পর্ব ৪ তন্ত্র যুদ্ধে রক্ত বাসর গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ

পর্ব ৪

তন্ত্র যুদ্ধে রক্ত বাসর 

গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ 


ডালিকে সেই অবস্থায় দেখে আমার ভিতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল।

সে দাঁড়িয়ে আছে জানালার ধারে —

চুল এলোমেলো, ঠোঁটে রক্তের রেখা, আর চোখে সেই অচেনা শূন্যতা।

এটা আমার বউ না।

এটা... **মঞ্জুরা।**


— “তুই কী চাস?” আমি গর্জে উঠলাম।

— “ডালিকে ছেড়ে দে! আমি তোদের কিছু করিনি!”


সে ধীরে ধীরে ঘুরে তাকালো,

— “তুই কিছু করোনি…

কিন্তু তোর রক্ত করেছিল!

আমি তো ভালোবেসেছিলাম… আমি তো প্রতীক্ষা করেছিলাম...

কিন্তু সে গিয়েছিল অন্যের কাছে।

এবার আমার পালা, আমি সব নিয়ে নেবো!”


⚡ হঠাৎ ঘরের বাতাস দপদপিয়ে উঠলো।

জানালার পর্দা বাতাস ছাড়াই দুলছে।

আয়না থেকে মিহি কণ্ঠে একটা কর্কশ হাসি ভেসে আসে।


আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাই —

তবু সাহস করে পিসিমার ঘরে ছুটে গিয়ে একটা পুরনো কাঠের বাক্স বের করলাম।

ওটা আমার ঠাকুরদার — একজন হোমিও ডাক্তার,

তাঁর কিছু পুরনো জিনিস ছিল।


বাক্স খুলতেই পেলাম


* একটা পুরনো **তামার মুদ্রা**,

* কিছু **পুঁতির মালা**,

* আর চামড়ায় মোড়া একটা পাতলা খাতা — তাতে লেখা:


> **"দেহ ছাড়া আত্মা তাড়ানোর বিধান (১৯৩২)"**


আমি আঁকড়ে ধরলাম সেটাই।

পিসিমা বললো,

— “তোর আত্মা তো দায়ী নয়,

তুই প্রেম করিস, তুই ভুল করোনি —

কিন্তু তোকে মঞ্জুরাকে বোঝাতে হবে,

ভালোবাসা অনুরাগ চায়, প্রতিশোধ না!”


---


দেহতাড়ানো শুরু হয়...


আমি ঘরে ফিরে আসতেই দেখি,

ডালি এখন ছটফট করছে বিছানার ওপর।

ওর মুখ থেকে ঝরছে দুটো কণ্ঠস্বর —

একটা ডালির কণ্ঠ, অন্যটা গভীর, বিষে ভরা।


আমি মন্ত্র পড়া শুরু করলাম, সেই খাতার পৃষ্ঠ থেকে:


> "যা তুই, যে ছিলি শূন্যের সন্তান,

> ফিরে যা, যেখান থেকে এসেছিলি—

> দেহ নয়, আত্মা চায় শান্তি…"


📿 হঠাৎ ডালির চোখ দিয়ে ঝরল রক্ত!

সে কাঁপতে কাঁপতে বললো,

— “আমায় কেন ফিরিয়ে দিলে না? আমি তো শুধু ভালোবেসেছিলাম!”


আমি চিৎকার করলাম —

— “তুই তো ভালোবাসিসনি, তুই দখল চাস!

ভালোবাসা মানুষকে মুক্ত করে, শেকলে বেঁধে না।

আমি ডালিকে ভালোবাসি, তুই নয়!”


তখনই ঘরের সব বাতি একসাথে ঝনঝন করে জ্বলে উঠলো।

ঘরের মাঝখানে ধোঁয়ার মতো গঠিত হতে লাগলো এক নারী-ছায়া।

মাঝরাতে, ফুলসজ্জার ঘরে —

এক দগদগে প্রেমিক আত্মার বিলাপ।


> “আমি শুধু একটু জায়গা চেয়েছিলাম... একটু মমতা।

> এখন চলে যাচ্ছি,

> কিন্তু মনে রাখিস... কেউ কথা ভাঙলে সে মাফ পায় না।”


💥 একটা বিকট শব্দে আয়নাটা চুরমার হয়ে গেল!

মেঝেতে আগুনের রেখা জ্বলে উঠে নিভে গেল…


আর আমি দেখি, ডালি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে — নিঃশ্বাস কিন্তু ধীর ও স্বাভাবিক।

আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম, ভয়ে নয় — ভালোবাসায়।

এই প্রথম ডালিকে আমি সত্যিকারের নিজের বলে অনুভব করলাম।




ঘরের জানালায় যেন এক মুহূর্তের জন্য

এক নারী ছায়া দাঁড়িয়ে রইলো।

চোখে শুধু অপূর্ণ ভালোবাসা আর না বলা প্রশ্ন...


---




ঘরটা নিঃশব্দ।

আয়না ভেঙে গেছে। বাতি নিভে গেছে।

মেঝেতে ছাইয়ের রেখা। আর আমার বুকের মাঝে ডালির নিস্তেজ শরীর।


আমি ধীরে ধীরে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললাম,

— “ডালি, ফিরে এসো। সব শেষ হয়ে গেছে।”


এক মুহূর্ত...

দুই...

হঠাৎ ডালির চোখ কাঁপল। তারপর সে ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো আমার দিকে।


চোখজোড়া ছিল ধকধকে ভেজা। কিন্তু এই প্রথমবার সেখানে ভয় নয় —

**ভালোবাসা**।


— “আমি... কোথায় ছিলাম?”

ডালির কণ্ঠে দুর্বলতা,

আমি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

— “তুমি আমার মধ্যে ছিলে... আর কেউ তোমাকে নিতে পারেনি।”


📿 আমরা দুজন বসে থাকলাম অনেকক্ষণ।

ঘরের বাতাস ভারী, কিন্তু শান্ত।


আমি ভাবলাম, সব শেষ।

কিন্তু শেষটা তখনও হয়নি।


---

পরদিন ভোর


পিসিমা ডাকলেন নিচে।

তার মুখ থমথমে। হাতে কিছু পুরনো নথি আর একটা **দীপ্তছবি**।


ছবিটায় এক তরুণী—মঞ্জুরা।

তার পাশেই একজন পুরুষ, হালকা দাঁড়ি, চোখে রোদচশমা।

নাম লেখা নেই।

তবে ছবির পেছনে ইংরেজিতে লেখা—


> **"To M — You are mine, no matter who I marry. —A"**


আমি অবাক হয়ে বললাম,

— “A মানে কি ‘নাসির’? আমার বাবা?”


পিসিমা মাথা নাড়লেন।

— “না। এই চিঠিগুলো তোকে দেখাইনি।”

— “তোর বাবা নয়, এই ‘A’ হচ্ছে **আজিজুল হক**।

তোর বাবার ছোটবেলার বন্ধু। এই বাড়িতেই থাকত একসময়।

আর মঞ্জুরার আসল প্রেমিক ছিল সে — আজিজ।”


আমি হতবাক।

— “তবে… বাবা কেন দায়ী হয়েছিল?”


— “কারণ আজিজ পালিয়ে যায় বিদেশে — আর তোর বাবা তখন বিষয়টা চাপা দিতে চায়।

চিঠিগুলো লুকায়, মেয়েটার গর্ভপাত ঘটায় জোর করে।

মঞ্জুরা ভেঙে পড়ে, ভাবে নাসিরই ওর প্রেমিক ছিল।

আর প্রতিশোধ নেয়... ভুল মানুষের ওপর।”


আমি চুপ।

এক ভয়ংকর বাস্তবতা ঘিরে ধরে।


> **মঞ্জুরার আত্মা ভুল মানুষের উপর প্রতিশোধ নিতে এসেছিল।

> কিন্তু সেও নিজের অতীতের অন্ধকার ভুলে গিয়েছিল।

> এক অভিশপ্ত প্রেম, যেটা কেবলই ভুলে আর রক্তে লেখা।**


---


সন্ধ্যার আগে...


আমি ডালিকে নিয়ে বসে থাকি জানালার পাশে।

ও বলে,

— “আমি যখন অজ্ঞান ছিলাম, একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম।

এক মেয়ে আমার শরীর চেয়ে বলেনি কিছু...

শুধু বলেছিল,


> ‘আমি চেয়েছিলাম শুধু একবার ভালোবাসার উত্তর… তা-ও পাইনি।’”


আমি ডালির হাত চেপে ধরি।

আমরা জানি, আমাদের জীবনে ছায়া ঘোরে —

কিন্তু এখন আমরা একসাথে।



পুরনো আলমারির পেছনে হঠাৎ একটি ছবি পড়ে যায় মেঝেতে।

ডালির চোখ পড়ে ছবির পেছনে লেখা লাইনে:


> **"আমি মরিনি।

> আমি আছি, যতদিন কারও চোখে প্রেম থাকবে—

> আর সেটা আমার নয়…"**

চলবে....

৫ম পর্ব লিংক 

https//www.sfgjkkbcshkkfashnnm

0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন