ডাইরি সাহিত্য ডাইরি ষষ্ঠ_পর্ব(শেষ)

ডাইরি

সাহিত্য ডাইরি 

ষষ্ঠ_পর্ব(শেষ)




ঈশিতার কন্ঠে নিমিষেই আরিফের দেহ থেকে প্রান চলে যাওয়ার মত অনুভূতি পায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঈশিতার পানে তাকানো যাচ্ছে না। ভিষন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার চাহনি। রাগান্বিত ভঙ্গিতে আরিফের পানে এগিয়ে আসছে ঈশিতা । আরিফ বুঝতে পারছিলো তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে। সে উঠে দাঁড়াতে চেয়েও ব্যর্থ হয়। ঠিক কাছাকাছি এসে ঈশিতা অগ্নি দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকিয়ে থাকে।

"_ঈশিতা আমার কথাটা আগে শেষ করতে দাও। তারপর আমার সাথে যা ইচ্ছে করতে পারবে। 

ঈশিতা আরিফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। "_তুমি অনেক কিছু জেনে ফেলেছো আরিফ। 

আরিফ ঈশিতা কে তার শেষ কথা গুলো শুনতে অনুরোধ করে। ঈশিতা এতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে যে আরিফের গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসছে। চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে । চোখের নিচে রক্তিম চিন্হ ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে ভয়ানক হাসির ফলক। পরিবেশটাও কেমন বেশি ভুতুড়ে হয়ে গেছে। বাতাসের ঝাপটায় আরিফের দেহের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। "_ঈশিতা তোমার আসল পরিচয় কী? ওই লোকটা কে হয় তোমার আর কেনোই বা মানুষ কে হত্যা করে তাদের চোখ উঠিয়ে নিচ্ছো ?

ঈশিতার মুখে বিকট হাসি। নিমিষেই পরিবেশ যেনো দ্বিগুণ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে । বিজলীর ঝলকানি মাঝে ঈশিতার সাদা রঙের ফ্রকে পড়তে যেনো আরো অশশরীর মতো চেহারা ফুটিয়ে উঠাচ্ছে ।


"_শুনবে তাহলে আমার গল্প? 

আরিফ বিনয়ের সাথে মাথা ঝাঁকায়। ঈশিতা তার জিবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিতে শুরু করে। 

"_সালটা ২০০৮ সাল।

আমার বাবা মায়ের সাথে এই বাড়িতে থাকতাম। আমাদের সাথে মায়ের বড় বোনের ছেলে অর্থাৎ আমার খালাতো ভাই থাকতো ‌। ওর নাম ছিলো সাঈদ। ছোট বেলায় খালা মারা যাওয়ার পর খালু অরেকটা বিয়ে করেন। তার পর আমার মা সাঈদ কে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন । বেশ লম্বা চওড়া ছিলো ছেলেটা। আমার থেকে ৫ বছরের বড়। ওর সাথে শৈশব বেশ ভালোই কেটেছে। ঝগড়া ঝাটি, মারা মারি, দৌড়া দৌড়ি , খুনসুটিতে মেতে থাকতাম দুজনে মিলে। সাঈদ ভাইয়া এস সি সি পরীক্ষা দিবে। আর আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীর জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলাম। একসাথে স্কুল হওয়ায় দুজনে এক সাথেই যেতাম আবার ফিরতাম। একদিন রাস্তা দিয়ে দুজনে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ে রাস্তার পাশে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলছে। আমারও ভিষন সখ হলো । সাঈদ ভাইয়া আমার মুখ ধরে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলো । "_ ঈশিতা ওইসব কী দেখছিস হুম? তুই এখনো অনেক ছোট। 

আমি সাঈদ ভাইয়া কে বললাম। "_ ভাইয়া আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি ! সেদিন না বলেছিলে তুমিও আমাকে ভালবাসো ! তাহলে আজ তুমি আমাকে একটা ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে এটা বলবে? 

সেদিন আমার কথা শুনে সাঈদ ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আমিও ওর রাগী চাহনি দেখে আর কথা বাড়ালাম না। বুঝিনি সাঈদ ভাই আমাকে বোন হিসেবে ভালোবাসি বলেছিলো ।

দুজনে মিলে বাসায় ফিরলাম। রাতের ডিনারের সময় বাবা ডেকে নিয়ে যায়। খাবার টেবিলে বসে দেখি সাঈদ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো না। আমার বেশ খারাপ লাগছে । হয়তো কথাটা বলা আমার উচিৎ হয়নি। বাবা আমাদের বিষয়টা খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। "_ ঈশিতা কী হয়েছে মা?

কী বলা উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। ছোট মন এত কিছু বোঝার বয়সও হয়নি। তাই চুপচাপ খেতে থাকি। সাঈদ কথা কাটিয়ে বাবা কে বলে ‌"_ কই খালু কিছুই হয়নি ।

অবশ্য আমার বাবা মা সাঈদ ভাই আর আমার বিয়ের ব্যাপারে আগে থেকে অটুট আছেন। খালা কে কথা দিয়েছিলো মা , আমার আর সাঈদ ভাইয়ার বিয়ের জন্য ‌।

ছোট বেলা থেকেই দেখতাম বেশ কিছু লোক আমাদের এই বাড়িটি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বাবা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকতেন। বিশেষ করে আমার মা কে নিয়ে। আমার মা অনেক সুন্দরী ছিলেন। যখন আমার বয়স ১০ বছর । তখন একদিন আমার মা আমাকে ঘরে শুইয়ে রেখে রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাবা তার ব্যাবসা সামলাতে বেশির ভাগ সময়ই শহরের বাইরে যান । সেদিনও একই ঘটনা ঘটে।সাঈদ ভাইয়া ইক্সট্রা কোচিং করতে গেছে। হঠাৎ আমার মায়ের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ছোট ছোট পা ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে থাকি । রান্না ঘরের পাশে ছোট একটা ঘর আছে। সেই ঘর থেকেই আওয়াজটা আসছে। পাশে যেতেই দেখি বেশ কয়েকজন লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি একজন লোক আমার মায়ের উপরে শুয়ে আছে। দুজনেই পোশাক বিহীন। ছোট মন তাই এত কিছু বুঝতাম না। মা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু লোকটা জোর করে মায়ের সতিত্ব হরন করছে। আমাকে সেখানে দেখেই একটা লোক আমার হাত ধরে টানতে টানতে অন্য ঘরে আটকে দেয়। 

হৃদয় ফাটানো চিৎকারে ভরে গেছে পুরো বাড়িটা। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না । এই ধু ধু প্রান্তরে আসবেই বা কে। এই বাড়ি থেকে জন মানবের বসতি বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায় আমাদের আর্তনাদ বাড়িটাতেই সীমা বদ্ধ থেকেছে ।

একটু পরে বাবা কাজ সেরে বাড়িতে পৌঁছাতেই লোক গুলো বাবা কে ধরে ফেলে। কেউ একজন রাগী কন্ঠে বলতে থাকে। "_ তোর তো অনেক দয়া মায়া। আমারে একটু মায়া কইরা বাড়িটা লেইখা দিলে কী অইতো? 

কন্ঠটা অনেক চেনা পরিচিত। আগেও শুনেছি এই কন্ঠ। হঠাৎ বন্দুকের গুলির শব্দে আমি ঘাবড়ে যায়। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি আমার মা র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। বাবা মায়ের পাশে বসে নিজের প্রান ভিক্ষা চাচ্ছে। কিন্তু লোকটা কোনো কথা শুনতে নারাজ। দ্বিতীয় বার গুলির শব্দ হতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠি । দেখলাম আমার বাবার বুক ভেদ করে দিয়েছে। বাবার নিথর দেহ মায়ের লাশের পাশে পড়ে আছে। খানিক বাদে দরজা ঠেলে সাঈদ ভাইয়া ভিতরে প্রবেশ করেই ঘটনা চাক্ষুষ করে। সব থেকে অবাক হয় যখন খুনির জায়গায় নিজের বাবা কে দেখে ‌। হ্যা আমার খালু আশরাফ মোল্লাই মেরেছিলো আমার বাবা মা কে ‌। "_ বাবা তুমি এটা কী করলে? তুমি খালা- খালুরে খুন করেছো ? আমি তোমায় ক্ষমা করবো না। 

আশরাফ মোল্লা খানিক হেসে বলে। "_ সাঈদ এই সম্পত্তি তোর হবে। তাই তুই শুধু শুধু ভাবিস না এসব নিয়ে। ভালো থাকতে গেলে টাকা প্রয়োজন বুঝলি। 

কিন্তু সাঈদ ভাই কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। সে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিজ পিতার দিকে।

"_ওই যা ওদের দুজনকে ঘরে আটকে রাখ। কিছু খেতে দিবি না পড়ে এমনিতেই বুঝতে পারবে। আর ভর হওয়ার আগেই মেয়েটাকে মেরে সব লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে আসবি ‌। আমি আবার অবুঝ শিশুদের হত্যা করি না।

 আমাদের দুজনকে ধরে একটা ঘরে আটকে রাখে। নিজের ছেলে বলে সাঈদ কে মারে নি। তার সাথে আমাকেও। 

সারা রাত দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি । সাঈদ আমার হাত শক্ত করে ধরে রইলো। "_ ঈশিতা তুই কাঁদিস না। কথা দিচ্ছি এই যে তোর হাত ধরেছি আর ছাড়বো না। তোকে সারা জীবন আগলে রাখবো আমার বুকের ভিতরে। আমি একনাগাড়ে কাঁদতে থাকি। রাত তখন গভীর। জানালার গ্রিল অনেক কষ্টে সাঈদ ভাইয়া খুলে ফেলে। আমার হাত শক্ত করে ধরে শেষ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে থাকি। আমি আর পারছি না ‌। সাঈদ ভাই আমাকে কাঁধে উঠিয়ে দৌড়াতে থাকে। সেদিন জানি মানুষটার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু তবুও আমাকে বাঁচাতে তার অদম্য ত্যাগ ‌। ছুটতে ছুটতে বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছি আমরা। রাস্তার পাশে একটা দোকানের বারান্দায় দুজনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি। অনেক খুদা লেগেছে আমার। "_এত রাতে খাবার কোথায় পায়?

সাঈদ ভাই দোকানের ঝাপ অনেক কষ্টে খুলে ফেলে। আমরা দুজনে দোকানের ভিতরে ঢুকে পেট ভরে খেয়ে শুয়ে পরি। সকালে দোকানের মালিক দোকান খুলতেই আমাদের পায় ‌। সাঈদ ভাই কে অনেক মার ধর করে। আমি অনেক হাত জোর করার পর তাকে ছেড়ে দেয় । আমাদের দূঃখের কথা দোকানদার কে বললে তার মায়া হয়। একটা এতিম খানায় পাঠিয়ে দেয় আমাদের। সেখানেই শুরু হয় আমাদের বেড়ে উঠা। মাঝে মাঝে আমার মন খারাপ হলে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আমার আর ওর নাম লিখতো সাঈদ ভাইয়া। ফুল নিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলেছে কত বার রাগ ভাঙাতে। সে পড়া শুনায় অনেক মেধাবী । তাই পড়া শুনা শেষ করে অল্প দিনেই চাকরি পেয়ে যায়। তখন আমি সুন্দরী এক মেয়েতে পরিনিত হয়েছি। এতিম খানার সবাই জানতো আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি ‌। বেশ ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো আমাদের। ছোট্ট সংসার আমাদের। ঢাকার মধ্যে একটা ফ্লাট নিয়েছি সংসার শুরু সেখানেই । এভাবেই দিন কাটছিলো আমাদের।

হঠাৎ একদিন সাঈদ হাঁপাতে হাঁপাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে। "_ কী হলো তোমার হাঁপাচ্ছো কেনো এভাবে?

"_ঈশিতা আমার বাবা আমাকে চিনে ফেলেছে।

সে এখন বেশ বড় বিসনেস ম্যান। আমাদের অফিসে কাজের অর্ডার দিতে এসে আমার সাথে দেখা হয়েছিল। জানি না কিভাবে আমাকে চিনে ফেলেছে। 

আতংকিত চাহনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাঈদ বেশ ঘাবড়ে আছে। আমি পানি এনে সাঈদের হাতে দিলাম। গপগপিয়ে পুরো পানি খেয়ে ফেললো। 

"_তুমি চিন্তা করো না, এখন আইন আছে। আমরা আইনের সহায়তা নিতে পারি।

সাঈদ আমার কথাতে সম্মতি দিলো। পরদিন আমরা থানায় গিয়ে কেস করলাম আশরাফ মোল্লার বিরুদ্ধে। এত বড় বিসনেস ম্যানের নামে কেস হওয়াতে মিডিয়া বেশ উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা যেনো কেস করে আরো বিপদে পড়লাম। সেদিন রাতে হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দ। তরিঘরি উঠে দরজার সামনে যায়। হয়তো সাঈদ অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। দরজা খুলতেই জন পনেরো লোক হুর হুর করে ঘরে প্রবেশ করে। ভির ঠেলে সামনে এগিয়ে আসে আশরাফ মোল্লা। "_কী মাইয়া এহনো আমার উপরে তোমার রাগ আছে দেখতাছি! কথায় আছে সুখে থাকতি ভুতে কিলায় । কথাটা দেখতাছি আইজ মিললা গেছে গা ।

আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বার কয়েক ঝাকুনি দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। সোফায় বসে সাঈদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে। 

খানিক বাদে সাঈদ অফিস থেকে ফিরে। ঘরে ঢুকতেই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে যায়। "_ বাবা তুমি এখানে?

"_ ক্যান আব্বা আমি কী তোমাগো বাসায় আইতে পারি না? পোলার বাসায় বাপে আইবো এত অবাক হওনের কী আছে?

 কথা শেষ হতেই সাঈদ কোমর থেকে রিভাল ভার উঁচিয়ে ধরে। "_ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যাও। না হলে ভালো হবে না কিন্তু!

আশরাফ মোল্লা বিকট হাসি দিয়ে বলল। "_ তাইলে যেইডা শুনছি মিলল গেলো ‌। তুমি মাফিয়া দলের লিডার শুনছিলাম। এখন দেখতাছি সত্যিই!

"_ হ্যা বাবা তোমার ছেলে আমি। তাই ভুলে যেওনা তোমার শরীরে যেই র*ক্ত আমার শরীরে একই র*ক্ত।

তাদের কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।

সত্যিই কি সাঈদ মাফিয়া কিং ?

আমি তো জানতাম ও একজন সৎ চাকরিজীবী । সাঈদ আমার দিকে বিনয়ের সাথে তাকিয়ে বললো। "_ ঈশিতা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে আমি কোনো চাকরি করি না। এই দুনিয়ায় টাকা আর বাপ খালু ছাড়া কোনো চাকরি নেই। তাই এই পথ বেছে নিতে হয়েছে আমার।

সাঈদের প্রতি ঘৃনা হচ্ছিল আমার। নিজের পিতা আর নিজের মধ্যে কী পার্থক্য আছে এখন তার মধ্যে ?

হঠাৎ একজন পেছন থেকে এসে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায় । "_ রিভাল ভার নিচে ফেল, নাইলে তোর প্রানের বউরে মাইরা দিমু।

সাঈদ সন্তর্পণে রিভাল ভার নিচে ফেলে দেয়। প্রচুর মারধর করে ফ্লোরে র*ক্তা,ক্ত অবস্থায় ফেলে দেয় সাঈদ কে। অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সাঈদ। আশরাফ মোল্লা পাশের ঘরে চলে যায়। কিছু লোক আমাকে কামুক চাহনি তে দেখতে থাকে। হিংস্র হায়নার ন্যায় আমার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। 

ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার সতিত্ব হরন করতে। শেষ শক্তি দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি । তখন হঠাৎ সাঈদ আমার চিৎকারে জেগে উঠে। রিভাল ভার উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। আশরাফ মোল্লার বুক ঝাঁঝরা করে দেয় ‌ । হঠাৎ আমার দিকে তাক করে কেউ গুলি ছুঁড়ে। সাঈদ আমাকে বাঁচাতে নিজের বুক পেতে দেয়। সারা শরীরে র*ক্তের বন্যা ভেসে যাচ্ছে । তবুও আমাকে শক্ত করে ধরে রেখে রিভাল ভার উঁচিয়ে গুলি ছুড়ছে। আমি ভয়ে কানে হাত দিয়ে রেখেছি ‌। সব শেষ হয়ে যায়। সাঈদ আমার কোলে লুটিয়ে পড়ে। মুখে র*ক্তের দাগ। আমি পাগলের মত হাও মাও করে কাঁদতে থাকি । কেউ শুনতে পায়নি আমার কথা। আমার কপালে শেষ র*ক্তিম চুমু এঁকে দিয়ে নিথর হয়ে যায় সাঈদ। 


কথা গুলো বলে বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিতা। সে আবার বলতে থাকে।

"_কিন্তু আমি এত সহজে আমার ভালোবাসা হারাতে দিবো না। তাই লাশ নিয়ে একজন তান্ত্রিকের কাছে যায়। তিনি আমাকে একটা বক্স আর তিনটা কফিন দেন । বলেন ৩০ জোড়া জ্যান্ত চোখ এই বক্সে রাখতে। ১০ জোরা চোখ হলে সাঈদের অশুভ আত্মা ফিরে আসবে কিছু সময়ের জন্য। আর বাকি ২০ জোরা আসলে ওর দেহে অশুভ আত্মা চির দিন থেকে যেতে পারবে। আর এর জন্য আমাকে মানুষের তাজা র*ক্ত খেতে হবে আর মন্ত্র পড়তে হবে।আর এই কারনে আমি তন্ত্র শক্তি পাই। আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। আমার এই কাজটি সহজ করতে সিয়ামের সাথে বিয়ে করি। আমার রূপের মূর্ছনায় সবাই কে আমার ফাঁদে ফেলে হত্যা করে তাদের চোখ তুলে নেই। তোমাদের পরিবারের লোকজনের মায়ায় পড়ে যায় তাই তাদের কোনো ক্ষতি করিনা। কিন্তু একদিন আমার উদ্দেশ্য সিয়াম জেনে যায়। তাই তাকেও হত্যা করতে বাধ্য হই আমি। আমি আমার সাঈদের জন্য যা কিছু করতে পারি।

ঈশিতার কথা শেষ হতেই আরিফ বুঝতে পারে আসল ঘটনা। সে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। "_তোমার এত বড় সত্যি গোপন রেখে তুমি কী ভালো করেছো?

ঈশিতা বিকট হাসি দিয়ে আরিফের দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকায়।

"_কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, আমি দেখবো না ‌। তোমার ভাইয়ের মত তুমিও সত্যটা যেনো গেছো। আজ তোমার চোখ দিয়ে ১৬ জোড়া সম্পূর্ণ করবো।

বলেই কোমর থেকে ধারালো ছুরি হাতে নিয়ে আরিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈশিতা_


_কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, আমি দেখবো না ‌। তোমার ভাইয়ের মত তুমিও সত্যটা যেনো গেছো। আজ তোমার চোখ দিয়ে ১৬ জোড়া সম্পূর্ণ করবো।

বলেই কোমর থেকে ধারালো ছু*রি হাতে নিয়ে আরিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈশিতা । আরিফ শুয়া অবস্থাতেই পেছন দিকে চলছে। ঈশিতার মুখে বিকট হাসি। 

আরিফের বেশ কাছে চলে এসেছে ঈশিতা। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আরিফের কাছে। ঈশিতা সং*স্পর্শে আসতেই আরিফের ধারকান দ্বিগুণ বাড়ছে। ছুড়ি উঁচিয়ে আরিফের চোখ বরাবর নিয়ে এসেছে। নিজেকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করছে আরিফ। কিন্তু তার দেহ অবশ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে বেঁধে রেখেছে। চারিদিকে ভুতুড়ে আওয়াজ কানে আসছে। মনে হচ্ছে অনেক মানুষ একসঙ্গে আর্তভরা ডাক দিচ্ছে আরিফ কে। ঝড়ো হাওয়া বইছে বাড়িটির প্রতিটি কোনায়। তবে কী আরিফের এটাই শেষ প্রহর? 

চোখের সামনে পুরোনো স্মৃতি গুলো আবছা হয়ে ভেসে উঠেছে। বাবা মায়ের মুখ খানা বড়ই মায়াবী লাগছে। 

চিৎকার দিতে চেয়েও সে আজ নির্বা হয়ে গেছে। 

হঠাৎ কোনো অদৃশ্য শক্তি যেনো হাওয়ার বেগে ঈশিতা কে শূন্যে ছুড়ে ফেলে। আরিফ নড়েচড়ে বসে ‌। 

ঈশিতা উড়ে গিয়ে দেওয়ালে প্রচন্ড ধাক্কা খায়। তন্ত্রমানবী ঈশিতার রূপ ক্রমশ ভয়ংকর হতে থাকে। অগ্নি শিখার চাহনি তে আরিফের দিকে এগিয়ে আসছে। ছুড়ি উঁচিয়ে তেড়ে আসছে। সং*স্পর্শে আসতেই আবারো অদৃশ্য শক্তির আবির্ভাব। পুনরায় ঈশিতা শূন্যে উড়ে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খায়।

"_কে তুই? আমি তোর সংস্পর্শে যেতে পারছি না কেনো?

আরিফের দিকে বজ্র কন্ঠে বলতে থাকে ঈশিতা। রাগে ফুঁসতে থাকা ঈশিতার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো কী হচ্ছে আরিফ কিছুই বুঝতে পারছে না। 

"_এই অদৃশ্য শক্তি কোথা থেকে এলো?

জল্পনা কল্পনা করতে থাকে আরিফ। কিন্তু আগের থেকে বেশ সাহসী হয়ে উঠেছে সে। কারন ঈশিতা তার সংস্পর্শে আসতে পারছে না। আরিফ সেখান থেকে পালাতেও পারছে না। চারিদিকে দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে ‌। যেনো এক ভয়ের কুয়োই ডুবে আছে সে। ঈশিতা শূন্যে ভাসছে আরিফের চারি ধারে। মুখে তার ভয়ংকর হাসি, চোখে অগ্নি শিখা ।

ঈশিতার তন্ত্র শক্তি দিয়ে ঝড় আরো দ্বী গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। আরিফ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। হঠাৎ ফ্লোরে নজর যেতেই সিয়াম ভাইয়ের সেই শেষ ডাইরি টা চোখে পড়ে। 

বেশ চমকে উঠে আরিফ। "_ আরে এই ডাইরি টা তো মির্জা বাড়িতে থাকার কথা। আমি তো সেখানেই এই ডাইরি টা রেখেছিলাম। তাহলে এখানে আসলো কেমন করে?

আরো বেশি ঘাবড়ে যায় তার নিজের বাবা মায়ের খন্ড বিখন্ড লাশ দেখে। তার পাশেই বিভৎস অবস্থায় পড়ে আছে তার বাবা মির্জা হারুন অর রশিদ ও মা সালেহা বেগমের মৃত দেহ। তাদের চোখ জোড়া উপরানো । আরিফের হৃদয় ফাটা চিৎকারে পুরো বাড়িটা উত্তল হয়ে পড়েছে। ঈশিতার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিফ। রাগে তার দেহের প্রতিটি শিরা-উপশিরার র*ক্ত টগবগ করছে। "_ ডাইনি তুই এটা কী করলি? যেই মা তোকে নিজের মেয়ের মত আদর করেছে তাকে মারতে একটুও হাত কাপলো না তোর? যেই বাবা তোকে সারা জীবন পুত্র বধু হিসেবে রাখতে চেয়ে এক ছেলের মৃত্যুর পর অন্য ছেলের অমতে তোকে পুনরায় বিয়ে দেয় সেই পিতাকে কিভাবে হত্যা করলি?

ঈশিতা আরিফের কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না। "_ আমি হিংস্র। কারো প্রতি মায়া নেই আমার। আমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে আমি যা খুশি করতে পারি । 

এই বলে ঈশিতা বিকট শব্দে হাসতে থাকে। আরিফ রেগে আগুন হয়ে উঠেছে। "_ আরে ডাইনি তুই কোন ভালোর কথা বলছিস? তোর ভালোবাসার মানুষ সাঈদ যদি সত্যিই পুনরায় জীবিত হতো তবুও সে একটা খারাপ আত্মা হয়ে ফিরবে। এটা কিভাবে ভালো হতে পারে? 

ঈশিতা আরিফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।"_ যে ভাবেই ফিরুক, সে তো ফিরবে! প্রতিদিন এক জোড়া চোখ দিলে ওর আত্মা বারো ঘন্টা আমার সাথে থাকে। ৩০ জোড়া পূর্ণ হলে সাড়া জিবন থাকবে। 

ভাবতেই আশার ঝলক ফুটে উঠেছে ঈশিতার চোখে।


আরিফের নজর আবার সেই ডাইরিটার দিকে পড়ে। হাওয়ার ঝাপটায় ডাইরিটার পাতা উল্টে আছে। হয়তো ডাইরিটা আরিফ কে কিছু বলতে চাচ্ছে। আরিফ দেরি না করে দৌড়ে ডাইরি টার কাছে যায়। দ্রুত ডাইরিটা হাতে তুলে নেয়।

র*ক্তিম কালি দিয়ে লেখা আছে "ঈশিতার সব থেকে বেশি পছন্দের জিনিস পুড়িয়ে দাও" ।

আরিফ প্রচন্ড ঘাবড়ে আছে। এখনো অনেক কিছু অস্পষ্ট হয়ে আছে তার কাছে। আরিফের কাছে কেনো ঈশিতা আসতে পারছে না ? তার কোনো ক্ষতি কেনো করতে পারছে না? সব কেমন তালগোল পাকিয়ে ফেলছে আরিফ। ঈশিতা আরিফের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হচ্ছে বার বার। 

হঠাৎ আরিফের পকেট থেকে এক উজ্জ্বলিত রশ্মি বের হতে থাকে। তখনই আরিফের মনে পড়লো সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা ।

সোহেল কে দাওয়াত দেওয়ার পর মূহুর্তে আরিফ বাজার করতে বের হয়। রাস্তায় হঠাৎ একটা অদ্ভুত ফকিরের সাথে দেখা হয় তার। হ্যাংলা পাতলা চেহারা লোকটার। মনে হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে কিছু খেতে পায়না। আরিফ আগে থেকেই বেশ দয়ালু স্বভাবের। তাই লোকটার পরিস্থিতি দেখে বেশ মায়া হলো তার। পকেট থেকে কয়েক শত টাকা হাতে ধরিয়ে দিতেও নিতে অস্বীকার করেন লোকটা। "_ এ কেমন ফকির রে বাবা ? এত গুলো টাকা দিলাম তবুও নিলো না।

বিরক্ত হয়ে আরিফ বিড়বিড় করে বলছিলো । তবুও সে লোকটাকে পুনরায় বললো । "_ চাচা কিছু না নিলেন। কিন্তু আমার সাথে বসে কিছু খেতে তো পারেনই।

লোকটা লাজুক হাসি দিলো । মুখের ভঙ্গিমা দেখে বুঝা গেলো সে রাজি আছে। আরিফ লোকটাকে সাথে নিয়ে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে। দুজনে পেট ভরে খেয়ে লোকটার হাতে পুনরায় টাকা দিলে সে নেয়। বিনিময়ে আরিফের হাতে একটা মাদুলি (তাবিজ) দেয় লোকটা। বিদায় বেলা বলেও দেয় এই তাবিজ টি সব সময় তার সাথে রাখতে।

"_তারমানে সেই লোকটার তাবিজ আজ আমাকে রক্ষা করছে? আর তাই ঈশিতা আমার সংস্পর্শে আসতে পারছে না!

হঠাৎ ঝড়ের প্রচন্ড ধাক্কায় আরিফ ছিটকে পড়ে যায়। পকেট থেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে তাবিজ টিও ছিটকে পড়ে যায়। আরিফ প্রান পনে তাবিজ টি খুঁজতে থাকে। কিন্তু আশে পাশে তাবিজ টি নেই। ঈশিতা এই সুযোগে আরিফ কে শূন্যে ছুড়ে ফেলে দেয়। বেশ কয়েক বার এক দেয়াল হতে অন্য দেয়ালে পালাক্রমে ছুড়ে ফেলে আরিফ কে। হঠাৎ সাঈদের কফিনের পাশে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় আরিফ। সাথে পকেটে থাকা সেগারেট ও লাইটার। আরিফের হঠাৎ মনে পড়ে যায় ঈশিতার সব থেকে বেশি পছন্দের জিনিস তো তার ভালোবাসার মানুষ সাঈদ। 

আরিফ লাইটার হাতে নিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। লাইটার জ্বালিয়ে ঈশিতার সামনে হাত উঁচিয়ে ধরে। ঈশিতার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে।

"_না আরিফ তুমি এটা করতে পারো না। আমি তোমার ক্ষতি করেছি, তুমি আমায় যা খুশি করতে পারো । কিন্তু দোহাই সাঈদের কোনো ক্ষতি করো না।

আরিফ ঈশিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। ।"_ দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় ভুলবো ভেবেছো ? আজ তোমার সব খেল খতম ঈশিতা।

লাইটার কফিনের গায়ে ছোঁয়াতেই দাও দাও করে আগুন জ্বলে ওঠে। পুরো বাড়িতে যেনো ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। ভূ কম্পনে ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়া শুরু করেছে। আরিফ দেরি না করে মা বাবার মৃত দেহের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু ভূ কম্পন এতটাই জড়ালো যে আরিফের চোখের সামনে তার বাবা মায়ের লাশ পড়ে থাকা ঘরটার ছাদ ভেঙে পড়ে। আরিফ নিজেকে বাঁচাতে বাইরের দিকে ছুটে যায়। কফিনের আগুন নেভাতে ঈশিতার গায়ে আগুন ধরে গেছে। আজ আর ঈশিতার রক্ষা নেই। আজই বন্ধ হবে এই মৃত্যুর খেলা ‌। স্পষ্ট হবে এই চোখের ভয়াবহ রহস্য।

বাড়ি থেকে বের হতেই বিকট শব্দে পুরো বাড়িটা ধ্বসে পড়ে।

আরিফ ক্লান্ত দেহ মাটিতে এলিয়ে দেয়। চোখ ভিজে আসছে বাবা মায়ের জন্য। আজ যে সে বড়ই একা ‌।কেউ রইল না যে তার। বুক ফেটে চিৎকার আসছে তার। নির্বাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িটার দিকে।

আজ ২০২২ সাল ।

এখনো আরিফ অগোছালো এলোমেলো চুলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই বাড়িটার দিকে। মির্জা বাড়িটাও বিধ্বস্ত প্রায়। আরিফের ঠিকানা এখন পথে ঘাটে। কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও সে মির্জা বাড়ি ও ভাঙা বাড়ির পাশে যাবেই। এটা যে তার নিত্য দিনের অভ্যাস। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাড়িটার দিকে।

সে যে এখন মানুষিক ভারসাম্য হীন।


*সিয়ামের একটা ভুলের জন্য তার পুরো পরিবারটা আজ শেষ। তাই কবি বলেছেন,,

ভাবিয়া করিও কাজ!

করিয়া ভাবিও না 


সমাপ্ত।


এই গল্পের কাহিনী সম্পূর্ণ কাল্পনিক।

0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন