রম্য কাহিনীর
পর্ব: ৯ (শেষ)
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রম্য কাহিনীর
পর্ব: ৯ (শেষ)
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রম্য কাহিনীর
পর্ব: ৮
গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
অন্ধকার সেই দিনগুলো একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে ভাঙন ধরেছে, আর সে ফাটল বাড়ছে প্রতিনিয়ত। পরিবারের কেউ কেউ আমার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে চায় না, কেউ আবার আমাকে ডরাতে চেষ্টা করে। বাবার চোখে ক্লান্তির ছাপ, মায়ের কাঁদার আড়ালে বেদনার ঢেউ, আর ভাইয়ের চুপচাপ চাহনি সব আমাকে ব্যাথিত করে।
রাফির সঙ্গে আমার সম্পর্কও এখন আগের মতো আর নেই। ওর গর্ব আর আমার গৌরব—দুটোরই মধ্যেই ফাটল। ও বলছে, “তুমি বুঝছো না, তোমার এই সিদ্ধান্ত শুধু তোমার নয়, পুরো পরিবারের জীবন বদলে দিচ্ছে।”
আমি বললাম, “তোমারাও কি বুঝবে? আমি এই বিয়ে শুধু আমার জন্য নই, এটা আমার পুঁজি, আমার অস্তিত্ব।”
আমার ভেতরে একটা লড়াই চলছে, একদিকে আমার মন যা চাইছে, অন্যদিকে বাস্তবের কঠিন দেওয়াল। আমি বুঝতে পারি, এই ফাটল যদি না মেরামত করি, তাহলে সবকিছু ভেঙে পড়বে।
একদিন সন্ধ্যায়, আমি একা বসে ছিলাম আমার পুরনো ঘরটার বারান্দায়। বাতাসে একটা মৃদু শীতলতা, আর আকাশে গোধূলির রং মিশে গেছে। সেই সময়ই আমার মোবাইল বেজে উঠল। কলটা রাফির। ভেতর থেকে একটা কাঁটা বেয়ে গেল। আমি রিসিভ করলাম।
“আমরা কথা বলি, ঠিকঠাক,” ও বলল। “তোমার সঙ্গে একটা দরকারি কথা আছে।”
“ঠিক আছে,” আমি বললাম, “আসো দেখা করি।”
আমি জানতাম, ওর কথাগুলো সহজ হবে না, কিন্তু জানতেও চাইছিলাম। কারণ, হয়তো এই ফাটল মেরামত হওয়ার একমাত্র সুযোগ।
রাফির কণ্ঠ ছিল কঠিন, কিন্তু ভেতর থেকে যেন একটা ঝিঁঝিঁর সুর ছুঁটে আসছিল। আমরা দুইজনই সেই ছোট্ট কফি শপে বসেছিলাম, যেখানে কতদিন আগেও আমরা একসঙ্গে স্বপ্ন গড়তাম। আজ সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে, তার ভিতরে শুধু প্রশ্ন আর সন্দেহ।
“তুমি জানো, আমি তোমাকে কেন এত ত্যাগ করতে বলছি?” রাফি চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, “না, জানি না।”
“কারণ, তুমি নিজের জন্যই লড়ছো, শুধু নিজের জন্য। কিন্তু তুমি কি বুঝছো, এই লড়াই তোমার চারপাশের মানুষদের জীবনেও কতটা প্রভাব ফেলে?”
আমি চুপ করে রাফির কথা শুনতে লাগলাম। ওর কথায় এমন এক ব্যথা মিশে ছিল, যা আমি এতদিন বুঝিনি।
“আমি চাইনি তোমাকে হারাতে,” ও বলল। “কিন্তু আমরা যদি একসঙ্গে না দাঁড়াই, তাহলে কেউই বাঁচতে পারবে না।”
আমার চোখে পানি এসে গেল। আমি কাঁদছিলাম, আর সেই কাঁদায় ছিল ঘৃণা, ভালোবাসা, ব্যথা সবকিছু মিশ্রিত। “আমি তোমাকে শুধু আমার স্বপ্নের জন্য নয়, আমার বাঁচার জন্যও চাই,” আমি বললাম।
আমরা দুইজনই বুঝেছিলাম, এই মুহূর্তটা আমাদের সম্পর্কের নতুন সূচনা হতে পারে। ব্যথার মাঝেও এক ধরনের আশা জাগছে।
বাইরের আকাশে তখন মেঘ ঘনিয়ে আসছিল, ঠিক যেন আমাদের জীবনের অন্ধকারের পর প্রভাতের অপেক্ষা।
রাফির কথা মনে মনে ঘুরে ফিরে বাজছিল, যেন কোনো অজানা সুর। কফি শপ থেকে বের হয়ে আমি শহরের ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মনটা ছিল অস্থির, চোখে মেঘের মতো ঘোর কাঁপছিল।
যতই চেষ্টা করি নিজেকে বুঝাতে, কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলাম, কেন আমি তাদের একজনের সাথে বিয়ে করতে চাই, হৃদয় কাঁপতেই থাকল।
আমার মনের গভীরে লুকানো একটা অন্ধকার আলো জ্বলে উঠেছিল—ব্যথা আর আশা একসঙ্গে গড়ে তোলে এক নতুন জ্যোতি।
আমি জানতাম, এই বিয়ে আমার জন্য শুধু ব্যক্তিগত লড়াই নয়, আমার পরিবারের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। এটা ছিল আমার সম্মানের লড়াই, রক্তাক্ত হলেও।
এক হাতে আমার বাবার হাত ছুঁই, আর অন্য হাতে সেই ছেলের নাম বারবার মনে পড়ছিল, যার সাথে আমি বিয়ে করতে চাই। সে যেই হোক, আমার জীবনের অন্ধকারে একদম আলোর রেখা।
আমার আত্মবিশ্বাস আরও শক্ত হলো, আমার পথ অন্ধকার হলেও, আমি হার মানব ন
আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত।
চলবে...
৯পর্ব লিংক
https//www.sfcchdcmbdafhvncdj.com
রম্য কাহিনী
পর্ব: ৭লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
সকাল ৯টা ৩৪ মিনিট।এক কাপ গরম কফির ধোঁয়া হালকা করে জানালার দিকে উড়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু আমার ভিতরের আতঙ্ক ঠিক সেই ধোঁয়ার মতো করে ছড়িয়ে পড়ছিলো…সেই অজানা নম্বরের ফোন কল—আর তার মধ্যে লুকানো হুমকি যেন আমার বুকের মধ্যে এক বিষাক্ত কাঁটা গেঁথে রেখেছে।
আমি রাফিকে জানাইনি কিছু।জানালেই সে ভেঙে পড়বে, আবার নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করবে।আমি জানি, ও এখনো নিজের জন্য ক্ষমা করে উঠতে পারেনি।
দুপুরের দিকে পুলিশ এসে আমাদের বাসায় গেল।তদন্ত শুরু হয়েছে, তবে নতুন কোনো ক্লু মেলেনি।কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিনই একটা না একটা আজব ঘটনা ঘটতে লাগলো।
কারেন্ট চলে যায় শুধু আমাদের বাড়িতে।
অচেনা লোকজন দেয়ালের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।
প্রতিদিন দরজায় প্যাকেট পড়ে থাকে— কখনো মেয়েলি জামা, কখনো পুড়ানো ছবি, কখনো রক্তমাখা পুতুল!
মা আর দিদি তো আতঙ্কে নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছে।বাবা নিজে থানায় গিয়েছিলেন— কিন্তু পুলিশ বলছে কোনো প্রমাণ নেই, তাই কিছু করা যাচ্ছে না।বাবা ফেরার সময় শুধু বলেছিলেন—“এই সমাজে নারী শক্তি বলে কিছু নেই রম্য। তুমি একা এক সংগ্রামে নেমেছো— শুধু সাহস নয়, এখন বুদ্ধিরও পরীক্ষা।”
রাত ১১টা।
হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।জানালার কাঁচ ভাঙার মতো শব্দ!
চোখ মেলে দেখলাম জানালার কাঁচ ভেঙে ঘরের ভেতর একটা কাগজ পড়ে আছে।
দৌড়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলাম—লাল রঙে লেখা:
"তোমার শুদ্ধতার নাটক বন্ধ করো। না হলে ইতিহাস আবারও ফিরে আসবে— এবার আর কেউ তোমার পাশে দাঁড়াবে না।"
পরদিন সকালে থানায় গিয়ে এসআই ফারহানাকে চিঠিটা দেখালাম।উনি সেটা হাতে নিয়ে গম্ভীর হয়ে পড়লেন।
“এটা নিছক ভয় দেখানোর চেষ্টা না, এই চিঠিতে একটা গন্ধ আছে রম্য।”
আমি অবাক হয়ে বললাম—“কোন গন্ধ?”
উনি বললেন—“চিঠির কাগজটা দামী, এই রকম কাগজ সাধারণত অভিজাত ঘরের কেউ ব্যবহার করে। আর কালি? এই কালি সরকার অনুমোদিত কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না।”
আমি বললাম—“মানে, ওরা এখনো সমাজের অভিজাত গোষ্ঠীর ভিতরে লুকিয়ে আছে?”
উনি বললেন—“সম্ভব। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— কেউ তোমার চারপাশে আছে, যিনি তোমার সবকিছু জানে।”
আমি চমকে উঠলাম।
বাড়ি ফিরে আসতেই মা বললো—“আজ সকালে রাফি এসেছিল। তোমার খোঁজ নিয়েছে, কিন্তু তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা— সেটা বারবার জানতে চাইছিলো।”
আমি চুপ করে গেলাম।রাফি এখনো জানে না আমি হুমকি পাচ্ছি।আমি তাকে এই যুদ্ধের অংশ করতে চাই না, কিন্তু সেই ছায়া আমাকে যেন ছাড়ছে না।
সন্ধ্যায় রাফির বাসায় গেলাম।
ও আমাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো।
“তুমি! এই সময়?”
আমি বললাম—“আমাকে কিছু কথা বলতেই হবে রাফি। এই যুদ্ধে তুমি চাইলেও আলাদা থাকতে পারবে না। কারণ ‘ওরা’ ফিরে এসেছে।”
ও হতভম্ব হয়ে গেলো।
আমি সবটা বললাম— অজানা নম্বর, হুমকির চিঠি, কাঁচ ভাঙা, রাতের ছায়া, সব কিছু।
রাফি মাথা নিচু করে বসে রইলো কিছুক্ষণ।
তারপর বললো—
“আমি জানি, আমার আগে যা করেছি— তার কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু এখন যদি তুমি আমাকে পাশে থাকতে দাও, আমি অন্তত একজন পাহারাদার হতে পারি। আমি এখনো যুদ্ধ করতে শিখিনি রম্য, কিন্তু তোমার জন্য লড়তে চাই। এইবার আমাকে তোমার পাশে দাঁড়াতে দাও।"
আমি চুপ করে রইলাম।কিন্তু মনে মনে ঠিক করলাম—এইবার আমি আর পালিয়ে যাবো না।
এইবার শুধু "ক্ষমা" দিয়ে শেষ করবো না।এইবার বিচার করবো। শাস্তি নিশ্চিত করবো।কারণ আমি শুধু একজন ধর্ষণের শিকার নারী নই,আমি একজন যোদ্ধা। আমি রম্য।
আমার মনের ভেতর এক অসহ্য অন্ধকার বাসা বাঁধছে। প্রত্যেক মুহূর্তে মনে হচ্ছে যেনো গা ঘেঁষে বসে আছে ভয় আর সন্দেহ। বাবার কথা, পরিবারের প্রশ্ন আর সেই সাতজনের চেহারা বার বার চোখে ভেসে ওঠে। আমি জানি, এ পথে হেঁটে ফিরে আসা সহজ হবে না।
রাফি আমার জীবনে হঠাৎ ঝড়ের মত ঢুকে পড়েছে। ওর রাগ আর গোপনীয়তা আমাকে বার বার বিভ্রান্ত করে। ওর চোখের সেই তীব্রতা যেনো আমার প্রতি এক ধরনের দ্বৈত প্রেম এবং ঘৃনার মিশ্রণ। ও যখন কাছে আসে, তখন আমার হারানো নিরাপত্তার খোঁজ পাই। কিন্তু যখন ও দূরে সরে যায়, তখন আমার ভয় আবার ফিরে আসে।
আমার বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন যেনো ক্রন্দনের ধারায় ভেসে যাচ্ছে। উনি আমার জন্য সব করতে চায়, কিন্তু আমার সিদ্ধান্তগুলোকে স্বীকার করে নিতে পারছেন না। আমি জানি, উনি চান আমার জীবনে শান্তি হোক। কিন্তু শান্তি পেতে গেলে আমাকে প্রথমে আমার অন্ধকারের মুখোমুখি হতে হবে।
একদিন বিকালে, আমি রাফির সঙ্গে শহরের এক ছোট কফি শপে বসেছিলাম। ও ধীরে ধীরে বললো, “তুমি জানো, আমি কেনো এ জগতে এত রাগে আবদ্ধ?” আমি চুপ করে ছিলাম। ও বললো, “আমার জীবনও তোমার মতোই অন্ধকারে ভরা। আমি চাই তোমাকে বাঁচাতে, কিন্তু জানি না নিজের থেকে বাঁচাতে পারব কিনা।”
আমি ওর হাতে হাত রাখলাম। প্রথমবারের মতো অনুভব করলাম, আমরা দুজনই এক রকম নিঃসঙ্গ, কিন্তু একই রকম শক্তিশালী। এই শক্তি যদি একসাথে হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে হয়তো আমরা অন্ধকারকে হারাতে পারবো।
কিন্তু এই আশা কি সত্যিই মিশন সম্ভব? আমার মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরছে। ওদের সাতজন, আমার পরিবার, আমার নিজের মন – সবকিছু যেনো যুদ্ধক্ষেত্র।
চলবে...
৮ম পর্ব লিংক
রম্য কাহিনী
পর্ব: ৬
লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
জেলের সেই ছোট্ট রুমে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।
সে কিছু বলেনি, আমিও না।
শুধু নিঃশব্দে আমাদের দু’জনার চোখে যেন ঝড় বয়ে চলেছে—
সে ঝড়ের নাম **অপরাধবোধ** আর **অবিচারের অভিমান**।
সে বললো না— “ক্ষমা করো।”
আমি বললাম না— “তুমি দোষী।”
তবুও অনুভব করলাম, **সেই নীরবতা অনেক কিছু বলে দিলো**।
বাড়ি ফিরে বাবা কিছু বলেননি।
মা চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শুধু বললেন—
“তুমি কি সত্যি… ওকে বিয়ে করতে চাও?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম—
“জানি মা, কথাটা পাপের মতো শোনায়।
কিন্তু… আমি তো অন্য কাউকে কল্পনাও করতে পারি না এখন।”
মা চোখ মুছলেন।
"সে তোমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে রম্য…!"
আমি বললাম—
"আর সেই ক্ষতির ভার নিয়েই সে পুড়ছে এখন।
আমার মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি সে পেয়েছে—
**নিজেকে ক্ষমা করতে না পারা।**
আর আমি যদি ওকে ঘৃণা করেই যাই, তাহলে তো ওর মধ্যে ভালো কিছুর জন্মই হবে না, মা।
তাহলে কি লাভ?"
পরদিন সকালেই বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়।
মিডিয়া, প্রতিবেশী, আত্মীয়—
সবাই আমাদের বাড়ির সামনে ভিড় করতে লাগলো।
বাবার মুখে একটাও কথা নেই।
একটা মুহূর্তে মনে হলো, বাবা আমাকে ত্যাগ করে দেবেন।
কিন্তু হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে বাবা ডেকে বললেন—
"আমার মেয়ে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা তার ব্যক্তিগত।
আমরা বিচারক না।
আর আমি যদি আজ তাকে ত্যাগ করি, তাহলে আমি তার সেই শক্তির উৎসটাই ভেঙে ফেলবো যেটা ওকে আবার বাঁচতে শিখিয়েছে।"
সেদিন বাবা আমার জন্য প্রথমবারের মতো দাঁড়ালেন সমাজের বিরুদ্ধে।
সবার মুখ থ মেরে গেলো।
কিন্তু… সমস্যা তো এত সহজে শেষ হয় না!
রাফি এখনও জেলে।
তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পেতে হবে।
আমার পরিবার থেকে একটা আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হলো।
বেশ কয়েকটা শুনানি চললো।
জজ সাহেব কিছুটা অবাক, কিছুটা সংশয়ে বললেন—
“এই দেশে এমন উদাহরণ নেই।
একজন ধর্ষিতা তার ধর্ষকের জন্য জামিন আবেদন করছে! এটা তো সমাজের চোখে অন্যরকম বার্তা।”
আমি বললাম—
**“সমাজ যদি ভালো দিকটা দেখতে না পারে, তাহলে আমার কিছু করার নেই।
আমি শুধু একটা মানবিকতার গল্প লিখতে চাই, যার শেষটা হোক আলোর দিকে।”**
**আদালত রায় দিলো:**
**রাফি জামিন পাবে— তবে কয়েকটি কঠোর শর্তে:**
১. সে সামাজিক পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশ নেবে।
২. সরকার অনুমোদিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকবে ছয় মাস।
৩. আদালতের নির্দেশ ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারবে না।
আমি এই রায় শুনে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম।
এ যেন বিজয়ের না হলেও, **বাঁচার অধিকার ফিরে পাওয়ার এক ঘোষণা**।
শেষ রাতে মা এসে বললেন—
“তুই কি সত্যি বিশ্বাস করিস, রাফি তোকে ভালোবাসে?”
আমি বললাম—
“মা, ভালোবাসা সব সময় ফুল, ক্যান্ডি, প্রেমপত্র না…
কখনো কখনো তা **পশ্চাৎপটে দাঁড়িয়ে, নিজের শাস্তি নিজে ভোগ করার নামও।**”
মা আর কিছু বলেননি।
শুধু কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে চলে গেলেন।
রাফি জামিনে মুক্তি পেলো।
ঘরভর্তি মানুষ। মিডিয়ার ক্যামেরা।
আমি চুপচাপ সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
রাফির চোখে পানি… আর ঠোঁটে একটাই কথা—
**“তুমি নিশ্চিত? আমি তো এখনো নিজের চোখে তাকাতে পারি না…”**
আমি শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিলাম…
আর বললাম—
**“তুমিও বাঁচো। আমিও বাঁচি।
মিলেমিশে নয়… নিজেদের সাথে মিলিয়ে, নিজেরা বাঁচি।”
রাফির জামিন হওয়ার পর পরিস্থিতি যতটা সহজ মনে হয়েছিল, বাস্তবে ততটাই জটিল হয়ে উঠলো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে আমাদের গল্প।
প্রায় প্রতিটি নিউজ পোর্টাল শিরোনাম করেছে—
"ধর্ষিতা তার ধর্ষককে করলো ক্ষমা— বিয়ে করার ঘোষণা!"
আর সেই শিরোনামের নিচে হাজারো মন্তব্য—
“প্রপাগান্ডা”, “নাটক”, “মেয়েটা টাকার লোভে বেহায়া হয়েছে”, “ধর্ষণ নিয়ে প্রেম সম্ভব?”
আমি প্রতিটা মন্তব্য দেখছিলাম, কিন্তু ভেতরটা কেঁপে উঠছিলো না।
বরং মনে হচ্ছিল, আমি এক পরীক্ষার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পাস বা ফেল নয়— বরং আত্মবিশ্বাসটাই চূড়ান্ত উত্তর।
বাড়ির উঠোনে সাংবাদিকদের ভিড় আর বন্ধুবান্ধবদের কৌতূহলী চোখে আমাদের পরিবারের স্বাভাবিক জীবন যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।
বাবা মুখ বন্ধ করে রেখেছেন, কিন্তু আমি জানি, ভেতরে একটা ঝড় চলছে ওনার মধ্যে।
এক রাতে খাবার টেবিলে বাবার কথাটা স্পষ্ট শুনলাম—
"রম্য, তুমি যদি এক মুহূর্তের জন্যও মনে করো, এই সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল— তাহলে ফিরে এসো মা। ভুল সিদ্ধান্তের দাম অনেক বড় হয়।"
আমি একটু থেমে বাবার দিকে তাকালাম।
"বাবা, তুমি নিজেও জানো, আমি সিদ্ধান্ত নিইনি হঠাৎ করে।
আমি নিজেকে ধ্বংস হতে না দিয়ে, এক অপরাধীকে পরিবর্তনের সুযোগ দিতে চেয়েছি। এটাই আমার প্রতিবাদ, এটাই আমার প্রতিশোধ।"
বাবা এবার আর কিছু বললেন না।
শুধু চুপচাপ উঠে গেলেন।
এদিকে রাফির জীবনও স্বাভাবিক না।
বাড়ি ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু তার নিজের পরিবারও তাকে পুরোপুরি মেনে নেয়নি।
তার মা-ও তাকে একরকম দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
একমাত্র ছোট বোনটাই পাশে দাঁড়িয়েছে।
রাফি এখন এক সরকারি পুনর্বাসন প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে।
প্রতিদিন সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নেয়, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, শিশুদের পড়ানো—
আর প্রতি সপ্তাহে কাউন্সেলিং সেশনে যেতে হয়।
সে প্রতিদিন একটা ডায়েরি লেখে—
আমার অপরাধ, আমার অনুশোচনা, আমার নতুন জীবন।
একদিন বিকেলে আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
সে আমাকে একটা চায়ের দোকানে নিয়ে গেলো।
আমরা দু’জন সাধারণ মানুষের মতো বসলাম, প্রথমবারের মতো।
সে বললো—
"তুমি কি জানো রম্য, আমি আজকাল ঘুমাতে পারি। কারণ তুমি আমাকে দুঃস্বপ্নে থেকেও আলোর একটা পথ দেখিয়েছো।"
আমি বললাম—
"আমি চাই তুমি বদলে যাও রাফি। আমি চাই, তুমি নিজেকে এমন এক মানুষ বানাও, যাতে অন্য এক রাফির মতো কেউ আর কোনোদিন সেই ভুলটা না করে।"
রাফি কিছু না বলে মাথা নিচু করলো।
কিন্তু... গল্প এখানেই শেষ হয় না।
সেই রাতে একটা ফোন এলো।
অজানা নাম্বার।
আমি ধরলাম।
ওপাশ থেকে একটা ভয়ানক ঠান্ডা কণ্ঠ বললো—
"ভুল করেছো রম্য। রাফি শুধু একজন ছিলো। কিন্তু আমরা তো ছিলাম সাতজন। আর তোমার সেই ‘ক্ষমা’ আমাদের জন্য নয়… আমরা ভুলিনি।"
মাথার ভেতর বাজ পড়ে গেলো।
হাত ঠান্ডা হয়ে এলো।
আমি ফোন রেখে দিলাম।
কিছু বলিনি কাউকে।
শুধু জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আকাশে আবার সেই লাল নীলিমা।
কিন্তু এবার বাতাসে অজানা শীতলতা।
পরদিন সকালেই থানায় গেলাম।
এসআই ফারহানা বেগম আমাকে চিনতেন।
আমি বললাম—
"আমার সন্দেহ, ওরা ফিরে এসেছে। বাকি ছয়জন।"
তিনি চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করলেন—
"আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?"
আমি বললাম—
"না। কিন্তু আমি ওদের ভয় পাই না।
আমি শুধু চাই, এদের খুঁজে বের করা হোক। আমি আইনি পথে লড়বো।"
চলবে…
৭ম পর্ব লিংক
রম্য কাহিনী
পর্ব: ৫
লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
এক বৃষ্টিভেজা সকাল।
চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসে ছিলাম।
হঠাৎ বাড়ির দারোয়ান এসে বলল—
— “ম্যাডাম, আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে। জেল থেকে পাঠানো।”
আমার বুক ধক করে উঠলো।
চিঠি? জেল থেকে? কে পাঠাবে?
খামের উপর স্পষ্ট লেখা—
**প্রাপক: রম্য রহমান**
**প্রেরক: রাফি খান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।**
তাড়াতাড়ি ঘরে এসে দরজা বন্ধ করলাম।
চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম।
---
**"রম্য,**
আমি জানি, তোমার কাছে আমি পশুর চেয়েও নিচু।
তোমার চোখে আমি একজন ধর্ষক।
তুমি ঘৃণা করো আমাকে— এটা জানি।
কিন্তু আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই—
আমি তোমাকে কখনও ছুঁইনি।
তুমি যেদিন আমাদের চোখে পড়েছিলে, আমি রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম।
আমার বন্ধুদের নিষেধ করেছিলাম।
কিন্তু ওরা শোনেনি।
আমি ভেতরে ভেতরে ছটফট করছিলাম।
তবে ভয় পেয়েছিলাম, ওদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে।
আমার দুর্বলতা…
আমার চুপ করে থাকা…
আমার না বলার সাহস না থাকা— সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ।
তোমার সাথে যা হয়েছিল, তার পরে আমি নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারিনি।
তাই আমি স্বেচ্ছায় আদালতে সব বলেছি।
নিজের দোষ মেনেও নিয়েছি, কারণ আমার নীরবতা তো আরেকটা অপরাধ।
তোমার সাহস দেখে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম রম্য।
তুমি তো আমাদের চেয়ে অনেক বড়।
তুমি সাহস দেখালে।
আমি দেখাতে পারিনি।
আমি জানি, এই চিঠি পড়ে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না।
তবে আমার অন্তরের যন্ত্রণা যদি এক ফোঁটাও তোমার ভার হালকা করে— তাহলেই আমার শান্তি।
রাফি"\*\*
---
চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো।
চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরলাম।
এখনও বুঝতে পারছি না—
আমি ওকে ঘৃণা করবো, না করুণা?
সে কি সত্যিই অপরাধী?
নাকি সময়ের চাপে নীরব থেকে আরেক অপরাধী হয়ে উঠেছিল?
**সন্ধ্যা নামতেই বাবার কাছে চিঠিটা দেখালাম।**
তিনি চুপ করে অনেকক্ষণ পড়ে রইলেন।
তারপর ধীরে বললেন—
— “এই চিঠি প্রমাণ করে, দোষী শুধু যে হাতে আঘাত করে, সে নয়… যে চোখ ফিরিয়ে নেয়, সে-ও সমান অপরাধী। কিন্তু হয়তো redemption এখনও সম্ভব…”
আমি কিছু বললাম না।
কিন্তু সেই রাতে…
চোখ বন্ধ করতেই বারবার একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো—
**রাফির চোখ…**
সেদিনের সেই তীব্র দৃষ্টির বদলে আজ শুধু অনুশোচনা আর গ্লানি।
রাফির চিঠির পর সেই রাতে এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি।
মনের ভেতর একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে—
আমি কী বিশ্বাস করবো ওর বলা কথা?
নাকি এটাও একটা সাজানো নাটক?
সকালে বাবা চুপচাপ আমার ঘরে এলেন।
একটা কাগজ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন—
“এইটা রাফির প্রোফাইল… আমি নিজে খোঁজ নিয়ে এনেছি।”
##
**রাফি খান**
জন্ম : পুরান ঢাকা
বাবা ছিলেন একসময় নামকরা সাংবাদিক।
মা কলেজের অধ্যাপিকা।
কিন্তু রাফি যখন ক্লাস টেন, তখন বাবা মারা যান এক সড়ক দুর্ঘটনায়।
মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
রাফির পড়াশোনা থেমে যায়, আর সেই সময় থেকেই সে মিশতে শুরু করে “ভাইয়ের গ্রুপে”।
প্রথমে টাকার লোভে, পরে নিজের অবস্থান রক্ষায়।
ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে এক ‘ফ্রন্ট লাইন প্লেয়ার’।
চোখে-মুখে চিন্তা কম, কিন্তু ভেতরে লুকানো বুদ্ধিমত্তা ছিল প্রচুর।
সেই গ্রুপের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটাই ঘটলো আমার সাথে।
আর সেই ঘটনায় রাফির ভূমিকা ছিল— **“নীরব দর্শক”**।
আমি ভেবেছিলাম, ওদের একজনেরও মন গলে না…
কিন্তু রাফির এই চিঠি, তার অতীত আর পুলিশের দেওয়া তথ্যে দেখলাম—
সে ঘটনার পর থেকে সে অনেক কেঁদেছে।
অনেকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে।
এমনকি পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় একবার গলায় ব্লেড চালাতে গিয়েছিল।
তবে ও কি সত্যিই **ততটাই ভালো**?
না কি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এসব অভিনয়?
সন্ধ্যাবেলা মা এসে বললেন—
“তুমি যদি চাও, আমরা রাফিকে জেলেই রাখবো। চিরদিন। চাইলে বিদেশে পাঠিয়ে দেই তোমাকে।”
আমি শুধু একটাই কথা বললাম—
**“আমি ওকে একবার দেখতে চাই…”**
সবাই থমকে গেলো।
মা চুপ।
বাবার চোখে শঙ্কা।
ভাইয়া কাঁপা গলায় বলল—
“তুই ঠিক করিস? যে তোকে…!”
আমি ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিলাম—
“যে আমাকে ছুঁয়েও দেখেনি, কিন্তু চুপ থেকেছে… আমি শুধু জানতে চাই কেনো। একবার… একবার মুখোমুখি হলে বুঝতে পারবো।”
**শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো, আমি রাফিকে দেখতে যাবো।**
**ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।**
জেল গেটের সামনেই বুক ধড়ফড় করছিল।
নাম রেজিস্টারে সই করে, স্ক্যানিং পেরিয়ে একটা ছোট রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো আমাকে।
পাঁচ মিনিট পর, পুলিশি পাহারায় ঢুকলো রাফি।
চোখে ক্লান্তি, মুখে দাড়ি-গোঁফ।
আমার দিকে তাকিয়েই মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি ধীরে বললাম—
**“তুমি কি সত্যিই কিছু করোনি?…”**
সে চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে।
তার চোখে এখন ভয় নেই, লোভ নেই, শুধু—
**আত্মগ্লানি।**
সে কাঁপা গলায় বললো—
“আমি তোদের থামাতে পারিনি।
তাই তো নিজেকে মানুষ মনে হয় না।
তুই যদি বলিস, আমি এখানেই মরে যাবো।”
আমার বুকটা ধক করে উঠলো।
আর কিছু বললাম না।
চোখ দুটো শুধু টলমল করে উঠলো…
এই প্রথম, আমি ধর্ষকের চোখে দেখলাম **পশুত্ব নয়, পাষাণ বেদনা।**
**চলবে…**
৬ষ্ঠ পর্ব লিংক
httpswww.sixppartrosomy.com
রম্য কাহিনী
পর্ব: ৪
লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
আমি ঠিক করেছিলাম— এবার আর চুপ থাকবো না। সমাজের ভয়ে নয়, পরিবারের ‘সম্মান’ রক্ষার ভয়ে নয়, নিজের ভিতরের ভয়কেই আজকে আমি চিরতরে গলা টিপে মারব।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা চুপচাপ বসে আছেন। চোখের কোণে অঘোষিত উদ্বেগের ছাপ।
আমি নিচে নেমে এলাম। হাতে একটা পেনড্রাইভ।
— "বাবা, আজকে একটা জিনিস তোমাকে দেখাতে চাই।"
তিনি চমকে তাকালেন আমার দিকে।
আমি কোনো কথা না বলে ল্যাপটপ খুলে পেনড্রাইভ ঢুকালাম।
ওপরে ভেসে উঠল একটি ভিডিওর নাম:
**"স্বীকারোক্তি – রাফি"**
চলতে শুরু করল ভিডিও। রাফির স্বর, চেহারা, ভঙ্গি— সব কিছুই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
এক এক করে সে বলছে সাত ধর্ষকের নাম, প্রতিটির ভূমিকা, পরিকল্পনার বিবরণ।
ভিডিও শেষ হতেই ঘরে নেমে এলো নিস্তব্ধতা।
বাবার মুখে গভীর ঘৃণা, কিন্তু সঙ্গে এক অপার বিস্ময়।
— "এই ভিডিওটা তুমি করেছো?"
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
— "হ্যাঁ, বাবা। এবং আমি এটা আজ দুপুরেই সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করবো।"
বাবা কিছু বললেন না। শুধু ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন—
— "আজ বুঝলাম, তুই শুধু আমার মেয়ে না… তুই একজন যোদ্ধা।"
দুপুর ১২টা।
ঢাকার একটি নামি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন।
প্রায় সব নামী টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল উপস্থিত।
আমি সাদা সালোয়ার কামিজ পরে স্টেজে উঠলাম।
পেছনে আমার বাবা।
মাইক্রোফোনে মুখ আনতেই পুরো হল নিঃশব্দ।
আমি বললাম:
— "আমি এক ধর্ষণকাণ্ডের ভিকটিম। আমাকে সাতজন মিলে ধর্ষণ করেছিলো। আজ তাদের একজন— রাফি— তার অপরাধ স্বীকার করেছে। আমি তা রেকর্ড করেছি। আমি এই ভিডিও আজ আপনাদের সামনে প্রকাশ করছি যাতে আর কোনো মেয়ে ন্যায়ের জন্য ভীত না থাকে।"
তারপর ভিডিও চলতে শুরু করল।
সবার চোখ ফাঁক হয়ে গেল।
রাফির মুখ, তার স্বীকারোক্তি, পরিকল্পনার বিবরণ— সবকিছু ধরা পড়ল।
বাংলাদেশের প্রতিটি সংবাদপত্রের হেডলাইন:
**"ধর্ষকের স্বীকারোক্তি: এক সাহসী মেয়ের লড়াই"**
**"রম্য কাহিনী নয়, এ এক রক্তাক্ত বাস্তবতা"**
**"রাফি ও তার ছয় সহযোগী গ্রেপ্তার চেষ্টায় পুলিশ"**
ওই দিন রাতেই রাশেদ পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে বিমানবন্দরে।
জুবায়ের গা ঢাকা দেয়, বাকিদের বিরুদ্ধে রেড জারি হয়।
রাফি নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করে।
তবে এই কাহিনী এখানেই শেষ নয়।
রাফি যখন কোর্টে তোলে, বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন—
— "তুমি কি বিয়েতে সম্মত হয়েছিলে নিজের ইচ্ছায়?"
সে মাথা নিচু করে বলে—
— "না। আমি জানতাম, সে আমাকে ব্যবহার করবে। এবং আমি সেটাই চেয়েছিলাম। কারণ আমি চাই তার হাতে আমার শাস্তি শুরু হোক।"
পুরো আদালত স্তব্ধ।
বিচারক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,
— "এই কোর্ট মনে করে, এই ধর্ষণকাণ্ড শুধু একজন মেয়ের বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, বরং গোটা সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক চরম আঘাত।"
আদালতের নির্দেশে রাফিসহ বাকিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুরু হয়।
আর আমি?
আমি নতুনভাবে জীবন শুরু করি।
সবার সামনে, নিজের পরিচয় লুকোই না আর।
আমি গর্ব করে বলি—
**"হ্যাঁ, আমি ভিকটিম। কিন্তু এখন আমি বিজয়িনী।"
ঢাকার আদালত চত্বরে আজ জনস্রোত।আমার মামলার শুনানি আজ।রাফি এবং তার ছয় সহযোগী হাজির আছে আদালতের কাঠগড়ায়।আদালত চুপ। বিচারকের কণ্ঠ স্থির, গম্ভীর—কিন্তু তাঁর কথায় যেন বজ্রপাতের মতো কম্পন জাগে চারদিকে।
— “এই আদালত মনে করে, এই ঘটনা শুধুমাত্র একজন নারীর ওপর পাশবিকতা নয়, বরং রাষ্ট্র এবং ন্যায়বিচারের চেতনাকেই অপমান করার প্রচেষ্টা। সাতজন মিলে এক তরুণীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে— প্রমাণসহ তা প্রমাণিত। তাই…”
তিনি একটুখানি থেমে বললেন—— “সাতজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। রাফির ক্ষেত্রে… তার স্বীকারোক্তি ও সহায়তার কারণে দণ্ড কিছুটা কমানো হলো— তবে তাকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।”
ঘরের এক পাশে বসে থাকা আমি চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেললাম।না, আমি খুশি না।আমি শান্ত।
কারণ আমি জানি, ওরা শাস্তি পেয়েছে।এবং সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো—সারা দেশ আজ ওদের নাম জানে।কেউ মুখ লুকিয়ে বাঁচতে পারবে না।
এক মাস পর…
আজ আমি আবার ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ফিরলাম।অনেকেই ঘুরে তাকালো, কেউ চোখ নামিয়ে নিলো, কেউবা এগিয়ে এসে বললো,— "তুমি আমাদের অনুপ্রেরণা।"
আমার একসময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ফারহানাও এগিয়ে এসে বললো,— "তুই পারলি রে রম্য… এত সাহসীভাবে দাঁড়াতে? আমি তো কল্পনাও করতে পারি না…"
আমি শুধু হাসলাম। বললাম না কিছু।
বাড়ি ফিরতেই বাবা বসে ছিলেন বারান্দায়।হাত বাড়িয়ে ডেকে বললেন,— “তোর জন্য একটা চমক আছে।”
আমি অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম।বাবা একটা খাম এগিয়ে দিলেন।ভেতরে একটা চিঠি।
খুলে দেখি—"আপনার সাহসিকতা ও অবস্থান নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য উদাহরণ। আমরা আপনাকে আমাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।"
আমার চোখ ছলছল করে উঠলো।একটা অন্ধকারের গল্প শেষ করে আজ আমি আলোয় দাঁড়িয়ে আছি।আমি জোরে বলে উঠলাম—— “বাবা, আমি যাচ্ছি। আমি এখন শুধু তোমার মেয়ে না— আমি এখন হাজার মেয়ের আশা।”
তবে...
এই গল্প এখানেই শেষ নয়।কারণ কিছু প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে—রাফি কেন একা স্বীকার করলো?সে কি শুধুই অনুতপ্ত ছিল?না কি আরও কিছু আছে তার ভিতরে লুকোনো?
[চলবে…]
৫ম পর্ব লিংক
রম্য কাহিনী – পর্ব ৩
লেখক: গিয়াস উদ্দিন আহাম্মাদ
রাফি এখন আমাকে "মুন" নামে চেনে। তার ধারণা, আমি এক আধুনিক, স্বাধীনচেতা মিডিয়া গার্ল। এবং সে আমার প্রতি আগ্রহী—খুব দ্রুতই।
এই সুযোগটাই আমি চেয়েছিলাম। আগুনে পুড়িয়ে ছাই করার জন্য প্রথমে আগুনটাকে কাছে আনতেই হবে।
**
আজকে আমার ফেসবুক ইনবক্সে রাফির মেসেজ—
"Hi Moon, কাল Bliss ক্যাফেতে আসবা? তোমার সঙ্গে একটু দেখা করতে ইচ্ছা করছে…"
আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রিপ্লাই দিলাম—
"Maybe… যদি তুমি আমাকে চা খাওয়াও, তাহলে ভাবা যায়।"
রাফি রিপ্লাই করলো এক চিলতে ইমোজি আর একটা ভয়েস—
"তোমার জন্য শুধু চা না, পুরো Bliss বুক করতেও রাজি আছি মুন…"
আমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
এই লোকটাই সেই রাতের রাক্ষস।
তবুও আমি নিজেকে শান্ত করলাম—এখনো অনেক পথ বাকি।
**
পরদিন বিকেলে আবার সেই Bliss Café।
এইবার আমি হালকা নীল শাড়ি পরে এসেছি। নিজের মধ্যে একদম ভিন্ন একটা “মুন” গড়ে তুলেছি।
রাফি আমাকে দেখে চমকে উঠলো।
— ওয়াও! আজ তো পুরোপুরি সিনেমার হিরোইন লাগছে তোমায়।
আমি হেসে বললাম,
— ধন্যবাদ। তুমি আজও সেই গডফাদার মোডে আছো মনে হচ্ছে।
রাফি হাসলো,
— আমি এমনই... পাওয়ার দেখাতে ভালো লাগে।
সেদিন আমাদের মধ্যে অনেক কথা হলো। ওর বন্ধুরা দুজন এসে কিছুক্ষণ পর চলে গেলো। রাফি এবার একটু কাছাকাছি হয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বললো—
— তুমি জানো মুন, তোমার চোখে কেমন একটা গভীর রহস্য আছে… অনেকটা কষ্ট লুকানো থাকে যেমন।
আমি এক মুহূর্ত থেমে বললাম—
— হয়তো। কিছু কষ্ট বলার নয়। ঠিক যেমন কিছু অপরাধও... ধরা পড়ে না সহজে।
রাফি মুহূর্তের জন্য চুপ করে গেলো। তার চোখে এক মুহূর্তের সন্দেহ।
কিন্তু আমি আবার হেসে বললাম—
— চিন্তা করো না, আমি গল্প করতে ভালোবাসি। সত্য-মিথ্যার মাঝে হারিয়ে যাই মাঝে মাঝে।
সে আবার হাসলো। আর আমি বুঝলাম, সন্দেহ কেটে গেছে।
**
রাত ৮টার দিকে রাফি আমাকে ক্যাফের বাইরে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।
— আজকে চমৎকার একটা সন্ধ্যা কাটলো, বললো সে।
আমি উত্তর দিলাম—
— ধীরে ধীরে আমাকে বুঝবে, তখন আরও চমৎকার মনে হবে।
গাড়ির দরজা বন্ধ করার সময় আমি তাকিয়ে বললাম—
— তুমি কি কখনো এমন কিছু করেছো, যা বললে তোমার পরিচিত জগৎ তোমাকে চেনে না?
রাফি এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলো আমার চোখে, তারপর হেসে ফেললো—
— আমার সবকিছুই রহস্যে মোড়া। আমি যা করি, তার সিক্স পারসেন্টও কেউ জানে না।
আমি মাথা নেড়ে হালকা বললাম—
— আমি একদিন সেই শতভাগ জানবো রাফি…
গাড়ি ছাড়তেই আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা দুঃস্বপ্নের পেছনে ছুটছি, যার শেষে হয়তো আমি নিজেও আর থাকবো না।
**
ঘরে ফিরে দেখি বাবা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।
— কোথায় ছিলে তুমি?
— একটা প্রজেক্টের কাজে।
— মিথ্যে বলো না।
বাবার কণ্ঠে রাগ নয়, বরং হতাশা।
— আমি ঠিক পথে আছি বাবা। শুধু একটু বিশ্বাস করো।
বাবা চলে গেলেন চুপচাপ। মা কেঁদে ফেললেন। আমি ওদের সামলাতে পারি না।
কারণ আমি জানি, এই যুদ্ধের মূল্য আমার পরিবারকেও দিতে হবে।
**
পরদিন সকাল।
আমার মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ—
"Moon, I like you… Let's go for a long drive today. Just you and me." – Rafi
আমি হেসে ফেললাম। ঠিক এই সুযোগটাই চাই।
এখন আমি চাই রাফি নিজেই তার মুখোশ খুলে ফেলুক।
আর তার আগে, আমি সব রেকর্ডিং চালু রাখবো।
আমার মোবাইলে গোপনে রেকর্ডিং অ্যাপ সেট করেছি।
আজকের ডেটই হবে সেই ভয়াবহ রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্বীকারোক্তির সূত্র।
আমি জবাব দিলাম—
"Deal. But I have a condition… I’ll tell you during the drive."
**
সন্ধ্যায় আমরা শহরের বাইরের দিকে যাচ্ছি। গাড়ির মধ্যে হালকা মিউজিক।
রাফি গাড়ি চালাচ্ছে, আমি চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে আছি।
মোবাইল পাসেঞ্জার সিটের নিচে চালু রেকর্ডিং মোডে।
হঠাৎ রাফি বললো—
— জানো মুন, আমি জীবনটাকে গেমের মতো দেখি। আমরা যা চাই, তা নিয়ে নিই। ভয় পেলে মানুষ কিছুই পায় না।
আমি হালকা স্বরে বললাম—
— এমন কী নিয়েছো তুমি রাফি, যা ভয় না পেলে পেতে না?
রাফি হাসলো।
— আমি আর আমার বন্ধুরা এক রাতে একটা “রাজকন্যাকে” ধরে এনেছিলাম। একদম হট ছিলো। কিন্তু ওই রাতে বুঝেছি, ভয়, কান্না, আর লজ্জা—এই তিন জিনিস মেয়েদের কন্ট্রোলে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর।
আমি চুপ করে আছি। রাফির মুখে উন্মাদ এক আত্মবিশ্বাস।
সে আরো বললো—
— মেয়েটার চেহারা এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। ওর চোখে তখন আগুন ছিলো, কিন্তু আমরা ওটাকেই ভাঙলাম।
আমার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এলো। চোখ বেয়ে নেমে এলো জল।
রাফি এখনো জানে না—
এই "রাজকন্যা"ই আজ তার পাশে বসে আছে,
আর তার স্বীকারোক্তি, এখন আমার মোবাইলে রেকর্ড হচ্ছে।
রাফি কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। চোখে জল, কণ্ঠ ভারী। তারপর বলল,
— “আমি জানি, আমি দানব ছিলাম… এখনও মনে হলে নিজেকে ঘৃণা হয়। কিন্তু… তোমার জন্য নয়, নিজের জন্য। কারণ আমি জানি, আমি তোমার মতো একটি মেয়েকে… চিরজীবনের মতো ভেঙে দিয়েছি।”
আমি চুপ। কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না মুখ থেকে। শুধু তাকিয়ে আছি তার দিকে।
রাফি বলতে লাগল,
— “আমি অন্যদের মতো ছিলাম না। আমি ওদের থামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ… আমিও নিজেকে থামাতে পারিনি। ভীড়ের উন্মাদনায় আমি হেরে গিয়েছিলাম… আমার বিবেককে চাপা দিয়েছিলাম… আমি দানবে পরিণত হয়েছিলাম।”
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। শিউরে উঠছে শরীর। কিন্তু আশ্চর্য, আজ আমি আর কাঁদি না। আমার চোখে এখন শুধুই শীতল রাগ, প্রতিশোধের আগুন।
রাফি আবার বলল,
— “তুমি জানো? ওরা তো তোমাকে মেরে ফেলতেই চেয়েছিল। আমি বাধা দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, ওকে জীবিত ফিরিয়ে দাও, নয়তো যা করেছি সব ফাঁস করে দেব। তখন ওরা আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ওদের মুখ বন্ধ রেখেছিল আমার পুরনো শক্তি আর ভয়।”
আমি রেকর্ডারটা চালু করে রেখেছি গোপনে। তার স্বীকারোক্তি, তার মুখেই— এখন আমার কাছে অস্ত্র।
সে বলল,
— “তুমি যখন বিয়ের প্রস্তাব দিলে, আমি ভেবেছিলাম এটা কোনো ফাঁদ। আবার ভেবেছিলাম, যদি সত্যিই এটা একটা সুযোগ হয়… তাহলে হয়তো একবার নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি।”
আমি এবার ঠান্ডা গলায় বললাম,
— “তুমি কি চাও আমি তোমায় ক্ষমা করি?”
সে এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল,
— “না। আমি চাই না তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি শুধু চাই তুমি আমাকে ব্যবহার করো… তোমার পথের পাথরগুলো সরাতে। আমার শাস্তি তুমি নিজেই দাও… আমি তাতেই রাজি।”
আমি এবার উঠে দাঁড়ালাম।
— “তাহলে প্রস্তুত হও, রাফি। তুমি বলেছো তুমি শক্তিশালী? এবার আমি চাই তুমি নিজেই তোমার বন্ধুদের নাম বলো। এবং এটা রেকর্ড হবে। সব মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়বে।”
রাফি চমকে উঠল।
— “তুমি… রেকর্ড করছো?”
আমি ঠাণ্ডা হাসলাম,
— “হ্যাঁ। শুরু থেকেই। এবার যদি তুমি সত্যিই অনুতপ্ত হও, তবে ওদের নাম বলো। কে কে ছিলো? কার কী ভূমিকা ছিলো? কোথায় ওরা এখন?”
রাফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ বন্ধ করল। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
— “ওরা সাতজন ছিলো। আর আমি… সেই সাতজনের একজন।
১. রাশেদ – পরিকল্পনাকারী।
২. সোহেল – গাড়ির চালক, আমাকে সন্দেহ করে আজকাল।
৩. জুবায়ের – ভিডিও করেছিল।
৪. রাফিদ – মদ এনে দিয়েছিল।
৫. কামরুল – ভিকটিমকে ধরেছিল প্রথমে।
৬. আসিফ – ঘর পাহারা দিচ্ছিল।
৭. আমি… রাফি – যাকে তুমি বিয়ে করতে চাও।
এরা সবাই এখন ছড়িয়ে আছে শহরের নানা প্রান্তে। রাশেদ দেশের বাইরে পালাতে চাচ্ছে।”
আমি রেকর্ড বন্ধ করলাম। এবার আমার হাতে অস্ত্র। আমি জানি, আগামীকাল মিডিয়া, পুলিশ, আদালত— সবকিছু তোলপাড় হবে এই স্বীকারোক্তিতে।
আমি ধীরে ধীরে বললাম,
— “তুমি আমার শত্রু, আবার আজকের অস্ত্রও তুমি। এই দ্বৈত অবস্থানেই তোমার জায়গা থাকবে আমার জীবনে।”
রাফি কিছু বলল না। শুধু মাথা নিচু করে বসে রইল।
---
চলবে...
৪থ পর্ব লিংক
ধর্ষক রা সাতজন ছিলো বাবা....। আর ওদের মধ্যে একজন কে আমি বিয়ে করতে চাই।।।
ওয়াট....??
হ্যা বাবা ঠিকই বলছি আমি।। ওই ছেলেকে বিয়ে আমার করতেই হবে।।।
পুরো পরিবারের লোকজন থ সেজে গেলো আমার কথায়।।। জানি অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এখন আমায়।।। কিন্তু আজকে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করবো না আমি।।। কাউকে এ বিষয়ে কোনো কইফিয়তও দিতে প্রস্তুত না আমি।।। আর এ কথাটি জোরেই বলে ফেললাম সবার সামনে। তারপর মজলিস থেকে ওঠে আমার ঘরে চলে গেলাম।।
আজকে নিজের মধ্যে একটা প্রশস্তি অনুভব করছি।। সবার সামনে এ রকমভাবে কথা বলতে পেরে খুব ভালো ফিল করছি আমি।। এই প্রথম আমার পরিবারের সামনে এমন উচু গলায় কথা বললাম।। আর এ নিয়ে আমার ভেতর কোনো অনুতপ্ততা কাজ করছে না।।। বরং মনে হচ্ছে আরো আঘাত দিয়ে কথাগুলো বলা উচিত ছিলো।।।
সম্ভ্রান্ত এক বড় পরিবারে জন্ম আমার।। বলতে গেলে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছি আমি।। কখনও কোনো ব্যাপারে আমার চাওয়া, না পাওয়া ওয়ে ওঠেনি।। আর পরিবারের আদর সেতো আর বলে বোঝাবার মতো নয়।।
আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব আমার বাবা।। উনার রাজকীয় চলাফেরা, সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সবই তার রাজকীয় চলাফেরার প্রতীক বহন করে।। এতসবকিছুর মাঝেও তিনি তার মেয়েকে সময় দিতেও এতটুকু ভুল করে না। আর আমার চাওয়াকে তো নিমিষেই মিটিয়ে দিতো বাবা।। তাইতো আমার কাছে বাবার জনপ্রিয়তা সবার তুঙ্গে।।
কিন্তু এত প্রভাবশালীতার মাঝেও আমার সাথে এ রকম এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে, তা কেউ কখনও স্বপ্নেও ভাবেনি।। এমনকি কারো সাথে ব্যক্তি গত শত্রু তাও ছিলো না আমার বা আমার পরিবারের।
যদিও ব্যাপারটা আমার পরিবারের বাইরে কেউ জানে না।। কিন্তু জানতেই বা কতদিন??
আর এই চিন্তা নিয়েই আমার পরিবারের এত মাথাব্যথা।। তাইতো আমাকে ফিরে পেতেই সবার এমন ঘোট পাকিয়ে প্রশ্নউত্তর পর্ব চললো বেশ কিছুক্ষণ।
কিন্তু আমার কঠিন থেকে কঠিনতম কথার ব্যাড়াজালে সবাই যে হতবাক, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।।
এই তিনদিন আমার পরিবার আমাকে হন্নে হয়ে খুজেছে।। কিন্তু কোনো খোজ মিলাতে পারেনি।।
তাইতো আমার কাছ থেকে বারবার জানার চেষ্টা করছে আমি ওদের কাউকে চিনতে পেরেছি কিনা??
আমি জানি না ওদের পেলে কি করবে আমার
পরিবার?? তবে আমি নিশ্চিত এতবড় ঘটনা, এমনিতেই
আমার পরিবার ছেড়ে কথা বলবে না কাউকে খুজে পেলে।। এরমধ্যে আমার বলা কথাটা তাদেরকে আরো
পুড়িয়ে মারছে।। একে একে সবারই একটাই প্রশ্ন, আমি কেনো এরকম ঘটনার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে
চাচ্ছি?? রংধনুর রং !
তখনো ঘরের দরজা বন্ধ করেই বসে আছি।
বারবার বাড়ির লোকের জ্বালাতন আর ভালো লাগছে না।।
তাই তো চিৎকার করে মাকে বললাম প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও মা।। তারপর অবশ্য আর কেউ আসে নি।। আমি জানালার পাশে বসে আছি।। সূর্যের প্রখর তাপ প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছে।। আকাশে লাল নীলিমার রেখা ফুটে ওঠেছে।। জানালাটা আরেকটু খুলে দিলাম।। চোখের কোনে লেপ্টে থাকা জলবিন্দু ওরনা দিয়ে হালকা মুছে নিলাম।। উদাস মনে আকাশের পরিবর্তনের দৃশ্যটা উপভোগ করছিলাম ভাংগা হৃদয়ে এতটুকু আশা জাগানোর নেশায়।।ওরা সাতজন ছিলো।। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে নির্জনে বাড়ি ফিরছিলাম শহরের রাস্তা বেয়ে।
আমার পছন্দের ব্রীজের ওপর আসতেই একটা কার আমাকে নিস্তব্ধ ভাবে তুলে নিলো।। তারপর আমার স্মৃতির পাতা জ্ঞান শূন্য হয়ে আসছিলো।। যখন সজ্ঞানে ফিরে এলাম, তখন নিজেকে অচেনা রুমে আবিষ্কার করলাম।। খুব ভয় লাগছিলো আমার।। ভয়ে চিৎকার করে ওঠলাম, কিন্তু ফিরতি প্রতিধ্বনি আরো ভয়ানক ভাবে ধরা দিলো আমার কানে।। মনে হলো এ স্থান জনশূন্যতার আধারে ভরে আছে।।
আমি গুটিশুটি মেরে ঘরের এক কোনে নিজেকে লুকিয়ে রাখলাম।। কিছুক্ষন পর দরজা খোলার আওয়াজে আরো ভীত সন্তপ্ত হয়ে পড়লাম।।
কয়েকজন যুবক ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।।
আর অদ্ভুত চাহনি নিয়ে আমার দিকে
তাকিয়ে ছিলো। যেনো ক্ষুধার্ত হায়েনার সামনে একখন্ড মাংসপিণ্ড।।
আমি ভয়ে নিজেকে আরো জড়িয়ে নিলাম।। আর বললাম
কে আপনারা প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।।। আমার কথায় তারা রাজ্য জয়ের হাসি দিয়ে লুটিয়ে
পড়তে লাগলো।।
হঠাৎ ই কারো পায়ের আওয়াজে থমকে দাড়ালো ওরা।। একদম নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাড়িয়ে গেলো।।। আমিও কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম।।।। !
বেশ সুদর্শন এক লম্বা পুরুষ, মাথার ঝাকরা চুলগুলো ঠিক করতে করতে রুমে প্রবেশ করলো।। ওকে দেখে সবাই সরে দাড়ালো এবং সালাম দিলো।। বুঝলাম ইনি এদের
পালের গোদা।। রুমে ঢুকে বেশ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।। তারপর উষ্ণ হাসি দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে আমার সামনে এসে বসলো।। আমি চরম ভীত সন্তপ্ত হয়ে পড়লাম।। আমার থুথনিতে হাত দিয়ে চোখটা তুলে ধরে বললো
বাহ্ খুব সুন্দর হয়েছে তো তুমি ...!! ঘৃনা, রাগ, ভয় তিনটাই চরম আকার ধারন করলো আমার মনে।।। খুব শান্ত ভীত হয়ে
একবার শুধু বললাম কে আপনি?? আর আমাকে এভাবে ধরে এনেছেন কেনো?? প্লিজ ছেড়ে দিন।।
কিছু না বলে ছেলেটি উঠে দাড়ালো।। পেছন ফিরে ওদের জিজ্ঞেস করলো,, খেতে দিয়েছিস ওকে।।।
ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠলো – দেমাগ দেখিয়ে খায়নি বড় ভাই।।।কথাটি শুনে হাসি দিয়ে আবার আমার কাছে এসে গালে আলতো করে ছুয়ে বললো
রাগ দেখাতে নেই।। খেয়ে নাও।। আমি তখন ক্রোধে আরেকবার বলে ওঠলাম
আমায় ছেড়ে দে বলছি, আমার বাবা জানতে পারলে তোদের একজনকেও বাচিয়ে রাখবে না।।।
ছেলেটি দাড়াতে যাচ্ছিল, কিন্তু আমার কথা শুনে রাগে তার চোখগুলো নিমিষেই লাল হয়ে গেলো।
আমার দিকে ভয়ানক রাগি চোখে তাকিয়ে খাবারের প্লেটটা ছুড়ে মারলো আর বললো
-কি বললি আরেকবার বল?? তোর বাবার এত দম .....?? এই
একে এখুনি বুঝিয়ে দেয় ওকে কেনো এখানে আনা হয়েছে।।। ওর বাবার কলিজার মতো মেয়ের এমন হাল
করবি যেনো কোথাও মুখ দেখাতে না পারে
বলেই চলে যাচ্ছিলো!!
চলবে..
৩য় পর্ব লিংক