার কোলে লুটিয়ে পড়ে। মুখে র*ক্তের দাগ। আমি পাগলের মত হাও মাও করে কাঁদতে থাকি । কেউ শুনতে পায়নি আমার কথা। আমার কপালে শেষ র*ক্তিম চুমু এঁকে দিয়ে নিথর হয়ে যায় সাঈদ। 


কথা গুলো বলে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিতা। সে আবার বলতে থাকে।

"_কিন্তু আমি এত সহজে আমার ভালোবাসা হারাতে দিবো না। তাই লাশ নিয়ে একজন তান্ত্রিকের কাছে যায়। তিনি আমাকে একটা বক্স আর তিনটা কফিন দেন । বলেন ৩০ জোড়া জ্যান্ত চোখ এই বক্সে রাখতে। ১০ জোরা চোখ হলে সাঈদের অশুভ আত্মা ফিরে আসবে কিছু সময়ের জন্য। আর বাকি ২০ জোরা আসলে ওর দেহে অশুভ আত্মা চির দিন থেকে যেতে পারবে। আর এর জন্য আমাকে মানুষের তাজা র*ক্ত খেতে হবে আর মন্ত্র পড়তে হবে।আর এই কারনে আমি তন্ত্র শক্তি পাই। আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। আমার এই কাজটি সহজ করতে সিয়ামের সাথে বিয়ে করি। আমার রূপের মূর্ছনায় সবাই কে আমার ফাঁদে ফেলে হত্যা করে তাদের চোখ তুলে নেই। তোমাদের পরিবারের লোকজনের মায়ায় পড়ে যায় তাই তাদের কোনো ক্ষতি করিনা। কিন্তু একদিন আমার উদ্দেশ্য সিয়াম জেনে যায়। তাই তাকেও হত্যা করতে বাধ্য হই আমি। আমি আমার সাঈদের জন্য যা কিছু করতে পারি।

ঈশিতার কথা শেষ হতেই আরিফ বুঝতে পারে আসল ঘটনা। সে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। "_তোমার এত বড় সত্যি গোপন রেখে তুমি কী ভালো করেছো?

ঈশিতা বিকট হাসি দিয়ে আরিফের দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকায়।

"_কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, আমি দেখবো না ‌। তোমার ভাইয়ের মত তুমিও সত্যটা যেনো গেছো। আজ তোমার চোখ দিয়ে ১৬ জোড়া সম্পূর্ণ করবো।

বলেই কোমর থেকে ধারালো ছুরি হাতে নিয়ে আরিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈশিতা_


_কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, আমি দেখবো না ‌। তোমার ভাইয়ের মত তুমিও সত্যটা যেনো গেছো। আজ তোমার চোখ দিয়ে ১৬ জোড়া সম্পূর্ণ করবো।

বলেই কোমর থেকে ধারালো ছু*রি হাতে নিয়ে আরিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈশিতা । আরিফ শুয়া অবস্থাতেই পেছন দিকে চলছে। ঈশিতার মুখে বিকট হাসি। 

আরিফের বেশ কাছে চলে এসেছে ঈশিতা। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আরিফের কাছে। ঈশিতা সং*স্পর্শে আসতেই আরিফের ধারকান দ্বিগুণ বাড়ছে। ছুড়ি উঁচিয়ে আরিফের চোখ বরাবর নিয়ে এসেছে। নিজেকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে আরিফ। কিন্তু তার দেহ অবশ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে বেঁধে রেখেছে। চারিদিকে ভুতুড়ে আওয়াজ কানে আসছে। মনে হচ্ছে অনেক মানুষ একসঙ্গে আর্তভরা ডাক দিচ্ছে আরিফ কে। ঝড়ো হাওয়া বইছে বাড়িটির প্রতিটি কোনায়। তবে কী আরিফের এটাই শেষ প্রহর? 

চোখের সামনে পুরোনো স্মৃতি গুলো আবছা হয়ে ভেসে উঠেছে। বাবা মায়ের মুখ খানা বড়ই মায়াবী লাগছে। 

চিৎকার দিতে চেয়েও সে আজ নির্বা হয়ে গেছে। 

হঠাৎ কোনো অদৃশ্য শক্তি যেনো হাওয়ার বেগে ঈশিতা কে শূন্যে ছুড়ে ফেলে। আরিফ নড়েচড়ে বসে ‌। 

ঈশিতা উড়ে গিয়ে দেওয়ালে প্রচন্ড ধাক্কা খায়। তন্ত্রমানবী ঈশিতার রূপ ক্রমশ ভয়ংকর হতে থাকে। অগ্নি শিখার চাহনি তে আরিফের দিকে এগিয়ে আসছে। ছুড়ি উঁচিয়ে তেড়ে আসছে। সং*স্পর্শে আসতেই আবারো অদৃশ্য শক্তির আবির্ভাব। পুনরায় ঈশিতা শূন্যে উড়ে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খায়।

"_কে তুই? আমি তোর সংস্পর্শে যেতে পারছি না কেনো?

আরিফের দিকে বজ্র কন্ঠে বলতে থাকে ঈশিতা। রাগে ফুঁসতে থাকা ঈশিতার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো কী হচ্ছে আরিফ কিছুই বুঝতে পারছে না। 

"_এই অদৃশ্য শক্তি কোথা থেকে এলো?

জল্পনা কল্পনা করতে থাকে আরিফ। কিন্তু আগের থেকে বেশ সাহসী হয়ে উঠেছে সে। কারন ঈশিতা তার সংস্পর্শে আসতে পারছে না। আরিফ সেখান থেকে পালাতেও পারছে না। চারিদিকে দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে ‌। যেনো এক ভয়ের কুয়োই ডুবে আছে সে। ঈশিতা শূন্যে ভাসছে আরিফের চারি ধারে। মুখে তার ভয়ংকর হাসি, চোখে অগ্নি শিখা ।

ঈশিতার তন্ত্র শক্তি দিয়ে ঝড় আরো দ্বী গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আরিফ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। হঠাৎ ফ্লোরে নজর যেতেই সিয়াম ভাইয়ের সেই শেষ ডাইরি টা চোখে পড়ে। 

বেশ চমকে উঠে আরিফ। "_ আরে এই ডাইরি টা তো মির্জা বাড়িতে থাকার কথা। আমি তো সেখানেই এই ডাইরি টা রেখেছিলাম। তাহলে এখানে আসলো কেমন করে?

আরো বেশি ঘাবড়ে যায় তার নিজের বাবা মায়ের খন্ড বিখন্ড লাশ দেখে। তার পাশেই বিভৎস অবস্থায় পড়ে আছে তার বাবা মির্জা হারুন অর রশিদ ও মা সালেহা বেগমের মৃত দেহ। তাদের চোখ জোড়া উপরানো । আরিফের হৃদয় ফাটা চিৎকারে পুরো বাড়িটা উত্তল হয়ে পড়েছে। ঈশিতার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিফ। রাগে তার দেহের প্রতিটি শিরা-উপশিরার র*ক্ত টগবগ করছে। "_ ডাইনি তুই এটা কী করলি? যেই মা তোকে নিজের মেয়ের মত আদর করেছে তাকে মারতে একটুও হাত কাপলো না তোর? যেই বাবা তোকে সারা জীবন পুত্র বধু হিসেবে রাখতে চেয়ে এক ছেলের মৃত্যুর পর অন্য ছেলের অমতে তোকে পুনরায় বিয়ে দেয় সেই পিতাকে কিভাবে হত্যা করলি?

ঈশিতা আরিফের কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না। "_ আমি হিংস্র। কারো প্রতি মায়া নেই আমার। আমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে আমি যা খুশি করতে পারি । 

এই বলে ঈশিতা বিকট শব্দে হাসতে থাকে। আরিফ রেগে আগুন হয়ে উঠেছে। "_ আরে ডাইনি তুই কোন ভালোর কথা বলছিস? তোর ভালোবাসার মানুষ সাঈদ যদি সত্যিই পুনরায় জীবিত হতো তবুও সে একটা খারাপ আত্মা হয়ে ফিরবে। এটা কিভাবে ভালো হতে পারে? 

ঈশিতা আরিফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।"_ যে ভাবেই ফিরুক, সে তো ফিরবে! প্রতিদিন এক জোড়া চোখ দিলে ওর আত্মা বারো ঘন্টা আমার সাথে থাকে। ৩০ জোড়া পূর্ণ হলে সাড়া জিবন থাকবে। 

ভাবতেই আশার ঝলক ফুটে উঠেছে ঈশিতার চোখে।


আরিফের নজর আবার সেই ডাইরিটার দিকে পড়ে। হাওয়ার ঝাপটায় ডাইরিটার পাতা উল্টে আছে। হয়তো ডাইরিটা আরিফ কে কিছু বলতে চাচ্ছে। আরিফ দেরি না করে দৌড়ে ডাইরি টার কাছে যায়। দ্রুত ডাইরিটা হাতে তুলে নেয়।

র*ক্তিম কালি দিয়ে লেখা আছে "ঈশিতার সব থেকে বেশি পছন্দের জিনিস পুড়িয়ে দাও" ।

আরিফ প্রচন্ড ঘাবড়ে আছে। এখনো অনেক কিছু অস্পষ্ট হয়ে আছে তার কাছে। আরিফের কাছে কেনো ঈশিতা আসতে পারছে না ? তার কোনো ক্ষতি কেনো করতে পারছে না? সব কেমন তালগোল পাকিয়ে ফেলছে আরিফ। ঈশিতা আরিফের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হচ্ছে বার বার। 

হঠাৎ আরিফের পকেট থেকে এক উজ্জ্বলিত রশ্মি বের হতে থাকে। তখনই আরিফের মনে পড়লো সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা ।

সোহেল কে দাওয়াত দেওয়ার পর মূহুর্তে আরিফ বাজার করতে বের হয়। রাস্তায় হঠাৎ একটা অদ্ভুত ফকিরের সাথে দেখা হয় তার। হ্যাংলা পাতলা চেহারা লোকটার। মনে হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে কিছু খেতে পায়না। আরিফ আগে থেকেই বেশ দয়ালু স্বভাবের। তাই লোকটার পরিস্থিতি দেখে বেশ মায়া হলো তার। পকেট থেকে কয়েক শত টাকা হাতে ধরিয়ে দিতেও নিতে অস্বীকার করেন লোকটা। "_ এ কেমন ফকির রে বাবা ? এত গুলো টাকা দিলাম তবুও নিলো না।

বিরক্ত হয়ে আরিফ বিড়বিড় করে বলছিলো । তবুও সে লোকটাকে পুনরায় বললো । "_ চাচা কিছু না নিলেন। কিন্তু আমার সাথে বসে কিছু খেতে তো পারেনই।

লোকটা লাজুক হাসি দিলো । মুখের ভঙ্গিমা দেখে বুঝা গেলো সে রাজি আছে। আরিফ লোকটাকে সাথে নিয়ে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে। দুজনে পেট ভরে খেয়ে লোকটার হাতে পুনরায় টাকা দিলে সে নেয়। বিনিময়ে আরিফের হাতে একটা মাদুলি (তাবিজ) দেয় লোকটা। বিদায় বেলা বলেও দেয় এই তাবিজ টি সব সময় তার সাথে রাখতে।

"_তারমানে সেই লোকটার তাবিজ আজ আমাকে রক্ষা করছে? আর তাই ঈশিতা আমার সংস্পর্শে আসতে পারছে না!

হঠাৎ ঝড়ের প্রচন্ড ধাক্কায় আরিফ ছিটকে পড়ে যায়। পকেট থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে তাবিজ টিও ছিটকে পড়ে যায়। আরিফ প্রান পনে তাবিজ টি খুঁজতে থাকে। কিন্তু আশে পাশে তাবিজ টি নেই। ঈশিতা এই সুযোগে আরিফ কে শূন্যে ছুড়ে ফেলে দেয়। বেশ কয়েক বার এক দেয়াল হতে অন্য দেয়ালে পালাক্রমে ছুড়ে ফেলে আরিফ কে। হঠাৎ সাঈদের কফিনের পাশে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় আরিফ। সাথে পকেটে থাকা সেগারেট ও লাইটার। আরিফের হঠাৎ মনে পড়ে যায় ঈশিতার সব থেকে বেশি পছন্দের জিনিস তো তার ভালোবাসার মানুষ সাঈদ। 

আরিফ লাইটার হাতে নিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। লাইটার জ্বালিয়ে ঈশিতার সামনে হাত উঁচিয়ে ধরে। ঈশিতার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে।

"_না আরিফ তুমি এটা করতে পারো না। আমি তোমার ক্ষতি করেছি, তুমি আমায় যা খুশি করতে পারো । কিন্তু দোহাই সাঈদের কোনো ক্ষতি করো না।

আরিফ ঈশিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। ।"_ দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় ভুলবো ভেবেছো ? আজ তোমার সব খেল খতম ঈশিতা।

লাইটার কফিনের গায়ে ছোঁয়াতেই দাও দাও করে আগুন জ্বলে ওঠে। পুরো বাড়িতে যেনো ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। ভূ কম্পনে ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়া শুরু করেছে। আরিফ দেরি না করে মা বাবার মৃত দেহের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু ভূ কম্পন এতটাই জড়ালো যে আরিফের চোখের সামনে তার বাবা মায়ের লাশ পড়ে থাকা ঘরটার ছাদ ভেঙে পড়ে। আরিফ নিজেকে বাঁচাতে বাইরের দিকে ছুটে যায়। কফিনের আগুন নেভাতে ঈশিতার গায়ে আগুন ধরে গেছে। আজ আর ঈশিতার রক্ষা নেই। আজই বন্ধ হবে এই মৃত্যুর খেলা ‌। স্পষ্ট হবে এই চোখের ভয়াবহ রহস্য।

বাড়ি থেকে বের হতেই বিকট শব্দে পুরো বাড়িটা ধ্বসে পড়ে।

আরিফ ক্লান্ত দেহ মাটিতে এলিয়ে দেয়। চোখ ভিজে আসছে বাবা মায়ের জন্য। আজ যে সে বড়ই একা ‌।কেউ রইল না যে তার। বুক ফেটে চিৎকার আসছে তার। নির্বাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িটার দিকে।

আজ ২০২২ সাল ।

এখনো আরিফ অগোছালো এলোমেলো চুলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই বাড়িটার দিকে। মির্জা বাড়িটাও বিধ্বস্ত প্রায়। আরিফের ঠিকানা এখন পথে ঘাটে। কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও সে মির্জা বাড়ি ও ভাঙা বাড়ির পাশে যাবেই। এটা যে তার নিত্য দিনের অভ্যাস। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাড়িটার দিকে।

সে যে এখন মানুষিক ভারসাম্য হীন।


*সিয়ামের একটা ভুলের জন্য তার পুরো পরিবারটা আজ শেষ। তাই কবি বলেছেন,,

ভাবিয়া করিও কাজ!

করিয়া ভাবিও না 


সমাপ্ত।


এই গল্পের কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক।

গল্পঃ নারীর পর্বঃ০২ এবং অন্তিম। সাহিত্য ডাইরি

গল্পঃ নারীর

পর্বঃ০২ এবং অন্তিম।

সাহিত্য ডাইরি 

লেখাঃ রাইসার_আব্বু।

- বুকের ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। তাহলে রাইসা এইসব নোংরামীই দেখেছে। কিছু ভাবতে পারছি না আমি চোখের পানি মুছে হোটেল থেকে সোজা বাসায় চলে আসলাম।

- বাসায় আসার প্রায় দু'ঘন্টা পর কথা বাসায় এসে আমাকে দেখে ক্ষানিকটা ঘাবড়ে যায়। কোথায় গিয়েছিলে? বান্ধবীর বাসায়।

- তাহলে আমাকে যে বললে কিচেনে?

- সরি, অর্পণাদের বাসায় গিয়েছিলাম। তুমি যদি রাগ কর তাই বলছি কিচেনে। আর আজ তুমি সকাল সকাল এসে পড়েছো কে জানে?

- হুম তাই তো সকাল সকাল না আসলে জানতে পারতাম না এবারশন করতে তুমি হসপিটালে যাও। অন্য ছেলেকে নিয়ে হোটেলে যাও! ছিঃ কথা তোমার লজ্জা করে না মিথ্যা বলতে আমায়?বল তোমার কিসের অভাব? কেন করলে বিশ্বাস নেয়ে খেলা।

- কথা কোন কথা বলছে না। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে।

- কি হলো দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। তোমাকে দেখতে মন চাচ্ছে না।

- বললেই চলে যাবো। আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমাকে তুমি ভুল বুঝতেছো। আমার হৃদয়ে শুধু তুমিই আছো রাজ। আর এই দেহটা তুমি ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করেনি। আর যেন কেউ করার আগে আমার মৃত্যু হয়।

- তাহলে হসপিটালে এবারর্শন করতে কেন গিয়েছিলে? নিজের পাপ ঢাকতে।

- রাজ প্লিজ চুপ কর। আমি আর নিতে পারছি না।

- হুমম সত্যি কথা গায়ে লাগবেই। জানো কথা তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম। আর তার প্রতিদান স্বরূপ এভাবে কষ্ট দিবে?

- তুমি বললেই হতো যে, আমার সাথে তুমি হ্যাপি নও।

- রাজ তুমি যা ভাবছো সব ভুল ভাবছো।

- হ্যাঁ আমি ভুল ভাবছি। তাহলে বল হসপিটালে কেন গিয়েছিলে? আবার হসপিটাল থেকে বের হয়ে অন্য একটা ছেলেকে নিয়ে শপিং করে হোটেলে কেন গিয়েছিলে?

- বল এসবকিছু মিথ্যা?

- না রাজ সবকিছুই সত্যি। কিন্তু তুমি যা ভাবছ তা সত্যি নয়।

- আমি হসপিটালে গিয়েছিলাম ডক্টর দেখানোর জন্য। আমার একটা রোগ আছে। সেই জন্য জরায়ু দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিদিন পিরিয়ড হয়। ডাক্তার সানজিদাকে দেখিয়েছি। তিনি রির্পোট দেখে বলেছেন, জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। আর সেটা অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে। আর অপারেশন করলে, বেশিভাগ সম্ভাবনা, আমি আর কোনদিন মা হতে পারব না। পৃথিবীতে সবাই চাই বংশের বাতি হিসেবে একটা ছেলে। কিন্তু আল্লাহ এখনো আমাদের কোন ছেলে দেয়নি। জানো রাজ আমি সন্ধ্যাবেলা গোসল করতাম এ রোগের জন্যই। রাতে খুব করে মন চাইত তোমার বুকে মাথা রেখে নিজেকে সর্পে দিতে। কিন্তু যখন জরায়ু থেকে ব্ল্যাড নির্গত হতো খুব কষ্ট হতো। আর তোমাকে এ বিষয়টা জানায়নি। তুমি যদি কষ্ট পাও, তাহলে আমি যে এখনকার ব্যথা সহ্য করতে পারছি হয়ত তোমার তখনকার ব্যথা সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু আজ আমাকে সতী প্রমাণ করতে বলতেই হলো। ক্ষমা করে দাও না আমায়।

**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: "নিঃস্বার্থ ভালোবাসা"**

-আরেকটা কথা হসপিটাল থেকে বের হয়ে। হুট করেই রাফি ফোন দিয়ে বলে তার বিয়ে। আর আমাকে যেতে হবে। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে এতিমখানায় বড় হয়। এতিমখানা থেকে পড়ালেখা করে চান্স পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক রক্তদান কর্মসূচিতে পরিচয়। সেখান থেকেই ভাই-বোনের সম্পর্ক। তাই আর না করতে পারিনি । হোটেলে গিয়ে দেখি বউ সেজে যে মেয়েটা বসে আছে সেটা রিত্ত! রাফি রিত্তের সামনে নিয়ে বলে পরিচয় হয়ে নেও এটা আমার আপু । আমার একমাএ অভিভাবক। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে।রিত্ত যে তোমাকে ছাড়া কিছুই বুঝত না সে রিত্তই তোমাকে ছাড়া বিয়ে করছে না জানিয়ে। সবার সামনে রিত্তের গালে চড় বসিয়ে দেয়। রিত্ত আমার পা ঝাপটে ধরে বলে ভাবী আমায় ক্ষমা করে দাও ভাইয়াকে কিছু বলো না। তারপর রিত্ত সব খুলে বলে আমায়।

- মানে? কি বলছ এসব?

- হ্যাঁ ঠিকই বলছি, আজ আমার বলতে কোন বাঁধা নেই বলতেই হবে আমার।(কথা)

-আমার বোন এমন না। আমি এসব কিছু বিশ্বাস করি না।

- হুম আমিও করিনি। কিন্তু এটাই সত্যি। কলেজের একটা ছেলেকে ভালবাসত রিত্ত। নাম, রাফি । ছেলেটাও রিত্তকে প্রচণ্ড ভালবাসত। তাদের ভালবাসার বন্ধনটা ছিল পবিএ। কিন্তু একদিন কলেজ ফাংশনে যোগ দেওয়ায় রিত্তের মেসে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা লেগে যায়। আর এই সুযোগে একদল নরপশু রিত্তের শরীরে ধর্ষিতার ছাপ বসিয়ে দেয়। জানো রাজ আমাদের সমাজে ধর্ষকের জায়গা হলেও, হয় না ধর্ষিতার জায়গা। এদিকে রিত্ত ধর্ষিতা হওয়ার কথা কাউকে জানায়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর রিত্ত স্থির করল রাফিকে সব বলে দিবে। তাই রাফিকে নিয়ে কলেজের পাশ দিয়েই নদী বয়ে গেছে। সেখানে নিয়ে যায়। এটা রিত্ত আর রাফির প্রিয় জায়গা। রিত্ত ভণিতা করা বাদ দিয়ে বলতে লাগে ' রাফি আমাকে ভুলে যাও।'

কথাটা রিত্তকে যতটা আঘাত করে তারচেয়ে আঘাত করে রিত্তর পাশে বসে থাকা রাফির বুকে। রাফি স্তব্ধ হয়ে যায়।

- রাফি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি চাই না কোন ধর্ষিতার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট হোক। জানো আমি ভাইয়াকেও বলতে পারিনি। আমি চাই না আমার ভাইয়ার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে বলুক 'ওই যে ধর্ষিতার ' ভাই যাচ্ছে। তোমার দিকে কেউ আঙ্গল তুলে বলুক যে ধর্ষিতার স্বামী যাচ্ছে। তাই এই নষ্ট জীবন নিয়ে আর বেঁচে থাকতে চায় না

- রাফি রিত্তের গালে কষে চড় বসিয়ে দিল। কি মরতে চাও তবে আমায় সঙ্গে নিয়ে মরো। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: "নিঃস্বার্থ ভালোবাসা"**


একা কেন মরবে? আজ তোমার ধর্ষিতা হওয়ার পিছনে দেশের কিছু জারজ সন্তানই দায়ী। আমাদের মতো পুরুষের ব্যর্থতা নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। নারীরা প্রতিটা পদে পদে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। আমি তোমার দেহটাকে নয় আমি তোমার বুকের বা'পাশে লুকিয়ে থাকা মনটাকে ভালবেসেছি। যে জায়গা শুধু আমারই। আর আমি তোমাকে এ সপ্তাহেই বিয়ে করব। পরে একটা সময় সবাইকে জানালেই হবে। হয়ত তোমার ভাইয়া রাগ করবে পরে ঠিকই মেনে নিবে। আর তোমার বিয়েতে এক আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। দুনিয়ার আপন বলতে সে আপুটায়।

- রিত্ত আর রাফি কই? তাদের শাস্তি আছে ভাইকে রেখে বিয়ে করে নিল?

- আর তোমার সাথে কোন কথা নেই!

- কেন আমি কি করলাম?

- কি করছো জানো না?

- না,তো।

- কেন এতদিন বলোনি তুমি অসুস্থ। জানো আমার খুব কষ্ট হয়েছে। শোন আমি চাই তুমি অপারেশনটা করো। আমার বংশের প্রদীপ লাগবে না। আমার তুমিটাকে চাই যার কাছে বিশ্বাসটুকু জমা রাখা যায়। আজ যদি আমার বড়কোন সমস্যা হতো পারতে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে?

- ওই পাগলী কাঁদছ কেন? বুকে আস।

- কথাটা বলার আগেই বুকে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলাম। শার্টটা কারো চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম আজ বৃষ্টিপাত ভালোভাবেই হবে। এ বৃষ্টিযে ভালবাসার, ভূমিকে নতুনরূপে সাজাতে ঝরছে।

-হঠাৎ রাইসার কথা মনে পড়ল'

'আচ্ছা বাবাই উলঙ্গ হয়ে জড়িয়ে ধরে মুখে পাপ্পি দিলে কী হয় ? মজা লাগে বাবাই?

- হঠাৎ মনে হল ' রাইসা কারো কাছে যৌনহয়রানির স্বীকার হচ্ছে না'তো?

- কথাকে বিষয়টা জানাতেই বলল' চল রাইসাকে সুন্দরভাবে জিজ্ঞেস করি। যে ভাবা সেই কাজ ' রাইসাকে যেয়ে বললাম মামনি তুমি, সেদিন ওই কথা বলছ কেন?

- বাবাই কোন কথা?

- 'আচ্ছা বাবাই উলঙ্গ হয়ে জড়িয়ে ধরে মুখে পাপ্পি দিলে কী হয় ? মজা লাগে বাবাই? এই কথা।

- ও এই কথা? যাবো বাবাই আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে দাদু থাকে না। ব্যাংকে চাকরি করে। সে দাদু আমাকে উলঙ্গ হতে বলেছিল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল। খুব মজা লাগবে না। আমাকে মোবাইলে দেখাইছে একটা মেয়ে, আরেকটা ছেলে উলঙ্গ হয়ে কি যেন করছে। আমাকে বলছে আমি যেন তোমাকে না বলি। বললে তুমি নাকি আমাকে বকা দিবে?

- আমি জানি আমার বাবাই অনেক ভালো আমাকে বকা দিবে না। তাই সেদিন তোমাকে বলেছি। ঠিক করেছিনা বাবাই?

- রাইসাকে কুলে তুলে নিয়ে দু'গালে মুখে চুমু দিয়ে বললাম' আমার মামনিটা কি ভুল করতে পারে? এইপর সব আমাকে বলবে। তার আগে আমার পাপ্পি আমাকে ফেরত দাও। রাইসা পাপ্পি দিয়ে বলল' আমার লক্ষী বাবাই।

- মামনি আর ওই দাদুর কাছে যাবে না কেমন?

-আচ্ছা বাবাই।

- রাইসা টম এন্ড জেরী দেখতে চলে গেল। আমি আর কথা দু'জন দু'জনের দিকে চেয়ে আছি। কথার চোখে পানি। কথা চোখের পানি মুছে বলল' লোকটাকে বাবার মতো মনে করেছিলাম, আর সেই কিনা, তার নাতীর বয়সি মেয়ের সাথে ছিঃ! রাজ তুমি অন্য বাসা দেখ।

- পরের সপ্তাহেই অন্য একটা বাসা ঠিক করলাম অফিসের পাশেই।

- যাওয়ার আগে মনে মনে ঠিক করে নিলাম, নাইম চাচাকে কিছু কথা বলা দরকার। চাচার বাসায় নর্ক করতেই চাচা দরজা খুলে দিল।

- আসসালামু আলাইকুম চাচা। এমন সময় দেখলাম চাচার বড় মেয়ের সাতবছর বয়সি নাতনী টা নানু -ভাই বলে দৌড়ে এসে কুলে উঠল।আচ্ছা চাচা বেয়াদবি না নিলে একটা কথা বলি, হুম বাবা বলো।

-চাচা আপনার নাতনীটা না খুব সুন্দর। একদম পরীর মতো। আচ্ছা চাচা আপনার নাতীকে কেউ যদি এ সময় পর্ণগ্রাফী দেখায়। বলে উলঙ্গ হয়ে জড়িয়ে ধরলে মজা লাগবে? তখন আপনার কেমন লাগবে। জানেন পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষই কারো না কারো আপনজন। ছোট্ট বাচ্চারা আমাদের কাছেই শিখবে তাদের যদি আমরাই হয়রানি করি কেমন হবে। বয়সে আপনার চেয়ে অনেক ছোট আমরা চলে যাচ্ছি । কখনো কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়েন।

এই বলে যখনি পা বাড়াবো তখনি লোকটা বলে উঠল বাবা ক্ষমা করে দাও আমায়। আমি অন্যায় করেছি ।

- মুচকি হেসে বললাম ' চাচা আপনার ভুল বুঝতে পারাটাই আপনার জন্য ক্ষমা!

- রুম থেকে বের হতেই দেখি রিত্ত আর একটা ছেলে কথার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই পা ছুঁয়ে সালাম করেই রিত্ত কান্না করে দিল।

আমরা চলে যাচ্ছি। যদি কখনো কোন অন্যায় করে থাকি

রিত্তকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। বুকের বামপাশটায় রাফিকে জড়িয়ে নিলাম।

সমাপ্ত।

#বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবার কাছে অনুরোধ, কোন নারীর দুর্বলতার সুযোগ না নিয়ে দায়িত্বের সুযোগ নিবেন। কোমলমতি শিশুরা আছে যারা যৌনতা কি বুঝে না তার আগেই যৌনহয়রানির শিকার হয়। একটা বার কি আমরা বিবেককে প্রশ্ন করি না? একটা নারী আমার 'মা '। যে দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করেছে। একটা নারী আমার বোন। একটা নারী আমার স্ত্রী। একটা নারী আমার সন্তান। তারপরও কেন এত ধর্ষণ। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

ধন্যবাদ।

নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ২ সাহিত্য ডাইরি

নিষ্ঠুর ভালবাসা 

পর্ব ২

সাহিত্য ডাইরি 



আরমান মায়াকে এমনভাবে কিস করতে শুরু যে মায়ার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে যাই। যেনো পুরো রাগটা মায়ার ঠোঁটের উপর ঝাড়ছে। কিন্তু মায়া কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। চুপচাপ সহ্য করে নেয়। এরপর ওরা মত্ত হয় সেই আদিম খেলায়। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু এতে কোনো ভালোবাসা ছিল না। ছিল শুধু আরমানে রাগ। যা মায়ার শরীরের উপর দিয়ে বয়ে গেলো। মায়া হাসিমুখে সব কিছু সহ্য করছিল, সে অনেক কষ্টে পাচ্ছিল তারপরও সে তার মুখে তার ব্যাথা প্রকাশ করতে দিচ্ছিল না। আরমান সারাটা রাত মায়ার সাথে কাটাই। 


__________________


সকাল বেলা……


আরমান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার পরে মায়া ওয়াশরুমে যায় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। ভিতরে যেতেই মায়ার সমস্ত যন্ত্রণা এবং কষ্ট তার চোখের অশ্রু হয়ে ঝরতে থাকে। মুখের উপর হাত চাপা দিয়ে নীরবে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঝরনার জল তার শরীরে পড়ছিল, তার শরীরে লাল এবং নীল চিহ্ন ছিল, যা বোঝায় যে আরমান কতটা নিষ্ঠুরভাবে তাকে আঁচড়ে খেয়েছে। তার শরীরে থেকে বেশি আত্মায় ব্যাথা লেগেছে। মায়া তার কণ্ঠস্বরকে চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।


আরমান পোশাক পরে রেডি হয়ে নিয়েছে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে সে তার কোট থেকে একটি চেক বের করে মায়ার কাছে এসে চেকটি মায়ার দিকে ছুড়ে দেয়, "এই ধরো, তোমার রাতের সেবার মূল্য।"


মায়া, নিজের ভেতরের কষ্ট লুকিয়ে, নির্লজ্জভাবে চেকটা তুলে নিয়ে তাকায়। চেকে লেখা পরিমাণ দেখে মায়ার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।


আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, "ধন্যবাদ স্যার, পরিমান দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমার সার্ভিস খুব পছন্দ করেছেন, অবশ্যই আবার আসবেন।"


আরমান মায়ার চুল মুঠো করে ধরে একটু কাছে নিয়ে আসে, এতে মায়া ব্যাথা পাই কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। আরমান রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, "প্রশ্নই আসে না, এই আরমান শাহরিয়ার একবার যেই জিনিস ব্যবহার করে তাতে দ্বিতীয়বার আর হাত দেয় না।”


মায়া একটু মন খারাপের ভান করে বলে, , "ওহ, এর মানে আমি আর আপনার সাথে রাত কাটানোর সুযোগ পাব না। সমস্যা নেই, আপনি না হলে অন্য কোন মোটা পার্টি ঠিকই পেয়ে যাবো, শহরে এমন লোকের অভাব নেই, যাইহোক, আজ রাতে আমার আরেকজন ব্যবসায়ীর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, তার জন্যও প্রস্তুত হতে হবে, একটি সুন্দর পোশাক কিনতে হবে,তার পরে অনেক প্রস্তুত হতে হবে। আমি ব্যস্ত, আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো মিস্টার আরমান শাহরিয়ার।"


এই বলে মায়া চেক নিয়ে রুম থেকে চলে যায়।


আজ রাতে অন্য কারো সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট?? মায়ার এসব কথা শুনে আরমান অবাক হয়ে গেল। কেন জানি ওর খুব রাগ লাগছিল। এতে আরমান কনফিউজড হয়ে বিরক্ত নিয়ে মনে মনে বলে, “ও সারা শহরের মানুষ নিয়ে রাত কাটাক তাতে ওর কি?”


এই ভেবে আরমান সেখান থেকে সোজা তার অফিসের জন্য রওয়ানা দেয়। 


.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._


ক্লাব ছাড়ার পর মায়া সোজা হাসপাতালে যায়, তার ফোনে অনেক মিসড কল ছিল।


মায়া তারাহুরো করে একজন ডাক্তারের কেবিনে ঢুকে যায়। মায়াকে দেখে ডাক্তার বলেন, "আরে আপনি এসেছেন? আমরা আপনাকে অনেকবার ফোন করেছি, আপনি আমাদের ফোন ধরলেন না।"


ক্ষমা চেয়ে মায়া খানিকটা নার্ভাস কন্ঠে বলল, "আমি দুঃখিত ডাক্তার, আমি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম। ডাক্তারবাবু ওনি কেমন আছেন?”


ডাক্তার মায়াকে বললেন, "আসলে গতরাতে ওনার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, বারবার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিল। তাই আপনাকে এতবার ফোন করেছি।"


ডাক্তারের কথা শুনে মায়ার হৃৎপিণ্ড হঠাৎ থেমে যায়, "এখন কেমন আছেন ডাক্তার?"


ডাক্তার মায়াকে শান্ত করে উত্তর দিলেন, "উনি এখন ভালো আছেন, চিন্তা করবেন না।"


এই কথা শুনে মায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ডাক্তার মায়াকে বললেন, "ওনার কেমোথেরাপি শুরু করতে হবে, ওনি ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে আছে, আমি আপনাকে কোন মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে চাই না, আমরা জানি তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি এত টাকা খরচ করতে চান?"


কথাটা শুনে মায়ার চোখে পানি চলে আসে, "ডাক্তার কি বলছেন এসব, ওনাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই, আমি ওনাকে হারাতে চাই না।" 


ডাক্তার মায়াকে শান্ত করে বলেন, "আমি বুঝতে পেরেছি, চিন্তা করবেন না, উপর ওয়ালার উপর ভরসা করুন। ওনার কেমোথেরাপি শুরু করার সময় হয়ে গেছে, আপনি বিলটা জমা করে দিন। আর হ্যাঁ ওনার কিন্তু অনেক দামি ওষুধ পত্র লাগবে তাই সবসময় টাকা রেডি রাখবেন।


মায়া একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মাথাটা একটু নেড়ে বলল, "হ্যাঁ ডাক্তার সাহেব, চিন্তা করবেন না, আপনি শুধু চিকিৎসা শুরু করুন, আমি সব খরচ বহন করব।" এই কথা শুনে ডাক্তার মৃদু হেসে মাথা নাড়েন।


___________________


মায়া হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে যায়, সেখানে একজন লোককে শুয়ে থাকতে দেখা যাই। ওনাকে বেশ প্রাণহীন দেখাচ্ছিল, মাথায় কোনো চুল নেয়। জামা পড়ানো না থাকলে শরীরের সব হাড় গোনা যাবে। ওনাকে দেখতে অবিকল একটা মৃতদেহের মতো। এই অবস্থায় লোকটিকে দেখে মায়া খুব কষ্ট পাচ্ছিল। কারণ সেই লোকটি আর কেউ নয় তার জন্মদাতা পিতা, যিনি ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিল।


ধীরে ধীরে ক্যান্সারের কারণে তার শরীর সম্পূর্ণ ফাঁপা হয়ে গেছে, মায়া তার সাহস জোগাড় করে এবং তার বাবার বেডের কাছে এগিয়ে যাই, হাসির আড়ালে তার মুখের দুঃখ লুকিয়ে রাখে। বিছানায় নির্জীব শুয়ে থাকা লোকটি মায়াকে দেখে যেন তার শরীরে প্রাণ ফিরে আসে, চোখ চকচক করে ওঠে, সে হাত এগিয়ে দিয়ে মায়াকে কাছে আসতে ইশারা করে।


মায়া কাছে এসে লোকটির হাত ধরে বেডের কাছে চেয়ারে বসে, "পাপা, কেমন আছো তুমি? জানো, আজ আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করেছি, ডাক্তার কি বলেছে জানো? তিনি বললেন যে তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। ঠিক আগের মতো।"


লোকটা জানতেন মায়া তাকে মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছে। সে যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে শুধু মৃত্যুর দিকে যেতে পারে। জীবনে বেঁচে থাকার দিকে নয়, তবুও মায়া তাকে উৎসাহ দিচ্ছিল, ওনি জানতেন মায়া খুব কষ্ট পাচ্ছে আর সেই কষ্ট তার হাসির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। বাবা তো তাই সব বুঝেন। ওনি নিজের জন্য নয়, তার মেয়ের জন্য চিন্তিত ছিল, মায়া দেখতে খুব সুন্দর এবং নিষ্পাপ ছিল, জানেননা ওনি থাকলে ওনার মেয়ে এই দুনিয়ায় কিভাবে বাঁচবে।


ওনার নাম আশরাফ তালুকদার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ তিনি। ওনার বাবা অর্থাৎ মায়ার দাদা এবং আরমানের দাদা ছিলেন স্কুলের বন্ধু।

অনেক আগেই তারা দুজনেই মায়া আর আরমানের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। আরমানের পরিবার জোর করেই মায়াকে আরমানের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। আর আরমান বিয়ে করে নিলেও তা মানতে রাজি ছিল না। যেহেতু তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েটা দেওয়া হয়েছিল। মায়াকে ওদের বাড়িতেও আনতে দেয়নি এই বলে যে “ওই মেয়ে যদি এই বাড়িতে আসে তাহলে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।


আরমানের দাদা জানতেন মায়া ভালো মেয়ে, আর আরমানও কেমন ছেলে তা তিনি ভালোই জানতেন। তাই ওনার মনে হয়েছিল মায়াই একমাত্র আরমানকে সামলাতে পারবে।


মৃত্যুর আগে আরমানের দাদার শেষ ইচ্ছা ছিল দুজনের বিয়ে হোক। দাদার শেষ ইচ্ছায় বাধ্য হয়ে আরমান মায়াকে বিয়ে করে নেয় কিন্তু তার মুখও দেখেতে চাইনি। বিয়ের পরপরই আরমানের দাদা মারা যান। 


আশরাফ:- আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিও না মামনি, আমি জানি আমার হাতে বেশি সময় নেই। পৃথিবীর কোনো চিকিৎসাই আমাকে সারিয়ে তুলতে পারবে না। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তিত নই, আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তিত। তুমি আমাকে এত দামী হাসপাতালে ভর্তি করেছো আমার চিকিৎসার জন্য কিন্তু এখন তার খরচ তুমি কিভাবে বহন করবে? তুমি আমায় বাড়ি নিয়ে চলো। আমি তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই। আমি এই হাসপাতালে মরতে চাই না।"


মায়া সাথে সাথে তার বাবাকে বাঁধা দিয়ে বললো, "পাপা, থামো তুমি, তোমাকে কতবার বলেছি এমন ফালতু কথা বলবে না, তোমার কিছুই হবে না। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে, ডাক্তার আমাকে বলেছে সে তোমার উপর নতুন ওষুধ ব্যবহার করছে, যেগুলো আস্তে আস্তে কাজও করছে। এখন তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে, বিশ্বাস করো।"


 আশরাফ:- "এত টাকার ব্যবস্থা করছ কোথা থেকে তুমি? কিছু ভুল কাজ….." 


আশরাফ এই কথা বলতেই মায়া তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়, "না পাপা, আমি একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, এই চাকরির ভিত্তিতে তোমার চিকিৎসার জন্য লোন নিয়েছি।

তুমি চিন্তা করো না, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে, তারপর আমরা দুজনে বাড়ি যাব।"


আশরাফ একটু দুঃখী হয়ে যায়, মায়া তার পাপাকে দুঃখিত দেখতে পারে না, সে তার পাপার হাতে হালকা চুমু খেয়ে বলে, "পাপা, তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, তোমার কিচ্ছু হতে দেব না, কিছু না।" আশরাফ হালকা হেসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।


বাবাকে এমন নিষ্প্রাণ অবস্থায় দেখে মায়ার খুব কষ্ট হয়, আল্লাহই জানে তাকে নিয়ে কি খেলা খেলেছে, ছোটবেলায় তার মা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, বিয়েও ভেঙে গেছে। এখন তার বাবাই তার শেষ ভরসা, আল্লাহতায়ালা এখন তাকেও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং ও ওর বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিজের কতটা মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে তা একমাত্র ওই জানে।


মায়া মনে মনে বলে, "I am sorry papa, আমি কি করছি তা বলতে পারব না। তবে তোমার জীবন বাঁচাতে আমি যেকোনও প্রান্তে যেতে প্রস্তুত। আমি জানি আমি যা করছি তা খুবই অন্যায়, যেই রাস্তায় আমি নেমেছি এতে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এবং আমি কখনই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না, তবে আমিও তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না, প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও।"


পাপাকে খাবার ও ওষুধ দেওয়ার পর মায়া তার বাড়িতে ফিরে আসে। প্রথমেই সে একটা পেইন কিলার খেয়ে নেয়। কারণ তার শরীরে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছিল। আর হবে নাই বা কেন আরমান তো পুরো পশুর মতো ব্যবহার করেছে ওকে।


ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পর মায়া হালকা কিছু খায় এবং তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ে, বিছানায় শুয়ে সে ক্লান্ত এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। 


🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸


রাতে মায়া রেডি হয়ে ক্লাবে পৌঁছালে ক্লাবের মালিক মায়াকে তার কাছে ডাকে। মায়া ক্লাবের মালিকের কাছে পৌঁছে বলল, "স্যার, আমাকে আপনি ডেকেছিলেন?”


ক্লাবের মালিক মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন, আরে মায়া, তুমি এসেছ ভালোই হলো, আমি তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। তোমার ফোনে ঠিকানা পাঠিয়েছি, আজ রাতে তোমাকে ওখানে যেতে হবে।


মায়া ঠিকানা দেখার সাথে সাথে অবাক চোখ তাকায়, "শাহরিয়ার ম্যানশন!!" 


ক্লাবের মালিক একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, "জানো, তোমার সার্ভিস তার এত ভালো লেগেছে যে তোমাকে পুরো এক মাসের জন্য ভাড়া করে নিয়েছে। তুমি তো লটারি জিতেছ মায়া, অভিনন্দন, এখন তুমি টাকার পুকুরে গোসল করবে।"


মায়া যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারণ সে এটা মোটেও আশা করেনি। মায়াকে অবাক হতে দেখে লোকটি বলল, "কি খুব অবাক হয়েছ তো? হওয়ারই কথা।" 


মায়া যেনো নিজের হুঁশ ফিরে পেলো, "স্যার, একমাস? খুব বেশি হয়ে গেল না?"


ক্লাবের মালিক চোখ ঘুরিয়ে বললেন, "তো?? এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? মেয়েরা এই সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে। আর তুমি এতো ভালো সুযোগ পেয়েও খুশি নও? যাও তাড়াতাড়ি ওই অ্যাড্রেসে চলে যাও। আমি ওনার থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছি। এখন তোমাকে যেতেই হবে নাহলে আমার ব্যাবসা লাটে উঠে যাবে।


লোকটার কথা শোনার পর মায়া শুধু মাথা নাড়ল, সে তখনও বিভ্রান্ত এবং অবাক ছিল। কিন্তু তার অর্থের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তাকে এই কাজটা করতে হচ্ছে।


মায়া মনে মনে বলে, “জানি না আমার ভাগ্যে আর কি কি আছে।”


চলবে….??


🔴 পরবর্তী পর্ব পড়তে পেজটিকে ফলো করে রাখুন….

ডাইরি সাহিত্য_ডাইরি পঞ্চম_পর্ব

ডাইরি

সাহিত্য_ডাইরি 

পঞ্চম_পর্ব



ঈশিতা একটা তালা বদ্ধ ঘর পুরোনো একটা চাবি দিয়ে খুলে ফেলে। আবারো সাবধানের সাথে এদিক সেদিক তাকিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। আরিফ ধীর পায়ে ঘরের দরজার কাছে আসে। দরজাটা আলগা হয়ে আছে। দরজার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই আরিফের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। 

আরিফ দেখে ঈশিতার সামনে কফিন বদ্ধ দুটি লাশ পড়ে আছে। কফিনের পাশে বসে ঈশিতা বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফিন দুটি খুললো। বেশ দূঃখিত লাগছে তাকে। আরিফ আড়াল থেকে সব চাক্ষুষ করছিলো। কফিনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়ে ঈশিতা। খানিক বাদে কফিন থেকে দুটি লাশ বের করে ফ্লোরে শুইয়ে দিলো। আরিফ অবাক দৃষ্টিতে সব দেখছে। লাশ দুটির মুখ অনেক চেনা। এর আগেও তাদের দেখেছে সে। তবে কী সেই স্বপ্ন সত্যিই ছিলো?

আরিফ ঘামতে শুরু করেছে। বাম হাত দ্বারা ঘাম মুছে যাচ্ছে বার বার। "_তবে কী স্বপ্নে দেখা সেই বাচ্চা মেয়েটা ঈশিতা নিজেই? যদি ঈশিতার সেই ছোট বেলায় ঈশিতার বাবা মা মারায় যায়, তাহলে এত দিন পর্যন্ত লাশ পচে যায় নি কেনো ?

আরিফের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে গেছে। ঈশিতা তার সঙ্গে নিয়ে আসা সোহেলের চোখের থলে বের করে। কফিনের পাশে থাকা একটা লাল রঙা বক্স হাতে নিয়ে অট্রো হাসিতে মেতে ওঠে। বক্স খুলে ভিতরে আরো কয়েক জোড়া চোখ বের করে। "_আরে ঈশিতার কাছে তো আরো অনেক চোখ আছে দেখছি? এই চোখ দিয়ে কী করে? আমাকে এর রহস্য বের করতেই হবে।

আরিফ নিজ মনে ভাবছে। 

লাল রঙা বক্সটাতে সোহেলের চোখ রেখে দিয়ে পুনরায় অট্রো হাসিতে মেতে উঠেছে ঈশিতা। মায়াবী মুখ খানা নিমিষেই কত ভয়ানক হয়ে গেছে। চুল গুলো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। চোখের চাহনি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু তার উচ্চতা এখন স্বাভাবিক আছে। ভাঙ্গা ঘরের কোনে কিছু মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয় ঈশিতা। মনে হচ্ছে আগেও এটা করেছে সব প্রনালী প্রস্তুত আছে সেখানে। 

এই বার ঈশিতা জোরে জোরে বলতে থাকে "_ আমি এর প্রতিশোধ নিবো। আমাকে যারা এতিম করেছে তাদের কাউকে ছাড়বো না আমি।

আকাশে মেঘের গর্জন। বাইরে থেকে দমকা হাওয়া ভাঙ্গা বাড়ির ভিতরে তান্ডব চালাচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। ভয়ে আরিফের গলা শুকিয়ে গেছে। এমন তান্ডবেও মোমবাতি গুলো নিভছে না। ঈশিতার চারিধারে মোমবাতি গুলো বসিয়ে দেয়। নিজে মাঝখানে বসে লাল রঙা বক্সটা সামনে রাখে। মুখ থেকে একনাগাড়ে অদ্ভুত অচেনা বাক্য উচ্চারণ করতে থাকে ঈশিতা। আবহাওয়া যেনো আরো বেশি ভুতুড়ে হয়ে যাচ্ছে। গা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে। মেঘের গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠছে আরিফের অন্তর। 

ঈশিতা বাক্য গুলো পাঠ করে চলেছে একনাগাড়ে। খানিক বাদে ঝড় আরো প্রবল বেগে বইতে থাকে। পুরোনো পিলার ঝাপটে ধরে আরিফ কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে। ঘরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আরিফ নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। কেউ জোরে জোরে পা ফেলে ভাঙ্গা বাড়িতে ঢুকছে। তার ভয়ংকর পায়ের শব্দে পুরো বাড়িটা থর থর করে কাঁপছে। 

ঈশিতার সামনে এক বিভৎস চেহারার লোক হাজির হয়। বেশ লম্বা লোকটা। গা থেকে পঁচা গন্ধ আসছে। লোকটার চেনা মুখ আগেও কী দেখেছে আরিফ। লোকটার চেহারা স্বপ্নে দেখা বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার মত । 

লোকটার আগমনে ঈশিতার মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠে। "_যদি স্বপ্ন সত্যিই হয় তাহলে তো ঈশিতার বাবা মা কে এই লোকটা মেরেছে! কিন্তু ঈশিতার হাব ভাবে তো বুঝা যাচ্ছিল এই লোকটা তার অনেক কাছের কেউ। 

লোকটার লালচে আভার ন্যায় চোখ জোড়া ঈশাতার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশিতা মায়াবী চাহনি তে লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। লোকটাও ঈশিতা কে দেখে মুখের কোনে হাসির ফলক সৃষ্টি করেছে। বেশ খানিকক্ষণ দু'জনে দৃষ্টি আদান প্রদান করে।

"_কেমন আছো প্রিয়তম ?

লোকটার কন্ঠ কেমন অদ্ভুত রকমের। তার থেকে অবাকের বিষয় ঈশিতা কে প্রিয়তমা বলার কারন কী? কে এই লোকটা?

আরিফের মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ।‌ ঈশিতা অদ্ভুত লোকটাকে দুই নয়ন ভরে দেখতে থাকে। "_ তোমারে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকবো আমি বলো? তোমাকে এই নিষ্ঠুর অভিশাপ থেকে মুক্ত না করা অব্দি ভালো নেই আমি।

ঈশিতার চোখের কোনে সামান্য পানি জমে গেছে। অদ্ভুত লোকটা ঈশিতার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করলেও কেনো জানি কাছে যেতে অনিচ্ছুক। 

তবে কী তাদের পূর্বে কোনো গভীর সম্পর্ক ছিল? হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আরিফের মাথায় । কী ঘটতে চলেছে কিছু বুঝতে পারছে না সে। 

হঠাৎ আরিফ খেয়াল করলো ক্রমশ দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটির দেহ নীল বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। ঈশিতা আগের ন্যায় এখনো মুখ থেকে অনবিরত বাক্য গুলো বলেই চলেছে। খানিক বাদে চোখ গুলো হাওয়ায় ভাসতে থাকে। অবাকের বিষয় চোখ গুলোও ধীরে ধীরে নীল বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের বদলে সেগুলো নীল বৃত্তের আভার ন্যায় ভাসমান হয়ে আছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার সামনে। হুট করেই নীল বৃত্ত গুলো দ্রুত বেগে লোকটার দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। লোকটা কারেন্টে সখ খাওয়ার মতো ভঙ্গিতে কেঁপে উঠে। 

ঈশিতার বচন ভঙ্গি দ্রুত হতে থাকে। সেই সাথে জোরে জোরে বাক্য জপ করতে থাকে। লোকটা মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে যায়। 

হঠাৎ পাশে পড়ে থাকা কফিন হতে আলোর রশ্মি বের হতে থাকে। আলোর রশ্মি গুলো পড়ে থাকা লোকটার সারা দেহ আলোকিত করে ফেলেছে। আরিফ চোখ বড় বড় করে সব দেখছিলো। লোকটার অচেতন দেহ শূন্য ভাসতে থাকে। ধীরে ধীরে ভাসমান অবস্থা থেকেই লোকটার অগ্নি শিখার মত চোখ খুলে তাকায়‌। মুখে বিকট হাসি। আরিফের হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে ‌। বুক থরথর করে কাঁপছে। ঈশিতার মুখের বচন থেমে যায়। সেও হাসিময় মুখে লোকটার দিকে তাকায়। 

"_আর মাত্র ১৫ জোড়া জ্যান্ত চোখ হলে আমি আবার তোমাকে ফিরে পাবো ।

মায়াবী হাসি দিয়ে ঈশিতা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে।

পুনরায় লোকটার দেহ নিস্তেজ হয়ে যায়। মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে যায় দেহ খানি। ঈশিতা হাতের নরম পরশে লোকটার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিথর দেহের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে ঈশিতা। 

"_তার মানে এই লোকটার এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। সে কী শুধুই মরা লাশ?

আরিফের মাথা চিন চিন করছে। হঠাৎ দেয়ালের দিকে চোখ পড়তেই আরিফ চমকে উঠে। দেয়ালে একটা ফ্রেমে ফ্যামিলি ছবি কাত হয়ে আছে। সেখানে স্পষ্ট ঈশিতা কে দেখা যাচ্ছে। সাথে এই লোক গুলো সবাই। ছবিতে দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল ঈশিতা এবং এই অদ্ভুত লোকটা অনেক কাছের কেউ। "_কোথাও ঈশিতার স্বামী নয় তো এই লোকটা?

আরিফের চোখের সামনে এসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। ঈশিতা সব আগের জায়গায় রেখে দিয়ে ফিরতে প্রস্তুত নিচ্ছে। 

"_আমার এখান থেকে বের হতে হবে।

মনে মনে বলে আরিফ বাড়িটি থেকে বের হতে অগ্রসর হয়। অন্ধকার হওয়ায় হঠাৎ কিছুর সাথে হোচট খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। তার পদঘাতে জোরালো শব্দ হয়। ঈশিতা বুঝতে পারে এখানে সে ছাড়াও অন্য আরেকজন আছে। দ্রুত ঈশিতা আরিফের কাছে চলে আসে।

"_আরিফ তুমি এখানে কী করছো ?

ঈশিতার কন্ঠে নিমিষেই আরিফের দেহ থেকে প্রান চলে যাওয়ার মত অনুভূতি পায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঈশিতার পানে তাকানো যাচ্ছে না। ভিষন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার চাহনি। রাগান্বিত ভঙ্গিতে আরিফের পানে এগিয়ে আসছে ঈশিতা ___


চলবে __


উৎসাহ দিয়ে যাবেন 😊🥀 পেজটাতে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন। দুই লাইনের রিভিউ দিয়ে যাবেন গল্পটাতে। না হলে আপনারো চোখ হারিয়ে যাবে কখন বুঝতে পারবেন না 🙄🥴

নরপশু সত্য ঘটনা অবলম্বনে

নরপশু

৩য় খন্ড

সত্য ঘটনা অবলম্বনে

Nusrat Haq..



আমার মনে হলো আমি দোযখ খানায় এসে পড়েছি।

সে দিনের ২ টা বাজে ঘুম থেকে উঠলো। উঠে বললও ভাত দাও।

আমি দিলাম। তারপর তাকে বললাম আচ্ছা বাথরুম কোথায় তারপর পানি কোথা থেকে আনবো।

সে ভাত খেয়ে উঠে আমাকে বাথরুমে নিয়ে গেলো৷ কি বলব বাড়ি থেকে অনেক দুরে একটা জঙ্গলের মত জায়গায়।

রাত বিরাতে তো আসায় যাবে না। আর বষার সময় ভুলেও না।

তারপর সে একটা বাড়ি দেখালো ওখান থেকে পানি আনতে বললও।

আর রাস্তার পাশে মসজিদের পুকুর থেকে গোসল করতে বললও।

আমি তো কান্নায় শেষ এটা কি হলো।

নসিবে এটা কি হলো৷

যায় হোক আমাকে আমার বাপের বাড়ি থেকে কেউ দেখতে ও আসলো না।

দিন যেতে লাগলো আর তার অত্যাচার বাড়তে লাগলো।

অহেতুক গালাগালি করা।আমাকে বিয়ের ৭ দিনের দিন রাতে মারতে শুরু করলো।

সে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আসলো আর আমার জামা খুলতে একটু দেরি হয়েছিলো চাহিদা মিটানোর জন্য।

কি জঘন্য সময় ছিলো বলে বুজাতে পারবো না।

খুব লজ্জা লাগতো অন্যের বাড়িতে পানি আনতে যেতে৷

তারপর মসজিদের পুকুরে গোসল করতে।

আমি ২ দিনেও গোসল করতাম না লজ্জায়। আর রাতের বেলা প্রসাব ধরলে ও বালতি ভরে করতাম তাও বাথরুমে যেতাম না।

বাথরুমে না যাওয়ার জন্য একদম কম খেতাম।

আর তার তো কোনো খবরই থাকতো না। সে ঠিক মত কাজ ও করতো না।

একদিন বাজার আনলে ১০ দিন আনতো না।

বলে বুজাতে পারবো না আমার কস্টের কথা গুলো।

শুধু আল্লাহকে বলতাম আল্লাহ তুমি একি রাখছো নসিবে জীবনে কি সুখ দিবা না।

তো বিয়ের ১ মাস পর আমাদের বাড়িতে যায়। গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি।

আর মা আমাকে বললও এত ডং করতে হবে না অনেক ডং করছস।

বাড়িতে ১ দিন থাকার পর বাবা বললও কিরে যাবি না বিয়ে দিয়ে দিছি এখানে কি।

শশুর বাড়িতে যা।

তাদের আমি খুলে বললাম এই এই অবস্থা। কিন্তুু তারা বললও বিয়ে দিছি এটাই বেশি৷

তারপর মাকে বললাম।

মা ও মা আমি তো তোমার মেয়ে কেন আমার সাথে এমন করলে।

মা বললও পেট বাঁধানোর সময় মনে ছিলো না।

আমি এটা বলতে পারলাম না বাহিরের মানুষ না ঘরের মানুষই করেছে।

নসিব খারাপ হলে যা হয় আরকি।

এরপর সব মেনে নিলাম আর নিজে নিজে যুদ্ধ শুরু করলাম৷

শশুর বাড়িতে এলাম।

মনোবল আরো শক্ত করলাম। এখানেই আমার থাকতে হবে।

কিন্তুু বর প্রতিরাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আসতো।

বিয়ের ১ মাস পর চালের কথা বললাম। ঘরে চাল ডাল কিছু ছিলো না।

চালের কথা বলার সাথে সাথে মাইর।

বলত কাজ করে খা।

আমি বিয়ের ১ মাস পর থেকে মানুষের বাড়ি কাজ করতাম৷ তারা যা দিতো চাল ডাল তাই খেতাম।

আমার মা আমার একটা বার খোঁজ ও নেয়নি

মানুষের ধান ঝাড়তাম উঠান লিপতাম।

তারা যা দিতো তাই খেতাম কারন বর বাজার করতো না। আর সে কাজ ও করতো না।

বিয়ের সময় আমাকে আমার বাপের বাড়ি থেকে ১ জোড়া কানের দুল আর চেইন দেয়।

একদিন সনধ্যা বেলা এসে বলে তোমার চেইন টা দাও তো।

সাধারণত সে সনধ্যার দিকে বাড়ি আসে না।

আমি সরল বিশাসসে তাকে চেইন টা দিলাম।

তো সে যখন মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরলো আমি কিছু বললাম না তাকে।

সকালে চেইনের কথা জিজ্ঞাস করে আমাকে মাইর বলে তোর বাড়ি থেকে আমাকে ১০ হাজার টাকা ছাড়া আর কি দিছে।

আমি ও মাইর খেয়ে পড়ে রইলাম কি বলব আর।

প্রায় সে আমাকে যৌতুকের জন্য নিযাতন করতো।

না পারতাম বাচতে না পারতাম মরতে।

মানুষের বাড়িতে সারাদিন কাজ করার পরে ও ঘরে এসে কাজ করতে হতো। রান্নার জন্য লাড়কি আর পাতাটা ও আমাকে খুজে আনতে হতো।

সে একদিন কাজে গেলে ১০ দিন যেতো না।

আর মদ খেয়ে টাকা সব শেষ করে ফেলতো।

আমি আমার কানের দুল জোড়া লুকিয়ে রাখলাম।


এর পর একদিন রাতে সে তার একটা বন্ধু নিয়ে আসে।

সাথে তারা খাওয়ার জন্য কি কতগুলো আনে।

আমি খেলাম।

আমার খুব মজা লাগলো।

কিন্তুু এর কিছুখন পরেই আমার খুব ঘুম আসলো৷

ঘুম থেকে উঠে অনুভব করলাম আমার শরীর খুব ব্যাথা।

ব্যাথার জন্য উঠতে ও পারছিলাম না।

নাপা খেলাম৷

আর সেদিন কাজে গেলাম না।

মানুষের বাড়ি থেকে খাওয়ার পানি আনতে গেলে তারা নানা রকম করতো।

অনেক সময় কলে তালা মেরে দিতো৷

তারপর নানা রকম কটু কথা বলতো।

আর সবাই আমাকে নিয়ে অনেক আফসোস করতে।

আমার বরকে এলাকায় মদতি রফিক বললে সবাই চিনে শুধু রফিক বললে কেউ চিনে না।

আমি শুধু আল্লাহকে ডাকতাম। আমার বর বছরের ঈদের দিনে ও নামাজ পড়তো না কতবড় কাফের ছিলো।

তারপর থেকে প্রায় সময় বন্ধুটা আসতো।

আর সে যেদিন আসতো সে দিন আমার খুব ঘুম আসতো।

তো একদিন সনধ্যা বেলায় বন্ধুটা ঘরে আসে। আমার গায়ে হাত দেয় আর আমি বলি কি সমস্যা। সেটা আমি আবার আমার বরকে বলি। তখন বরের বন্ধু আমায় উওর দেয় প্রতিদিনই তো তোমার গায়ে হাত দেয় তখন সমস্যা হয় না।

আমি কথা শুনে থ হয়ে গেলাম মানি কি।

তারপর বরের বন্ধু আমার বরের সামনে আমার রেপ করে।

আমি কাঁদলে আমাকে অনেক মারে আর বলে এমনি এমনি করে না আমাকে টাকা দেয়।

আমি আর এই অত্যাচার নিতে পারতেছিলাম না৷

সবসময় আল্লাহ ডাকতাম আর বলতাম আমার বরের মৃত্যু হয়না কেন।

এরপর থেকে বন্ধুটা প্রায় আসতো আর আমার বাজারের কস্ট হতো না।

আমি কোনো প্রতিবাদ করলে আমাকে অমানুষের মতল মারতো।

আর সবসময় বলত বাপের বাড়ি থেকে টাকা আন।

টাকা না আনলে এভাবে টাকা ইনকাম করে দিবি।

তারপর কিছু দিন পর বাবার বাড়ি যায়। মাকে টাকার কথা বলতে এক প্রকার আমাকে ঝেটিয়ে বিদায়,করলো।

আমিও নিরুপায় কি করবো। শশুর বাড়িতে চলে আসলাম৷

বর এর পর অনেক রকম লোক আনতো ঘরে৷ আর আমি তাদের চাহিদা মিটাতে হতো। আর না মিটালে আমাকে খুব মারতো৷ ছেলে মানুষের মাইর সেটা তো বুজেনি৷

এর ২ মাস পর ঘরের ভিতর বাথরুম আর কল দিলো।

কারন লোকগুলো আসে৷

এক প্রকার আমাকে আমার বর দেহব্যবসায়ী বানাই দিছে।

শুধু আল্লাহ কে ডাকতাম আল্লাহ হেদায়েত করো।

তারপর গ্রামের অনেকেই বলতো মদতিদের ঘরে এত মানুষ কেন যায় ছেলে মানুষ দের আড্ডা।

আরো অনেক কথা।

তারপর একদিন শুনলাম আমার বর বাড়ি বন্ধক দিছে জুয়াই হারি যাওয়াই।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এটা কি হলো।

তারপর আমায় আমার বর বললও এভাবে টাকা জমালে আর ১ বছর দেহ ব্যবসা করলে টাকা জোগায় হয়ে যাবে।

সেদিন নিজের উপর অনেক ঘৃনা চলে আসলো। বলার মতো না।

আমি একরাতে বাড়ির পাশে এক চাচির অনেক অসুখ থাকায় তাদের বাড়িতে রাতটা থাকি।

রাতে আমার ঘরে গ্রামের চেয়ারম্যান এর লোক এসে আমার বর সহ সবাইকে ধরে নিয়ে যায়।

আর জুয়া খেলার জন্য,সবাইকে অনেক মারে।

সেটা আবার আমি শুনি।

চলবে...

ডাইরি সাহিত্য ডাইরি চতুর্থ_পর্ব

ডাইরি

সাহিত্য ডাইরি 

চতুর্থ_পর্ব



অন্ধকারে মুখটা ভালো মত দেখা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে মেয়েটা বেশ সুন্দরী। দেহের গঠন মন্দ নয়। "_এই শুনশান জায়গায় এত সুন্দরী রমনি কোথা থেকে এলো?

ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে সোহেল চৌধুরী।

বেশ খানিকটা কাছে যেতেই দেখে আধো আলোয় এক সুন্দরী রমণী সাদা রঙের ফ্রক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ অবাক হয়ে গেছে সোহেল চৌধুরী। 

ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে থাকে অচেনা রমনীর দিকে। মেয়ের নেশা কোন পুরুষের না আছে । সোহেল চৌধুরীর নাকে এক অদ্ভুত সুগন্ধি ভেসে আসে। সুগন্ধি নাকে আসতেই যেনো বেশামাল হয়ে গেছে সে। সুন্দরীর পিছন পিছন কখন যে মির্জা বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে বুঝতেই পারেনি।

ঘোর কাটতেই নিজেকে আরিফের রুমে দেখে মোটামুটি অবাক হয় সোহেল চৌধুরী। তার পাশেই আড় চোখে তাকিয়ে আছে ঈশিতা। "_তাহলে এতক্ষণ আমি ঈশিতা ভাবির পিছন পিছন আসছি?

বিড় বিড় করে বলছে আর মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে সোহেল চৌধুরী। ঈশিতা গা ঘেঁষে বসে সোহেলের ভয় দূর করে দেয়।

"_ইয়ে ভাবী আমি ভাবছিলাম অন্য কেউ হয়তো।

আমতা আমতা করে ঈশিতা কে বলছে সোহেল চৌধুরী। ঈশিতা ভ্রু কুঁচকে খানিক নিরবতা পালন করে। "_কিন্তু তুমি যা চাচ্ছো সেটা আমি দিতে পারি। 

ঈশিতার কথায় সোহেল অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। ঈশিতা কে ভালো মনে করে এসেছে সে। ঈশিতার দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে সোহেল চৌধুরী। লজ্জা ভেঙ্গে দিতে ঈশিতা সোহেলের হাত ধরে ফেলে। "_ এই নাও আমাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। 

সোহেল যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়েছে এমন খুশি। তবুও মন বন্ধুর কথা ভেবে পিছিয়ে আসছে। ঈশিতা সোহেল কে ঝটকা টান মেরে বুকে জড়িয়ে নেয়। সোহেলের হৃদস্পন্দন বেড়ে চলছে ক্রমশ। ভয় আর লজ্জায় গ্রাস করে নিয়েছে সোহেল কে। ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয় সোহেল কে। ধীর গতিতে বিছানায় উঠে বসে ঈশিতা। সোহেলের চোখে মুখে কা*মুক অনুভূতি। 

হঠাৎ বিছানার একপাশ থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে একনাগাড়ে বুকে ছুরিঘাত করে ঈশিতা। মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দেয় যেনো কেউ আওয়াজ শুনতে না পায়। রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সারা ঘরে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে সোহেলের । এই বুঝি তার শেষ প্রহর। সোহেলের নিথর দেহের উপরে বসে আছে ঈশিতা ‌। সোহেলের রক্ত দিয়ে গোসল করেছে । হঠাৎ দরজা ধাক্কানির শব্দে তরিঘরি উঠে দাঁড়ালো সে । বাইরে থেকে আরিফ ডাকছে।

"_ঈশিতা দরজা খুলো তো ‌।

ঈশিতা সোহেলের র*ক্তাক্ত দেহ টানতে টানতে আলমারির কাছে নিয়ে আসে। আলমারিতে লাশ লুকিয়ে রেখে ফ্লোর ভালো মত মুছে দেয়। তৎক্ষণাৎ বিছানার চাদর পাল্টিয়ে দেয়।

"_ কী হলো, দরজা খুলো, ডাকছি তো তোমাকে!

রাগান্বিত কন্ঠে আরিফ বলছে একনাগাড়ে। ঈশিতা দরজা খুলে দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে ‌।

"_কী হলো দরজা খুলতে এত সময় নিলে কেনো?

আরিফের কথায় ঈশিতা আমতা আমতা সুরে বলে "_ একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই ।

আরিফ বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে ঈশিতা কে মায়ের রান্নায় সাহায্য করতে বলে ‌। ঈশিতা মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি দেয়। "_ঈশিতার হাব ভাব ভালো ঠেকছেনা । ও আবার আগের রূপে ফিরে যায়নি তো ?

বিড়বিড় করে ভাবতে ভাবতে বিছানায় শরীর হেলিয়ে দেয় আরিফ । ঈশিতা ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।

সোহেল কে আসতে না দেখে আরিফ মোবাইল বের করে সোহেল কে কল দেয়। কিন্তু মোবাইল তো ঘরেই বাজছে। আরিফ অবাক হয়ে যায়। সোহেলের ফোন এখানেই কোথাও আছে। রিংটোনের আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে আলমারির কাছে পৌঁছায় আরিফ। "_সোহেলের ফোনের রিং আলমারি থেকে বাজছে। কোথাও ঈশিতা সোহেলের কোনো ক্ষতি করে দেয়নি তো।

আরিফের শরীর ঘামতে শুরু করেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে আলমারির দরজা খুলতেই ভয়ে কাতরে উঠে আরিফ। সোহেলের ক্ষত বিক্ষত লাশ আলমারির মধ্যে। আরিফ চিৎকার দিতেও পারছে না। যদি আশের পাশের লোকজন জেনে যায় তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে। আরিফ যানে এটা ঈশিতার কাজ। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে আরিফ ভয়ের শিহরণে কেঁপে উঠল। তাকিয়ে দেখে দমকা হাওয়ায় দরজা লেগে গেছে ‌।

আরিফ ভাবলো এই লাশটা এখানেই থাক ‌। সে দেখবে এই লাশটি নিয়ে ঈশিতা কী করে। আর কেনোই বা ঈশিতা অন্যদের ক্ষতি করছে। ও চাইলে তো আমাদেরও ক্ষতি করতে পারবে। কিন্তু কেনো আমার এবং আমার বাবা মায়ের ক্ষতি সে করে না ‌। 

আলমারি পুনরায় লাগিয়ে দিয়ে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে ‌। এখনো আরিফের শরীর কাঁপছে। উত্তেজনায় হৃদস্পন্দন বেড়ে চলছে। হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজে আরিফ চোখ বন্ধ করে ফেলে।

ঈশিতা আরিফের কাছে এসে তাকে ডাক দেয়। আরিফ ঘুমের ভান করে থাকায় ডাকে সাড়া দেয় না। খানিক ঝাঁকিয়ে নিশ্চিত হলো আরিফ সত্যি ঘুমিয়েছে কি না। ঈশিতা ধীর পায়ে আলমারি খুলে সোহেলের লাশ বের করে।

আরিফ চোখ হালকা খুলে রেখে সব দেখছিলো। ঈশিতা সোহেলের লাশটাকে টানতে টানতে বেলকুনি তে নিয়ে যায়। হাতে একটা ধারালো ছুরি দিয়ে সোহেলের চোখ তুলে ফেলে। আরিফ সব চাক্ষুষ করছিলো ‌। "_ঈশিতা এই চোখ দিয়ে কী করবে? 

আরিফের ঢের মনে আছে তাদের বাড়ির কেয়ারটেকারের লাশ যখন পুলিশ উদ্ধার করেছিলো , তখন তার দুই চোখ তুলে নেওয়া অবস্থায় পায়। আবার যখন সিয়াম ভাইয়ের লাশ পেয়েছিলো তখন তার মাথাটাই ছিলো না। হয়তো সিয়াম মির্জারও চোখ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। তাছাড়াও সেই দিন দরজার ছিদ্র দিয়ে দেখা লাশটারো চোখ উঠানো অবস্থায় ছিলো। 

আরিফ বেশ আতঙ্কিত হয়ে যায়। ঈশিতা এই চোখ দিয়ে কী করে আজ যেভাবে হোক বের করতে হবেই। চোখ উঠানোর পর ঈশিতা পুনরায় আরিফের কাছে পর্যবেক্ষণ করে । আরিফ কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আবার লাশটার কাছে যায়। চোখ জোড়া একটা থলে তে ভরে কাছেই রেখে দেয় ঈশিতা। লাশটা টানতে টানতে পুনরায় আলমারির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। 

খানিক নিরবতা পালন করে স্বাভাবিক ভাবেই আরিফ কে ডেকে তুলে ঈশিতা। আরিফ এই বার জেগে উঠে। 

"_ ঘুমিয়ে পড়লে চলবে? রাতের ডিনার করবে না?


আরিফ জেগে উঠার ভঙ্গিতে ঘোরে টলতে থাকে। "_ঈশিতা সোহেল আইছে?

আরিফের কথায় অস্থিরতার ভঙ্গিতে ঈশিতা এদিক সেদিক তাকায়। "_ কই সোহেল ভাই তো এখনো এলো না।

আরিফ ঈশিতার কথায় উঠে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে যায়। খাবার মুখ দিয়ে নামছে না। এখনো আতঙ্কিত হয়ে আছে আরিফ ‌। ভিতরে ভিতরে ভিশন উত্তেজনা কাজ করছে। ঈশিতা স্বাভাবিক ভাবেই খাওয়া শেষ করে ঘরে চলে আসে। রাত তখন গভীর। আরিফ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আজ ঘুমিয়ে গেলে চলবে না। যেভাবেই হোক বের করতে হবে এই মৃত মানুষের চোখের রহস্য ‌।

রাত তখন ১:৩০ মিনিট।

হঠাৎ আরিফ খেয়াল করে ঈশিতা চুপিসারে বিছানা থেকে উঠে যাচ্ছে। অন্ধকার ঘরে হালকা চাঁদের আলো জানালা দিয়ে ঢুকছে। সেই আলোয় দেখতে পায় ঈশিতার উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৫ ফুটের মেয়েটা নিমিষেই ৮ ফুটের উপরে উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। আলমারি খুলে সোহেলের লাশ বের করে দুই হাতে অনায়াসে তুলে ফেলেছে । 

"_ তাহলে কী ঈশিতা কোনো মানুষই নয় ?

আরিফের সারা শরীরে ঘামের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। উত্তেজনায় হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠেছে। চোখ জোড়া কাঁপছে দৃশ্য দেখে। চোখের থলে টা হাতে নিয়ে ঈশিতা একবার আরিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। আরিফ আলতো করে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে। 

সোহেলের লাশ আর চোখের থলে হাতে নিয়ে ঈশিতা সন্তর্পনে বেরিয়ে পরে মির্জা বাড়ি থেকে। 

আরিফ লুকিয়ে ঈশিতাকে অনুসরণ করতে থাকে। মির্জা বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা পুরোনো বাড়ি । ঘন জঙ্গল ভেদ করে এগিয়ে চলছে ঈশিতা। জঙ্গলের এক কিনারে সোহেলের মৃত শরীর ফেলে দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে আবার পথ চলতে থাকে ঈশিতা। 

আরিফ না থেমে ঈশিতা কে অনুসরণ করে যাচ্ছে। আরিফের একটাই উদ্দেশ্য, আজ যেভাবে হোক এর রহস্য বের করতেই হবে। পুরোনো বাড়ির সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ায় ঈশিতা। আরিফ বাড়িটার দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায়। এই বাড়িটা সে আগেও দেখেছে। অনেক চেনা পরিচিত বাড়ি এটা। হঠাৎ সেই রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায় আরিফের।

"_আরে হ্যা এটা তো সেই বাড়িটা!

ঈশিতা ডানে বামে তাকিয়ে সদর দরজা খুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আরিফ দেরি না করে তার পেছন পেছন বাড়িতে প্রবেশ করে। 

ঈশিতা একটা তালা বদ্ধ ঘর পুরোনো একটা চাবি দিয়ে খুলে ফেলে। আবারো সাবধানের সাথে এদিক সেদিক তাকিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। আরিফ ধীর পায়ে ঘরের দরজার কাছে আসে। দরজাটা আলগা হয়ে আছে। দরজার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই আরিফের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। 

আরিফ দেখে ঈশিতার সামনে ___


চলবে __


উৎসাহ দিয়ে যাবেন 😊🥀

অন্তরঙ্গ আত্মরক্ষা পর্ব ২(শেষ) গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

অন্তরঙ্গ আত্মরক্ষা 

পর্ব ২(শেষ) 

গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

  


রুদ্র ভাইয়ার কথায় পাখির গা জ্বলে উঠল। সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,  


*"আপনি যদি আমাকে এতই ঘৃণা করেন, তাহলে আমাকে বাঁচালেন কেন? আমাকে ওই পিশাচের হাতে মরতে দিলেই তো পারতেন!"*  


রুদ্রের চোখে একটু নরম ভাব এল। সে পাখির কাঁধে হাত রাখতেই পাখি সজোরে সেটা ঝেড়ে ফেলে দিল।  


*"ছোঁয়োনা আমাকে! একটা সৎবাবা নামের ভণ্ড আর আপনি— দুজনেই এক!"*  


রুদ্র এবার গম্ভীর হয়ে বলল, *"শোন পাখি, আমি যা বলেছি, তা রাগের মাথায়। তুই জানিস, আমি কখনোই... ওই রকম কিছু চাইনি।"*  


পাখির চোখে জল। *"তাহলে এত নিষ্ঠুর কথা কেন?"*  


রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, *"কারণ... আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, তুই হয়তো নিজেই চেয়েছিস... কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, কত ভুল ভেবেছি।"*  


**◇◆◇**  


পরের দিন সকাল। পাখি তার মায়ের ঘরে ঢুকতেই মা বিস্ময়ে বললেন, *"এতো সকাল সকাল? আর চোখগুলো এত লাল কেন?"*  


পাখি কেঁদে ফেলল। সব কথা খুলে বলতেই মা হতবাক। *"এটা কি করে সম্ভব? সে তো... তোর বাবা!"*  


*"না মা, সে কখনোই আমার বাবা নয়,"* পাখি দৃঢ়ভাবে বলল। *"আমাকে বিচার চাই।"*  


**◇◆◇**  


রুদ্র ভাইয়া পুলিশে রিপোর্ট করতে চাইল, কিন্তু পাখির মা ভয়ে বললেন, *"সমাজে মুখ দেখাবো কীভাবে?"*  


পাখি এবার সাহস করে বলল, *"মা, দোষ আমার নয়। দোষ তার, যে নরপিশাচের মতো ব্যবহার করেছে!"*  


রুদ্র সমর্থন দিল, *"পাখি ঠিক বলেছে। আমরা চুপ থাকলে সে আরও অনেককে ক্ষতি করবে।"*  


**◇◆◇**  


পুলিশ স্টেশনে গিয়ে যখন রিপোর্ট করা হলো, পাখির সৎবাবা চিৎকার করতে লাগল, *"এ সব মিথ্যা অভিযোগ! মেয়েটা নিজেই—"*  


কিন্তু রুদ্রের জমা দেওয়া ভয়েস রেকর্ডিং (যে সে পার্টির রুম থেকে আগেই রেকর্ড করেছিল) সব প্রমাণ করে দিল। পাখির সৎবাবা গ্রেফতার হলো।  


**◇◆◇**  


বাড়ি ফেরার পথে রুদ্র হঠাৎ বলল, *"পাখি, আমি... আমার জন্য ক্ষমা চাই।"*  


পাখি হেসে বলল, *"আপনি যদি আমাকে 'তুই' বলা বন্ধ করেন, তাহলে হয়তো ভাবা যাবে!"*  


রুদ্র খিলখিল করে হেসে উঠল। *"ঠিক আছে, 'তুমি'ই হবে। কিন্তু একটা শর্তে—"*  


*"শর্ত?"*  


*"হ্যাঁ। তুমি... না, আপনি এখন থেকে শাড়ি পরবে ঠিকই, কিন্তু শুধু আমার সামনে!"*  


পাখি লাল হয়ে গেল। *"রুদ্র ভাইয়া, আপনি এখনও সেই একই—!"*  


রুদ্র হাসিমুখে বলল, *"মজা করছি। আসল কথা হলো... তুমি শক্ত হয়েছ। আমি গর্বিত।"*  


পাখি মুচকি হাসল। অন্ধকারের পর আসে আলো— সে আজ তা বুঝতে পারল।  

 


পাখির সৎ বাবার গ্রেফতারের পর পুরো পরিবারে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল। মা সারাদিন চুপচাপ, রুদ্র ভাইয়া বাড়ির কাজকর্মে ব্যস্ত, আর পাখি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বই আর গানের মধ্যে।  


এক বিকেলে রুদ্র পাখির ঘরের দরজায় টোকা দিল।  

*"খোলো, আমি... আমি কথা বলতে চাই।"*  


দরজা খুলতেই পাখি দেখল, রুদ্রের হাতে দুটি চায়ের কাপ।  

*"চা খাবি?"*  


পাখি একটু হেসে বলল, *"এত ভদ্রতা? আপনি কি অসুস্থ?"*  


রুদ্র গম্ভীর হয়ে বলল, *"না... শুধু ভাবলাম, তুমি হয়তো একা একা ভাবছ... আমি যদি—"*  


*"যদি কিছু করতে পারেন?"* পাখি তীক্ষ্ণভাবে বলল, *"আমার সৎ বাবা জেলে আছে, মা আমাকে এড়িয়ে চলেন, আর আপনি এখন চা নিয়ে হাজির? কি চান আসলে?"*  


রুদ্রের চোখে একটু ব্যথা ফুটে উঠল। *"আমি চাই... তুমি জানো যে আমি তোমার পাশে আছি।"*  


**◇◆◇**  


পরের দিন সকালে পাখি দেখল, তার মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন।  

*"মা?"*  


মা ফিরে তাকালেন, চোখ লাল। *"মেয়ে, আমাকে ক্ষমা করো... আমি জানতাম না সে এমন—"*  


পাখি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, *"দোষ আপনার না, মা। দোষ একমাত্র তার, যে আমাদের বিশ্বাস ভেঙেছে।"*  


মা পাখির হাত চেপে ধরে বললেন, *"আমরা দুজনেই শক্ত হবো, ঠিক আছে?"*  


**◇◆◇**  


কয়েক সপ্তাহ পর আদালতের দিন। পাখি সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কাঁপছিল। রুদ্র পিছন থেকে ফিসফিস করে বলল, *"ভয় পেয়ো না। আমি এখানেই আছি।"*  


যখন পাখির সৎ বাবা চোখ রাঙিয়ে তাকাল, রুদ্র এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলল, *"তোমার দিকে তাকিয়ো না। ওই নরপিশাচ তোমার দিকে তাকানোরও অযোগ্য।"*  


পাখি গভীর শ্বাস নিয়ে সব বলল। বিচারক রায় দিলেন— ১০ বছর কারাদণ্ড।  


**◇◆◇**  


বাড়ি ফেরার পথে রুদ্র হঠাৎ বলল, *"পাখি, আমি একটা কথা ভাবছি..."*  


*"কি?"*  


*"তুমি কি কখনো ভেবেছো... আমরা... মানে..."* রুদ্র অস্বস্তিতে পড়ে গেল।  


পাখি চোখ কচলিয়ে বলল, *"ওহ! রুদ্র ভাইয়া লজ্জা পাচ্ছে? এটা নতুন!"*  


রুদ্র লাল হয়ে গেল। *"ছি ছি, এমন না! আমি শুধু বলতে চাইছিলাম... তুমি যদি কখনো... আমার সাহায্য চাও..."*  


পাখি হাসতে হাসতে বলল, *"জানি, আপনি আমার পাশে আছেন। কিন্তু এখন থেকে 'তুমি'ই বলবেন, ঠিক আছে? 'আপনি' বললে মনে হয় আপনি বুড়ো হয়ে গেছেন!"*  


রুদ্র হেসে উঠল। *"তাহলে শোনো পাখি, আজ থেকে আমি তোমার... বন্ধু। সারাজীবনের।"*  


পাখি মুচকি হেসে বলল, *"বন্ধুই থাকো। কিন্তু... এক কাপ চা দিতে ভুলো না!"*  


**[সমাপ্ত]**  




ডাইরি সাহিত্য ডাইরি তৃতীয়_পর্ব

ডাইরি

সাহিত্য ডাইরি 

তৃতীয়_পর্ব



বাসর ঘরে বধু সেজে বসে আছে ঈশিতা। বিয়েটা শুধু পরিবারের কয়েকজন সদস্য কে নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আরিফ দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে। ঈশিতা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে খাটের মাঝ বরাবর। কাঁচা ফুলের বাসরে আরিফ আকর্ষিত না ‌। তার একটাই উদ্দেশ্য এই মৃত্যুর খেলা তাকে বন্ধ করতেই হবে। 


"_ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি সারা রাত?

ঈশিতার মিষ্টি কথাও আজ আরিফের কানে বিষ হয়ে ঢুকছে। ধীর পায়ে বিছানার এক পাশে বসে পড়ে সে। আতংকিত চাহনি তে বার কয়েক ঈশিতাকে দেখে। বেশ সুন্দর লাগছে আজ ঈশিতা কে। এক মূহুর্তে ঈশিতার প্রেম সাগরে ডুব দিতে মন চাচ্ছে আরিফের। চোখ যেনো আর সরছে না। এত সুন্দর মেয়ে কিভাবে এতটা ভয়ংকর হতে পারে। চোখ যেনো আরিফের সরছেই না। এভাবে কোনো দিনও ঈশিতা কে দেখে নি সে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দু নয়ন ভরে দেখতে। 

"_কী হলো এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

লাজুক কন্ঠে ঈশিতা বলে আঁচলে মুখ লুকায়। 

"_ তুমি সত্যিই অনেক সুন্দরী । চাঁদ যেনো আজ লজ্জা পাচ্ছে তোমায় দেখে। 

ঈশিতা আরিফের কাঁধ ধরে টেনে তার মুখের কাছে আরিফের মুখ নিয়ে আসে। এক অজনা সুখে ভাসতে থাকে দুজনে। ঘোর কাটতেই আরিফ নড়েচড়ে বসে। 

"_আরে কী করতে যাচ্ছিলাম আমি? আমায় ভুলে গেলে চলবে না যে ঈশিতা কোনো সাধারণ মানুষ নয়।

বিড়বিড় করে বলতে বলতে শরীর ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে ।

"_কী হলো তোমার? আজ আমাদের বাসর রাত। আজ আমাদের মিলনের রাত। আজ তো তুমি আমায় আদর করবে, আর তা না করে ঘুমাচ্ছো ? উঠো বলছি!

গায়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলছে ঈশিতা।

"_উফ ভাবী আমি এসব করতে পারবো না এখন ‌। একটু সময় লাগবে বুঝে উঠতে।

রাগান্বিত কন্ঠে ঈশিতা আরিফের কলার চেপে ধরে।

"_তুই ভাবী কারে বললি? আমি তোর বিয়ে করা বউ! আগের হিসেব বাদদে এখন।

ঈশিতার রাগী কন্ঠে আরিফ ঘাবড়ে যায়। এই বুঝি তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা পিচাশ রূপ ধারন করে। আরিফ ভয়ে ভয়ে উঠে বসে।

ঈশিতা পুনরায় আরিফের ঠোঁটে তার ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দেয়। একহাত দিয়ে ড্রিম লাইটটা অফ করে দেয়। "বাকিটা শুনতে চাইলে ইনবক্সে আসেন"।

সকালে ঘুম ভেঙ্গে আরিফ নিজেকে একটা পরিত্যক্ত ভুমিতে আবিষ্কার করে।"_ এটা কীভাবে সম্ভব আমি তো বাড়িতে নিজের ঘরে ছিলাম।

ভাবতেই ঘাবড়ে গেছে আরিফ। বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। "_ঈশিতা কোথায়, আমার বাবা মাই বা কোথায়? তাদের কোনো ক্ষতি হলো না তো।


ভয়ের শ্রোতে ভেসে বেড়াচ্ছে আরিফের দেহ। ভয়ের শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীরটা। দিশাহারা হয়ে দিক বেদিক ঘুরছে। ধু ধু প্রান্তরে কাউকে দেখছে পাচ্ছে না সে। এটা তো শহর হতেই পারে না । গ্রাম হলেও তো ঘর বাড়ি থাকবে ‌। কিন্তু আরিফ আশে পাশে কোনো বাড়ি ঘর দেখতে পাচ্ছে না। ছুটে চলেছে এক হারানো পথিকের ন্যায় । বেশ খানিকটা দূরে এসে একটা অদ্ভুত বাড়ি দেখে থমকে দাঁড়ায় সে। দুতলা বিশিষ্ট বাড়ি । সদর দরজার কাছে উপস্থিত হতেই আপনা আপনি দরজা খুলে যায়। আরিফ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যা হচ্ছে সব অস্বাভাবিক।

ধীর পায়ে বাড়িটার মধ্যে প্রবেশ করতেই কারো কথার আওয়াজে চমকে যায়। একটা কক্ষ থেকে কয়েক জন মানুষের কথার আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। কক্ষের বাইরের জানালার ছোট ছিদ্র দিয়ে উঁকি মারতেই দেখে কয়েকজন লোক অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে থাকা লম্বা মত একটা লোক বন্দুক তাক করে আছে একটা মধ্য বয়স্ক লোকের দিকে । হয়তো পারিবারিক শত্রুতার জেরে প্রতিশোধ নিতে এসেছে লোকগুলো। তাদের কথা শুনে আরিফের এমনটাই মনে হচ্ছে। ফ্লোরে পড়ে থাকা লোকটার পাশে রক্ত মাখা একটা মহিলার লাশ ‌। হতে পারে লোকটার স্ত্রী। লম্বা মত লোকটা বিকট হাসি দিয়ে বন্দুকের নল দিয়ে পড়ে থাকা লোকটাকে আঘাত করে। 

আরিফ লুকিয়ে সব দেখছে কিন্তু কাছে যাবার সাহস হচ্ছিল না। হঠাৎ বন্দুকের শব্দে আরিফের হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠে। পড়ে থাকা লোকটার বুক এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে গেছে। মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে তার স্ত্রীর লাশের পাশে। একটু পরেই একটা সাদা ফ্রক পড়া মেয়ে কান্না করতে সেখানে আসে। মেয়েটার মুখটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে। বয়স আনুমানিক ১০ - ১২ বছর। মেয়েটা সম্ভবত খুন হওয়া দম্পতির মেয়ে । খুনি গুলো মেয়েটার আর্তনাদ শুনে ভিষন আনন্দ পাচ্ছিলো। 

বন্দুক হাতে থাকা লোকটা মেয়েটার ছোট খোঁপা ধরে টেনে উঠায় । হঠাৎ বন্দুক তাক করে মেয়েটার দিকে। আরিফ নিজেকে আর আটকাতে পারে না। 

এই অন্যায় সহ্য করার মতো নয়। দৌড়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে তার আগেই বন্দুকের বিকট আওয়াজ ।

চিৎকার করে দিয়ে উঠে আরিফ।


"_কী হলো ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছো কেন?

ঈশিতার কন্ঠ শুনে আরিফ হতভম্ব হয়ে যায়। নিজেকে সামলিয়ে নেয় আরিফ। "_ না একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম।

ঈশিতা মুচকি হাসি দিয়ে বলে "_ এই স্বপ্ন আমি প্রতিদিন দেখি , আর মেয়েটার সাথে আমার অনেক মিল । 

বলেই ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয় ঈশিতা।

আরিফ ঈশিতার কথা শুনে চমকে উঠে ‌। এতক্ষণে যে স্বপ্ন দেখছিলো ঈশিতা এই স্বপ্ন সম্পর্কে জানলো কেমন করে? 

আর ওই মেয়েটার সাথে ওর কী সম্পর্ক থাকতে পারে? ঘামতে শুরু করেছে আরিফ। কী এই গোলক ধাঁধা? 

নাস্তার টেবিলে বসে আছে আরিফ । মুখোমুখি বসে লাজুক ভঙ্গিতে হাসছে ঈশিতা । আরিফ বেশ লজ্জা পাচ্ছে, গত রাতে ঘোরের বসে ঈশিতার সাথে যা করেছে সে সব ভাবছে।

"_আরিফ কী হইছে খাচ্ছিস না কেনো ?

মায়ের কথায় খেতে শুরু করে সে। "_ আম্মা আপনার ছেলে তো সারা রাত খেয়েছে তাই এখন হয়তো খিদে নেই ‌।

ঈশিতার কথা শুনে আরিফ লজ্জায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় ঈশিতার দিকে। "_ না মানে মা ঈশিতা বলতে চাচ্ছে আমি স্বপ্নে অনেক খাবার খেয়েছি সেই সব আর কী।

ঈশিতা লাজুক হাসি দেয় আরিফের দিকে তাকিয়ে। আরিফ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। "_ এ কেমন মেয়েরে বাবা, কোন জায়গায় কী বলতে হয় জানেও না।

বিড় বিড় করে আরিফ অল্প অল্প রুটি মুখে পুরে। ঈশিতা আরিফের কান্ড দেখে ভিষন মজা পাচ্ছে। একটু পরেই সেখানে মির্জা হারুন সাহেব আসেন।"_ কী হলো তোমরা কী নিয়ে হাসা হাসি করছো?

"_তোমার ছেলে আজ কাল স্বপ্নে ভুল ভাল জিনিস খাচ্ছে তাই নিয়ে হাসছি।

মির্জা বাড়িতে শোকের ছায়া উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। শুধু অশান্তি মনে আছে আরিফ। সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে কাটায়। ঈশিতা কে চোখে চোখে রাখে কখন কোথায় যায়।

কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবে কাটার পর হঠাৎ একদিনের ঘটনা।

আরিফ প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও বেলকুনিতে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছিলো । হঠাৎ কারো স্পর্শে চমকে উঠে। বাবা মা‌ জানে না আরিফ ধুমপান করে। তাই এই সতর্কতা। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু সোহেল দাঁড়িয়ে আছে। শহর থেকে এসেছে। 

"_কী ভাই বউ পাইয়া আমাদের ভুইলা গেসোস?

সোহেলের কথায় আরিফ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে"_ না ভাই ভুলবো কেনো। তুই কখন এলি?

"_ এই তো আজ সকালেই বাড়িতে আসছি। শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করছিস তাই বউ দেখতে চলে আসলাম।

সোহেল চৌধুরী আরিফ মির্জার ছোট বেলার বন্ধু। দুজনে একই এলাকায় থাকে পাশাপাশি। সোহেল চৌধুরী বাড়িতে আর আরিফ মির্জা বাড়িতে। পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে আরিফ বেশ খুশি হয়। নিজের ঘরে গিয়ে বসে আড্ডা দিতে দিতে বলে"_ বন্ধু ভাবী কে তো আগে থেকেই চিনি ‌। যায় হোক শুভ কামনা তোদের জন্য।

বলে সোহেল রাতের খাবারের দাওয়াত গ্রহণ করে সেখান থেকে চলে যায়।

দিন ফুরিয়ে রাত নেমে আসে। সোহেল কে আরিফ কল করে নিজের বাড়িতে ডাকে। "_ সোহেল তারাতাড়ি আয়। না হলে মা রাগ করবে, তোর জন্য রান্না করেছে মা। 

সোহেল কল কেটে দিয়ে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। গেটের সামনে যেতেই দেখে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্ধকারে মুখটা ভালো মত দেখা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে মেয়েটা বেশ সুন্দরী। দেহের গঠন মন্দ নয়। "_এই শুনশান জায়গায় এত সুন্দর রমনি কোথা থেকে এলো?

ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে সোহেল চৌধুরী।

বেশ খানিকটা কাছে যেতে দেখে ___


চলবে __


উৎসাহ দিয়ে যাবেন 😊🥀