নরপিশাচ ফুফি
পর্ব ৩
তনুর প্রথম কাউন্সেলিং সেশন
চাইল্ড প্রোটেকশন সেন্টারের রঙিন ঘরটা শিশুবান্ধব।
কোণে খেলনা, দেয়ালে রঙিন ছবি।
ডা. নওরীন নামে এক চাইল্ড সাইকোলজিস্ট তনুর সামনে বসে।
স্নেহভরা চোখে বলে,
**“তনু, তুমি অনেক সাহসী। আজ আমরা খেলব, আর গল্প বলব।”**
তনু ধীরে ধীরে খুলে ফেলে নিজের ভয়।
বলে—
**“ফুপি বলত এসব সবাই করে। মা জানতে পারলে নাকি আমাকে মারে… কিন্তু মা তো আমায় বুকে নিয়েছে!”**
নওরীন হেসে বলেন,
**“তোমার মা একজন আসল নায়িকা। তুমি তার মেয়ে বলে গর্বিত হও।”**
আরিয়ান ও অন্তরা একসাথে থানায় গিয়ে মামলা করে।
**ধারা ৯ (১) শিশু নির্যাতন আইন**,
**ধারা ২২: শিশু যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ**
এই ধারা অনুযায়ী **তামান্নাকে আদালতে তোলা হয়**।
অভিযুক্তের আইনজীবী বলে,
**“তনু ছোট, তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য না। ভিডিও প্রাইভেসির লঙ্ঘন!”**
কিন্তু বিচারক রায় দেন—
**“শিশুর অধিকার রক্ষা সবচেয়ে বড় আইন।
ভিডিও, চিকিৎসকের মনোবিশ্লেষণ, এবং শিশুর বয়ান যথেষ্ট।”**
তামান্নার **প্রাথমিক জামিন বাতিল** হয়।
তাকে **জুভেনাইল কাস্টডি**তে পাঠানো হয়।
---সমাজের দ্বিমুখিতা
পাড়ার কিছু মানুষ ফিসফিস করে বলে,
**“আহারে, নিজের ননদের নামে মামলা! কতটা সাহস লাগে?”**
কেউ কেউ বলে,
**“এগুলো মিথ্যা কথা। এখনকার বাচ্চারা তো অতিরিক্ত নাটক শেখে।”**
অন্তরা কোনো উত্তর দেয় না।
শুধু মনে মনে ভাবে—
**"যারা অন্যায়ের পাশে থাকে, তারা চুপ থেকেও অপরাধী।"**
তবে একটা অদ্ভুত জিনিস ঘটে।
একজন মা এসে অন্তরার হাতে হাত রেখে ফিসফিস করে বলে,
**“আমার ছেলেও একইভাবে শিকার হয়েছিল...
কিন্তু আমি চুপ করে গিয়েছিলাম।
আপনি যা করেছেন, তা সাহসের কাজ। স্যালুট আপনাকে।”**
---
তনুর আশ্বাস
এক সন্ধ্যায় তনু খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলে,
**“আম্মু, আমি আর ভয় পাই না। আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম তুমি আমাকে রক্ষা করছো।”**
অন্তরা জবাবে বলে,
**“তুই শুধু আমার না, তুই সত্যের প্রতিনিধি।
তোর চোখের জল আজ অনেক মেয়েকে কথা বলার সাহস দেবে।”**
শাশুড়ি ধীরে ধীরে মেনে নেয়।
তামান্নার জন্য তার কষ্ট হয়, কিন্তু তনুর পাশে দাঁড়ায়।
বলে—
**“আমার ভুল ছিল ওকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা।
তনু, তুই আমার নাতনি না, আমার সাহস।”**
আদালতের পেছনের করিডোরে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করে,
**“আপনি সামাজিক মান-সম্মানের কথা ভাবলেন না?”**
অন্তরা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন:
**“শিশুর শরীর নয়, সমাজের মানসিকতা নগ্ন।
আমি আমার মেয়েকে ভালোবাসি—এটাই যথেষ্ট সম্মান।”**
*"সত্যের বিরুদ্ধে যত বড়ই দেয়াল গড়া হোক, এক শিশুর কান্না আর এক মায়ের সাহস সেটা ভেঙে দিতে পারে।"*
আদালতের রায়: ন্যায়বিচারের সূর্যোদয়
বিচারক কক্ষে চুপচাপ বসে আছে সবাই।
আরিয়ান হাত ধরে আছে অন্তরার।
তনু মায়ের কোলে বসে। চোখে ভয় নেই, সাহস আছে।
বিচারক বলেন—
> **“অভিযুক্ত তামান্না, আপনি একজন ৬ বছর বয়সী শিশুর ওপর ধারাবাহিক যৌন সহিংসতা করেছেন।
> আদালতের কাছে আপনার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।”**
রায় ঘোষণা
* তামান্না (১৮) কে **৭ বছর কারাদণ্ড**,
* **৩ লক্ষ টাকা জরিমানা** (শিশুর পুনর্বাসন ও কাউন্সেলিং ফান্ডে যাবে)।
* **আজীবন শিশুদের কাছ থেকে আইনি দূরত্বের নির্দেশ।**
তামান্না চিৎকার করে কাঁদে।
তার মা-বাবা অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
কিন্তু বিচারক শেষে বলেন—
> **“এই রায় কেবল এক শিশুর জন্য নয়—এই সমাজে থাকা আরও শত শিশুর মুখের ভাষা,
> যাদের কণ্ঠ কেউ শোনে না।”**
তনু আবার স্কুলে যাচ্ছে।
তবে এবার সবার চোখে ভিন্ন কিছু।
প্রথমদিকে কিছু শিশুর মা বলেছিল—
**“তনুর সঙ্গে খেলার দরকার নেই।”**
কিন্তু দিন দিন, সবাই তনুকে ভালোবাসতে শুরু করে।
কারণ তনুর মধ্যেই সাহস, সরলতা, আর একটা নতুন গল্প লুকিয়ে থাকে।
স্কুলে আয়োজিত হয় ‘**সাহসী শিশু দিবস
তনুকে মঞ্চে ডাকা হয়।
শিক্ষক বলেন,
**“এই শিশুটি আমাদের শিখিয়েছে—ভয় পেলে থেমে যেও না,
কারণ সত্য সবসময় পাশে থাকে।”**
---
অন্তরার মঞ্চে বক্তৃতা: "এক মায়ের স্বীকারোক্তি"**
নারী অধিকার সংগঠন অন্তরাকে আমন্ত্রণ জানায়।
স্টেজে উঠে অন্তরা বলে—
> **“আমার মেয়ের শরীর না, তার সাহস আক্রান্ত হয়েছিল।
> কিন্তু আমরা যদি মুখ বন্ধ রাখি,
> তাহলে অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াই।”**
তার কথা শুনে মঞ্চের সামনে বসা অনেক মা কাঁদে।
একজন মা উঠে দাঁড়িয়ে বলে—
> **“আপনার কণ্ঠ আমাদের মেয়েদের রক্ষা করেছে।
> আপনি শুধু মা না—আপনি একটি বিপ্লব।”**
---
মানসিক চিকিৎসা এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি**
তামান্নার জন্য আদালত নির্দেশ দেয়—
**মানসিক পুনর্বাসন চিকিৎসা, মনোবিশ্লেষণ ও কাউন্সেলিং বাধ্যতামূলক।**
ডা. নওরীন বলেন—
**“এমন অপরাধীরা জন্মায় না, তৈরি হয়—
তাদের পরিবারে, সমাজে, চুপ করে থাকা মানুষের মাঝে।”**
ঘরের দেয়ালে তনুর আঁকা একটা ছবি।
একটা মেয়ে, তার পাশে মা, একসাথে দাঁড়িয়ে।
ছবির নিচে লেখা—
**“ভয় পেলে বলো। চুপ থেকো না।”**
*"শিশুরা পৃথিবীর বিশ্বাস—আর এক মা যদি ভেঙে পড়ে,
তাহলে এই পৃথিবীর সত্য গুলো অন্ধকারেই থেকে যাবে।
অন্তরা তা হতে দেয়নি। তাই সে শুধু এক মা নয়,
একটি বিপ্লবের নাম।"*
সমাপ্ত
📌"এই গল্পটি কোনো কল্পনা নয়। এমন হাজারো তনু প্রতিদিন সমাজের নীরব কোণে হারিয়ে যায়।
অন্তরা যেন প্রতিটি মায়ের ভেতরে জেগে ওঠে — এটাই গল্পের উদ্দেশ্য।"
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন