হলুদ_শহরের পর্ব_২ সাহিত্য ডাইরি

হলুদ_শহরের 

পর্ব_২

সাহিত্য ডাইরি 




নিপুণ এক ব্যাগ বাজার নিয়ে বের হতেই দেখতে পেল কিছুটা দূরে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্ত। চোখ-মুখ ফুলে কিছুটা লাল হয়ে আছে, যেন ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানেই এসেছে। নিপুণ সুপ্ত'র দিক থেকে নজর সরিয়ে নিজ পথে হাঁটা ধরল।

সুপ্ত শাহবাগ থেকে ফিরেছে আটটা নাগাদ। মিনহাজ সাহেব ফজরের সময়ই তার ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হতেই দেখে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির দিকে আনমনে চেয়ে থাকার সময়ই হঠাৎ তার মাথায় শাহবাগ যাওয়ার ভূত চেপেছিল। বাবাকে ছাতার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দীপককে কল করে মসজিদের সামনে আনায়। ঘুম চোখে দীপকও ছুটতে ছুটতে এসে ব্যস্ত কণ্ঠে বলেছিল, 

--"কীরে? ইমার্জেন্সি ডাকলি কেন?"

সুপ্ত তখন বলেছিল,

--"শাহবাগ যাব, ফুল আনতে। চল।"

দীপকের তখন পুরো জন্মের রাগ একসাথে জড়ো হয়েছিল সুপ্তকে ঝাড়ার জন্য। শালা ফুল কিনতে যাওয়ার জন্য দীপকের এত সাধের ঘুমে জল ঢেলে দিলো? ফুল আনা কোনো ইমার্জেন্সি কাজের মধ্যে পড়ে? দীপকের ইচ্ছে হচ্ছিল বড়োসড়ো পাথর দিয়ে সুপ্তের মাথা ফাটিয়ে দিতে৷ দীপক অবশ্য থামেনি, পুরোটা পথ সুপ্তকে সে বকেই গেছে। আর সুপ্ত? সে তো যেন কোনো কথা কানেই নেয়নি। ময়লা ঝাড়ার মতো করে দীপককে এড়িয়ে গেছে। 

ফেরার পর সুপ্ত বাসায় গিয়ে ঘুম দিয়েছিল। আর দীপক মুখ ভার করে রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেরিয়েছে। তার চোখে এই বেলায় আর ঘুম ধরা দিলো না। হাঁটা-চলার মাঝেই দীপক নিপুণকে দেখতে পেয়েছিল বাজারে যেতে। তখনই দীপক নিজের মনের ঝাল পুরো দমে মেটানোর পরিকল্পনা পেল। সুপ্তকে কল দিয়ে বাজে ভাবে তার কাচা ঘুম ভেঙে দেয়। সুপ্ত যখন ঘুম ভাঙার অপরাধে দীপককে গা*লি দিলো তখন দীপক যেন সমস্ত জগতের শান্তি নিজের ভেতর খুঁজে পেল। গালির চাইতে কারো ঘুম ভাঙানোর মতো পৈশাচিক আনন্দ আর কী-ই বা হতে পারে?

সুপ্তও চটে ছিল বেশ। পরপর দুবার তার ঘুমে ব্যঘাত ঘটেছে। দীপক অবশ্য বেশি সময় নেয়নি সুপ্তকে নিপুণের ব্যাপারে জানাতে। সুপ্ত নিপুণের কথা শুনে দমে যায়। ছুটতে ছুটতে চলে আসে বাজারের সামনে। সুপ্তর উষ্কখুষ্ক অবস্থা দেখে দীপক পেটে হাত চেপে হাসছিল। প্রেমে পড়লে বীরের মতো পুরুষরাও বেড়াল বনে যায়। প্রেমের কতটা শক্তি যে একজন কঠিন মানুষকে সরল করে ফেলে। 

নিপুণ সুপ্তর পাশ কেটে যেতে নিতেই সুপ্ত তাকে শুনিয়ে বলল,

--"একজনকে জানাচ্ছি শুভ সকাল। তাকে রোদহীন ম্লান দিনে সুন্দর লাগছে।"

নিপুণের পা থমকে যায় সুপ্ত'র কথা শুনে। কথাটা যে তাকে বলা হয়েছে তা নিপুণ হাড়ে হাড়ে বুঝে নিয়েছে। সে পিছ ফিরে সুপ্তের দিকে তাকালো। সুপ্তের ফোলা চোখ তখনো নিপুণের দিকে। নিপুণ চাইতেই সুপ্ত খোলা এক হাসি দিলো। নিপুণ বলে ওঠে,

--"সমস্যা কী আপনার?"

সুপ্ত অবাক হওয়ার ভান ধরলো। বলল,

--"আমার সমস্যা? কিসের, কোথায়?"

--"তাহলে প্রথমে ফুল আবার এখন আমাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলা, এসব কী?"

--"ফুল আমি দিয়েছি, এটা ঠিক। তবে আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলেছি.. এর প্রমাণ কী? দীপক, আমি রিপোর্টার ম্যামকে কিছু বলেছি?"

দীপক হ্যাবলার মতো চেয়ে ছিল সুপ্ত'র দিকে। হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। তা দেখে সুপ্ত বলল,

--"যাহ, বাদ দে। তুই তো থাকিস অন্য খেয়ালে। নিপুণ, তুমি চাইলে ফ্রিতে তোমার বাড়ি অবধি বাজারের ব্যাগ পৌঁছে দিতে পারি।"

নিপুণ এতে কিড়মিড় চোখে তাকালো সুপ্তের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"আপনার মতো মানুষের থেকে উপকার পাওয়ার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই আমার নেই।"

নিপুণ চলে যেতে নিলে সুপ্ত পিছু ডাক দিয়ে বলল,

--"আমি কিন্তু থ্যাঙ্কিউ পাওনা আছি।"

নিপুণ থেমে পিছে ফিরে ভ্রু কুচকে তাকায়। সুপ্ত কিছু বলতে নিলে নিপুণ এবার আর না দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে যায়। নিপুণের সুপ্তকে এড়িয়ে চলা দেখে দীপক বলল,

--"তোকে তো পাত্তাই দেয় না।"

সুপ্ত একমনে নিপুণের যাওয়ার পানে চেয়ে আনমনে বলল,

--"এজন্যই তো তাকে ভালোবাসি।"

--"ডিভোর্সি মেয়ে তো তুই ডিজার্ভ করিস না সুপ্ত!"

সুপ্ত এবার চোখ লাল করে তাকালো দীপকের দিকে। সুপ্তের রাগ দেখে দীপক দমে গেল। সুপ্তের সামনে কিছুতেই "ডিভোর্সি" শব্দটা উচ্চারণ করা যায় না। সুপ্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"আর কখনো যাতে তোর মুখে এই শব্দ না শুনি।" 

সুপ্ত থেমে আবার বলল,

--"আজকে পার্টি অফিসে কোনো ঝামেলা নেই। এজন্য সাড়ে বারোটার আগে ভুলেও কল দিবি না। এবার কল করলে তোর হাতের ফোন ভাঙাচোরা অবস্থায় পাবি, গুড নাইট।"

সুপ্তের পুরো নাম মাহদী আরাভ সুপ্ত। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান সে। বাবা মিনহাজ সাহেব ব্যবসায়ী এবং তাদের থানার এক স্কুলের কমিটিতে আছে। সুপ্তের বড়ো ভাই মাহমুদ বিবাহিত, এখন অন্যত্র থাকছে চাকরির সুবাদে। মাহমুদ শুরু থেকেই কিছুটা ভীত এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ৷ আর সুপ্ত একদমই মাহমুদের বিপরীত। সে চরম ঝামেলা করার অদম্য সাহস নিয়ে জন্মিয়েছে। ঝামেলা, মাত্রাতিরিক্ত সাহস আর মুখ চালানোতে ভীষণ পটু সে। সুপ্ত চাকরি, ব্যবসার প্রতি ভীষণ উদাসীন। তবে উদাসীন ছেলেটার একটি স্বপ্ন ছিল; রাজনীতি করার। এজন্য ছাত্র বয়স থেকেই সে রাজনীতির সাথে একপ্রকার আঠার মতো লেগে আছে।

 মিনহাজ সাহেব একজন সৎ, শান্ত, নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। কিন্তু এই শান্ত মানুষের ঘরেই অসংখ্য বিচার এসেছে ছোটো ছেলের নামে। সুপ্ত বরাবরই অবাধ্য, চঞ্চল স্বভাবের ছেলে। তার মধ্যে আলাদা এক তেজ ছিল, যেই তেজের তীক্ষ্ণ ছায়াও কেউ মাড়াতে পারত না। মিনহাজ সাহেব যা অপছন্দ করেন সেটাই সুপ্ত আজীবন করে গেছে। আবার রাজনীতি বিষয়টাও তিনি ভীষণ অপছন্দ করেন। যতদিনে ছেলের ব্যাপারটা কানে আসল ততদিনে ঘটনা বহুদূর গড়িয়ে গেছে। সুপ্তকে মে*রে, ঘরে আটকেও দমিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। শেষমেষ মিনহাজ সাহেবের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। ছেলে যেই চতুর, বেপথে চলে যাবে সেই ভয়ও তাকে নাড়া দিচ্ছিল৷ এজন্য একপ্রকার বাধ্য হয়েই মেনে নিলেন, সঙ্গে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দিলেন যা সুপ্তের জন্য পালন করা খুবই কঠিন। তবুও সুপ্ত সেসব শর্ত দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নিলো। কিন্তু একটা শর্ত সে কিছুতেই মানতে চায় না। ওই যে, মা*রপিটের ব্যাপারটা। তার ভাষ্যমতে মা*র-পিট না করলে তাকে কেউ ভয় পাবে না। ভয় না পেলে রাজনীতি করে কী লাভ? রাজনীতির মজাটা তো ওই ভয়েই আটকে আছে। তখন মিনহাজ সাহেব রেগে বলেছিলেন, 

--"মজা না লাগলে করবে না রাজনীতি। তাও মা*-রপিট বন্ধ।"

সুপ্ত তখন মুখ ভার করে বলেছিল,

--"আচ্ছা, ঠিক আছে। কাউকে মা*রলে তার ব্যথায় মলম দিয়ে দিব। তাতে চলবে?"

সুপ্তের এহেম কথায় মিনহাজ সাহেব হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে মিনহাজ সাহেব সুপ্তের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলেন না। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন। 

সুপ্ত দীপককে বলেছিল যেন কল না করে। সেখানে সুপ্ত নিজেই দীপককে কল করলো। দীপক কিছুটা চমকে গিয়ে কল রিসিভ করল,

--"হ্যাঁ, বল।"

--"জা*য়ার গুলারে খুঁজে পাইছিস?"

--"বিকালের মধ্যে খবর পেয়ে যাব।"

--"বিকাল কেন? ঘুম থেকে উঠেই ওদের আপডেট চাই। যেখানেই দেখবি মে* হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে আসবি। তবে হ্যাঁ, হাত-পা যাতে ভালো ভাবে ভাঙে। আমি তিন-চার মাস ওদের হাসপাতালে পড়ে থাকতে দেখতে চাই, গট ইট?"

সুপ্তের কথা শুনে দীপক শুধু অবাক হয়। আজ অবধি সুপ্ত যতবার মা*রার আদেশ দিয়েছে ততবারই সুপ্ত ওদের ব্যথায় মলমেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এত অদ্ভুত কেন এই সুপ্ত? এই সুপ্তকে পড়া ভীষণ কঠিন।

------------------

নিশাতকে কোচিং-এ পাঠিয়ে নিপুণ তড়িঘড়ি করে নিজের অফিসের দিকে ছুটেছে৷ আইডি কার্ডটা কোনো রকমে নিজের গলায় ঝুলিয়ে অফিসের লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এই বিল্ডিংটার পাঁচ এবং ছয় তলা মিলিয়ে নিপুণের অফিস। অফিসে প্রবেশ করতেই নিপুণ ম্যানেজারের থেকে বেশ কিছু কড়া কথা শুনলো। ম্যানেজার দেরী করে অফিস আসা পছন্দ করেন না। নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে ম্যানেজারের শুনে তাকে সরি বলল এবং জানালো সে আর দেরী করে আসবে না। সেদিনের মতো নিপুণ কড়া কথা শোনার পালা শেষ হলো। নিজের ডেস্কে গিয়ে বসতেই নিপুণের পাশের ডেস্কে বসা কলিগ রিয়া নিপুণকে ফিসফিস করে বলল,

--"বুড়োটারে মনে হয় বউ খেতে দেয় না। এজন্য বাড়ির রাগ এখানে আমাদের উপর এসে ঝাড়ে; বদ-জাত লোক।"

রিয়ার কথা শুনে নিপুণের স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেল। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে যখন পরীক্ষা থাকত, তখন কোনো স্যার গার্ড বেশি দিলেই সহপাঠীরা নিজেদের মধ্যে বলত,

"স্যার মনে হয় বাসা থেকে ঝামেলা করে আসছে, এজন্যই আমাদের উপর এমন রাগ ঝেড়েছে।"

নিপুণ তখনো নীরব স্রোতা ছিল, এখনো আছে। সে রিয়ার কথা এড়িয়ে বলল,

--"বাদ দাও এসব, রিয়া। নিজের কাজ দেখো।"

রিয়া মুখ বাঁকিয়ে নিজের মনিটরের স্ক্রিনে নজর স্থির করলো। 

নিপুণের আজ নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় তেমন হলো না। নিত্যদিনের চাইতেও আজ বেশি কাজ পড়েছে তার। এর কারণ হয়তো অফিস দেরী করে আসা। এই পাঁচ তলায় মোট চার ডিপার্টমেন্ট কাজ করে। উপরে বাকি ডিপার্টমেন্টসহ খবর প্রচারের শুটিং স্পট রয়েছে।

 লাঞ্চের সময়ও আজ নিপুণ কাজ করছিল। এমন সময়ই তার স্থির ফোন ভাইব্রেশন করে ওঠে। নিপুণ ব্যস্ত হাতে টাইপিং-এর ফাঁকে একপলক তাকালো ফোনের স্ক্রিনে। নিশাত কল করেছে। নিশাতের কল দেখে নিপুণ ভ্রু কুচকালো, এই সময়ে নিশাত তো কখনো কল করে না। নিপুণ টাইপিং থামিয়ে নিশাতের কল রিসিভ করল।

--"হ্যাঁ, নিশাত। বল।"

--"বাবা কল করেছিল আপা।"

বাবার কথা শুনে নিপুণের মুখে যেমন আতঙ্ক ফুটে ওঠে, তেমনই গাম্ভীর্য। ভারী গলায় নিপুণ বলল,

--"হুঁ, তো?"

--"বাড়ির ঠিকানা চাইছিল।"


চলবে..................


বাবার কথা শোনার পর থেকেই নিপুণ কেমন অন্যমনস্ক, চুপসে গিয়েছে। কাজ ছাড়া কলিগদের সাথে এমনিতেও তেমন কথা বলে না। কিন্তু আজ কাজের কথা হুঁ, হা, না-তে সেরেছে। নিশাত কল করেনি এরপর। নিপুণ বিকালে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে। কাজ আজ তুলনামূলক বেশি থাকা সত্ত্বেও কাজ সময়ের আগে শেষ করে ফেলেছে। সঙ্গে যতটুকু কাজ বাকি ছিল সেগুলো বাসায় করে নিবে।

বাসে উঠেই দুই সিট একসাথে খালি পেল নিপুণ। তাই সে দ্রুত জানালার সিটটা দখল করে নিলো। ক্লান্ত মুখে একটু দমকা হাওয়া ছুঁয়ে দিলেই নিপুণ বড্ড স্বস্তি অনুভব করে। জানালার কাঁচটা টেনে খুলতেই হুড়মুড়িয়ে বাতাস ছুঁয়ে যায় তাকে। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি কয়েক ঢোঁক গিলতেই নিপুণ অনুভব করলো তার পাশে কেউ বসেছে। নিপুণ মুখে পানি নিয়ে পাশে ঘুরে তাকাতেই দেখল পাশে সুপ্ত বসে আছে। সুপ্তকে দেখে অসাবধানবশত নিপুণের গলায় পানি কিছুটা আটকে যায়। যার ফলস্বরূপ মুখে থাকা সব পানি সুপ্তের মুখে গিয়ে ছিটকালো। সুপ্ত সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে ফেলেছে অধরজোড়া চেপে। পরপরই কানে ভেসে আসল অট্টহাসির শব্দ।

এরকম এক বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে নিপুণ কল্পনাও করতে পারেনি। সে তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে রুমালটা বের করে সুপ্তের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

--"আমি অত্যন্ত দুঃখিত, এরকমটা হবে সত্যিই বুঝতে পারিনি।"

নিপুণের তখনো থেমে থেমে কাশি হচ্ছে। সুপ্ত দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয়। কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নিপুণের হাতের স্পর্শ পেয়ে সুপ্ত গলে যায়। সে সুন্দর করে রুমালটা দিয়ে নিজের মুখ মুছে নেয়। 

দীপকও বাসে উঠেছিল। সুপ্তের এ অবস্থা দেখে সে-ই ফিক করে হেসে দিয়েছিল। হাসতে হাসতে নিজ মনেই বলল,

--"আহারে বেচারা, প্রেম করতে গিয়ে যে কতকিছু সহ্য করতে হয়! সত্যি বস, তোর দারুণ ধৈর্য!"

সুপ্ত মুখ মুছে রুমালটা নিজের কাছে নিয়ে বলল,

--"এত বড়ো অকাজের জন্য রুমালটা আজ থেকে আমার হলো।"

সুপ্তের এ কথা শুনে নিপুণের মুখ থেকে দুঃখী ভাব উড়ে গেল। সে বোধহয় ভুলে গেছিল তার পাশে বসা লোকটি মোটেও সাধারণ ধাঁচের কেউ নয়। নিপুণ ভ্রু কুচকে বলল,

--"রুমাল দিয়ে কী করবেন?"

--"ভালোবাসার জিনিস যত্ন করে আগলে রাখব। রুমালটা এই মুহূর্তে আমার ভালোবাসা চাচ্ছে। ভালোবাসা দিতে আমি আবার কৃপণতা করি না।"

নিপুণের কুঁচকানো ভ্রু আরও কুচকে যায়। বিরক্তির শব্দ করে জানালার দিকে মুখ ফেরাল। মিনমিন করব বলল,

--"অসভ্য!"

--"কিন্তু আমি তো সভ্য। অসভ্যতামি কবে করলাম তোমার সাথে?"

নিপুণ চরম বিরক্ত হলো। আফসোস করলো কেন একে সরি বলল? পানি ফেলেছে ভালোই তো হয়েছিল। এখন যেন একদম মাথায় চড়ে আছে। নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"চুপ থাকবেন প্লিজ? আপনার আজেবাজে কথা শুনে মাথা ধরেছে।"

সুপ্ত অল্প করে হাসলো। নিপুণকে বিরক্ত করতে তার ভীষণ ভালো লাগে। পাশাপাশি বসেও কম আনন্দ হচ্ছে না তার। সুপ্ত নিপুণের কানের কিছুটা কাছাকাছি মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,

--"টিপে দিব?"

নিপুণ গরম চোখে তাকাল। বাস এতক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। সুপ্ত আর জ্বালালো না নিপুণকে। সুপ্ত বাসের বাইরে থেকেই দেখেছিল নুপুণের মলিন মুখ। এজন্য জেনে-শুনেই বাসে উঠেছে সে। এখন নিপুণ রাগের চোটে যেন ভুলে বসেছে মন খারাপের কথা। যাক, এতেই সুপ্তের স্বস্তি।

কিছুদূর যেতেই সুপ্ত আবার মুখ খুলল,

--"নিপুণ, একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।"

নিপুণ ভ্রু কুচকে তাকায় সুপ্তের দিকে। সুপ্ত হেসে বলল,

--"সদর হাসপাতালে চারজন নতুন ছাগল ভর্তি হয়েছে। প্রত্যেকের হাত-পা ভাঙা। ছাগলদের সুন্দর রূপে দেখে আসতে চাইলে যেতে পারো।"

নিপুণের চোখ কপালে উঠে গেল সুপ্তের কথা শুনে। চারজন ছাগল আর গতকাল রাতের সুপ্তের দেওয়া হুমকি; সব যেন নিপুণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। পরমুহূর্তেই নিপুণের চোখ-মুখে আতঙ্ক ফুটে ওঠে। অস্ফুট স্বরে বলল,

--"আপনি কী পাগল?"

--"ভালো কাজ করতে পাগল হওয়ার প্রয়োজন হয়?"

--"মা*-মা/রি ভালো কাজ?"

--"অন্তত খারাপ না। মেরে যদি খারাপ গুলোকে সোজা করা যায় তাহলে ক্ষতি কী? এছাড়া আমি ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ বলে কথা, আমারও তো সমাজ সেবার কথা চিন্তা করা উচিত তাই না?"

--"এটাকে সমাজ সেবা বলে নাকি সমাজকে উস্কে দেওয়া বলে?"

সুপ্ত অকপটে বলল, "সমাজ সেবা।"

--"খারাপকে ভালো করার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে।"

সুপ্ত চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,

--"আমারও আইন আছে। নিজস্ব আইন।"

নিপুণ আর কথা বাড়ায় না। এই লোকের সাথে কথা বললে কথা খামাখা বাড়বে। নিপুণ আবারও বাইরে নজর ফেরালো। কেন যেন তার ভেতর সেরকম খারাপ লাগা কাজ করছে না। গতকাল যারা বাজে ব্যবহার করছিল তাদের একটা শাস্তি অন্তত দরকার ছিল। নিপুণ এতটাও উদার মনের কেউ নয় যে অন্যায়কারীকে নিয়ে চিন্তা করবে বা তাদের মাফ করে দিবে।

 সে শুধু শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে ঝামেলাহীন থাকতে চায়। কোনোরকম ঝামেলায় জড়াতে চায় না। এটাই শুধু তার ভয়। এছাড়া আর কিছু না। তবে সুপ্তকে যতটুকু চিনেছে সে সহজে নিপুণের কথা সবার সামনে আনবে না। নিপুণের হঠাৎ মনে পড়ে যায় সেদিনের ঘটনা। যেদিন সুপ্তকে সে চড় মেরে বসেছিল। সেই বোকামির কথা ভাবতেই নিপুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 

নিপুণ বাড়ি ফিরতেই দেখল নিশাত দরজার খুলে সিঁড়ির আশেপাশে পায়চারী করছে। যেন সে নিপুণেরই অপেক্ষা করছিল। নিশাত তাকে দেখে খুশি হয়ে যায়। নিপুণ একপলক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জুতো খুলে নেয়। ভেতরে প্রবেশ করতে করতে নিশাতের উদ্দেশে বলল,

--"কী ব্যাপার নিশাত? আজ এত খুশি খুশি লাগছে যে?"

--"বলব, তার আগে ফ্রেশ হয়ে আসো!"

নিপুণ ফ্রেশ হতে চলে যায়। সন্ধ্যার জন্য হালকা-পাতলা নাস্তা বানাতে হবে। ফ্রেশ হয়ে, চেঞ্জ করে আসতেই নিপুণ দেখল দুই বাটি নুডুলস তার টেবিলের ওপর রাখা। নিশাত তার পাশেই অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে। নিপুণ অবাক হয়ে বলল,

--"কে দিলো নুডুলস?"

নিশাত মুচকি হাসে।

--"আমি বানিয়েছি আপা। তুমি যেভাবে কল কেটে দিলে তাতে মনে হচ্ছিল তুমি মন খারাপ করেছ। তাই ভাবলাম তোমাকে একটু খুশি করা যাক। ইভানের বড়ো ভাই দারুণ নুডুলস বানাতে পারে, আমাদের একদিন খাইয়েছিল। তার কাছেই শিখে নিয়েছি। আর ইউটিউবেও কিছু রেসিপি দেখেছি। এখন খেয়ে দেখো তো কেমন লেগেছে? উত্তেজনায় নিজেই টেস্ট করতে ভুলে গেছি।"

নিপুণ নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো ভাইটার দিকে। তার এই নিশাত যে বড়ো হয়ে গেছে তা তো সে খেয়ালই করেনি। ভাই এখন বড়ো বোনের হাসি-খুশির দিকটা খেয়াল রাখছে। সে কিসে খুশি, কিসে রাগ হতে পারে সেটাও ভাবে। নিপুণের চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো। ইচ্ছে করছে ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে বলতে, "তুই জগতের সবচেয়ে আদুরে ভাই নিশাত।"

ভাই-বোনের সম্পর্কটা খুব স্নিগ্ধ, সুন্দর হয়। এখানে যেমন ঝগড়া-ঝাটি, মার-পিট আছে তেমনই রয়েছে অন্তহীন ভালোবাসা, যা কেউ কেউ প্রকাশ করে আবার কেউ কেউ গোপন করে রাখে। নিপুণের চোখ-মুখে তৃপ্তি ফুটে ওঠে। ভাইকে নিয়ে বিছানায় বসে বলল,

--"একসাথে খাব চল।"

দুজন একসাথে খেতে বসেছে ঠিকই। তবে নিশাতের অনুরোধে নুডুলস প্রথমে মুখে পুরলো নিপুণ। নিশাত তখনো আগ্রহের সাথে নিপুণের মুখের দিকে চেয়ে। নিশাত বলল,

--"অনেস্ট রিভিউ দিবা আপা। আমি জানি কেউ-ই প্রথম ধাক্কায় ভালো রান্না করতে পারে না। সেখানে তো আমি নিতান্তই ছেলে মানুষ।"

নিপুণ ফিক করে হেসে দিলো। হাসি বজায় রেখে বলল,

--"ঝালটা বেশি হয়েছে আর লবণও পরিমাণমতো হয়নি।"

নিশাতের মুখ ভার হয়ে গেল। মিনমিন করে বলল,

--"ঝালের ব্যাপারটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু ইউটিউব, ইভানের ভাই সবাই বলেছে স্বাদমতো লবণ দিতে। এখন তুমি-ই বলো আপা, প্রথম রান্নায় আমি কেমনে বুঝব লবণ কতটুকু লাগে? এদের কী কমনসেন্স নাই?"

নিপুণ আরেক দফা হাসলো। নিশাতের গাল টেনে বলল,

--"তবে সবকিছুর মধ্যেও একটা বিশেষ আইটেম আছে নুডুলসে।"

নিশাত চোখ জোড়া চকচক করে বলল,

--"সেটা কী আপা?"

নিপুণ মুচকি হেসে বলল,

--"আমার প্রতি তোর উপচানো ভালোবাসা।"

হাসা-হাসি, আড্ডার মাঝেই দুই ভাই-বোনের সময় কেটে যায়। নিপুণ চলে যায় রান্না করতে। রান্নার পাশাপাশি সে নিজের কাজগুলোও ল্যাপটপে টপাটপ করার চেষ্টা করলো। নিশাত পড়তে বসেছে। নিপুণ কী ভেবে নিশাতকে হাঁক ছেড়ে ডাকল।

--"নিশাত?"

নিশাত এক ছুটে রান্নাঘরে চলে আসল। নিপুণ নিশাতের উপস্থিতি টের পেয়ে রান্নায় মনোযোগ দিয়ে বলল,

--"বাবাকে কী ঠিকানা দিয়েছিস?"

--"না, দেইনি। জোর করেছিল, তোমার নাম্বারও চাইছিল। আমি কিছুই দেইনি।"

নিপুণ এবার গলা খাদে নামিয়ে বলল,

--"বকা দিয়েছে নিশ্চয়ই?"

নিশাত শুকনো হেসে বলল,

--"এ আর নতুন কী আপা? যাইহোক, ওনার গা*লি এখন আর গায়ে মাখি না। তুমিও চিন্তা করো না। সব ঠিক আছে।"

নিপুণ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। পুরানো তিক্ত, ভয়ংকর অতীত না চাইতেও তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। শারিরীক এবং মানসিক ব্যথায় কাঁতড়ে থাকা দিনগুলো মাথায় আসলেই নিপুণের ভয়ে গা হিম হয়ে আসে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। অনেক শক্ত মনোবল নিয়ে এখন নিজের জন্য, নিশাতের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে সে। এত সহজে নিপুণ সব এলোমেলো হতে দিতে পারে না। নিপুণের আর শক্তি নেই নতুন করে ভেঙে যাওয়ার। একজন মানুষ আর কত ভাঙবে, আঘাতপ্রাপ্ত হবে তাও কি না আপন মানুষদের দ্বারা?

নিশাত আবার বলল,

--"বাবা বলছিল আমাকেও ফিরে যেতে। কিন্তু সৎ মায়ের সংসারে আমি আর যেতে চাই না আপা। আমি তোমার সাথেই থাকব।"

নিপুণ আহত নজরে তাকায় ভাইয়ের দিকে। ভাইকে আশ্বস্ত করে বলল,

--"তুই আমার কাছেই থাকবি নিশাত, তোকে আমার থেকে আলাদা হতে দিব না কখনো। অন্তত ওই লোকের কাছে কখনোই তোকে ফিরতে দিব না, সেই ভরসা রাখ তোর আপার ওপর।"

--------------

রাতে নিপুণ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে যেতেই তার ফোন টুং করে শব্দ করে উঠল। নিশ্চয়ই কোনো মেসেজ। নিপুণ ফোন চেক করতেই দেখলো একটা ছবি। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে পাশাপাশি দুইটা বেডে চারজন ছেলে আহত অবস্থায় পড়ে আছে। ছোটো বেডে দুজনের জায়গা হচ্ছে না বোঝাই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ না কেউ ঠিক পড়ে যাবে। এরকম এক দৃশ্য দেখে নিপুণ কীরকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে বুঝে উঠতে পারল না। ক্ষণিকের জন্যে যেন তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পরপরই একটা মেসেজ আবারও শব্দের সাথে এলো। নিপুণ চোখ বুলালো মেসেজটার দিকে। সুপ্ত মেসেজে লিখেছে,

--"পকেটে তেমন টাকা নেই বুঝছ, তাই এদের জন্য আরেক জোড়া বেড ভাড়া নিতে পারিনি। এজন্য ভাবলাম একটা বেডই দুজন করে ভাগাভাগি করুক; এতে বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়বে।

জানো, এই দৃশ্যটা বুকের বা পাশটায় খুব শান্তি দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে ফেসবুকে ছবিটা আপলোড করে বলি, 'আজকের দিনের সেরা ছবি', ড্যা~ম।"


হলুদ শহরের প্রেম

পর্ব ৪-৫

লাবিবা ওয়াহিদ


--"এ কী, নিপুণ? তুমি সত্যি সত্যি ছাগলগুলোকে দেখতে হসপিটাল চলে এলে?"

হাসপাতালের বিরাট বড়ো কেবিনে সারিবদ্ধ ভাবে দশটি করে মোট কুড়িটি বেড সাজানো। প্রত্যেক বেডেই রোগীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত৷ 

আজ সকালেই একটি দুর্ঘটনায় বেশ কিছু আহত মানুষ হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। 

নিপুণ মূলত আরেকজন রিপোর্টারের সাথে হাসপাতালে এসেছিল সেসব পর্যবেক্ষণ করতে। কাজের ফাঁকে গতকাল রাতের ঘটনা মাথায় এসেছিল তার। সুপ্ত দুইজনকে একই বেডে রাখবে ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছিল না, কারণ যতদূর জানে হাসপাতালে এই ধরণের তেমন নিয়ম নেই।

 এজন্যই ব্যাপারটা সত্য নাকি মিথ্যে সেটা দেখতেই কলিগ রিপোর্টারের থেকে বিয়োগ হয়েছে সে। তবে এখানে এসে যা দেখলো তাতে তার চোখ ছানাবড়া! আসলেই এক জোড়া বেডে চারজন চাপাচাপি করে পাশাপাশি শুয়ে। একজন নার্সকে সে জিজ্ঞেস করেছিল, এরকম কেন করতে দেওয়া হয়েছে? নার্স জবাব দেয়নি বরং এড়িয়ে গেছে। 

এমতাবস্থায় পাশ থেকে সুপ্তের গলা শুনে নিপুণ ভীষণ চমকে যায়। পাশ ফিরে চাইতেই দেখল সুপ্তকে। তবে পোশাকের দিক থেকে আজ তাকে ভিন্ন লাগছে। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরেছে সে। পাঞ্জাবির হাতা কনুই অবধি গুটানো। প্রতিদিনের এলোমেলো দেখা চুলগুলো আজ সুন্দর ভাবে গোছানো। সবশেষে মুখে কালো মাস্ক। মাস্কের আবরণে সুপ্ত থাকলেও সুপ্তকে চিনতে নিপুণের খুব একটা অসুবিধা হলো না। সুপ্তের নজর প্রতিবারের মতোই ইডিয়েট মার্কা। নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--"আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আমি আমার ডিউটিতে আছি। একদম ডিস্টার্ব করবেন না।"

সুপ্তের চোখ জোড়া হাসলো যেন৷ সুপ্ত হঠাৎ বুক টানটান করলো। মুখ-ভঙ্গিতে গুরুতর ভাব এনে বেশ ভারী গলায় বলল,

--"আমিও ডিউটিতে আছি মিস রিপোর্টার। আপনার লজ্জা করছে না আমার সাথে লাইন মারতে? মেয়েরা যে এমন কেন, সুপুরুষ দেখলেই গায়ের সাথে লাগতে চলে আসে!"

সুপ্তের এহেম কথা শুনে নিপুণের চোখ কপালে উঠে গেল। বাক্যহারা হয়ে সে চেয়ে রইলো সুপ্তের দিকে। এগুলা কোন ধরণের কথা, নিপুণ কখন সুপ্তের গা ঘেঁষল? নিপুণ অস্ফুট স্বরে বলল,

--"মানে?"

সুপ্তের আর জবাব দেওয়া হলো না। দীপক এসে সুপ্তকে বলল,

--"কীরে, কই ছিলি? তোর কথা মতো সবই এনেছি। আয়, আহতদের পরিবার তোর জন্য অপেক্ষা করছে।"

নিপুণ শুনলো দীপকের কথা। সুপ্ত একপলক নিপুণের দিকে তাকিয়ে দীপকের সাথে চলে গেল। নিপুণ সেই ওয়ার্ড থেকে বের হতেই দেখল সুপ্তকে বেশ কিছু সাংবাদিকরা ঘিরে রেখেছে। সুপ্ত মাস্ক খুলে যথাসম্ভব তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। নিপুণ সাংবাদিকদের মাঝে নিজের দুজন কলিগকেও দেখতে পেল। হঠাৎ নিপুণকে এসে ধরলো রিয়া। রিয়া নিপুণকে দেখে বলল,

--"কোথায় চলে গিয়েছিলে নিপুণ? শামিম ভাইয়া বলল তুমি তাকেও বলোনি।"

নিপুণ আমতা আমতা করে বলল,

--"আশেপাশেই ছিলাম।"

রিয়া সেভাবে ঘাটল না নিপুণকে। সামনে মাহদী আরাভ সুপ্ত রয়েছে। এজন্য তার বলা কথাগুলো শোনা বেশ জরুরি। তার কথার উপরই রিপোর্ট লিখতে হবে। এজন্য রিয়া নিপুণকে টেনে সেদিকেই নিয়ে গেল।

সুপ্তের মুখ-ভঙ্গি অস্বাভাবিক গম্ভীর। তার এই গম্ভীর ব্যক্তিত্ব নিপুণের কাছে সম্পূর্ণ নতুন-ই বলা চলে। এই লোক যে সামনের নির্বাচনের জন্য একজন প্রার্থী তা তার চলাফেরা কিংবা ত্যাড়া - বাঁকা কথাবার্তায় বোঝা দায়। এইযে এখন, কতটা প্রফেশনাল মুডে আছে সে। নিপুণ প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে এতে। 

হঠাৎ এক প্রশ্ন কানে এলো নিপুণের। একজন সাংবাদিক শুধালো,

--"আপনার নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন?"

নিপুণের কপালে বিরক্তির ভাঁজ পড়ে। এরকম একটা মুহূর্তে এই ধরণের প্রশ্ন? সুপ্ত অবশ্য এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেল। সাংবাদিকদের বেশি সময় দিতে পারেনি সে। চলে যাওয়ার আগে ভীড়ের মাঝে নিপুণের ঘামে ভিজে থাকা মুখখানার দিকে একপলক চেয়ে সে চলে গেল। নিপুণ বিষম খায়, এই ভীড়ের মাঝে সুপ্ত তাকে দেখল কী করে? 

নিপুণ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের এদিক ওদিক ছুটল। একসময় কিছুটা সময় পেয়ে হসপিটালের করিডরে থাকা এক ফাঁকা আসনে গিয়ে বসল। ভীষণ ক্লান্ত সে। সকাল থেকে পেটেও কিছু পড়েনি। নাস্তা তৈরি করে নিশাতকে ডেকে ওঠাতে গিয়েই জরুরি কল এলো। দুর্ঘটনার কথা শুনে তাকে কোনোরকমে তৈরি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ব্যস্ততার কারণে খাওয়ার মতো সময় হয়নি। এখন পেট জ্বলছে খুদোয়। অতীতে কত খালি পেটে থেকেছে সে। হয়তো সেই থেকেই দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার অভ্যাসটা থেকে গিয়েছে। অতীত মাথায় নড়েচড়ে উঠতেই নিপুণ লম্বা কয়েক নিঃশ্বাস ফেলল।

নিপুণের সামনে দিয়ে মানুষজন ব্যস্ত পায়ে চলাচল করছে। এমতাবস্থায় কেউ একজন তার পাশে এসে বসল। নিপুণ পাশ ফিরে চাইতেই মাস্ক পরিহিত সুপ্তকে দেখতে পেল। সুপ্ত নিপুণের দিকে একমনে চেয়ে আছে। নিপুণ অপ্রস্তুত হয়ে আশেপাশে ভীত নজরে তাকাল। সুপ্ত কোন আক্কেলে তার পাশে এসে বসেছে? নিপুণ নিচু গলায় বলল,

--"আপনি এখানে কী করছেন?"

সুপ্ত নিপুণের প্রশ্নকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল,

--"তোমার মুখ এমন শুকিয়ে আছে কেন? কিছু খাওনি?"

নিপুণ কিছুটা থতমত খেল।

--"সেটা জেনে আপনার কাজ কী? আপনি আপনার কাজে যান।"

সুপ্ত ভ্রু কুচকে বলল,

--"কাজই তো করতে বসেছি। খাবে চলো।"

--"একদম না। জোরাজুরি করলে কিন্তু আমি উঠে চলে যাব। বিরক্ত করবেন না প্লিজ।"

--"উঠে যেতে গিয়ে যদি হাতে টান খাও তখন কী হবে ভেবে দেখেছ? চারপাশে এত মানুষ! দেখলে কী ভাববে বলো তো?"

সুপ্তের নরম গলার হুমকি শুনে নিপুণ চোখ বড়ো করে তাকাল। 

--"হুমকি দিচ্ছেন?"

--"কোথায়? আঙুল বাঁকাতে চাচ্ছিলাম। সোজা আঙুলে ঘি সচরাচর উঠতে চায় না তো!"

নিপুণ এবার চোখ রাঙালো। সুপ্ত তা তোয়াক্কা না করে কাউকে দিয়ে বিরিয়ানির প্যাকেট আনালো। সেটা নির্দ্বিধায় নিপুণের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

--"হ্যাপি ফুডিং হার্ট।"

------------------------

নিপুণ ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলো। এক প্যাকেট বিরিয়ানি নিশাতের হাতে ধরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। আজ তার রান্না করার শক্তি নেই, এজন্যই খাবার কিনে আনা। 

নিপুণ ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই জানালায় বৃষ্টির অনবরত ফোঁটা পড়ার শব্দ কানে এলো। বিকাল থেকেই আকাশ কেমন মেঘলা ছিল। নিপুণ সেসব তোয়াক্কা না করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ঘুমে জড়িয়ে যাওয়ার আগে নিশাতকে ডেকে বলে দিলো তাকে যেন না জাগানো হয়, সে খেয়ে এসেছে। 

ঘন্টা দুয়েক পর নিপুণ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই ফোনের বিরক্তকর শব্দএ বেজে ওঠে। এতে নিপুণের ভ্রু কুচকে গেল। ঘুমটা ভাঙতেও বেশি সময় লাগল না। নিপুণ চোখ বুজেই ফোনটা হাতড়ে খুঁজল বালিশের পাশে। কোনোরকমে ফোনটা হাতে নিয়ে পিটপিট করে নামটা দেখে নিলো। অফিস থেকে কল। নিপুণ চোখ বুজেই কল রিসিভ করলো, সালাম দিলো। ওপাশ থেকে বেশ কিছু কাজ এলো। কাজের কথা শুনে নিপুণের না চাইতেও ঘুম কেটে গেল। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসল সে। মাথা ধরে উঠে বসে মিনমিন করে বলল,

--"এগারোটার আগেই রিপোর্ট রেডি হয়ে যাবে স্যার। আমাকে ঘন্টাখানেক সময় দিন।"

কল কাটতেই নিপুণ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। ড্রিম লাইটের আলোয় দেখলো ঘড়ির কাঁটা নয়টার কোঠায়। নিপুণ একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাথরুম থেকে মুখ ধুঁয়ে এলো। ঘুমের রেশ কাটাতে রুম থেকে বের হতেই দেখল নিশাত সোফায় এক পা তুলে কার্পেটে শুয়ে মোবাইল দেখছে। নিশাত নিপুণকে দেখতেই সেভাবে শুয়েই বলল, 

--"আপা, এত জলদি উঠে গেলা যে?"

--"কাজ আছে।"

এটুকু বলেই নিপুণ রান্নাঘরে চলে গেল চা বানাতে। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই সে রুমে চলে গেল। রিয়ার সাথে কলে কথা চালিয়ে যেতে যেতে সে একমনে ল্যাপটপে রিপোর্ট লিখল। আজ এগারোটায় তাদের ফেসবুক চ্যানেল থেকে লাইভ নিউজ টেলিকাস্ট হবে। অনলাইন মিডিয়া হওয়ায় এখানে এত আয়োজন নেই।

 নিপুণ রিপোর্ট লিখতে গিয়ে কিছুটা বিরক্ত হলো৷ রিপোর্টের একটা অংশ সুপ্তকে নিয়ে। সুপ্ত তাকে যখন বিরিয়ানি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়, নিপুণ তখন চেয়েও বিরিয়ানিটা ফেলে দিতে পারেনি। এক সময়ে খাবারের জন্য সে যেই কষ্ট করেছে তাতে সে খাবারের মূল্য কত সেটা হাড়ে হাড়ে জানে। তাই তো সুপ্তের উপর রাগ থাকা সত্ত্বেও খাবারটা ঠিকই খেয়ে নেয়। এই অতিরিক্ত নিপুণের সান্নিধ্যে থাকা সুপ্তকে নিয়ে তার রিপোর্ট লিখতে হবে সেটা সে ভাবেনি কখনো। তাই কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফেলেই সুপ্তকে ঘিরে লেখা রিপোর্টটি সে সাবমিট করলো। 

ঘন্টাখানেকের মধ্যে সব ই-মেইল করে দিতেই আবারও ম্যানেজারের কল এলো। গম্ভীর গলায় বলল আগামীকাল একটু লেটেই সে যেতে পারবে। আর কাল হসপিটালও অন্যরা রিপোর্টের জন্য যাবে। নিপুণ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সব গুছিয়ে পুণরায় লাইট নিভিয়ে শুতেই আবারও ফোনটা শব্দ করে উঠল। মোবাইল চেক দিতেই দেখল সুপ্তের মেসেজ। লিখেছে,

--"ক্লান্ত রিপোর্টার কী এখনো কাজ করছে? এত কাজ কিসের হুঁ, লাইট নিভিয়ে ঘুমাও। ক্লান্তির ছাপ সুন্দরীদের মুখে মানায় না। গুড নাইট হার্ট।"

নিপুণ এবার রাগের চটে রিপ্লাই না করে পারল না। টাইপ করল, 

--"রাত-বিরেতে অন্যের ঘরের লাইটের দিকে উঁকি দেওয়া ভালো না নেতা সাহেব। নিজের চরকায় তেল দিলে বেশি ভালো হয়।"

কিছুটা সময় নিয়েই সুপ্তের থেকে রিপ্লাই এলো,

--"নেতা সাহেব? তোমার মুখে এই সম্বোধন শুনতে আমি হাজারবার তোমার ঘরে উঁকি দিতে রাজি। শুধু উঁকি না, তুমি চাইলে তোমার বাসাতেও পৌঁছে যাব। 'নেতা সাহেব' শুধু তোমার, নিপুণ।"

নিপুণ নিজের দোষে নিজেই কপাল চাপড়ালো। মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে বিরক্তির সাথে "ধ্যাত" বলে উঠলো।


চলবে...............


বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। নিপুণের দিনগুলো ব্যস্ততায় কাটছে তো আবার কখনো আবার ঝিম ধরে। তবে আলস্য সময় কাটানোর উপায় নেই। সে প্রতিনিয়ত যেভাবে পারছে সেভাবেই ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছে। এইযে আজ, ছুটির দিন। বাসায় বসে না থেকে নিশাতকে নিয়ে বের হলো কোথাও ঘোরার উদ্দেশে। তাদের আশেপাশেই ঘোরার জায়গা আছে, সেসব জায়গাতেই ঘোরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। বিকালের দিকে ফিরে আবার রিপোর্ট লিখতে বসতে হবে।

রিকশায় বসে যখন নিপুণ অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে তখন নিশাত তাকে ঝাকায়। নিপুণ চমকে ভাইয়ের দিকে তাকাতেই নিশাত বলল, 

--"এসএসসির পর কোথায় পড়ব আপা?"

--"তোর সিদ্ধান্ত, তুই ভালো জানবি।"

নিশাত কিছুটা নীরব থেকে বলল,

--"আপা?"

নিপুণ তাকালো নিশাতের দিকে। নিশাত আমতা আমতা করে বলল,

--"আমার ক্রিকেট পছন্দ অনেক।"

--"তো খেলবি। বারণ তো করিনি।"

নিশাত দমে গেল। সে ঠিক কী বলতে চাইছে সেটা নিপুণ বুঝেও না বোঝার ভান ধরলো। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে এসে যখন নিশাত নিপুণের সাথে ছবি তুলছিল তখন হুট করে নিপুণের পাশে এসে সুপ্ত দাঁড়ায়। নিশাত তাকে ফোনের স্ক্রিনে দেখে নড়তে চাইলে সুপ্ত তাকে থামিয়ে বলল,

--"একদম নড়বে না। ছবি ভালো আসছে, ক্লিক করো!"

নিপুণ সুপ্তের দিকে অবাক নজরে তাকাতেই নিশাত সুপ্তের কথামতো ফোনে ক্লিক করলো। ক্লিকটা জোরালো হওয়ায় পরপর ডাবল ক্লিক পড়ে যায়। নিপুণ চোখ রাঙিয়ে বলল,

--"এক্সকিউজ মি?"

সুপ্ত সোজা নিপুণের চোখের দিকে চেয়ে বলল,

--"জি ম্যাডাম?"

নিপুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, "আরেকজনের ছবির মাঝে ঢুকে যাওয়া কোন ধরণের ভদ্রতা?"

--"এটাকে অভদ্রতা বলে না। অধিকার আদায় করে নেওয়া বলে।"

নিপুণ কপাল কুচকে বলল, "আপনি এবং আপনার আজেবাজে কথা। নিশাত ছবি ডিলিট কর।"

নিশাত এতক্ষণ দুজনকে অবাক হয়ে দেখছিল। নিপুণের কথা ছবি ডিলিট করে নিলে সুপ্ত বলে ওঠে, "নো, নিশাত। আগে ছবিটা আমাকে হোয়াট'স আপ করো তারপর যা খুশি করিয়ো।"

নিপুণ এবার নিশাতকে চোখ রাঙিয়ে বলল, "খবরদার এরকম কিছু করবি না। দে দেখি আমাকে ফোন।"

নিপুণ নিশাতের হাত থেকে মোবাইল নেওয়ার আগেই সুপ্ত ছোঁ মেরে মোবাইলটা কেড়ে নেয়। এক গাল হেসে বলল,

--"সুন্দরীদের এত হাইপার হতে নেই ম্যাডাম, শ্বাসকষ্টের মতো রোগ হয়ে যায়। আমি তো আর ডাক্তার নই যে সারিয়ে দিতে পারব।"

বলতে বলতেই সুপ্তের ফোন হঠাৎ টুং শব্দ বেজে ওঠে। এর মানে তার ছবি আসা সফল হয়েছে। সুপ্ত নিশাতের ফোন ফেরত দিয়ে হাসি-মুখে বলল,

--"অন্য একদিন দেখা হবে নিশাত।"

সুপ্ত চলে গেল। শুধু খেপিয়ে দিয়ে গেল নিপুণকেই। সুপ্তের কাজকর্ম দিনদিন সহ্য সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে। ইচ্ছে তো করছে এখনই গিয়ে এর এসব কাণ্ড কারখানা রিপোর্টে গিয়ে লিখতে। এটলিষ্ট সবাই সুপ্ত'র ভালো মানুষির চেহারার ভেতরটা তো দেখতে পারবে। 

---------------------

মিনহাজ সাহেব মিনমিন করে কিছু একটা পড়তে পড়তে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। মিনহাজ সাহেবের স্ত্রী সাবিনা সুপ্তের রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। সুপ্তের শুকনো জামা-কাপড়গুলো ভাজ করে আলমারিতে রেখেছেন তিনি। সুপ্ত তার কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করাতে পছন্দ করে না। হয় নিজেই নিজের কাজ করে নয়তো তার মা তাকে গুছিয়ে দেয়। মিনহাজ সাহেব আড়চোখে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে সরু গলায় বললেন, 

--"নবাব আজ কোথায় গিয়েছে তার খোঁজ-খবর জানো?"

সাবিনা মলিন চোখে তাকালেন স্বামীর দিকে। স্বামী যে তাকে স্পষ্ট খোঁচা দিয়েছেন সেটা তিনি হাড়ে হাড়ে বুঝে নিলেন। সাবিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, 

--"হবে হয়তো, আশেপাশে।"

--"ওই আশেপাশেই থাকবে, আর মার-পিট করে বেড়াবে।"

--"কোথায় মারপিট করলো ও?"

--"করেনি কবে শুনি? তোমার লাই পেয়েই ছেলে এত মাথায় উঠেছে।"

সাবিনা এবার ভ্রু কুচকে বললেন, "লাই আমি একা দিলে এতদূর যেত না। আপনার এবং মাহমুদের লাইও পেয়েছে।"

মিনহাজ সাহেবও ভারী গলায় বললেন, 

--"আমি কবে লাই দিলাম? ওর কোন কথাটা আমি শুনেছি?"

--"না শুনলেও চুপ তো থেকেছেন! এইযে এখন, রাজনীতি তো আপনার অনুমতি নিয়েই করছে তাই না?"

মিনহাজ সাহেবের মুখ-ভঙ্গি শক্ত হয়ে এলো। স্ত্রীর সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বাড়ায় না। গম্ভীর গলায় বললেন,

--"নবাবজাদাকে কল দিয়ে বলো যেখানেই থাকুক মাগরিবের মধ্যে যাতে মসজিদে থাকে। আমি মসজিদ যাচ্ছি।"

বলেই মিনহাজ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। সদর দরজার দিকে আগাতে নিলে সাবিনা তাকে থামিয়ে বলল, 

--"কলটা তো আপনিও দিতে পারেন। আর কত ছেলের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবেন?"

মিনহাজ জবাব দিলো না। দ্রুত বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। তখনই রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো মাসুদা। হন্তদন্ত গলায় এসে বলল, 

--"তরকারিতে লবণ বেশি অইয়া গেছে খালাম্মা।"

সাবিনা বিরক্তির চোখে তাকালো মাসুদার দিকে। অল্প বয়সী মেয়ে মাসুদা। বয়স খুব সম্ভবত তেইশ চব্বিশ। বিয়ে করেছিল কিন্তু তার বর ভালো ছিল না বলে তালাক দিয়েছে। কোনো ছেলে-মেয়েও নেই। এভাবেই মানুষের বাড়িতে কাজ করে করে পেট চালায় সে। সাবিনা বিরক্ত গলায় বলল, 

--"রান্নাঘরে চলো।"

মাসুদা সহসা নিষেধ করলো। বলল,

--"লবণ আপনেই সামলান খালাম্মা। সন্ধ্যা অইয়া গেছে, বাড়িত যামু।"

সাবিনা ভ্রু কুচকে বলল,

--"কোথায় সন্ধ্যা হলো? সবে সাড়ে পাঁচটা বাজে। ছয়টা পনেরোতে মাগরিবের আযান দিবে।"

মাসুদা তাও মানলো না। বলল,

--"আজকা আপনের বাড়িত আগে আইছি, তাই আগে আগেই আমার সন্ধ্যা অইয়া গেছে। খালুরেও দেকলেন না মাগরিবের নামাজে যাবে বলে চলে গেল? আমি তো পত্যেকদিন তার লগেই বাইরোই।"

মাসুদা থামলো। থেমে আবার বলল,

--"আমি যাই গা খালাম্মা। কালকা আবার আমু।"

মাসুদা কোমড় দুলিয়ে সাবিনার গায়ে একরাশ আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সাবিনা মিনমিন করে বলল,

--"ফাঁকিবাজ মেয়ে! আগামীকাল থেকে মাহমুদের বাবাকে মাগরিবের নামাজের দশ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হতে বলব।"

আজকের যুগে কাজের লোক পাওয়া খুবই মুশকিল। মাসুদা কয়েক বাড়িতে কাজ করে তাদের বাড়িতে আসে। তবুও কাজে ফাঁকিবাজি করে। সাবিনা একদিনও মাসুদার হাতে কাজ দিয়ে নিশ্চিন্তে বসতে পারেনি। সবসময় মাসুদার সাথে থেকে তাকে ধরে ধরে কাজ করাতে হয়। এসব ব্যাপারে সাবিনা যেমন বিরক্ত তেমনই ক্লান্ত। আর কত একা হাতে সংসার সামলাবে? সুপ্তটাও কথা শুনে না। সাবিনা কবে থেকে তাকে বলছে বিয়ের কথা, কানই দেয় না ছেলেটা। কিন্তু এবার তিনি এর হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন। আগামীকালই জোবেদাকে খবর পাঠাবেন। তিনি ভালোই ঘটকালি করতে পারেন। এখন তার ঘটকালি কতটা ভালো সেটাই সাবিনা দেখে ছাড়বেন।

-----------------------------

নিশাতের ফর্ম ফিলাপের টাকা জমা দিতে নিপুণ স্কুলে এসেছিল। স্কুলে চলাফেরা করতে গিয়ে হঠাৎ নিশাতের এক স্যারের সাথে দেখা হয়। মধ্যবয়সী স্যার নিশাতকে নিয়ে কথা বলতে আলাদা ডাকেন নিপুণকে। নিপুণ চিন্তিত হয়ে পড়ে এ কথা শুনে। নিশাতের পড়াশোনায় কী কোনো খামতি চলছে? স্যার কোনো অভিযোগ করবেন না তো নিশাতকে নিয়ে। স্কুল ভবনের বাইরে কিছুটা দূরে দাঁড়াল নিপুণ স্যারের সম্মুখে। স্যার নিপুণকে আচমকা বিব্রতকর প্রশ্ন করে বসলেন,

--"শুনলাম তোমার নাকি ডিভোর্স হয়েছে?"

আচমকা এরূপ প্রশ্নে নিপুণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিপুণের চেহারায় সেই ভাব দেখে স্যার দ্রুত বললেন,

--"আরে, ভয়ের কিছু নেই। এভাবেই জিজ্ঞেস করলাম। একা ডিভোর্সী হয়ে নিশাতকে নিয়ে থাকছ এটা খুবই অবাকের ব্যাপার।"

নিপুণ সবসময় খেয়াল করেছে, 'ডিভোর্সী' শব্দটা তাকে কেমন দুর্বল করে ফেলে। এই দুর্বলচিত্তকে নিয়ে নিপুণ ভীষণ বিরক্ত। এই ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি তো সে কম হয়নি। তাহলে কেন এই একটি শব্দে নিজেকে বারবার আটকে ফেলছে? নিপূণ যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলল,

--"অবাকের কী আছে স্যার?"

স্যার কথা ঘুরালো। বলল,

--"কী করো তুমি?"

--"দেশী-বিদেশী অনলাইন মিডিয়ায় রিপোর্টিং-এর জব করছি।"

নিপুণ এবার ভালো ভাবে তাকালো স্যারের দিকে। স্যারের দৃষ্টিভঙ্গি হঠাৎ-ই কেমন বদলে গেল। নিপুণ স্যারের চোখে কাম দেখে নির্বাক হয়ে যায়। স্যার রসিয়ে রসিয়ে আরও কিছু বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু নিপুণ সেসব না শুনে সেখান থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। কোনো রকমে স্যারকে এড়িয়ে বলল, 

--"আমার দেরী হচ্ছে, যেতে হবে স্যার।"

নিপুণ যেতে নিলে স্যার হঠাৎ নিপুণের হাত ধরে বসলো। কামুক নজরে নিপুণকে আপাদমস্তক পরখ করে বলল,

--"চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। কেউ জানবে না আমরা বিয়ে করেছি, আলাদা থাকব। মাসে মাসে ভালো খরচও দিব। দিব্যি ভালো দিন কেটে যাবে নিশাতকে নিয়ে।"

নিপুণ আঁতকে ওঠে এই ধরণের কথা শুনে। যতদূর জেনেছে এই স্যার বিবাহিত, ছেলে-মেয়েও আছে। তার চাইতেও বড়ো ব্যাপার এই লোক নিপুণের বাবার বয়সী। নিপুণ চোখ রাঙিয়ে লোকটাকে বলল,

--"হাত ছাড়ুন স্যার। আমাকে সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য করবেন না। এটা স্কুল।"

লোকটা নিজের ধ্যান, হুঁশ একদম খুইয়ে বসেছে যেন। নিপুণের হাত না ছেড়ে বলল,

--"আমিও সিনক্রিয়েট চাচ্ছি না। চলো বিয়েটা সেরে ফেলি। তোমারও তো পুরুষ সঙ্গ প্রয়োজন তাই না? আমি দিতে রাজি।"

নিপুণের গা গুলিয়ে এলো এই ধরণের বাজে কথা শুনে। নিপুণ কিছু বলার আগেই তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো মিনহাজ সাহেব। মিনহাজ সাহেবকে দেখে স্যার চট করে নিপুণের হাত ছেড়ে দিলো। নিপুণ ঝাপসা চোখে তাকালো মিনহাজ সাহেবের দিকে। মিনহাজ সাহেব শক্ত চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার আমতা আমতা করছে, কিছু একটা বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে মিনহাজ সাহেবকে। মিনহাজ সাহেব নিপুণের দিকে একপলক তাকিয়ে বললেন,

--"তোমার নাম কী?"

নিপুণ আমতা আমতা করে বলল,

--"নিপুণ।"

--"নিপুণ মা, তুমি কাজে যাও। আমি ওর ব্যবস্থা করছি।"

নিপুণ একপলক চেয়ে দেখল স্যারকে। স্যার অসহায় মুখে মিনহাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে। নিপুণ সেখান থেকে চলে গেলো। স্কুল থেকে বেরিয়ে একটি সিএনজিতে উঠে মুখে শাড়ির আঁচল চেপে কেঁদে ওঠে। এই ছোটো জীবনে তার আর কত কিছু দেখার বাকি আছে? সে যে এসব আর নিতে পারছে না। ধৈর্য ক্ষমতাও যে মলিন হয়ে আসছে।

মিনহাজ সাহেব এবার স্যারের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললেন,

--"পুরুষ সঙ্গ প্রয়োজন তাই না?"

স্যার অত্যন্ত ভয় পেয়ে যায় মিনহাজ সাহেবের কথা শুনে। এর মানে কী তিনি সব শুনে ফেলেছেন। এ দিকটায় স্কুলের কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। লোকটা সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু মিনহাজ সাহেব যে এভাবে চলে আসবে কে জানত? স্যার হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইলো মিনহাজ সাহেবের কাছে। বারংবার মিনুতি করলো। কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না। মিনহাজ সাহেব ক্ষমা করলেন না। উলটো দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

--"পাওয়াচ্ছি তোর নারী সঙ্গ।"

বেশ অনেকদিন পর সুপ্তের ফোনে মিনহাজ সাহেবের নাম্বার থেকে কল এলো। বাইকে গা এলিয়ে রেখেছিল সুপ্ত। কিন্তু বাবার নাম্বার মোবাইলে ভেসে উঠতেই সুপ্ত চট করে উঠে বসে। দীপক কিছুটা দূরেই বিড়ি টানছিল। সুপ্ত ডাকে দীপককে। দীপক বিড়িটা ফেলে সুপ্তের দিকে এগিয়ে আসে। সুপ্ত ফোনের দিকে ভ্রু কুচকে চেয়ে বলল,

--"আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে রে দীপক?"

--"কেন? কী হয়েছে?"

--"বাবা কল দিচ্ছে।"

অবাক হলো দীপক। 

--"তো ধর কল। ইমার্জেন্সি হতে পারে।"

সুপ্ত গলা পরিষ্কার করে কল রিসিভ করলো। সালাম দিলো বাবাকে। ওপাশ থেকে মিনহাজ সাহেব গম্ভীর গলায় সালামের উত্তর নিয়ে বলল,

--"একটা কাজ আছে তোমার জন্য। সেই কাজ দিয়েই আমি দেখতে চাই এতদিন কোন রাজনীতির বিদ্যা শিখেছ তুমি!"

কল লাউড স্পিকারে ছিল। মিনহাজ সাহেবের কথা শুনে দুই বন্ধুই চরম অবাক হলো। সুপ্ত অবাক গলায় বলল,

--"ব্যাপার কী আব্বু?"

--"এক জানোয়ারকে ধরেছি। স্কুলের একজন অসুস্থ মানসিকতার স্যার। চাকরি গেলেও এর মানসিকতা সুস্থ হবে না। তাই একে তোমার কাছে হস্তান্তর করছি। কঠিন মামলা দিতে পারবে তো?"

মিনহাজ সাহেব থেমে আবার বললেন,

--"খবরদার যদি এ বেলায় নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছ তো!"

সুপ্ত বলল,

--"কী করেছে সেটা তো আগে জানতে হবে!"

মিনহাজ সাহেব খুলে বললেন সবকিছু। এক ফাঁকে সে নামটাও বলে ফেলেছেন নিপুণের। নিপুণের নাম শুনে সুপ্তের কান দুটো যেন গরম হয়ে গেলো। দীপক দাঁত দিয়ে নখ কাটলো। বিড়বিড় করে বলল,

--"শালা, আর মেয়ে পেলি না হাত বাড়ানোর জন্য। কুমিরভরা খালে পা বাড়ালি, তুই তো শেষ।"


চলবে............

৩য় পর্ব

htttp//wwwthritpatstory.com


সে_কি_জানে পর্ব_৩ সাহিত্য ডাইরি

সে_কি_জানে

পর্ব_৩

সাহিত্য ডাইরি 



অন্ধকারে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি কেও আমার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে।।তার পায়ের শব্দ পাচ্ছি আমি।।এতে যেন আরও ভয় পেয়ে যাই।।হাত-পা ছোটাছুটির চেষ্টা করছি আর বলছি....


---" রেয়ান!! এটা কি আপনি??প্লিজ সামনে আসুন।।আমার অনেক ভয় লাগছে "


কথাটা বলে আমি থেমে যাই।। কেউ কিছু বলে নাকি তা শুনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।।কিন্তু না!!কারো কোনো কথাই শুনা যাচ্ছে না,,,আর না শুনা যাচ্ছে সেই কাছে আসার শব্দ।। আবারও বলে উঠি.....


---" রেয়ান আপনি কোথায় প্লিজ সামনে আসুন।।আমি জানি আপনি এখানে।।"


বলতে না বলতেই কেউ হাওয়ার গতিতে এসে আমার হাত ২টো চেপে ধরে।।চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করেছে রুমটায়।। তাই হয়তো চিনার উপায় নেই এটা কে!! কিন্তু আমার বুঝতে বেগ পেতে হয়নি।।এটা যে রেয়ান,,তা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি আমি।।তাছাড়া রেয়ান ছাঁড়া কে হতে পারে যে আমাকে এভাবে হাত-পা বেঁধে রাখবে......


হঠাৎ রেয়ান আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে....


---" শাস্তি পাওয়ার জন্য তুমি তৈরি তো মরুভূমি?? "


কথাটা শুনে বেশভাবে বুঝিতে পারছি আমার সাথে কিছু হতে চলেছে।। কিন্তু এখন ভয় পেলে হবে না।। এখান থেকে বের হতে হবে আমার।।আমার ছোট্ট ছেলেটা যে আমার অপেক্ষা করছে।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলি.....


---" প্লিজ রেয়ান আমাকে যেতে দিন।।আমি....."


---" কি খালি,, যেতে দিন,,যেতে দিন করছো।।আমি বলেছি না যেতে দেব না,,,, মানে যেতে দেব না।। [ আমার কানে আলতো করে কামড় দিয়ে আবারও বললেন ] আচ্ছা আমার কাছ থেকে তুমি এত পালাতে চাও কেন??তোমার পাখা গজিয়েছে তাই না?? যদি পাখাটা কেটে দি তাহলে কেমন হয়??"


রেয়ানের কথায় স্পষ্ট রাগ অনুভব করতে পারছি আমি।।সাথে আমার ভয় তো আছেই।।কিন্তু কথাটা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছে রেয়ান??কোনো কি খারাপ কিছু করবে সে.....


---" কেন এমন করছেন আপনি রেয়ান??"


---" কারনটা তোমার অজানা নয় "


---" রেয়ান বুঝার চেষ্টা করুন।।আমি একজন ডিভোর্সি আর আমার একটা ছেলেও আছে।। "


---" সো ওয়াট!! এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ব্যস!!"


---" এটা সম্ভব না রেয়ান।। আমার একটা অতীত আছে,,, একবার বিয়ে হয়েছে আমার,, কারও বউও হয়েছি আমি।।এখন আর কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই আমার,,,আর না আছে কারও বউ হওয়ার।।"


---" তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকবে তুমি আমার সাথে "


---" মানে??"


---" তুমিই তো বললে কারও বউ হওয়ার ইচ্ছে নেই তোমার।।তাহলে রক্ষিতা হয়ে থাকো আমার সাথে।।"


---" আপনি আসলেই একটা অমানুষ রেয়ান।।কথাগুলো বলতে আপনার বিবেকে বাঁধে না??কিভাবে বলছেন এগুলো??কোনো পুলিশ কি এমন হয়?? হয়তো,,, নাহলে আপনার মতো একটা জানোয়ার পুলিশ হলো কিভাবে।।"


কথাটা শুনে রেয়াম মনে হয় রেগে গেল।।আমার গাল শক্ত করে চেপে ধরে রাগি কণ্ঠে বলল.......


---" তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারব জান।।তোমাকে চাই আমার।।এট এনি কস্ট।।আর কি যেন বললে?? আমি অমানুষ,,জানোয়ার তাই না?? এখন জানোয়ার কি কি করতে পারে তা তো তোমাকে দেখাতেই হয়।।"


---" ক,,,কি করবেন আপনি?? "


রেয়ান আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন......


---" জান,,, তুমি অনেক বোকা জানো।।এটা জানা সত্ত্বেও যে তোমার ছেলে আর মা আমার কাছে বন্দী।।তাও আমাকে এত বড় বড় কথা শুনাচ্ছো।।এটা জন্য এখন তোমাকে শাস্তি তো দিতে হয়,,, কি বলো??"


বলতে বলতেই রেয়ান অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।।আগে রেয়ানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারলেও এখন সেটার ছিটেফোটাও নেই।।খুব ভয় লাগছে আমার।।রেয়ান কি করবে আমার মা আর ছেলের সাথে??ভয়টা ক্রমশই বেড়ে চলেছে।।জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি.....


---" প্লিজ রেয়ান আমার মা আর ছেলেকে কিছু করবেন না।। আপনি যা বলবেন আমি তাই-ই করব।। প্লিজ ওদের কিছু করবেন না।। "


এভাবে অনেক কাকুতিমিনতি করার পরও কোনো লাভ হলো না।। কেউ আসলো না এ-ই অন্ধকার রুমে!!


.

.

.

.


সকালে.......🍁🍁


অনেক কষ্টের পর একটু আগেই চোখ লেগে আসে আমার।।।তখনই কেউ একজন এক জগ পানি আমার মুখে মেলা মারে।।সাথে সাথে আঁতকে উঠলাম আমি।।সামনে তাকাতেই দেখি রেয়ান প্যান্টের পকেটে ১হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।আর বাঁকা হাসছে।।রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।।কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান আমার কানে ফোন ধরে।।যেখানে আমার ছোট্ট ছেলে কান্না করছে আর আমাকে বলছে........


---" মা কোথায় তুমি?? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো আমার কাছে।। আমার না তোমাকে ছাঁড়া ভালো লাগছে না।।খুব কষ্ট হচ্ছে।। প্লিজ চলে আসো মা।। "


কথাটা শুনে আমার বুক ধক করে উঠে,,,চোখ দিয়ে আপিনা- আপনি পানি পড়ছে।।আমার ছেলের সাথে কথা বলতে যাবো।।তার আগেই রেয়ান এক ঝটকায় ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ফেলে।।একটু কথাও বলতে পারলাম না আমি আমার ছেলেটার সাথে।।


একরাশ ঘৃণা নিয়ে রেয়ানের দিকে তাকাই আমি।।ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো বাঁকা হাসছে।। কিন্তু না,,,,, তার মুখে বিরাজ করেছে বিরাট বড় গম্ভীরতা।।হুট করে রেয়ান আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।।তারপর এক এক করে আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে শুরু করে।। গম্ভীর কন্ঠে বলে......


---" আমাকে যতটা খারাপ ভাবো ততটা খারাপ আমি নই।।কিন্তু অত ভালোও নই।।এখন যেমন ভালো,,, তেমন খারাপ হতেও আমার বেশি সময় লাগবে না।। আর রইল বিয়ের কথা,,,,সেটা আমি তোমাকেই করব।।তোমার ইচ্ছায় কিংবা তোমার অনিচ্ছায় ।।বউ তো তুমি আমারই হবে।।আর যদি বউ হতে না চাও,,রক্ষিতা হিসেবে রাখব তোমায়।।ভালোই ভালোই আমি যখন বলব তখন বিয়ে করবে আমাকে,,,নাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।। "


বলেই উঠে দাঁড়ায় রেয়ান,,,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।।আর ভাবছি,,,,,একদিক দিয়ে সে কি চায় তা বুঝতে পারছি,,,কিন্তু অন্যদিক দিয়ে সব ধোয়াশা।। আসলে সে কি চায়?? আমাকে নাকি অন্য কিছু??


হঠাৎ রেয়ান আমার হাত টান দিয়ে দাঁড় করায়।।তারপর বলে.....


---" চলো "


---" কোথায়?? "


---" তোমার ছেলের কাছে "


বলেই আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে।।এদিকে আমি হাঁটতে পারছি।।এতগুলো ঘন্টা এক ভাবে বসে থাকায় পা অবশ হয়ে গেছে আমার।।কোনোভাবে লেছড়িয়ে লেছড়িয়ে হাঁটছি আমি।।আমাকে এভাবে হাঁটতে দেখে রেয়ান হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার অবস্থা।।সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় সে আমাকে।। এতে কিছুটা চমকে যাই আমি।।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলি......


---" রেয়ান কি করছেন?? ছাঁড়ুন আমাকে?? "


আমার কথা শুনে সে আমাকে একটা ধমক দেয় ।। তারপর বলে.....


---" হাঁটতে পারছে না আবার দেমাগ কত!! যেভাবে হাঁটছ।। গাড়ির কাছে যেতেই ১০ঘন্টা লাগবে।। তখম আর যাওয়া লাগবে না নিজের ছেলের কাছে।।"


কথাটা শুনে আমি চুবসে গেলাম।।সে তো ঠিকই বলছে,,,কিন্তু তার জন্যই তো আমার এ-ই অবস্থা।।মনে মনে রেয়ানকে বকতে লাগলাম আর অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আমি রিহানের সাথে দেখা করব।।পুরো একটা দিন আমাকে ছাড়া থেকেছে সে।।হয়তো অনেক কান্না করেছে আমার জন্য।।


.

.

.

.


বাসায় ডুকতেই আমার ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।।আমিও কাদঁছি।।ওর সারা মুখে চুমু দেওয়া শুরু করি।।তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি......


---" কিচ্ছু হবে না রিহান।।মা এসে গেছি না।। আর কাঁদিস না।। "


---" তুমি অন্নেক পঁচা মা।।তুমি বলেছিলে আমাকে রেখে এভাবে আর যাবে না।। কিন্তু তুমি ঠিকই গিয়েছো।।জানো কত কান্না করেছি তোমার জন্য!!"


---" মাফ করে দে মাকে।।মারও তো কষ্ট হয়েছে তাই না।। মা ইচ্ছা করে যাই নি বাবুন।।"


এরই মাঝে রেয়ান বলে উঠল.....


---" তোমাদের মা ছেলের ভালোবাসা - বাসি শেষ হয়েছে?? "


কথাটা শুনে মা রেগে গেলেন।।এতক্ষন মা রেয়ানকে খেয়াল করেন নি।। তিনি তো আমাদের মা-ছেলেকে দেখছিলেন।।এখন রেয়ানকে দেখে তার রাগ উঠে গেল।।ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন.....


---" মিরা এ ছেলে এখানে কেন?? একে বের কর আমাদের বাসা থেকে।। এমন বেহায়া আর বেয়াদব ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি।। "


কথাটা শুনে রেয়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে মাকে একবার দেখল।।তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল.....


---" আপনার কিছু দেখতে হবে না শাশুমা।।আপনার মেয়ে দেখলেই হবে।। আর ভালোভাবে কথা বলবেন আমার সাথে,,, জানেন তো কি করতে পারি আমি।।"


রেয়ানের কথা মা ঠিক হজম করতে পারলেন না।। আবার কিছু বলবেন তার আগেই রিহান বলে উঠে.....


---" নানু!!উনাকে বকছো কেন?? উনি তো অনেক ভালো বাবা।। উনাকে আমার অন্নেক ভালো লাগে "


রিহান কি বলল এইমাত্র??অনেক ভালো বাবা।।রেয়ানকে সে বাবা বলছে।। কেন??কিছুটা আগ্রহি কন্ঠে রিহানকে জিজ্ঞেস করলাম.....


---" বাবা মানে?? "


---" হুম বাবা।।উনি অনেক ভালো জানো মা।। আমাকে কালকে অনেক গল্প শুনিয়েছে,,,সাথে বলেছিলো তোমাকে আমার কাছে আজকে নিয়ে আসবে।। দেখো উনি উনার কথা রেখছে।। "


---" বুঝলাম।।কিন্তু তুমি উনাকে বাবা কেন ডাকছো??"


কথাটা আমি রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম।।সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আর বাঁকা হাসছে।। তার চোখ দিয়ে সে কিছু বলছে,,,, যার অর্থ "তুমি আমাকে পছন্দ না করলে কি হয়েছে মরুভূমি।।তোমার ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে!!ধীরে ধীরে তুমিও করবে।। " তার চোখের ভাষা বুঝতে পারলেও না বুঝার ভান করে রিহানের দিকে তাকালাম উত্তরের আশায়।।সাথে সাথে সেও বলল......


---" মা বাবা আমাকে বলেছিলো যদি উনি তোমাকে আমার কাছে সকালের মধ্যে এনে দেয় তাহলে আমাকে উনাকে বাবা ডাকতে হবে।। উনি তো উনার কথা রেখেছেন তাই না??।।তাছাড়া আমি বাবাকে প্রমিসও দিয়েছিলাম।।আর তুমিও তো বলো প্রমিস ভাংতে হয় না।। তাই আমিও উনাকে বাবা ডাকছি।।আর ভালোই হলো না মা??আমার একটা বাবাও হয়েছে।। "


কথাটা শুনে কি বলব বুঝতে পারছি না।। আমার ৪বছরের বাচ্চাটা কিই বা বুঝে।। তার যেটা ভালো মনে হয়েছে সে সেটাই করেছে।। তাকে কিছু কি বলা উচিত আমার।।হয়তো না।। তার তো কোনো দোষ নেই।।


হঠাৎ রেয়ানের কণ্ঠ শুনতে পাই।।সে নিজের হাতের ঘড়ি দেখতে দেখতে বলে.....


---" তোমাদের হয়েছে?? আমার কাজ আছে অনেক।। "


জানি না কেন রেয়ানের কথাটা শুনে রেগে যাই।।রাগি কন্ঠে তাকে বলি.....


---" তো আপনার দেড়ি হলে আমরা কি করব "


কথাটা বলতে না বলতেই সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়।।পরক্ষনে বলে উঠে.....


---" আমার ক্ষুধা লাগছে "


---" তো আমি করব?? "


---" যাও আমার জন্য বিরিয়ানি বানাও আমি খাবো "[ দাঁতে দাঁত চেপে ]


উনার কথা আর কথাবলার ভঙ্গি দেখে আমি অবাক,, সাথে বিরক্তও।।ক্ষুধা লাগছে তো বাইরে গিয়ে খাবে-এ না।। আমাকে বলার কি আছে?? তার উপর কত শখ,,আমি তার জন্য বিরিয়ানি বানাবো।। খেয়ে দেয়ে কি কাজ নেই আর আমার।।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ।।কোনোমতে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললাম......


---" কঁচুর ডাল খাবেন "


---" মরুভূমি তুমি তো দেখি বয়রাও!!"


---"মানে??"


---" মানে,, আমি তোমাকে বিরিয়ানি বানাতে বলেছি,,,কঁচুর ডাল না।। বাই দা ওয়ে,,, এ কঁচুর ডাল কি?? "


---" এটা আমাদের স্পেসাল ডিস।। খাস কুত্তাদের জন্য তৈরি "


কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়।।রাগি কন্ঠে বলে উঠে.....


---" অনেক বাড়া বেড়েছো তুমি তাই না?? কালকে কি করেছি মনে আছে তো,,,ভালো ব্যবহার করছি দেখে ভেবো না মাথার উপর উঠিয়ে রাখব।। খারাপ হতে কিন্তু আমার বেশি সময় লাগবে না।।। আর যা বলছি তা যেন ১ঘন্টার মধ্যে হয়ে যায়।।আমি বাইরে যাচ্ছি,,এসেই যেন দেখি বানিয়ে ফেলেছো।।আর যদি না দেখি তাহলে কি হবে তার কল্পনাও তুমি করতে পারবে না।। "


বলেই রেয়ান চলে যায়।।আর আমি,,, আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।। আচ্ছা মানষটা এমন কেন?? এ-ই ভালো তো এ-ই খারাপ,,,অনেক রহস্য ভরা এ-ই মানুষটার ভেতর!!




---" "আ" খাইয়ে দাও আমাকে "


---" মানে?? "


---" মানে বুঝো না?? বিরিয়ানি খাইয়ে দাও আমাকে "


---" কেন?? আপনার নিজের হাত নেই?? ওইটা দিয়ে খান না।। আমাকে বলছেন কেন?? "


---" আমি বলছি তোমাকে খাইয়ে দিতে " [ দাঁতে দাঁত চেপে ]


---" পারব না!! "


---" কি বললা আবার বলো তো "


উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম।।সাথে সাথে কয়েকটা ঢোক গিলে ফেললাম,,,কি ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছেন তিনি আমার দিকে।। ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম......


---" ইয়ে মানে বলছিলা কি রিহান আছে এখানে।। আমি কিভাবে কি করব আপনিই বলুন।।"


বলেই কিছুটা হাসার চেষ্টা করলাম।।ভেবেছিলাম কাজ হবে,,,, কিন্তু হলো না।। বলে না " যা হবার,,, তা শত চেষ্টা করার পরও আটকানো যায় না " আমার সাথে ঠিক তেমনই হলো।। আমার কথা শুনে রেয়ান রিহানের দিকে তাকালো।। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো......


---" রিহান,,, তোমার মা যদি আমাকে আর তোমাকে খাইয়ে দেয় তাহলে কেমন হয়?? "


রেয়ানের কথা শুনে রিহান কি বুঝলো জানি না।। কিন্তু সেও রেয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে বলল......


---" মা ভালোই হবে।। বাবা আর আমি এক সাথে তোমার হাতে খাবো।।খাইয়ে দাও না প্লিজ।।"


আমি কি করব বুঝতে পারছি না।। একবার রেয়ানের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার রিহানের দিকে।। এবার রেয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলল......


---" কি হলো খাইয়ে দিচ্ছো না কেন?? নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা করব?? "


রেয়ানের কথা শুনে আমি কিছুক্ষন চুপ থাকলাম।।অতপর খাইয়ে দেওয়া শুরু করলাম রেয়ান আর রিহানকে।। প্রথমে রিহানকে খাইয়ে দিলাম।।তারপর রেয়ানকে।।রেয়ানকে খাইয়ে দিতে খুব অসস্তি হচ্ছে আমার।।তাছাড়া রেয়ান বারবার আমার হাতে কামড় দিচ্ছে।। এবার তো খুব জোড়েই কামড়টা দেয়।।সাথে সাথে আমি "আহহ" বলে উঠি।।রেয়ানএকটা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের নখ দেখতে দেখতে বলে......


---" কি হয়েছে মরুভূমি?? কোথাও কি ব্যথা পেয়েছ?? "


তার কথা শুনে ইচ্ছে করছে হাতের পাশে থাকা প্লেট-টা দিয়ে তার মাথায় জোড়ে একটা বারি দি।।কিন্তু আমি নিরুপায়।।এটা যদি করি তাহলে পড়ে কি-না কি করবে আমার সাথে।। বলা তো আর যায় না,,, সে যদি পুলিশ হতো তাহলে মানা যেত,,,কিন্তু সে তো আস্ত একটা গুন্ডা পুলিশ!!


প্রায় ১ ঘন্টা পর রেয়ান আর রিহানকে খাওয়ানো শেষ হয় আমার।।আমি বুঝতে পারছি না রিহানও কি রেয়ানের সাথে মিলে গেছে নাকি??আজকে ২জনেই একাধারে খাবার খাচ্ছে যে খাচ্ছেই।।পেট যেন তাদের ভরছেই না।। অবশেষে ১ঘন্টা পর তাদের পেট মনে হয় একটু হলেও ভরেছে।। আর আমি মুক্তি পেয়েছি।।


খাওয়ানো শেষ হতেই রেয়ান রিহানকে নিয়ে ড্রইং রুমে চলে যায়,,,টিভি দেখার উদ্দেশ্যে!!


আর আমি মার জন্য খাবার বাড়ছি।। রেয়ান আসার পর থেকে মা একবারের জন্যও রুম থেকে বের হননি।।তার নাকি রেয়ানকে ভালো লাগে না।। খাবার খাওয়ার জন্য যখন মাকে ডাকতে গিয়েছিলাম,,,তখন মা সাফ সাফ মানা করে দেন যে তিনি রেয়ানের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খাবেন না।। যদি খান,, তাহলে নিজের রুমে খাবেন।।তাই আমিও খাবার নিয়ে যাচ্ছি তার রুমে।। সাথে আমার খাবারটাও।।মা আর আমি একসাথেই খাবো।।


মার রুমে ঢুকতেই দেখি মা বসে আছেন বিছানায়।।আমিও মার পাশে গিয়ে বসি।।তারপর মাকে বলি......


---" মা নাও খাবার এনেছি এখন তো খাও প্লিজ।।দেখো খাবারের সাথে রাগ করে থাকা ভালো না।। "


---" আমি খাবো না "


---" প্লিজ মা জেদ করো না।। দেখো আমিও খাই নি খাবার।।তোমার সাথে খাবো ভেবেছিলাম।।এখন যদি তুমি না খাও তাহলে আমিও খাবো না।।"


আমার কথাটা শুনে মা খাবারের প্লেট-টা নিতে নিতে বলে......


---" তুই যা করছিস তা কি ঠিক মিরা "


---" কি করেছি আমি?? "


---" এ-ই যে ও-ই ছেলেটার সব কথা শুনছিস।। আবার বাসায়ও আসতে দিচ্ছিস।। কেন প্রতিবাদ করছিস না ও-ই ছেলেটার?? আবার আমাকেও করতে দিচ্ছিস না।। "


---" আমি নিরুপায় মা।। তুমি জানো না রেয়ান ঠিক কেমন।।এমন কি আমিও জানিনা।। ও যা চায় তা আদায় করেই নেয়।।এতদিনে ঠিক বুঝে গেছি ওকে।।আমরা কিছু করতে পারবো না ওর।। "


---" কেন পারবো না।। ও পুলিশ বলেই যা ইচ্ছে করবে নাকি??"


---" এটাই তো ব্যপার মা।। ও শুধু পুলিশ না।। ও বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যানদের একজনের ছেলেও।।আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না।। পরে যদি কিছু বলি তাহলে হয়তো আমাদেরই ক্ষতি হবে!!তাছাড়া তুমি দেখেছো রেয়ানের রিহানের সাথে কত ভালো ভাব হয়েছে,,, ও যদি রিহানের কিছু করে।।আমি চাই না আমার কোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রিহানের কিছু হোক।। "


---" ও যদি তোকে বিয়ে করতে বলে।। তাহলে করবি?? "


---"........ "


---" কি হলো বল?? "


---" না "


---" তাহলে?? "


---" মা প্লিজ এ ব্যপারে আমাকে কিছু বলো না।। এত প্রেসার নিতে পারছি না আমি।।"


কথাটা শুনে মা চুপ হয়ে গেলেন।।হয়তো ভাবছেন,,"আসলেই আমি এত প্রেসার নিতে পারবো না!!"চুপচাপ খেয়ে নিলাম ২জনেই।।খাওয়া শেষে সব ঠিকঠাক করে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।ড্রইং রুমে যেতেই আমি অবাক!! রেয়ান আর রিহান সেই লেভেলের দুষ্টামি করছে।।আজ প্রথম মানুষটাকে হাসতে দেখলাম।।খুব প্রাণবন্ধ ভাবে হাসছে সে।।সাথে আমার ছেলেটাও।।খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছে সে রেয়ানকে।।


আমি তাদের মাঝে উপস্থিত হতেই রেয়ান হাসি বন্ধ করে দেয়।।আমাকে বসতে বলে,,, রিহানকে বলে.....


---" রিহান,,, তুমি তোমার নানুর কাছে যাও তো।। আমি আর তোমার মা একটা জরুরি কথা বলল "


---" আচ্ছা বাবা "


বলেই রিহান দোঁড় দিয়ে মার রুমে চলে যায়।। রিহান যেতেই রেয়ান ঠিক হয়ে বসে।।শান্ত কণ্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে.....


---" রিহান বলছিল,,ওর নাকি ৪ বছর।। "


---" হুম "


---" তাহলে তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিলো?? "


কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে তাকালাম,,, সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। হয়তো উত্তরের আসায়।।আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলি।।আমাকে কিছু বলতে না দেখে সে আবারও বলল.....


---" আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস কিরেছি।।উত্তরটা কি দেওয়া যায় না?? "


---" হুম "


---" তাহলে বলো,,তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিল??"


---" হুম "


---"কেন??"


সে এবার কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে ফিরে বসল।।সাথে আছে তার সেই তীক্ষ্ম দৃষ্টি।।আমি মাথা নিচু করেই বলতে লাগলাম.....


---" আমি অনেক গরিব ঘরের মেয়ে।। বাবা টাকার জন্য আমাকে একটা বড় লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন "


আমার কথা শেষ হতেই রেয়ান সোফার সাথে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে।। তারপর বলে.....


---" এবার বুঝলাম,, তোমার মতো একটা মেয়ে ডিভোর্সি কেন??হয়তো তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে বুড়ো ছিল।। তোমাকে অনেক মারতোও।।আর তার নারীর নেশা ছিল।।কয়েকদিন যাওয়ার পরও তোমাকে ভালো লাগছিল না তার।। তাই তোমাকে ছেঁড়ে চলে গেছে,,,তাই না??"


কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম....


---" জীবনেও না।। আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার ঠিক বয়সই ছিল,,আর সে অনেক ভালো ছিল "


---" তাহলে?? "


---"......... "


---" তুমি কিছু বলছ না মানে আমি যা ভাবছি ওইটাই সত্যি।। তাছাড়া অন্য কোনো কারন তো দেখছি না আমি।।তোমার এক্স হাসবেন্ড নিশ্চয় খারাপই ছিল।। "


উনার কথাগুলো শুনে রাগ হচ্ছে আমার।। প্রচুর রাগ।।রাগ সামলাতে না পেরে জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম.......


---" আমার শুভ অনেক ভালো,,,বুঝেছেন অনেক ভালো।। ও আমাকে অনেক ভালোবাসতো "


কথাটা বলতে গিয়ে ২ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আমার চোখ থেকে।। রেয়ান কিছু বলতে যাবে তখনি তার একটা ফোন আসে,,,স্ক্রিনে থাকা নামটা দেখেই সে কিছু না বলে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,, আমি সেখানেই বসে আছি।।আসলেই কেন শুভ আমাকে রেখে গিয়েছিল।। কারনটা যে এখনও আমার অজানা!!


.

.

.


সকালে......🍁🍁


কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যাচ্ছি আমি।।রাস্তায় অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছি রিকশার অপেক্ষায়।।কিন্তু কোনো রিকশা পাচ্ছি না।। বাধ্য হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি।।হঠাৎ মনে হয় আমার পাশে একটা গাড়ি আছে,,আর সেটা আমার সাথে সাথেই এগোচ্ছে।। পাশে তাকাতেই দেখি রেয়ান।।সে গাড়ি চালাচ্ছে।। ঠিক চালাচ্ছে না!! আমি যেভাবে হাঁটছি সে ঠিক সেই ভাবেই গাড়িটা আগাচ্ছে।।আমাকে তার দিকে ফিরতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে......


---" হাই মরুভূমি "


কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে হাঁটতে থাকি।।তার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার।।কি ভাবে কি সে আমাকে ??আমার কি কিষ্ট হয় না,, রাগ নেই আমার মাঝে,,, কাল যা হলো তার জন্য খুব রেগে আছি আমি তার উপর।।।আজ যাই করুক না কেন,,, কথা বলব না আমি তার সাথে।।


এদিকে রেয়ান বকবক করেই যাচ্ছে।।কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিচ্ছি না আমি।।এবার বেশ বিরক্তি নিয়েই সে বলল.....


---" মরুভূমি গাড়িতে উঠো "


---"....... "


---" তোমাকে আমি কি বলেছি।।উঠক গাড়িতে "


এবার কিছুটা রেগেই বলল কথাটা রেয়ান।।কিন্তু তাও আমি পাত্তা দিলাম না তাকে,,, নিজের মতো হাঁটছি।।হঠাৎ রেয়ান গাড়ি থেকে নেমে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।সাথে সাথে আমি আশেপাশে তাকাতে শুরু করি।।রাস্তার সব মানুষ আমাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।। কিছু মানুষ তো মুখ টিপে টিপে হাসছে।। এসব দেখে আমি নিজেকে যথা সম্ভব রেয়ান থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম,,,কিন্তু পারলাম না।। রেয়ান আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি লক করে দিলো।।এতে কিছুটা জোড়েই রেয়ানকে বললাম.....


---" আপনি যা করছেন তা একদমই ঠিক না।। সবসময় আপনি যা চাবেন তা কিন্তু হবে না।।


আমার কথা শুনে রেয়ান আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল......


---" সবসময় আমি যা চাইব তাই-ই হবে।। আজ তোমার অতীতটা জেনেই ছাঁড়বো!! "


বাগান জাতীয় কোনো জায়গায় আছি আমি আর রেয়ান।।চারপাশে ফুলের ঘ্রাণ ছঁড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।। বিরাট বড় গাছের নিচে বসে আছি আমি,,,আর আমার পাশেই বসে আছে রেয়ান।।সে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।। হয়তো উত্তরের আশায়।।কিন্তু তা বুঝতে পেরেও কোনো কথা বলছি না আমি।। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।।এবার কিছুটা অস্থির হয়েই রেয়ান জিজ্ঞেস করে......


---" মিরা,,,তুমি কি আমাকে তোমার অতীতটা বলবে না?? "


---" কি ব্যাপার মিস্টার রেয়ান।। আজ প্রথম আমার নাম ডেকেছেন আপনি "


---" না প্রথমবার না,,, ২বার।। "


---" ও "


---" কথা পেঁচিও না।।যা জানতে চাই তা তাড়াতাড়ি বলো।। নাহলে.... "


তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি বলতে শুরু করলাম.......


---" আপনাকে তো বলেছিলাম আমরা অনেক গরিব।।বাবা লালনপালন করতে পারতেন না আমার।।তাই ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে করিয়ে দেন আমাকে।। যার সাথে আমার বিয়ে হয় বিয়ের আগ পর্যন্ত তার কোনো কিছু সম্পর্কেই জানতাম না আমি।। শুধু শুনেছিলাম সে অনেক বড়লোক।। আমাকে অনেক সুখে রাখবে।। আমিও মেনে নিলাম।।এছাড়া যে কোনো উপায় ছিল না আমার।।না খেয়ে থাকা থেকে তো বিয়েটা করে ফেলাই উত্তম মনে করেছিলাম।।যা কিছুই হোক না কেন?? ২মুঠো ভাত তো খেতে পারবো!! আপনি কালকে একটা কথা বলেছিলেন,,,হয়তো আমার স্বামী বুড়ো হবে অথবা তার নারীর নেশা আছে।। বিয়ের আগে আমার সেটাই মনে হয়েছিল।।নাহলে আমার মতো একটা গরিব মেয়েকে একজন বড়লোক ছেলে বিয়ে করবে কেন?? কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,,,বিয়ের রাতে যখন তাকে দেখলাম,,তখন আমি পুরো অবাক!! একজন সুপুরুষ আমার সামনে বসে ছিল।।সত্যি বলতে এত সুন্দর পুরুষ আমি কখনও দেখি নি।।তখনই তার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম আমি।।সে রাতে অনেক কথা বলি আমি তার সাথে।। কথায় কথায় জানতে পারি তার নাম শুভ।। সে নাকি আমাকে একটা পার্কে দেখেছিলো।।তখনই আমাকে পছন্দ হয় তার।।আর আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন।।


উনি অনেক ভালো ছিলেন ।।আমার অনেক খেয়াল রাখতেন।।শুভর পরিবার বলতে আমি আর তার ছোট বোন রিহাই ।।এছাড়া আর কেউই ছিল না।। ছোট বেলাই তার বাবা-মা মারা যান।।আত্বীয়-সজনরাও সব দেশের বাইরে থাকেন,,,,


শুভ চেয়েছিলেন আমি যেন কলেজে ভর্তি হই।।ভর্তি হয়ই-ও।।কিন্তু কিছুদিন পরেই জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।।জানেন যেদিন উনাকে এ কথা বলি তখন তিনি অনেক কেঁদে ছিলেন,,,এজন্য না যে আমাদের বেবি হবে।। কেঁদে ছিলেন কারন আমার কম বয়স।। এত কম বয়সে আমার বেবি হবে কিভাবে?? আমি কিভাবে পড়ালেখা করব।।অনেকবার চেয়েছিলেন বেবি টা নষ্ট করে ফেলতে।।আমি একটু বড় হই।।তখন বেবি নিবেন।।কিন্তু আমি মানা করি।।কেন যেন মনে হচ্ছিল বেবিটা আমার প্রয়োজন।। দেখুন না আসলেই ও আমার প্রয়োজন।।এখন তো ওকে আমার লাগে তাই না?? ওকে ছাঁড়া যে আমি বাঁচতে পারতাম না।।


যখন রিহান হয়।।তখন শুভর চেহারা দেখার মতো ছিল।।অনেক খুশি ছিলেন তিনি।।ভেবেছিলাম রিহান হওয়ার পর আমি আর পড়ালেখা করতে পারব না।। কিন্তু জানেন শুভ আমাকে পড়ালেখা করতে দিয়েছিল।।সারাটাদিন আমার সেবা করত।।বলতে গেলে আমার থেকে রিহানকে সেই বেশি দেখাশুনা করত।।তার সাথে আমার পরিবারকেও আগলে রেখেছিল।।বাবাকে একটা চাকরি দেন।।আমরা এখন যে বাসায় আছি।।ওইটাও শুভ বানিয়ে দিয়েছিল বাবাকে।।বেশ ভালোই চলছিল আমাদের।।কিন্ত......"


কথাটা বলেই একটু থেমে যাই।।কয়েকটা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করি......


---" তখন আমি ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে মাত্র অনার্সে উঠেছিলাম।।বেশ ভালোই কাটছিলো আমাদের সংসার।।আনন্দের শেষ ছিল না।। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুভর একটা জরুরি কাজ পড়ে যায়।। তাকে ইমার্জেন্সি আমেরিকা যেতে হবে।।সবার কাছে বিদায় নিয়ে সে ওইদিন রাতে চলে যায় আমেরিকা।।আমার স্পষ্ট মনে আছে,,, যাওয়ার আগে সে বলেছিলো আমেরিকা থেকে খুব জলদিই চলে আসবে আমাদের কাছে।। কিন্তু আসে নি জানেন।।তখন যে গেল এখন পর্যন্ত সে আর আমাদের কাছে ফিরে নি।।আমার দোষ কি ছিল আমি জানি না।। তবে ও আমেরিকা যাওয়ার ২০ দিন পর আমাদের কাছে একটা চিঠি আসে,,,সেখানে লিখা ছিল আমি যেন আমার বাবার বাড়ি চলে যাই।।ও নাকি চায় না আমি ওর বাড়িতে থাকি।।শুভ ওর বোন কেও নাকি বলেছে যেন আমি এ বাসায় না থাকতে পারি।। আমাকে যেন ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ওদের বাড়ি থেকে।। তেমনটাই হয়।।তবে এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।। আমার বাবা যে ওদের কোম্পানিতে চাকরি করত।।সেখান থেকে তাকে ঘাড় থাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।।বাবা অনেক বুড়ো ছিলেন।।এত কিছু একসাথে নিতে পারেন নি।। তাই হয়তো অসুস্থ হয়ে যান ।।"


কথাগুলো বলতে গিয়ে কথা বারবার আটকে যাচ্ছিল আমার।।তবুও নিজেকে সামলে নিলাম।। তারপর আবার বলতে লাগলাম.....


----" এ-র ১ মাস পর আমাদের বাসায় ডিভোর্স লেটার আসে।।সাথে ৬লাখ টাকাও।। এসব দেখে বাবা আর মা ২জনেই আরও অসুস্থ হয়ে যান।।ভাগ্য ক্রমে মার তেমন কোনো বড় অসুখ হয় নি।।কিন্তু বাবার অবস্থা ভালো ছিল না।। এ ৬ লাখ টাকার ৫লাখ টাকাই বাবার চিকিৎসা করতে চলে যায়।।কিন্তু তবুও বাবা সুস্থ হন না।। চলে যান আমাদের ছেঁড়ে।। এ দুনিয়া ছেঁড়ে।।এরপর থেকে শুরু হয় লোকেদের কথা।।তারা কি বলত জানেন।।আমি নাকি এটারই যোগ্য ছিলাম।।সুখ জিনিসটা আমার কপালে নেই।। আমি নাকি আমার স্বামকে আগলে রাখতে পারি নি।।আমি একটা.....।। এসব কথা শুনে ইচ্ছা করত মরে যেতে।। কিন্তু আমার যদি কিছু হয় তাহলে আমার মা আর ছেলে কিভাবে থাকবে।। তাই নিজেকে শক্ত করে নিলাম।।এরপর থেকে লোকেদের কথায় কান দিতাম না।।নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।।প্রতিদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের টিউশনি করাতাম।।এ-র থেকে বেশি তো করতে পারব না।।আমি মাত্র ইন্টার পাশ।।কেই-বা আমাকে ভালো কোনো চাকরিতে নিবে।।কিন্তু তাতেও আমি দমে যাই নি।। যতটুকু পারতাম।।ততটুকু কাজ করতাম।।এভাবে কেটে যায় পুরো ১বছর ৫ মাস।।এখন সব কিছু মানিয়ে নিয়েছি আমি।।কিন্তু কেন যেন শুভর কথা মনে পড়লে নিজেকে আটকে রাখতে পারি না।।"


কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যাই।। রেয়ানও চুপ করে আছে।।হঠাৎ সে আমার দিকে ফিরে বলে উঠে.....


----" আচ্ছা আমার যতটুকু মনে হয় শুভ খারাপ ছিল।।তাহলে তুমি ওকে ভালো বলছিলে কেন?? "


----" কেমনে খারাপ বলুন তো।।এতকিছু করেছে সে আমার জন্য তাকে খারাপ কিভাবে বলি আমি।।হ্যাঁ ও যা করেছে তা ওর করা উচিত ছিল না।। আবার হয়তো আমারই কোনো দোষ ছিল।। "


---" এইতো বাংলাদেশের ডিপিকা মাইয়া,,, যত কিছু হোক না কেন সব দোষ তাদেরই।।স্বামীরা যেন ধোঁয়া তুলসি পাতা "


----" মানে?? "


----" মানে...দোষ ওর ছিল তোমার না।। ও-ই খারাপ।। "


---" হয়তো!! "


---" আবার বলে হয়তো "


আমি চুপ করে থাকলাম।।আসলেই রেয়ান ঠিক বলছে।। শুভ হয়তো খারাপই ছিল।। কিন্তু এতগুলো বছর থেকেছি তার সাথে।।কই কোনো বাজে দিক তো দেখি নি তার ।।তাহলে হুট করে এত পরিবর্তন কেন??এগুলো ভাবছি হঠাৎ রেয়ান আবার বলে উঠল....


--" আচ্ছা এত কম বয়সে বেবি হয়েছিল তোমার।।কোনো কি খারাপ ইফেক্ট পড়ে নি তোমার উপর??"


---" না,,,হয়তো আমার ভাগ্যে এমন কিছু ছিল না।। "


---" হুম "


---" আচ্ছা রেয়ান আপনি আমাকে কোথায় প্রথম দেখেছিলেন??"


কথাটা শুনে রেয়ান আমার দিকে একবার তাকালো।।পরক্ষনে উঠে দাঁড়ায় সে,,প্যান্টের পকেটে হাত রেখে বলে.....


----" চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।।পরে নাহলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে "


উনার কথায় বেশ বুঝতে পারছি তিনি আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন।। কিন্তু কেন?? তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম.....


---" উত্তরটা কি দিবেন না আমাকে?? "


---" সময় আসুক,,একদিন না একদিন পেয়ে যাবে "


বলেই তিনি গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন......


.

.

.

.


রাতে......🍁🍁


ড্রইংরুমে রিহানকে খাওয়াচ্ছি আমি।।সামনেই টিভি চলছে।। রিহান টিভির রিমোট দিয়ে বারবার চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।। হঠাৎ সে আমাকে বলে উঠে.....


----" মা,, মা দেখো।। তোমাকে আর বাবাকে টিভিতে দেখাচ্ছে "


কথাটা শুনে আমি টিভির দিকে তাকালাম।।সেখানে তাকাতেই আমার চোখ বাইরে আসার উপক্রম।।টিভিতে আসলেই আমাকে আর রেয়ানকে দেখাচ্ছে।।আজকে সকালের ঘটনা।। যেখানে আমাকে রেয়ান কোলে করে গাড়িতে বসাচ্ছে।। ভিডিওটা ২বার দেখিয়ে টিভিতে একজন মহিলার অভির্ভাব ঘটে।।সে তার কাজ অনুযায়ী বলা শুরু করে....

##

" ব্রেকিং নিউজ,,, বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যান আজিজ আহমেদের ছেলে রেয়ান আহমেদ একটা মেয়েকে কোলে করে গাড়িতে বসাচ্ছেন।।গোপন সুত্রে জানা গেছে যে মেয়েটি একজন ডিভোর্সি আর তার একটি ছেলেও আছে।। এখন কথা হচ্ছে রেয়ান আহমেদ এমন মেয়ের সাথে কেন?? কোনো কি সম্পর্ক আছে তাদের মাঝে।। তাছাড়া রেয়ান আহমেদ মেয়েটির এলাকারই একজন পুলিশও।।আসলেই কি আছে তাদের মাঝে?? আর কতদিন ধরে চলছে এসব।।আসুন জেনে নি...... "


বলেই আরও কয়েকটি ভিডিও দেখায় তারা।।যেখানে আমার এলাকার কিছু লোকজন আছে,,, এ-ই লোকগুলো সেই লোক যারা আমাকে আগে কথা শুনাতো।। এখনও আমার নামে মদনাম করতে বাদ রাখে নি তারা,,, একজন তো আমাকে বেশ্যা বলছে।।আরও কত বাজে কথা!! এগুলো শুনে টপটপ করে চোখ থেকে পানি পড়ছে আমার।।এরমাঝে হঠাৎ দরজার কলিংবেল বেজে উঠে।।মা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রেয়ান।।রেয়ানকে দেখতেই আমার রাগ উঠে যায়,,,সে কাছে আসতেই আমি তার কলার চেপে ধরি।।রাগি কন্ঠে বলি.....


----" এখন তো খুশি আপনি?? দেখুন টিভিতে কি বলছে সবাই আমার নামে।। আমি নাকি বে,,,বেশ্যা।।সব আপনার জন্য হয়েছে সব।। "


কথাটা বলতে বলতেই রেয়ানকে মারা শুরু করলাম।।তা দেখে রিহান মায়া ভরা কন্ঠে বলল....


----" মা বাবাকে মারছো কেন??"


----" কোনো বাবা না এ লোক তোর।। আর একবার যদি কোনো অচেনা লোককে বাবা ডাকিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।।"


কথাটা ধমক দিয়েই বললাম আমি।।এ প্রথম রিহানকে ধমক দিয়েছি। ।পানিতে চোখ ভরে গেছে আমার ছেলেটার।।মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।। ওর চোখের পানি দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।। কিন্তু তাও নিজেকে শক্ত রাখলাম।। মাকে উদ্দেশ্য করে বললাম....


---" মা রিহানকে নিয়ে যাও এখান থেকে "


আমার কথা শুনে মা ততক্ষনাত রিহানকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।।এদিকে রিহানকে বকা দিতে দেখে রেয়ান আমাকে কিছুটা রাগি কন্ঠে বলল....


----" আমার উপরের রাগ তুমি রিহানের উপর কেন ঝাঁড়ছো??"


---" কেন কষ্ট হচ্ছে বুঝি?? আচ্ছা আপনার কেন কষ্ট হচ্ছে?? কষ্ট তো আমার হওয়ার কথা তাই না?? তাহলে আপনার এত দরদ কেন ওর প্রতি?? আপনি আমাদের কেউ না,,,দূরে থাকবেন আমাদের কাছ থেকে।। "


---" দেখো মিরা,,শান্ত হও "


----" কেন?? শান্ত হবো কেন আমি?? আমি কোনো শান্ত হচ্ছি না।। আমার কি মনে হয় জানেন,,,, টিভিতে যা দেখাচ্ছে সব আপনি ইচ্ছা করে করেছেন।।যাতে আমি আপনাকে বিয়ে করি তাই না।। আরে আপনি এত নিচ যে আমাকে বেশ্যা বানিয়ে দিলেন??"


কথাটা শুনতেই রেয়ান রেগে গেলো।।আমার হাত শক্ত করে ধরে জোড়ে চিল্লিয়ে "মিরা" বলে উঠল।।এতে আমি তার হাত এক ঝটকায় সড়িয়ে দিলাম।।তারপর বললাম....


---" ছুঁবেন না আপনি আমাকে,, আপনার মতো পশু,, জানোয়ার,,অমানুষের হাতের ছোঁয়ায় আমার ঘৃণা হয় বুঝেছেন।।ঘৃণা হয় আমার।।"


কথাটা শেষ হতেই রেয়ান আমার গাল চেপে ধরল।।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে.....


----" আমার ছোঁয়ায় ঘৃণা হয় না তোর।। এ ছোঁয়াই তোর সহ্য করতে হবে।। "


বলেই রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দিলো।।আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,আমি সেখানেই বসে পড়ি।।কেন যানি আজ চোখের পানি বাঁধা মানছে না!!


.

.

.

.


রাত প্রায় ৩টা।। হঠাৎ-ই আমার ঘুম ভেংগে যায়।।পানির পিপাসা লাগছে খুব।।তাই উঠে রান্না ঘরে গেলাম পানি খেতে।।হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পাই,,,,দরজার কাছে যেতেই শুনতে পাই কেউ একজন মরুভূমি মরুভূমি বলে ডাকছে।। বুঝতে পারছি সেটা রেয়ান।।তাই সেখান থেকে চলে আসতে নিবো তখনই রেয়ান জোড়ে জোড়ে বলে উঠে....


----" ওই মরুভূমি দরজা খুল।।নাহলে কিন্তু দরজা ভেংগে ফেলবো "


বলেই জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো।। এমন ভাবে ধাক্কাচ্ছে যেন এখনই দরজা ভেংগে ফলবে।। যদি সত্যি সত্যি ভেংগে ফেলে দরজা?? ভেবেই দরজাটা খুললাম আমি।।দরজা খুলতেই দেখি রেয়ান কিছু একটার বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢুলছে।। আমাকে দরজা খুলতে দেখে সে একটা হাসি দিয়ে বলে......


----" আই লাভ ইউ মরুভূমি "


রেয়ান মুখ খুলতেই একটা বাঝে গন্ধ আসে আমার নাকে।। সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বলি.....


----" রেয়ান আপনি ড্রাংক?? "


----"ইয়াপ"


----" ড্রাংক হয়ে এখানে কি জন্য এসেছেন।।তামাশা পেয়েছেন নাকি।।বের হোন আমার বাসা থেকে "


----" নোপ "


----" কি ইয়াপ,,,নোপ লাগিয়ে রেখেছেন।। যান এখান থেকে "


কথাটা শুনে রেয়ান তেড়ে আসে আমার কাছে।। তারপর কি মনে করে বাসার দরজা লাগিয়ে দেয়।।তা দেখে আমি কিছুটা ভিত কন্ঠে বললাম....


----" দরজা লাগাচ্ছেন কে#ন??"


সে আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে।। তার হাতের বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে....



---" মদ খাবা মরুভূমি।।চলো ২ জন একসাথে নেশা করি।। "

কথাটা বলেই রেয়ান ঢুলতে ঢুলতে আমার দিকে এগুতে থাকে।। এতে আমি পিছাতে পিছাতে কিছুটা ধমকের সুরেই রেয়ানকে বলি......


---" দেখুন!! "


---" তো দেখাও না।। মানা করেছে কে?? ওয়েট,,, আমি দেখছি কেউ মানা করেছে নাকি।।কার এত বড় সাহস আমার বেক্কল মরুভূমিকে মানা করে??আজকে ও-ই ব্যটার একদিন কি আমার একদিন।। "


বলেই নিজের চারপাশে তাকাতে শুরু করে।। কেউ আছে কি-না তা দেখার জন্য।।এদিকে আমি বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে।। নেশা করে কি এ-র মাথা গেছে নাকি?? কি সব আবল তাবল কথা বলছে।। ইচ্ছে তো করছে এক বারি দিয়ে তার মাথা ফেটে দিতে।।কিন্তু এখন রাগলে চলবে না!!তাই ইচ্ছেটা সাইডে রেখে শান্ত কণ্ঠে রেয়ানকে বলি......


---" রেয়ান এখানে কেউ নেই।। আপনি আর আমি আছি শুধু।। "


---" তাহলে তো ভালোই হলো।।যত ইচ্ছে তত মদ খাইতে পারবো।।কি বলো??"


তার কথাশুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না।। তারে আমি কই কি আর সে আমারে কয় কি।।উফফ,,, বিরক্তিকর একটা অবস্থা!! বুঝতে পারছি না রেয়ানকে বাসা থেকে বের করব কিভাবে।। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে মিষ্টি সরে রেয়ানকে বললাম.....


---" দেখুন রেয়ান,,,এখন অনেক রাত হয়েছে,,এভাবে কারও বাসায় এত রাতে আসতে হয় না।। লোকে দেখলে কি বলবে।।আপনি প্লিজ যান এখান থেকে।।"


---" না আমি যাবো না।। আমি আমার মরুভূমির সাথে নেশা করব।।"


---" এখন কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি রেয়ান।। ভালোভাবে বলছি যান এখান থেকে নাহলে...."


---" নাহলে কি করবা?? কিছুই করতে পারবে না তুমি আমার।।আমি তোমাকে বলছি,,, তুমি আমার সাথে নেশা করো নাহলে আমি তোমাকে চুমু দিবো।। তাও আবার লিপ-এ "


---" মানুষ যে এত বাজে হতে পারে তা আপনাকে না দেখলে তো আমি জানতেই পারতাম না।।দেখুন আমি আবারও বলছি যান আমার বাসা থেকে,,, নাহলে আমি কিন্তু চেঁচামেচি করব।।আপনি কি চান আমি চেঁচামেচি করে লোকজন ডাকাই?? "


---" ডাকো!! দেখি তোমার কত বড় গলা।।কিন্তু আমি সিউর!!ফাটা গলা যেমন,,, তেমনই হবে তোমার গলার সর।।তাছাড়া এতে তোমারই লস।।তোমার চেঁচামেচিতে লোকজন তোমার বাসায় আসবে,,আমাদের এভাবে এত রাতে দেখবে।।তারপর অনেক বাজে বাজে কথা বলবে।।এন্ড লাস্টে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।। " [ একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে ]


---" রেয়ান,,আপনি এত বাজে কেন বলুন তো?? এত কিছুর পরও আমার সামনে আসতে আপনার লজ্জা করে না?? কিভাবে বলছেন এগুলো?? মাতাল অবস্থায় থেকেও এত বাজে কথা বলছেন ??"


---" হ্যাঁ বলছি।।কারন এ-ই মদের নেশা আমাকে গ্রাস করতে পারে না,, কে পারে জানো?? তুমি।।তোমার নেশা যে আমাকে খুব বাজে ভাবে গ্রাস করেছে।।চাইলেও সেখান থেকে বের হতে পারবো না।। মাতাল অবস্থায় থেকেও বারবার তোমার কথাই মনে পরে আমার।।কি করব বলো?? আমি যে নিরুপায়।।তোমার বাঁধনে আমি খুব বাজে ভাবে আটকে পড়েছি।।"


---" আপনি জীবনেও সুধরাবেন না মিস্টার রেয়ান।।এখনো আপনি এগুলো বলছেন??আমার আর এসব সহ্য হচ্ছে না রেয়ান।।প্লিজ জান আমার বাসা থেকে।।হাত জোড় করছি আপনাকে।। প্লিজ চলে যান।।আপনার এসব কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না!! "


আমার কথা রেয়ানের কানে গেছে নাকি জানি না,,, তবে সে কিছু না বলে দরজার দিকে যেতে লাগলো।।এটা দেখে আমি ভেবেছিলাম রেয়ান হয়তো চলে যাবে।। কিন্তু না,,, সে দরজার দিকে দু'পা এগিয়েই আবার আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।তারপর আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল.....


---" এখানে মদ খেয়ে মজা নেই বুঝলে মরুভূমি।।একটা কাজ করি,,,চলো ছাদে যাই।।সেখানে খাবো।।ছাদটা কোন দিকে বলতো??"


---" জীবনেও বলব না ছাদ কোন দিকে।।নামান আমাকে,, কোলে নিয়ে আছেন কেন আমায়??"


---" আমার ইচ্ছে।।আর শুনো,,, তোমাকে ছাদ কোথায় সেটা বলতে হবে না।। আমি যানি ছাদ কোন দিকে।।জাস্ট ফরমেলিটির জন্য বললাম।।এখন সেটার উত্তর না দিয়ে নিজের বেয়াদবির প্রমাণ দিলে তো আমার কিছু করার নেই।।"


---" কি বললেন আপনি?? আমি বেয়াদপ??আর ফরমেলিটি,,এখানে ফিরমেলিটির কি আছে?? "


---" হ্যাঁ তুমি বেয়াদব।।চরম রকমের বেয়াদব,,, এন্ড আমার যা ইচ্ছে আমি তোমাকে তাই-ই ডাকবো,,ইচ্ছে করলে ফাজিল,,বস্তি সব ডাকবো,, তোমার তাতে কি হ্যাঁ??"


---" আরে আমার ব্যাপারে বলছে আর আমাকেই জিজ্ঞেস করে আমার তাতে কি?? মাথা-টাথা কি গেছে নাকি আপনার?? নামান আমাকে।। আর এক্ষুনি বের হোন আমার বাসা থেকে।।"


আমার কথা তার কানে ডুকেছে বলে মনে হয় না।। সে তার মতো করে ছাদে নিয়ে যেতে লাগলো আমাকে।।আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা রাগি কণ্ঠে বললো......


---" বেক্কল মরুভূমি একটা "


.

.

.


মাথার উপরে বিশাল চাঁদ বিরাজ করেছে।।চাঁদের আলোয় চারপাশটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।সাথে দেখা যাচ্ছে রেয়ানের উদ্ভট কান্ডগুলোও।।ছাদের এক পাশে বসে আছি আমি।।আর আমার পাশে বসে আছে রেয়ান।।আমাদের ঠিক সামনে রাখা হয়েছে মদের বোতলটা।।রেয়ান এক দৃষ্টতে তাকিয়ে আছে সেটার দিকে।।এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন মদের বোতলটা নিয়ে তার কত শত চিন্তা।।হঠাৎ সে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল......


---" আচ্ছা মরুভূমি,,,আমি মদের বোতলটা থেকে মাত্র এক ঢোক খেয়েছি।।তাহলে বোতলের মদ অর্ধেক হলো কিভাবে??আমার অগোচড়ে এখান থেকে তুমি কি মদ খেয়েছো নাকি??"


এমতাবস্থায় আমার কি রিয়েকসন দেয়া উচিত বুঝতে পারছি।।মানে,, আমি মদ খেয়েছি এটা রেয়ানের ধারণা।। লাইক সিরিয়াসলি??ইচ্ছে তো করছে এখনি ছাদ থেকে ফেলে দি একে।।আমি বুঝিনা এটা কি ধরণের পুলিশ।। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান হুট করে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।।আর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমায়।।এতে আমি কিছুটা কেঁপে উঠি।।রেয়ানকে হালকা ধাক্কা দিতে দিতে বলি......


---" মিস্টার রেয়ান,,,,প্লিজ উঠুন আমার কোল থেকে।।"


---" উহু "


---" কি উহু?? আমি আপনাকে উঠতে বলেছি রেয়ান।।উঠে তাড়াতাড়ি আমার বাসা থেকে বের হন।। নাহলে কিন্তু....... "


রেয়ানের দিকে তাকাতেই আমি চুপ হয়ে যাই।।আমি এত কিছু বললাম,,, কিন্তু এ ব্যক্তির কানে মনে হয় কিচ্ছু যায় নি।।সে তো আরামসে আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে।।ঘুমন্ত অবস্থায় কেমন যেন লাগছে রেয়ানকে।।একদম বাচ্চা বাচ্চা!! ঠোঁট দু'টোও কেমন করে উল্টিয়ে রেখেছে।।কেন যানি না এখন রেয়ানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার ।।ভাবছি ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলি।।তাই রেয়ানের দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম......


রেয়ানের চুলগুলো কালো না।। কিছুটা লালচে রঙ্গের।।সাথে সিল্কিও অনেক।।সবসময় তার সামনের চুলগুলো,,, তার চোখের সামনে পরে থাকে।।রেয়ানের ভ্রুগুলোও লালচে রঙ্গের।।একদম পার্ফেক্ট।।আর তার চোখের পাপড়িগুলো।।সেগুলো অনেক ঘন ঘন।।ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে।। চোখের বাম পাশে একটা ছোট তিল আছে।। একদম আমার মতো।। তার আর আমার ঠিক একই রকমের তিল আছে চোখের বাম পাশটায়।।যাক,,,এতদিনে তার সাথে আমি আমার কোনো মিল পেলাম।।ভেবেই অনমনেই একটা হাসি দিয়ে দিলাম।। পরক্ষনে আবার তাকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করি।।রেয়ানের নাকটা অনেক সরু,, আর তার ঠোঁট,,, সেটা তো অনেক গোলাপি।।আচ্ছা কোনো ছেলের কি ঠোঁট এত গোলাপি হয়?? তারউপর তিনি ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছেন!! আসলে উনি সুন্দর।।শুধু সুন্দর না অনেক সুন্দর।।হঠাৎ খেয়াল করলাম তার গায়ের রঙ্গের দিকে।।এখানেও সে ১০০ তে ১০০।। আমার থেকেও তিনি তিন ডাবল সাদা।।কেন যেন আমার আর তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না। ।খুব হিংসে হচ্ছে আমার।।এত সুন্দর কেন তিনি?? তাও আবার আমার থেকেও!!


.

.

.


ভোরের প্রথম আলো আমার চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেংগে যায়।।রেয়ান এখনও আমার কোলে ঘুমুচ্ছে।।তার দিকে একবার তাকিয়ে তাকে নিচে শুইয়ে দিলাম।।তারপর চলে আসলাম নিচে।।নিজের রুমে!!

.

.

সকাল প্রায় অনেক.....আমি,, রিহান আর মা সবাই নিচে।। শুধু রেয়ান ছাঁড়া।। সে এখনো মনে হয় ঘুমুচ্ছে ছাদে।।নিচে আসার পর থেকে একবারও তার কাছে যাই নি আমি।।হঠাৎ কলিংবেলের বেলের আওয়াজ পাই।।দরজা খুলতেই দেখি একদল রিপোটার্স দাঁড়িয়ে আছে।।আমাকে দেখতেই তারা নানা বাজে বাজে প্রশ্ন করতে শুরু করেন আমাকে।।সাথে সাথে আমি দরজা বন্ধ করে দি।।বিরক্তি লাগছে এগুলো আমার।।এসব মিডিয়ার লোক এখন আমার বাসার সামনেও চলে এসেছে।।তাদের জন্য হয়তো বাসা থেকেও বের হতে পারবো না আমি।।আসতে আসতে রাগতে শুরু করি আমি।।কেন যেন রাগ লাগছে প্রচুর।।আর তা আরও বেড়ে যায় রেয়ানকে দেখে।। সে ধীর পায়ে আমার দিকে এগুচ্ছে।। তাকে দেখে আমি রাগি কণ্ঠে বললাম......


---" দেখুন আপনার জন্য কি অবস্থা হয়েছে আমাদের।।এখন তো বাসা থেকে বেরও হতে পারবো না আমরা।।সাথে লোকেদের কথা তো আছেই।।কেন এমন হচ্ছে রেয়ান।।আপনার জন্যই তো তাই না??তাহলে কেন চলে যাচ্ছেন না আপনি আমাদের জীবন থেকে?? "


কথাটা শুনে রেয়ান কোনো জবাব দিলো না আমায়।।শুধু তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে এগুতে লাগলো।।তা দেখে মা এবার তার ঝাঁঝালো কন্ঠে রেয়ানকে বলল.....


---" এ-ই ছেলে,, তুমি আমার বাসায় কিভাবে?? আর আমার মেয়ের দিকে এভাবে এগোচ্ছ কেন?? বের হও আমার বাসা থেকে।।"


মার কথা শুনে রেয়ান তার দিকে তাকালো।।কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে মাকে বলে.....


---" দেখুন শাশুমা,,আমি এখানে কিভাবে তা আপনার না জানলেও চলবে।।আর শুনুন,, আমার নাম রেয়ান,,আমাকে রেয়ান বলে ডাকলেই আমি বেশি খুশি হবো।।আর আরেকটা কথা।।আপনার মেয়ে আমার আমানত,,তাই ওর সাথে আমি কি করি না করি তা আপনার না দেখলেও চলবে।।ইস দেট ক্লিয়ার??"


কথাটা বলে রেয়ান আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না।। আমাকে কোলে নিয়ে সোজা পা দাঁড়ালো আমার রুমের দিকে।।এদিকে সোফায় আরাম করে ঘুমিয়ে আছে রিহান।।এতক্ষন যে এতকিছু হলো তা যেন সে টেরই পায় নি!!


রুমে ঢুকতেই রেয়ান থেকে আমি নিজেকে ছাঁড়িয়ে নিলাম।।তার কলার ধরে রাগি কণ্ঠে বলালম.....


---" আপনার সমস্যা কি বলুন তো রেয়ান?? লজ্জা বা অনুতপ্ত বোধ কিছুই কি কাজ করছে না আপনার মাঝে।।এতকিছুর পরও আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন??আর আপনার সাহস কিভাবে হলো আমাকে কোলে তুলার।।কালকে রাতে কিছু বলিনি দেখে আপনি বারবার আমাকে কোলে নিবেন নাকি??"


---" কোলে নিবো।।১০০বার নিবো।।কারন তুমি আমার আমানত "


---" কিসের আমানত আমি আপনার?? আমি কারও কোনো আমানত না বুঝেছেন??আর আপনার তো জীবনেও না।। আপনার মতো অমানুষের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা করে।।"


---" তাই?? তাহলে তো এটার অভ্যেস করে নাও।।কারন আমাদের যখন বিয়ে হবে তখন এগুলোই সহ্য করতে হবে তোমার।।"


---" কখনও না।। যার জন্য আমার চরিত্রে দাগ লেগেছে তাকে আমি জীবনেও বিয়ে করব না।।আমি মরে যাবো কিন্তু আপনাকে বিয়ে করব না বু......."


আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রেয়ান আমার ২হাতের বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে।। নিজের মুখ আমার মুখের একদম কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে.......


---" কি বললি তুই??তুই মরে যাবি কিন্তু আমাকে বিয়ে করবি না তাই না?? আরে আমি চাইলে তোকে এখন এ-ই মুহুর্তে বিয়ে করতে পারবো।।কিন্তু কেন করছি না জানিস।।কারন আমি চাই তুই নিজে থেকে আমাকে বিয়ে করিস।।জোড় করে না।।"


---" সে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিন রেয়ান।।কারন আপনার এ স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না।। "


---" একটা কথা জানো কি মরুভূমি।।আমি স্বপ্ন পূরণ করার জন্য দেখি।। তা মাঝ পথে রেখে দেওয়ার জন্য না।।এন্ড আম সিউর।।এ স্বপ্নটাও পুরণ হবে।।তাও অনেক তাড়াতাড়ি।।"


কথাটা বলেই রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দেয়।।তারপর চলে যেতে নিলে আমি তাকে কিছুটা বিরক্ত কণ্ঠে বলি.....


---" কোথায় যাচ্ছেন আপনি??"


---" এখানে তো তুমি থাকতে দিবে না।। তাই বাইরে যাচ্ছি।।কাজ আছে।।"


---" কিভাবে বাইরে যাবেন শুনি?? মিডিয়ার লোক চারপাশ দিয়ে ঘেরে রেখেছে আমার বাসা।।যাওয়ার কোনো উপায় নেই।। "


---" তাহলে কি তুমি আমাকে এখানে থাকতে বলছ??"


তার কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে যাই।।কি বলব বুঝয়ে পারছি না।। সে আমাকে চুপ থাকতে দেখে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে মুচকি হেসে বলে.....


---" তুমি আমাকে এত কাঁচা খেলোয়াড় ভাবো মরুভূমি।।ভুলে যেও না আমি একজন পুলিশ।। কোথায়,,, কিভাবে বের হতে হবে।।সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।।"


বলেই আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে সে রুম থেকে বের হয়ে যায়।।


.

.

.

.


দুপুর প্রায় ২টা।।মাত্র রিহানকে খাইয়ে দিলাম আমি।।এবার আমার আর মার খাবার পালা।।টেবিলে খাবার বাড়ছি,,এমন সময় দরজার কলিংবেল বেজে উঠে।।ভেবেছিলাম হয়তো মিডিয়ার লোক হবে,,তাই পাত্তা দিলাম না।। কিন্তু ৫-৬ বার কলিংবেল বাজার পর বাধ্য হয়ে দরজা খুললাম আমি।।দরজা খুলতেই দেখি রেয়ান দাঁড়িয়ে আছে।।চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে সে।। চোখ দু'টো লাল হয়ে আছে। আর তার দৃষ্টি স্থির আমার চোখের দিকে।।কেন যানি না রেয়ানকে #খুব অস্বাভাবিক লাগছে আমার।।ভালোভাবে রেয়ানের দিকে তাকাতেই আমার চোখ যায় তার হাতের দিকে।।হাত থেকে টপটপ করে রক্ত ঝড়ছে তার।।




#চলবে🍁🍁


৪থ পর্ব লিংক 

https//wwwfourpartstory.com

Motherhood: Episode 2 Sahitya Diary

Motherhood: Episode 2

Sahitya Diary



Mom asked me a question while taking another mouthful of rice, and I stared blankly at her.


"Poison, Mom… what happens if someone eats poison?"


"Nothing happens, dear…"


"Let me have some too. You give it to me every day, so why not today?"


"No, dear. Don’t even come near me."


I could sense how heavy Mom’s voice had become, how difficult it was for her to breathe. I didn’t know what to do.


"Mom, what’s wrong? Why are you acting like this?"


"Can you get me some water, dear?"


Mom began speaking in a strained, halting voice. I handed her my glass. She tried to reach for it, but she didn’t have the strength. I held the glass to her lips, and she gulped it all down at once. Then she collapsed onto the floor. I had never seen Mom like this before, and I was terrified.


"Oh, Mom, are you in that much pain? Why are you doing this to yourself?"


Mom pulled me close and began speaking in a weak voice.


"If you can, forgive me, dear. I have done you a great wrong. Tell Allah to forgive me too."


Seeing Mom in such a pitiful state, I couldn't hold back any longer. I screamed, my voice echoing through the house. A moment later, Marzina Fupu and her brother from the neighboring house rushed in.


"Akaid, what happened? Why are you screaming? Did your mom hurt you?"


"Marzina Fupu, something’s wrong with Mom… I’m really scared. Is she going to be okay?"


Marzina Fupu and her brother rushed toward Mom. They whispered something I couldn’t understand. I just stared blankly. After a while, Marzina Fupu’s brother said to me—


"Akaid, we have to take your mom to the hospital, or she won’t survive."


"Ah, death… You’re saying that in front of the child? Be quiet," Marzina Fupu scolded her brother.


More people gathered at the house. Ismail Chacha from next door arrived with his van. Everyone helped lift Mom into the vehicle. I ran after them.


"Oh, Ismail Chacha, Mom isn’t talking. Will she be okay if we take her to the hospital?"


"Yes, son. She’ll be fine. Now tell me, where is the money in the house? We don’t have much."


"Money? I have some…"


I ran inside and grabbed the few notes Mom had given me yesterday, along with some coins my father had left behind. I ran back to the van.


"Here, Ismail Chacha, take this money. Will this be enough?"


Ismail Chacha stared at me for a moment.


"Oh, my dear boy, what will this little money do? Your mother will need a lot more."


"But where will I get that much? I don’t have it."


Marzina Fupu’s brother suddenly appeared and said to Ismail Chacha, "Don’t waste time. I’ll arrange the money. Let’s go."


Mom’s lifeless body was lying in the van. I was seated near her head, holding her hand tightly so I wouldn’t fall out. After half an hour, we arrived at the hospital. Mom was taken inside. I was brought back home. I pleaded to stay at the hospital, but no one listened.


---


At night, I sat outside, staring at the sky. I had received no news about Mom. Only one phrase kept echoing in my mind: *"Forgive me, dear… I have done you a great wrong."*


What did Mom mean by that? Why was she asking for my forgiveness? Only Allah and Mom knew. I couldn't understand the mystery. Suddenly, someone placed a hand on my shoulder. I turned with a start.


"Dad, is that you?"


"Yes, it’s me."


"You haven’t told anyone, have you?"


"Told them what?"


"That I was the one who gave you the poison… you didn’t tell anyone?"


"No… but what would happen if I did?"


"Exactly. You mustn’t tell anyone. Promise?"


"Okay… now take me to Mom. I want to see her."


"It’s too late now. I’ll bring her back tomorrow morning."


"Really? You’ll bring her then?"


"Yes, now go to sleep."


I went to my room, feeling relieved. Morning came, and I woke up anxious, wondering when Dad would bring Mom home. Soon, I heard the sound of a vehicle and people approaching. I ran outside to see them unloading something wrapped in plastic. I asked Dad:


"Dad, what is this? Where’s Mom? Mom, where is she?"


"Son, your Mom is in this plastic," Dad said, crying.


"Why are you keeping Mom in that thick paper? She can’t breathe!"


Hearing this, some of the people began to cry. I didn’t understand what was happening. Dad held me tightly, sobbing.


"Your Mom is no more, son. She has left us all behind."


Hearing Dad’s words, my head spun. Darkness seemed to close in around me. I fell at Mom’s feet. Suddenly, I noticed something strange—these were not Mom’s feet! Why were her toes so long? I was certain this wasn't Mom’s body. Then why was Dad calling this Mom? Could she really be alive…?


"No, this is not my Mom! Dad, this isn’t her!"


"Oh, son, grief has clouded your mind. You can’t recognize your own mother."


The villagers tried to reason with me, but I knew this wasn’t Mom. I had to correct Dad’s mistake.


"Dad, they’re calling me crazy. Show them Mom’s face! This isn’t her!"


"Son, this is your mother. Accept what has happened."


They insisted on finishing the funeral rites. To this day, I stare at her grave, imagining if I could lie there with Mom and feel no pain.


---


A few days later, Dad started staying home more. During dinner one night, he hesitated before speaking.


"Akaid, I need to tell you something."


"What is it, Dad?"


"Since your Mom is gone, you can’t live alone… so, for your sake…"


"For my sake, Dad?"


"I might bring a new mother for you. Would you be upset?"


Hearing this, I put my food down.


"Why a new mother? She’s not my Mom. Please, Dad, bring my own Mom back."


"That’s not possible, son. But the new mother will love you just as much as your Mom did. Soon, you’ll forget all about this."


"I don’t want a new mother. I will never forget my Mom."


I poured water into my rice bowl and left the room. Dad called after me—


"I only said it for your own good."


I ignored him and went to my room, closing the door. This was the room I had shared with Mom. Her pillow was still where it always was. Her scent lingered on her sari. Only the person was gone. Being in this room made my heart ache. Mom had shared countless stories here—fairy tales, tales of queens and kings. I had demanded so many things from her, and she had fulfilled them all. She had scolded me and wiped away my tears. Thinking of these things, I drifted off to sleep.


Suddenly, a noise woke me. It came from outside the room. I went to the door.


A woman was sitting there, her face covered with a veil. I asked—


"Who… who are you?"


She didn’t respond. I slowly approached and lifted the veil. A strange feeling washed over me… it felt like a dream.


"Mom? Is that you? Where did you come from?"


**To be continued…**

সে_কি_জানে পর্ব ২ সাহিত্য ডাইরি

সে_কি_জানে

পর্ব ২

সাহিত্য ডাইরি 



হুট করে কিছু লোক আমার হাত,পা,চোখ বেঁধে ফেলে।আমি ছোটার অপ্রাণ চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।হঠাৎ কেউ আমার হাতের বাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে,,,তার নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে,,,বুঝতে পারছি,, সে আমার খুব কাছে।।হয়তো এটা রেয়ান,,,,


---" রেয়ান?? এটা কি আপনি??"


আমার কথা শুনে উনি নেশা ধরানো কন্ঠে বললেন,,,,


---" বাহ,,,তুমি তো দেখি অনেক স্মার্ট,,, মাত্র একদিনের পরিচয়ে আমাকে এতটা চিনে ফেললে।।"


---" দেখুন বাজে কথা বন্ধ করুন,,,একজন পুলিশ হয়ে এমন খারাপ কাজ করতে আপনার লজ্জা করে না?? "


---" কই?? কিছুই তো এখন করি নি?? যদি বলো এখন করব??"


---" ছিঃ আপনি একটা নির্লজ্জ,,বেহায়া মানুষ,,,সেটা আপনি জানেন,,??"


---" আলবাত জানি।।আচ্ছা একটা কথা বলত,,,তোমার স্বামী তোমাকে কেন ছেঁড়ে চলে গেছে,,,?? এত সুন্দর একটা.....উফফ আর কি বলব,,,তোমাকে দেখলেই আমার ইচ্ছা করে খেয়ে ফেলতে,,,ও কিভাবে ছেঁড়ে যেতে পারলো??তবে ভালোই হয়েছে,,,ওর জন্যই এখন আমি তোমাকে পেতে পারবো,,, কি বলো??"


রেয়ানের এমন বাজে কথা শুনে আমার শরীর ঘৃণায় শিউরে উঠছে।।রাগও হচ্ছে প্রচুর,,,কিন্তু এখন আমি উনাকে যাই-ই বলি না কেন উনি তাতে কোনো রিয়েক্ট করবেন না উল্টা আরও খারাপ কথা শুনাবেন আমাকে,,,,তাই শান্ত কণ্ঠে উনাকে বলি,,,,


---" রেয়ান প্লিজ আমার বাঁধনগুলো খুলে দিন,,,আর আমাকে যেতে দিন,,,আমার ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।।"


এবার রেয়ান কিছু বলল না,,,, আসতে আসতে সরে যেতে লাগলো আমার কাছ থেকে।।এতে আমার ভয় যেন দ্বীগণ বেড়ে গেল,,,চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,


---" প্লিজ রেয়ান আমাকে ছেঁড়ে দিন,,,আমার ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে,,,ও আমাকে ছাড়া বেশিক্ষন থাকতে পারে না,,,প্লিজ যেতে দিন আমাকে রেয়ান,,প্লিজ!!"


এভাবে অনেক কাকুতিমিনতি করার পরও কোনো লাভ হলো না,,, প্রতিবারের মতোই আমি ব্যর্থ।।


হঠাৎ মনে হলো গাড়িটা থেমে গেছে,,,আর আমি শূণ্যে ভাসছি।।বুঝতে পারছি কেউ আমাকে কোলে নিয়েছে।।আমি একটু নড়তে যাবো,,,তার আগেই আমার মুখে কেউ একজন একটা কাপড় ধরে,,, সাথে সাথে আমার শরীর যেন অবশ হতে শুরু করে,,,হাত পা নাড়ানোর সামান্যটুকু শক্তি নেই আমার,,,আর না আছে কথা বলার।।কয়েক সেকেন্ড যেতেই আমার চোখে রাজ্যের ঘুম বিরাজ করে।।পরক্ষনেই তলিয়ে যাই ঘুমের দেশে।।

.

.

.

যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে নিজের রুমেই আবিষ্কার করি।।পাশেই বসে আছে আমার ছোট্ট ছেলেটা।।তার চোখে স্পষ্ট পানি,,,খুব মায়া লাগছে আমার,,কিন্তু মনে এক প্রশান্তি কাজ করছে " আমার ছেলে আমার সাথে আছে "।। পরক্ষনেই মনে হলো,,,, আমি এখানে কিভাবে??,,, আমাকে রেয়ান কোথায় যেন নিয়ে গিয়েছিলো,,,কিন্তু কোথায়??আর আমাকে এখানেই বা আনলো কে??


আমাকে চোখ খুলতে দেখে রিহান খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমায়,,,কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,


---" কোথায় গিয়েছিলে মা তুমি?? জানো কত কান্না করেছি আমি,,,এভাবে আর যাবে না কেমন,,,নাহলে কিন্তু কথা বলব না আমি তোমার সাথে,,,"


ওর কথার বিনিময়ে আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম,, আর বললাম,,,


---" আর কক্ষনও যাবো না মা তোকে রেখে "


.

.

.


প্রায় কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর খেয়াল করলাম আমার ছেলেটা ঘুমিয়ে গেছে।।আশেপাশে তাকাতেই দেখি মা দরজায় দাঁড়িয়ে আমাদের মা-ছেলেকে দেখছে,,, আমি আসতে করে রিহানকে পাশে শুইয়ে দিয়ে মার কাছে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি,,,কেন যেন একটা ভয় কাজ করছে মনে,,,মাকে আর আমার ছোট্ট ছেলেটাকে হারানোর ভয়,,,কেন যানি চোখের পানি গুলো আজ বাঁধা মানছে না।। ডুকরে কেঁদে উঠি মাকে জড়িয়ে ধরেই।।তা দেখে মা চমকে উঠে বললেন,,,


---" কি হয়েছে মিরা,,,কাঁদছিস কেন??"


আমি মার কাছ থেকে সরে আসলাম,,চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম,,,


---" কেন জানিনা আজকে খুব কষ্ট লাগছে মা,,,তাই কান্না আটকাতে পারি নি "


আমার কথা শুনে মা কিছু একটা হয়তো আন্দাজ করেছেন।।গম্ভীর কন্ঠে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন,,,,


---" আচ্ছা মিরা।।সত্যি করে বল তো তোর কি হয়েছে,,,সন্ধ্যার দিকে কতগুলো লোক তোকে এনেছিল বাসায়,,,তুই নাকি রাস্তায় মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গিয়েছিলি!!"


মার কথা শুনে আমি কি বলব বুঝতে পারছি না,,, তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২টা বাজে।।সাথে সাথে মনে এক ভয়ংকর ভয় গ্রাস করে আমাকে,,,,আমি বাসা থেকে বের হয়েছি সকালে,,,আর এসেছি সন্ধ্যায়,,,এর মাঝে কি হয়েছে তা কিচ্ছু আমি জানি না।।তাহলে কি রেয়ান আর আমার মাঝে খারাপ কিছু হয়েছে??না,,না এগুলো আমি কি ভাবছি,,,কিন্তু হতেও তো পারে!!


আমার ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মা বলেন,,,,


---" মিরা,,, সত্যি করে বল,,, কোথায় ছিলি তুই,,,তোর সাথে কি কোনো খারাপ কিছু হয়েছে?? "


মা জিনিসটা আসলেই অদ্ভুদ,,,নিজের সন্তানের মনে কথাটা তারা বেশ ভাবে বুঝতে পারেন,,তাই অবাক হলাম না,,,এটা বেশ কয়েকবার হয়েছে আমার সাথে,,,


---" আসলে মা,,, আজকে অনেক গুলো চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি তো,,তাই বেশি প্রেসার পড়েছে মাথায়,,,,এজন্যই হয়তো মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেছি রাস্তায়,,,"


আমার কথায় মা হয়তো সন্তুষ্ট হন নি,,,সন্দেহ বোধহয় একটা রয়েই গেল তার,,কিন্তু তবুও কিছু বললেন না,,,চুপচাপ চলে গেলেন রুম থেকে,,,,

.

.

.

.

রাত প্রায় ১টা,,, বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আজকের দিনটার কথা ভাবছি,,,কিছুতেই মনে করতে পারছি না "কি হয়েছে আমার সাথে"।। হঠাৎ কেউ এক টানে আমাকে পেছনে ঘুড়ালো,,, সামনে তাকাতেই দেখি রেয়ান আমার দিকে নেশাক্ত চাহনি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে,,, আর বাঁকা হাসছে,,,,আমি কিছু বলতে যাবো,, তার আগেই সে আমাকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে,,,,তারপর কানে ফিসফিস করে বলতে থাকে,,,


---" আজকের দিনটা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিল মরুভূমি!!"


কথাটা শুনে কি রিয়েক্ট দেওয়া উচিত বুঝতে পারছি না,,,রেয়ানের কথার মানে কি?? তাহলে কি আমি যা ভাবছি তা সত্যি??মুহুর্তেই চোখে পানি এসে জমা হয় আমার,,,কিন্তু চোখ থেকে গড়িয়ে নিচে পড়েনি পানিগুলো,,,,

.

.

.


কিছুক্ষন চুপ থেকে রেয়ানকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টায় লেগে যাই,,,কিন্তু প্রতিবারের মতী আমি ব্যর্থ,,,এমনিতে বডিবিল্ডার,,,তার উপর পুলিশ,,,আমার শক্তি তার কাছে খুবই নুন্যতম,,,


অনেক চেষ্টার পরও যখন রেয়ানকে নিজের থেকে সরাতে পারলাম না,,, তখন উপায় না পেয়ে তাকে একটা জোড়ে কামড় দিলাম,,,এতে সে "আহহ" বলে আমাকে ছেঁড়ে দিলো,,এ সুযোগে রুমের ভিতরে ডুকতে যাবো,,,অমনি রেয়ান আমার কাছে এসে আরও শক্ত করে চেপে ধরল আমায়।।আমার বাম গালে ২ বার চুমু দিয়ে বলল,,,


---" থেংস ফর গিভিং মি লাভ বাইট বেব,,,আই জাস্ট লাভ ইট "

.


---" পেটের বাদামী তিলটা কি আমাকে দেখানোর জন্য বের করে রেখেছো ?? " [ বাঁকা হেসে ]


কথাটা শুনা মাত্র আমি নিজের দিকে একবার চোখ বুলালাম।।কী সর্বনাশ!! আমার শাড়ির পেটের দিকটা থেকে কাপড় সরে গেছে।।চাঁদের আলোয় স্পষ্ট পেট দেখা যাচ্ছে আমার।।সাথে সাথে নিজেকে ঢাকতে শুরু করি,,,রেয়ানের দিকে রাগি চোখ নিক্ষেপ করে বলি.....


---" আপনি এত অসভ্য কেন?? মাঝরাতে আমার বাসায় এসে ফাজলামি করছেন,,,আর,,,আর আমার রুমে ঢুকলেন কিভাবে?? "


রিহান ঘুমিয়ে আছে দেখে কিছুটা ফিসফিসিয়ে বললাম কথাগুলো।।আমার দেখাদেখি রেয়ানও ফিসফিসিয়ে বলল.....


---" তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো,,,সেখান থেকেই ঢুকেছি তোমার রুমে।।"


কথাটা শুনে নিজের আশেপাশে তাকালাম,,,আমি তো বারান্দায়,,,তাহলে কি এ পুলিশ গুন্ডা পাইপ দিয়ে বেয়ে বেয়ে বারান্দা দিয়ে আমার রুমে এসেছে,,,কিন্তু আমি দেখলাম না কেন??


---" আপনি যদি বারান্দা দিয়ে আসেন,,, তাহলে আমি আপনাকে উঠতে দেখলাম না কেন??"


---" মহারানী যে ভাবনায় ডুবে ছিলেন,,,সেখান থেকে বের হয়ে কোথায় কি হচ্ছে তা দেখার সময় ছিল কি আপনার,,,আপনি তো আপনার মহাবড় চিন্তায় ব্যস্ত ছিলেন,,,আচ্ছা কি চিন্তা করছিলে তুমি?? নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে!! [বাঁকা হেসে]


---" আম,,আমি আপনাকে নিয়ে চি,,চিন্তা করব কেন??আমাকে একটা কথা বলুন তো,,, পুলিশ হয়ে এসব বাজে কাজ করতে আপনার বিবেকে বাঁধে না?? কিভাবে পারেন এগুলো??সকালে একবার উঠিয়ে নিয়ে গেলেন রাস্তা থেকে,,, কি করেছেন না করেছেন কিচ্ছু জানি না।। এখন আবার মাঝরাতে বারান্দা দিয়ে আমার রুমে ঢুকেছেন।।আপনিই বলুন এগুলো কি ধরণের অসভ্যতামি,,,কেন করছেন এমন আমার সাথে?? "


---" আমাকে বিয়ে করো,,,তাহলে এত কিছু সহ্য করতে হবে না তোমার "


---" জীবনেও না,,, আপনার মতো একজন খারাপ মানুষকে আমি কখনও বিয়ে করব না,,,আরে আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না আপনি আমার মতো একটা বিবাহিতা মেয়ে,,যার একটা বাচ্চা আছে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেন?? নিশ্চয়ই একটা খারাপ মতলব আছে আপনার??"


কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলাম আমি,,,পারছি না এসব নিতে,,,এ-ই রেয়ানটার জন্য বারবার অতীতটা তুলে ধরতে হয় আমার,,,বারবার মনে পড়ে যায় ও-ই ভয়ংকর অতীতটার কথা,,,শুভর কথা,,,,


মেঝেতে বসে কান্না করছি,,এতে বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই রেয়ানের,,,সে একমনে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে,,,হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে সে বলে উঠে,,,,


---" তাহলে তুমি বিয়ে করবে না আমাকে??"


কথাটা শুনে রাগ মাথায় উঠে গেল আমার।।মেঝে থেকে উঠে রেয়ানের সামনা সামনি দাঁড়ালাম।। রেয়ানের কলার ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম.....


---" আপনার আসলেই লজ্জা করে না রেয়ান?? এখনও কিভাবে বলছেন এগুলো??কি ভাবেন কি আপনি নিজেকে,,,পুলিশ বলে যা ইচ্ছে তা করবেন??পারবেন না,, আপনাকে ভয় পাই না আমি,,করব না আমি আপনাকে বিয়ে,,,বুঝেছেন,,করব না বিয়ে আপনাকে ।। "


কথাটা শুনে রেয়ান যেন আরও গম্ভীর হয়ে গেল।।আমার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে,,,শান্ত ভাবে বলল.....


---" বিয়ে তো তোমাকে আমাকেই করতে হবে ,,,তুমি সেটার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নাও,,,আর একটা কথা,,ভয় পাও না আমাকে তাই না??এবার থেকে ভয় পাবা,,, ভীষণ রকমের ভয় পাবা,,,,"


কথাটা বলেই রেয়ান আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না।। এক লাফ দিয়ে বারান্দা থেকে নিচে নেমে গেল,,,আমরা থাকি একটা ২তালা বাসায়,,,নিচ থেকে আমার বারান্দাটা এত উপরে না,,, তাই হয়তো সহজেই এক লাফ দিয়ে নেমে গেছে রেয়ান,,,


এক দৃষ্টিতে রেয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি,,,খুব ভয় হচ্ছে আমার,,,রেয়ান কথাটা শান্ত ভাবে বললেও,,,সেটা যে কতটা ভয়ংকর,, তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি আমি।।

.

.

.

.

সকালে......


ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার ছোট্ট ছেলেটা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷। ওর কপালে একটা স্নেহভরা চুমু দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।।ফ্রেস হয়েই আগে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াই,,,


রান্না ঘরে ডুকতেই দেখি মা নাস্তা বানাচ্ছে,,,, আমিও তার সাথে নাস্তা বানাতে লেগে যাই,,,২ জন ২জনের সাথে অনেক গল্প করি,,,নাস্তা বানানো শেষে হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ আসে,,,তা শুনে মা বলে.....


---" মিরা তুই নাস্তাগুলো টেবিলে নিয়ে যা,,, আমি দেখছি কে এসেছে "


---" আচ্ছা "


মার কথা মতো আমি নাস্তাগুলো টেবিলে নিয়ে যাই।।এদিকে মা দরজা খুলতেই কিছু লোক কথা নাই কোয়া নেই বাসার ভেতরে ঢুকে যায়।। লোকগুলো ড্রইংরুমে ঢুকে আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করে.....


---" আপনার নাম কি মিরা "


---" জ্বী "


---" আপনাকে আমাদের স্যার ডেকেছে,,,তাই আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে "


---" মানে?? আপনাদের স্যার কে?? আর আপনারাই বা কারা?? এভাবে আমাদের বাসায় ডুকে এসব তামাশা করার মানে কি,,,,,বের হোন আমাদের বাসা থেকে।। "


---" দেখুন আমরা পুলিশের লোক।।যা বলছি তা করুন,,,নাহলে...[বলতে না দিয়ে ] "


---" পুলিশের লোক হয়েছেন দেখে যা ইচ্ছে তা করবেন,,,দেখুন ভালোভাবে বলছি বের হোন আমাদের বাসা থেকে,,,নাহলে আমি চিল্লাচিল্লি করে মানুষজন ডাকব।।।"


আমার কথায় যেন তাদের কোনো কিছুই যায় আসে না।।তারা তাদের জায়গা থেকে এক ফোটাও নড়ে নি।।হুট করে একজন মার মাথায় বন্দুক তাক করে বলল....


---" দেখুন ম্যাম,,,আমাদের সাথে চলুন,,,নাহলে আমরা আপনার মা আর ছেলেকে মারতে বাধ্য হবো "


কথাটা শুনে আমার লোকগুলোর উপর একটু সন্দেহ হলো,,,তারা কিভাবে জানে এটা আমার মা আর আমার একটা ছেলেও আছে।।তাহলে কি এদের রেয়ান পাঠিয়েছে??,,,কেননা রেয়ানও একজন পুলিশ,,,,


---" আপনাদের কে পাঠিয়েছে?? "


---" কে পাঠিয়েছে তা আমাদের সাথে গেলেই বুঝবেন "


---" আচ্ছা ঠিকাছে আমি আপনাদের সাথে যাবো "


কথাটা শুনে মা রেগে গেলেন,,,উনি তার ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন....


---" কি বলছিস মিরা,,,কে না কে এ লোক,,,যদি কিছু হয় তোর,,,তুই এদের সাথে যাবি না।।"


---" মা আমার কিচ্ছু হবে না।।তুমি রিহানের খেয়াল রেখো,,,আমি তাড়াতাড়িই চলে আসবো "


---" কিন্তু...... "


---" আমার কিচ্ছু হবে না মা।।তুমি চিন্তা করো না "


অতপর লোকগুলো আমাকে একটা ব্লেক কারে বসায়,,,আর নিজেরা বসে অন্য একটা গাড়িতে।।প্রায় কিছুক্ষন পর গাড়ি পৌঁছে যায় তার গন্তব্যে,,,গাড়ি থেকে নামতেই দেখি লোকগুলো আমাকে পুলিশ স্টেসনে নিয়ে এসেছে......


.

.

.

.

.


প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে বসে আছি পুলিশ স্টেসনে।।আশেপাশে সবাই যার যার কাজ করছে।।আমাকে যে লোকগুলো নিয়ে এসেছিল তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।। লোকগুলো আমাকে দিয়েই চলে যায়।।যাওয়ার আগে বলে যায় আমি যেন এখান থেকে কোথাও না যাই,,,ওদের স্যারের সময় হলে আমাকে তার কাছে ডাকবে....


২ গালে ২ হাত দিয়ে বসে আছি।।হঠাৎ একজন কন্সটেবল এসে আমাকে বলে....


---" ম্যাম,,, আপনাকে স্যার ডাকছে,,, আমার সাথে আসুন "


--" জ্বী "


কন্সটেবল আমাকে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড় করালো।।তারপর বলল....


---" ম্যাম,, ভিতরে স্যার আছে,, আপনি যান "


আমি কিছু না বলে ঢুকে গেলাম রুমটার ভেতর,,,আমার যা ভয় ছিল তাই-ই হলো।।রুমটায় ডুকতেই দেখি রেয়ান পুলিশ ড্রেস পড়ে বসে আছে চেয়ারে,,,আর গম্ভীরভাবে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।।ফাইলে তাকিয়ে থেকেই শান্তভাবে সে বলে উঠল......


---" মরুভূমি তাহলে তুমি এসেছো,,,বসো "


আমার নামটা এ-ই লোক কোনোদিনও ঠিক করে বলে না,,সবসময়ই মরুভূমি ডাকে,,,এতে আমার রাগ হয় প্রচুর,,,কিন্তু এখন রাগ থেকে ভয় লাগছে আমার।।তার এ-ই শান্ত রুপের বিপরীতে যে এক হিংস্র রুপ আছে,,,।। কি করবে এ লোক আমার সাথে?? কেন ডেকেছে সে আমায়??




--" ঠাসসসস,,আপনার লজ্জা করে না রেয়ান।একজন পুলিশ হয়ে এমন বাজে কাজ করতে।।আর আমাকে এভাবে উঠিয়ে আনার মানে কি?? "


থাপ্পড় আর কথাটা বলে আমি নিজেই বোকা বনে গেলাম।।রেয়ান ভয়ার্তক ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।।তার চোখ ২টো লাল হয়ে আছে,,,আর মুখ শক্ত করে রেখেছে সে।।


এমন ভয়ংকর রুপ আমি কখনও দেখি নি।।ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।। থাপ্পড়টা মারা হয়তো উচিত হয়নি আমার।। কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলেই তো হতো।। থাপ্পড় মারার কি প্রয়োজন ছিল??এখন তো রেয়ান আমার কোনো কথা শুনবে না।।যদি সে আরও খারাপ কিছু করে।।যদি আমার ছেলেকে আর মাকে.....আল্লাহ জানে এ পুলিশ গুন্ডা এখন কি করবে!!!


কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম......


---" দে,,,দেখুন রেয়ান!!এ,,ভাবে তাকিয়ে লা,,,ভ নেই,,,দোষ কিন্তু আপনারই।।আপনি এত বাজে কাজ কেন করে...... "


আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রেয়ান আমার হাত ২টো দেওয়ালের সাথে খুব শক্ত করে চেপে ধরেলেন।। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন.....


---" অনেক সাহস না তোমার।।আমাকে থাপ্পড় মেরেছো তুমি তাই না।। এটার ফল ভুগবা তুমি এখন।।"


কথাটা বলেই আমাকে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো রেয়ান,,,তারপর খুব রুডলি আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,,


---" আমার কাছে আসা তোমার পছন্দ না,,, তাই না?? এখন থেকে আমার কাছেই থাকতে হবে তোমার।। "


বলেই আমাকে টানতে টানতে পুলিশ স্টেসনের বাইরে নিয়ে যেতে থাকে।।পুলিশ স্টেসনের সব মানুষ তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।।খুব অসস্তি হচ্ছে আমার।।রেয়ান থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি।।প্রতিবারের মতো এবারও ফলাফল শূণ্য।।এবার না পেরে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি....


---" রেয়ান ছাড়ুন আমার হাত।।আমার লাগছে।।আমি আমার ছেলে কাছে যাবো।।প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।। "


কে শুনে কার কথা!! রেয়ান নিজের মতো টানতে টানতে আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।।এক ধাক্কায় গাড়ির ভেতরে ডুকিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে।।।


গাড়িতে ডুকেই রেয়ান প্রথমে গাড়ি লক করে দেয়। এদিকে আমি গাড়ি খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করেই যাচ্ছি,,,তা দেখে সে বলে উঠে,,,,


---" কোনো লাভ নেই মরুভূমি।।গাড়ি লক।।চুপচাপ বসে থাকো নাহলে......."


---" নাহলে কি করবেন কি আপনি?? এত বাজে একটা মানুষ কেমন হতে পারে??আসলে কি জানেন আপনি মানুষই না,, আপনি একটা অমানুষ।।ভালোভাবে বলছি আমাকে আমার ছেলের কাছে যেতে দিন।।নাহলে কিন্তু আমি... "


---" তুমি কি হ্যাঁ?? কিছু করতে পারবে না তুমি আমার।।তাছাড়া কি যেন বলছিলে,,, নিজের ছেলের কাছে যেতে চাও,,, তাই না??সেটা আমাকে থাপ্পড় মারার আর এগুলো বলার আগে ভাবা উচিত ছিল।।এখন যেতে দিচ্ছি না তোমায় কোথাও।।আমার কাছেই থাকবে তুমি।।"


---" প্লিজ এমন করবেন না রেয়ান।।আমাকে যেতে দিন আমার ছেলের কাছে।।ও মনে হয় এখন কান্না করছে আমার জন্য।।আমি আমার ছেলের কাছে যাবো রেয়ান।।প্লিজ যেতে....."


আর কিছু বলতে পারলাম না আমি।।তার আগেই রেয়ান সেই আগেরবারের মতো আমার মুখে একটা সাদা কাপড় চেপে ধরলেন।।সাথে সাথে আমি অজ্ঞা হয়ে গেলাম।।

.

.

.

.

কিছুক্ষন আগে.......🍁🍁


চেয়ারে বসতেই রেয়ান আমার সামনে একটা ফোন রাখে।। একটা ভিডিও চলছে ফোনটায়।। যেখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আমার ছেলে আর মাকে কয়েকজন লোক বন্ধী করে রেখেছে।।ভিডিও-টা দেখে মুহুর্তেই মাথা গরম হয়ে যায় আমার।।রেয়ানের তাতে কোনো খেয়াল নেই,,,সে আমার কাছে আসতে আসতে বলে.....


---" আমাকে এখন,,,এ-ই মুহুর্তে বিয়ে করতে হবে তোমাকে।।নাহলে তোমার ছেলে আর মাকে...."


এটুকু শুনেই রাগটা যেন আর হিংস্রতায় পরিণত হয়।।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে " ঠাসসসস " করে থাপ্পড় মেরে দি রেয়ানকে।।তারপর কথাগুলো বলি......


.

.

.

.


জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে এক অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করি।। যতটুকু অনুভব করছি,,,আমাকে একটা চেয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে।।প্রচুর ভয় লাগছে আমার।।সাথে অন্ধকার রুমটার কিছু বিকট আওয়াজ যেন আমাকে আরো ভয় পাওয়াতে সক্ষম!!


ভয়েরচটে কয়েকবার জোড়ে জোড়ে রেয়ানের নাম ধরে ডাকি।।কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই।।ভয়টা যেন আরও বেড়ে গেল আমার।।ছোট বেলা থেকেই অন্ধকার ভয় পাই আমি।।যার জন্য রিতিমতো কপালে ঘাম জমে গেছে আমার।।


হঠাৎ কারো কন্ঠে গানের আওয়াজ পাই........🍁🍁


" সে কি জানে,, তোকে অভিমানে হাসাতে??


সে কি পারে,, বুকে ধরে তোকে ভুলাতে??


তোর প্রিয় গান কে গেয়ে শোনাবে?বল


আমার থেকে কে তোকে ভালো জানে!!


ইশারাতে তোকে খুঁজে বেড়াই স্বপ্নে তোর


নাম ডেকে হেসে ফেলি আনমনে।কে নিয়ে


যাবে তোকে রুপকথা দেশে?? বল আমার


থেকে কে তোকে ভালো জানে!!


.

.

.

.


#চলনে....🍁🍁