পর্ব: ৪
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
ডালির ঠোঁট ফাঁক করে অচেনা কণ্ঠে উচ্চারণ হয়েছিল:
> “মঞ্জুরা পানি চায়...”
আমি তখনো স্তব্ধ। এ যে ডালি না —
ওর শরীর, ওর চোখ, ওর স্পর্শেও এখন আর সেই পরিচিত উষ্ণতা নেই।
কেমন যেন একটা **আলগা শীতলতা** ছুঁয়ে থাকছে ওর চারপাশ।
চিঠির বাক্সটা আবার খুললাম।
ভেতরে পাতার পর পাতা, ধুলোপড়া পুরনো খাম — সবগুলোতে একই হাতের লেখা,
একই স্বর — **প্রেম, অপেক্ষা… আর শেষে ঘৃণা।**
একটা চিঠির খাম খুলতেই ঘরের বাতাস হঠাৎ ভারী হয়ে গেল।
হলদে কাগজের পৃষ্ঠে লেখা ছিল—
> “তুমি বলেছিলে, বিয়ে করবে।
> আমি বিশ্বাস করেছিলাম।
> তুমি যখন আসোনি, আমি নিজেই এসেছিলাম…
> তোমার ঘরের পাশে, তোমার বিছানার নিচে আমার শেষ নিঃশ্বাস।
> এখন তুমি কারো হবেই না।”
আমি বুঝে গেলাম—
**মঞ্জুরা মরেনি দূরে কোথাও,
মরেছে এখানেই... এই ঘরেই।**
📿 আমি পিসিমাকে ডাকতে ছুটে যেতে চাই, দরজা খুলি—
দেখি বাইরে নেই কিছুই। ঘরের দরজার ঠিক বাইরে কালো কালি দিয়ে আঁকা অদ্ভুত চিহ্ন।
চিহ্নের নিচে লেখা —
**"ঘর ভাঙলে আত্মা ছিঁড়ে যাবে।"**
আমি ফিরে এসে দেখি ডালি বিছানার কোণে বসে আছে,
চোখ দুটো বন্ধ, ঠোঁট নড়ছে না — তবু **ঘর জুড়ে ওর গলা ভেসে আসছে**।
> “তুই মিথ্যা বলেছিলি।
> তোর কথা আমি বিশ্বাস করেছিলাম, ও আমার শরীর চেয়েছিল… প্রেম না।
> এখন আমি তোর প্রতিটি রাত নেব, প্রতিটি স্পর্শ।
> তুই যত ভালোবাসবি, আমি তত দহন করব!”
আমি এগিয়ে গিয়ে ওর গায়ে হাত রাখতেই…
🔥 হঠাৎ ওর শরীর জ্বলতে শুরু করল! না, আগুনের শিখা নয় —
একটা ধোঁয়া উঠছে, গরম পাথরের ওপর জল পড়লে যেমন শব্দ হয় তেমন শোঁ শোঁ শব্দ!
আমি ভয়ে পেছনে সরে আসি।
ডালির ঠোঁটে অশুভ হাসি— ঠোঁট বেয়ে রক্ত!
— “মনে পড়ে? তুমি প্রতিশ্রুতি ভেঙেছিলে। আমি এসেছি… কথা রাখতে।”
**আমি এবার নিশ্চিত — ওর মধ্যে আত্মা ভর করেছে, এবং এই আত্মা চায়… কিছু ফেরত। হয় প্রেম, না হয় প্রতিশোধ।**
ঘরের দেয়ালজুড়ে আগুনে দাগ ওঠে—
পুরো ঘরটা যেন মঞ্জুরার ডায়েরি হয়ে উঠেছে।
একেক দেয়ালে লেখা উঠে আসে নিজে নিজেই—
> “আমি জানালার ও পাশে অপেক্ষা করেছি।”
> “সে হাত ধরেছিল — কিন্তু ছিল অন্য নামের দুঃখ।”
> “ডালিকে ছাড়লে মাফ পাবি।”
আমি একটানা কাঁপছি। আর ডালির ঠোঁটে নিঃশ্বাসে ভেসে আসে…
> “তোমার যেটুকু ছিল, সেটাও আমি নিচ্ছি।”
> "আমি এসেছি পুরোটা নিতে… এই বউ নয়, এই ঘর নয়, **তুমি নিজে!"**
কোন প্রেমিক প্রতিশ্রুতি ভেঙেছিল?
কে ছিল মঞ্জুরার ভালোবাসা — আমি, না আমার রক্ত?
আর এই পৈতৃক বাড়ির দেয়ালগুলো এত বছর ধরে কী লুকিয়ে রেখেছিল?
"তোমার যেটুকু ছিল, সেটাও আমি নিচ্ছি..."
ডালির ঠোঁটে সেই অভিশপ্ত কণ্ঠস্বর রক্ত শীতল করে দেয় আমাকে।
ও কি আমার স্ত্রী? না কি এখন সে মঞ্জুরা?
আমি বুঝে উঠতে পারছি না।
আমি আর বসে থাকতে পারলাম না।
ঘর থেকে ছুটে বের হলাম। ছুটে গেলাম নিচে —
পিসিমার ঘরের দরজায় কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে কাঁপা কণ্ঠে ডাক এলো,
— "তুই শুনেছিস, না দেখেছিস?"
— "কে ছিল পিসিমা? কে এই মঞ্জুরা?"
পিসিমার চোখে পানি জমে উঠলো।
সে কাঁপা গলায় বলে উঠলো…
> “ও ছিল এই বাড়িরই মেয়ে।
> আমার ছোট ভাইয়ের ছাত্রী। নাম ছিল মঞ্জুরা।
> গরীব ঘরের মেয়ে হলেও ছিল মেধাবী আর অপূর্ব রূপবতী।
> ওর চোখে স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবার, প্রেমে পড়েছিল আমার ভাইয়ের...”
আমি স্তব্ধ।
— "মানে? আমার বাবার?"
পিসিমা চোখ নামিয়ে বললেন—
> “হ্যাঁ, তোর বাবা... নাসির।
> মঞ্জুরা তার প্রেমে পড়েছিল।
> ওরা দেখা করত এই ঘরেই। ফুলদানি, আয়না, সেই চিঠিগুলো— সব সেই সময়ের।
> কিন্তু নাসির শেষ পর্যন্ত বিয়ে করে অন্যকে… তোর মাকে।”
> “মঞ্জুরা তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
> কিন্তু নাসির মানেনি।
> এক রাতে ঝড়ের সময়… সে ওই ঘরের জানালার পাশে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়…”
আমার পায়ের নিচে থেকে যেন মাটি সরে যায়।
আমার বউ ডালি,
আমার ফুলসজ্জা,
আমার ভালোবাসা —
সবই কি সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি ভাঙার খেসারত?
পিসিমা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন,
— “এই ঘর আমরা তালা দিয়ে রেখেছিলাম।
তুই আসার কথা শুনে খুলেছিলাম।
আমি ভাবিনি… মঞ্জুরা এখনো এখানে থাকবে।
তবু থেকে গেছে সে… প্রতীক্ষা করে।”
📿 আমি কাঁপতে কাঁপতে বলি,
— “তাহলে আমি কী করবো? ডালিকে কি হারাতে হবে?”
পিসিমা একটানা তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে।
তার চোখে তখন শুধুই একটা কথা জ্বলজ্বল করে—
> **“তুই যদি নিজের রক্ত, নিজের বাবার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত না করিস—
> তাহলে ডালিকে সে আর ফিরিয়ে দেবে না।”**
আমি ফিরে আসি ঘরে।
ঘর জুড়ে অন্ধকার, শুধু জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ডালি।
কিন্তু আমি জানি,
**এ ডালি না... এটা মঞ্জুরা।**
সে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়, ঠোঁটে সেই বিদ্রুপের হাসি।
— “শেষবারের মতো বলছি... আমার জায়গা ছেড়ে দে। নয়তো তুই হারাবি সব... সবকিছু।”
চলবে.....
মঞ্জুরাকে তাড়াতে পারবে কি?
নাকি ভালোবাসার নামে আত্মা চাইছে নতুন শিকার?
শুরু হবে মৃত্যুর সঙ্গে এক অলৌকিক দ্বন্দ্ব।
৪থ পর্ব লিংক
https.www.partfourrshdhfzhgshjv.com
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন