নরপিশাচ_ফুফি পর্ব২ সাহিত্য_ডাইরি

নরপিশাচ_ফুফি

পর্ব২

সাহিত্য_ডাইরি



রাত তখন সাড়ে দশটা। তনু ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু অন্তরার চোখে ঘুম নেই। বুকের ভেতর কাঁপছে এক আশঙ্কার পাহাড়। মেয়ে কি সত্যি বলেছিল? নাকি ভুল বুঝেছে কিছু?


না, তনুর মুখের কান্না ছিল না সাজানো। তার টলটলে চোখে ছিল আতঙ্ক, অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা এক আর্তনাদ।

**"আমি আর ফুফির রুমে যাবো না, আম্মু! তুমি যদি মেরেও ফেলো, তবু না!"**

এই কথাগুলো যেন অন্তরার বুক চিরে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।


অন্তরা চোখের পানি মুছে তাকায় ঘুমন্ত মেয়ের দিকে। এতটুকু একটা মানুষ, তার মুখে এমন বড় কথা কেন?


সকালে আরিয়ান যখন অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, অন্তরা ধীরে ধীরে ঘটনাটা বলে।

প্রথমে আরিয়ান বিশ্বাস করতে চায়নি, বলেছিল:

**"তামান্না এমন না। আমার চোখের সামনে বড় হয়েছে। হিজাব পরে, নম্রভাবে চলে—তনু হয়তো ঘুমে কিছু দেখে ভয় পেয়েছে।"**


কিন্তু অন্তরা এবার চুপ থাকেনি।

**"তনু কোনোদিন এমন কথা বলেনি। আজ কেন বলবে? তুই যদি বিশ্বাস না করিস, তাহলে আমি নিজে গিয়ে প্রমাণ করব।"**


আরিয়ান চুপ করে থাকে।


দুপুরে অন্তরা শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলে,

**"মা, তনু কয়েকদিন ফুফির রুমে না ঘুমিয়ে আমাদের রুমেই থাকুক।"**


শাশুড়ি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন,

**"হঠাৎ কেন রে? আবার কী হলো?"**


অন্তরা কিছু না বলে শুধু বলে,

**"ও ভয় পাচ্ছে... বারবার কেঁদে ওঠে।"**


শাশুড়ি বলে দেন,

**"ভয়ের কিছু নেই, তামান্না তো এখনো নিজের পড়াশোনার দুশ্চিন্তায় আছে। এত ভাবিস না।"**


অন্তরা বুঝে যায়—এই লড়াই তাকে একা লড়তে হবে।


রাতে অন্তরা একটা ছোট ক্যামেরা বের করে। ওটা তাদের বাসার পুরোনো ওয়েবক্যাম। সে ঠিক করে, আগামী রাতে **তনুর ঘরের জানালার কোনায় সেট করে দেবে**। কোনো প্রকার অভিযোগ করার আগে প্রমাণ দরকার।


তনুকে আদর করে কাছে নিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে,

**"তুই কি আমাকে সব কথা বলেছিস, মা?"**

তনু মাথা নাড়ে। ফিসফিস করে বলে,

**"ফুফি বলে কাউকে বললে, আম্মুও আমাকে ছেড়ে দেবে..."**


অন্তরার বুকটা হাহাকার করে ওঠে। সে তনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,

**"মা, আমি সব সময় তোর পাশে আছি। কেউ তোকে আর কষ্ট দিতে পারবে না। কথা দিচ্ছি।"**


তনু কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু অন্তরা জানে—ঘুম নয়, এটা এক বাচ্চা মেয়ে’র ক্লান্তি, আতঙ্ক, আর ভরসার এক নিঃশ্বাস।


পরদিন রাতে, ক্যামেরা সেট হয়। অন্তরা নিজে জেগে থাকে।

রাত ১টার দিকে, ক্যামেরায় এক নড়াচড়া ধরা পড়ে।

চোখ কুঁচকে সে দেখে, **তামান্না ধীরে ধীরে তনুর পাশে বসে—তার গায়ে হাত রাখে, কানে কানে কী যেন বলে...**


অন্তরার হাত কাঁপে। চোখ ভিজে ওঠে।

**আজ আর সন্দেহ নেই। আজ থেকে যুদ্ধ শুরু।**


*"একজন মা যখন বিশ্বাস করে, তখন সত্যের পায়ের নিচে মাটি জন্মায়।"*

*"এখন, তনুর জন্য একটা পৃথিবী বদলাতে হবে..."*


নিশ্চয়ই। নিচে “**নরপিশাচ ফুফি**” গল্পটির **পর্ব ৩: সত্য প্রকাশের প্রথম আলো** তুলে ধরা হলো।

এই পর্বে অন্তরা একজন মায়ের সাহস, স্বামীর দ্বন্দ্ব, এবং সমাজের চোখ রক্ষা করেই কিভাবে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে এগোয়—তা দেখানো হয়েছে।


সকাল সাড়ে আটটা।


আরিয়ান অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, এমন সময় অন্তরা পেছন থেকে এসে ধীরে গলা নামিয়ে বলে,

**"আজ অফিসে যেতে হবে না। তোমাকে কিছু দেখতে হবে..."**


আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

**"আবার নতুন কী হলো?"**


অন্তরা তার ফোনটি বাড়িয়ে দেয়।

রাতের রেকর্ড করা ভিডিও।


📽️ ভিডিওতে দেখা যায়,

তামান্না ধীরে ধীরে ঘুমন্ত তনুর পাশ ঘেঁষে বসছে...

তার গায়ে হাত রাখছে...

তনু অস্বস্তিতে নড়ছে, চোখ খুলছে...

চোখে পানি... মুখে চাপা কান্না...

আর ভিডিওর শেষদিকে, তামান্না ফিসফিস করে বলছে:

**"চুপ চুপ... কারো কাছে বলবি না... চকলেট দেবো!"**


আরিয়ান হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।

তার মুখ শুকিয়ে যায়। ঠোঁট কাঁপছে।


**"না... না... এটা তামান্না হতে পারে না... এটা কার কারসাজি..."**


অন্তরা এবার শান্ত গলায় বলে,

**"ভাইয়ের প্রতি বিশ্বাস এক জিনিস।

আর মেয়ের আতঙ্ক, তার কান্না... সত্যের আরেক নাম।

তুই এখন যা দেখলি, ওটাই বাস্তব।"**


--ভাঙনের শুরু


আরিয়ান ধীরে ধীরে মেঝেতে বসে পড়ে।

তার গলা দিয়ে বের হয়,

**"আমি বোনটাকে চোখে তুলে রাখতাম।

ও কি পারলো এমন কিছু করতে?"**


অন্তরা চুপ।

সে জানে, সমাজের গা ঢাকা দিয়ে লজ্জা চাপা দিয়ে দিলে ভবিষ্যতে আরও তনুদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।


সে ধীরে বলে,

**"তুই এখন শুধু স্বামী নই, বাবা।

তনুর পাশে দাঁড়াতে হবে।"**


আরিয়ান তাকিয়ে থাকে স্ত্রীর চোখে।


--পরিবারে ধাক্কা


বিকেলে, অন্তরা শাশুড়ির কাছে যায়।

শাশুড়ি তখন রান্নাঘরে।


**"মা, কিছু বলব..."**

অন্তরা ভিডিওটা দেখায়।


শাশুড়ির হাত থেকে চামচ পড়ে যায়।

**"না না না! এ হতেই পারে না। তামান্না আমার মেয়ে!"**


**"আর তনু?"** অন্তরা জবাব দেয়।

**"সে কি আমাদের মেয়ে না?"**


শাশুড়ি কাঁদে। তারপর জোরে বলে ওঠে,

**"এই কথা ঘরের বাইরে গেলে... কী হবে বলো? পাড়া-প্রতিবেশী মুখ চাওয়ার মতো রাখবে না!"**


**"আর যদি চুপ থাকি, তাহলে একজন শিশু নিজের ক্ষত নিয়ে বাঁচতে শিখবে।

একজন অপরাধী আরও বেপরোয়া হবে।

আর একজন মা সারাজীবন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।"**


---আইন ও ন্যায়বিচারের পথ


আরিয়ান ও অন্তরা মিলে রাতে **লোকাল চাইল্ড প্রোটেকশন হেল্পলাইন**-এ ফোন করে।

পরদিন সকালে **মনোবিজ্ঞানী এবং নারী ও শিশু সহায়তা কেন্দ্র** থেকে প্রতিনিধি আসে।


তনুকে আলাদাভাবে নিয়ে গিয়ে কথা বলে মনোচিকিৎসক।

সে স্বীকার করে—**ফুফি প্রতিদিন রাতে ওকে কষ্ট দিত। ভয় দেখাত। আদরের মোড়কে অন্যায় করত।**


ডাক্তার এসে অন্তরাকে বলে,

**"আপনার মেয়ে সাহসী। আর আপনি তার সবচেয়ে বড় ঢাল।

অনেকেই এসব চেপে যায়, আপনি তা করেননি। এই মেয়ের ভবিষ্যত রক্ষা পেল।"**


তামান্নাকে থানায় ডাকা হয়।

প্রথমে সে অস্বীকার করে।

কিন্তু ভিডিওর প্রমাণ, তনুর বয়ান, চিকিৎসকের রিপোর্ট—সবকিছু সামনে আসার পর সে আর কথা বলতে পারে না।


পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় তাকে।


আরিয়ান আদালতের পেছনে দাঁড়িয়ে শুধু বলে,

**"আমি একজন ভাইকে হারালাম... কিন্তু একজন বাবাকে খুঁজে পেলাম।"**


অন্তরা তনুকে বুকে জড়িয়ে ধরে,

**"মা, আজ থেকে কেউ আর তোকে আঘাত করতে পারবে না।"**


*"সত্য চাপা পড়লেও চিরকাল চাপা থাকে না।

একটি শিশুর কান্না, এক মায়ের সাহস—এই সমাজ বদলায় সেখান থেকেই।"*


চলবে...


⭕৩য় পর্ব লিংক 


0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন